× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য শিল্প ইভেন্ট উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য আফগানিস্তান ১৫ আগস্ট কী-কেন স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও যৌনতা-প্রজনন মানসিক স্বাস্থ্য অন্যান্য উদ্ভাবন প্রবাসী আফ্রিকা ক্রিকেট শারীরিক স্বাস্থ্য আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়া সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ ইউরোপ ব্লকচেইন ভাষান্তর অন্যান্য ফুটবল অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

বাংলাদেশ
কবিতায় বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন
google_news print-icon

কবিতায় বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন

কবিতায়-বঙ্গবন্ধুর-স্বদেশ-প্রত্যাবর্তন
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে এদেশের শিল্পী-সাহিত্যিকরা অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন সৃজনশীলতার উঠোনে। যেমন, সিকান্দার আবু জাফরের ‘সে নাম মুজিব’ ও আবুবকর সিদ্দিকের ‘প্রশ্ন’ জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে লেখা কবিতা। ফিরে আসা বঙ্গবন্ধুর চোখে অশ্রু ছিল সেদিন। কোনো কোনো কবি সেই দৃশ্যও কবিতার চরণে উপস্থাপন করেছেন।

বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্যে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সমুজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। কেবল কবিতায় নয় গল্প-উপন্যাস ও চিত্রকলায় তার ফিরে আসা অন্ধকার থেকে আলোর জগতে ফিরে আসা হিসেবে চিহ্নিত। স্বপ্ন ও আশাবাদীতায় জাগ্রত জনতার কথাও এসেছে এ প্রসঙ্গে। অন্যদিকে বাঙালির স্বাধীনতা লাভের ইতিহাসও বিবৃত হয়েছে। দেশভাগের পর ১৯৭১ পর্যন্ত যে ঘটনাগুলো মুখ্য হয়ে উঠেছিল তার কয়েকটি দিক কবিতা বিশ্লেষণের পূর্বে স্মরণ করা যেতে পারে।

২.

১৯৪৮ সালের মার্চের ভাষা প্রশ্নে প্রতিবাদের পথ বেয়ে ১৯৪৯-এ জন্ম হয় ‘আওয়ামী মুসলিম লীগে’র। এই রাজনৈতিক সংগঠনটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান অনুঘটক। অন্যদিকে বিভাগোত্তর কালের কমিউনিস্ট পার্টির একমাত্র প্রগতিশীল সাহিত্য সংগঠন ‘প্রগতি লেখক ও শিল্পী সঙ্ঘ’ ক্রমশই কমিউনিস্ট বিপ্লবের দ্বিধাবিভক্ত ও তাত্ত্বিক বিতর্কের ফলে ১৯৫০ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা জেলায় এর অস্তিত্ব একেবারে বিলুপ্ত হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের অবদমন নীতি ও বাংলাদেশকে পাকিস্তানের নতুন-কলোনিতে পরিণত করার চক্রান্তে এবং রাষ্ট্রভাষা প্রসঙ্গে যে গভীর ষড়যন্ত্র ও বিতর্ক উত্থাপিত হয়, এরই ফলে সংগঠিত হয় ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন।

১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ এই কালক্রমিক ঘটনা প্রবাহে পাকিস্তানের শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ ২১ ফেব্রুয়ারির রক্তদান ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে বাঙালির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অস্তিত্বের জানান দেওয়ার ঘটনা। দেশ-বিভাগোত্তর কেন্দ্রীয় প্রশাসনের রাজনৈতিক কূটজাল, অত্যাচার, নিপীড়ন, ধর্মীয় কলহ ও দুর্নীতির ভয়াবহ বিস্তারের বিরুদ্ধে বাঙালির ঐক্য ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয় লাভ অনিবার্য করে তোলে। কিন্তু যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রিসভা গঠিত হলেও পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের চক্রান্তে বাংলাদেশের খাদ্য পরিস্থিতির অবনতি ও বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে দাঙ্গার সৃষ্টি করে ১৯৫৪ সালের মে মাসে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা পরিকল্পিতভাবে বাতিল করা হয়।

১৯৫৪ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক প্রশাসনের বিচিত্রমুখী ষড়যন্ত্রের পরে দেশে সামরিক জান্তার ক্ষমতা দখলের ঘটনা ঘটে। সামরিক শাসক দেশের রাজনীতি, সংস্কৃতি, সাহিত্য প্রতিটি ক্ষেত্রেই কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হয়। মূলত দেশবিভাগ থেকে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন এবং পরবর্তী পাঁচ বছর বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ দ্বন্দ্ব-জটিল হলেও এর সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলটি ছিল সকল বিকৃতি, কুসংস্কার, কূপমণ্ডুকতা এবং জাতি-ধর্ম-বর্ণ ও সম্প্রদায়গত সকল প্রকার বৈরীভাবের বিরুদ্ধে মানবতার আদর্শকে রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনের সকল ক্ষেত্রে মহিমাদীপ্ত করার কাল।

এদিক থেকে ১৯৫৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কাগমারিতে পূর্ব পাকিস্তানের আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনের আন্তর্জাতিক মানের সাংস্কৃতিক সম্মেলনের কথা উল্লেখযোগ্য। রাজনীতির সঙ্গে সংস্কৃতির এই যোগসূত্র বাংলাদেশের কবিদের আলোড়িত করেছিল স্বাভাবিক কারণে। তবে ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৯ সালের সামরিক জান্তার করতলগত বাংলাদেশের নগর-গ্রামের গণজাগরণ এ অঞ্চলের সমাজ মানসের প্রগতিশীল রূপান্তরের স্বতন্ত্র মাত্রা হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। এরপর স্বাধিকার অর্জনের পথে ১৯৬৯-এর পথ বেয়ে ১৯৭১-এর মুক্তিসংগ্রাম দেশ বিভাগের পরবর্তী আরেকটি দেশবিভাগের ঘটনাকে ত্বরান্বিত করে দেয়। জন্ম হয় নতুন দেশ- ‘বাংলাদেশ’।

১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত বিভিন্ন কালানুক্রমিক ঘটনা ধারায় আমাদের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত মানসে অসাম্প্রদায়িক চেতনা, মানবতাবাদী আদর্শ এবং প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক জীবনবোধের বিকাশ ঘটে। কবিরা সেই শ্রেণির অংশ হিসেবে তাদের কবিতার ধারায় ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে নির্মাণ করেন স্বাধিকারের সপক্ষে আমাদের সমাজমানসের বিচিত্র তরঙ্গ। মনে রাখা দরকার ভাষা-আন্দোলন থেকে ১৯৭১ পর্যন্তই কেবল নয় ২০২০ সালে প্রকাশিত বঙ্গবন্ধুর নানান অনুষঙ্গে অভিব্যক্ত এদেশের কবিতায় স্বতন্ত্র পর্যবেক্ষণ যুক্ত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু নিজে কবি ছিলেন না কিন্তু ছিলেন রাজনীতির কবি- ‘রাজনীতির প্রকৌশলী নন মুজিব, মুজিব হচ্ছেন রাজনীতির কবি, বাঙালির স্বাভাবিক প্রবণতা প্রয়োগিক নয়, শৈল্পিক। তাই মনে হয়, বাংলাদেশের সকল মানুষ, শ্রেণি ও মতাদর্শকে এক সূত্রে গাঁথা হয়ত কেবল মুজিবের মতো রাজনৈতিক কবির পক্ষেই সম্ভব।’ বেলাল চৌধুরী বলেছেন, কবিতা একটি জাতির ভাষার স্মৃতি। (কবিতায় বঙ্গবন্ধু, ভূমিকা, ২০১০) প্রকৃতপক্ষে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত কবিতায় বাঙালি জাতির ভাষার স্মৃতি উচ্চকিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর মতো মহাপুরুষকে নিয়ে রচিত কবিতায় কবি সমাজ ও জীবনের প্রতি দায়বদ্ধ থাকতে বাধ্য। কারণ কবিতার মাধ্যমে কবি একাত্মতার বাণী প্রচার করেন। মানুষের সঙ্গে মানুষের একাত্ম হওয়ার এই বাণী অসংখ্য কবির অজস্র চরণে কখনও শেখ মুজিব, কখনও বঙ্গবন্ধু স্বাক্ষরিত হয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে।

৩.

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় একটি দিন। সেদিন মহান নেতা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে ফিরে এসেছিলেন মুক্ত স্বদেশে। যে স্বদেশকে তিনি নিজের জীবনের অংশ করে নিয়েছিলেন। সেদিন ঢাকার ১০ লাখ মানুষের সামনে ভাষণ দিতে গিয়ে বারবার ভেঙে পড়েছেন; অশ্রু সজল নয়নে চেয়েছেন মানুষের মুখপানে। ১৯৭১ সালে দেশের মধ্যে যা কিছু ঘটেছে তা তিনি জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরই জেনেছিলেন। হানাদার বাহিনী ও এদেশীয় লুটেরা রাজাকার-আলবদর-আলশামসের অত্যাচারের কথা শুনেছিলেন। এজন্যই আবেগময়ী ভাষণে তিনি এদেশকে পাকিস্তান কর্তৃক শ্মশান করে ফেলার কথা বলেছিলেন। তিনি কথা বলতে পারছিলেন না। তার অনুভূতি তখন প্রতিটি তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে শিহরণ জাগাচ্ছিল।

যখন তাকে বহন করা বিমানটি ঢাকার মাটি স্পর্শ করছিল, তখন বিপুল জনতার ঢেউ দেখে তিনি বলেছিলেন- ‘আমার দেশের মানুষ আমাকে এত ভালোবাসে। আমি এদেরকে খাওয়াবো কীভাবে?’ (দ্রষ্টব্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান: জীবন ও রাজনীতি, ২০০৮, বাংলা একাডেমি, পৃ ৮৬১-৬৪) দেশ পরিচালনায় জননেতার এই উৎকণ্ঠা সত্যিই শেষ দিন পর্যন্ত অটুট ছিল। যুদ্ধোত্তর ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে তিনি প্রকৃত দেশপ্রেমিক ও বীরের মতো মানুষের জন্য উদগ্রীব হয়েছেন। একাত্তরে হত্যাযজ্ঞের শিকার মানুষের আত্মীয়-স্বজনের হাহাকার, নিরাশ্রয় আর খাদ্যহীন পরিস্থিতির কথা বলে তিনি বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দিলেন পাকিস্তানীদের বীভৎসতার চালচিত্র।

‘স্বাধীন’ শব্দটি তার প্রাণের গহীন থেকে উচ্চারিত হলো - ‘ভাইয়েরা আমার লক্ষ মানুষের প্রাণদানের পর আজ আমার দেশ স্বাধীন হয়েছে। আজ আমার জীবনের সাধ পূর্ণ হয়েছে। বাংলাদেশ আজ স্বাধীন।’(প্রাগুক্ত)

এই স্বাধীন দেশের প্রথম সংবর্ধনায় তিনি তার ভাষণে আত্মত্যাগী মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। শহিদদের জন্য অন্তরের অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন। বলেছেন- ‘আমার বাংলায় আজ এক বিরাট ত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীনতা এসেছে। তিরিশ লক্ষ লোক মারা গেছে। আপনারা জীবন দিয়েছেন, কষ্ট করেছেন। বাংলার মানুষ মুক্ত হাওয়ায় বাস করবে, খেয়ে-পরে সুখে থাকবে, এটাই ছিল আমার সাধনা।’(প্রাগুক্ত)

তিনি সেদিন ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। তার মুক্তির জন্য ইন্দিরা গান্ধীর প্রচেষ্টাকে স্মরণ করেছেন। আর বড় হৃদয়ের মানুষ ছিলেন বলেই শত্রু পাকিস্তানিদেরও মঙ্গল কামনা করেছেন। কারণ বাংলাদেশ তখন স্বাধীন। এর চেয়ে বড় আর কোনো চাওয়া ছিল না তার।

১০ জানুয়ারির ভাষণেই বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন- ‘অনেকেই আমার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছে আমি তাদের জানি। ইয়াহিয়া সরকারের সাথে যারা সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করেছে তাদের বিরুদ্ধে যথাসময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’(প্রাগুক্ত)

তিনি আরও উল্লেখ করে বলেছিলেন- ‘২৫ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত ৯ মাসে বর্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এদেশের প্রায় সব বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করেছে। তারা আমার মানুষকে হত্যা করেছে। হাজার হাজার মা-বোনের সম্ভ্রম নষ্ট করেছে।’(প্রাগুক্ত)

বিশ্ব মানবতার ইতিহাসে জঘন্যতম কুকীর্তির তদন্ত হওয়া দরকার বলেই পরবর্তীকালে ১১ হাজার কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীদের কারাগারে আটকও রাখা হয়েছিল। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে সপরিবারে জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করার পরে জেনারেল জিয়া ক্ষমতা গ্রহণ করে তাদের জেল থেকে ছেড়ে দেন।

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে এদেশের শিল্পী-সাহিত্যিকরা অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন সৃজনশীলতার উঠোনে। যেমন, সিকান্দার আবু জাফরের ‘সে নাম মুজিব’ ও আবুবকর সিদ্দিকের ‘প্রশ্ন’ জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে লেখা কবিতা। ফিরে আসা বঙ্গবন্ধুর চোখে অশ্রু ছিল সেদিন। কোনো কোনো কবি সেই দৃশ্যও কবিতার চরণে উপস্থাপন করেছেন। (শেখ মুজিব একটি লাল গোলাপ, প্রাগুক্ত, পৃ ৫৬৯) আবুবকর সিদ্দিক ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় ফেরা’ কবিতায় বঙ্গবন্ধুর ‘স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের আনন্দ এবং বিরান বাংলায় স্বজন হারানোর বেদনাকে পাশাপাশি উপস্থাপন করেছেন।’(সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল, আমি তোমাদেরই লোক, পৃ ৫৭১) কামাল চৌধুরীর ‘১০ জানুয়ারি ১৯৭২’- এ বিষয়ের আরেকটি উল্লেখযোগ্য কবিতা। বঙ্গবন্ধু ফিরে এলেন, মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হলেন। কিন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের হাল টেনে ধরলেন, মানুষ আশায় বুক বাঁধল-

‘চতুর্দিকে শোক, আহাজারি, ধ্বংসচিহ্ন, পোড়াগ্রাম, বিধ্বস্ত জনপদ

তিনি ফিরে আসলেন, ধ্বংসস্তূপের ভেতর ফুটে উঠল কৃষ্ণচূড়া

মুকুলিত হ’ল অপেক্ষার শিমুল

শোক থেকে জেগে উঠল স্বপ্ন, রক্তে বাজল দারুণ দামামা

বেদনার অশ্রুরেখা মুছে ফেলে

‘জয় বাংলা, জয় বাংলা’ ব’লে হেসে উঠল

লতাগুল্ম, ধূলিকণা, পরিপূর্ণ দীপ্ত পতাকা।’(কবিতায় বঙ্গবন্ধু, ২০১২, পৃ ৩৭)

সিকানদার আবু জাফর রচিত ‘ফিরে আসছেন শেখ মুজিব’ সম্পর্কে কবীর চৌধুরী লিখেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের মাটিতে, তার মুক্তস্বদেশে ফিরে আসেন ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের আগেই আন্তর্জাতিক তৎপরতা ও পাকিস্তানের বাস্তব পরিস্থিতির ফলে তখন তার মুক্তি ও বাংলাদেশে ফিরে আসার বিষয়টি সুনিশ্চিত হয়ে যায়, তখন সংগ্রামী কবি সিকানদার আবু জাফর ‘ফিরে আসছেন শেখ মুজিব’ নামে একটি চমৎকার কবিতা লেখেন। সিকানদার আবু জাফর তখন আরও বহু দেশত্যাগী বাংলাদেশের মানুষের মতো ভারতের পশ্চিম বাঙলায় ছিলেন।’(কবীর চৌধুরী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, বাঙালি জাতীয়তাবাদ মুক্তবুদ্ধির চর্চা, র‌্যাডিকেল এশিয়া পাবলিকেশন্স, লন্ডন, ১৯৯২, পৃ ১১) মূলত কবি এ কবিতায় বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা সংগ্রামে ডাকের সফলতার চিত্র তুলে ধরেছেন।

বাঙালির ত্যাগ-তিতিক্ষার ফল স্থপতিরূপে বঙ্গবন্ধুর ফিরে আসা। তার প্রত্যাবর্তন আমাদের স্বপ্নগুলো বাস্তবে পরিণত করে। কবি জানতেন বঙ্গবন্ধু ফিরে আসবেন। ৭ মার্চের ডাক ব্যর্থ হতে পারে না। মা- বোনদের ইজ্জত বৃথা যেতে পারে না। নির্মলেন্দু গুণের ‘প্রত্যাবর্তনের আনন্দ’ বঙ্গবন্ধুর আত্মকথনে রচিত। স্বদেশে ফিরে আসা বীরের চেতনার নানা প্রান্ত উন্মোচিত হয়েছে এখানে। পঁচাত্তরের পনের আগস্ট ও পরবর্তীতে সত্যের জয়গান সম্পর্কে জাতির পিতার কথনে কবির চরণ এরকম-

‘আনন্দের ঘোর কাটতে না কাটতেই,

একাত্তরের পরাজিত এজিদবাহিনী

রাত্রির অন্ধকারে সংগঠিত হয়ে পঁচাত্তরের পনেরই আগস্ট

সপরিবারে হত্যা করলো আমাকে।...

বহুদিন পর আজ সত্য জয়ী হয়েছে-,

সংগ্রাম জয়ী হয়েছে, সুন্দর জয়ী হয়েছে।

আজ আমার খুব আনন্দের দিন।’( মুজিবমঙ্গল, ২০১২, পৃ ৬১-৬২ )

কবি আসাদ মান্নানের কবিতায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বাল্যকালের অভিজ্ঞতাকে বর্তমানের বোধিতে ধরা, বৃহত্তর পরিসরে জাতির পিতার চিরন্তন ভাবমূর্তিকে প্রকাশ করা সত্যিই অভিনব। কখনোবা আবেগের সঙ্গে যুক্তির বিন্যাসে ও লেখনী নিঃসৃত চিত্রকল্পসজ্জায় উপলব্ধিময় আখ্যানের রূপ দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবির চিন্তা পাঠকের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন প্রযত্নে। ভাষার নানা নির্দেশ ও ইতিহাস অনুসন্ধিৎসার উপস্থাপনা এবং বাংলা কবিতার ঐতিহ্য সংলগ্নতায় আসাদ মান্নান অনন্য। ১০ জানুয়ারি নিয়ে লেখা ‘পিতা তুমি ফিরে এলে’ কবিতার একটি অংশ-

‘নতুন আশার টানে ছুটে যায় আলো জ্বালতে গঞ্জের বাজারে-

কামার কুমার কুলি জেলে তাঁতী এক পায়ে নেমেছে রাস্তায়:

ভয়াবহ অই দীর্ঘ রক্তপথ পার হয়ে আলোর নাবিক

তুমি পিতা ফিরে এলে বীর বেশে বিজয়ী যোদ্ধার মতো-

স্বপ্নের জাহাজে চড়ে তীরে এসে দাঁড়িয়েছ মুক্তির হাওয়ায়;

মাঠে মাঠে সোনা ফলে, কৃষকের হাসি জমে ধানের গোলায়:

তোমার আভার কাছে পরাজিত সূর্যটাকে মেঘের আড়ালে

ঢেকে রাখে দুঃখিনী মুজিব বাংলা- বাঙালির স্বাধীন ভূখণ্ড।’

এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রচনায়, হাবীবুল্লাহ সিরাজীর কবিতায় কিংবা অজস্র প্রবন্ধ-নিবন্ধে বঙ্গবন্ধুর ফিরে আসা পরিপূর্ণ মুক্তির দিশা হিসেবে এবং স্বাধীনতা অর্জনের সার্থকতায় শোভিত হয়েছে।

বস্তুত ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর ফিরে আসা এদেশবাসীর কাছে ছিল বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম আলোড়িত ঘটনা। এজন্য কবিদের অনুভূতি ও মননে সেই সন্দ্বীপন ইতিহাস ও কল্পনায় রঙিন হবে এটাই স্বাভাবিক। কবিতার চরণে সেই দিনটির আনন্দ, উচ্ছ্বাস ফিরে আসার তাৎপর্যে অনন্য হয়ে প্রকাশ পেয়েছে।

লেখক: ড. মিল্টন বিশ্বাস, কবি, কলামিস্ট, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ এবং অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

মন্তব্য

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ
Professor Yunus Press Secretary highlighted the commitment of democracy and humanitarian solidarity during the UNGA visit

ইউএনজিএ সফরে গণতন্ত্র ও মানবিক সংহতির অঙ্গীকার তুলে ধরেছেন অধ্যাপক ইউনূস: প্রেস সচিব

ইউএনজিএ সফরে গণতন্ত্র ও মানবিক সংহতির অঙ্গীকার তুলে ধরেছেন অধ্যাপক ইউনূস: প্রেস সচিব

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৮০তম অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের অংশগ্রহণ বাংলাদেশের দায়িত্বশীল বৈশ্বিক ভূমিকাকে আরও সুদৃঢ় করেছে। এতে গণতান্ত্রিক শাসন, মানবিক সংহতি ও গঠনমূলক আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রতি বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি নতুনভাবে প্রতিফলিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

আজ নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা এক বার্তায় তিনি প্রধান উপদেষ্টার ইউএনজিএ সফরের সাফল্যগুলো তুলে ধরেন।

শফিকুল আলম জানান, অধ্যাপক ইউনূস গত সপ্তাহে নিউইয়র্কে ইউএনজিএ-র উচ্চপর্যায়ের অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলকে নেতৃত্ব দেন। সেখানে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে উদ্দেশ করে বক্তব্য রাখেন, বিশ্বনেতাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন এবং গণতন্ত্র, মানবিক নেতৃত্ব ও ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেন।

প্রেস সচিব বলেন, ইউএনজিএ-র ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশে গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনব্যবস্থার প্রতি অটল অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি স্বাধীন, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করে বৈশ্বিক মহলকে আশ্বস্ত করেন যে বাংলাদেশ জনগণ ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের লালিত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষায় প্রস্তুত।

শফিকুল আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সফরে তিন রাজনৈতিক দলের ৬ প্রতিনিধি ছিলেন। তিনি উল্লেখ করেন, ‘এটাই প্রথমবার এমন একটি মর্যাদাপূর্ণ প্রতিনিধিদল একসঙ্গে সফরে যোগ দিল। তারা কূটনীতিক, প্রবাসী নেতৃবৃন্দ ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এসব যোগাযোগ বিশ্বের কাছে শক্তিশালী বার্তা পৌঁছে দিয়েছে যে গোটা বাংলাদেশই গণতান্ত্রিক, স্বাধীন ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে একসঙ্গে এগোচ্ছে।’

বিশ্বনেতাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার কৌশলগত বৈঠক প্রসঙ্গে আলম বলেন, অধ্যাপক ইউনূস উচ্চপর্যায়ের একাধিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন, যা বাংলাদেশের বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব জোরদার ও যৌথ অগ্রাধিকারের প্রসারে ভূমিকা রাখে।

তিনি জানান, ইতালি, ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, আলবেনিয়া, কসোভো ও ভুটানের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে গণতান্ত্রিক শাসন, বাণিজ্য, জলবায়ু সহনশীলতা ও মানব উন্নয়নের বিষয় গুরুত্ব পায়।

আলম আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, ইউএনএইচসিআর প্রধান ফিলিপো গ্রান্ডি, ইউনিসেফ নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল, জাতিসংঘের আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল রাবাব ফাতিমা, বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা, নেদারল্যান্ডসের রানি ম্যাক্সিমা এবং আইএমএফ ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার সঙ্গে বৈঠক করেন।

এছাড়া অধ্যাপক ইউনূস মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আয়োজিত নৈশভোজে অংশ নিয়ে শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূতের সঙ্গেও তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা হয়, যেখানে আঞ্চলিক সহযোগিতা ও বহুপাক্ষিক কূটনীতিতে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ভূমিকা উঠে আসে।

রোহিঙ্গা সংকটে মানবিক নেতৃত্ব প্রসঙ্গে আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সফরের মূল বিষয় ছিল রোহিঙ্গা ইস্যু। সেখানে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া এক মিলিয়নের বেশি বাস্তুচ্যুত মানুষের প্রতি অব্যাহত মানবিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়। জাতিসংঘ সংস্থা ও দাতা দেশগুলোর সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা নিরাপদ, স্বেচ্ছায় ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং সংকট যেন বৈশ্বিক মনোযোগ থেকে হারিয়ে না যায় সে আহ্বান জানান। প্রেস সচিব জানান, এ সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের সহায়তায় ৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রতিশ্রুতি আনতে সক্ষম হন।

শফিকুল আলম বলেন, জবাবদিহি ও উন্নয়নে সরকারের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরতে অধ্যাপক ইউনূস জাতিসংঘকে অনুরোধ জানান বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের অগ্রগতির একটি স্বাধীন মূল্যায়ন পরিচালনা করতে। এ অনুরোধ ঢাকার অর্থনৈতিক যাত্রাপথে আস্থা ও গঠনমূলক আন্তর্জাতিক মূল্যায়নের প্রতি উন্মুক্ততা প্রকাশ করে।

প্রেস সচিব জানান, ইউএনজিএ সফরে বিদেশে কর্মসংস্থান ও শ্রমশক্তি রপ্তানির নতুন সুযোগও উন্মোচিত হয়। কসোভো, আলবেনিয়া ও ইউরোপের আরও কয়েকটি দেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনায় বাংলাদেশের শ্রমিকদের জন্য শ্রমবাজার সম্প্রসারণের বিষয়ে সম্ভাবনা খোঁজা হয়েছে। তিনি বলেন, এসব সুযোগ প্রবাসী আয় বাড়াতে ও নতুন অংশীদার দেশের সঙ্গে জনগণের পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদার করতে সহায়ক হবে।সূত্র : বাসস

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Naogaon protest against Israeli barbarism

ইসরাইলি বর্বরতার বিরুদ্ধে নওগাঁয় প্রতিবাদ

ইসরাইলি বর্বরতার বিরুদ্ধে নওগাঁয় প্রতিবাদ
গাজাগামী ত্রাণবাহী জাহাজে ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদে নওগাঁয় বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ (শুক্রবার) জুমার নামাজের পর শহরের নওজোয়ান মাঠের সামনে সাধারণ ছাত্র-জনতার ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়।
শিক্ষার্থী মোরশেদ আলম এর সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিল নওগাঁ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম, মাওলানা দেলোয়ার হোসেন, নওগাঁ ডিবেট ক্লাব এর সভাপতি তানজিম বিন বারি, ছাত্র প্রতিনিধি আরমান হোসেন প্রমূখ।
বক্তারা বলেন, অবরুদ্ধ গাজার মানুষের জন্য বিশ্ব মানবাধিকারকর্মীদের উদ্যোগে পাঠানো 'গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা' নৌবহরে ইসরাইল ‘জলদস্যু’র মতো হামলা চালিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকারকে চরমভাবে লঙ্ঘন করেছে। বৃহস্পতিবার রাতের আঁধারে ইসরাইলের ‘শায়েতেত ১৩’ নামে একটি বিশেষ নৌ কমান্ডো ইউনিট বহরে হামলা চালিয়ে অধিকাংশ জাহাজ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় এবং সেগুলোর শত শত আরোহীকে আটক করে।
বহরটিতে বিশ্বের ৪৪টি দেশের প্রায় ৫০০ অধিকারকর্মী ছিলেন, যারা গাজার অবরুদ্ধ ও যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষের জন্য শান্তিপূর্ণভাবে ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছিলেন। বক্তারা বলেন, ইসরাইলের এই বর্বর হামলা কেবল মানবিক ত্রাণ সহায়তা আটকানোই নয়, বরং এটি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের সামিল। বক্তারা আরও বলেন, ইসরাইল একদিকে গাজায় ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে, অন্যদিকে সেই ধ্বংসকবলিত জনপদের জন্য পাঠানো সাহায্যও বাধাগ্রস্ত করছে, যা সম্পূর্ণ অনৈতিক ও ঘৃণ্য।
বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা ইসরাইলের এই বর্বরোচিত কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানান যেন অবিলম্বে ইসরাইলের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
গাজার নিষ্পেষিত মানুষের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে বক্তারা আরও বলেন, মানবতা আজ ক্রমেই বিপন্ন হয়ে পড়ছে, আর বিশ্ব সম্প্রদায়ের উচিত এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হয়ে দাঁড়ানো।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Pepper purple is more priced than chicken

মুরগির চেয়ে মরিচ-বেগুনের দাম বেশি

মুরগির চেয়ে মরিচ-বেগুনের দাম বেশি

টানা বৃষ্টি আর বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পূজা ঘিরে চড়েছে সবজি বাজার। এক মাসের ব্যবধানে বেশির ভাগ সবজির দর কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি উত্তাপ কাঁচামরিচে। মাস খানেকের ব্যবধানে মরিচের দর বেড়েছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। গোল বেগুনেও যেন লেগেছে আগুন! কেজিতে সবজিটির দাম বেড়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। তবে এক মাসের ব্যবধানে অন্য নিত্যপণ্যের দামে তেমন হেরফের দেখা যায়নি।

সবজির খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, এমনিতেই বর্ষার সময় সবজির উৎপাদন ও জোগান কম থাকে। এর মধ্যে দুই-তিন দিন ভারি বৃষ্টি হয়েছে। ফলে ক্ষেতে পানি জমে আছে। এ কারণে উৎপাদন এলাকা থেকে বাজারে সবজি কম আসছে।

আড়তদাররা জানান, তারা কমিশনে সবজির ব্যবসা করেন। ফলে দাম কম-বেশির পেছনে তাদের ভূমিকা নেই। দাম নির্ভর করে সরবরাহের ওপর। তবে বিভিন্ন উৎসব কিংবা বৃষ্টির অজুহাতে বাজারে যেভাবে দর বাড়ে, তা অযৌক্তিক। দাম স্বাভাবিক রাখতে পাহাড়ি অঞ্চলে সবজি চাষ করে সরবরাহ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন আড়তদাররা।

ভোক্তাদের অভিযোগ, ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে দাম বাড়ান। সরকারের নজরদারি না থাকলে তারা সুযোগ পেয়ে যান। ব্যবসায়ীরা একবার জিনিসপত্রের দাম বাড়ালে আর কমাতে চান না। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ।

রাজধানীর তেজকুনিপাড়া থেকে ৮০ টাকায় ২৫০ গ্রাম কাঁচা মরিচ কেনার পর এক ক্রেতা বলেন, বাজারে সবজি বলেন আর মরিচ– কোনো কিছুরই তো অভাব দেখলাম না। কিন্তু বৃষ্টির দোহাই দিয়ে ব্যবসায়ীরা যেভাবে ডাকাতি করছে, তাতে আমার মতো নিম্ন শ্রেণির লোকের বিপদ বাড়ছে। তাঁর অভিযোগ, বাজারে সরকারের দুর্বল নজরদারির কারণে জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে।

ব্যবসায়ীরা সত্যি ভোক্তার পকেট কাটছেন, নাকি আসলেই বাজারে সবজির সরবরাহ কম– এর প্রমাণ পাওয়া যাবে এক মাস আগের সবজির দরে চোখ রাখলে। গত ৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি লম্বা বেগুন ৬০ থেকে ১০০ টাকা, গোল বেগুন ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ১২০, বরবটি ৮০ থেকে ১০০, করলা ৮০ থেকে ১০০, পটোল ৬০ থেকে ৭০, ধুন্দল ও ঝিঙা ৬০ থেকে ৮০, ঢ্যাঁড়শ ৬০ থেকে ৮০, কাঁকরোল ৭০ থেকে ১০০ টাকা এবং চিচিঙ্গা ৫০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। এ ছাড়া কাঁচামরিচ মানভেদে ১৬০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি প্রতি পিস লাউ ৫০ থেকে ৭০ টাকা, টমেটো ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, শসা ৬০ থেকে ৮০ টাকা ও চায়না গাজর ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর হাতিরপুল, মোহাম্মদপুর টাউন হল ও তেজকুনিপাড়ার খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সব ধরনের সবজির দর এক মাসের তুলনায় ১০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ৭০ থেকে ৮০ টাকার নিচে তেমন কোনো সবজি নেই।

এসব বাজারে গতকাল কাঁচামরিচের কেজি বিক্রি হয়েছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা দরে। একইভাবে চড়া দেখা গেছে গোলবেগুনের দামে, প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়। এই দর ব্রয়লার মুরগির চেয়ে অন্তত ৪০ টাকা বেশি। খুচরা পর্যায়ে ব্রয়লারের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা দরে। বাজারে এখন লম্বা বেগুন ৮০ থেকে ১২০, করলা ১০০ থেকে ১২০, পটোল ৭০ থেকে ৮০, ঢ্যাঁড়শ ৭০ থেকে ৯০, টমেটো ১৪০ থেকে ১৫০, চায়না গাজর ১২০ থেকে ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি চিচিঙ্গা, ঝিঙে ও ধুন্দলের কেজি কিনতে ক্রেতার খরচ হবে কেজিতে ৭০ থেকে ৮০ টাকা।

খুচরা বাজারে সবজির দাম চড়লেও ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে পাইকারি বাজারে। রাজধানীর অন্যতম বড় আড়ত কারওয়ান বাজার। এই বাজার থেকে কিনলে সব ধরনের সবজির কেজিতে ক্রেতার ২০ থেকে ৩০ টাকা সাশ্রয় হয়।

পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচরা বাজারে এত ব্যবধান কেন– জানতে চাইলে হাতিরপুল কাঁচাবাজারের সবজি ব্যবসায়ী মো. অপু বলেন, ‘পূজা ও বৃষ্টির কারণে সবজির দাম কিছুটা বেশি। আমরা কারওয়ান বাজার থেকে পাইকারি সবজি কিনে আনি। সেখানে সকালে এক দাম, বিকেলে আরেক দাম। আমরা সাধারণত সকালেই সবজি কিনে আনি।’ এই ব্যবসায়ীর ভাষ্য, বৃষ্টি হলে সব সময় কাঁচামরিচের দাম বাড়ে। এখন দেশে কাঁচামরিচের উৎপাদন খুব কম। বলতে গেলে ভারতের মরিচের ওপর পুরো বাজার নির্ভর করে। পূজার কারণে ভারত থেকে মরিচ কম আসায় বাজারে এর প্রভাব পড়ছে।

সরবরাহ বাড়াতে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি ইমরান মাস্টার। তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুমে সবজির ফলন খুব কম হয়। বৃষ্টি হলে জমিতে পানি জমে। এতে গাছ মরে যায়। গ্রামে মানুষ ঘরবাড়ির আঙিনায় ধুন্দল, ঝিঙেসহ কিছু সবজি গাছ লাগিয়ে নিজেদের চাহিদা মেটায়। শহরেও এখন ছাদ বা বারান্দায় অনেকে সবজি গাছ লাগিয়ে কিছুটা হলেও চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করেন।

তিনি বলেন, নিচু জমির কারণে বৃষ্টি হলে পানি জমে উৎপাদন ব্যাহত হয়। তবে বর্ষা মৌসুমে দেশের উঁচু জমি তথা পাহাড়ি এলাকায় পতিত জমিতে শাকসবজি লাগানোর ব্যবস্থা করলে সবজির সরবরাহ বাড়বে।

এ ব্যাপারে কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ও সাবেক সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, নানা অজুহাতে প্রতি বছরই এ সময় জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। একটা চক্র সব সময় বাজার অস্থিতিশীল করে রাখে। তাদের রুখতে সরকারের নজরদারি বাড়ানো উচিত।

তিনি বলেন, সবজি যেন তিন-চার হাতবদল না হতে পারে, সে জন্য সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে সবজি এনে শহরে বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য ঢাকার ৩০০ ফিটে ‘কৃষকের বাজার’ হতে যাচ্ছে। সেখানে ন্যায্য দামে সবজি কেনা যাবে।

মন্তব্য

মিরপুরে যাত্রীদের নামিয়ে বাসে আগুন

মিরপুরে যাত্রীদের নামিয়ে বাসে আগুন

রাজধানীর মিরপুরের সেনপাড়া এলাকায় আলিফ পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

শুক্রবার (৩ অক্টোবর) সকাল ৭টা ২৩ মিনিটে আগুন লাগার খবর পেয়ে ৭টা ৩৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস। বিষয়টি নিশ্চিত করে ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার রাশেদ বিন খালিদ বলেন, খবর পেয়ে মিরপুর ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার সকালে আলিফের বাসটি সেনপাড়া এলাকায় পৌঁছালে কয়েকজন হাতের ইশারা দিয়ে থামাতে বলেন। থামানোর পর চালক ও তার সহকারীকে পিটিয়ে বাস থেকে নামিয়ে দেয় তারা। সেসময় যাত্রীদেরও নামিয়ে দেওয়া হয়। পরে সেই বাস ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়।

আলিফ পরিবহন থেকে কিছু কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়। যে কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে ছাটাই হওয়া কর্মীদের একটি অংশ এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ।

কাফরুল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এই ঘটনায় একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে দেখছি। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে— পরিবহনের স্টাফদের মধ্যে একটা অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব রয়েছে, এর কারণে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। এছাড়া আরও দ্বন্দ্ব রয়েছে। সব বিষয়কে সামনে রেখে আমরা তদন্ত করে যাচ্ছি।

বাসটিতে যখন দুর্বৃত্তরা আগুন দেয়, তখন কি কোনো গুলি করা হয়েছিল কিনা— জানতে চাইলে ওসি বলেন, প্রাথমিকভাবে এমন অভিযোগ করা হয়েছিল। পরে আমরা তদন্ত করে দেখেছি গুলির অভিযোগটি সত্য নয়। এ সময় কোনো ধরনের গুলি করা হয়নি।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Global Sumud Flotilla was arrested in Bangladesh

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা আটক করায় নিন্দা বাংলাদেশের

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা আটক করায় নিন্দা বাংলাদেশের

গাজার উদ্দেশ্যে যাওয়া মানবিক সহায়তাকারী নৌবহর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা আটকের ঘটনায় ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক জলসীমায় জাহাজ আটকের ঘটনা আইনের মারাত্মক লঙ্ঘন বলে আখ্যা দিয়েছে ঢাকা।

শুক্রবার (৩ অক্টোবর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ নিন্দা জানানো হয়।

অবিলম্বে ইসরায়েলকে নিঃশর্তভাবে আটক সব মানবিক সহায়তা কর্মী ও অ্যাক্টিভিস্টদের মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথাও বলা হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও বলছে, অবৈধ দখলদারিত্বের অবসান, আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া এবং গাজা উপত্যকায় অবিলম্বে গণহত্যা বন্ধ ও মানবিক অবরোধ তুলে নিতে ইসরায়েলকে আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।

বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, মানবিক সহায়তা বহনকারী নৌবহরটি ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি বৈশ্বিক সংহতির প্রতিনিধিত্ব করে। ইসরায়েলি বাহিনীর উচিত গাজায় বেসামরিক জনগণের জন্য বাধাহীন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা।

বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ এই চরম দুর্দশা ও ভোগান্তির সময়ে ফিলিস্তিনের জনগণের সঙ্গে অবিচল সংহতি বজায় রাখার কথা পুনরায় ব্যক্ত করেছে বলেও উল্লেখ করা হয়।

প্রায় ৪৫টি জাহাজ নিয়ে গঠিত‌‌ ‌‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ নৌবহর গত মাসে স্পেন থেকে গাজার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। এতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ফিলিস্তিনপন্থী রাজনীতিবিদ ও মানবাধিকারকর্মীরা রয়েছেন। তাদের মধ্যে সুইডিশ জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গও আছেন। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের ওপর ইসরায়েলের আরোপিত অবরোধ ভাঙাই ছিল এই নৌবহরের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি যুদ্ধে ইতোমধ্যে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। গত বুধবার থেকেই ইসরায়েলি নৌবাহিনী ফ্লোটিলার বহরে থাকা নৌযান আটক করতে শুরু করে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শত মত মানবাধিকারকর্মী, রাজনীতিক ও সাংবাদিকদের বহনকারী গাজা অভিমুখী ফ্লোটিলার ৪৫টি জাহাজের প্রায় সবগুলোই আটক করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এই মানবাধিকার কর্মীরা ইসরায়েলের আরোপিত গাজার সামুদ্রিক অবরোধ ভাঙার চেষ্টা করছিলেন।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Linguist Ahmed Rafiqs death is the main adviser

ভাষাসৈনিক আহমদ রফিকের মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক

ভাষাসৈনিক আহমদ রফিকের মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক

ভাষাসৈনিক, কবি, প্রাবন্ধিক ও রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ আহমদ রফিকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

শোকবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আহমদ রফিক ছিলেন ভাষা আন্দোলনের এক অগ্রগণ্য সাক্ষী ও সংগ্রামী কণ্ঠস্বর। একই সঙ্গে তিনি ছিলেন একজন অনন্য কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও রবীন্দ্রতত্ত্বচর্চার দিশারি। শতাধিক গ্রন্থ রচনা ও সম্পাদনার মাধ্যমে তিনি বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছেন।

রবীন্দ্রচর্চার ক্ষেত্রে তার অবদান দুই বাংলায় সমানভাবে শ্রদ্ধার আসন পেয়েছে। কলকাতার টেগর রিসার্চ ইনস্টিটিউট তাঁকে ‘রবীন্দ্রতত্ত্বাচার্য’ উপাধি দিয়ে সম্মানিত করেছে, যা তাঁর বিদগ্ধতার স্বীকৃতি।’

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘দেশের সংস্কৃতি ও মুক্তচিন্তার জগতে আহমদ রফিকের প্রয়াণ এক অপূরণীয় ক্ষতি। দৃষ্টিশক্তি ও শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও তিনি শেষ দিন পর্যন্ত জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে গেছেন।’

মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে তিনি বলেন, ‘আহমদ রফিকের জীবন ও কর্ম ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে। জাতি কৃতজ্ঞচিত্তে তাকে স্মরণ করবে।’

প্রধান উপদেষ্টা শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজন, শুভানুধ্যায়ী ও সাহিত্য-সংস্কৃতিমনা জনগণের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Hostile Amaze

বৈরী আবহাওয়ায়ও উৎসবের আমেজে মুখর কক্সবাজার

পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়
বৈরী আবহাওয়ায়ও উৎসবের
আমেজে মুখর কক্সবাজার

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল রয়েছে। গত বুধবার সকাল থেকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ও উপকূলে ঝোড়ো হাওয়া বইছে। কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি আবার কখনো চেপে বৃষ্টি। গতকাল বৃহস্পতিবার সারা দিন একই অবস্থা ছিল। ফলে সাগরে জোয়ার ও ঢেউয়ের উচ্চতা বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে বাতাসের গতিবেগ।
এই বৈরী পরিবেশ কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের দমাতে পারেনি। শারদীয় দুর্গোৎসব ও টানা চারদিনের ছুটিকে ঘিরে পর্যটকদের ঢল নেমেছে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে। ছুটির এ সময়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত ভ্রমণপিপাসুদের আগমনে জমজমাট হয়ে উঠেছে সৈকত শহরের হোটেল-মোটেল, রেস্টুরেন্ট, পরিবহন, হস্তশিল্প ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যবসা।
সমুদ্রস্নান, পাহাড় ও প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন পর্যটকরা। যদিও নিম্নচাপের কারণে দুপুরের পর থেকে বৃষ্টি কিছুটা ভ্রমণে বিঘ্ন ঘটিয়েছে, তবে অনেকেই বৃষ্টিতে ভিজে উপভোগ করছেন ভিন্নধর্মী আনন্দ।
শহরের কলাতলী, লাবণী, সুগন্ধা, দরিয়ানগর ছাড়াও হিমছড়ি, ইনানী ও টেকনাফ এলাকায় পর্যটকদের চোখে পড়ার মতো ভিড় দেখা যাচ্ছে। হোটেল-মোটেলের বেশিরভাগ রুম ইতোমধ্যে বুকড হয়ে গেছে। অনেক পর্যটক অগ্রিম বুকিং না করায় বিপাকে পড়েছেন।
পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এ সময়ে পর্যটকদের আগমন অর্থনৈতিকভাবে স্বস্তি দিলেও অব্যবস্থাপনা, যানজট এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ায় অনেক পর্যটক ভোগান্তির মুখে পড়ছেন।
পর্যটকদের নিরাপত্তায় জেলা প্রশাসন, পুলিশ, র‍্যাব, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও লাইফগার্ড সদস্যরা সমন্বিত টহল দিচ্ছেন। শিশু হারানো রোধে চালু হয়েছে বিশেষ হেল্পডেস্ক। যানজট নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ, তবে শহরের কিছু অংশে যানবাহন চলাচলে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
ঢাকা-কক্সবাজার রুটে বিমান সংস্থা বাড়তি ফ্লাইট চালু করেছে। পাশাপাশি রেলও চালু করেছে বিশেষ ট্রেন, এবং বাস সংস্থাগুলোরও অতিরিক্ত ট্রিপ রয়েছে। তবে মহাসড়কে যানজট ভ্রমণকে কিছুটা ক্লান্তিকর করে তুলেছে। ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ পর্যটকদের জন্য বাড়তি আনন্দের উৎস।
সমুদ্রস্নানে নামা পর্যটকদের নিরাপত্তায় সতর্ক রয়েছে লাইফগার্ড দল। পর্যটন ব্যবসায়ীদের মতে, এই ছুটিতে কক্সবাজারে কয়েক শত কোটি টাকার ব্যবসা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, শহর ও আশপাশের এলাকায় ১ লাখ ৭০ হাজার পর্যটকের রাত যাপনের সুযোগ রয়েছে। মৌসুমের শুরুতেই পর্যটকদের ব্যাপক সাড়া পর্যটন খাতের জন্য ইতিবাচক বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের হিসাব অনুযায়ী, বছরে কক্সবাজারে প্রায় ৩০-৪০ লাখ পর্যটক ভ্রমণ করেন, যা দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে।
এদিকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বড় উৎসব দুর্গাপূজার প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে গতকাল সৈকতের লাবণী পয়েন্টে লাখো পর্যটক ও পুণ্যার্থী ভিড় করেন। এই অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে কক্সবাজার ও বান্দরবানের বিভিন্ন পূজামণ্ডপ থেকে প্রতিমা নিয়ে সৈকতে জড়ো করা হয়। বিকেল ৫টার দিকে পুরোহিতের মন্ত্র পাঠের শেষে একে একে প্রতিমাগুলো উত্তাল সাগরে ভাসানো হয়।

মন্তব্য

p
উপরে