কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ (১৯৫৬-১৯৯১)। আমাদের দশ ভাইবোনের মধ্যে সবার বড়। আমরা ডাকি ‘দাদা’ নামে। দাদার সঙ্গে আমার বয়সের পার্থক্য বিশ বছরেরও বেশি। আমার শৈশব-কৈশোর যখন মিঠেখালি গ্রামে ও মোংলায় কাটছে, দাদা তখন ঢাকায়। ফলে দাদার সান্নিধ্য পেয়েছি অনেক কম। দাদার সঙ্গে ব্যক্তিগত স্মৃতিও তাই আমার খুব অল্প। মনে পড়ে, স্কুলে ভর্তি হবার সময় দাদা আমার নাম বদলে দিল (আমাদের প্রায় সব ভাইবোনের নামই দাদা পরিবর্তন করেছিল)। আব্বা আমার নাম রেখেছিলেন মোহাম্মদ বরকতউল্লাহ। দাদা স্কুলের ফরমে আমার নাম নির্ধারণ করে দিল হিমেল বরকত। দাদা নিজেও বদলে নিয়েছিল নিজের নাম, লেখালেখির শুরুর দিকেই। মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ থেকে রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ। দাদা একবার আমাদের ছোট তিন ভাইবোনকে (ইরা, সুমেল ও আমি) সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে প্রকাশিত পৃথিবীর ইতিহাস নামে একটি বই উপহার দিল। তাতে লিখে দিল ধর্মীয় গালগপ্পো থেকে মুক্ত থাকার জন্য বইটি পড়ে নেয়া প্রয়োজন।
আরেকটি স্মৃতির কথা খুব মনে পড়ে, স্কুলে পড়ার সময় টুকটাক ছড়া লিখতাম। একদিন মেজো আপা (সোফিয়া শারমিন) খাবার টেবিলে দাদাকে জানাল, ‘দাদা, বাবু তো ছড়া-টড়া লিখছে। তুমি একটু দেখে দিও।’ আমি স্বভাবসুলভ লজ্জায় কুঁকড়ে গেলাম। দাদা হেসে বলল, ‘ভালো তো! আমাকে দেখিয়ো।’ আমি গোপনে-গোপনে ছড়াগুলো নতুন করে, কাটাকুটি ছাড়া আলাদা কাগজে তুললাম। কিন্তু দাদাকে দেখাবার লজ্জাটুকু কাটাতে পারলাম না। লেখা আর দেখানো হল না। তবে, আবৃত্তি শেখার সৌভাগ্য হয়েছিল দাদার কাছ থেকে। স্কুলের প্রতিযোগিতায় নির্ধারিত কবিতাগুলো আমরা দাদার কণ্ঠে রেকর্ড করে নিতাম, তারপর ওগুলো শুনে-শুনে নিজেদের প্রস্তুত করতাম। এখনো কানে বাজে দাদার সেই ভরাট-দরাজ গলার আবৃত্তি, বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দুঃসময়’ কবিতাটি যেটি আবৃত্তি করে স্কুলে প্রথম হয়েছিলাম। পরে জেনেছি, ঢাকায় যে কজন কবি স্বকণ্ঠে কবিতাপাঠে শ্রোতৃপ্রিয় ছিলেন, দাদা তাদের অন্যতম।
দাদাকে ঘিরে এরকম আরো কিছু টুকরো-টুকরো স্মৃতি আমার জমা আছে। কিন্তু সেগুলো দিয়ে ব্যক্তি রুদ্রের সমগ্রতাকে দাঁড় করানো যায় না। আগেই বলেছি, বয়স এবং অবস্থানগত দূরত্বের কারণে দাদার নিবিড় সান্নিধ্য আমার ভাগ্যে জোটেনি। অথচ, দাদাই নির্ধারণ করে দিয়েছে আমার পথ। মনে পড়ে, দাদা বেঁচে থাকতে দাদার পরিচয় দিতে গিয়ে সংকোচ বোধ করতাম। সংকোচের কারণও ছিল। নতুন কারো সঙ্গে পরিচয়পর্বের শুরুতে বাবা-মার পরিচয় জেনেই জিজ্ঞেস করত, ‘তোমার বড় ভাই কী করে?’ বলতাম, ‘কবি। কবিতা লেখে।’ এই উত্তর তাদের সন্তুষ্ট করতে পারতো না। বিস্ময়-বিহ্বল চোখে তাদের অবধারিত পরবর্তী প্রশ্ন হতো, ‘আর কিছু করে না?’ প্রতিনিয়ত এই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে-হতে আমার কিশোর-মনে ধারণা জন্মালো, কবিতা লেখা বা লেখালেখি করা বোধহয় কোনো কাজের মধ্যে পড়ে না বা পড়লেও তা হয়তো সম্মানজনক কিছু নয়। আমার এই গ্লানি-সংকোচ নিমিষে উড়ে গেল দাদার মৃত্যুর পর। সত্যি বলতে গেলে, মৃত্যুর পরই দাদাকে আমার চেনার শুরু। সেসময় প্রায় প্রতিদিনই দাদাকে নিয়ে সংবাদপত্রে বিভিন্ন লেখা প্রকাশিত হচ্ছে। দেশের বরেণ্য কবি-সাহিত্যিক, দাদার বন্ধু, পরিচিত-অপরিচিত অনেকের লেখায়, স্মৃতিচারণে দাদার জনপ্রিয়তা ও কবি হিসেবে তার গুরুত্ব উপলব্ধি করলাম। তার বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব ও সংগ্রামী চৈতন্যে মুগ্ধ হলাম। এসময় কিছু শুভানুধ্যায়ী আমাকে শোনালেন, ‘তোমাকেও তোমার দাদার মতো লেখালেখি করতে হবে।’ অবচেতনে হয়তো গেঁথে গিয়েছিল সেই স্বপ্নের বীজ। দাদার কবিতা পড়তাম প্রচুর আর একটু-একটু লেখারও চেষ্টা করতাম। এরপর কলেজ শেষ করে ভর্তি হলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে, লেখালেখির স্বপ্নে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে টানা দু-বছর দাদার রচনাবলি সম্পূর্ণ করার কাজে মনোনিবেশ করলাম। দাদার মৃত্যুর পর ‘কবি রুদ্রে’র সঙ্গে যে-পরিচয়, তা আরো ঘনিষ্ঠ হল এসময়। দাদার পাণ্ডুলিপি, চিঠিপত্র, সংবাদপত্র-সাময়িকী, বিভিন্ন সাংগঠনিক দলিল দেখতে-দেখতে দাদাকে নতুনভাবে আবিষ্কার করলাম। দাদা নিজেই এতো সযত্নে সবকিছু গুছিয়ে না-রাখলে তার পূর্ণাঙ্গ রচনাবলি সম্পাদনা করা আমার পক্ষে দুঃসাধ্য হতো। বুঝতে পারলাম, যারা রুদ্রকে এলোমেলো, বোহেমিয়ান মনে করেছে তারা আসলে ভুলপাঠই করেছে রুদ্রের। কবিতার প্রতি, কর্মের প্রতি আমৃত্যু মগ্নতার পরিচয় পেয়েছি তার সংরক্ষণ-সচেতনতায়, অসংখ্যবার পাণ্ডুলিপি পরিমার্জনায়, পুনর্লিখনের পরিশ্রমে। রাখাল, দ্রাবিড়, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বাংলাদেশ সংগীত পরিষদ প্রভৃতি সংগঠনের মূল কাগজপত্র থেকেও বুঝতে পারি, রুদ্রের সাংগঠনিক সক্রিয়তা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা কত প্রগাঢ় ছিল।
তবে সবচে বড় কথা রুদ্রের কবিতাই রুদ্রের বিশ্বস্ত পরিচয়। দ্রোহী, সংগ্রামী, আপসহীন এক অপ্রতিরোধ্য তরুণ সকল অন্যায়ের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে, স্পষ্ট স্বরে বলছে : ‘ভুল মানুষের কাছে নতজানু নই’; সাম্যবাদের স্বপ্ন ছড়াতে-ছড়াতে যে ছুটে যাচ্ছে আদিগন্ত : ‘দিন আসবেই, দিন আসবেই দিন সমতার’; ঔপনিবেশিক আবিলতা থেকে জাতিকে মুক্ত করতে ঐতিহ্যের, মাটির, শিকড়ের দিকে যে বারবার আমাদের টেনে নিয়ে গেছে ‘বিশ্বাসের তাঁতে আজ আবার বুনতে চাই জীবনের দগ্ধ মসলিন’ কিংবা ‘আমরা কি হারাইনি লালনের একতারা মাটির হৃদয়/ আমরা কি হারাইনি প্রিয় পথ, প্রিয়তম গ্রামের ঠিকানা?’ বোলে সেই রুদ্রই আমার চৈতন্যের শিক্ষক, আমার শ্রদ্ধেয় দাদা। কেবল আমারইবা কেন, নতুন প্রজন্মের অসংখ্য তরুণকে দেখছি প্রিয় কবি হিসেবে রুদ্রকে উচ্চারণ করতে, তাকে নিয়ে গবেষণা করতে। ‘জাতির পতাকা আজ খামচে ধরেছে সেই পুরোনো শকুন’ রুদ্রের দূরদর্শী, অভ্রান্ত এই পঙক্তি এখনো মুখে-মুখে, সময়ের প্রয়োজনেই। বুঝতে অসুবিধা হয় না, রুদ্রের জনপ্রিয়তা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবার কারণ তার শাণিত চৈতন্য। এই নিরাপস ও দ্রোহ তাকে তারুণ্যের বরপুত্র করে তুলেছে। শুধু কবিতায় অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ফোটাবার পারঙ্গমতায় নয়, রুদ্র তার সাহসী জীবনাচার দিয়েও সেই বিশ্বাসকে যাপন করেছে মিছিলে নেমেছে, শ্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত করেছে। এখানেই রুদ্র অনন্য শিল্প ও জীবনকে যে একপাত্রে পান করার সক্ষমতা দেখিয়ে গেছে।
দুর্ভাগ্য যে, মাত্র পঁয়ত্রিশ বছরেরও কম সময় বেঁচেছিল দাদা। এর মধ্যেই সে লিখে গেছে সাতটি কাব্যগ্রন্থসহ (উপদ্রুত উপকূল, ফিরে চাই স্বর্নগ্রাম, মানুষের মানচিত্র, ছোবল, গল্প, দিয়েছিলে সকল আকাশ, মৌলিক মুখোশ) পাঁচ শতাধিক কবিতা, একটি কাব্যনাট্য (বিষ বিরিক্ষের বীজ), অর্ধশতাধিক গান ও বেশকিছু ছোটগল্প। বয়স হিসেবে লেখার এই পরিমাণ ও বৈচিত্র্য যেকোন লেখকের জন্যই ঈর্ষণীয়। শিল্পের প্রতি প্রবল দায়বদ্ধতা ছাড়া এমন সৃষ্টিযজ্ঞ সম্ভবও নয়। জীবনের শেষদিকে দাদা সাহিত্যের অন্যান্য মাধ্যমেও সক্রিয় হতে চেয়েছিল, কিন্তু অকালমৃত্যু তাকে স্তব্ধ করে দিল।
দাদার অকালপ্রয়াণের সেই ব্যথাতুর স্মৃতি দিয়েই শেষ করছি। আমি তখন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ি। সদ্য স্কাউটে যোগ দিয়েছি। প্রতি শুক্রবার যেতাম ক্লাস করতে। এমনই এক শুক্রবারের (২১ জুন ১৯৯১) দুপুরে ক্লাস শেষে বাড়ির পথে ফিরছি, তখনই খবর পেলাম দাদা খুব অসুস্থ, আমাদের ঢাকায় যেতে হবে। বাসায় পৌঁছে বুঝতে পারলাম, দাদা আর নেই। গ্যাস্ট্রিক আলসারে আক্রান্ত হয়ে দশদিন হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে মোটামুটি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে, তার পরদিনই সকালে হার্ট অ্যাটাক। কী ভয়ংকর আকস্মিক এই সংবাদ! ফুঁপিয়ে-ফুঁপিয়ে কাঁদছি, কিছুতেই কান্না থামে না। শুনলাম দাদাকে বাড়ি আনা হবে। আমাদের আর ঢাকায় যেতে হল না। দাদা এলো ট্রাকে। ফুলে-ফুলে সাজানো কফিন, হাজার-হাজার মানুষের ভালোবাসার স্মারক। বড় আপা (শরিফুন হাসান বীথি) আমাকে জড়িয়ে ধরে সান্তনা দিতে-দিতে নিজেই কেঁদে উঠল : ‘দেখো, দাদাকে নিয়ে এসেছি। ফুল দিয়ে সাজিয়ে নিয়ে এসেছি।’ আমরা ট্রলারে উঠলাম। নানাবাড়ি মিঠেখালিতে দাদার কবর দেয়া হবে। ট্রলারের ছাদে বসে, কফিনের পাশে নিঃশব্দে কেঁদে যাচ্ছি আর মনে-মনে অসংখ্যবার পড়ে চলেছি দাদার শেষ কবিতার দু-লাইন : ‘মাটির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আর আকাশ দ্যাখা হয় না/ এতো কিছুই দ্যাখার থাকে, এতো কিছু দেখতে হয় মাটিতে প্রতিদিন।’ বাইরে তখন ট্রলারের যান্ত্রিক গর্জন আর আমার ভেতর ভাই-হারানোর হাহাকার। অশ্রুঝাপসা চোখে আকাশের দিকে তাকালাম। ভাবলাম আকাশ দেখতে না-পারার কষ্টেই কি দাদা আকাশ হয়ে গেল? আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখতে বোলে গেল?
(পূর্বপ্রকাশিত লেখাটি লেখকের অনুমতি সাপেক্ষে প্রকাশিত হলো)
ড. হিমেল বরকত : অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশ ও চীন তাদের ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নিতে একসাথে এগিয়ে যাবে, যা উভয় দেশ ও বিশ্বের জনগণের জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি ও সুখ বয়ে আনবে।
গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের ৭৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং বাংলাদেশ-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বুধবার রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে চীনা দূতাবাস আয়োজিত এক জমকালো সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা এক ভিডিও বার্তায় এই মন্তব্য করেন।
গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ৭৬তম বার্ষিকী এবং বাংলাদেশ-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকীতে উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বাংলাদেশের প্রতি চীনের দীর্ঘস্থায়ী আস্থা, সহায়তা ও সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি অর্থনৈতিক উন্নয়ন, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং জনগণের সেবার মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে অর্জিত উল্লেখযোগ্য সাফল্যের পাশাপাশি গ্লোবাল সাউথ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি এর অনুপ্রেরণা ও অবদানের প্রশংসা করেন।
চীনকে বাংলাদেশের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য অংশীদার উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের প্রতি চীনের দীর্ঘস্থায়ী আস্থা, সহায়তা ও সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন অনুষ্ঠানে বলেন, ২০২৫ সাল কেবল গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের ৭৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী নয়, বরং জাতিসংঘের ৮০তম বার্ষিকীও।
তিনি আট দশক আগে বিশ্ব শান্তি রক্ষায় চীনের অপরিসীম ত্যাগের কথা স্মরণ করেন এবং শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে শক্তিশালী রেকর্ডসহ একটি প্রধান শক্তিতে রূপান্তরিত হওয়ার কথা তুলে ধরেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, “চীনের কমিউনিস্ট পার্টির শক্তিশালী নেতৃত্বে, চীনা জনগণ নিরঙ্কুশ দারিদ্র্য দূরীকরণের অলৌকিক সাফল্য অর্জন করেছে। চীন সর্বদা বিশ্বে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতির জন্য একটি শক্তি হিসেবে থাকবে।”
রাষ্ট্রদূত ইয়াও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের গ্লোবাল গভর্নেন্স ইনিশিয়েটিভের উপর জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে তিনি ব্যাপক আন্তর্জাতিক সমর্থন পেয়েছেন, যা বহুপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদার করার একটি নজির।
ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে তিনি বলেন, দুই দেশ শ্রদ্ধা, আন্তরিকতা, কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন ও সমান সমান সহযোগিতার দ্বারা পরিচালিত সুসম্পর্কেও ভিত্তিতে সর্বদা "ভালো প্রতিবেশী, আন্তরিক বন্ধু ও নির্ভরযোগ্য অংশীদার হয়ে থাকবে।"
তিনি আরও বলেন, "চীন বাংলাদেশকে তার আধুনিকীকরণের যাত্রায় সহায়তা ও সমর্থন অব্যাহত রাখতে এবং ভবিষ্যতে একটি চীন-বাংলাদেশ সম্প্রদায় গঠনে একটি নতুন অধ্যায় লিখতে প্রস্তুত।"
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশের উন্নয়ন অবকাঠামো, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং স্বাস্থ্যসেবাতে চীনের অবদানের প্রশংসা করেন এবং জোর দিয়ে বলেন যে, এই ধরনের সহযোগিতা বাংলাদেশী জনগণের জন্য বাস্তব সুবিধা প্রদান করেছে।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, দুটি দেশ জনগণের মধ্যে গভীর বন্ধন গড়ে তুলেছে। চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক এখন সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান, প্রধান রাজনৈতিক দলের জ্যেষ্ঠ নেতা, বিদেশী কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি, চীনা সম্প্রদায়ের সদস্য, শিক্ষাবিদ, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এবং থিঙ্ক ট্যাঙ্ক বিশেষজ্ঞ সহ ৬০০ জনেরও বেশি অতিথি উপস্থিত ছিলেন।
সন্ধ্যায় ইউনান গোল্ডেন অ্যান্ড সিলভার বার্ড আর্ট ট্রুপ এবং কোয়ানঝো আর্ট ট্রুপের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, জাতিগত নৃত্য, অ্যাক্রোব্যাটিক্স এবং ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। দর্শকদের কাছে তা খুবই উপভোগ্য ছিল।
অতিথিরা চীন-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন এবং জাপানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে চীনা জনগণের প্রতিরোধ যুদ্ধ এবং বিশ্ব ফ্যাসিবাদ বিরোধী যুদ্ধে বিজয়ের ৮০তম বার্ষিকী উদযাপনের প্রদর্শনীও পরিদর্শন করেন।
অনুষ্ঠানস্থলে এন্টারপ্রাইজ বুথ, পর্যটন প্রচারণা এবং সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা কর্নারও ছিল, যা দর্শকদেরও ব্যাপক মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পিআরের (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পক্ষে নয় বিএনপি। এটার কোনো ভিত্তি নেই। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে গতকাল বৃহস্পতিবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের সিদ্ধান্ত নিজেদেরই নিতে হবে এবং সেটা ঐক্যবদ্ধভাবে। যেকোনো বিষয় আলোচনার মধ্য দিয়ে সমাধান হবে মনে করে বিএনপি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আলোচনার মধ্যে কর্মসূচি দেওয়ার অর্থ হচ্ছে অহেতুক চাপ সৃষ্টি করা। এটি গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়। রাজপথে নামলেই সমস্যার সমাধান হবে কি? আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান সম্ভব।
মির্জা ফখরুল বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর বিএনপি কোনো ইস্যুতেই আন্দোলনে যায়নি। আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান সম্ভব। এ সময় বিএনপি কোনও রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে নয় বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘের আগামী অধিবেশনে যোগ দেব। কিন্তু এজেন্ডা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
অনুমোদিত ১,২০০ মেট্রিক টন ইলিশের মধ্যে সরবরাহ সীমিত থাকায় গত দুই দিনে মোট ৫৬.২৫ মেট্রিকটন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার রাতে ৩৭.৪৬ মেট্রিক টন এবং বৃহস্পতিবার ১৮.৭৯ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে পাঠানো হয়েছে।
বেনাপোল মৎস্য কোয়ারেন্টিন অফিসার সজীব সাহা, মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে তাদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আমরা নিশ্চিত করেছি যে রপ্তানির জন্য নির্বাচিত প্রতিটি ইলিশ স্বাস্থ্যসম্মত, রোগমুক্ত এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী যোগ্য। এই পরীক্ষা ও মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত করতে চাই, যে প্রতিটি চালান নিরাপদ ও উচ্চমানের। এছাড়া সরবরাহ সীমিত থাকায় দুই দিনের রপ্তানি অনুমোদিত পরিমাণের তুলনায় কম হলেও আমাদের মূল লক্ষ্য মানসম্পন্ন ইলিশ রপ্তানি বজায় রাখা।
এর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত বছর ৭৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৩,৯৫০ টনের অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু বেনাপোল ও আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে সব মিলিয়ে ইলিশ রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৮০২ টন। এর মধ্যে বেনাপোল বন্দর দিয়ে একাই রপ্তানি হয়েছে ৫৩২.৩ মেট্রিক টন।
স্থানীয় ইলিশ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সততা ফিশের ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম বলেন, দুর্গাপূজা ও আসন্ন উৎসবের কারণে ইলিশের চাহিদা বেশি। আমরা চেষ্টা করছি বাজার চাহিদা অনুযায়ী ইলিশ সরবরাহ বজায় রাখতে। তবে মাছের সীমিত পরিমাণ রপ্তানিতে কিছুটা বাধা থাকলেও আমাদের কার্যক্রম সচল রয়েছে।
"একজন শিক্ষার্থী অন্য শিক্ষকের কাছে পড়লে আপনি তাকে কম মার্কস দিবেন, আপনার কাছে পড়লে প্র্যাক্টিক্যালে ভালো মার্কস দিবেন, তার সাথে ভালো আচরণ করবেন এটাও কিন্তু এক ধরণের দুর্নীতি। দুর্নীতি কিন্তু শুধু টাকা খাওয়া না, শুধু অন্যায় করা না। শিক্ষার্থী যে শিক্ষকের কাছেই পড়ুক না কেন তার খাতাটি আপনি নিরপেক্ষভাবে দেখবেন। আপনারা কখনোই শিক্ষার্থীদের সাথে পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ করবেন না। দুর্নীতি করে কিন্তু কেউই বেশি দূর এগোতে পারে না। পরকালের কথা বাদ দিয়ে ইহকালেও কিন্তু দুর্নীতি করে কেউ সফল হতে পারেনি। কাজেই আপনার শিক্ষার্থীদের সাথে ন্যায়সঙ্গত আচরণ করুন।"
এসময় পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “ভালো ফলাফল পেতে হলে তোমাদেরকে পরিশ্রম করতে হবে। পরীক্ষা ভয় পাওয়ার বিষয় নয়, এটি জীবনের একটি ধাপ মাত্র। নিয়মিত পড়াশোনা, সঠিক সময় ব্যবস্থাপনা ও আত্মবিশ্বাসই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। তোমাদের পরিশ্রম, সততা ও অধ্যবসায় একদিন পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য গর্বের কারণ হবে।”
অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, "আপনারা আপনাদের বাচ্চাদেরকে সময় দিন। অফিস থেকে এসে রিলাক্স মুডে মোবাইল দেখবেন না, ঘণ্টার পর ঘণ্টা আত্মীয়-স্বজনের সাথে কথা বলবেন না। আপনি সন্তানের সামনে মোবাইল ব্যবহার করলে ও কিন্তু ভালো কিছু শিখবে না।"
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১১ টায় রাজবাড়ীর পাংশায় এস.এস.সি-২০২৬ পরীক্ষার প্রস্তুতি, শিক্ষার মান উন্নয়ন, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ এবং মাদকাসক্তির কুফল সম্পর্কে সচেতনতার লক্ষ্যে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষক মন্ডলীর উপস্থিতিতে অভিভাবক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুলতানা আক্তার এসব কথা বলেন।
পাংশা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন পাংশা পৌরসভার পাংশা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, কাজী আব্দুল মাজেদ একাডেমি ও এয়াকুব আলী চৌধুরী বিদ্যাপীঠের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকবৃন্দ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস.এম. আবু দারদা'র সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, পাংশা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ও পাংশা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য মো. বাহারাম হোসেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবুল কালাম আজাদ।
সঞ্চালনায় ছিলেন উদয়পুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সামসুল আলম (সোহরাব)। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির উদ্দেশে মানপত্র পাঠ করেন পাংশা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সান্ত্বনা দাস।
শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকেও পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের প্রস্তুতি, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ ও মাদকমুক্ত সমাজ গঠনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখা হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলওয়াত ও পবিত্র গীতা পাঠ করা হয়। আলোচনা শেষে জেলা প্রশাসক ৩টি বিদ্যালয়ের মাঝে বিভিন্ন ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ করেন।
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় আধুনিক পৌর পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নান্দাইল মডেল থানার সংলগ্ন এ পার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সারমিনা সাত্তার।
এ সময় পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারী, উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা বৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, সাংবাদিকসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সারমিনা সাত্তারকে ঘিরে শুরু হয় প্রশংসার ঢল। স্থানীয়রা মন্তব্য করছেন, তাঁর দূরদর্শী উদ্যোগ ও সাহসী পদক্ষেপের কারণেই অবশেষে নান্দাইলবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হতে যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে ইউএনও সারমিনা সাত্তার বলেন, “এ পার্ক হবে নান্দাইলবাসীর জন্য একটি উন্মুক্ত বিনোদনকেন্দ্র। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষ এখানে সময় কাটাতে পারবেন। একইসঙ্গে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খেলাধুলা এবং সামাজিক আড্ডার একটি নিরাপদ স্থান হিসেবে এটি ব্যবহৃত হবে।”
তিনি আরও জানান, পার্কে বসার স্থান, ফুলের বাগান, হাঁটার ট্র্যাকসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রাখা হবে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নান্দাইলে দীর্ঘদিন ধরে একটি মানসম্মত বিনোদনকেন্দ্রের অভাব ছিল। পরিবার নিয়ে বেড়ানো কিংবা শিশুদের খেলাধুলার জন্য উপযুক্ত জায়গার অভাবে অনেক সময় ভোগান্তি পোহাতে হতো। নতুন এ পৌর পার্ক সেই শূন্যতা পূরণ করবে বলেই মনে করছেন তারা।
ফেসবুকে অনেকেই মন্তব্য করেছেন, নান্দাইলের সৌন্দর্যবর্ধনে ইউএনও সারমিনা সাত্তারের এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। কেউ কেউ লিখেছেন, “এ পার্ক শুধু বিনোদনের জন্য নয়, বরং তরুণ প্রজন্মকে ইতিবাচক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করার অন্যতম প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠবে।”
উপস্থিত বক্তারাও একে নান্দাইলের জন্য যুগান্তকারী উদ্যোগ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তারা বলেন, এ পার্ক উদ্বোধনের পর থেকে পুরো এলাকা প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে।
উল্লেখ্য, নান্দাইল পৌরসভার নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। কাজ শেষ হলে এটি শুধু বিনোদন কেন্দ্র নয়, বরং নান্দাইল পৌরসভার সৌন্দর্যবর্ধনেও নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
চারটি সংসদীয় আসন বহালের দাবিতে বাগেরহাটে টানা তৃতীয় দিনের মতো জেলা ও ৯টি উপজেলা নির্বাচন অফিসের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটি। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলা এ কর্মসূচিতে বিএনপি-জামায়াতসহ সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির শত শত নেতা-কর্মী অংশ নেন। কর্মসূচি চলাকলীন নির্বাচন অফিসের সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকে। তবে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
কর্মসূচি শেষে কমিটির কোকনভেনার এম এ সালাম জানান, (আজ) শুক্রবার ও (কাল) শনিবার কোনো কর্মসূচি না থাকলেও আগামী রোববার ও সোমবার দুই দিন আবারও ঘেরাও কর্মসূচি চলবে। এবং সোমবারের কর্মসূচি চলাকালীন পরবর্তী আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
এ প্রসঙ্গে জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা রেজাউল করীম বলেন, আপনারা ইতোমধ্যেই দেখেছেন বাগেরহাটবাসী তাদের দাবি আদায়ে একত্র হয়েছে এবং রাজপথে নেমেছে। তবুও নির্বাচন কমিশন আমাদের দাবিকে আমলে নিচ্ছে না। কমিশন যদি আমাদের দাবি মেনে না নেয়, তাহলে যেভাবে আন্দোলন করলে দাবি আদায় সম্ভব, বাগেরহাটবাসী সেভাবেই আন্দোলন চালাবে।
সর্বদলীয় কমিটির সদস্য সচিব ও জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি শেখ মুহাম্মাদ ইউনুস জানিয়েছেন, গত ১৭ বছর আমরা আন্দোলন সংগ্রাম করে এসেছি। যার কারণে মামলা-হামলাকে আমরা ভয় পাই না। যতদিন পর্যন্ত আমাদের দাবি আদায় না হবে ততদিন আমরা রাজপথ ছাড়ব না।
এদিকে চারটি আসন বহালের দাবিতে দায়ের করা রিটে হাইকোর্ট রুল জারি করেছে, যেখানে নির্বাচন কমিশনকে ১০ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
কিশোরগঞ্জের ভৈরব বিসিক শিল্পনগরীর প্লট বরাদ্দের তিন বছরে উৎপাদনে গেছে মাত্র একটি কারখানা। অথচ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৩৪টি প্লট। বরাদ্দপ্রাপ্ত প্লটগুলোর বেশিরভাগই পড়ে আছে ফাঁকা। সেখানে গজিয়ে উঠেছে কাঁশবন। দ্রুত বাকি সব কারখানা চালুর দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ভৈরব-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের পাশে বিশাল এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে বিসিক শিল্পনগরী। প্রধান ফটক পেরিয়ে চোখে পড়ে কয়েকটি নির্মাণাধীন কারখানা। তাদের মধ্যে মেসার্স জিলানী ফ্লাওয়ার মিলস অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্টস নামের একটি কারখানা উৎপাদন কার্যক্রম চালাচ্ছে। বাকি কয়েকটি কারখানার নির্মাণকাজ চলছে। একটু সামনে এগোতেই দেখা মিলছে সারি সারি কাঁশবন। প্রতিটি প্লটেই ফুটেছে ফুল। নেই কোনো কর্মচাঞ্চল্য।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৩ সালে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে কালিকাপ্রসাদ এলাকায় ৪০ একর ভূমিতে বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলার জন্য সরকার অনুমোদন দেয়। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে নির্মাণকাজ শুরু করতে কিছুটা বিলম্ব হয়। ২০২১ সালে সেপ্টেম্বরে ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণকাজ কাজ শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। তবে শিল্পের বিকাশ ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে কাজ শুরু হলেও আশানুরূপভাবে এগোচ্ছে না ভৈরব বিসিক শিল্পনগরীর কার্যক্রম।
প্লট বরাদ্দের পর তিন বছরে মাত্র একটি কারখানা উৎপাদন শুরু করেছে। উৎপাদনের অপেক্ষায় রয়েছে আটটি কারখানা, নির্মাণাধীন সাতটি এবং নির্মাণের অপেক্ষায় রয়েছে ১৮টি। বাকি ২২টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে তারা এখনো কোনো দৃশ্যমান কার্যক্রম শুরু করেননি।
ভৈরব বিসিক শিল্পনগরীতে ১২৪ শিল্প ইউনিটে ২৩৪ প্লট বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্য খাদ্য উৎপাদন খাতে ৪০টি, বস্ত্র উৎপাদন খাতে তিনটি, রসায়ন খাতে ৪০টি, চামড়া ও রাবার শিল্প উৎপাদন খাতে ২২টি, প্রকৌশলী উৎপাদন খাতে ১৪টি এবং প্যাকেজিং উৎপাদন খাতে পাঁচটি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যদি শিল্পনগরীর সব কারখানা চালু হয়, তাহলে প্রায় ১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি হবে। বদলে যাবে ভৈরবের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। এ অঞ্চলের মানুষের প্রধান পেশা পাদুকা শিল্পের ক্লাস্টারের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এতে এ শিল্পে জড়িতরা সহজ শর্তে ঋণসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মিলাত মিয়া বলেন, ‘বিসিকের কার্যক্রম পুরোপুরি শুরু না হওয়ায় এখানে রাত হলেই অপরাধ চক্রের দৌরাত্ম বেড়ে যায়। ফলে বিসিক সংলগ্ন এলাকায় ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটছে।’
কালিকা প্রসাদ ইউপি চেয়ারম্যান লিটন মিয়া বলেন, ‘প্রশাসনের কাছে দাবি, যেন দ্রুত বিসিকের সব কার্যক্রম শুরু করা হয়। এটা হলে এলাকার হাজারও মানুষের কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
ভৈরব চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রি সভাপতি জাহিদুল হক জাবেদ বলেন, বিসিক শিল্পে তিন বছরে মাত্র একটি কারখানা উৎপাদনে যেতে পেরেছে। বাকিগুলো এখনো উৎপাদনে যেতে পারেনি। তাদের মধ্য বরাদ্দ পাওয়া বেশিরভাগই এখনো স্থাপনার কাজ শুরু করেনি। যারা বিসিক শিল্পে এখনো তাদের বরাদ্দকৃত প্লটে কোনো কাজ শুরু করেননি, সেসব প্লটের মালিকানা বাতিল করে নতুনভাবে বরাদ্দের দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে ভৈরব শিল্পনগরীর কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবিদুর রহমান খান জানান, শিল্পনগরীর কার্যক্রম শুরু হয়েছে, তবে পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু হতে কিছু সময় লাগবে। তবে বিসিক শিল্পের পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় অফিসিয়াল কার্যক্রমসহ শিল্পের নিরাপত্তা রক্ষায় বিঘ্ন ঘটছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। আশা করছি, খুব শিগগির বিসিক শিল্পের কার্যক্রম পুরোপুরিভাবে শুরু হবে।
এদিকে, গত ১৭ আগস্ট এক আনন্দঘন ও প্রেরণাদায়ক পরিবেশের মধ্য দিয়ে বিসিক জেলা কার্যালয়, কিশোরগঞ্জ-এর উদ্যোগে আয়োজিত 'শিল্পোদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কোর্স (১ম ব্যাচ)'-এর উদ্বোধন করা হয়। হাওরপাড়ের সম্ভাবনাময় তরুণ-তরুণীদের আত্মনির্ভরশীল উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এই প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিসিকের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মোঃ সাইফুল ইসলাম। সেদিন তিনি তাঁর দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্যে বলেন, বিসিক সৃষ্টি লগ্ন থেকেই সারা দেশে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি এবং তাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি প্রশিক্ষণার্থীদের দৃঢ় মনোবল, উদ্ভাবনী চিন্তা ও প্রশিক্ষণে অর্জিত জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে সফল উদ্যোক্তা হওয়ার আহ্বান জানান। তাঁর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মাধ্যমে একদল স্বপ্নবাজ তরুণের নতুন পথচলা শুরু হয়।
দিনব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে, বিসিকের চেয়ারম্যান বিসিক শিল্পনগরী, কিশোরগঞ্জ এবং শিল্পনগরী, ভৈরব পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি শিল্পনগরী দুটির সার্বিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন, উদ্যোক্তাদের সাথে মতবিনিময় করেন এবং বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।
মন্তব্য