প্রতিদিনের মতো আজও অর্ক এক্সারসাইজ করে বাইরে এসে বসল। জাহাজে থাকার একটা ভালো দিক দুর্গন্ধ-ধুলাবালিবিহীন মাঝ দরিয়ার একদম ফ্রেশ বাতাসে সব সময় ফুসফুসটা ভরে রাখা যায়। অর্কর বিশ্বাস এই নির্মল বাতাসের জোরেই জাহাজিরা জাহাজে এসে অসুস্থ হয় না সহজে।
অর্ক মার্চেন্ট জাহাজের একজন ক্যাডেট (ট্রেইনি অফিসার)। ও এখানে একমাত্র বাংলাদেশি, বাকিদের বেশিরভাগ ইন্ডিয়ান, ফিলিপিনো, একজন রাশিয়ান আর একজন টার্কিশ। অর্কর বাড়িতে বাবা ছাড়া মা, বোন, বড় ভাই-ভাবী সবাই আছেন। বাবা গত হয়েছেন ও একাডেমিতে থাকাবস্থায় সেই ২০১৮ তে।
অর্ক একাডেমিতে যখন জয়েন করেছিল সে সময় ওর ওজন ৯২ কেজি! কিন্তু ট্রেনিং শেষে পাসিং আউটের সময় ৫ ফিট ১০ ইঞ্চির অর্কর ওজন ৭৩ কেজিতে নেমে এসেছিল! শুধু যে সিনিয়রদের বরাতেই কমেছে তেমন নয়, মেরিনারদের ফিটনেসের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সিনিয়রদের কথাগুলো উপলব্ধি করে অর্ক নিজে সিনিয়র হবার পরেও নিয়মিত এক্সারসাইজ করেছে ফিটনেসের জন্য। জাহাজে এসে যদিও প্রথম কয়েক মাস নিয়মিত এক্সারসাইজ করার সুযোগ হয়ে উঠেনি। তবে এখন অর্ক নিয়মিত এক্সারসাইজ করে জাহাজের জিমনেশিয়ামে। প্রথম দিকে যে কোনো জাহাজে ‘টালটু’ একটু বেশি থাকে কিনা!
অর্কর সঙ্গে আরও একজন ডিউটির পর জিমনেশিয়ামে আসে, নাম কেভাল, হাসিখুশি এক গুজরাটি। কেভাল হলো ইঞ্জিন অফিসারদের একজন সহকারী যাদেরকে জাহাজে বলা হয় অয়লার বা মোটরম্যান। কেভাল আর অর্ক প্রায়ই এক্সারসাইজের পর গ্যাংওয়েতে বসে বুক ভরে বিশুদ্ধ বাতাস নিতে।
কেভাল আজ আসেনি এক্সারসাইজ করতে। খাটুনি বেশি হওয়ায় হয়ত ক্লান্ত। অর্ক অবশ্য প্রতিদিনের মতো আজও ঘাম ঝড়িয়ে একা একাই গ্যাংওয়েতে বসেছে। আকাশে আজ পূর্ণ চাঁদ। পাঁচ মিনিটেই মন-প্রাণ জুড়িয়ে যায় এমন পূর্ণিমা রাতে নিশ্চুপ সমুদ্র আর নির্মল বাতাসের মাঝে বসলে। মন থেকে আপনা-আপনি স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা চলে আসে।
কেবিনে ফিরে যাবার সময় কী মনে করে অর্ক রেলিংয়ের কাছে গিয়ে দাঁড়াল। তির-তির করে প্লাস ক্যারিবিয়ান সি’র নোনাজল কেটে জাহাজ এগিয়ে চলেছে ব্রাজিলের দিকে। ওরা আমেরিকার নিউ অরলিন্স থেকে রওনা দিয়েছে প্রায় ১০ দিন হলো। আরও নয় দিনের পথ বাকি এখনও। অর্ক একটু ঝুঁকে দেখছিল পানিতে চাঁদের আলো কীভাবে জাহাজের সাথে ধাক্কা খাচ্ছে অবিরত। হঠাৎ করেই এক তীব্র দুলুনিতে অর্ক অকূল দরিয়ায় ছিটকে পড়ল!
জাহাজ থেকে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে কেউ সমুদ্রে পড়ে গেলে দেখা মাত্রই লাইফবয়া ছুড়ে দিয়ে 'ম্যান ওভারবোর্ড' 'ম্যান ওভারবোর্ড' বলে চিৎকার করতে হয়। সঙ্গে সঙ্গে ডিউটি অফিসারকেও জানাতে হয় যেন জাহাজ ঘুরিয়ে ওভারবোর্ড হওয়া ক্রুকে উদ্ধার করতে পারে। জাহাজে নিয়মিত ড্রিলও হয়ে থাকে এসব নিয়ে। অর্কর জাহাজে তো গত সপ্তাহেই 'ম্যান ওভারবোর্ড' ড্রিল করেছে ওরা। কিন্তু এই সন্ধ্যাবেলা জাহাজের কেউই তো দেখেনি, কেউই তো জানে না অর্ক ওভারবোর্ড হয়েছে! 'ম্যান ওভারবোর্ড' বলে চিৎকার করে লাইফবয়া ছুড়ে দেবে কে? অর্ক কি তাহলে এমন পূর্ণিমা রাতে হাজার-লক্ষ তারাকে সাক্ষী রেখে মহাকালের মাঝে বিলীন হয়ে যাবে? ওর তো আজীবনের ইচ্ছা ছিল বিদায়ের সময় ওর প্রিয়জনেরা সবাই পাশে থাকবে...
অর্ক যখন ওভারবোর্ড হয় তখন সন্ধ্যা প্রায় সাড়ে ৭টা। ওদের জাহাজটা ইউএমএস। ইউএমএস হলো আনঅ্যাটেন্ডেন্ট মার্সিনারি মেশিনারি স্পেস অর্থাৎ জাহাজের ইঞ্জিনরুমে কাউকে ডিউটিতে না রেখে জাহাজ তথা ইঞ্জিনরুমের সব মেশিনারি চালানো। ইউএমএস শিপে ইঞ্জিন ডিপার্টমেন্টের সবাই নরমালি ৮টা-৫টা ডিউটি করে। বিকেল ৫টায় কাজ শেষে ইউএমএস অ্যাকটিভ করে দেয়। এরপর আবার রাত ৯টায় ডিউটি ইঞ্জিনিয়ার মোটরম্যানসহ ১ ঘণ্টার ‘ইউএমএস রাউন্ড’ নেয়। ইউএমএস অ্যাকটিভ থাকা অবস্থায় ইঞ্জিন রুমে কোনো সমস্যা হলে ডিউটি ইঞ্জিনিয়ারের কেবিনে অটোমেটিক এলার্ম বেজে ওঠে। আজ ফোর্থ হলো ডিউটি ইঞ্জিনিয়ার, রাত ন’টায় অর্কর রাউন্ড তার সঙ্গে...
***
এমন মায়াবী পূর্ণিমা রাতে অর্ক জলে ভাসছে! এটা কি সত্যি নাকি কল্পনা অর্ক ভেবে পায় না। নাহ কল্পনা নয়, সত্যি সত্যিই অর্ক অসীম নীল দরিয়ায় একটা পিঁপড়ার মতো ভাসছে। খুব নার্ভাস লাগছে, ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে। এত বিশাল সমুদ্রে অর্ক একা! এই বুঝি কিছুতে এসে পা টান দিলো!
ছোটবেলায় অর্ক একটা গল্প পড়েছিল। মা পাখি তার ছানাকে বাসায় রেখে যাবে খাবারের জন্য। যাবার আগে মা বার বার সাবধান করে যায় কিছুতেই নিচের নদীর মাছদের কথা না শুনতে, বিশ্বাস না করতে। ছানা সুবোধের মতো মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলে মা চলে যায়। ওদিকে মা পাখি চলে যাবার পরেই নিচ থেকে টেংরা, বোয়াল, চিতল ইত্যাদি মাছ পাখির ছানাকে বলে নিচে নেমে আসতে। বলে যে, পানিতে অনেক মজা, অনেক আরাম! ছানা বলে, ‘না না, আম্মু আমাকে নিষেধ করেছে নিচে যেতে, তোমাদের কথা শুনতে। নিচে আসলেই তোমরা আমাকে মেরে ফেলবে।’ কিন্তু মাছেরা ঠিকই মিথ্যা বলে, ছলচাতুরি করে ছোট্ট ছানাটাকে পানিতে নামিয়ে আনে! এরপর ট্যাংরা খোঁচা দেয়, বোয়াল হা-করে ভয় দেখায়। ছানাটার ভয়ে জান উড়ে যাবার অবস্থা। পরে সময়মতো মা পাখি এসে উদ্ধার করলে ছানাটা মায়ের কাছে ক্ষমা চায় নিজের ভুল বুঝতে পেরে, মায়ের কথা না শুনার পরিণাম বুঝতে পেরে।
পানিতে পড়ে হঠাৎ ছোটবেলার গল্পটা মনে পড়লো অর্কর। সেই কত বছর আগে পড়েছিল! ওরও এখন সেই পাখির ছানার মতো অবস্থা। বরং এখানে টেংরা, কাতল, বোয়ালের বদলে আছে হাঙর, তিমি আর অজানা কত প্রাণী। পাখির মায়ের মতো সময়মতো কেউ কি ওকে উদ্ধার করতে আসবে?
অর্ক ধীরে ধীরে মনে করার চেষ্টা করছে, ওভারবোর্ড হলে কী কী করতে হবে। প্রথমত, প্যানিকড হলে চলবে না, শান্ত থাকতে হবে। মনোবল হারানো যাবে না। দ্বিতীয়ত, বেশি দাপাদাপি করে এনার্জি নষ্ট করা যাবে না। চুপচাপ ভেসে থাকতে হবে হাত-পা যতটা সম্ভব কম নড়াচড়া করে। তৃতীয়ত, ভুলেও সমুদ্রের লবণাক্ত পানি পান করা যাবে না। লবণাক্ত পানি পান করলে তৃষ্ণা তো মিটবেই না বরং বার বার প্রস্রাব হয়ে ডিহাইড্রেশন হয়ে তাড়াতাড়ি মরতে হবে। অর্কর মনে পড়ল আজ সি-ওয়াটার টেম্পারেচার ছিল ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ভাগ্যিস ১০/১২ নয়, তাহলে দ্রুত হাইপোথারমিয়ায় মরতে হতো।
অর্ক আকাশের দিকে তাকাল, কত হাজার হাজার তারা জ্বলজ্বল করছে। খুব দ্রুতই ও তারাদের সঙ্গে মিলিত হবে হয়ত। সেই ছোটবেলা থেকে আজ অবধি সবকিছু অর্কর চোখের সামনে সিনেমার মতো ভেসে উঠছে। অথৈ জলে ভেসে ভেসেই ও যেন হেঁটে যাচ্ছে স্কুলে, কলেজে সিগারেট ফুঁকছে, অ্যাকাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে ফ্রন্টরোল-সাইডরোল দিচ্ছে! দেখতে পাচ্ছে ছোট্ট ভাতিজা-ভাগ্নিদের মায়ামুখ, মায়ের পবিত্র চেহারা, ভালোবাসার প্রেমিকার হাসিমুখ, কপালের টিপ, চোখের কাজল। স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে বাবার দরাজ গলা, ভাই-বোনের হাসাহাসির শব্দ।
চোখ খুলে আবার তারাদের দিকে তাকাল। বাবা কি তারা হয়ে ওর অপেক্ষায় চেয়ে আছে সেই ২০১৮ থেকে? নিঃসঙ্গ-একাকী বাবার একাকীত্ব আজ ঘুচবে কি...?
***
রাত ৯টা বেজে ৫ মিনিট। ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার ঠিক ন’টায় এসেই ইঞ্জিনরুম ‘ম্যানড’ করেছে। অর্কই সবসময় আগে এসে থাকে কিন্তু আজ এখনো কেন আসছে না ভেবে ওর কেবিনে ফোন দিল ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু পরপর দুবার ফোন দিয়েও ওকে পেল না। এরপর মেসরুমে ফোন করেও অর্ককে পাওয়া গেল না। জাহাজে মাত্র ২০-২২ জনের একটা পরিবার। সচরাচর কেবিন, মেসরুম আর ডিউটির জায়গায়তেই সবাইকে পাওয়া যায়। ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার ব্রিজে ফোন করে ব্যাপারটা জানাল যেন ক্রুদের মাস্টার স্টেশনে আসার জন্য অ্যানাউন্স করা হয়। মাস্টার স্টেশন হলো জাহাজের যে কোনো ইমার্জেন্সিতে সবার কমন সম্মেলন স্থান।
অ্যানাউন্সমেন্টয়ের দুই মিনিটের মধ্যেই সবাই হাজির হলো মাস্টার স্টেশনে একসেপ্ট অর্ক!! ওকে শেষবার জাহাজের সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার জিমনেশিয়ামে দেখেছে বলে জানাল। এরপর কেভাল জানাল যে ওরা প্রতিদিন ওয়ার্ক আউট করে বাইরে বসে হাওয়া খেতে। আজ কেভাল যেহেতু আসেনি সেহেতু অর্ক হয়ত একাই গিয়েছিল আর কোনোভাবে ওভারবোর্ড হয়েছে।
কেভালের কথাকেই সবাই বেশি যৌক্তিক আর বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করল। ওরা সন্ধ্যা ৭টা সাড়ে ৭টা নাগাদ কেবিনে ফিরত বলেও জানায় কেভাল।
জাহাজের গতির হিসেব হয় নটিক্যাল মাইলে, ১ নটিক্যাল মাইল= ১.৮৫২ কি.মি। অর্কর জাহাজের গতি ঘণ্টায় ১৪ নটিক্যাল মাইল। সে হিসেবে অর্ক যদি ৭টায় ওভারবোর্ড হয়ে থাকে তাহলে ওরা প্রায় ৩০-৩৫ নটিক্যাল মাইল দূরে চলে এসেছে সোয়া ২ ঘণ্টায়। ক্যাপ্টেন তৎক্ষণাৎ জাহাজ ঘুরানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে আসা ফেনিল রেখা ধরে এগিয়ে চলল...
***
অর্ক মনে মনে একটু বাঁচার আশা পাচ্ছে আজ ওর ইউএমএস রাউন্ড ছিল বলে। ও জানে ন’টার রাউন্ডে না গেলেই সবাই ওর খোঁজ করবে আর হয়ত জাহাজ ফিরে আসবে ওকে উদ্ধারে। কিন্তু এতক্ষণ কি ও টিকে থাকতে পারবে? এত বিশাল সমুদ্রে মাঝরাতে ওর মতো পিঁপড়াকে খুঁজে পাবে? অর্ক দীর্ঘ জীবন নিয়ে অনেক বেশি আশাবাদী ছিল সবসময়। প্রথম জাহাজে এসেই এভাবে একা একা অতল দরিয়ায় মরতে হবে সেটা ও দুঃস্বপ্নেও ভাবেনি। অন্য মানুষেরাও কি ভাবে যে সে কবে কীভাবে মারা যাবে? মনে হয় বেশিরভাগ মানুষেরই কাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর সঙ্গে প্রকৃত মৃত্যুর পরিবেশ মেলে না। কেউ হাসপাতালের বেডে মরবে ভাবে কিন্তু দেখা গেল আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে গেল। কেউ সড়ক দুর্ঘটনায় মরবে ভাবে কিন্তু হার্ট অ্যাটাকে মারা যায়। কেউ বা বৃদ্ধ হয়ে বা নানা-দাদা হয়ে মরতে চায় কিন্তু বিয়ের আগেই পটল তোলে।
অর্কও চেয়েছিল অর্পিতাকে বিয়ে করে সুন্দর সংসার করে নাতি-পুতির মুখ দেখে মরবে। এ নিয়ে কতদিন কত স্বপ্নের কথা বলেছে অর্পিতার সঙ্গে... কিন্তু এই ছিল বাস্তবতা সেটা যদি কেউ জানত! ওর এত স্বপ্নের জাহাজই ওকে পরপারে নিয়ে যাবে যদি বুঝত তাহলে হয়ত কোনদিন জাহাজিই হতো না। তবুও অর্ক আশায় আছে, ও বাঁচবে, ওর জাহাজ ফিরে আসবে...
***
রাত প্রায় ১টা! ক্যাপ্টেন তন্নতন্ন করে খুঁজে চলেছে। রেসকিউ বোট নামিয়েও খুঁজে দেখা হচ্ছে কিন্তু কোথাও কারো অস্তিত্ব চোখে পড়ছে না। অর্ককে খুঁজে পেতে কোনো চেষ্টারই ত্রুটি করছে না কেউ। কিন্তু কোথায় সবার প্রিয়, সর্বদা হাসিখুশি সে ক্যাডেট? গত ২ ঘণ্টা ধরে জাহাজ সামনে পিছে ডানে বামে করে অবিরাম ওকে খুঁজছে। অবশেষে রেসকিউ বোট থেকে ব্রিজের ওয়াকিটকিতে খুশির চিৎকার শোনা গেল।
সামান্য দূরেই ওরা একজনকে ভেসে থাকতে দেখতে পাচ্ছে। ক্যাপ্টেনসহ জাহাজের সবাই আনন্দে ফেটে পড়ল। কিন্তু এ আনন্দ মিলিয়ে গেল কিছুক্ষণ পরেই যখন আবার জানানো হলো, অর্ক এ পৃথিবীতে ওর সমস্ত স্বপ্ন অপূর্ণ রেখেই ওর বাবার একাকীত্ব ঘুচাতে চলে গেছে আকাশের দিকে মুখ করে...
লেখক: এক্স-ক্যাডেট, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি (৪৭তম ব্যাচ)
পানি সম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন,পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জনগণের সাথে আরও নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জনগণ থেকে প্রাপ্ত অভিযোগ ও আবেদনের উত্তর দিতে হবে, জনগণকে আশ্বস্ত করতে হবে, তাদের অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রতিকারসহ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
উপদেষ্টা আজ (শনিবার) ঢাকায় গ্রীন রোডস্থ পানি ভবনের মাল্টিপারপাস হলে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৫৩ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে 'পানি খাতে সংস্কার' শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, এই বর্ষার সময়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ০৯ টি জোনের প্রধান প্রকৌশলী-সহ ঊদ্ধতন প্রকৌশলীদের নিয়মিত মাঠে যেতে হবে। তিনি জোনের প্রধান প্রকৌশলীদের মাঠ পর্যায়ে মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করার নির্দেশ দেন যাতে করে মানুষের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে তাৎক্ষণিক সাড়া দেয়া যায়।
পানি সম্পদ উপদেষ্টা আরও বলেন, আমরা আসন্ন বর্ষাকে সামনে রেখে একটা টাস্কফোর্স গঠন করতে চাই যেখানে পানি সম্পদ
সচিবের নেতৃত্বে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিজি, এডিজি এবং সারাদেশের ০৯ জোনের ০৯ জন প্রধান প্রকৌশলী সমন্বয়ে একটা টাস্কফোর্স কাজ করবে। এই টাস্কফোর্স দেখবে এই বর্ষায় কোথায় কোথায় জরুরি ভিত্তিতে আমাদের যেতে হবে, জরুরী ভিত্তিতে কোথায় কোথায় কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, সারাদেশের ০৯ জোনের ০৯ জন প্রধান প্রকৌশলীরদের মধ্যে থেকে যে প্রধান প্রকৌশলীর কাজ সবচেয়ে ভালো হবে এবং যার বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো অভিযোগ থাকবেনা, বর্ষা শেষে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় তাকে একটা পুরস্কার দেবে। একই সাথে ০৯টি জোনের তরুণ প্রকৌশলীদের মধ্যে যে সবচাইতে ভালো কাজ করবে, যার বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ থাকবে না তাকেও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় পুরস্কৃত করবে। হৃদয়ে ধারণ করে কাজ করার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, খুব সহসাই তুরাগ নদী দখল ও দূষণমুক্ত করনের কর্মপরিকল্পনাটা চূড়ান্ত হয়ে যাচ্ছে, আমরা আশা করছি আগামী সেপ্টেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তুরাগ নদী দখল ও দূষণমুক্তকরণের কাজটা শুরু করে দিতে পারবো। এক্ষেত্রে এডিবি তুরাগের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করে দিবে বলে আশ্বস্ত করেছে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু এবং শীতলক্ষ্যা এ ৪টি নদী দখল ও দূষণমুক্তকরণের পরিকল্পনাটা আমরা চূড়ান্ত করে দিয়ে যাব যাতে পরের সরকার এসে এই নদীগুলো দূষণমুক্তকরণের কাজ এগিয়ে নিতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ৬৪ টি জেলা থেকে ৬৪ টি নদী পরিষ্কারকরণের কর্মপরিকল্পনা আমরা এনেছি। তার থেকে ৭ বিভাগের ৭টি নদী, কক্সবাজারের বাঁকখালি এবং ঢাকার চারপাশের ০৪টি সহ মোট ১২টি নদী দখল ও দূষণমুক্ত করণের পরিকল্পনা আমরা চূড়ান্ত করছি। এছাড়া লবণদহ, হাড়িধোয়া এবং সুতাং এই তিনটি নদী দখল ও দূষণমুক্তকরণের কাজটি আমরা জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টফান্ড থেকে বরাদ্দ দিয়ে কাজ করা শুরু করে দেব।
অনুষ্ঠানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ড. শ্যামল চন্দ্র দাস দিবসের তাৎপর্য উল্লেখ করে বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মোঃ তাহমিদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) মিজানুর রহমান। আলোচনা অনুষ্ঠানে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড.আ.ন.ম বজলুর রশীদ-সহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বৃন্দ, মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন দপ্তর-সংস্থার প্রধানগণ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালকগণ, প্রধান প্রকৌশলী-সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সীমান্তে নারী-পুরুষ ও শিশু সহ ৯ জন বাংলাদেশী নাগরিককে পুশ-ইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফ।
শনিবার (৩১ মে) সকাল ১০ টার দিকে উপজেলার ভাগজত ঘাট এলাকায় তাদের হেফাজতে নেয় ৪৭ ব্যাটালিয়ন বিজিবি।
পুশ-ইন করা বাংলাদেশী নাগরিকদের মধ্যে রয়েছে ৪ জন পুরুষ, ২ জন নারী, ২ জন কিশোর এবং ১ জন শিশু।
শনিবার বিকেল ৫ টার সময় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড।
বিজিবি সুত্র জানান, ব্যাটালিয়নের (৪৭ বিজিবি) অধীনস্থ আশ্রায়ন বিওপি’র দায়িত্বপূর্ণ এলাকার সীমান্ত পিলার ১৫৪ হতে আনুমানিক ৩ কিলোমিটার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভাগজত ঘাট এলাকায় একটি নৌকা থেকে ৯ জন বাংলাদেশি নাগরিককে নামতে দেখে স্থানীয় জনগণের সন্দেহ হলে তারা বিষয়টি আশ্রায়ন বিওপিকে অবহিত করে। খবর পেয়ে বিজিবির টহল দল ঘটনাস্থলে গিয়ে ৯ জনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
জিজ্ঞাসাবাদ তারা বলেন, তারা দুটি পৃথক পরিবার এবং প্রায় ৪ (চার) বছর আগে কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারী থানার বামনহাট সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করে। তারা দীর্ঘদিন ধরে ভারতের দিল্লি রাজ্যের অন্তর্গত উত্তর-পশ্চিম দিল্লি জেলার রামপুরা থানার অধীনস্থ একটি এলাকায় ইটভাটায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।
তারা আরো জানায়, সম্প্রতি ভারতের অভ্যন্তরে অবৈধ বাংলাদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে ধরপাকড়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় এবং আত্মসমর্পণকারীদের বিরুদ্ধে কোনো হয়রানি না করার সরকারি ঘোষণায় উৎসাহিত হয়ে নিজেরাই স্থানীয় পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে স্বেচ্ছায় দেশে ফেরার অভিপ্রায় প্রকাশ করে।
পরবর্তীতে শুক্রবার (৩০ মে) তাদেরকে ভারতের জলঙ্গি থানার নিকটবর্তী একটি বিএসএফ ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে থেকে বিএসএফ কর্তৃক কাঁটাতারবিহীন চরাঞ্চলীয় সীমান্ত দিয়ে রাত সাড়ে ১২ টার দিকে বাংলাদেশে প্রবেশ করানো হয়। বাংলাদেশে প্রবেশের পর তারা পায়ে হেঁটে ও ভাড়াকৃত মোটরসাইকেলে চলাচল করে ভাগজত ঘাট এলাকায় এসে উপস্থিত হয়।
বিএসএফ কর্তৃক পুশ-ইন করা ৯ জন বাংলাদেশি নাগরিক বর্তমানে বিজিবির হেফাজতে রয়েছে এবং তারা শারীরিকভাবে সুস্থ আছে বলে জানান বিজিবি।
বিষয়টি বিজিবি কর্তৃপক্ষ ঘটনার পরপরই সংশ্লিষ্ট থানা ও বিএসএফের সাথে যোগাযোগ করে সকাল সাড়ে ১০ টার সময় সীমান্ত পিলার ৮৫/১০-এস এর নিকটবর্তী স্থানে বিজিবি চর-চিলমারী কোম্পানি ও প্রতিপক্ষ ১৪৬ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের জলঙ্গি কোম্পানি কমান্ডারের মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বিজিবি পুশ-ইনের বিষয়ে প্রতিবাদ জানালে বিএসএফ কর্তৃপক্ষ তাদের জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে। তবে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ঘটলে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হস্তান্তর নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করেন।
এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শুক্রবার (৩০ মে) সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশে কোনো রোগীর মৃত্যু হয়নি। এ সময়ে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২২ জন।
শনিবার (৩১ মে) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ভর্তি হয়েছে ২২ জন। নতুন আক্রান্তের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১৩ জন। আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৯ জন।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, চলতি বছর আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৫৬ দশমিক ৫ শতাংশ পুরুষ এবং ৪৩ দশমিক ৫ শতাংশ নারী।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৬ মে পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৪ হাজার ৩৪৫ জন। এর মধ্যে ৫৯ দশমিক ৫ শতাংশ পুরুষ এবং ৪০ দশমিক ৫ শতাংশ নারী।
চিকিৎসক-কর্মচারীদের সঙ্গে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের সংঘর্ষের জেরে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে সেবা কার্যক্রম চারদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে, বিপাকে পড়েছেন রোগী ও স্বজনরা।
শনিবারও (৩১ মে) হাসপাতালের ফটক বন্ধ থাকায় ঢাকার বাইরে থেকে যারা চিকিৎসা নিতে এসেছেন, তাদেরও ফেরত যেতে হয়েছে। অচলাবস্থা শেষে চিকিৎসাসেবা কবে চালু হবে, সে বিষয়েও কিছু বলছে না কর্তৃপক্ষ।
বুধবার (২৮ মে) সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও চারদিন ধরে চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে রেখেছে কতৃপক্ষ। হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রোগীরা আসছেন। কিন্তু ফটক বন্ধ থাকায় ভেতরে যেতে পারছেন না তারা, গেইটের বাইরে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে চলে যেতে হচ্ছে।
এদিকে, বিপাকে পড়েছেন চিকিৎসাধীন ব্যক্তিরাও। জুলাই যোদ্ধা মনির নিজের দুর্দশার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘কি আর করবো ভাই বলেন? কাকে দুঃখের কথা বলবো? চারদিন ধরে হাসপাতাল বন্ধ, চিকিৎসা সেবা বাদ দেন। খাবারও দেওয়া হচ্ছে না। তাই বাসায় চলে আসতে হয়েছে।’
এ বিষয়ে হাসপাতালের কনসালটেন্ট সঞ্জয় কুমার বলেন, ‘আমাদের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জান-এ আলম মৃধার নির্দেশনায় আমরা চিকিৎসকরা কেউ হাসপাতালে যাচ্ছি না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তখন ওনার নির্দেশনাতেই সেবা দিতে যাবো।
তিনি আরও জানান, ‘২৮ মে জুলাই আন্দোলনে আহতরা তাদের চিকিৎসা সেবা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং এক সময় আমাদের স্টাফদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সেদিন সেবা চালু ছিলো। তবে ২৯ মে থেকে পুরোদমে সেবা বন্ধ।
এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জান-এ আলমের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। তবে সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি। নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আগ পর্যন্ত কাজে ফিরতে চাচ্ছেন না চিকিৎসক ও নার্সরা। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এ বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা পাইনি।’
দ্রুতই চিকিৎসা সেবা চালু করতে চেষ্টা করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কিন্তু কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতেও সতর্ক থাকতে হচ্ছে।’
গত বুধবার (২৮ মে) চিকিৎসা সংক্রান্ত ত্রুটি হচ্ছে— এই অভিযোগে হাসপাতালটির চিকিৎসক ও স্টাফদের হামলা করে জুলাই আন্দোলনের আহতরা। এতে চিকিৎসকসহ প্রায় ১৫ জন স্টাফ আহত হন। এরপরই ন চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেলে বন্ধ হয়ে যায় সেবা কার্যক্রম।
এর আগে, গত রবিবার (২৫ মে) চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন চার জুলাইযোদ্ধা বিষপান করেন। তাদের অভিযোগ— উন্নত চিকিৎসা বা পুনর্বাসনের বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।
এরপর মঙ্গলবার দুপুরে চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালের পরিচালককে অবরুদ্ধ করেন আহতরা। একঘণ্টার বেশি সময় অবরুদ্ধ থাকার পর হাসপাতাল সেনাবাহিনীর সহায়তায় তাকে উদ্ধার করা হয়।
এরপর বুধবার সকাল থেকে, নিরাপত্তার দাবি তুলে কর্মবিরতিতে যান হাসপাতালের কর্মচারীরা। এরপরেই, হাসপাতালের কর্মচারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন জুলাই আন্দোলনে আহতরা।
আগামী ২ জুন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য জাতীয় বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। দেশের অর্থনীতি নানা চাপের মুখে পড়লেও এই বাজেট স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এটি হতে যাচ্ছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট। আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন দিলে অন্তর্বর্তী সরকারের একমাত্র বাজেট হবে এটি।
বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ অনিশ্চয়তার মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বেসরকারি বিনিয়োগ জোরদার করা এবং সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে মজবুত করার মতো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি বর্তমান সরকার।
সংসদ না থাকায় ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেট এবার রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভিসহ অন্যান্য বেসরকারি গণমাধ্যমে একযোগে প্রচার করা হবে। আগামী ২ জুন সোমবার বিকাল ৪টায় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের বাজেট বক্তৃতা সম্প্রচার করা হবে। বৃহস্পতিবার এক তথ্যবিবরণীতে এমন খবর দিয়েছে সরকার।
সবশেষ সংসদের বাইরে বাজেট দেওয়া হয়েছিল ২০০৮ সালে। তখন ক্ষমতায় ছিল সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ওই বছরের ৯ জুন তখনকার অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ২০০৮-০৯ অর্থবছরের জন্য ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিলেন।
এবারের বাজেট কিছুটা ছোট হবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিয়ে গিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
জুলাইয়ে নতুন অর্থবছর শুরুর পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এবার বাজেটের আকার সামান্য ছোট হবে বলে ধারণা দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। খসড়া অনুযায়ী বাজেটের আকার ঠিক হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার মত।
ওই অংক চূড়ান্ত হলে স্বাধীনতার পর এই প্রথম বাজেটের আকার আগের অর্থবছরের তুলনায় কমছে।
অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এবারের বাজেট কমানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি দুই লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে, যা চলতি বছরের দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকার থেকে কম।
অর্থাৎ বাজেট ঘাটতি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩.৬২ শতাংশ হবে। এই ঘাটতি পূরণের জন্য সরকার বিদেশি ঋণ, ব্যাংক ঋণ এবং সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভর করবে।
অর্থ উপদেষ্টা জানান, জিডিপির উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৫.৫ শতাংশ, যা চলতি বছরের সংশোধিত বাজেটের ৫.২৫ শতাংশের থেকে কিছুটা বেশি। তবে বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এবং এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ৫ শতাংশের নিচে প্রবৃদ্ধি অনুমান করছে।
সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে। এটিকে সাত শতাংশে নামিয়ে আনতে চাচ্ছে সরকার। যদিও অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে বলেছেন যে, চলমান মূল্যস্ফীতির চাপ এই লক্ষ্য পূরণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর আর্থিক সুরক্ষার জন্য বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সম্প্রসারিত হবে। সুবিধাভোগীর সংখ্যা ও ভাতা উভয়ই বৃদ্ধি পাবে। কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং প্রযুক্তি খাত বাজেটের অগ্রাধিকারপূর্ণ খাত হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বরাদ্দ চলতি রাজস্ব বছরে দুই লাখ ৬৫ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে দুই লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা রাখা হয়েছে। এতে সরকার যে বিনিয়োগবান্ধব পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
আসন্ন বাজেটকে ব্যবসা-বান্ধব আখ্যায়িত করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, জিডিপির প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যে করনীতি প্রণয়ন করা হয়েছে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পাঁচ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের চার লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও পাঁচ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার আগ্রাসী লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা সংস্থা আইএমএফ।
অনুন্নয়ন বাজেট পাঁচ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছাবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এতে বর্তমান রাজস্ব বছরের বরাদ্দের চেয়ে যা ২৮ হাজার কোটি টাকা বাড়বে।
সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখবে। কৃষি, সার ও বিদ্যুতের জন্য ভাতা অব্যাহত থাকবে। তবে, বাজেট ঘোষণার প্রাক্কালে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কেউ শক্তিশালী সামাজিক নিরাপত্তা ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের আশা করছেন, আবার কেউ বাস্তবায়নের জটিলতাকে নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
কাঠামোগত সংস্কার ও কার্যকর বাস্তবায়ন ছাড়া বাজেটের উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য পূরণ কঠিন হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা সম্পদ কর বাড়ানো এবং কর আদায় ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে সরাসরি কর বৃদ্ধি এবং পরোক্ষ করের ওপর নির্ভরতা কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
আজ বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস।
বিকল্প খাদ্য ফসল উৎপাদন ও বিপণনের সুযোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং টেকসই ও পুষ্টিকর ফসল চাষে তামাক চাষিদের উৎসাহিত করতে এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘গ্রো ফুড, নট টোব্যাকো’।
তামাক উৎপাদনে কোম্পানির কূটকৌশল উন্মোচনও এবারের বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। ‘তামাক নয়, খাদ্য ফলান’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে।
দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগের আওতাধীন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল (এনটিসিসি) প্রতিবছরের মত এবারও যথাযথ গুরুত্বের সাথে দিবসটি উদযাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
এ লক্ষ্যে আজ সকাল ৮ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়য়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়।
তামাক চাষ কৃষকের স্বাস্থ্য, মাটির স্বাস্থ্য এবং সার্বিকভাবে গোটা জনস্বাস্থ্য ও পৃথিবীর স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। দীর্ঘমেয়াদে বৈশ্বিক প্রতিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং খাদ্য সংকট সৃষ্টিতেও ভূমিকা রাখে তামাক। বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান খাদ্য সংকটের পেছনে সংঘাত-যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং কোভিড-১৯ মহামারির অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাবের পাশাপাশি তামাক চাষের একটি প্রভাব রয়েছে। বর্তমানে পৃথিবীর ১২৫টিরও বেশি দেশের প্রায় ৪ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয় এবং শীর্ষ তামাক উৎপাদনকারী দেশগুলোর অধিকাংশই নিম্ন ও মধ্যম আয়ভুক্ত দেশ। অন্যদিকে পৃথিবীব্যাপী উৎকৃষ্ট মানের জমি ক্রমবর্ধমানহারে তামাকচাষে ব্যবহৃত হওয়ায় খাদ্য ফসলের ভূমি ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। এসব জমি খাদ্যফসল ফলানোর কাজে ব্যবহার করা গেলে লক্ষ লক্ষ মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণের পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তার সংকট মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা সম্ভব।
বাংলাদেশে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ খুবই কম, মাত্র ৩ কোটি ৭৬ লক্ষ ৭ হাজার একর। অথচ তামাক চাষে ব্যবহৃত মোট জমির পরিমাণের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম। বিশ্বের মোট তামাকের ১.৩ শতাংশই উৎপাদিত হয় বাংলাদেশে। তামাকচাষের কারণে খাদ্য ফসলের জমি ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশে রবি মৌসুমের প্রধান খাদ্য ফসলগুলোর মধ্যে বোরো, গম এবং আলু অন্যতম এবং এ মৌসুমেই তামাক চাষ হয়ে থাকে।
অন্য দিকে বাংলাদেশে তামাকজনিত অসুস্থতায় প্রতি বছর ১ লক্ষ ৬১ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে। দেশে মৃত্যু এবং পঙ্গুত্বের প্রধান চারটি কারণের একটি তামাক।
তামাকজনিত রোগের চিকিৎসা ব্যয় ও কর্মক্ষমতা হ্রাসের আর্থিক ক্ষতি প্রায় ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। তামাকের এসব ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করেই তামাক নিয়ন্ত্রণকে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের অন্তর্ভুক্ত (টার্গেট ৩এ) করা হয়েছে। কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে তামাকের সরবরাহ এবং চাহিদা কমিয়ে আনাই হতে পারে তামাকের নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে ওঠার সঠিক উপায়।
বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস প্রতি বছর ৩১ মে তারিখে বিশ্বজুড়ে পালন করা হয়। ২৪ ঘণ্টা সময়সীমা ধরে তামাক সেবনের সমস্ত প্রক্রিয়া থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে দিবসটি পালন শুরু হয়। এছাড়াও দিবসটির উদ্দেশ্য তামাক ব্যবহারের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব এবং স্বাস্থ্যের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাবের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করানো যা বর্তমানে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর কারণ হিসেবে বিবেচিত এবং যার মধ্যে ধূমপানের পরোক্ষ ধোঁয়ার প্রভাবের কারণে প্রায় ৬ লক্ষ অ-ধূমপায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সদস্য রাষ্ট্রসমূহ ১৯৮৭ সালে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস চালু করে।
বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দ্বারা পরিচালিত আটটি বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য প্রচারাভিযানের মধ্যে একটি, অন্যান্য দিবসগুলোর মধ্যে রয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস, বিশ্ব রক্তদাতা দিবস, বিশ্ব টিকা সপ্তাহ, বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস, বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস, বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস এবং বিশ্ব এইডস দিবস।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ইয়ুথ ক্লাইমেট কোয়ালিশন উদ্বোধনকালে বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় তরুণদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
উপদেষ্টা শনিবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরে ‘ম্যানিফেস্টো টক: ইয়ুথ, এনভায়রনমেন্ট এন্ড ক্লাইমেট’ শীর্ষক আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় তরুণদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। যেকোনো ধরনের লোভ, ক্ষমতার মোহ, আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি থেকে দূরে থেকে তাদের এই দেশের জন্য কাজ করতে হবে।
এসময় পরিবেশ রক্ষার্থে সরকারের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, বায়ুদূষণ মোকাবেলায় সরকার তিনটি বড় উদ্যোগ নিয়েছে-পুরনো বাস অপসারণ, ইলেকট্রিক যানবাহন চালু এবং ঢাকার চারপাশে নতুন ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ। আমরা উন্নয়ন চাই, তবে প্রকৃতিকে ধ্বংস করে নয়। জলাশয় ভরাট, পাহাড় কাটা কিংবা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অবহেলা চলতে পারে না। প্রকৃতিকে সম্মান জানিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা করতে হবে।
পলিথিন বন্ধে নাগরিক সমাজের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, শুধু সরকারের নয়, সকলের দায়িত্ব পরিবেশ রক্ষা করা। বাজারে গেলে পাট বা কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করুন।
এসময় তিনি উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে তিনটি মডেল প্রকল্প নেওয়ার প্রস্তাব করেন।
তিনি বলেন, টেকসই, পচনশীল ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপায়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করতে হবে। সিঙ্গল-ইউজ প্লাস্টিক দ্রুত নিষিদ্ধ করতে হবে।
আমিনবাজার ও মাতুয়াইলের ময়লার স্তূপ থেকে সৃষ্ট আগুন জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, এতে আশপাশের মানুষের ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ছে।এ সমস্যার দ্রুত সমাধান করতে হবে।
উপদেষ্টা বলেন, রাস্তা সম্প্রসারণের নামে পুরোনো গাছ কাটা চলবে না। গাছ রেখে উন্নয়ন পরিকল্পনা করতে হবে। বন বিভাগ ও গণপূর্ত অধিদপ্তর মিলে জাদুঘরের নকশা পরিবর্তনের মাধ্যমে গাছ রক্ষার চেষ্টা করছে-এটাই আশার বার্তা।
তিনি আরো জানান, ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি গাছ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর প্রমাণিত হওয়ায় তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পরিবেশবান্ধব গাছ লাগানোর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক জিয়াউল হক ও স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও, তরুণদের নেতৃত্বাধীন ১৬টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ইয়ুথ ক্লাইমেট কোয়ালিশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে তরুণ জলবায়ুকর্মীসহ দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দও অংশ নেন এবং নিজ নিজ দলের পক্ষ থেকে জলবায়ু ও পরিবেশ বিষয়ে তাদের অবস্থান তুলে ধরেন। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের ইশতেহারে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনকে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলেও তারা জানান।
মন্তব্য