× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য ইভেন্ট শিল্প উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ কী-কেন ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও ক্রিকেট প্রবাসী দক্ষিণ এশিয়া আমেরিকা ইউরোপ সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ শারীরিক স্বাস্থ্য মানসিক স্বাস্থ্য যৌনতা-প্রজনন অন্যান্য উদ্ভাবন আফ্রিকা ফুটবল ভাষান্তর অন্যান্য ব্লকচেইন অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

google_news print-icon

জীবনানন্দকে নিয়ে কায়সুল হকের সঙ্গে একসন্ধ্যায় ও ৫টি চিঠি

জীবনানন্দকে-নিয়ে-কায়সুল-হকের-সঙ্গে-একসন্ধ্যায়-ও-৫টি-চিঠি
'খুব গম্ভীর আর গম্ভীর- তিনি তার স্বভাব অনুযায়ী সাধারণ মানুষ; যারা আমাদের পরিচিত তারা যেমন আচরণ করেন, তার চেয়ে ভিন্ন আচরণ তার ছিল না। স্বাভাবিক। তা না হলে পরে তিনি নিজের বই টই নিজেই বের করে যেতে পারতেন না। আসলে এখন আমরা আত্মগোপন করি, নানান ছুতো ধরে। তিনি কিন্তু আত্মগোপনকারী ছিলেন না।'

এক ছুটির দিনের বিকেলে কবি কায়সুল হকের ঢাকার বাসায় উপস্থিত হই, ২০১৫ সালের মে মাসের গোড়ায়। তার দেখা পেয়ে-ওঠা বা আলাপ করা অত সহজ ছিল না।

একে তো ঠিকানা অজানা, কোনোভাবে ল্যান্ডফোন নম্বরটি জোগাড় করে উঠেছি। কিন্তু তার ছেলে রবিউল হকের নিরন্তর নিরুৎসাহী মন্তব্য: ‘দেখা করে কোনো লাভ হবে না, ভাই। আব্বা কানে একদমই শোনে না। আপনি যে উদ্দেশ্য নিয়েই আসেন না কেন, আসাটা বৃথা হবে।’

আমি তবু নাছোড়বান্দার মতো বলি, ‘একবার তবু আসতে চাই।’এরসঙ্গে যোগ করি, ‘আমি আগেও একবার এসেছিলাম আপনাদের বাসায় ২০১১ সালে, পাক্ষিক অন্যদিন পত্রিকার ঈদসংখ্যার জন্য কবিতা নিতে।’

অগত্যা তিনি সম্মতি দেন, ‘আচ্ছা, আসেন।’

কবি ও সাংবাদিক কায়সুল হকের জন্ম ২৯ মার্চ ১৯৩৩-এ, অবিভক্ত বাংলার মালদহ জেলায় মাতুলালয়ে। শৈশব, কৈশোর ও যৌবন কেটেছে রংপুরে। তবে সুদীর্ঘ কর্মজীবন কাটে ঢাকায়।

তিনি জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের উপ-পরিচালক পদে কর্মরত ছিলেন। তার কাব্যগ্রন্থের মধ্যে ‘কলম দিয়ে কবিতা’ ও ‘শব্দের সাঁকো’ উল্লেখযোগ্য। প্রবন্ধগ্রন্থ: ‘আলোর দিকে যাত্রা’ ও ‘অনিন্দ্য চৈতন্য’। সম্পাদিত সাহিত্য পত্রিকা ‘অধুনা’, ‘সবার পত্রিকা’, ‘কালান্তর’ ও ‘শৈলী’। বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারসহ নানা পুরস্কার লাভ করেছেন।

কবি শামসুর রাহমান ছিলেন কায়সুল হকের প্রিয়তম বন্ধু। ১৯৫৩ সালে তারা একসঙ্গে শান্তিনিকেতন সাহিত্যমেলায় যোগ দিতে গিয়েছিলেন; ফেরার পথে দুজনেই কবি জীবনানন্দ দাশের বাসায় যান।

রাহমানের স্মৃতিকথা কালের ধুলোয় লেখাতে এর বিস্তারিত বিবরণ লিপিবদ্ধ আছে। বন্ধু শামসুর রাহমান যেদিন মারা যান, মৃত্যু-সংবাদটি কায়সুল হক টেলিফোনে শোনেন এবং প্রচণ্ড ধাক্কা খান; এবং সেদিনই তিনি শ্রবণশক্তি চিরতরে হারিয়ে ফেলেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬-তে ৮৩ বছর বয়সে তিনি অনন্তের পথে পাড়ি দেন।

শুক্রবারের বিকেলে ঠিকানা খুঁজতে বেরিয়ে প্রথমে বাস থেকে নামি উত্তর ঢাকার মিরপুর ১০-এ। মিরপুর গোলচক্কর থেকে রিকশায় পুলিশ স্টাফ কোয়ার্টার কলেজ। এরপর রাস্তা পেরিয়ে উত্তর ইব্রাহিমপুর।

আমার পৌঁছানোর কথা সন্ধ্যা ছটায়। কিন্তু সময়ের বেশ আগেই আমি এসে পড়ি। কী আর করা। অচেনা পথের ধারে ছোট দোকানে বসে চা খাই। আকাশ দেখি। ঘনবসতি এলাকা। নানা পেশার নারী-পুরুষ, দোকানপাট, গ্রাম্য পরিবেশ। লুঙ্গি পরে মানুষ হাঁটছে, আড্ডা দিচ্ছে, কেউ সাইকেলের পেছনে বউ বা আত্মীয়াকে নিয়ে দূরে কোথাও যাচ্ছে; হয়ত বাসায় ফিরছে।

কিছুক্ষণ পর পর মুঠোফোনে সময় দেখি। সময় আর কাটে না। ঠিক ছটায় রবিউল সাহেবকে ফোন করি। ফোনের ওপাশে কল রিসিভ করলে বলতে যাব, আমি এসেছি; ওমা, ফোন বন্ধ। আবার ফোন করি। আরও একবার।

না, ফোন বন্ধ।

আমাকে আসতে বলে লোকটা কি সটকে পড়ল?

সাড়ে ছটায় সিটিসেল নম্বর থেকে একটা ফোন এল- আপনি কোথায়? মোড়ের ওপর চলে আসেন।

মোড়ের কাছে এসেই আমি তাকে খুঁজে পেলাম। রবিউল বললেন, ‘পেছনে ওঠেন।’

আমি উঠতেই, স্টার্ট দেওয়াই ছিল, তিনি মোটরসাইকেলে টান দিলেন।

বাসায় গিয়ে কবিকে দেখেই চিনতে পারলাম। আগের মতোই চেহারা ও স্নিগ্ধ হাসি। কিন্তু শরীর বেশ নুব্জ হয়েছে।

তার ছেলে বললেন, ‘আপনি যা-কিছু জানতে চান, লিখে তার সামনে ধরেন। তিনি বলবেন, আপনি প্রয়োজনে রেকর্ড করে নিতে পারেন।’

খুব কাজে দিলো রবিউলের তাৎক্ষণিক পরামর্শটি।

কায়সুল হকের সঙ্গে আলাপ শুরু করি:

মাসউদ আহমাদ: উপন্যাসের ক্যানভাসে মানুষ ও শিল্পী জীবনানন্দ দাশকে কি ধরা সম্ভব? এমনই একটা স্বপ্ন ও পরিকল্পনা নিয়ে তাকে অনুসন্ধানের চেষ্টা করে চলেছি। এই অভিপ্রায় মাথায় করে ঘুরছি অনেকদিন ধরে, ২০১৩-র শেষ থেকে। এর অংশ হিসেবে জীবনানন্দ-সম্পর্কিত বইপত্র ও তার স্মৃতিচিহ্ন আর তথ্য সংগ্রহ করছি। এই ধরেন, বরিশালে তার বাড়ি ও স্কুল-কলেজ-বগুড়া রোড, লাশকাটা ঘর, তার হেটে যাওয়া পথ, নদী ও জনপদ; পুরান ঢাকার পাটুয়াটুলির ব্রাহ্মসমাজ, ১৯৩০ সালে যেখানে তার বিয়ে হয়েছিল; বুদ্ধদেব বসুর ঠিকানা: ৪৭ পুরানা পল্টন; যেখানে জীবনানন্দ কবিতা পাঠাতেন- সেসব ঘুরে দেখা; খুব সম্প্রতি কলকাতায়ও যাচ্ছি, ভাবছি... এসব চলছে। আপনার সঙ্গে তো তার চিঠিপত্রের যোগাযোগ ছিল, এমনকি সরাসরি দেখা-সাক্ষাৎও হয়েছে। এ সম্পর্কে কিছু বলুন।

কায়সুল হক: প্রথমে যখন জীবনানন্দ দাশের বাসায় যাই, আমার সঙ্গে ছিলেন কবি শামসুর রাহমান এবং নরেশ গুহ। আরেকজন কে ছিলেন এই মুহূর্তে আমার ঠিক মনে নেই। জীবনানন্দকে তো কাছে পাওয়া মুশকিল। কারণ তিনি বেশিক্ষণ কোনো কথা বলতেন না। সামান্য কথা বলেই শেষ করে দিতেন। এবং পরবর্তী সময়ে তার কাছে গিয়ে দেখেছি যে, তিনি ঠিক মনে রেখেছেন। তার স্মৃতিশক্তি প্রখর ছিল। আমার সঙ্গে যে আলাপ হয়েছিল, তিনি ভুলে যাননি। হ্যাঁ, যার জন্য, আচ্ছা আপনি, জীবনানন্দের উপর যে একটা বই আছে, দেখেছেন কি?

মাসউদ: কোন বইটা?

কায়সুল হক: আমার তো মনে নেই।

[তিনি কানে একদমই শুনতে পান না। কোন বই? কোন বইয়ের কথা বলছেন? না, তিনি বুঝতেই পারলেন না। রবিউল আর একবার আমাদের সামনে এলেন। বললেন, ওভাবে বলে লাভ হবে না ভাই, আপনি লিখে দেন। এরমধ্যে তিন রকম নাশতা ও গরুর দুধের চা চলে এল।]

মাসউদ: আপনি কোন বইটির কথা বলছেন, প্রভাতকুমার দাসের লেখা জীবনীটা?

কায়সুল হক: আপনি প্রভাতকুমার দাসের লেখার কথা বলছেন? না, ওটা নয়। আমি বলছি, জীবনানন্দ দাশ নিজেই তার যেসব স্মৃতিকথা লিখেছেন, সেসব কি পড়েছেন? সেসব পড়ে থাকলে নতুন করে আর কিছু পড়া লাগবে না।

(তিনি, খুব ধীরে সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালেন। পাশেই রাখা বইয়ের আলমারির উপর থেকে একটা ছবির ফ্রেম নিয়ে এলেন। ছবির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললেন) এই যে দেখেন, ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে আমার ছবি। এই ছবির মানুষকে আর কোথাও খুঁজে পাব না। তাই না? কিন্তু তার স্মৃতিটা মনে থাকবে। এভাবে যদি জীবনানন্দের সমস্ত স্মৃতিকথা সংগ্রহ করেন, তাহলে খুব কাজের হয়। সত্যিকার অর্থে তিনি মাটির মানুষ। মাটি দিয়েই যেন তৈরি জীবনানন্দ দাশ। এমন মানুষ হয় না। অন্যের প্রতি যে তার ঘৃণা বা ক্রোধ, আমি দেখিনি। আর কবি হিসেবেও ছিলেন অসাধারণ। তার কথা ভোলা অত সহজ নয়। তার সঙ্গে আমার দু-তিনবারের মতো দেখা হয়েছে। তাকে একবার বাংলাদেশে আনতে চেয়েছিলাম, তার সঙ্গে আলাপ করে। সেটা অবশ্য আলাদা জিনিস। পরে আর সেটা হয়ে ওঠেনি।

মাসউদ: জীবনানন্দ দাশ দেখতে কেমন ছিলেন?

কায়সুল হক: তিনি দেখতে অতীব সাধারণ। কারণ সাধারণত্বটাই অসাধারণত্ব। অত বড় লেখক বা কবি হয়েও তার কোনো অহঙ্কার ছিল না। আমার কাছে একটা ছবি আছে। জীবনানন্দের আঁকা ছবি। দেখবেন, সেখানে তাঁর চেহারাটা হুবহু ফুটে উঠেছে- তার নিজস্ব রূপে।

(কিছুক্ষণ পর, তিনি, পরিবারের একজনের সহযোগিতায় জীবনানন্দের একটা ছবি দেখালেন। আঁকা ছবি। জীবনানন্দ দাশ একটা হাতলওয়ালা চেয়ারে আলিশান বসে আছেন, নিজস্ব ভঙিতে)। এ রকম ছবি পেয়েছেন, কোনো বইতে? এটাই আসল জীবনানন্দ দাশ। ...আচ্ছা, আপনার কাছে কি প্রভাতকুমার দাসের ওই বইটা আছে?

মাসউদ: জ্বি, তা আছে।

কায়সুল হক: আমাকে একটু দিয়ে যাবেন তো, আমি একঝলক দেখব, কী রকম। আমি ওই বই দেখিনি।

মাসউদ: জীবনানন্দ দাশ মানুষের সঙ্গে তেমন মিশতেন না। কথা বলতেন না। কম কথা বলতেন। পরিচিত মানুষকেও কি এড়িয়ে যেতেন?

কায়সুল হক: না, তিনি বরাবরই একটু লোকজনের ভিড় এড়িয়ে চলতেন। এমনিতেই। কোনো বিশেষ কারণে মানুষকে খারাপ মনে করা, তা নয়। তার স্বভাবই ছিল একা একা সময় কাটানো বা চিন্তাভাবনা করা। এটা আর্টিফিসিয়াল কিছু নয়। স্বভাবজাত ব্যাপার। যেমন মনে করেন, আমার সঙ্গে তার ঘনিষ্টতা কীভাবে হলো? আমার সঙ্গে তো ঘনিষ্টতা হওয়ার কথা না। আমি কোথায় রংপুরের লোক, আর উনি বরিশালের মানুষ। সুতরাং মানুষকে এড়িয়ে চলা- এটা তার তৈরি করা বিশেষ কোনো ব্যাপার নয়। স্বভাবজাত। তা না হলে আমার সঙ্গে তার আলাপ বা চিঠিপত্র বিনিময় হলো কেমন করে? তিনি মানুষের সঙ্গে মিশতেন। কথা বলতেন। মানুষ অনেক কিছু আরোপ করে। এর কোনো মানে নাই। জীবনানন্দ দাশ নামটা লিখতে বলেন- অনেকেই ভুল লিখবে। বুঝলেন তো! বাকিটা বুঝে নেন।

মাসউদ: শেষ বয়সে তার মাথায় নাকি টাক পড়ে গিয়েছিল? আপনি কি তা পর্যবেক্ষণ করতে পেরেছিলেন?

কায়সুল হক: তার মাথায় চুল সবসময়ই কম ছিল। আপনি বলছেন, শেষ বয়সে তার মাথায় টাক পড়ে গিয়েছিল কিনা? এই কথাটা, সব মানুষেরই শেষ বয়সে তাই হয়। তার, এমনিতেই চুল কম ছিল মাথায়। খুব ঘন চুলের ছবি পাবেন না। তার যে ছবি বাজারে চালু আছে বা পাওয়া যায়, সেটা তৈরি করা।

মাসউদ: আপনার সম্পাদিত ‘অধুনা’ পত্রিকায় কবিতা চেয়ে তাকে চিঠি লিখেছিলেন। এভাবেই কি প্রথম যোগাযোগ হয়েছিল?

কায়সুল হক: হ্যাঁ। জীবনানন্দ, তার বয়স যখন শেষের দিকে, তখনও কিন্তু মিশেছেন মানুষের সঙ্গে। আমার সঙ্গে তার যে পত্রালাপ এবং যোগাযোগ, তিনি যে নতুন কিছু বলেছেন, তা না। তিনি তার আমলের পরিবেশের কথা কখনো বলেছেন, কখনো- যেমন তার যে ট্রাম এক্সিডেন্ট হলো, এটা যারা একটু অন্যমনষ্ক পথেঘাটে, তাদের সঙ্গে এক্সিডেন্ট হতেই পারে। তবে তিনি রাস্তা সচেতন ছিলেন না আর কি। তা না হলে সাধারণত ট্রাম এক্সিডেন্ট হয় না। কারণ ট্রাম এত দ্রুত চলে না যে এক্সিডেন্ট হবে। যা ঘটবার ঘটে গেছে। এবং জীবনানন্দ দাশের খোঁজখবর বাঙালি লেখকরা রাখত না। আসল ব্যাপার হচ্ছে আমরা নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেই। কবি-লেখকেরা সচেতন হলে তার সঙ্গে অনেক আলাপ আলোচনা হতে পারত। মনে করেন, আগ্রহটা বড় কথা। রংপুর একপ্রান্ত, বরিশাল আরেক প্রান্ত। তাই না? আমরা, কবি-সাহিত্যিকদের সত্যি কথা বলতে কী বেশি ভালোবাসি না।

মাসউদ: জীবনানন্দ যখন মারা গেলেন, তখন, তিনি যে অজস্র গল্প ও উপন্যাস লিখতেন, শুনেছিলেন কি? জীবনানন্দের প্রকাশিত গল্পের সংখ্যা ১২০টির বেশি এবং উপন্যাস কমপক্ষে ১৮টি। এছাড়াও আছে প্রবন্ধ, লিটারারি নোটস...

কায়সুল হক: জীবনানন্দ এত গল্প এবং উপন্যাস লিখেছেন? আপনার এই তথ্য সঠিক? তার কি গল্পের সংকলন বই আকারে বেরিয়েছে? উপন্যাসও? প্রথমদিকে এসব তো জানা যায়নি। তার গদ্য মৃত্যুর আগেই পড়েছি। গল্প পড়েছি কিনা, ঠিক মনে নেই। পরবর্তী সময়ে কিছু কিছু পড়েছি। খুব ভালো। কবিতার মতো গল্প পাঠেও নিজের ভেতরে একটা আলাদা চেতনা তৈরি হয়। মানুষ তো তাকে আত্মভোলা বলে। আমার তা মনে হয় না। আত্মভোলা হলে ওইরকম গল্প তিনি লিখতে পারতেন না।

মাসউদ: তিনি কি সত্যিই খুব গম্ভীর মানুষ ছিলেন? মজার কোনো কথা বলার সময়েও হাসতেন না?

কায়সুল হক: খুব গম্ভীর আর গম্ভীর- তিনি তার স্বভাব অনুযায়ী সাধারণ মানুষ; যারা আমাদের পরিচিত তারা যেমন আচরণ করেন, তার চেয়ে ভিন্ন আচরণ তার ছিল না। স্বাভাবিক। তা না হলে পরে তিনি নিজের বই টই নিজেই বের করে যেতে পারতেন না। আসলে এখন আমরা আত্মগোপন করি, নানান ছুতো ধরে। তিনি কিন্তু আত্মগোপনকারী ছিলেন না। স্বাভাবিকভাবেই মেলামেশা করতেন। ভিন্ন আচরণ করতে দেখিনি। আর আমরা বাঙালি মুসলমানরা কোনোকালেই সাহিত্যপ্রেমী ছিলাম না। তা না হলে নজরুলের এই দশা হতো না। জীবনানন্দ দাশ না হয় আলাদা প্রকৃতির মানুষ ছিলেন, কিন্তু কাজী নজরুল ইসলাম তো তা ছিলেন না- হৈ হৈ করে চলে আসতেন, রৈ রৈ করে চলে যেতেন। তাকেই বা আমরা নিকটতর করিনি কেন? তাই না? আমরা সূক্ষ্মভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখি না।

মাসউদ: প্রথম যখন জীবনানন্দ দাশের চিঠি পেয়েছিলেন, কী অনুভূতি হয়েছিল?

কায়সুল হক: ব্যাপার হচ্ছে, আমাদের মানসিক গঠন ছিল অন্য রকমের। যেমন আমরা কবিদের ভালোবাসতাম। তাদের লেখার প্রতি মমত্ব বোধ করতাম। সত্যিকার ভালো লেখক তারা এবং বাংলা ভাষার সমৃদ্ধি এরা ঘটিয়েছেন। সুতরাং কোনো রকমের অত্যুক্তি ঘটেনি। আর আপনি যেটা জিজ্ঞেস করলেন, অনুভূতি, সেটা খুব আনন্দময় ব্যাপার ছিল। তখনকার বিবেচনায় সেটি ছিল শ্রেষ্ঠ অনুভূতি। কারণ আমাদের কাছে, যারা জীবনানন্দপ্রেমিক তাদের কাছে তো মনে হতো জীবনানন্দ সবচেয়ে বড় এবং শ্রেষ্ঠ। কবি হিসেবে তো বটেই, গদ্যকার হিসেবেও তাকে আমাদের কাছে অনেক বড় মনে হতো। আমি কোথাও লিখেও বলেছি এই কথাগুলো যে, তার মতো লেখক আর দ্বিতীয়টি নেই। তখনকার দিনে আমরা জীবনানন্দকে নিয়ে যে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছি, হৈ চৈ করেছি, সেই সময়ের প্রেক্ষিতে এবং রবীন্দ্রনাথকে বাদ দিয়ে, তা বিচার্য। নতুন পাঠকদের কাছে জীবনানন্দকে নানাভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। জীবনানন্দ কবিতায় নতুন ধারার সৃষ্টি করেছেন, নতুন পাঠকের সামনে এসব তুলে ধরেছি। সেখানে কোনো মেকি ব্যাপার ছিল না। আমাদের মধ্যে ঈর্ষাও ছিল না। যদিও লেখকদের মধ্যে ঈর্ষাপরায়ণতা বেশি।

মাসউদ: আপনি তো কলকাতায় তার ল্যান্সডাউন রোডের বাসায় দেখা করেছিলেন? তার ঘরখানা দেখতে কেমন ছিল?

কায়সুল হক: হ্যাঁ, কলকাতাতে দেখা হয়েছে। খুব ভালো মানুষ ছিলেন। এমন মানুষ সচরাচর পাওয়া যায় না। ওই ঘর যেমন হয় আর কি, সাধারণত বৈঠকখানা বাইরের ঘর হিসেবে মানুষ ব্যবহার করে। হ্যাঁ। আমার অত কৌতূহলও ছিল না যে, তার ঘরটা তন্ন তন্ন করে দেখি। হা হা হা। এত বড় একজন কবি ভারতীয় ভাষায় হয়েছে বলে আমার মনে হয় না। এবং এটা আমার অকপট স্বীকার। তার লেখা যে পড়তাম, আমার ভাইবোনদের পাঠ করে শোনাতাম। কবিতা তো বটেই, তাঁর মতো গদ্যও তখন খুব কম মানুষই লিখেছেন। জানি না, আপনারা কী মনে করেন।

মাসউদ: আপনাকে তিনি চা-নাস্তা খেতে দিয়েছিলেন?

কায়সুল হক: এটা ঠিক আমার মনে নেই। অনেকদিন আগের কথা। সাদামাটা ব্যাপার তো। মনেও নেই। আমরা চাইতামও না। অমন আদিখ্যেতা ছিলও না আমাদের। আর অত টাকা পয়সাও তার ছিল না যে আমাদেরকে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াবেন। হা হা। তবে খুব ভালো মানুষ ছিলেন। তার সঙ্গে যে পত্রালাপ, আমার দিক থেকেই উদ্যোগ গ্রহণ করা, তিনি যে জবাব দিয়েছেন, এটাই বড় কথা। কিন্তু তিনি উত্তর না দিলেও পারতেন। তাতে কিছু এসে যেত না। আবার বুদ্ধদেব বসুও ভালো মানুষ ছিলেন। প্রথম আলাপে বসু আমাদের সঙ্গে চার পাঁচ ঘণ্টা কাটিয়ে দিয়েছিলেন। সেটি খুব বিরল। কিন্তু জীবনানন্দ নিরিবিলি, নিরীহ- সবকিছু নিয়ে একটা আলাদা জগতে থাকতে পছন্দ করতেন।

মাসউদ: তিনি নিজের লেখা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতেন কি?

কায়সুল হক: নিজের লেখা নিয়ে তিনি কোনো রকমের কথাবার্তা বলতেন না। এই যেমন ধরেন, জীবনানন্দ দাশ এবং বুদ্ধদেব বসু, লেখালেখির ক্ষেত্রে তারা আমাদের কাছে দেবতাতুল্য। তাদের মতো মানুষ জন্মেছিলেন বাংলায়, এ জন্য নিজেকে ধন্য মনে হয়। আর জীবনানন্দ? তিনি তো লিখতেনই সবসময়। এমন না যে হঠাৎ তাকে কেউ লিখতে বলেছে বলে লিখলেন। তার স্বভাবই ছিল ওই লেখা।

মাসউদ: আপনার অনেক সময় নষ্ট করলাম ভালো থাকবেন। আজ যাই।

কায়সুল হক: না। সেটা ঠিক আছে। আপনি কী করেন, অধ্যাপনা? না। ও আচ্ছা। হাতিরপুলে থাকেন? আমি চিনি ওই এলাকাটা। ভালো লাগলো, আপনি এসেছেন আমার কাছে। আপনার হাতের লেখা বেশ ভালো। সুন্দর। আবার আসবেন। আমার জন্য দোয়া করবেন।

•••

কায়সুল হককে লেখা জীবনানন্দ দাশের পাঁচটি চিঠি

১৮৩ ল্যান্সডাউন রোড

কলকাতা-২৬

১.৬.১৯৫২

প্রীতিভাজনেষু,

আপনার ২৮ তারিখের চিঠি কাল পেয়েছি। আপনারা একটা সাহিত্য সংকলন বের করবেন জেনে আনন্দিত হলাম। আপনাদের আদর্শের কল্যাণ ও উন্নতি কামনা করি।

সম্প্রতি কোনো নতুন কবিতা তো আমার হাতে নেই, সেজন্যে আমি দুঃখিত। লিখে উঠতে পারলে আপনাকে পাঠিয়ে দেব। সাতদিনের মধ্যে সম্ভব হবে না, সময় লাগবে। আশা করি কিছু মনে করবেন না। কুশল প্রার্থনীয়। প্রীতি নমস্কার। ইতি

জীবনানন্দ দাশ

১৮৩ ল্যান্সডাউন রোড

কলকাতা-২৬

২৬.৬.১৯৫২

প্রীতিভাজনেষু,

আপনার দুটো চিঠিই যথাসময়ে পেয়েছি। আমার জ্বর হয়েছিল, অনেক দিন ভুগলাম। উত্তর দিতে তাই দেরী হ’য়ে গেল। ক্ষমা করুন।

নরেন মিত্রের ঠিকানা আমার জানা নেই। যদি জানতে পারি, তাহ’লে আপনাকে জানাব। নানা কারণে মন এত চিন্তিত আছে, শরীরও এত অসুস্থ যে অনেকদিন থেকেই কিছু লিখতে পারছি না।

আপনাদের পত্রিকার জন্য এই সঙ্গে একটি কবিতা পাঠালাম। কোনো রকমে লিখে দিলাম; মোটেই ভালো হ’ল না। ত্রুটি মার্জনা করবেন- এই অনুরোধ। আশা করি ভালো আছেন। প্রীতি নমস্কার। ইতি

জীবনানন্দ দাশ

১৮৩ ল্যান্সডাউন রোড

কলকাতা-২৬

২৫.৮.১৯৫২

প্রীতিভাজনেষু,

আপনার চিঠি পেয়েছি। আপনার জ্বর হয়েছিল খবর পেলাম। আশা করি এখন ভালো আছেন।

জনাব আবু সয়ীদ আইয়ুবের ঠিবানা আমি জানি না; সমর সেন Stateman-এ কাজ করে শুনেছিলাম। অন্নদাশংকর বা বুদ্ধদেব বসু এঁদের ঠিকানা জানেন বলে মনে হয়। কারো সঙ্গেই আমার দীর্ঘকালের মধ্যে দেখা হয়নি।

আপনাদের সংকলন শীগগিরই বেরুবে হয়তো?

আপনার কুশল প্রার্থনা করি। আমার প্রীতি নমস্কার জানাচ্ছি।

জীবনানন্দ দাশ

১৮৩ ল্যান্সডাউন রোড

কলকাতা-২৬

২২.১.১৯৫৩

প্রীতিভাজনেষু,

আপনার সব চিঠি যথাসময়ে পেয়েছি, ধন্যবাদ। শরীর অসুস্থ; নানা কারণে অত্যন্ত বিব্রত আছি; কাজেই চিঠির উত্তর দিতে বড় দেরি হয়ে গেল, কবিতাও এখন আর পাঠাতে পারলাম না; খুবই লজ্জিত ও দুঃখিত বোধ করছি। কবিতা এখন আমার হাতে কিছুই প্রায় নেই। নতুন কিছুও লেখা হয়ে উঠছে না। যাহোক- সময় করে কিছু লিখে পাঠাতে চেষ্টা করব। আপনাদের সংকলন কি শীগগির বেরুবে?

ফোটো পাঠাতেও একটু সময় লাগবে- ক্ষমা করুন। আশা করি ভালো আছেন। আপনাদের প্রচেষ্টা জয়যুক্ত হোক। শুভাকাঙ্ক্ষা জানাচ্ছি।

জীবনানন্দ দাশ

১৮৩ ল্যান্সডাউন রোড

কলকাতা-২৬

২৩.৪.১৯৫৩

প্রীতিভাজনেষু,

তোমার চিঠি পেয়ে খুশি হয়েছি।

তোমাদের সংকলন তো আর বের করলে না। সংকল্প ছেড়ে দিয়েছ নাকি? কবিতা ও ছবি পাঠাতে দেরি হচ্ছে। আমি বড্ড অলস, শরীরও অসুস্থ, মনও নানা কারণে ভেঙে পড়েছে। পূর্ব পাকিস্তান নিজের জন্মস্থান; সেখানে যেতে আমি অনেকদিন থেকেই ব্যাকুল; কিন্তু পাসপোর্ট ইত্যাদি কবে জোগাড় করে উঠতে পারব বলতে পারছি না।

আশা করি ভালো আছ। প্রীতি নমস্কার।

জীবনানন্দ দাশ

মাসউদ আহমাদ, সাংবাদিক গল্পকার

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ
Is this April heat unusual?

এপ্রিলের এ গরম কি অস্বাভাবিক

এপ্রিলের এ গরম কি অস্বাভাবিক তীব্র গরমে শরীরকে প্রশান্ত করার চেষ্টা। ফাইল ছবি
গরম বাড়ার পেছনে মনুষ্যসৃষ্ট কিছু কারণ তুলে ধরে আবহাওয়াবিদ খন্দকার হাফিজুর রহমান বলেন, ‘জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে আমাদের জলাশয়গুলো ভরাট হচ্ছে; গাছগাছড়া কমে যাচ্ছে। মানুষের এসি (এয়ার কন্ডিশনার), ফ্রিজ ব্যবহার বেশি হয়ে যাচ্ছে।’

দেশের উষ্ণতম মাস এপ্রিল। এ মাসে সাধারণত অন্য সময়ের চেয়ে বেশি থাকে গরম। চলতি বছরের এপ্রিলে তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ বইছে বিভিন্ন জেলায়, যার ফলে প্রচণ্ড অস্বস্তিতে ভুগছেন বিভিন্ন বয়সীরা।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানায়, দেশের ছয়টি জেলার ওপর দিয়ে বইছে তীব্র দাবদাহ।

এমন বাস্তবতায় অধিদপ্তরের এক আবহাওয়াবিদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, এ সময়ে এমন গরম অস্বাভাবিক কি না। জবাবে খন্দকার হাফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অ্যাবনরমাল (অস্বাভাবিক) কোন সেন্সে বলবেন? আমাদের দেশে ৪৫ ডিগ্রি তাপমাত্রারও রেকর্ড আছে কিন্তু। এখন তো গ্রীষ্মকাল। মার্চ, এপ্রিল, মে এই তিন মাস গ্রীষ্মকাল। এ সময়ে বৃষ্টিপাত হলে তাপমাত্রাটা কম হবে।

‘বৃষ্টিপাত যখনই বন্ধ হবে, তাপমাত্রাটা বাড়বে, তবে এখন তাপমাত্রা যেটা স্বাভাবিক কথার কথা, তার চাইতে বেশি আছে। দিন এবং রাতের তাপমাত্রা দুইটাই বেশি আছে স্বাভাবিকের চাইতে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় তিন থেকে চার ডিগ্রি বেশি আছে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় এক থেকে দুই ডিগ্রি বেশি আছে।’

দুপুর দুইটার দিকে এ প্রতিবেদন লেখার সময় অ্যাকুওয়েদার ডটকম নামের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৫১ শতাংশ।

একই সময়ে তীব্র দাবদাহ বয়ে যাওয়া অঞ্চল চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যেখানে বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ১৭ শতাংশ।

তাপমাত্রা অপেক্ষাকৃত বেশি হওয়ার বিষয়ে আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘জলবায়ুগতভাবে কিন্তু এপ্রিল মাসটা আমাদের উষ্ণতম মাস। এ সময়ে দিনের স্থায়িত্বটা বড় (বেশি)। সূর্য মাথার ওপর। তা ছাড়া বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। বৃষ্টিপাত যে এলাকাগুলোতে, সেখানে তাপমাত্রা কিছুটা কমছে।

‘আর যে জায়গাগুলোতে বৃষ্টিপাত নাই, সেই জায়গাগুলোতে কিন্তু আপনার তাপমাত্রার ইয়েটা বেশি হচ্ছে। গরমটা বেশি হচ্ছে।’

গরম বাড়ার পেছনে মনুষ্যসৃষ্ট কিছু কারণ তুলে ধরে এ আবহাওয়াবিদ বলেন, ‘জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে আমাদের জলাশয়গুলো ভরাট হচ্ছে; গাছগাছড়া কমে যাচ্ছে। মানুষের এসি (এয়ার কন্ডিশনার), ফ্রিজ ব্যবহার বেশি হয়ে যাচ্ছে।’

তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের কোনো সম্পর্ক আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মানুষ ক্লাইমেট চেঞ্জে (জলবায়ু পরিবর্তন) অবদান রাখছে। ক্লাইমেট চেঞ্জ তো আছেই।’

আরও পড়ুন:
দমকা হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি ঝরতে পারে ঢাকাসহ চার বিভাগে
বিস্তৃত হতে পারে ঢাকাসহ ৬ বিভাগের দাবদাহ
বইছে তাপপ্রবাহ, নেই বৃষ্টির সম্ভাবনা
মেঘ মেঘ করবে, হতে পারে বৃষ্টিও
ঈদের দিনে ‘সহনশীল’ থাকতে পারে আবহাওয়া

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Kumargaon power station is the reason for repeated fire

কুমারগাঁও বিদ্যুৎকেন্দ্রে যে কারণে বার বার অগ্নিকাণ্ড

কুমারগাঁও বিদ্যুৎকেন্দ্রে যে কারণে বার বার অগ্নিকাণ্ড সিলেটের কুমারগাঁওয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রে সোমবার সকালে আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের তৎপরতা। ছবি: নিউজবাংলা
কেপিআইভুক্ত দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই স্থাপনায় এ নিয়ে চার বছরে তিনবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলো। আগেরবার অগ্নিকাণ্ডেরর পর গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়িত হয়নি আজও। ফলে অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনার ঝুঁকিও দূর হয়নি।

আবার‌ও আগুনে পুড়লো সিলেটের কুমারগাঁওয়ে অবস্থিত বিদ্যুতের ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্র। সোমবার সকালে লাগা এই আগুনে সিলেট নগর ও আশপাশের এলাকার লক্ষাধিক গ্রাহককে প্রায় ছয় ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকতে হয়েছে।

এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে এ নিয়ে গত চার বছরে তিনবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলো। কেপিআইভুক্ত দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই স্থাপনায় কেন বার বার আগুনের ঘটনা ঘটছে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও।

২০২০ সালের ১৭ নভেম্বর বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডে এই উপকেন্দ্রে ব্যাপক ক্ষতি হয়। ওই সময় সিলেট নগরীসহ আশপাশের এলাকায় টানা ৩১ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। তারও আগে ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে।

প্রথমবারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের নেপথ্য কারণ অনুসন্ধানে উচ্চপর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়। ২০২১ সালের ১১ জানুয়ারি ওই কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে ১৯৬৭ সালে স্থাপিত উপকেন্দ্রটির প্রয়োজনীয় উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন না করা এবং কর্তৃপক্ষের সঠিক পরিকল্পনা ও যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাবকে দায়ী করা হয়। একইসঙ্গে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে বেশকিছু সুপারিশ করা হয়। সেই সুপারিশগুলো আজও বাস্তবায়ন হয়নি।

বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রহমত উল্লাহ্ মো. দস্তগীরকে আহ্বায়ক করে গঠিত সেই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে সুপারিশে বলা হয়, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অফ বাংলাদেশের (পিজিসিবি) নিয়ন্ত্রণাধীন ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্রের ইকুইপমেন্টসের কন্ট্রোল ও প্রটেকশনের জন্য ডিসি সিস্টেম (ডিসি সোর্স ব্যাটারি, চার্জার ও ডিস্ট্রিবিউশন প্যানেল) এবং বিউবোর নিয়ন্ত্রণাধীন ৩৩ কেভি বাস ও ইকুইপমেন্টসের কন্ট্রোল ও প্রটেকশনের জন্য ডিসি সিস্টেম জরুরিভিত্তিতে সম্পূর্ণ পৃথক করা প্রয়োজন।

এছাড়া ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন, জরুরিভিত্তিতে গ্রাউন্ডিং সিস্টেম বৃদ্ধিপূর্বক যথাযথ মানে উন্নয়ন/সম্প্রসারণ করা, ভূগর্ভস্থ কন্ট্রোল ক্যাবলিং সিস্টেম জরুরিভিত্তিতে সংস্কার করা, ফল্ট লেভেল নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ১৩২ কেভি ও ৩৩ কেভিতে প্যারালালে সংযুক্ত পাওয়ার ট্রান্সফরমারগুলো জরুরিভিত্তিতে পৃথক করা এবং পাওয়ার ট্রান্সফরমার, কারেন্ট ট্রান্সফরমার, পটেনশিয়াল ট্রান্সফরমার, সার্কিট ব্রেকার ইত্যাদি অতি গুরুত্বপূর্ণ ইকুইপমেন্টগুলো উচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন হওয়া প্রয়োজন।

ওই কমিটি আরও সুপারিশ করে- তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে দক্ষ কারিগরি জনবল দ্বারা দেশের সব গ্রিড উপকেন্দ্র ইন্সপেকশনের ব্যবস্থা করা, উপকেন্দ্রের সংরক্ষণ কাজগুলো যথাযথভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে তদারকি আরও জোরদার করা, উপকেন্দ্রের পরিচালন ও সংরক্ষণ কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য পিজিসিবি ও বিউবোর আলাদাভাবে জনবল পদায়ন করা এবং প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ জনবল সৃষ্টির ব্যবস্থা করা দরকার।

এছাড়া গ্রিড উপকেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ ইকুইপমেন্টগুলো নিয়মিত পরীক্ষা ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং এসব যন্ত্রপাতির জন্য হিস্ট্রি বুক সংরক্ষণ করা, জরুরিভিত্তিতে কুমারগাঁও ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্রের বিকল্প সোর্স তৈরির সুপারিশ করা হয় তদন্ত প্রতিবেদনে।

ওই প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছিলেন, ‘প্রতিটি গ্রিড বা বিদ্যুৎকেন্দ্রের সাইবার সিকিউরিটি ও ফিজিক্যাল সিকিউরিটি নিশ্চিত করতে প্রদত্ত নির্দেশনা অনুসরণ করা প্রয়োজন। লোকবল স্বল্পতার দোহাই দেয়া হয়। কিন্তু নিজেদের আপগ্রেড করার বিষয়ে কাউকেই ততটা আন্তরিক মনে হয় না। রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে যারা ছিলেন তাদের দায়িত্বহীনতা এই দুর্ঘটনার জন্য অনেকটাই দায়ী। সিলেট অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জন্য জনগণের যে অবর্ণনীয় কষ্ট ও আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তার দায়ও এরা এড়াতে পারে না।’

তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দেন প্রতিমন্ত্রী।

সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা প্রসঙ্গে সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল কাদির বলেন, ‘কিছু কিছু বাস্তবায়ন হয়েছে। বাকিগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে। জেআইএস নির্মাণের কাজ চলমান। এটি বাজেটের অভাবে কিছুদিন বন্ধ ছিলো। এখন আবার শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে নিরাপত্তা অবস্থা আরও জোরদার হবে।’

তিনি বলেন, মূল সমস্যা হলো সমন্বয়হীনতা। এখানে পিজিসিবি ও পিডিবিসহ বেসরকারি আরও কয়েকটি বিদ্যুৎ কোম্পানির যন্ত্রপাতি রয়েছে। সবার মধ্যে সমন্বয়ের প্রয়োজন। আমরা সবাইকে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চিঠি দিচ্ছি।

‘এটি পুরনো বিদ্যুৎকেন্দ্র হওয়ায় অনেক যন্ত্রপাতি পুরনো হয়ে গেছে। নতুন গ্রিড সাবস্টেশন হচ্ছে। কাজ শেষ হলে সেখান থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ হবে।’

প্রসঙ্গত, সোমবার সকাল ৯টার দিকে কুমারগাঁও উপকেন্দ্রের ভেতরের ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৩৩ কেভি লাইনের নিচে বিদ্যুতের হাইভোল্টেজের তার ছিঁড়ে স্পার্কিং হয়। ওই সময় নিচে ডাম্পিং করে রাখা পরিত্যক্ত এয়ার ফিল্টারে আগুন লেগে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট এসে এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

আগুন নেভাতে যাওয়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন কর্মকর্তা বেলাল হোসেন বলেন, ‘এয়ার ফিল্টারগুলো সেখানে রাখা ঠিক হয়নি। সেগুলো দাহ্য হওয়ায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।’

কুমারগাঁও বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন জানান, সোমবারের অগ্নিকাণ্ডের পর দুটি ফিডারের আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। তবে অন্য ফিডার থেকে কিছু এলাকায় ওই সময়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। বিকেলে ক্ষতিগ্রস্ত লাইন মেরামত করার পর সরবরাহ স্বাভাবিক হয়।

আরও পড়ুন:
সিলেটের কুমারগাঁও বিদ্যুৎকেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ড, সরবরাহ বিঘ্নিত

মন্তব্য

বাংলাদেশ
No one remembered the artisans behind the oath
বাংলাদেশের প্রথম সরকার

শপথের পেছনের কারিগরদের কেউ মনে রাখেনি

শপথের পেছনের কারিগরদের কেউ মনে রাখেনি সংগ্রাম কমিটির সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ অনুষ্ঠান। হাতে তেমন সময় নেই। কেউ নিয়ে এলেন চেয়ার-টেবিল, কেউ নিয়ে এলেন বাঁশ-খুঁটি। বাড়িতে পরার নতুন কাপড় ব্যবহার করা হলো প্যান্ডেল। রাত মেহেরপুরের বৈদ‍্যনাথতলার আম্রকাননে ঐতিহাসিক সেই শপথ অনুষ্ঠানের নেপথ্য কারিগরদের ভাগ্যে আজও জোটেনি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি।

১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল। বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ অনুষ্ঠান। হাতে তেমন সময় নেই। কেউ নিয়ে এলেন চেয়ার-টেবিল, কেউ নিয়ে এলেন বাঁশ-খুঁটি।

বাড়িতে পরার নতুন কাপড় ব্যবহার করা হলো প্যান্ডেল ঘেরাওয়ের কাজে। আগের দিনের অর্ধেক সময় আর রাত জেগে পাহারা দেয়া হলো মেহেরপুরের তৎকালীন বৈদ‍্যনাথতলার আম্রকানন।

শুরুটা শপথের অনুষ্ঠান থেকে হলেও মুক্তিকামী মানুষকে সহযোগিতা করতে গিয়ে কেটে গেল যুদ্ধের পুরোটা সময়।

সময় গড়িয়েছে, মত-পথ পাল্টেছে। তবে একাত্তরের ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক সেই শপথ অনুষ্ঠানের পেছনের কারিগরদের কেউ মনে রাখেনি। খোঁজ নেয়নি কেউ।

রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি তো দূরে থাক, স্থানীয়ভাবেও তারা পাননি যথাযথ সম্মান। এই আক্ষেপ নিয়ে কেউ পাড়ি দিয়েছেন পরপারে, কেউবা মৃত্যুর প্রহর গুনছেন।

শপথের পেছনের কারিগরদের কেউ মনে রাখেনি
মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্সে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণরত বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য। ছবি: নিউজবাংলা

কথাগুলো বঙ্গবন্ধুর ডাকে গঠিত বৈদ্যনাথতলা সংগ্রাম কমিটি নিয়ে।

জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে প্রত্যেক গ্রামে গ্রামে, পাড়ায় মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলার নির্দেশনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার বৈদ্যনাথতলা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন কয়েক যুবক।

সে সময়ের এমএনএ ছহি উদ্দীন বিশ্বাস এবং এসডিও তৌহিক-এলাহি চৌধুরীর পরামর্শে তারা ঐতিহাসিক শপথের সব আয়োজন করেছিলেন। শপথ অনুষ্ঠানে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, বাইবেল পাঠ, জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনসহ বিভিন্ন কাজে যারা যুক্ত হয়েছিলেন তাদেরকে আম্রকাননে নিয়ে এসেছিলেন সংগ্রাম কমিটির সদস্যরা।

প্রথম সরকারের শপথ অনুষ্ঠানের পর গোটা এলাকা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর প্রধান লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। তারপরও জীবনের পরোয়া না করে সংগ্রাম কমিটির অকুতোভয় সদস্যরা ত্রাণ সংগ্রহের কাজ করেছিলেন। তাদের অনেকে রাষ্ট্রের কাছ থেকে সম্মান না পাওয়ার কষ্ট নিয়ে ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন। দুই-একজন যারা বেঁচে আছেন তারা মৃত্যুর আগে রাষ্ট্রের স্বীকৃতিটুকু পেতে চান।

শপথের পেছনের কারিগরদের কেউ মনে রাখেনি
মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্স। ছবি: নিউজবাংলা

সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম সদস্য বল্লভপুর গ্রামের বয়োবৃদ্ধ থিওফিল মণ্ডল বলেন, ‘প্রাণের টানে প্রতি বছর ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে ছুটে আসি। পঁচাত্তর-পরবর্তী পরিস্থিতিতে ১৯৭৬ সালে কেউ মুজিবনগর দিবস পালন করতে আসেনি। আমরা মাত্র ১৯ জন লোক বাগানে গিয়ে মুজিবনগর দিবস পালন করেছিলাম।’

রাষ্ট্রীয় সম্মান-স্বীকৃতি না পাওয়ার আক্ষেপ করে এই বীর মুক্তিযাদ্ধা বলেন, ‘দেশ স্বাধীন হওয়ার পর শুনেছিলাম হাতেগোনা কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আছেন। পরবর্তীতে দেখি শতাধিক মানুষ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাতা পাচ্ছে। তারপরও সংগ্রাম কমিটির সদস্যরা অবহেলিত।’

একই কথা জানালেন মানিকনগর গ্রামের বয়োবৃদ্ধ দোয়াজ উদ্দীন মাস্টার। তিনি বলেন, ‘সংগ্রাম কমিটির সদস্যরা সব আয়োজন করেছিল। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করার জন্য আমার ছাত্র দারিয়াপুর গ্রামের বাকের আলীকে ডেকে নিয়ে আসি। সে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়েছে। এছাড়াও সংগ্রাম কমিটির আরেক সদস্য আব্দুল মোমিন চৌধুরী স্বীকৃতি পেয়েছেন।’

সংগ্রাম কমিটির সদস্যসহ যারা সেদিন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ অনুষ্ঠান আয়োজনে প্রাণের মায়া ত্যাগ করে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছিলেন তাদের সবার স্বীকৃতি দাবি করেন তিনি।

শপথের পেছনের কারিগরদের কেউ মনে রাখেনি
মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ। ছবি: নিউজবাংলা

বাংলা একাডেমী প্রণীত ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস: মেহেরপুর জেলা’ গ্রন্থের মাধ্যমে মূলত সংগ্রাম কমিটির বিষয়টি সবার নজরে আসে। এই গ্রন্থের লেখক মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ও বাংলা একাডেমী পুরস্কারপ্রাপ্ত দেশবরেণ্য কথাসাহিত্যিক রফিকুর রশিদ বলেন, ‘অনিবার্য মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতার হাত বাড়ানো এসব মানুষের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাওয়াটা খুবই প্রয়োজন। তারা শুধু শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজনই করেননি, কুষ্টিয়া অঞ্চলে সম্মুখ যুদ্ধে সব রসদ মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন জীবন বাজি রেখে।

বাগোয়ান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আয়ুব হোসেনও সংগ্রাম কমিটির সদস্য ও সংশ্লিষ্ট অন্যদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দাবি করেন।

তবে আশার কথা শুনিয়েছেন মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘ঐতিহাসিক মুহূর্তে ঐতিহাসিক ভূমিকার সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত ছিলেন তারা বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাদের সবাইকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়ার জন্য বিষয়টি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে উত্থাপন করা হয়েছে।’

মন্তব্য

বাংলাদেশ
The youngest hero Prateek Shahiduls family has no permanent residence

সর্বকনিষ্ঠ বীর প্রতীক শহীদুলের পরিবারের নেই স্থায়ী নিবাস

সর্বকনিষ্ঠ বীর প্রতীক শহীদুলের পরিবারের নেই স্থায়ী নিবাস বীর প্রতীক শহীদুল ইসলামের পরিবার। ছবি: নিউজবাংলা
গোপালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সৈয়দা ইয়াসমিন সুলতানা বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বীর নিবাস তৈরি করে দেয়ার একটি প্রকল্প চলমান আছে। গোপালপুরে জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ৬২টি বীর নিবাস নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে এবং ছয়টি নির্মাণাধীন রয়েছে।’

‘রাজাকার-আলবদর থাকে আজ রাজপ্রাসাদে, আমি শহীদুল ইসলাম বীর প্রতীক থাকি একটা কুইড়াঘরে (কুঁড়েঘরে) তার কারণ কী?’

২০০৩ সালে ধারণ করা এক ভিডিও সাক্ষাৎকারে এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা, টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার সূতী গ্রামের হেলাল উদ্দিনের ছেলে শহীদুল ইসলাম।

তার পরিবার সূত্রে জানা যায়, ছোট থেকেই অনেক সাহসী ও বুদ্ধিমান ছিলেন শহীদুল। তাই তো দেশকে হানাদার মুক্ত করতে ১২ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন কাদেরিয়া বাহিনীর কমান্ডার আনোয়ার হোসেন পাহাড়ির অধীনে।

দেশের সর্বকনিষ্ঠ এ বীর প্রতীকের পরিবারের নেই স্থায়ী কোনো নিবাস। সন্তানদের জন্য নেই চাকরির ব্যবস্থা। তিনি কুলির কাজ ও খাবার হোটেলের কাজ করে কাটিয়েছেন জীবনের অধিকাংশ সময়।

নিউজবাংলার অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ বীর প্রতীকের পরিবার বসবাস করছেন ঢাকার মিরপুর মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন প্রকল্পের সরকারি জমিতে। প্রথম সন্তান মুক্তা বেগম (৩৫) পেশায় গৃহিণী, স্বামীর বাড়ি রাজশাহীর নাটোরে। দ্বিতীয় সন্তান আক্তার হোসেন (৩২) পেশায় গাড়ি চালক, তৃতীয় সন্তান সোহাগ হোসেন (২৭) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সদ্য গ্রাজুয়েশন শেষ করেছেন, চতুর্থ সন্তান শিখা আক্তার (২০) ঢাকার একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেছেন।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, ভারতে ট্রেনিং চলাকালে সর্বকনিষ্ঠ হওয়ায় সহযোদ্ধারা তাকে লালু আর তার চেয়ে বয়সে বড় শ্যামলকে ভুলু নামে ডাকতে শুরু করেন। দেশে ফিরলে তার বুদ্ধিমত্তায় একাধিকবার মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণে বাঁচেন।

সেই ঘটনাই বর্ণনা করে তার পরিবার, কাদেরিয়া বাহিনীর কমান্ডারের নির্দেশে ছদ্মবেশ ধারণ করেন চতুর শহীদুল ইসলাম। কৌশলে এক রাজাকারের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে গোপালপুর থানা কম্পাউন্ডের, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বাংকারে ঢুকে পরেন। তার কৌশল ও দুঃসাহসিক গ্রেনেড হামলায় একাধিক বাংকার ধ্বংস করলে গোপালপুর থানা হানাদার মুক্ত হয়।

শহীদুলের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বীর প্রতীক উপাধি লাভ করেন তিনি। রাইফেলের সমান উচ্চতা হওয়ায় ভারতে প্রশিক্ষণ চলাকালে তাকে স্টেনগান চালনা ও গ্রেনেড ছোঁড়ার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। কাদেরিয়া বাহিনী ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি টাঙ্গাইলের বিন্দুবাসিনী বালক উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অস্ত্র সমর্পণের সময় সময় ১২ বছরের কিশোর শহীদুলের বীরত্বের কথা শুনে মুগ্ধ হয়ে তাকে কোলে তুলে নেন স্বয়ং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

ছবিটি সামরিক ও মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।

সর্বকনিষ্ঠ বীর প্রতীক শহীদুলের পরিবারের নেই স্থায়ী নিবাস
ছবি: সংগৃহীত

শহীদুলের জীবন সংগ্রাম

শৈশবে বাবা-মা আর মুক্তিযুদ্ধের সময় এক ভাই-এক বোনের মৃত্যু হলে দারিদ্র্যতায় উপায়ান্তর না দেখে মুক্তিযুদ্ধের পর দুই ভাইকে রেখে জীবিকার তাগিদে বাড়ি ছাড়া হন শহীদুল। ঢাকার সোয়ারীঘাটে বালু টানা, ঠেলা গাড়ি চালানো, রাজমিস্ত্রীর হেলপারের কাজ, শেষে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে কুলির কাজ শুরু করেন।

একপর্যায়ে কুলির কাজ শেষে হোটেলে কাজ শুরু করেন। যাযাবর অবস্থায় বিয়েও করেন, এক মেয়ে ও এক ছেলের জন্ম নেয়া সেই সংসার স্থায়ী হয়নি।

পরবর্তী সময় কুমিল্লায় হোটেলে কাজ করা অবস্থায় সহকর্মীকে জীবনের সব ঘটনা খুলে বলেন। দুই সন্তানকে নিয়ে ওই সহকর্মীর সঙ্গে মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুর চলে যান। ১৯৯৬ সালে সেই সহকর্মীর নিকটাত্মীয় মালা বেগমের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি।

এ দম্পতির ছেলে সন্তান সোহাগ হোসেনের জন্মের পর সংসারে অভাব অনটন দেখা দেয়। ঢাকার পোস্তগোলায় নিজের খাবার হোটেল চালু করার কিছু দিনের মধ্যেই ১৯৯৮ সালে জটিল কিডনি রোগে আক্রান্তের কথা জানতে পারেন শহীদুল।

কোনো উপায় না পেয়ে কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর ঢাকার বাসার ঠিকানা জোগাড় করে দেখা করেন। কাদের তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করান, উপস্থিত সহযোদ্ধাদের নির্দেশ দেন তার কাগজপত্র সংগ্রহ করতে। কাদেরিয়া বাহিনীর যোদ্ধা বীর প্রতীক আবদুল্লাহকে নির্দেশ দেন, ঢাকার মিরপুর মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন প্রকল্পে শহীদুলের পরিবারের জন্য জায়গা দিতে। সে অনুযায়ী তার পরিবারের ঠাঁই হয় সেখানে।

বীর প্রতীক খেতাব লাভ

চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থ হন শহীদুল ইসলাম। কাগজপত্র সংগ্রহের পর জানতে পারেন তিনি বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা, তিনিই সর্বকনিষ্ঠ বীর প্রতীক। পরে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক তাকে ৩০ হাজার টাকা অনুদান প্রদানের সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে অপর দুইভাই তাকে খুঁজে পায়।

শহীদুলের চিরবিদায়

অসুস্থতার কারণে শেষ সময়ে কোনো কাজকর্ম করতে পারেননি শহীদুল। শুভাকাঙ্ক্ষীদের অর্থে চলেছে চিকিৎসা ও পরিবারের খরচ। ২০০৯ সালে ২৫ মে অসুস্থ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে তাকে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।

পরিবারের বক্তব্য

বীর প্রতীক শহীদুল ইসলামে স্ত্রী মালা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার স্বামীর জীবদ্দশায় ভাতাপ্রাপ্ত ছিলেন না, তাই শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহায়তায় চিকিৎসা করাতে হয়েছে। উনার মৃত্যুর পর চার সন্তানকে অনেক কষ্টে লালনপালন করি। এরপর মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রীর কাছে গেলে ২০১৪ সালে দুই হাজার টাকা ভাতা চালু হয়।

‘মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন প্রকল্পের সরকারি জমিতে একাধিক রুম বানিয়ে ভাড়ার টাকায় সন্তানদের বড় করি। সন্তানদেরকে শিক্ষিত বানিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমার দাবি সন্তানদের জন্য উপযুক্ত চাকরি ও আমাদের স্থায়ী নিবাসের ব্যবস্থা করে দেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘তার নিজ এলাকার মানুষের থেকে সে তেমন মূল্যায়ন পায়নি, এই ক্ষোভে তিনি মৃত্যুর আগে কখনও গোপালপুর যাননি, তবে সন্তানদের নিয়ে আমি একাধিকবার গোপালপুর গিয়েছিলাম।’

সর্বকনিষ্ঠ বীর প্রতীকের সন্তান সোহাগ হোসেন বলেন, ‘মানুষের মৌলিক চাহিদার একটি বাসস্থান। আমরা বিশেষ পরিবারের সন্তান হলেও ঢাকার মিরপুরে সরকারি জমিতে বসবাস করতেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট দাবি, স্থায়ী বাসস্থান ও আমাদের জন্য উপযুক্ত চাকুরির ব্যবস্থা যেন উনি করেন।’

নিয়মিত সরকারি রেশন ও ভাতা পাচ্ছেন বলেও জানান তারা।

জনপ্রতিনিধিদের ভাষ্য

গোপালপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদ্য সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা সমরেন্দ্রনাথ সরকার বিমল বলেন, ‘সূতী মীরপাড়ায় গোপালপুরের একমাত্র বীর প্রতীক শহীদুল ইসলামের জন্ম হলেও, এখানে তার বাড়ি-ঘর নেই। তার পরিবার এখানে এসে কিছু চায় নাই, তাই বীর নিবাসসহ অন্যান্য সুবিধাদি পায়নি। তার পরিবার বীর প্রতীক ভাতা পাচ্ছেন।’

গোপালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সৈয়দা ইয়াসমিন সুলতানা বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বীর নিবাস তৈরি করে দেয়ার একটি প্রকল্প চলমান আছে। গোপালপুরে জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ৬২টি বীর নিবাস নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে এবং ছয়টি নির্মাণাধীন রয়েছে।

‘উনাকে আবেদন করে রাখতে বলেন। পরের অর্থবছরে আবার যদি বরাদ্দ আসে তবে হয়ত এগুলো পাঠাতে পারব।’

আরও পড়ুন:
কুমিল্লায় ১৫০ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা
বীর নারী মুক্তিযোদ্ধারা পেলেন সম্মাননা
কিশোরী রানীর ভাতের পাতিলে লুকানো পিস্তল-গুলি
ডিসেম্বরকে ‘মুক্তিযোদ্ধা মাস’ চান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
বঞ্চিত মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতি দাবি

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Changa Sylhets tourism sector on the occasion of Eid

ঈদ উপলক্ষে চাঙা সিলেটের পর্যটন খাত

ঈদ উপলক্ষে চাঙা সিলেটের পর্যটন খাত
সিলেটে আগামী কয়েক দিন পর্যটনে চাঙাভাব অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। ছবি: নিউজবাংলা
জাফলং পর্যটনকেন্দ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হোসেন মিয়া বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে জাফলংয়ে অনেক পর্যটক বেড়াতে এসেছেন। ব্যবসায়ীদের বেচাকেনাও ভালো হয়েছে। এখানকার কোনো হোটেল-রিসোর্টেই এখন কক্ষ খালি নেই। আগামী কয়েক দিন পর্যটক সমাগম বেশি থাকবে বলে আশা করছি।’

কিছুদিন মন্দাবস্থার পর ঈদ উপলক্ষে চাঙা হয়ে উঠেছে সিলেটের পর্যটন খাত। ঈদের ছুটিতে ব্যাপকসংখ্যক পর্যটক এসেছেন সিলেটে। এতে খুশি পর্যটন খাতের উদ্যোক্তারা।

আগামী কয়েক দিন এই চাঙাভাব অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন তারা।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেটে পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় দুটি গন্তব্য গোয়াইনঘাটের জাফলং ও কোম্পানীগঞ্জের সাদাপাথর। এ দুই জায়গাতেই ঈদের দিন থেকে পর্যটকদের ঢল নেমেছে, তবে ঈদের দিনের চেয়ে তার পরের দিন পর্যটক সমাগম আরও বাড়ে।

জাফলংয়ের পর্যটন খাতের উদ্যেক্তারা জানান, ঈদ মৌসুমে জাফলংয়ে আট থেকে ১০ লাখ পর্যটকের সমাগম হবে বলে আশা করছেন তারা।

জাফলং, সাদাপাথর ছাড়াও বিছনাকান্দি, রাতারগুল সোয়াম ফরেস্ট, পানতুমাই ঝরনা, লালাখাল ও সিলেটের বিভিন্ন চা বাগানে বৃহস্পতিবার থেকেই পর্যটকদের ঢল নামে। সিলেটের বেশির ভাগ হোটেল-রিসোর্ট এখন অতিথিতে পূর্ণ।

সিলেট শহর থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে সাদাপাথর। সাদা পাথুরে নদীর শীতল জল আর পাশেই দিগন্ত বিস্তৃত মেঘালয় পাহাড়। প্রকৃতির এ অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে সারা বছরই পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। ঈদ মৌসুমে পর্যটক সমাগম আরও বাড়ে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

ঈদুল ফিতরের পরের দিন শুক্রবার সাদাপাথরে গিয়ে দেখা যায়, পর্যটকদের কারণে নদীতে পা ফেলার অবস্থা নেই। ভিড়ের কারণে অনেকে নদীর তীরে দাঁড়িয়ে ছিলেন; নামতে পারছিলেন না পানিতে।

সাদাপাথর ঘুরতে আসা কুমিল্লার শিউলি বেগম বলেন, ‘এই পরিবেশ অপরূপ। যে কেউ আসলে মন ভালো হয়ে যাবে।’

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর থেকে আসা রাজেল মিয়া বলেন,‘দুপুরে সাদাপাথরে এসেছি। সাদাপাথরের ধলাই নদীর শীতল স্পর্শ মনকে চাঙা করে দিয়েছে।

‘সত্যিই অসাধারণ জায়গা। অবসর পেলেই চলে আসি।’

পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশ সিলেট রিজিয়নের পরিদর্শক আখতার হোসেন বলেন, ‘পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। সাদাপাথরে এই ঈদে প্রতিদিন কয়েক হাজার লোক ঘুরতে আসছেন।

‘আমাদের কয়েকটি টিম সার্বিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছে। পর্যটকরা স্বাচ্ছন্দ্যে ঘোরাফেরা করছেন।’

ঈদ উপলক্ষে চাঙা সিলেটের পর্যটন খাত

সিলেটের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্য জাফলং। শনিবার জাফলংয়ে গিয়ে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে মেঘ-পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন দর্শনার্থীরা।

জাফলংয়ে সকাল থেকেই দলবেঁধে পর্যটকেরা ঘুরতে আসেন। নদীতে নেমে কেউ কেউ গোসল করতে ব্যস্ত। আর নৌকা পার হয়ে অনেকের গন্তব্য মায়াবী ঝরনা, খাসিয়া পল্লি ও চা বাগানে। বেলা বাড়ার সঙ্গে দর্শনার্থীদের সংখ্যাও বাড়তে থাকে।

পর্যটক সুজন আহমেদ বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে পরিবারের সদস্যরা মিলে ঘুরতে এসেছি। জাফলং ভীষণ ভালো লেগেছে।

‘পাহাড় আর পাথরের সৌন্দর্য আমাদের মুগ্ধ করেছে, তবে বৃষ্টিতে একটু ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।’

এদিকে পর্যটকদের চাপে সিলেটের হোটেল-মোটেলগুলোতে কক্ষ খালি ছিল না। ব্যস্ততা দেখা গেছে রেস্তোরাঁগুলোতেও। পর্যটকের সমাগমে খুশি এখানকার পর্যটন ব্যবসায়ীরাও।

জাফলং পর্যটনকেন্দ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হোসেন মিয়া বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে জাফলংয়ে অনেক পর্যটক বেড়াতে এসেছেন। ব্যবসায়ীদের বেচাকেনাও ভালো হয়েছে।

‘এখানকার কোনো হোটেল-রিসোর্টেই এখন কক্ষ খালি নেই। আগামী কয়েক দিন পর্যটক সমাগম বেশি থাকবে বলে আশা করছি।’

পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে টুরিস্ট পুলিশ, থানা-পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে জাফলং ট্যুরিস্ট পুলিশের ইনচার্জ রতন শেখ বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে সকাল থেকেই পর্যটকে মুখরিত ছিল জাফলং। আগত পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা কাজ করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ ছাড়াও পর্যটকরা বেড়াতে এসে যাতে কোনোভাবেই ভোগান্তিতে না পড়েন, সেদিকে আমাদের নজর রয়েছে।’

আরও পড়ুন:
তীব্র লোডশেডিং, পানির সংকটে অতিষ্ঠ সিলেটবাসী
সিলেটে গ্রামের চেয়ে বেশি লোডশেডিং শহরে
সিলেট টেস্টে শোচনীয় হার বাংলাদেশের
সিলেটে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বেড়ে ৬
উদ্ভাবনী পদমর্যাদায় ‘ইনফেকশাস-ডিজিজ’ বিষয়ে প্রথম স্থান সিকৃবির

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Crowds to watch the Eid festival of farmers and farmers in Kurigram

কুড়িগ্রামে কিষাণ-কিষাণীর ঈদ উৎসব, দেখতে ভিড়

কুড়িগ্রামে কিষাণ-কিষাণীর ঈদ উৎসব, দেখতে ভিড় কোলাজ: নিউজবাংলা
কৃষকদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে ব্যতিক্রমী এ আয়োজন করে  ফাইট আনটিল লাইট (ফুল) নামে একটি সামাজিক সংগঠন। মূলত কৃষকদের ঈদকে প্রাণবন্ত করতে এ উৎসবের আয়োজন করে সংগঠনটি।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলায় ঈদ উৎসবে কিষান-কিষানিদের নিয়ে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। সেসব খেলা দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে হাজারো দর্শনার্থী এস ভিড় জমায়।

কৃষকদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে ব্যতিক্রমী এ আয়োজন করে ফাইট আনটিল লাইট (ফুল) নামে একটি সামাজিক সংগঠন। মূলত কৃষকদের ঈদকে প্রাণবন্ত করতে এ উৎসবের আয়োজন করে সংগঠনটি। খেলা শেষে ৩৫ জন বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়।

শুক্রবার দিনব্যাপী ফুলবাড়ী উপজেলার উত্তর বড়ভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এসব খেলা অনুষ্ঠিত হয়।

কুড়িগ্রামে কিষাণ-কিষাণীর ঈদ উৎসব, দেখতে ভিড়

দিনব্যাপী চলা অনুষ্ঠানে প্রায় ২২ ধরনের ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল হাঁড়ি ভাঙা, বালিশ খেলা, সুঁইসুতা, সাঁতার, তৈলাক্ত কলাগাছ বেয়ে চড়া, স্লো সাইকেল রেস, বেলুন ফাটানো এবং কিষানিদের বল ফেলা, বালিশ খেলা এবং যেমন খুশি তেমন সাঁজোসহ আরও অন্যান্য খেলা। এসব খেলায় অংশ নেন বিভিন্ন বয়সের শতাধিক কিষান-কিষানি।

অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আইনুল ইসলাম, সাংবাদিক শফি খান, রংপুর বিভাগীয় হিসাবরক্ষক সাইদুল হক, ফুল-এর নির্বাহী পরিচালক আব্দুল কাদের প্রমুখ।

খেলা দেখতে আসা ময়নাল হক বলেন, ‘গ্রামে এসব খেলা দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। প্রায় ১০-১৫ বছর পর গ্রামের ঐতিহ্যবাহী খেলা দেখে খুবই আনন্দ পেলাম। সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে কৃষকদের হাঁড়ি ভাঙা, সাইকেল খেলা দেখে। এছাড়া কিষানিদের সুঁইসুতা খেলা ও বালিশ খেলা ছিল বেশ আনন্দের।’

কুড়িগ্রামে কিষাণ-কিষাণীর ঈদ উৎসব, দেখতে ভিড়

কৃষক নুর ইসলাম বলেন, ‘কৃষকদের নিয়ে এমন ব্যতিক্রমী আয়োজন সত্যি ভালো লেগেছে। আমরা এখানে শতাধিক কিষান-কিষানি আজকের খেলায় অংশ নিয়েছি। খু্ব ভালো লেগেছে।’

ফুল-এর নির্বাহী পরিচালক আব্দুল কাদের বলেন, ‘কৃষক হাসলে বাংলাদেশ হাসে- এ প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে দিনব্যাপী শতাধিক কিষান-কিষানিকে নিয়ে প্রায় ২২টি খেলার আয়োজন করা হয়েছে।

‘এ খেলার মাধ্যমে সমাজে বাল্যবিয়ে বন্ধে সচেতনতা বাড়াতে চেষ্টা করেছি। এছাড়া গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে জানাতেও এ খেলার আয়োজন করা হয়েছে।’

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Akalima is excited to get a wheelchair on the day of Eid

ঈদের দিন হুইলচেয়ার পেয়ে উচ্ছ্বসিত আকলিমা

ঈদের দিন হুইলচেয়ার পেয়ে উচ্ছ্বসিত আকলিমা ছবি: নিউজবাংলা
জন্মের পর সুস্থ থাকলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে আকলিমার পা দুটি অকেজো হয়ে পড়ে। বর্তমানে সে চলাফেরা করতে পারে না।

টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে হুইলচেয়ার পেয়ে প্রতিবন্ধী কিশোরী আকলিমা আক্তারের মুখে হাসি ফুটেছে। আর্থিক টানাটানির পরিবারে এতদিন আদরের মেয়ের হুইলচেয়ারের আবদার রক্ষা করতে পারেননি মা-বাবা। অবশেষে ‘প্রান্তিক হাসি ফাউন্ডেশন’ নামে একটি মানবিক সংগঠনের সহযোগিতায় হুইলচেয়ার পেয়ে ঈদের দিন শুধু মেয়ে নয়, মা-বাবার মুখেও ফুটেছে স্বস্তির হাসি।

জানা গেছে, ধলাপাড়া ইউনিয়নের আষাঢ়িয়াচালা গ্রামের গৃহকর্মী রাবেয়া ও আসলাম দম্পতির একমাত্র মেয়ে আকলিমা। জন্মের পর সুস্থ থাকলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে তার পা দুটি অকেজো হয়ে পড়ে। বর্তমানে সে চলাফেরা করতে পারে না।

অভাবের সংসারে বাবা-মায়ের কোলে বেড়ে উঠলেও বয়স বাড়ায় কষ্ট করে চলাফেরা করতে হয় তাকে। বাকি সময় তাকে শুয়ে-বসেই দিন কাটাতে হয়। অভাব-অনটনের সংসারে তাকে একটি হুইলচেয়ার কিনে দেয়ার মতো সামর্থ্য নেই পরিবারটির।

ঈদের দিন হুইলচেয়ার পেয়ে উচ্ছ্বসিত আকলিমা

হুইলচেয়ার পেয়ে উচ্ছ্বসিত আকলিমা তার অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, ‘এতদিন আমার চলতে অনেক কষ্ট হয়েছে। এই চেয়ারটি আগে পেলে আমার চলাচলে অনেক সুবিধা হতো। আজ ঈদের দিন চেয়ারটি পেয়ে আমার অনেক ভালো লাগছে। আমি হাঁটতে না পারলেও চেয়ারটি ব্যবহার করে আমার সহপাঠীদের সঙ্গে অন্তত ঘুরতে পারব এবং আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে যাতায়াত করতে পারব।’

আকলিমার মা রাবেয়া খাতুন বলেন, ‘বসতবাড়ি ছাড়া আমাদের কোনো সম্পদ নেই। মানুষের খেত-খামারে কাজ করে কোনোরকমে সংসার চালাই। দীর্ঘদিন ধরে একটি হুইল চেয়ারের অভাবে সারা দিন মেয়েটাকে শুয়ে থাকতে হতো। হাত দিয়ে ভর করে চলতে চলতে পা ও আঙুল বিকল হয়ে গেছে। এখন চেয়ার পেয়ে পরিবারের সবারই ভালো লাগছে।’

প্রান্তিক হাসি ফাউন্ডেশনের সমন্বয়ক মো. জাফর আলী বলেন, ‘স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, আকলিমা আক্তার নামের একটি মেয়ে ছোট থেকেই এভাবে চার হাত-পায়ে অনেক কষ্টে চলাচল করছে। হাঁটুর ওপর ভর করে চলতে চলতে পায়ে ইনফেকশন হয়ে গেছে।

‘এদিকে তার দুই হাতের অনেকটাই অবশ। আকলিমার পরিবারের আর্থিক অবস্থাও খারাপ। যার কারণে, আমাদের এই উদ্যোগ। আর এই উদ্যোগটা আমরা ঈদের দিনে বাস্তবায়ন করেছি যাতে এই আনন্দের দিনে আনন্দের পরিমাণটা ভিন্ন মাত্রা যোগ করে।’

এ বিষয়ে প্রান্তিক হাসি ফাউন্ডেশনের অপর সমন্বয়ক ও স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী শফিকুল ইসলাম জয় বলেন, ‘আকলিমার মুখে হাসি ফোটানোর এই ক্ষুদ্র প্রয়াসটি আজকের দিনের বড় একটি পাওয়া। আমরা প্রান্তিক অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করছি। ভবিষ্যতেও আমাদের সংগঠনের এরকম মানবিক কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’

আরও পড়ুন:
প্রতিবন্ধীদের নিয়ে ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট, জরিমানা
প্রতিবন্ধী শিশুকে ঢামেকে ফেলে গেল স্বজন
কীভাবে পড়াশোনা করছেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা
প্রতিবন্ধীদের বিদ্যালয় এমপিওভুক্তির দাবিতে মানববন্ধন
শ্রুতিলেখকের কলমে স্বপ্ন যাদের

মন্তব্য

p
উপরে