সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে গত কয়েকদিন ধরে দেশের তরুণ সাহিত্যিকদের মধ্যে উত্তপ্ত তর্ক চলছে। তর্কের বিষয়, করপোরেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি ও সাহিত্যকর্মে সেটির প্রভাব।
সাহিত্যিকদের অনেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। কেউ কেউ বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। পদের কারণে তাদের সাহিত্যকর্ম বেশি গুরুত্ব পায় বলে অনেকে অভিযোগ করেন। আবার এমন অভিযোগও আছে যে, অনেকে করপোরেট পেশাজীবীদের সাহিত্যকর্মের প্রশংসা করে তাদের আনুকূল্য লাভের চেষ্টা করেন বা আনুকূল্যের প্রতিদান হিসেবে প্রশংসা করেন। বিপরীত দিকে, উৎকৃষ্ট প্রতিভাদীপ্ত সাহিত্যকর্ম সৃষ্টি করা সত্ত্বেও কেবল উচ্চপদে চাকরির ‘অপবাদে’ অনেকে মনোযোগবঞ্চিত ও অবিচারের শিকার হয়ে থাকেন বলে অনুযোগ আছে।
এই তর্কে অংশ নিয়েছেন সাহিত্যিক সুমন রহমান, রাজু আলাউদ্দিন, মাসরুর আরেফিন, ব্রাত্য রাইসু, মাহবুব মোর্শেদ, কামরুজ্জামান কামু প্রমুখ।
এই আলোচনায় প্রবল ব্যক্তি-আক্রমণ থাকলেও এর ভেতর দিয়ে বর্তমান সময়ের সাহিত্যিকদের শিল্পভাবনা, সাহিত্যের রাজনীতি ও ক্ষমতাকাঠামোর প্রতি তাদের সংবেদনশীলতা, একটি সক্রিয় সম্প্রদায় হিসেবে নিজেদের মধ্যে সম্পর্কের বোধ, তাদের ঈর্ষাকাতরতা ইত্যাদি উন্মোচিত হয়েছে। এ কারণে ফেসবুকের পাতায় মন্তব্য পাল্টা-মন্তব্যের তাৎক্ষণিকতার বাইরে এটির দালিলিক মূল্যও আছে।
আলোচনাটি ১২ অক্টোবর শুরু হয়েছিল গল্পকার, কবি সুমন রহমানের একটি ফেসবুক পোস্ট থেকে। আলোচনাটি এখনও চললেও এখানে তা শেষ করা হয়েছে ১৮ অক্টোবর কথাসাহিত্যিক মাহবুব মোর্শেদের পোস্ট দিয়ে। এইসব আলোচনা ফেসবুকের পাতা থেকে সংকলন করে এখানে কালানুক্রমিকভাবে উপস্থাপন করা হলো।
তর্ক শুরুর সেই পোস্টে সুমন রহমান লেখেন:
সুমন রহমানের পোস্ট–১২. ১০. ২০/ দুপুর ২টা ১৭ মিনিট
‘বিলম্বিত পুঁজিবাদের এই ভুবনজোড়া ফাঁদে সাহিত্য একলা বসে থাকে! তার কোনো সহযাত্রী নাই। বাজারব্যবস্থার ঠাপে রুচিবোধ উধাও হয়ে গেছে। বাজারে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে ছদ্মপাঠক, সুবিধাভোগী সম্পাদক আর ভৌতিক লম্পট। টাপুর টুপুর টাইপরাইটারের ছন্দে বৃষ্টি নামে সারা মতিঝিলে। করোনায় চাকরিশূন্য কবি হানা দেয় কর্পোরেটের দুয়ারে, নামমাত্র মূল্যে বিক্রি হয় সাহিত্যের ইতিহাস। নাছোড়বান্দা শ্রাবণে ভিজে ম্যাড়মেড়ে হয়ে যাওয়া উপমাগুলির জন্য তেমন কোনো শুশ্রুষা নাই। তাদের সামান্য ফিসফাস এই হল্লাময় দাসবাজারে আজ আর কারো কান অব্দি পৌঁছায় না।
সাহিত্যের এই নিউ নরমাল হেটেরোটোপিয়ায় নিজেকে চিনতে পারছেন তো? নাকি বাজার-স্পন্দিত বুকে নিজেরেই বোর্হেস ভাবতে শুরু করে দিয়েছেন?’
এখানে উল্লেখ্য, ঔপন্যাসিক মাসরুর আরেফিন গত ৩ সেপ্টেম্বর তার ফেসবুক পেজে আর্জেন্টাইন কবি ও গল্পকার হোর্হে লুইস বোরহেসকে নিয়ে প্রবন্ধ-আকারের একটি দীর্ঘ পোস্ট দিয়েছিলেন, যেটির শিরোনাম ছিল: ‘আমাদের বোরহেস প্রেম—রাজু আলাউদ্দিন, আমি আর প্রশ্নচিহ্ন নিয়ে ব্রাত্য রাইসু।’
সুমন রহমানের ফেসবুক পোস্টে স্পষ্টতই মাসরুর আরেফিনের পোস্টকে কটাক্ষ করা হয়েছে। সুমন রহমানের পোস্টের তিন দিন পর দৃশ্যত সেটির জবাব হিসেবে অনুবাদক ও গবেষক রাজু আলাউদ্দিন একটি পোস্ট দেন:
রাজু আলাউদ্দিনের পোস্ট–১৫. ১০. ২০/ দুপুর ১২টা ৪২ মিনিট
‘ও এক ত্যাঁদড় লোক
ইতর প্রাণিদের সঙ্গে কখনোই বিরোধে যাওয়ার মতো ইচ্ছে যেমন নেই, তেমনি রুচিও নেই। তদুপরি সময়ের অভাব আমাকে নিরুৎসাহিত করে আরও বেশি। যার মধ্যে সততা নেই বিন্দুমাত্র, বরং সততার মুখোশে যে অসততার ফেরি করে, তার প্রতি বিবমিষা জানানো ছাড়া আর কী করার থাকতে পারে। কথা বলে কর্পোরেটের বিরুদ্ধে, কিন্তু কার্যত যে কিনা কর্পোরেটের ঘেটুপুত্র হিসেবে নিজের পায়ুপথকে এজমালি করে রেখেছে, সে কিনা ইনিয়ে বিনিয়ে কর্পোরেটের বিরুদ্ধে বলে। অন্য কোনো প্রতিভাবানের পুস্তক নয়, নিজেরই কর্পোরেট প্রভু, যে- প্রভুর কিতাবের স্তুতিবাক্য লিখতে হয় গোলামিবোধ থেকে। এই গোলাম দার্শনিকতার কথা শোনায়—কোথায়? কানার হাটবাজারে। নিজের কর্পোরেটের পক্ষপাতিত্ব করে এই `লিবারেল' দার্শনিক। কেন করে? কারণ এক কর্পোরেটের বিরুদ্ধে অন্য কর্পোরেটের অর্থনৈতিক লড়াইয়ে সে বেতনভুক্ত পদাতিক সৈনিক। তদুপরি আছে সাহিত্যিক স্বার্থ। স্বার্থের কারণে পুরুষ-বেশ্যারা নির্লজ্জের মতো যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারে। জীবনানন্দ-প্রশ্নে সে অখাদ্য এক কমলালেবুর পাশে দাঁড়ায়। সাহিত্যে এসব পুরুষ-বেশ্যার প্রাদুর্ভাব অনেক।
আশ্চর্য দূরদর্শিতা নিয়ে ভলতেয়ারের মতো লেখক দু’শ বছর আগেই এদের কীটোপম উপস্থিতি সম্পর্কে যা বলেছিলেন তা দিয়েই আমার পয়গাম তুলে ধরছি:
“ও এক ত্যাঁদড় লোক। সমস্ত নাটক এবং বইয়ের নিন্দে করেই ও জীবিকানির্বাহ করে। যে-কেউ সাফল্য লাভ করে তাকেই ও ঘৃণা করে, যেমন নপুংসকরা সম্ভোগীদের ঘৃণা করে। ও হলো সাহিত্যের সেই সাপদের একজন যারা নোংরায় আর বিষে নিজেদের পুষ্ট করে। ও এক পেশাদার লিখিয়ে।” (কাঁদিদ, ভলতেয়ার)’
এই পোস্টে অনেকে মন্তব্য করেন। মন্তব্যকারীদের একজন ছিলেন মাসরুর আরেফিন। তিনি লেখেন:
মাসরুর আরেফিনের মন্তব্য: ‘Sumon Rahman: কথাশিল্পী সুমন রহমান দুদিন আগে যখন আমাকে আর রাজুকে জড়িয়ে একটা নোংরা পোস্ট দিলেন, তখনই ফিল করেছিলাম, কাজটা ঠিক করেননি তিনি, আরও বড় কথা কাজটার কোনোই দরকার ছিল না।
তিনি কর্পোরেট পুঁজি, কর্পোরেট পুঁজি বলে গালি ঝাড়লেন, শেষে বোর্হেস প্রসঙ্গে আমাকে ও রাজুকে উদ্দেশ করে ইঙ্গিতপূর্ণ শ্লেষ রাখলেন, আর "চাকরিশূন্য কবির কর্পোরেটে হানা দেওয়া" নিয়ে কামরুজ্জামান কামুকে খোঁটা, ইত্যাদি দিলেন। তার লেখাটা ছিল কারও নাম না নিয়ে এক টিপিকাল লেখা, রাজুর লেখাটাও তাই। কিন্তু সবাই এখানে সব বোঝে যে কে কাকে নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপটা করল।
সত্যি এসব বন্ধ করা উচিত। রাজুর সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব রাজুর সঙ্গে কোনো কর্পোরেটের বন্ধুত্ব না। আমি মাসরুর আরেফিন লেখক ও কবি, জাস্ট চাকরি করি একটা বড় কর্পোরেটে। কামু যখন বিপদে, আমি তখন তাকে হেল্প করি আমার এখানে চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়ে, তাতে আমাদেরই একজন কবির একটু হলেও ভাল হয়। এটুকুও কি বোঝেন না কেউ? এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে লেখকের পাশে লেখককেই দাঁড়াতে হবে। কেউ এখানে কারো পাশে দাঁড়ায় না। আমি যা করি তা স্বচ্ছ, স্পষ্ট। তা নিয়ে অযথা ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ কেন করেন?
রাজু আর আমার বোর্হেস প্রীতি নিয়ে এই নাম-না-বলা বাঁকা কথা আমরা দুজনের কেউই ডিজার্ভ করি না, তাও এক কথাশিল্পীর কাছ থেকে যার লেখা আমার পছন্দের।
কে কাকে এ দেশে কর্পোরেট বলে? প্রথম আলোর মত বড় কর্পোরেটে চাকরি করা লোক (ট্রান্সকম গ্রুপ যে কত বড় এক কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান তা কি আপনারা জানেন না?) যাদের এক টুকরো খবরে একটা মানুষের জীবন ছিন্নভিন্ন হয়ে যেতে পারে, সেরকম ক্ষমতাশালী প্রতিষ্ঠানের লোক আমাকে বলবে কর্পোরেট লেখক? কেন?
সুমন নিজেও এক বড় লোকাল কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে আছেন, আমাদের ব্যাংকও যেমন লোকাল কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান। আর রাজুর পোস্ট ধরে আমি দেখলাম সুমন তার মালিকদের একজনের বইয়ের রিভিউও করেছেন, যেটা নিয়ে তাকে খোঁটা দিলেন রাজু। ওই মালিক আবার আমার বন্ধু কাজী আনিস আহমেদ, যাকে আমি মেধা মনন পড়াশোনার বেলায় বেশ উঁচুতে মাপি। কিন্তু রাজুর কথা হচ্ছে তুমি নিজে কর্পোরেট চাকরি করবা, তোমার মালিকের বইয়ের রিভিউ করবা, আবার আমাকে কিম্বা মাসরুরকে নিয়ে নোংরা খোঁচা দিবা, আমরা নিজেদেরকে বোর্হেস ভাবছি কিনা ইত্যাদি বলবা, তা কেন মেনে নেব?
এ সবই বন্ধ হওয়া উচিত। লেখকের মূল্যায়ন হওয়া উচিত শুধু তার লেখা দিয়ে। এ সবই আমাদের ফোকাস আমাদের আসল কাজ থেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে। সুমন ওই মেসেজ লিখে কিছুই অর্জন করেন নি। আজকে রাজুও না। আমিও না। আমরা সবাই এভাবে আসল কাজ থেকে দূরে সরে যাচ্ছি।
আমরা কেউই পারফেক্ট না। একজনও না। আমরা সবাই, প্রত্যেকেই, কোনো না কোনোভাবে কোনো না কোনোকিছুর সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করেই এই সিস্টেমের মধ্যে কোনো একভাবে টিকে আছি মাত্র। সেটা আমাদের সবারই বোঝা উচিত। এই সিস্টেমে কারো পক্ষে সম্ভব না পুঁজির হাইড্রার মতো থাবার বাইরে যাওয়া, গিয়ে বাঁচা।
কিন্তু এই আমাদেরই পক্ষে সম্ভব ভাল লেখক হতে চেষ্টা করা, শুধু সেই কাজটা করা।
পুনশ্চ: স্নেহভাজন শিমুল সালাহ্উদ্দিন সুমনের কর্পোরেট পুঁজির ওই পোস্টে তার ভাললাগার কমেন্ট করেছিলেন। মন খারাপ হয়েছিল আমার। শিমুল কিন্তু তার অনুষ্ঠানটা চালাচ্ছেন কর্পোরেট সিটি ব্যাংক থেকে স্পন্সরশিপ নিয়েই। তাহলে শিমুল কেন সুমনের পোস্টকে সমর্থন জানালেন। তিনি কি কাজটা বুঝে করেছেন, নাকি না বুঝে? আমি জানি না। শুধু বলব, সবাই আমরা আসেন আমাদের আসল কাজে ফোকাস করি। এসব অনেক দিন হল। এবার লেখালেখি হোক, লেখকদের একটা সুস্থ সমাজ গড়ে উঠুক। দায়িত্বটা আমাদেরই ঘাড়ে।’
রাজু আলাউদ্দিনের পোস্টে মাসরুর আরেফিনের এ মন্তব্যের জবাবে সেখানেই সুমন রহমান পাল্টা মন্তব্য করেন-
সুমন রহমানের মন্তব্য: ‘Mashrur Arefin: নোংরামিটা খুব চালাকির সাথে আপনি করলেন। রাজুর লেখা আমি পড়ি না। রাজুর জন্য বা আপনাকে কিংবা রাজুকে নিয়ে লিখিও নাই। আমি কিছু অভারঅল পর্যবেক্ষণ হাজির করেছিলাম। কারো নাম না লিখে। কাউকে গালাগাল দিই নি। আপনি রাজুর এই কুৎসিত লেখাকে আমার সমপর্যায়ের বলে সার্টিফাই করলেন। আমাকে ট্যাগ করলেন। তারপর সভাপতির ভূমিকা নিলেন। এসব বহু পুরানা রাজনীতি মাসরুর। আমি ভাবি নি আপনি ততটুকু করবেন।
এখন সময় নাই। পরবর্তীতে আমার পেজে লিখব। যারা এই অতি কুৎসিত পোস্টে লাইক অব্যাহত রাখছেন, তারা দয়া করে আমাকে আনফ্রেন্ড করে নেবেন।’
এর পরপরই কবি কামরুজ্জামান কামু ওই একই পোস্টে মন্তব্য করেন-
কামরুজ্জামান কামুর মন্তব্য: ‘আমি লজ্জিত যে, সুমনের মত আমাকেও কোথাও না কোথাও কাজ করেই খাইতে হয়! এই পেট নিয়ে জন্মানোর অপরাধে আমি সুমন বা এই ধরনের অন্যদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমি তাঁর প্রথমত বৈষয়িক, দ্বিতীয়ত লেখক জীবনের আরও উন্নতি কামনা করি।’
একই পোস্টে সুমন রহমানের মন্তব্যের জবাবে মাসরুর আরেফিন মন্তব্য করেন-
মাসরুর আরেফিনের মন্তব্য: ‘Sumon Rahman: সুমন, যে অর্থে চালাকি বললেন, আমার সেই চালাকির জন্য কোনোই খ্যাতি নেই। কোনোদিন ওসব চালাকি করিনি। মাথা খারাপ, রাগী, ক্রোধে ভরা, এসব খ্যাতি আমার আছে। সাহিত্য অঙ্গনের কেউ আমাকে চালাক বলেনি কোনোদিন, বোকাই বলেছে। চালাক হলে আমি নাম না বলেই ইঙ্গিতে সব বুঝিয়ে লিখে যেতাম আপনাদের মতো।
কারো নাম না লিখে সেই কারো উদ্দেশে সব লেখার এই কালচারের সুবিধা ফেসবুকে অনেক নিচ্ছে, নিয়েছে, আপনিও উপরের ছোট উত্তরে এখন নিতে চেষ্টা করলেন।
তবে যেহেতু আপনি আপনার লেখায় কারো নাম না বলে সব বলেছিলেন, তাই আমিই হারলাম এখন আপনার এই অস্বীকারের পরে। ক্ষমাপ্রার্থী এখন।’
এর জবাবে সুমন রহমান লেখেন-
সুমন রহমানের মন্তব্য: ‘Mashrur Arefin: মাসরুর, আপনার "ক্ষমাপ্রার্থনা" তো আমার জীবনে মরুঝড় নিয়ে আসবে। পদাতিকেরা এরই মধ্যে নেমে পড়েছে! আমার ছোট্ট লেখাটা যে কত মর্মান্তিকরকম সত্য, তা আমাকে প্রচুর গালাগাল খেয়েই প্রমাণ করে যেতে হবে। আপনি নিশ্চয়ই সেখানেও মধ্যস্থতা করবেন!’
প্রতি-উত্তরে মাসরুর আরেফিন বলেন-
মাসরুর আরেফিনের মন্তব্য: ‘Sumon Rahman: সুমন, আমি মধ্যস্থতাকারীর রোলে ছিলাম না। ভুল বুঝেছেন। মধ্যস্থতা করলে রাজুর মন্তব্যের পরে আমি চুপ করে বসে থেকে তারপর বেশি হলে আপনার নাম না নিয়ে একটা পোস্ট দিতাম এখানে। আমি সরাসরি আপনাকে আক্রমণ করেছি। একে মধ্যস্থতা বলে না। আপনার লেখাটার পরে ভাবছিলাম আমি লিখব। রাজু ভাবছিলেন রাজু লিখবেন। সকালে উঠে দেখি রাজু লিখে ফেলেছেন।
তারপর এলো আপনার ওই লেখা যে, আপনার পোস্টটা আমাকে বা রাজুকে নিয়ে ছিলই না। আপনার এই অস্বীকারে আমি হতভম্ব হয়ে গেছি, কারণ সেটা আপনি করবেন আমি কল্পনাও করিনি। আপনি ওখানে লেখা আপনার কথাগুলোর লাইন-বাই-লাইন ধরে কী ব্যাখ্যা দেবেন আমি জানি না।
আপনি ওভাবে অস্বীকার করে বসলে, লিগালি স্পিকিং, কী আর বলার থাকে কারও। তাই "লিগ্যাল ক্ষমার" কথা বলেছি।
আর লিগ্যাল-এর বাইরে বিশ্বাসের যে জায়গা, সেখান থেকে বলি যে, আমি বিশ্বাস করি আপনার ওই পোস্ট আমাকে আর রাজুকে নিয়েই ছিল।
লেখকদের মধ্যে এই বেনামে পোস্ট, নাম-না-লেখা, নাম-না-বলা পোস্ট বন্ধ হোক। আমরা যা বলার তা উদ্দিষ্ট মানুষটাকে যেন সরাসরি বলি, সরাসরি নাম ধরেই শিষ্টাচার মেনে বলি।’
মাসরুর আরেফিনের মন্তব্যের জবাবে একই পোস্টে সুমন রহমান মন্তব্য করেন-
সুমন রহমানের মন্তব্য: ‘Mashrur Arefin: মাসরুর, আপনি দেখি খুব আনইন্টেলেকচুয়াল কথাবার্তা বলছেন! মানুষ স্বনামে লিখবে বেনামে লিখবে। নাম ধরে বলবে, নাম না-ধরেও বলবে। আপনি আমি সেসব ঠিক করে দেয়ার কেউ না। আবার শিষ্টাচার শেখাচ্ছেন! যে পোস্টের নিচে শিষ্টাচার শেখাচ্ছেন, সেটা ভাল করে পড়ে নিয়েছেন তো? আর যে পোস্টের জবাবে এসব করছেন, তাতে শিষ্টাচারের অভাব ছিল কোথায়?
না, মাসরুর। সেই পোস্টের লক্ষ কোনো ব্যক্তি না। একটা সিস্টেম। উপলক্ষ ব্যক্তি হতে পারে, কিন্তু সেটা গুরুত্বপূর্ণ না। ব্যক্তি আক্রমণ দিয়ে সিস্টেমকে চ্যালেঞ্জ করা যায় না। আমি সিস্টেমটার বিপক্ষে দাঁড়াচ্ছি, ব্যক্তি আপনার প্রতি ভালোবাসা বহাল রেখে।’
রাজু আলাউদ্দিনের একই পোস্টে কথাসাহিত্যিক ও দেশ রূপান্তরের অনলাইন ইনচার্জ সালাহ উদ্দিন শুভ্র মাসরুর আরেফিনের প্রতি মন্তব্য করেন-
সালাহ উদ্দিন শুভ্রর মন্তব্য: ‘Mashrur Arefin: সুমন রহমানের স্ট্যাটাসে কামু ভাইয়ের উল্লেখ নাই। বোর্হেস অর্থে যদিও কল্পনা কইরা রাজু আলাউদ্দিনকে টানার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু মাসরুর আরেফিন এখানে কামু ভাইকে (কামরুজ্জামান) দেখতে পাওয়াটা তার ছোট মাস্তানির বহিঃপ্রকাশ।’
সালাহ উদ্দিন শুভ্রর মন্তব্যের জবাবে মাসরুর আরেফিন মন্তব্য করেন-
মাসরুর আরেফিনের মন্তব্য: ‘Salah Uddin Shuvro: মাস্তানি যারা করার তারা করে করে সবকিছু এই অবস্থায় এনেছে। আমি এই মাঠে ছিলামই না। স্রেফ এক অনুবাদক হয়ে পড়ে ছিলাম ২০১৯-এর ফেব্রুয়ারির "আগস্ট আবছায়া" পর্যন্ত। কিন্তু তারপর গত দেড় বছরে যত মাস্তান দেখলাম তা সাহিত্য বাদে অন্য এরিয়ার সকল মাস্তানের যোগফলেরও বেশি।
আপনি যেহেতু তার হয়ে সবই জানেন, তাহলে তাকেই জিজ্ঞাসা করেন যে, “চাকরিশূন্য কবির কর্পোরেটে হানা দেওয়া”বলতে উনি আমাদের কোন কবিকে বুঝিয়েছেন? আমরা তো প্রত্যেককে চিনি। কে তার ভাষায় ওই "চাকরিশূন্য" কবি? আপনিই বলেন না?
বুঝে ফেলার মধ্যে মাস্তানি থাকে না, ভাই। মাস্তানির মধ্যে মাস্তানি থাকে।’
মাসরুর আরেফিনের মন্তব্যের জবাবে একই পোস্টে সালাহ উদ্দিন শুভ্র মন্তব্য করেন-
সালাহ উদ্দিন শুভ্রর মন্তব্য: ‘Mashrur Arefin: সুমন রহমান লিখেছেন “করোনায় চাকরিশূন্য কবির কর্পোরেটে হানা দেওয়া'' কামরুজ্জামান কামু করোনায় চাকরি হারান নাই। আপনি একজন কবির চাকরি পাওয়াকে আপনার অনুদান হিসাবে এখানে দেখিয়েছেন। এটা ব্যাড।
আর আমাকে সুমন রহমানের 'হয়ে' চিহ্নিত করাটাও মাস্তানি হইল।’
এই বিতর্ক শুরু হওয়ার একদিন পর সুমন রহমান তার ফেসবুক পেইজে আরেকটি মন্তব্য প্রকাশ করেন:
সুমন রহমানের পোস্ট–১৬. ১০. ২০/ দুপুর ১১টা ৫৪ মিনিট
‘১.
পৃথিবীতে ধনী ও গরিব সাহিত্যিক সবসময়ই ছিল। কর্পোরেট সাহিত্য বলে কিছু নেই। আছে কর্পোরেট প্রিডেটরি আচরণ। পুঁজির মায়াবি আবরণে। সাহিত্য এখানে পুঁজির একটা ডিসকার্সিভ স্পেইসমাত্র।
সাহিত্য ও সাহিত্যিকের যে ময়দানটিতে আমরা দাঁড়িয়ে, তার মধ্যে সহযোগিতা আছে, সহমর্মিতা আছে, ক্লিশেপনা আছে, বিলো দ্য বেল্ট আছে, গোষ্ঠীসংঘাত আছে, নিন্দামন্দ মিথ্যার বেসাতিও আছে। প্রচারণা কিংবা আত্মপ্রচারণা যেমন আছে, তেমনি প্রতারণা কিংবা আত্মপ্রতারণাও কম নাই। এগুলোই একেকটি সময়ের সাহিত্যিক রাজনীতির সমাজতত্ত্ব। এটা একজন নির্ধারণ করে না। সমবায়িকভাবে নির্ধারিত হয়।
বড় লেখক যারা, তারা কখনো এককভাবে এসব রীতিকে পাল্টে দিতে পারেন। সেটি তাদের লেখার জোরে। দলবাজি, টাকা কিংবা ক্ষমতার জোরে নয়।
সাহিত্যের এই ছোট তরীতে বৃহৎ পুঁজি ঢুকে পড়লে কী ঘটে? পুঁজির ধর্মই ক্রমাগত নিজেকে বিস্তৃত করতে থাকা। কখনো কখনো নির্মমভাবে। মার্ক্স যেটাকে বলেছিলেন, প্রিমিটিভ অ্যাকিউমুলেশন। সারপ্লাস ভ্যালু তৈরি করা। সেটা শুধু অর্থনৈতিক ক্যাপিটাল তৈরির মাধ্যমে নয়, সোশ্যাল ও কালচারাল ক্যাপিটাল তৈরির মাধ্যমেও। কারণ ওসব সোশ্যাল ও কালচারাল ক্যাপিটাল একসময় ফাইনানশিয়াল ক্যাপিটালে কনভার্টেড হবে। ফলে মায়াবি পুঁজির দান-দক্ষিণা লোকদেখানো সিএসআর প্রজেক্ট! কিন্তু আড়ালে সে সবকিছু ভেঙেচুরে নিজের রাজ কায়েম করতে চায়। সাহিত্যের বিদ্যমান গোষ্ঠীগুলোকে ভেঙে দেয়, বিবাদগুলোকে পিষে ফেলে, বাঘে-ছাগে একঘাটে পানি খায়। সাহিত্য একপ্রকার সমবায়িক সামন্তদশার মধ্যে ছিল এতদিন, বাংলাদেশে। ফলে, এই বৃহৎ পুঁজির আগমনী তাকে টালমাটাল করে দেবে এতে আশ্চর্যের কিছু নেই।
কায়েমি পুঁজি যখন সমবায়িক সাহিত্যিক লেনদেনগুলোর মূল্য নির্ধারণ করতে শুরু করে, ব্যক্তি সাহিত্যিক তখন একটা অবভিয়াস অফেন্স অনুভব করতে শুরু করেন। মার্কস যাকে বলেছিলেন এলিয়েনেশন। কিংবা পিয়েরেঁ বোর্দো যাকে বলেন, সিম্বলিক ভায়োলেন্স।’
একই দিন রাত রাত ৮টা ২৮ মিনিটে মাসরুর আরেফিন ‘সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, ধর্ম ব্যবসা, এদেশের ‘এলিট’ ও ‘কর্পোরেট’ লেখক এবং ভাষিক খ্যাপামি নিয়ে মাসরুর আরেফিন’ শিরোনামে একটি সাক্ষাৎকার পোস্ট করেন। সেখানে তিনি বলেন:
মাসরুর আরেফিনের পোস্ট–১৬. ১০. ২০/ রাত সাড়ে ৮টা
‘… কাজী আনিস আহমেদকে না পড়েই এলিটিস্ট বলে খারিজ করতে চান, আমাকে কিংবা অনুবাদক ও গল্পকার ফারুক মঈনউদ্দিনকে ব্যাংক এমডি বলে উড়িয়ে দিতে চান, কবি ও নৃ-গবেষক কামাল চৌধুরীকে বড় আমলা বলে বাঁকা হাসি হাসতে চান।...এখানে ‘কর্পোরেট‘ নামের একটা গালি বানানো হয়েছে পুঁজির দৌরাত্ম্যকে বোঝাতে। একদম ক্লিশে একটা গালি। গালিটা আমাকে দেয় আবার ট্রান্সকম গ্রুপের মতো, তাদের প্রতিষ্ঠান ‘প্রথম আলো‘-র মতো বিগ কর্পোরেটে তেল ঢালতে থাকা লোকেরাই। শেয়াল শেয়ালকে বলে তুই শেয়াল। তাতে কোনো লাভ হয় না। সিস্টেম তখন হেসে বলে, ‘তুমি যে আমাকে চিনে আমাকে আমি যা তা-ই বলছ, সেটা জারি রাখো হাঁদারাম‘। পুঁজির সিস্টেম ওমনিপ্রেজেন্ট [সর্বত্র পরিব্যাপ্ত] একটা সিস্টেম, সে উপর-নিচ-বাম-ডান-সামনে-পেছনে সবখানে আছে। আপনি ওটার মাঝখানে ওটার মাখন খেতে খেতে দাঁড়িয়ে ওকে নিয়ে বলবেন তো, সবাই বুঝবে আপনার বেদনা আরও মাখন না পাওয়ার বেদনা।’
পর দিন সুমন রহমান তার মন্তব্যের দ্বিতীয় পর্বটি পোস্ট দেন:
সুমন রহমানের পোস্ট–১৭. ১০. ২০/ দুপুর ১২টা ৪৯ মিনিট
‘২.
সাহিত্যিক ধনী কিংবা গরিব হওয়ার সাথে সাহিত্যের ধনী গরিব হওয়ার সম্পর্ক নাই। রবীন্দ্রনাথ, মাইকেল, সুকুমার রায়, সুধীন্দ্রনাথ এরা প্রত্যেকেই যথেষ্ঠ ধনাঢ্য ছিলেন। উত্তরাধিকারসূত্রে। ব্যক্তিগত উপার্জনের মাধ্যমে হুমায়ুন আহমেদ, পাওলো কোয়েলহো, জে কে রাউলিং ধনবান হয়েছেন। পাবলো নেরুদা, অকটাভিও পাজ, এইমে সেজেয়ার, নিকোলাস গ্যিয়েন, লিওপোল্ড সেংঘর, আহমাদ সেকেতুরে, সৈয়দ শামসুল হক, শশী থারুর এরা যথেষ্ঠ ক্ষমতাবান ছিলেন/আছেন রাজনৈতিক ও সামাজিক অর্থে। এদের সাহিত্যকে কেউ বড়লোকের সাহিত্য বলে না। সাহিত্যের বিচারে, ধনী সুধীন্দ্রনাথ আর গরিব জীবনানন্দকে আমরা একবর্গেই রাখি। যেমন রাখি ধনী অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত আর গরিব বিনয় মজুমদারকে।
"আগস্ট আবছায়া"র লেখক মাসরুর আরেফিন সম্প্রতি কোনো সাক্ষাৎকারে বলেছেন: "যারা এসব বলেন তারা ওরাই যারা সাহিত্যকে সাহিত্যের বাইরের মাপকাঠি দিয়ে মাপতে চান—কাজী আনিস আহমেদকে না পড়েই এলিটিস্ট বলে খারিজ করতে চান, আমাকে কিংবা অনুবাদক ও গল্পকার ফারুক মঈনউদ্দিনকে ব্যাংক এমডি বলে উড়িয়ে দিতে চান, কবি ও নৃ-গবেষক কামাল চৌধুরীকে বড় আমলা বলে বাঁকা হাসি হাসতে চান।"
মাসরুর সম্পর্কে পরে বলছি, বাকি তিনজন সম্পর্কে বলি। কাজী আনিস আহমেদ, ফারুক মঈনউদ্দিন কিংবা কামাল চৌধুরী কখনোই তাঁদের ব্যক্তিগত/সামাজিক/রাজনৈতিক ক্ষমতা সাহিত্যিক প্রতিপত্তি অর্জনের জন্য ব্যবহার করেছেন -- এমনটা শুনি নি। কাজী আনিস আহমেদ ঢাকায় একটা লিটারারি ফেস্টিভ্যালের সাথে যুক্ত আছেন অনেক বছর ধরে। কখনো দেখি নি সেখানে তাঁর নিজের লেখা সাহিত্য নিয়ে কোনো আলোচনা/সেশন হয়েছে। তার The World in My Hands উপন্যাস বেরিয়েছে ২০১৩ সালে। বাংলা অনুবাদ বেরিয়েছে ২০১৭ সালে। তেমন কোনো রিভিউ চোখে পড়ে নি। চাইলে তিনি নিশ্চয়ই ভুরি ভুরি করিয়ে নিতে পারতেন। ২০২০ সালে আমি এই বইয়ের রিভিউ করলাম, কারণ আমার বিচারে গত দশ বছরে বাংলাদেশের লেখকদের লেখা উপন্যাসগুলো মধ্যে এটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ। নানান কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সাহিত্যকর্ম।
ফারুক মঈনউদ্দিন যে বড় ব্যাংকার, সেটি মাসরুর না জানালে মনে হয় বুঝতেই পারতাম না। এমনি অন্তরাল পছন্দ করা একজন নিমগ্ন সাহিত্যিক তিনি। কামাল চৌধুরীও তাই। নিজের সাহিত্য নিয়ে কোথাও তাঁকে কোনো উচ্চকিত আওয়াজ দিতে শুনি নি। এরা প্রত্যেকেই সাহিত্য এবং সাহিত্যের বাইরের মানুষজনকে নানাভাবে সহায়তা করেন, কিন্তু সেই শব্দ কখনোই বাইরে পৌঁছায় না। যারা বিভিন্ন সময়ে তাঁদের কাছ থেকে সহায়তা পেয়েছেন, তাদের বরাতে ব্যক্তিগতভাবে আমি এটুক জেনেছি।
ফলে, মাসরুর আরেফিনকে এই বর্গে কল্পনা করাটা আমার জন্য কষ্টকর। তিনিও বহু মানুষকে সহায়তা দিয়েছেন মনে হয়। কিন্তু সেটি পাবলিকলি প্রচার করতে একেবারেই পিছপা নন। তাঁর বক্তব্য থেকেই জানলাম তিনি একজন কবিকে চাকরি দিয়েছেন, একজন লেখকের বই প্রকল্পে আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা করছেন, একজন অনুষ্ঠান নির্মাতাকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্পন্সর করছেন। কামাল চৌধুরী, ফারুক মঈনউদ্দিন কিংবা কাজী আনিস আহমেদরা এ ধরনের আলাপ পাবলিক পরিসরে কখনই করেন বলে শুনি নি।
একজন লেখক হিসেবে আমি সবচে কষ্ট পেয়েছি মাসরুর আরেফিন এর হাসান আজিজুল হক কাণ্ডে। আমাদের এই শীর্ষস্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠ সাহিত্যিককে নিয়ে তিনি যে কাণ্ডটি ঘটালেন সেটি আমার মত বহু সাহিত্যিক ও পাঠককে বেদনা ও লজ্জা দিয়েছে। হাসান আজিজুল হক এবং অন্যান্যদের টাকা দিয়ে বইয়ের ব্লার্ব লিখাতেই পারেন তিনি। তাতে সমস্যা নাই। কিন্তু হাসান আজিজুল হক যখন তাঁর নামে ছাপা হওয়ার বক্তব্য অস্বীকার করলেন, এবং মাসরুরের বইকে "বিদেশী সাহিত্যের বমন" জাতীয় অভিধা দিলেন, তখন সোশ্যাল মিডিয়ায় মাসরুরের পোষা ভক্তকূল হা.আ.হককে নিয়ে যে ধরনের গুণ্ডাগার্দি করলেন, সেটা অবিশ্বাস্য। আরো অবিশ্বাস্য হল, পরবর্তীতে হাসান আজিজুল হক লিখিত ব্লার্বই দিলেন, মাসরুরের বইতে। অন্তরালে কী ধরনের তৎপরতা ঘটতে থাকলে এই বয়োজ্যেষ্ঠ লেখককে তাঁর বক্তব্য নিয়ে এমন ধকল পোহাতে হয়, সেটা অনুমান করা যায়। তাতে আমরা ভীত হয়েছি। বুঝতে পেরেছি যে, হাসান আজিজুল হকের মত মানুষেরই যদি এই দশা হয়, তবে আমাদের মত সামান্য লেখকদের গরিবি মর্যাদা যে কোনো সময়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে যেতে পারে এই আগ্রাসী পুঁজির তাণ্ডবে।’
সুমন রহমানের দ্বিতীয় পোস্টের কিছুক্ষণ পরেই কথাসাহিত্যিক মাহবুব মোর্শেদ তার ফেইসবুক পেইজে মন্তব্য করেন:
মাহবুব মোর্শেদের পোস্ট–১৭. ১০. ২০/ দুপুর দেড়টা
‘কাউকে চাকরি দিয়ে, স্পন্সর করে, আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে নানা উপলক্ষে সেটা প্রচার করা কোনোভাবেই ভাল ও সভ্য আচরণ নয়। তদুপরি, উপকারপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা ঋণের দায় হিসেবে পাবলিকলি প্রশংসা করে দেবার পর তো আর উপকারী ব্যক্তির আর কিছু বলার থাকতে পারে না।’
একই দিন ব্রাত্য রাইসু পোস্ট দেন:
ব্রাত্য রাইসুর পোস্ট–১৭. ১০. ২০/ বিকাল ৪টা ৪০ মিনিট
‘কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকাশিত সাহিত্য কি প্রকাশযোগ্য নয়?
প্রথম আলো কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের প্রকাশনা সংস্থার নাম প্রথমা?
এখান থেকে কর্পোরেট বিরোধী কার কার বই বাইর হইছে? বা কার কারটা হয় নাই?
এ দেশের বেশিরভাগ সাহিত্যবোদ্ধারা ডাবল স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেন করে।
তারা কী হইলে সাহিত্য হবে কী হইলে হবে না এগুলি ঠিকঠাক করে।
ফকিন্নি প্রতিষ্ঠানের যেমন বই বের করার বা সাহিত্য করার রাইট আছে, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানেরও বই বের করার এবং তা প্রচার করার রাইট আছে।
কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান যদি তাদের নিজস্ব লেখকদের দিয়া বই বের করে, বইয়ের আলোচনা করায় তাতে আপনার কী সমস্যা?
প্রথম আলোর কোলের মধ্যে বইসা কে পুরস্কার পাবে কে পাবে না সে বই বাছাইয়ের কাম কইরা এত বড় কথা চলে না।
সাহিত্য কোনো পবিত্র মাধ্যম নয়। যে কেউ সাহিত্য করতে পারবে।
এমনকি যারা কর্পোরেট, সরকার ও বড়লোকদের বই বের করার বিরোধী তারাও সাহিত্য করতে পারবে।
সাহিত্য কারা কারা করতে পারবে না বলেন?’
একই দিন দ্বিতীয় পোস্টে মাহবুব মোর্শেদ মন্তব্য করেন:
মাহবুব মোর্শেদের পোস্ট–১৭. ১০. ২০/ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা
‘এনারা সবাই কম বেশি ভাল লেখেন। তা সত্ত্বেও সুমন রহমান তার শিক্ষক শাহাদুজ্জামানের কাছ থেকে নানাবিধ শিক্ষা, বৃত্তি ও সুবিধার বিনিময়ে লেখক শাহাদুজ্জামানের অপ্রয়োজনীয় ও অনর্থক যে প্রশংসা করেন সেটা এক প্রকার দুর্নীতি।
তেমনিভাবে কামরুজ্জামান কামু তার ব্যাংকের বস মাসরুর আরেফিনের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে তার লেখার যে অনর্থক প্রশংসা করেন সেটাও দুর্নীতিই।
ব্রাত্য রাইসু যখন কুড়ি বছর পর মেয়র ও মিউল নিয়ে অনুষ্ঠান করেন তার সঙ্গেও প্রাপ্তিযোগ আছে বলেই অনুমান করা যায়।
ফলে, বাংলা সাহিত্য মোটামুটিভাবে লেনদেনের মধ্যেই আবর্তিত হইতেছে। লেনদেন ছাড়া খুব একটা সাহিত্য আশপাশে দেখা যায় না।
হাসান আজিজুল হকের মতো সাহিত্যিকও যারপরনাই লেনদেনের শিকার হয়েছিলেন।’
এখানে উল্লেখ্য, সুমন রহমান ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগের অধ্যাপক। এই ইউনিভার্সিটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং ট্রাস্টি বোর্ডের সহ-সভাপতি কাজী আনিস আহমেদ একজন ঔপন্যাসিক। ঢাকা লিস্ট ফেস্টের পরিচালক তিনি। এছাড়া সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের আওতাধীন প্রাথমিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগে চার বছরের জন্য সিনিয়র রিসার্চ ফেলো হিসাবে বৃত্তি পেয়েছেন সুমন রহমান। সুমন রহমানের শিক্ষক কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামানের বাস যুক্তরাজ্যে। সেখানে ইউনিভার্সিটি অব সাসেক্সে চিকিৎসা নৃবিজ্ঞান ও বৈশ্বিক স্বাস্থ্য বিভাগের অধ্যাপক তিনি। এর আগে জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অধ্যপনা করেছেন গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়, নিউক্যাসেল বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশের ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়েও। তাছাড়া ২০২০ সালে প্রথম আলোর বর্ষসেরা বই পুরস্কারের জুরি কমিটির একজন সদস্য ছিলেন সুমন রহমান। সে বছর শাহাদুজ্জামানের মামলার সাক্ষী ময়না পাখি সৃজনশীল শাখায় প্রথম আলোর বর্ষসেরা বইয়ের পুরস্কার পায়। সুমন রহমানের নিরপরাধ ঘুম বর্ষসেরা বইয়ের পুরস্কার পায় ২০১৯ সালে।
মাসরুর আরেফিন দি সিটি ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। এই ব্যাংকে জানুয়ারিতে ‘সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার ব্র্যান্ড অ্যান্ড কমিউনিকেশন’ হিসেবে যোগ দেন কবি কামরুজ্জামান কামু। একই ব্যাংকে ‘এক্সটারনাল কনসালটেন্ট অব সোশ্যাল মিডিয়া’ হিসেবে কাজ করেন কবি ব্রাত্য রাইসু। তিনি ‘দ’ এবং ‘বহিঃপ্রকাশ’ নামে দুটি প্রকাশনা সংস্থার স্বত্বাধিকারী। ‘দ’ থেকে মাসরুর আরেফিনের প্রথম বই ঈশ্বরদী, মেয়র ও মিউলের গল্প প্রকাশিত হয় ২০০১ সালে। মাহবুব মোর্শেদ দৈনিক সংবাদপত্র ‘দেশ রূপান্তর’-এর উপসম্পাদক। রাজু আলাউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন দীর্ঘদিন।
মাহবুব মোর্শেদের উপরোল্লিখিত পোস্টে ব্রাত্য রাইসু মন্তব্য করেন:
ব্রাত্য রাইসুর মন্তব্য: ‘না মাহবুব, প্রাপ্তিযোগ এর ব্যাপার ছিল না। কিন্তু প্রাপ্তিযোগ নিয়া অনুষ্ঠান করাতেও আমার কোনো সমস্যা নাই। আমি আপনার থেকে একেবারেই ভিন্ন নৈতিকতার লোক।
আমি সাহিত্যে দলবাজি, বন্ধুকৃত্য, প্রাপ্তিযোগ-এর কারণে সাহিত্য সবকিছুকে বৈধ মনে করি।
এমনকি গরিবের জমি বড়লোকরা দখল করবে সাহিত্যের নামে, তাতেও আপত্তি দেখি না। যদি সব লিগ্যাল কাগজপত্রসহ হয়।’
একই পোস্টে মাহবুব মোর্শেদের উদ্দেশে সুমন রহমান মন্তব্য করেন:
সুমন রহমানের মন্তব্য: ‘শাহাদুজ্জামান আমার শিক্ষক ছিলেন। বর্তমানে আমরা সহ-গবেষক। আমি তার বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং তিনি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌথভাবে গবেষণা করি। আপনারা যারা বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে শিক্ষামূলক পেশার সাথে যুক্ত নন, তাদের পক্ষে জিনিসটা বোঝা একটু কঠিন হতে পারে। ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে এরকম কাজের সম্পর্ক খুবই কমন ঘটনা।
শাহাদুজ্জামান খুব ভাল একজন শিক্ষক। অনুপ্রাণিত করতে পারেন। প্রশংসা করতে পারেন। সাহিত্যিক হিসেবেও আমার পছন্দের। কিন্তু তার "অপ্রয়োজনীয়" লেখার প্রশংসা কোথায় করেছি মাহবুব? দৃষ্টান্ত দেয়ার অনুরোধ জানাই।’
একই দিন তৃতীয় পোস্টে মাহবুব মোর্শেদ লেখেন:
মাহবুব মোর্শেদের পোস্ট–১৭. ১০. ২০/ রাত সাড়ে ৮টা
‘চাকরি দিয়ে কেউ যদি কাউরে বসায়ে বেতন দেয় তাহলে সেটাকে একধরনের অনুদান বলে ধরে নেয়া যায়। কিন্তু চাকরি দিয়ে কাজ করায়ে নিলে কেমনে সেটা আর অনুদান থাকে?’
মাহবুব মোর্শেদের পোস্টের পর কামরুজ্জামান কামু তার ফেসবুক পোস্টে মন্তব্য করেন:
কামরুজ্জামান কামুর পোস্ট–১.৭ ১০. ২০/ রাত সাড়ে ১১টা
‘মাহবুব মোর্শেদ ছেলেটা বড়ো হীনমন্য ছেলে। একবার নয় বার বার, যুগ যুগ ধরে সে আমাকে ছোট করার চেষ্টা করে আসতেছে। আমি তাকে স্নেহের জায়গা থেকে বরাবর ছাড় দিয়ে আসছি। আমি মাসুদ খানের লেখা পছন্দ করি কেন, রাইসুর লেখা আমার ভালো লাগে কেন, এখন মাসরুরের লেখা আমার ভালো লাগে কেন, এইসব নিয়ে তার সমস্যা! সে নিজের প্রচার চায়। ভালো কথা, তোমার প্রশংসা তো আমি করছি। এখন তোমার চাহিদামত আমাকে চলতে হবে? বাংলা সাহিত্যে কি তুমি একলাই থাকতে চাও? আর কাউরে বিকশিত হইতে দিবা না? তোমার এতো সমস্যা কেন দুনিয়ায়? বড়ো হও। তোমার পত্রিকায় চাকরি হইতে দেও নাই ঠিকাছে। আমারে কোথাও চাকরি করে খাইতে দিবা না।’
এরপর ১৭ অক্টোবর রাত ১১টা ২২ মিনিটে সুমন রহমান একটি পোস্ট দিয়ে সেখানে এই তর্কের বিভিন্ন মন্তব্যগুলো পুনরায় তুলে ধরেন। শেষে তিনি মাসরুরকে উদ্দেশ্য করে এই মন্তব্য করেন:
সুমন রহমানের পোস্ট–১৭. ১০. ২০/ রাত সাড়ে ১১টা
‘… আপনি পরিষ্কার করে জানালেন, এই রাজু আলাউদ্দিন যাকে "কর্পোরেটের ঘেঁটুপুত্র" কিংবা "পুরুষবেশ্যা" বলছেন, সেটা আমি। কেন? কারণ আমি কাজী আনিস আহমেদের বই রিভিউ করেছি, এবং শাহাদুজ্জামানের লেখার পক্ষে দাঁড়িয়েছি। আপনার প্রতি আমার কয়েকটা জিজ্ঞাসা, মাসরুর:
১. কাজী আনিস কিংবা শাহাদুজ্জামান বাংলাদেশের বা বাংলা সাহিত্যের কী এমন ক্ষতি করে ফেললেন যে, তাদের সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করলে কাউকে "ঘেঁটুপুত্র" কিংবা "পুরুষবেশ্যা" গালাগাল শুনতে হবে? রাজুর এই বক্তব্যের দায় আপনি কেন নিতে গেলেন?
২. আমার লেখায় শিষ্টাচারের কোনো অভাব ছিল কিনা, আমি কোনো ব্যক্তির নামোল্লেখ করেছিলাম কি না, যার কারণে রাজু আলাউদ্দিনের এই নোংরা বক্তব্যকে আপনার এনডোর্স করতে হল?
৩. রাজুর এই বক্তব্য যদি আপনার কাছে নোংরা কিংবা আপত্তিকর মনে হয়, তবে সেটি থেকে আপনার সমর্থন প্রকাশ্যে প্রত্যাহার করে নেবেন কিনা?
৪. এরকম নোংরা বক্তব্য দেয়ার জন্য রাজু আলাউদ্দিনকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে বলবেন কিনা?’
সুমন রহমানের পোস্টে মাহবুব মোর্শেদ মন্তব্য করেন:
মাহবুব মোর্শেদের মন্তব্য: ‘আপনারা যারা একই রকম তারা এক থাকলেই খুশী আমরা। আমার মনে হয়, রাজু আলাউদ্দিন মাফ না চাইলেও মিলে যাওয়া উচিত। রাজু ভাই বয়সে সবার চেয়ে বড়। একটু বকা তো দিতেই পারে। তবে রাজু ভাইয়ের সুক্ষ্ম ব্যাপারগুলো চলে যাচ্ছে। কেমন র হয়ে যাচ্ছে। তার ভাষা বিস্ময়কর রকমে আপত্তিকর।’
পরদিন ব্রাত্য রাইসু পোস্ট দেন:
ব্রাত্য রাইসুর পোস্ট–১৮. ১০. ২০/ সকাল ১০টা
‘কর্পোরেট হিপোক্রিসি ~
এরা কর্পোরেট হাউজে চাকরি করে।
কপোর্রেট বসকে বই উৎসর্গ করে।
কপোর্রেট মালিকের বই আলোচনার নামে বইয়ের প্রশংসা করে।
কর্পোরেটের দেওয়া সাহিত্য পুরস্কার গ্রহণ করে।
কর্পোরেট কাকে সাহিত্য পুরস্কার দিবে সে বই বাইছা দেওয়ার কাজটি করে।
তারপরে বলে, কপোর্রেট সাহিত্য চলবে না।
বলে, কর্পোরেট বসদের বই আলোচনা করা যাবে না।
বলে, বন্ধুদেরকে কর্পোরেট অফিসে চাকরি দিলে সে বন্ধুদের কোনো প্রশংসা গ্রহণ করা যাবে না। করলে তা দুর্বৃত্তায়ন হবে। ইত্যাদি।
এই ইত্যাদিই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।
গণতন্ত্র হিপোক্রিসিকে জায়গা দেয়।
তাই আমি গণতন্ত্র ভালোবাসি।
হিপোক্রিসিকে তো অবশ্যই।’
একই দিন মাহবুব মোর্শেদ ব্রাত্য রাইসুকে উদ্দেশ্য করে একটি পোস্ট দেন:
মাহবুব মোর্শেদের পোস্ট–১৮. ১০. ২০/ দুপুর সাড়ে ১২টা
‘আমি কি কর্পোরেট বিরোধিতার কথা বলছি? প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার কথা বলছি? অবস্থাপন্ন সাহিত্যিকদের শ্রেনীগত অবস্থানের বিরুদ্ধে বলছি? বিপ্লব করতে চাচ্ছি? গরিব মানুষের সাহিত্য তৈরির কথা বলছি?
সাম্প্রতিক কিছু বিতর্ক কেন্দ্র করে ব্রাত্য রাইসু এমন অনেক প্রশ্ন তুলছেন। তার প্রশ্নগুলোর মধ্যে প্রশ্নের চেয়ে কৌশল বেশি। প্রথমে তিনি সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন, আমি কর্পোরেট বিরোধিতা করছি। পরে দেখাচ্ছেন, আমি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে কাজ করি। তারমানে আমার কর্পোরেট বিরোধিতা আসলে স্ববিরোধী।
তেমনিভাবে তিনি সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন, আমি প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা করছি। পরে দেখাচ্ছেন আমি নানা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত। ফলে আমার অবস্থানটা গুরুত্ব বহন করে না।
একইভাবে, অবস্থাপন্ন অনেক সাহিত্যিক বন্ধু আমারও আছে। ফলে অবস্থাপন্নদের বিরোধিতা আসলে আমার একটা ভান।
বিপ্লব করতে চাইছি? বিপ্লব করার জায়গা তো সাহিত্য না। গরিব মানুষের সাহিত্য রচনা তো পুরনো মার্কসবাদী ব্যাপার। বাকী থাকে কী? ব্যক্তিগত অসূয়া? ব্রাত্য রাইসু ভোট আয়োজন করছেন। কর্পোরেট ক্ষমতা বাদ দিয়ে বলেন কে বড় ঔপন্যাসিক।
এগুলো সবই তার চালাকি। তিনি যেখানে দেখাতে চাইছেন সমস্যা আসলে সেখানে না। তবু তিনি ওই জায়গাগুলোতে আঙ্গুল তুলছেন। কারণ সমস্যাগুলো থেকে তিনি অন্যদিকে মনোযোগ সরাতে চান।
তর্ক যেহেতু মাসরুর আরেফিনকে নিয়ে হচ্ছে। তাকে দিয়েই আলোচনা শুরু করি। আমার পরিচিত একজন সাহিত্যিক একটা বড় ব্যাংকের এমডি এটা ব্যক্তিগতভাবে গর্বের বিষয়। তদুপরি তার সঙ্গে আমার আলাপ আছে। তিনি অল্প যে কয়জন লোককে তার পোস্টে ট্যাগ করেন তার মধ্যে আমার গর্বিত উপস্থিতি আছে। তিনি আমার ঘনিষ্ট ব্যক্তিদের চাকরি দেন। বিজ্ঞাপন দেন। স্পন্সর করেন। সাহিত্যিক প্রতিষ্ঠানে অনুদান দেন। এগুলো সবই আমার জন্য খুশীর খবর। বাংলাদেশে কত ব্যাংক। কই তেমন কোনো ব্যাংক তো এমন সাহিত্যবান্ধব নয়। ফলে, মাসরুর আরেফিনকে আলাদা করে ধন্যবাদ দিতে হবে। তার অবস্থান, অবস্থা, অবস্থাপন্নতা নিয়ে আপত্তির কিছু নাই। শ্রেণী বিপ্লবেরও কিছু নেই। বলতে গেলে, এত কিছুর পরও কোনো দরকারে আমি মাসরুর আরেফিনের কাছে যেতেই পছন্দ করবো। যেহেতু তিনি আমার পরিচিত এবং তার ফোন নাম্বার আমার কাছে আছে। পাশাপাশি, অবস্থাপন্ন ও উচ্চপদস্থ বলে তাকে সমীহও করবো।
কিন্তু তার উপকার নিয়ে আমি কখনো সামাজিক পরিমণ্ডলে তাকে এমনভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করবো না যাতে তাকে ব্রাত্য রাইসু বা কামরুজ্জামান কামুর চেয়ে বড় কবি মনে হয়। কেননা তার অর্থনৈতিক অবস্থান সহসা সাহিত্যিক অবস্থানে কনভার্ট হবে না। সুবিধাজনক আর্থিক অবস্থানের কারণে তিনি সুবিধাজনক সাহিত্যিক অবস্থান পাবেন না। তিনি যাতে সেটা না পান সেটা নিশ্চিত করাই সাহিত্য সমাজের কাজ। এই কাজটা না করতে পারলে এরশাদ কত আগে শামসুর রাহমান ও আল মাহমুদের চাইতে বড় কবি হয়ে যেতেন।
কিন্তু, সমাজের বিপদগ্রস্ত লোকদের জন্য কাজটা পারা যায় না। ফলে, ক্ষমতাবানরা কিছু বাড়তি সুযোগ পেয়েই যান। কিন্তু সেটারও রাশ টানা উচিত। যে কারণে আমার এই সমালোচনামূলক অবস্থান। এটুকু বলা যে, আপনারা যা করছেন, এটা আমরা বুঝি। দেখছি। ওকে করতে থাকেন।
সাহিত্যে নানা পলিটিকসের জনক হওয়া সত্ত্বেও সাহিত্যের রাজনীতির শিকার হিসেবে আমি সুব্রত অগাস্টিন গোমেজের কথা বলি। উনি নানা কারণে আমার অপছন্দের ব্যক্তি। আমার সাথে যোগাযোগ বলতে কিছুই নেই। কিন্তু তার অনেক কবিতা আমার ভাল লাগে। একটা উপন্যাস ও গল্পের বই বেরিয়েছে। সেগুলো অসাধারণ। সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ কোনো পুরস্কার পান না। তিনি দেশে এলে কোনো অনুষ্ঠান হয় না। তার বইয়ের ওপর তেমন কেউ লেখে না। আর এটা যেন একটা নিয়মে পরিণত হয়েছে। অথচ তার বন্ধুরাই পুরস্কার দেন। অনুষ্ঠান করেন। আলোচনা তোলেন। কিন্তু অনেক কিছু হয় সুব্রতকে বাদ দিয়ে। কেননা, সুব্রতর অতো টাকা নাই। সুব্রতর প্রতিপত্তি নাই। এখন যার টাকা আছে তাকে আপনি যখন পুরস্কার দিতে থাকবেন, তাকে নিয়ে অনুষ্ঠান করতে থাকবেন, তার কবিতা গুচ্ছ গুচ্ছ আকারে ছাপতে থাকবেন, খোলে আম তার নানা প্রশংসা করতে থাকবেন তখন আসলে আপনি সাহিত্যের না টাকার কদর করছেন। সুব্রত আপনার বন্ধু। তার জন্য আপনি কিছুই করছেন না। কেন করছেন না? একবার ভাবেন। তাহলে বুঝতে পারবেন মাসরুরের জন্য কেন এত করছেন। মিনিটে মিনিটে স্টেটাস দিচ্ছেন। দলবল নামিয়ে দিয়েছেন। আপত্তিকর স্টেটাস নিয়ে মুখ বন্ধ রেখেছেন।
এ কাজ যে করছে তার জন্য অবমাননার। আবার যার জন্য করা হচ্ছে তার জন্যও অবমাননার।
আগের কালে নানা কাহিনী আমরা দেখতাম। সাহিত্যিকই নন এমন ব্যক্তিরা মদ খাইয়ে, টাকা বিলিয়ে সাহিত্যিক হিসেবে নাম কামাতেন। সমাজের নতুন অঙ্গনে প্রতিপত্তি তৈরি করতেন। মাসরুরকে কেন সে পথে যেতে হবে? তিনি তো ২০ বছর আগে থেকে আমাদের কাছে লেখক।
মাসরুর আরেফিন ভাল লেখেন। তিনি ভাল কবি। ঔপন্যাসিক হিসেবেও ভাল। তিনি ব্রাত্য রাইসুর সমপর্যায়ের কবি না হলেও মিউলের কারণে আলোচনায় থাকবেন। কবি হিসেবে জাফর আহমদ রাশেদ যে আলোচনায় থাকেন তেমনটা তারও প্রাপ্য। আবার ঔপন্যাসিক হিসাবেও তিনি ভাল। ঔপন্যাসিক হিসেবে তার প্রাপ্য স্বীকৃতির লেভেলটা আমার মতে সাগুফতা শারমিনের ওপরে থাকা উচিত। কিন্তু প্রথম আলো, অন্য মিডিয়া ব্রাত্য রাইসু, কামুর প্রচার দেখে মনে হয় দেশের কবিতায় রিলকে, উপন্যাসে তলস্তয়ের আবির্ভাব ঘটেছে। এটা মাসরুরের জন্য ভয়াবহ আত্মপ্রতারণা। কেননা, সাহিত্যগুনে এই হাইপ তৈরি হচ্ছে না। এটা বিজ্ঞাপনী ব্যাপার। ব্রাত্য রাইসু বলবেন, বিজ্ঞাপন তো নিষিদ্ধ নয়। বই ও লেখা তার পণ্য। তিনি বিজ্ঞাপন দিয়ে সেটাকে বড় করে তুলবেন। এতে আপত্তির কী আছে। বিজ্ঞাপন দিতে খরচা আছে। সেটাই তিনি করছেন।
তিনি করুন। এখন কেউ যদি মনে করে এটা ঠিক হচ্ছে না, জিনিশের মান অতো ওপরে নয়, সেটা বলার অধিকারও তার থাকবে। কিন্তু সেটা বলায় সুমন রহমানকে যেভাবে অপদস্ত করা হলো সেটা মাস্তানি। তারমানে অর্থ, প্রতিপত্তি ক্রমান্বয়ে পেশীশক্তি, ক্ষমতার অপব্যবহার ইত্যাদির দিকে যাচ্ছে। হাসান আজিজুল হক প্রসঙ্গে এমন অভিযোগ আমরা শুনেছিলাম।
ফলে, ব্রাত্য রাইসু তত্ত্ব কপচানোর আড়ালে যা করছেন তা আসলে এক ধরনের মাস্তানির প্রতি উস্কানি। এগুলো শেষ পর্যন্ত বড় বিপর্যয় ডেকে আনে। কেউ উপকার নেয়, কেউ উপকার করে। প্রতিদান দেয়। কিন্তু বিনিময় প্রথা তো আধুনিক যুগেই কত উন্নত হয়ে গিয়েছিল। ব্যক্তিগত উপকার প্রাপ্তিকে একেবারে সাহিত্যের নৈতিকতা বা অনৈতিকতা হিসেবে প্রতিপন্ন করার কোনো মানে আছে?
যেটা দেখতে পেলাম, তাতে মনে হচ্ছে, একটা ছোটখাট মাস্তান দলও গঠিত হয়েছে। আমার প্রতিবাদ আসলে এই ক্ষমতা ও পেশীশক্তির বিপক্ষে। মাসরুর আরেফিনকে ব্যবহার করে সাহিত্যে যে অনৈতিক চক্র গড়ে তোলার প্রয়াস ওনারা পাচ্ছেন তার বিপক্ষে ক্ষুদ্র প্রতিবাদ ছাড়া এ কিছু নয়।’
মাহবুব মোর্শেদের এই পোস্টে ব্রাত্য রাইসু মন্তব্য করেন:
ব্রাত্য রাইসুর মন্তব্য: ‘আমি সাহিত্যিক কৌশল, মাস্তানি, দলবাজি ও বন্ধুকৃত্য করতে খুবই রাজি আছি। এগুলি মাহবুব নিজেও করেন, তার বন্ধুরাও করেন।
এই যে Dilshana Parul বললেন, "কন্ঠ লাগলে আওয়াজ দিয়েন!" এগুলি কী? প্রচ্ছন্ন নয়, প্রত্যক্ষ মাস্তানি। প্রলেতারিয়েতের দাবি আদায়ের আওয়াজের মতোই মনে হবে, কিন্তু মাস্তানি। তবে আমি এর বিরুদ্ধে না।
আমার এই সাহিত্যিক জিনিসগুলি মাহবুবের মধ্যেও আছে। সাথে আছে না জাইনাই টপ কইরা সত্য বলার মতো আওয়াজ দেওয়া। পরে মিথ্যা হিসাবে প্রমাণ দিলে স্বীকার না কইরা চুপ মাইরা যাওয়া। এইটা অবশ্য ওনার দুর্বলতাই। মিথ্যা বলা না, চুপ মাইরা যাওয়াটা।
আমি নিজে টুল হিসাবে মিথ্যা ব্যবহারের বিপক্ষে না। যেহেতু মিথ্যাকে পাকড়াও করা যায়। মিথ্যা প্রমাণিত হইলে সত্য বাইর হইয়া আসে। কিন্তু মিথ্যা বলাকে পাপের জায়গায় দেখার যে ভঙ্গি এইটা একজন সমালোচককে যতটা মুমীন হিসাবে দেখায়, ততটা সমালোচক হিসাবে দেখায় না।
২.
মাসরুর আরেফিনের সাহিত্যিক প্রতিভা মাহবুবের চাইতে বেশি এই রকম যদি আমি প্রচার করি সেইটা যেমন আমার মাসরুরের প্রতি বন্ধুকৃত্য হবে, তেমনি আমার তা মূল্যায়নও। আমারে প্রধান বিচারপতির আসন না দিয়া একজন সমালোচকের জায়গায় রাইখা সাহিত্যগত ভাবেই তার বিচার করতে হবে। এইটাই সাহিত্যিক ভদ্রতা।
এমনকি আমি যদি নিজের সাহিত্য লইয়া বড় বড় কথা বলি তার বিচারও সাহিত্যিক তুলনা দিয়াই সারতে হবে।
অন্য যে কোনো সন্দেহ, রিপোর্ট, অভিমান, হায়হুতাশ, কান্দাকাটির কোনো জায়গা নাই সাহিত্যে। সেসবের আলাদা সাহিত্য মূল্য থাকতে পারে, কিন্তু সমালোচনা মূল্য থাকবে না।
৩.
সততা ভালো, সততার চাইতে সাহিত্যে জোর বেশি তুলনার। মূলত সাহিত্য সমাজ চলেই তুলনার রাজনীতি দিয়া। কে কার চাইতে বড় আর ছোট এই নির্ধারণই সাহিত্য।
আপনারা জানেন, মাসরুর আরেফিনকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক বা কবি আমি এখনও বলি নাই, তবে রবীন্দ্রনাথ যে মাঝারি কবি আমি তা বলছি।
রবীন্দ্রনাথকে মাঝারি বলাটা মাসরুরকে বড় করার কৌশল না। রবীন্দ্রনাথরে মাঝারি দেখানোই। তেমনি মাসরুরের 'ঈশ্বরদী' কবিতাকে যখন মহাকাব্য বলতেছি তা যে মহাকাব্য না সেইটা দেখানোর দায়িত্ব যিনি আপত্তি করবেন তার।
৪.
কৌশল হিসাবে আমি কিছু করি না, এইসব কিছু রাইসু ভাইই করে--এইটাও একটা কৌশল; মাহবুবের যে সেইটা আছে তাই আমি মাহবুব মোর্শেদকে বেশি পছন্দ করি।
তিনি টাফ, তিনি আমাদের মধ্যে বিদ্যমান আইটেমগুলিরেই সমস্যা আকারে দেখাইতে পারেন, তাই সবাই তা বিশ্বাসযোগ্য মনে করে। এইটা একটা গুণ। উকিলদের জন্যে ভালো। মাহবুব যদি তার বোকা পাঠকদের বাদ দিয়া লেখকদেরকে তার পাঠক হিসাবে চান তবে চাইলে এই পন্থা বাদ দিয়া সাহিত্যের খোলা ময়দানে তিনি যোগ দিতে পারেন।
৫.
আমি মাহবুব মোর্শেদকে গুরুত্বপূর্ণ ঔপন্যাসিক মনে করি। কিন্তু তিনি বড় বেশি পরিপার্শ্ব নিয়া ভাবেন। তার উচিত শুধু নিজের উপন্যাসগুলি লেখা। এবং লিখতে গিয়া যাদের জন্যে লিখতেছেন তাদের জন্যে না লেখা। শুধু নিজের জন্যে লেখা।’
আলমগীর নিষাদ: কবি ও সাংবাদিক
অমর একুশে বইমেলায় ‘সব্যসাচী’ স্টলে সংঘটিত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে একাডেমির পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. মোহাম্মদ হারুন রশিদকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আগামী তিন দিনের মধ্যে কমিটিকে এ বিষয়ে একাডেমির মহাপরিচালক বরাবর লিখিত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
বাংলা একাডেমি মঙ্গলবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
এতে বলা হয়, ‘বাংলা একাডেমি আয়োজিত চলমান অমর একুশে বইমেলা-২০২৫-এর দশম দিনে (১০ ফেব্রুয়ারি) সোমবার সন্ধ্যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ১২৮ নম্বর সব্যসাচী স্টলে সংঘটিত অনভিপ্রেত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ৭ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
বাংলা একাডেমি প্রেসের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ খোরশেদ আলমকে সদস্য সচিব করা কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. রবিউল ইসলাম, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ খালিদ হোসেন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ রোমেল, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির প্রতিনিধি মো. আবুল বাশার ফিরোজ শেখ এবং শাহবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ খালিদ মনসুর।
অমর একুশে বইমেলার একটি বুক স্টলে বাগবিতণ্ডা ও হট্টগোলের ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এ ধরনের বিশৃঙ্খল আচরণ নাগরিকের অধিকার এবং দেশের আইন উভয়ের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করে।’
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘একুশে বইমেলা হলো দেশের লেখক ও পাঠকদের প্রাণের মেলা। এটি বাংলাদেশের সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, চিন্তক, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সকল শ্রেণি, পেশা ও বয়সের মানুষের মিলনস্থল। এই মেলায় এই ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা শুধু বাংলাদেশের উন্মুক্ত সাংস্কৃতিক চর্চাকে ক্ষুণ্ণ করে না, বরং ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনের শহিদদের মর্যাদার প্রতি অবমাননা প্রদর্শন করে।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার পুলিশ এবং বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষকে ঘটনাটি তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মেলায় নিরাপত্তা জোরদার করতে এবং এই তাৎপর্যপূর্ণ স্থানে যেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে পুলিশকে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘অন্তর্বর্তী সরকার সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে দেশে যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। সরকার পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ঘটনাটি তদন্ত করে দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছে।’
আরও পড়ুন:দৈনন্দিন ব্যবহৃত অত্যাবশ্যকীয় তিন হাজার ইংরেজি শব্দ ও উচ্চারণ নিয়ে ‘অক্সফোর্ড ফ্লুয়েন্সি এসেনশিয়ালস ৩০০০’ (Oxford Fluency Essentials 3000) শিরোনামে বই প্রকাশ করেছেন ফ্লুয়েন্ট স্পিকিং শেখানোর প্রতিষ্ঠান এলটিডেজের প্রতিষ্ঠাতা শাহরিয়ার ইমন।
সম্প্রতি প্রকাশিত বইটি নিয়ে লেখক জানান, এতে শব্দগুলো এমনভাবে বাছাই করা হয়েছে, যা মূলত ইংরেজি ভাষা ব্যবহারকারী ও শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয়।
তার ভাষ্য, বইটির মূল উদ্দেশ্য ইংরেজি ভাষা ব্যবহারে শিক্ষার্থীদের সাবলীলতা বাড়ানো। এখানে প্রতিটি শব্দ সংক্ষেপে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের দ্রুত বুঝতে সাহায্য করে। একই সঙ্গে প্রতিটি শব্দের ব্যবহার উদাহরণসহ উপস্থাপন করা হয়েছে, যাতে শিক্ষার্থীরা বাস্তব পরিস্থিতিতে শব্দগুলোর প্রয়োগ করতে পারে।
লেখকের মতে, ‘অক্সফোর্ড ফ্লুয়েন্সি এসেনশিয়ালস ৩০০০’ বইটি শুধু শিক্ষার্থীদের জন্যই নয়, বরং যারা তাদের ইংরেজি শব্দভান্ডারকে সমৃদ্ধ করতে চান, তাদের জন্যও এটি মূল্যবান সম্পদ। বইটির সহজ ভাষা ও স্পষ্ট উপস্থাপনা এটিকে সব শ্রেণির পাঠকের জন্য উপযোগী করে তুলেছে।
শাহরিয়ার ইমন মনে করেন, বইটি শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ভাষায় আরও আত্মবিশ্বাসী হতে সাহায্য করবে এবং তাদের ভাষার দক্ষতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
লেখক জানান, বেইসিক ও ইন্টারমিডিয়েট শব্দ সংবলিত বইতে প্রতিটি শব্দের আইপিএ উচ্চারণ রয়েছে। এতে ৯ হাজার বাক্যের উদাহরণ দেওয়া হয়েছে, যা ইংরেজি ব্যাকরণ বুঝতেও সহায়ক হবে। এ ছাড়া ৫০টি করে শব্দ নিয়ে মোট ৬০ লেসনে ভাগ করা হয়েছে বইটি, যাতে এটি পড়তে গেলে একঘেয়েমি না আসে।
বর্তমানে বইটির পিডিএফ পাওয়া যাচ্ছে ২৯৯ টাকায়। হার্ডকপি পাওয়া যাবে ৭৯৯ টাকায়।
অমর একুশে বইমেলায় ৭০৮টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলা একাডেমি।
প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়, গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৬৪২টি। সে হিসাবে গত বছরের তুলনায় অংশগ্রহণ বেড়েছে ৬৬টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান।
অমর একুশে বইমেলার পরিচালনা কমিটির সদস্য-সচিব সেলিম রেজা এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এতে উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম।
এতে জানানো হয়, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) বিকেল তিনটায় বইমেলা উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এবারের বইমেলার মূল প্রতিপাদ্য ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান: নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ’।
লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, এবারের বইমেলায় মোট প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ৭০৮টি। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ৯৯টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৬০৯টি। মোট ইউনিট ১ হাজার ৮৪টি।
এবার মোট প্যাভিলিয়নের সংখ্যা ৩৭টি, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে একটি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩৬টি। গত বছর প্যাভিলিয়নের সংখ্যা ছিল ৩৭টি।
লিটল ম্যাগাজিন চত্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চের কাছাকাছি গাছতলায়। সেখানে প্রায় ১৩০টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। শিশুচত্বরে মোট প্রতিষ্ঠান ৭৪টি এবং ইউনিট ১২০টি।
এবার বইমেলার বিন্যাস গতবারের মতো অক্ষুণ্ন রাখা হয়েছে। তবে কিছু আঙ্গিকগত পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিশেষ করে মেট্রোরেল স্টেশনের অবস্থানগত কারণে গতবারের মেলার বাহির-পথ এবার একটু সরিয়ে মন্দির-গেটের কাছাকাছি স্থানান্তর করা হয়েছে।
এ ছাড়া টিএসসি, দোয়েল চত্বর, এমআরটি বেসিং প্লান্ট এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন অংশে মোট চারটি প্রবেশ ও বাহির-পথ থাকবে।
খাবারের স্টলগুলো ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনের সীমানা-ঘেঁষে বিন্যস্ত করা হয়েছে। খাবারের স্টলগুলোকে এবার বিশেষভাবে সুবিন্যস্ত করা হয়েছে। নামাজের স্থান, ওয়াশরুমসহ অন্যান্য পরিষেবা অব্যাহত থাকবে।
শিশুচত্বর মন্দির-গেটে প্রবেশের ঠিক ডান দিকে বড় পরিসরে রাখা হয়েছে, যেন শিশুরা অবাধে বিচরণ করতে পারে এবং তাদের কাঙ্ক্ষিত বই সহজে সংগ্রহ করতে পারে।
বইমেলায় বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে।
প্রতিদিন বিকেল চারটায় বইমেলার মূল মঞ্চে সেমিনার এবং সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
আরও পড়ুন:আগামী পহেলা ফেব্রুয়ারি শুরু হতে যাচ্ছে অমর একুশে বইমেলা-২০২৫।
ভাষাশহীদ, ভাষাসংগ্রামী, মুক্তিযুদ্ধ, গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ, আহত ও অংশগ্রহণকারী সবার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে এবারের বইমেলার মূল প্রতিপাদ্য ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান: নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ’।
বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে মেলা উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম ও সচিব ড. মো. সেলিম রেজা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘পহেলা ফেব্রুয়ারি শনিবার বিকেল তিন ঘটিকায় বইমেলা উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। জ্ঞানভিত্তিক, মানবিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে বই এবং বইমেলা সহায়ক। আমরা আশা করি সকল সম্ভাবনায় আলোকিত হবে এবারের মেলা; আমাদের প্রাণের বইমেলা।’
তিনি বলেন, ‘এবার বইমেলার বিন্যাস গতবারের মতো অক্ষুণ্ন রাখা হয়েছে, তবে কিছু আঙ্গিকগত পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিশেষ করে মেট্রোরেল স্টেশনের অবস্থানগত কারণে গতবারের মেলার বাহির পথ এবার একটু সরিয়ে মন্দির-গেটের কাছাকাছি স্থানান্তর করা হয়েছে।
‘এ ছাড়া টিএসসি, দোয়েল চত্বর, এমআরটি বেসিং প্লান্ট এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন অংশে মোট ৪টি প্রবেশ ও বাহির-পথ থাকবে।’
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক বলেন, ‘খাবারের স্টলগুলো ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনের সীমানা-ঘেঁষে বিন্যস্ত করা হয়েছে। উল্লেখ্য খাবারের স্টলগুলোকে এবার বিশেষভাবে সুবিন্যস্ত করা হয়েছে। নামাজের স্থান, ওয়াশরুমসহ অন্যান্য পরিষেবা অব্যাহত থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, “শিশুচত্বর মন্দির-গেটে প্রবেশের ঠিক ডান দিকে বড় পরিসরে রাখা হয়েছে, যেন শিশুরা অবাধে বিচরণ করতে পারে এবং তাদের কাঙ্ক্ষিত বই সহজে সংগ্রহ করতে পারে। বইমেলায় বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে। প্রতিদিন বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে সেমিনার এবং সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
“বাংলা একাডেমির তিনটি প্যাভিলিয়ন এবং শিশু-কিশোর উপযোগী প্রকাশনার বিপণনের জন্য একটি স্টল থাকবে। ৮ ফেব্রুয়ারি ও ১৫ ফেব্রুয়ারি ব্যতীত প্রতি শুক্র ও শনিবার মেলায় বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ‘শিশুপ্রহর’ থাকবে। অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে শিশু-কিশোর চিত্রাংকন, আবৃত্তি এবং সংগীত প্রতিযোগিতার আয়োজন থাকছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে।”
এবারের অমর একুশে বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ২০২৪ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচারে সেরা বইয়ের জন্য প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ এবং ২০২৪ সালের বইমেলায় প্রকাশিত বইয়ের মধ্য থেকে শৈল্পিক বিচারে সেরা বই প্রকাশের জন্য তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেয়া হবে।
২০২৪ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগত মান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ এবং এ বছরের মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে।
এবারের বইমেলায় বাংলা একাডেমি প্রকাশ করছে নতুন ৪৩টি ও পুনর্মুদ্রিত ৪১টি বই।
বইমেলার সময়সূচি
পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। রাত সাড়ে ৮টার পর নতুন করে কেউ মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবেন না।
ছুটির দিন বইমেলা চলবে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত (৮ ফেব্রুয়ারি ও ১৫ ফেব্রুয়ারি ব্যতীত)। ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মেলা শুরু হবে সকাল ৮টা এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
পলিথিনমুক্ত হবে এবারের বইমেলা
এবারের অমর একুশে বইমেলার আয়োজনকে জিরো ওয়েস্ট বইমেলায় পরিণত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে আয়োজনস্থল ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় স্থাপিতব্য সব স্টল, দোকান, মঞ্চ, ব্যানার, লিফলেট, প্রচারপত্র, ফাস্ট ফুড, কফি শপ, খাবার দোকান ইত্যাদি প্রস্তুতে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার শতভাগ পরিহার করে পুনঃব্যবহারযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব উপকরণ, যেমন পাট, কাপড়, কাগজ ইত্যাদির ব্যবহার করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করা হয়েছে।
স্টল সংক্রান্ত তথ্য
এবারের বইমেলায় মোট প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ৭০৮টি, যার মধ্যে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ১ হাজার ৯১৯টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৬০৯টি। মোট ইউনিট ১ হাজার ৮৪টি (গত বছর প্রতিষ্ঠান ছিল ৬৪২টি এবং ইউনিট ছিল ৯৪৬টি)।
এবার মোট প্যাভিলিয়নের সংখ্যা ৩৭টি, যার মধ্যে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ১টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩৬টি (গত বছর প্যাভিলিয়নের সংখ্যা ছিল ৩৭টি)।
লিটল ম্যাগাজিন চত্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চের কাছাকাছি গাছতলায়। সেখানে প্রায় ১৩০টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
শিশুচত্বরে মোট প্রতিষ্ঠান ৭৪টি এবং ইউনিট ১২০টি (গত বছর প্রতিষ্ঠান ছিল ৬৮টি এবং ইউনিট ১০৯টি)।
আরও পড়ুন:পূর্বঘোষিত তালিকা থেকে তিনজনের নাম বাদ দিয়ে পুরস্কারপ্রাপ্তদের নতুন তালিকা প্রকাশ করেছে বাংলা একাডেমি।
প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার রাতে এ তথ্য জানানো হয়।
গত ২৩ জানুয়ারি ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২৪’ ঘোষণা করা হয়। এরপর ২৫ জানুয়ারি তালিকাটি স্থগিত করা হয়।
সে সময় বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ‘তালিকায় নাম থাকা কারও কারও বিষয়ে কিছু অভিযোগ আসায় সেটি স্থগিত করা হলো।’
বাংলা একাডেমি ওই দিন তিন কার্যদিবসের মধ্যে পুনর্বিবেচনার পর পুরস্কারের তালিকাটি পুনঃপ্রকাশ করার সিদ্ধান্তের কথা জানায়।’
আগের তালিকা থেকে বাদ পড়া তিনজন হলেন সেলিম মোরশেদ (কথাসাহিত্য), ফারুক নওয়াজ (শিশুসাহিত্য) ও মোহাম্মদ হাননান (মুক্তিযুদ্ধ)।
চূড়ান্ত ঘোষণা অনুযায়ী, কবিতায় মাসুদ খান, নাটক ও নাট্যসাহিত্যে শুভাশিস সিনহা, প্রবন্ধ/গদ্যে সলিমুল্লাহ খান, অনুবাদে জি এইচ হাবীব, গবেষণায় মুহম্মদ শাহজাহান মিয়া, বিজ্ঞান ক্যাটাগরিতে রেজাউর রহমান ও ফোকলোরে সৈয়দ জামিল আহমেদকে এই পুরস্কার প্রদান করা হবে।
এদিকে সাহিত্য পুরস্কারে লেখকদের তালিকায় কোনো নারী লেখক না থাকার বিষয়টি তুলে ধরে এটিকে ‘বিস্ময়কর’ বলে মন্তব্য করে গত শুক্রবার ফেসবুকে পোস্ট দেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
এ পুরস্কারের জন্য ‘মনোনয়ন প্রক্রিয়া সংস্কারের সময় এসেছে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার নীতিমালার চতুর্থ অধ্যায়ের নবম ধারা অনুযায়ী, নির্বাহী পরিষদ নতুন কাউকে পুরস্কারের জন্য বিবেচনা করতে পারবে না এবং দশম ধারা অনুযায়ী, সুপারিশকৃত কোনো নাম বিবেচনা না করার ক্ষমতা ‘বাংলা একাডেমি নির্বাহী পরিষদ’ সংরক্ষণ করে।
আরও পড়ুন:কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নাম পরিবর্তন করে ‘জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইনস্টিটিউট’ করা হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক লতিফুল ইসলাম শিবলী মঙ্গলবার ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে এ তথ্য জানান।
বেলা ১টা ৩৯ মিনিটে দেওয়া ওই পোস্টে বলা হয়, “আলহামদুলিল্লাহ, আজ থেকে ‘কবি নজরুল ইনস্টিটিউট’- এর নাম বদলে গেল। নতুন নাম ‘জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইনস্টিটিউট।’”
মন্তব্য