প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখক আবু ইসহাকের জন্মদিন আজ রোববার।
বাংলা সাহিত্যের সাড়া জাগানো উপন্যাস ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’র রচয়িতা এ লেখকের জন্ম ১৯২৬ সালের ১ নভেম্বর শরীয়তপুরের শিরঙ্গল গ্রামে।
১৯৪৯ সালে পুলিশের সহকারী পরিদর্শক হিসেবে যোগ দেন আবু ইসহাক। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালে ঢাকায় এসে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার উপপরিচালক হন তিনি।
সংস্থাটির খুলনা বিভাগের প্রধান হিসেবে ১৯৮৪ সালে অবসরে যান তিনি।
কাজী নজরুল ইসলাম সম্পাদিত নবযুগ পত্রিকায় ‘অভিশাপ’ নামে তার একটি গল্প প্রকাশিত হয়। এরপর কোলকাতার ‘সওগাত’, ‘আজাদ’-এর মতো পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তার নানা রচনা।
বিশ্বযুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, দেশবিভাগের মতো ঐতিহাসিক ঘটনার পটভূমিতে ১৯৫৫ সালে রচনা করেন ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’ উপন্যাসটি।
১৯৭৯ সালে ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’ উপন্যাসের চলচ্চিত্রায়ন হয়। এ ছাড়া একাধিক ভাষায় উপন্যাসটি অনূদিত হয়।
পদ্মার বুকে জেগে ওঠা চরের শ্রমজীবী মানুষের জীবন-সংগ্রামের কথা নিয়ে দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে ১৯৮৬ প্রকাশ করেন দ্বিতীয় উপন্যাস ‘পদ্মার পলিদ্বীপ’।
আবু ইসহাকের উপন্যাসের মূল উপজীব্য অস্তিত্বের সংগ্রাম। এ কারণে তার উপন্যাসে এক ধরনের ব্যর্থ দ্রোহ-চেতনাও সক্রিয় হতে দেখা যায়।
১৯৮৮ সালে প্রকাশিত হয় আবু ইসহাকের তৃতীয় উপন্যাস ‘জাল’। তার রচিত একমাত্র নাটক জয়ধ্বনি। ‘হারেম’ ও ‘মহাপতঙ্গ’ নামে তার দুটি গল্পগ্রন্থও রয়েছে।
সাহিত্যে অবদানের জন্য আবু ইসহাককে ১৯৯৭ সালে একুশে পদক ও ২০০৪ সালে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক দেয়া হয়।
২০০৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় মৃত্যু হয় বাংলা সাহিত্যের এই উজ্জ্বল নক্ষত্রের।
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথোপকথনের একটি ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডিং থেকে জানা যায়, গত বছরের জুলাইয়ে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভে প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগের অনুমতি তিনি নিজেই দিয়েছিলেন।
বিবিসি আইয়ের যাচাই করা ওই রেকর্ডিং অনুসারে, শেখ হাসিনা তাঁর নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার’ করার অনুমতি দিয়েছেন এবং ‘তারা (এসব বাহিনীর সদস্যরা) যেখানেই তাদের (আন্দোলনকারী) পাবেন, গুলি করবেন।’
অজ্ঞাতপরিচয় একজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে শেখ হাসিনার কথোপকথনের ফাঁস হওয়া অডিওটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ যে তিনি সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের গুলি করার জন্য সরাসরি অনুমতি দিয়েছিলেন।
ফাঁস হওয়া অডিওটি সম্পর্কে জানেন, এমন একটি সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, গত ১৮ জুলাই নিজের সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে শেখ হাসিনা ওই ফোনালাপ করেন।
চলতি বছরের মার্চের শুরুতে ফোনালাপের অডিওটি কে ফাঁস করেছেন, তা স্পষ্ট নয়। বিক্ষোভের পর থেকে শেখ হাসিনার কলের অসংখ্য ক্লিপ অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে, যার অনেকগুলোই যাচাই করা হয়নি।
গত ১৮ জুলাইয়ের ফাঁস হওয়া রেকর্ডিংয়ের কণ্ঠের সঙ্গে শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বরের মিল শনাক্ত করেছে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ।
বিবিসি আলাদাভাবে ইয়ারশটের অডিও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের দিয়ে এ রেকর্ডিংয়ের সত্যতা যাচাই করেছে। তারা এটিতে এডিট করার বা কোনো রকম পরিবর্তন করার কোনো প্রমাণ পাননি। অডিওটি কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছে, এমন সম্ভাবনাও খুবই কম বলে তারা জানিয়েছেন।
মানবাধিকার বা পরিবেশ রক্ষার ইস্যুতে অডিও-সংক্রান্ত তদন্তের কাজ করে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ইয়ারশট। তারা বলছে, ফাঁস হওয়া রেকর্ডিংটি সম্ভবত এমন একটি ঘরে ধারণ করা হয়েছিল, যেখানে ফোনকলটি স্পিকারে বাজানো হয়েছিল। কারণ, এতে স্বতন্ত্র টেলিফোনিক ফ্রিকোয়েন্সি ও ব্যাকগ্রাউন্ডে কিছু শব্দ ছিল।
ইয়ারশটের বিশেষজ্ঞরা রেকর্ডিংজুড়ে ইলেকট্রিক নেটওয়ার্ক ফ্রিকোয়েন্সি বা ইএনএফ শনাক্ত করেছেন। যে ফ্রিকোয়েন্সি অন্য একটি ডিভাইস থেকে অডিও রেকর্ডিংয়ের ক্ষেত্রে প্রায়ই উপস্থিত থাকে। এটি এমন এক সূচক, যার মানে হলো অডিওটিতে হেরফের করা হয়নি।
ইয়ারশটের বিশেষজ্ঞরা শেখ হাসিনার বক্তব্যে ছন্দ, স্বর ও শ্বাসের শব্দ বিশ্লেষণ করেছেন এবং ধারাবাহিক নয়েজের স্তরও শনাক্ত করেছেন। অডিওতে কৃত্রিম কোনো পরিবর্তন আনার প্রমাণ তারা খুঁজে পাননি।
ব্রিটিশ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান বিবিসিকে বলেছেন, রেকর্ডিংগুলো তার (শেখ হাসিনার) ভূমিকা প্রমাণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো স্পষ্ট ও সঠিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে এবং অন্যান্য প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত।
টবি ক্যাডম্যান বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন, যেখানে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে।
আওয়ামী লীগের একজন মুখপাত্র বলেছেন, বিবিসির উল্লেখ করা টেপ রেকর্ডিংটি সত্য কি না, তা তারা নিশ্চিত করতে পারছেন না এবং এই টেপটিতে কোনো বেআইনি উদ্দেশ্য বা অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রতিক্রিয়া দিতেও দেখা যায়নি।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২০৩ জনকে অভিযুক্ত করেছেন, যার মধ্যে ৭৩ জন গ্রেপ্তার রয়েছেন। আন্দোলনে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও বাংলাদেশের আদালতে বিচার চলছে।
এদিকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ঢাকার অন্যতম ব্যস্ত এলাকা যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের নির্বিচার গুলিতে কমপক্ষে ৫২ জন নিহত হন বলে বিবিসি আইয়ের একটি অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
ঘটনাটিকে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ পুলিশি সহিংসতাগুলোর একটি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
এই হত্যাকাণ্ড সেদিন ঘটেছিল, যেদিন শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে টানা ৩৬ দিন ধরে চলা বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন, ভারতে পালিয়ে যান।
গত বছর সরকারবিরোধী বিক্ষোভের শেষ দিনে ভয়াবহ ঘটনাটি কীভাবে ঘটেছিল, সেটি বের করার জন্য তখনকার শত শত ভিডিও, ছবি ও প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যগ্রহণ এবং সেগুলো বিশ্লেষণের পাশাপাশি সরেজমিন বেশ কয়েকবার যাত্রাবাড়ীর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিবিসি।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে নানান খবর প্রকাশিত হলেও নির্বিচারে হত্যার ঘটনাটি কীভাবে শুরু ও শেষ হয়েছিল, তাতে কত মানুষ হতাহত হয়েছিলেন, সে সম্পর্কে বিবিসির অনুসন্ধানে এমন কিছু তথ্য ও বিবরণ উঠে এসেছে, যা আগে সেভাবে সামনে আসেনি।
আন্দোলনকারীদের ওপর নির্বিচার গুলি ও হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বক্তব্য জানতে বাংলাদেশ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বাহিনীর একজন মুখপাত্র ঘটনা স্বীকার করেন। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় এ ধরনের দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে, যেখানে তৎকালীন পুলিশ বাহিনীর কিছু সদস্য অতিরিক্ত বলপ্রয়োগে লিপ্ত হয়েছিলেন এবং আন্দোলনকারীদের নিয়ন্ত্রণে অপেশাদার আচরণ করেছিলেন।’
অনুসন্ধান চলাকালে ঘটনার এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও বিবিসির হাতে আসে, যেখানে ৫ আগস্ট বিকেলে যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলিবর্ষণ শুরুর কিছু মুহূর্ত দেখা যায়।
ভিডিওটি এমন একজন আন্দোলনকারীর মুঠোফোন থেকে বিবিসি সংগ্রহ করেছে, যিনি নিজেও সেদিন পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান। নিহত ওই আন্দোলনকারীর নাম মিরাজ হোসেন।
পুলিশ যখন বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে, সেই সময়ের ভিডিও ধারণ করেছেন মিরাজ হোসেন। মুঠোফোন ক্যামেরায় ওই ভিডিওতে মর্মান্তিকভাবে তার জীবনের শেষ মুহূর্তও ধরা পড়েছে।
মিরাজ হোসেনের মৃত্যুর পর পরিবারের সদস্যরা তার মুঠোফোনটি খুঁজে পান এবং ফোনে সংরক্ষিত ভিডিওটি বিবিসিকে দেন।
ভিডিওর মেটাডেটা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সেদিন নির্বিচারে গুলিবর্ষণের ঘটনাটি শুরু হয়েছিল বেলা ২টা ৪৩ মিনিটে।
ভিডিওটিতে যাত্রাবাড়ী থানার মূল ফটকে বিক্ষোভকারীদের সামনে সেনাবাহিনীর একটি দলকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এরপর হঠাৎই তারা ওই এলাকা থেকে সরে যায়।
এ ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই যাত্রাবাড়ী থানার ভেতরের পুলিশ সদস্যরা ফটকের সামনে অবস্থানরত বিক্ষোভকারী জনতার ওপর আকস্মিকভাবে গুলিবর্ষণ শুরু করেন।
থানার উল্টো দিকে অবস্থিত একটি ভবনের সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজে দেখা যায়, পুলিশ গুলি চালানো শুরু করার পর প্রাণ বাঁচাতে গলির ভেতর দিয়ে ছুটে পালাচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা।
ওই সময়ের আরেকটি ভিডিওতে আহত ব্যক্তিদের শরীরে লাথি মারতেও দেখা যায় পুলিশকে।
অনুসন্ধানে বিবিসি দেখেছে, ৫ আগস্ট বিকেলে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে ৩০ মিনিটের বেশি সময় ধরে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছিল।
ঘটনার সময়ের কিছু ড্রোন ভিডিও বিবিসির হাতে এসেছে। ভিডিওর মেটাডেটার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বেলা ৩টা ১৭ মিনিটেও যাত্রাবাড়ী থানার সামনের মহাসড়কে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালাচ্ছিল পুলিশ। এরপর তাদের বড় একটি দলকে থানার উল্টো পাশে অবস্থিত একটি অস্থায়ী সেনা ব্যারাকে আশ্রয় নিতে দেখা যায়।
ড্রোন ভিডিওতে মহাসড়কের ওপর হতাহতদের একাধিক মৃতদেহ পড়ে থাকতেও দেখা গেছে। ভ্যান, রিকশা ও বাইকে করে আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন আন্দোলনকারীরা।
পরবর্তী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ শাহবাগের দিকে চলে যান। আর যারা তখনো যাত্রাবাড়ীতে ছিলেন, তাদের মধ্যে বিক্ষুব্ধ একটি অংশ থানায় আগুন দেয়। এ ঘটনায় পুলিশের কমপক্ষে ছয় সদস্য নিহত হন।
৫ আগস্ট বিকালে পুলিশের নির্বিচার গুলির ঘটনার পর আহত ব্যক্তিদের আশপাশের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা বহু ব্যক্তিকে মৃত ঘোষণা করেন। সেদিন যাত্রাবাড়ীতে অন্তত ৩০ জন বিক্ষোভকারী নিহত হন বলে প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছিল।
কিন্তু গণমাধ্যমে প্রকাশিত তখনকার খবর, নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সাক্ষাৎকার, হাসপাতালের নথি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন পোস্টের সত্যতা যাচাই করার পর বিবিসি দেখেছে, ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে কমপক্ষে ৫২ জন সাধারণ মানুষ নিহত হন।
এর বাইরে সেদিন আরও অন্তত ছয় পুলিশ সদস্য নিহত হন।
৫ আগস্টের ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু মামলা হয়েছে। এর মধ্যে থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসানের বিরুদ্ধেও মামলা করা হয়েছে, যিনি হত্যাকাণ্ড চলাকালে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ বাহিনী জানিয়েছে, তারা ঘটনার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের বিচারের মুখোমুখি করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে।
বিবিসিকে এক ই-মেইল বার্তায় বাংলাদেশ পুলিশ বলেছে, তারা ইতিমধ্যে পুঙ্খানুপুঙ্খ ও নিরপেক্ষভাবে বিষয়টির তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে। গণআন্দোলন–সংক্রান্ত যাবতীয় ফৌজদারি মামলা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে, যাতে ঘটনার সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেক অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা যায়।
পক্ষাঘাতগ্রস্ত ও দীর্ঘমেয়াদি স্নায়ুজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীদের পুনর্বাসনে নতুন যুগের সূচনা করছে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) থেকে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) সুপারস্পেশালাইজড হাসপাতালে স্থাপিত দেশের প্রথম রোবটিক রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে সীমিত পরিসরে পাইলট প্রকল্প শুরু হতে যাচ্ছে।
চীনের কারিগরি সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত এই সেন্টারটি উন্নত বিশ্বের মানদণ্ডে গড়ে তোলা হয়েছে, যেখানে মিলবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ও সুনির্দিষ্ট পুনর্বাসন সেবা। গতকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চীনের সরকার এই প্রকল্পে প্রায় ২০ কোটি টাকা মূল্যের রোবটিক যন্ত্রপাতি অনুদান দিয়েছে। প্রযুক্তির দিক থেকে এই সেন্টারটি হবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম আধুনিক রোবটিক রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার, যা বাংলাদেশের চিকিৎসা খাতে একটি যুগান্তকারী মাইলফলক হয়ে ওঠবে।
এই সেন্টারে রয়েছে মোট ৬২টি রোবট, যার মধ্যে ২২টি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ভিত্তিক। এসব রোবটের মাধ্যমে রোগীর অবস্থা অনুযায়ী অত্যন্ত নিখুঁতভাবে ফিজিওথেরাপি, স্নায়ুবিক পুনর্বাসন এবং দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসাসেবা প্রদান করা সম্ভব।
বিএমইউ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সেন্টারটি চালুর পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে চীনের ৭ সদস্যের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের একটি বিশেষজ্ঞ দলের নেতৃত্বে ইতোমধ্যে ২৭ জন চিকিৎসক ও ফিজিওথেরাপিস্টকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবল অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন করলে এবং প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হলে সেন্টারটি পুরোদমে চালু করা হবে।
এই রোবটিক সেন্টার যেসব রোগীরা স্ট্রোক, পক্ষাঘাত, স্নায়ুবিক বৈকল্য, দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা, নার্ভ ইনজুরি, ফ্রোজেন শোল্ডার, দুর্ঘটনাজনিত জটিলতা বা শরীরের অঙ্গের দুর্বলতাসহ জটিল পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছেন তাদের উপকারে আসবে।
বিশেষ করে জুলাই মাসে সংঘটিত ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে যারা আহত হয়েছেন এবং এখনো দীর্ঘমেয়াদি সমস্যায় ভুগছেন, তাদের এই সেন্টারে বিনা মূল্যে রোবটিক চিকিৎসাসেবা দেওয়া হবে।
সেন্টারটি শুধু বিশেষ উদ্দেশ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। পরিকল্পিত নীতিমালার আলোকে সাধারণ রোগীদের জন্যও ধাপে ধাপে সেবা উন্মুক্ত করা হবে। একই সঙ্গে চেষ্টা থাকবে চিকিৎসার ব্যয় রোগীদের আর্থিক সক্ষমতার মধ্যে রাখার।
এই সেন্টার চালু হলে বাংলাদেশ আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর পুনর্বাসন চিকিৎসায় এক নতুন যুগে প্রবেশ করবে। দেশীয় চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য এটি শুধু একটি প্রযুক্তিগত অগ্রগতি নয়, বরং পক্ষাঘাতগ্রস্ত ও দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতায় ভোগা মানুষের জীবনে আশার আলো হয়ে ওঠবে।
চলতি বছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফল আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রকাশিত হবে। ফলাফল শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইটে, সংশ্লিষ্ট পরীক্ষাকেন্দ্র বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং এসএমএসের মাধ্যমে প্রকাশ করা হবে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা যায়। আজ আনুষ্ঠানিকভাবে ফল প্রকাশের পর শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট ও এসএমএসের মাধ্যমে ফল জানা যাবে। ওয়েবসাইটে রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, পরীক্ষার নাম, বছর ও শিক্ষাবোর্ড সিলেক্ট করে ‘সাবমিট’ বাটনে ক্লিক করে ফল জানা যাবে।
এছাড়া যেকোনো মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমেও ফল জানা যাবে। ফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে SSC লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে আবার স্পেস দিয়ে পাসের বছর লিখে পাঠাতে হবে ১৬২২২ নম্বরে। উদাহরণ: SSC Dha ১২৩৪৫৬ ২০২৫ লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। ফিরতি এসএমএসে জানা যাবে ফল।
উল্লেখ্য, মাদ্রাসা বোর্ডের জন্য বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষরের ক্ষেত্রে Mad এবং বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের জন্য Tec লিখতে হবে।
ফলাফল নিয়ে অসন্তুষ্ট শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিবারের মতো এবারও খাতা চ্যালেঞ্জ বা ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদনের সুযোগ পাবেন। খাতা পুনঃনিরীক্ষণের জন্য এসএমএসের মাধ্যমে ১১ জুলাই থেকে ১৭ জুলাইয়ের পর্যন্ত আবেদন করা যাবে।
শুধু টেলিটক মোবাইলের মাধ্যমে ওই ফলাফল পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদন করা যাবে। আবেদন করার নিয়ম- RSC<Space> Board Name (First 3 letters)<Space>Roll<Space>Subject Code লিখে পাঠিয়ে দিতে হবে ১৬২২২ নাম্বারে। একাধিক Subject Code Type এর ক্ষেত্রে কমা (,) ব্যবহার করতে হবে, যেমন-১০১,১০২,১০৩। প্রতি পত্রের জন্য আবেদন ফি হবে ১৫০/- (একশত পঞ্চাশ) টাকা।
গত ১০ এপ্রিল সারাদেশে একযোগে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। লিখিত পরীক্ষা শেষ হয় গত ১৩ মে। ব্যবহারিক পরীক্ষা ১৫ থেকে ২২ মের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। দেশের সব শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মোট ১৯ লাখ ২৮ হাজার পরীক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নেবে। এর মধ্যে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পরীক্ষার্থী রয়েছে ১৪ লাখ ৯০ হাজার ১৪২ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৭ লাখ এক হাজার ৫৩৮ জন এবং ছাত্রী ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৬০৪ জন। পরীক্ষাকেন্দ্রের সংখ্যা ২ হাজার ২৯১টি, প্রতিষ্ঠান সংখ্যা ১৮ হাজার ৮৪টি।
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী রয়েছেন ২ লাখ ৯৪ হাজার ৭২৬ জন। এর মধ্যে ছাত্র এক লাখ ৫০ হাজার ৮৯৩ জন এবং এক লাখ ৪৩ হাজার ৮৩৩ জন ছাত্রী। এই বোর্ডের অধীনে পরীক্ষাকেন্দ্রের সংখ্যা ৭২৫টি। প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৯ হাজার ৬৩টি।
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে সর্বমোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৪৩ হাজার ৩১৩ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ৮ হাজার ৩৮৫ এবং ছাত্রী ৩৪ হাজার ৯২৮ জন।
বরগুনার আমতলী উপজেলায় সরকারি বিএডিসির (বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন) আমন ধানের বীজ নিয়ে ভয়াবহ অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছে। স্থানীয় ডিলার মধু প্যাদা অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও বিশাল পরিমাণ বীজ সংগ্রহ করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে তা অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছেন বলে দাবি কৃষকদের।
অভিযোগে জানা গেছে, মধু প্যাদা বরিশালের ফরিদ মিয়া নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে গত ২৫ দিনে প্রায় ৬০ মেট্রিক টন বিআর-৪৯ ও বিআর-২৩ জাতের ধানের বীজ কিনে তার মহিষকাটা বাজারের তিনটি গোডাউনে মজুত করেন। এরপর তা তালতলী, রাঙ্গাবালি, কলাপাড়া ও আমতলী উপজেলার বিভিন্ন দোকানে ৬৭০ টাকার বীজ ৭৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। এতে কৃষকরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি সরকার নির্ধারিত সরবরাহ ব্যবস্থাও ভেঙে পড়ছে।
স্থানীয় কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি বীজ না পেয়ে বাধ্য হয়ে বেশি দামে বীজ কিনতে হচ্ছে। এর পেছনে মধু প্যাদার সিন্ডিকেটই দায়ী।’
আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের আফজাল হোসেন শরীফ বলেন, ‘১০ কেজি বিআর-৪৯ জাতের বীজ কিনেছি ৭৫০ টাকায়, যা সরকারি দামের চেয়ে অনেক বেশি।’
বিষয়টি নিয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার রাসেল মিয়া বলেন, ‘কেউ অতিরিক্ত দামে বীজ বিক্রি করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে একজন ডিলারের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।’ তিনি আরও জানান, অনুমোদন ছাড়া ডিলারদের মধ্যে বীজ লেনদেন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
অন্যদিকে, মধু প্যাদা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি সরকারি দুটি লাইসেন্সে ৪ মেট্রিকটন বীজ পেয়েছি। চাহিদা থাকায় অতিরিক্ত বীজ ফরিদ মিয়ার কাছ থেকে সংগ্রহ করেছি।’ তবে বরিশাল জননী ট্রেডার্সের মালিক ফরিদ মিয়া বলেন, ‘আমার ব্যবসায়িক স্বার্থে সব তথ্য প্রকাশ করা সম্ভব নয়।’
এ বিষয়ে বরিশাল বিএডিসির উপপরিচালক মো. আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে বলেন, ‘ডিলাররা বাহির থেকে বীজ কিনলে সমস্যা কোথায়?’
এদিকে আমতলী উপজেলায় এ বছর ২৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও, বিএডিসি সরবরাহ করেছে মাত্র ৫৫ মেট্রিক টন বীজ, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। ফলে অধিকাংশ কৃষক চাষাবাদের জন্য প্রয়োজনীয় বীজ সংগ্রহে হিমশিম খাচ্ছেন।
বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে আমতলীর ইউএনও মো. রোকনুজ্জামান খান বলেন, ‘কোনো ডিলার কৃত্রিম সংকট তৈরি করে অধিক দামে বীজ বিক্রি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কৃষকদের অভিযোগ ও স্থানীয় প্রশাসনের আশ্বাসের মাঝে, এখন প্রশ্ন- কৃষকের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে বীজের বাজারে এই সিন্ডিকেটের লাগাম টানা যাবে তো?
বাংলাদেশপন্থী রাজনীতি গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, জনগণের পক্ষে বাংলাদেশপন্থী রাজনীতি গড়ে তুলুন।
বুধবার (৯ জুলাই) দুপুরে চুয়াডাঙ্গা জেলার পথসভায় নাহিদ এমন মন্তব্য করেন।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গা মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও উন্নয়নের পক্ষে দাঁড়ান। দেশ গঠনে সংস্কারের পক্ষে দাঁড়াতে হবে।’
মুজিববাদী ফ্যাসিস্ট দল বাংলাদেশে আসতে হলে আমাদের জীবনের ওপর দিয়ে আসতে হবে উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, বিচার সংস্কার ও নতুন সংবিধানের দাবিতে আপনারা আমাদের পাশে দাঁড়ালে হতাশ হবেন না। নাগরিক পার্টি আপনাদের ইনসাফভিত্তিক রাজনীতি উপহার দেবে।
বিচার, সংস্কার ও নতুন সংবিধানের দাবিতে দেশব্যাপী ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি পালন করছে গণঅভ্যুত্থান থেকে গড়ে উঠা এই নতুন রাজনৈতিক দল। পদযাত্রাটি গত ১ জুলাই থেকে শুরু হয়ে ২৯ জুলাই পর্যন্ত চলবে।
নাহিদ বলেন, ভারত সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থনে শেখ হাসিনা সরকার এদেশের মানুষদের গুম, খুন করেছে। বাংলাদেশের সীমান্ত, মাটি, মানুষ ও মানচিত্রকে রক্ষা করা ছাত্র-তরুণদের দায়িত্ব। সেই দায়িত্বের ভিত্তিতে জাতীয় নাগরিক পার্টি কাজ করবে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সকল হত্যাকাণ্ডের জন্য খুনি হাসিনা ও তার দল দায়ী। ভারত সরকার এই সন্ত্রাসী, খুনি বাহিনীকে নিজ দেশে আশ্রয় দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভারতীয় আধিপত্যের দ্বারা বাংলাদেশের মানুষদের মানবিক মর্যাদা, সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন হয়েছে, তাদের দাসত্বের জীবনযাপন করতে হয়েছিল। ভারত আমাদের পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করছে। রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিকভাবে বারবার আমাদের অবনমন করা হয়েছে।
ভারতের সাথে সমতার ভিত্তিতে সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, ভারত যদি বাংলাদেশের সাথে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক চায় তবে সেই সম্পর্ক হবে সমতা, ন্যায্যতা ও মর্যাদার ভিত্তিতে।
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ইউনেস্কোর বাংলাদেশ প্রতিনিধি সুসান ভাইজ।
বুধবার (৯ জুলাই) বিকেলে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে এই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।
সাক্ষাৎকালে উপদেষ্টা জানান, গণমাধ্যম সংস্কারের লক্ষ্যে সরকার ইতোমধ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। সংবাদপত্রের প্রচারসংখ্যা নিরীক্ষা পদ্ধতির সংস্কারে টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া, সাংবাদিকতার অধিকার সুরক্ষা-সংক্রান্ত অধ্যাদেশ প্রণয়নের কাজ চলছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে অধ্যাদেশ জারি করা হবে। গণমাধ্যম-বিষয়ক আরও কিছু সংস্কার কার্যক্রম আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে গণমাধ্যমের ওপর সরকারের পক্ষ থেকে কোনো চাপ নেই। সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে গণমাধ্যম সম্পূর্ণ স্বাধীন। সাক্ষাতে উপদেষ্টা আরও জানান, গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের জন্য অনুসরণীয় আচরণবিধি প্রণয়নেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সাক্ষাৎকালে ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক কনসালটেন্ট লিনা ফক্স উপস্থিত ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রসহ পাঁচ দেশে ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান কার্যক্রম শুরু করার সম্মতি পেয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অন্য চারটি দেশ হল- মালদ্বীপ, জর্ডান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওমান।
বুধবার (৯ জুলাই) যুক্তরাষ্ট্রসহ পাঁচ দেশে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মতি পত্র পেয়েছে ইসি।
বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব শাকেরা আহমেদ স্বাক্ষরিত ইসিকে দেওয়া সম্মতি প্রদান সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘উপর্যুক্ত বিষয়ে পত্রের প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র (লস এঞ্জেলেস), মালদ্বীপ, জর্ডান, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ওমানে ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) প্রদান কার্যক্রম চালু করার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মতি জ্ঞাপন করা হলো। এ বিষয়ে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’
এর আগে গত ২ জুলাই ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক (নিবন্ধন ও প্রবাসী) মো. আব্দুল মমিন সরকার স্বাক্ষরিত ‘প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকগণের প্রবাসেই ভোটার নিরন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরুর সম্মতি প্রদান’ সংক্রান্ত এ চিঠি পররাষ্ট্র সচিবকে দেওয়া হয়।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বিশ্বের ৪০টি দেশে প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকগণকে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় কর্তৃক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মতিক্রমে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, ইতালি, যুক্তরাজ্য, কুয়েত, কাতার, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডায় ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
অবশিষ্ট ৩১টি দেশের মধ্যে আজ বুধবার যুক্তরাষ্ট্র, ওমান, জর্ডান, দক্ষিণ আফ্রিকা, মালদ্বীপে প্রবাসী ভোটার তালিকা করার সম্মতি আজ পেয়েছে। এখন অবশিষ্ট আছে বাহরাইন, লেবানন, লিবিয়া, সুদান, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং, মিশর, ব্রুনাই, মরিশাস, ইরাক, যুক্তরাষ্ট্র, গ্রিস, স্পেন, জার্মানি, জাপান, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, ব্রাজিল, চীন, ইন্দোনেশিয়া, নিউজিল্যান্ড, রাশিয়া, তুরস্ক ও সাইপ্রাস।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘উপর্যুক্ত দেশগুলোতে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরুর সকল প্রস্তুতি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের রয়েছে। অন্যান্য দেশের ন্যায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সম্মতি প্রদানের জন্য সিনিয়র সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর পত্র প্রেরণ করা হয়।
চিঠিতে আরো বলা হয়, এর মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ২৫ মে জাপানে ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান কার্যক্রম শুরু করার সম্মতি প্রদান করেছে। এ প্রেক্ষিতে আগামী ১৫ জুলাইয়ে মধ্যে এ কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
এ অবস্থায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র, মালদ্বীপ, তুরস্ক, জর্ডান, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওমান, মিশর ও ফ্রান্সে ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের কার্যক্রম শুরুর লক্ষ্যে অন্যান্য দেশের ন্যায় সম্মতি প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হয়। এ দেশগুলোতে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরুর সকল প্রস্তুতি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘আট দেশে ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান কার্যক্রম শুরু করার জন্য আমাদের (ইসি) প্রস্তুতি থাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে।
ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য, ইতালি, কুয়েত, কাতার, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডায় প্রবাসীদের ভোটার নিবন্ধন ও এনআইডি প্রদানের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এসব দেশ থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৭ হাজার ৩২ জন প্রবাসী ভোটার হতে আবেদন করেছেন। এর মধ্যে মিশন অফিস ২৯ হাজার ৫৬৩ জনের বায়োমেট্রিক গ্রহণ করেছে। ২০ হাজার ৪৫১ জনকে ভোটার হিসেবে অন্তর্ভুক্তির অনুমোদন দিয়েছে। আবেদন বাতিল হয়েছে ৩ হাজার ৬৭৭ জনের।
মন্তব্য