দেশে লেখক, বোদ্ধা, চিন্তাশীল মানুষ ও পাঠকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। পুস্তক প্রকাশ ও লেখালেখির মাধ্যম বিকশিত হয়েছে প্রত্যাশার অধিক। মানুষের ভেতর আগের থেকে অনেক বেশি টেক্সট পড়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। মানুষ এখন অনেক বেশি অক্ষর ও শব্দের সাথে সম্পৃক্ত। ফলে আমরা ধরে নিতে পারি ঢাকার সাহিত্য ইন্ডাস্ট্রির কলেবর অনেক বড়। এত বড় একটা সমাজে প্রতিবছর নিশ্চয় কোনো না কোনো বড় ঘটনা ঘটবে। অথচ গত বিশ বছরের এই সুবিশাল সাহিত্যপল্লিতে আমরা কোনো বই, লেখক বা সাহিত্য সংশ্লিষ্ট ঘটনা নিয়ে উদ্বেলিত হয়েছি বলে মনে পড়ে না।
ঢাকায় শিল্প-সাহিত্য সমাজকে নিস্তরঙ্গই বলা যায়। বেশ একটা নিরীহ চেহারায় সারা বছর চুপচাপ, ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণচালে লেখক-চিন্তকরা বই-পুস্তক লেখেন। যার অধিকাংশ প্রকাশিত হয় ফেব্রুয়ারির বইমেলায়। নিস্তরঙ্গ বছরের এই একটা মাসে কিছুটা চাঞ্চল্য দেখা দেয় বিদ্বৎ সমাজে।
সোজা কথা হলো, ঢাকার সাহিত্য নিয়ে সমাজে আদতে কোনো হৈচৈ, কথাবার্তা এবং উচ্চাশাও নেই বললে চলে। হৈচৈকে সাহিত্য না বলুন, কিন্তু একটা দেশের সাহিত্য টিকে থাকার জন্য তা লাগে। সেলিব্রেশন, উৎসব এগুলো খুব প্রয়োজনীয় ঘটনা। যা নিয়ে উৎসাহ উদ্দীপনা নেই, তার প্রয়োজনীয়তাও সমাজে নাই।
তবে আমাদের এই নির্লিপ্ত সাহিত্য সমাজে বছরে একটা সরবতা আসে, অক্টোবর মাসে। নোবেল পুরস্কার ঘোষণার সাথে সাথে। মরা নদীতে বান আসার মতো। এই সরবতা প্রধানত তিনভাবে দেখা যায়।
এক. কে, কাকে, কবে পড়েছে, কতটা পড়েছে এগুলো নিয়ে একটা প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়। কেউ হয়তো বলবেন, তিনি ওই লেখকের লেখা সাত-আট বছর আগে থেকেই পড়ছেন। পড়ে থাকলে ভালো। তবে তিনি সাত-আট বছর আগে সেই লেখককে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার আত্মবিশ্বাস পান নাই। আমরা কী বুঝব! সাহিত্য সমাজে নিজেকে নানাভাবে ঝুলিয়ে রাখতে হয়। হয়তো আপনি গুন্টারগ্রাসের লেখা পড়েছেন। পড়তেই পারেন। তবে তা আপনার বাংলা সাহিত্যের জন্য তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো ঘটনা না। আপনি ফোর্ট উইলিয়াম পূর্ববর্তী বাংলা সাহিত্যের খোঁজ রাখেন কিনা তা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
দুই. একটা লেখক-শ্রেণি আছে যারা গুগল মেশিনের চেয়েও ফাস্ট বঙ্গানুবাদ করে ফেলে। কবিতা হলে তো কথাই নেই। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা খুব গুরুত্বসহকারে তা ছেপেও দেয়। তাদের অনুবাদের সুবাদে আপনি যা পড়বেন, তা পড়ে মনে হবে, ‘এর চেয়ে আমি ভালো লিখি বা বাংলা সাহিত্যে এরচেয়ে ভালো লেখক আছে। এমন বাজে লেখক নোবেল পেল? হায়!’ একটা ভাষা থেকে অন্য ভাষায় অনুবাদের আগে সেই ভাষা, দেশ ও কালের দার্শনিকতা জানা লাগে। ধরেন আপনি জার্মানি ভাষা শিখলেন। কিন্তু ওই ভাষার দর্শনটা, দেশ-কাল না জানলে আপনার কাছে ‘ফাউস্ট’ একটা মামুলি লেখা লাগবে। অনেক কিছু ধরাই যাবে না। উপমহাদেশ ও তার বাস্তবতা না জানলে মনে হবে ‘রক্তকরবী’ এমন আর কী! এই জাতীয় অনুবাদে আসলে ‘আই’-এর পরিবর্তে ‘আমি’ বসানো হয়। ফলে সত্তা ও ভাষার ব্যাপক অর্থটা অধরাই থেকে যায়। ভাষা শুধু চিহ্ন ব্যবস্থা না, ভাষার মিনিং আবহমানতার সাথে সংশ্লিষ্ট। এই রকম অনুবাদ করা মূলত একটা ইভেন্টের দর্শক হিসাবে নিজেকে রেজিস্টার করে মাত্র। একজন বড় লেখক অনুবাদক মানে তিনি তার সারা জীবনটা উৎসর্গ করে দিলেন। তার নিজের সাহিত্য হয় না। বিরাট বড় বলিদান এটা। সারা জীবন আর কিছু না করে ওই লেখকের লেখাই অনুবাদ করে থাকেন। মুরাকামির অনুবাদক মনে হয় তিনজন। তারাই তার লেখা অনুবাদ করেন সাধারণত। মূলত লেখক ও ভাষা বুঝতেই তাদের এই সাধনা। জি এইচ হাবীবের উমবর্তো একোর দ্য নেম অব রোজেজ অনুবাদ করতে প্রায় পনেরো বছরের বেশি সময় লেগেছে বলে শুনেছি।
তিন. সাহিত্য সমাজের একটা ব্রাহ্মণ সম্প্রদায় আছে যারা, নামের উচ্চারণ, শুদ্ধতা ইত্যাদির ভেতর দিয়ে নিজেদের জানা-বোঝাটা জানান দেবে সমাজে। তো একজন বিদেশি লেখকের নামের শুদ্ধ উচ্চারণ দিয়ে কী হবে! ঠাকুরকে টেগর বলার পরও পশ্চিমের কেউ নিশ্চয়ই পুরো ইউরোপকে মূর্খ বলে গালি দিয়ে বলে নাই, ‘ডেয়ার ব্রো, তোমরা সকলে মূর্খের মতো ঠাকুরকে টেগর বলছ কেন? আমাদের মান থাকবে না ভারতের কাছে।’ ঠাকুরকে টেগর বললেও তাদের তা বুঝতে সমস্যা হয় নাই নিশ্চয়ই। নামের বিশুদ্ধতা শুদ্ধতার কঠোরতম সাধনার পথের পথিকরা বিদেশি সাহিত্যের অন্তরটা এখানে না নিয়ে এসে, এর খোলসটা নিয়ে নাড়াচাড়া করেন। ফেক রোলেক্স হাতে দিয়ে তারা রোলেক্স ক্লাবের সফল সদস্য হয়ে সমাজে সমীহ আদায় করে।
এই হলো ঢাকা সাহিত্যে অক্টোবর বাস্তবতা। প্রতি বছরই একই ঘটনা ঘটে। বিপুল এক নোবেল মুগ্ধতা নিয়ে আমরা আমাদের সাহিত্য জীবন পার করি।
২.
মার্কিন কবি ও প্রাবন্ধিক লুইস গ্লুক এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। এর বাইরে আর বাকি পরিচয় পাঠক হিসাবে নানা মাধ্যমে জেনে গিয়েছেন। ফলে, পরিচয় পর্বে আমি আর গেলাম না। ২০১২ সালে দেওয়া একটা ইন্টারভিউতে গ্লুক বলছিলেন তার লেখক হয়ে ওঠার গল্প। তার বাবার লেখক হওয়ার বাসনা ছিল। আগ্রহ ছিল ইতিহাস ও রাষ্ট্র শাসননীতি নিয়ে। পরবর্তী সময়ে ব্যবসায় সাফল্য আসার সাথে সাথে তার সেই লেখক হয়ে ওঠার বাসনা শেষ হয়ে যায়। তার মায়ের সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা ছিল। লেখালেখির একটা আবহ থাকার কারণে মাত্র পাঁচ-ছয় বছর বয়স থেকেই সে ও তার বোন বই লেখার সুযোগ পেয়েছে। কাগজে গল্প লিখে নিজের মতো ইলাস্ট্রেশন করত তারা। ছোটবেলায় পরিবার থেকে দারুণ সহযোগিতা পেয়েছেন তিনি। টিনএজের প্রথম দিকেই সে নিজের প্রথম বইয়ের ড্রাফট তৈরি করে ফেলেছিলেন। তা অবশ্য প্রকাশিত হয়নি।
গ্লুক থিয়েটারে নাম লিখিয়েছিলেন। তার মার ঘোর আপত্তি ছিল তাতে। মা তাকে বারবার বলত তুমি একজন অসম্ভব ভালো লেখক ও শিল্পী। থিয়েটারের মতো হালকা বিষয় তোমার জন্য না। এ নিয়ে মা মেয়ের দারুণ দ্বন্দ্ব ছিল। থিয়েটার সে ছেড়ে দেয়। তার বয়ঃসন্ধিকালটা যে খুব ভালো কেটেছে তা নয়। ষোল বছর বয়সে তিনি অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসা বা ক্ষুধাহীনতা রোগে আক্রান্ত হন। এটা একটা মানসিক রোগ। এই রোগে আক্রান্তরা নিজের ওজন কমাতে, খাওয়া বিষয়ে এতটাই সংবেদনশীল হয়ে ওঠে যে কিছুই খেতে চায় না তারা। এক সময় খাওয়া বন্ধ করে দেয়। ফলে, মৃত্যুর আশঙ্কা বাড়ে ওই রোগীর। তারা নিজেদেরকে সকল থেকে খুবই আলাদা করে দেখে। এই রোগের কারণে গ্লুকের স্কুলিং বন্ধ হয়ে যায়। সাত বছর তিনি নিয়মিত মনোবিদের সাহায্য নিয়েছেন। সাক্ষাৎকারে গ্লুক বলেছিলেন, তার মায়ের সাথে তার সম্পর্কের টানাপোড়ন এই রোগের একটা কারণ হতে পারে। তার মার তাকে নিয়ন্ত্রণ করার একটা প্রবণতা ছিল। তিনি সর্বদা এই নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকতে চেয়েছেন। তিনি তার দেহকে অপর আট-দশটা মানুষের দেহ থেকে আলাদা হিসাবে ভাবতেন। সে ভাবত তাকে পরিশুদ্ধ আত্মার মানুষ হতে হবে। তার আত্মাকে দেহ থেকে আলাদা করে দেখতে চাইতেন তিনি। সেই সময় তিনি কয়েকটি কবিতার ওয়াকশপে অংশ গ্রহণ করেছিলেন মাত্র। সাথে সাথে নিয়মিত সাইকো অ্যানালিসিস চলত। এই সাইকো অ্যানালিসিসের ভেতর দিয়ে তিনি আসলে নিজের চিন্তার পদ্ধতিটা আবিষ্কার করতে থাকেন। তীব্রভাবে কবিতা আঁকড়ে ধরেন। একটু একটু করে সুস্থ হওয়ার সাথে সাথে কবিতায় মিশে যান তিনি। কবিতাই হয় তার শেষ গন্তব্য।
লুইস গ্লুকের বয়স সাতাত্তর। দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরের কবি জীবনে বারোটা কবিতা আর দুটো কবিতা-বিষয়ক গদ্যের বই লিখেছেন। তিনি হলেন আমেরিকার জীবিত মুভিং পোয়েট। তিনি কখনো নিজের তৈরিকৃত লেখার কৌশল নিয়ে আঁকড়ে বসে থাকেননি। প্রতিটা বইয়েই নতুন নতুন কবি হয়ে হাজির হয়েছেন। তিনি তার পাঠককে যে কোনো বই দিয়ে তাকে পড়া শুরু করতে বলেছেন। তিনি কবি জীবন হিসাবে খুবই সাধারণ একটা জীবন কাটিয়েছেন। বাসা, বাগান আর কয়েকটা পড়ার বই নিয়ে তার জীবন। নোবেল পাওয়ার আগেই গুরুত্বপূর্ণ সব পুরস্কার তিনি পেয়েছিলেন। আমেরিকান কবিতায় যে ইউরোপ আছর, তার বাইরে তার কবিতা। এজরা পাউন্ড, উইলিয়াম কারলোস উইলিয়াম বা জর্জ ওপেন এদের কবিতা যারা পড়েছেন, তারা জানেন লুইস গ্লুক হলো আমেরিকান লিটারেচারের নতুন কণ্ঠস্বর। তিনি কবিতায় বিকল্পের সন্ধান দিয়েছেন পাঠককে। কবিতার চলমান প্রবণতাকে ভেঙে দিয়ে যারা নিজের ভূখণ্ডের ভাষা, চিন্তা, দর্শন তৈরি করতে পারেন তাদের সংখ্যা খুব বেশি থাকে না দুনিয়ায়। অতি গম্ভীর কবিতার বিপরীতে উইট ও হিউমার দিয়ে তার কবিতা সাজানো। সম্ভবত গ্লুক হলো সেই কবি, যিনি নিজের অনুভূতিকে যথার্থভাবে উপস্থাপন করতে পেরেছেন নিজের সমাজের কাছে। তিনি অসামাজিক কোনো লেখক নন। তিনি তার লেখা দিয়ে পাঠকের সাথে সর্বদা যুক্ত থাকতে চেয়েছেন—প্রবলভাবে উপস্থিতির মাধ্যমে। নিজের জনপদের মানুষের যে মানসিক যাতনা তার পয়েটিক ফর্ম হলো তার লেখা। ভাষা প্রধান, ব্যক্তিহীন যে নৈর্ব্যক্তিক কবিতা চর্চা ছিল আমেরিকান কবিতায়, তার বিপরীতে গ্লুকের কবিতায় একজন ব্যক্তির উপস্থিতি দেখা যায়।
আমাদের এই বাস্তবতা থেকে গ্লুকের কবি সত্তাকে ধরতে পারা সহজ না। আমরা আসলে আমেরিকান পোয়েট্রি বলতে যা বুঝে থাকি তা মূলত খুবই সেকেলে একটা ব্যাপার। আমাদের আন্তর্জাতিক কবিতা মাপার ফিতের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ খুব বড় না। ফলে, এর বাইরের কিছু দেখলেই আমরা বলে ফেলি, বিলো স্ট্যান্ডার্ড। কিন্তু সময় ও বাস্তবতা যে বদলে গিয়েছে তা ধরতেই পারি না। আমাদের সেকলে কবিতা বোঝার বোধ দিয়ে লুইস গ্লুকের কবিতা ধরা যাবে না। বুঝতে চাওয়া ঠিক হবে না। সাহিত্যকে ভালো বা মন্দের এই লিনিয়ার হিসাব দিয়ে বোঝার সুযোগ নাই।
এই কথাগুলো আমাদের সাহিত্য বাস্তবতার জন্যও প্রযোজ্য। নতুন যেকোনো আর্ট ফর্মকে খুব সন্দেহের চোখে দেখা হয়। গ্লুককে বোঝার জন্য আত্মদৃষ্টি পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে আমাদের নতুন সাহিত্যকে বোঝার একটা প্রণোদনা এখানে তৈরি হতে পারে।
লুইস গ্লকের একটা কথা দিয়ে তার আলোচনা শেষ করি। তিনি মনে করেন, কবি হয়ে ওঠার জন্য প্রতিভা থাকাটা জরুরি কিছু না। ভেতরে তীব্র ক্ষুধার সাথে সাথে প্যাশন থাকা চাই যা লেখককে ৫০ বা ৬০ বছর লিখে সচল থাকার প্রণোদনা দেবে। যে তরুণ কবির ভেতর এই ক্ষুধা নেই সে লিখতে পারবে না কোনোভাবেই। সব সময় যেন বিকল্প পথটা খোলা রাখে লেখকরা।
৩.
প্রায়শ শোনা যায় এই দেশে এত প্রতিভাবান লেখক থাকার পরও নোবেল কেন দেওয়া হয় না। এই কথা খুবই আপত্তিজনক আমার কাছে। আমাদের আধুনিক সাহিত্যের যে উৎসমূল তা উইরোপীয় নিম্নমানের সাহিত্য-ঘরানার বাইরের কিছু না। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে এগুলোর মূল্য আমাদের কাছে আছে। প্রয়োজনও আছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে যার মূল্য শূন্য প্রায়। ফলে, নিজেদের কালচারাল টেরিটরির ভেতর এগুলোর আরো বেশি মূল্য আমরা তৈরি করতে পারলাম কিনা সেটাই প্রশ্ন।
দীনেশ চন্দ্র সেনের যে বৃহৎ বঙ্গের সংস্কৃতি হিন্দুকুশ পর্বত থেকে শ্রীলংকা পর্যন্ত বিস্তৃত। বুদ্ধও এই বৃহৎ বাংলারই লোক। তো এই বৃহৎ বাংলায় যে লোক আছে তা ইউরোপ আমেরিকার লোক সংখ্যা থেকে বেশি। এত বড় সংস্কৃতির বাজারে আমরা নিজেদের পণ্য বিক্রি করতে পারলাম না। বাংলা, হিন্দি ও উর্দু একই মাটির পেটের ভাই। সাংস্কৃতির সাদৃশ্য থাকার পরও একটা ভাষাকে আরেকটা ভাষার শত্রু করে তুলেছি আমরা। কিন্তু উচিত ছিল যার যার পৃথকত্ব নিয়ে বিরাট এক যৌথ সম্মেলন। এটা আমরা তৈরি করতে পারতাম রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সদিচ্ছা দিয়ে।
মিলান কুন্ডেরা চেক লেখক। তিনি চেক ভাষাতেই তার লেখালেখি শুরু করেছিলেন। তাকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল তার সাহিত্যের ভূমিটা কোথায়। তিনি বলেছিলেন তিনি বৃহৎ ইউরোপীয় সাহিত্যেরই অংশ। এই যে নিজেকে বড় একটা কালচারের অংশ হিসাবে দেখতে পারার সক্ষমতা তা আমাদের লেখকদের ভেতর নেই। আমারা লেখক মানেই কুয়ার ব্যাঙ। নিজেদের চিন্তাকে প্রমিত, অপ্রমিত, ঢাকা, আসামি, কলকাতা, সনাতন, আধুনিক ইত্যাদি ছোট ছোট রেজিস্টারে আবদ্ধ করে রেখেছি।
বৃহৎ বঙ্গের সম্মিলিতের বোধ জাগ্রত না হলে আমাদের পশ্চিম পানে তাকিয়ে থাকতে হবে শতকের পর শতক। প্রতি বছর অক্টোবরে সাহিত্যে নোবেল ঘোষণা এই বার্তাই দেয় আমাদের।
মৃদুল মাহবুব: কবি ও প্রাবন্ধিক
নওগাঁর পত্নীতলা সীমান্ত দিয়ে ১৬ বাংলাদেশি নাগরিককে পুশইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। শুক্রবার বেলা ১১টায় নওগাঁর পত্নীতলা ১৪ বিজিবির ক্যাম্প থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
এর আগে ভোরে উপজেলার শীতলমাঠ বিওপির সীমান্ত পিলার ২৫৪/১-এস এর কাছ দিয়ে তাদের বাংলাদেশে পুশইন করা হলে বিজিবি সদস্যরা তাদের আটক করে।
আটককৃতরা হলেন- নাটোর জেলার মোতালেব শেখ (৪৫), শফিকুল ইসলাম (৩৫), মজনু বিশ্বাস (৪৮), নয়ন খাঁ (২৫), মুকুল শেখ (২৫), মৃধুল শেখ (২০), সামির (১১), বিনা খাতুন (২৯), মিম (৮), মরিয়ম খাতুন (১০), রোজিনা খাতুন (১৮), মিরা খাতুন (৮ মাস), এলিনা খাতুন (২৮), জান্নাতুল সরকার (১০), জোছনা বেগম (৫০) এবং পাবনা জেলার মিরাজ শেখ (১৮)।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়- ভোরে পত্নীতলা ১৪ বিজিবির শীতলমাঠ বিওপির সীমান্ত পিলার ২৫৪/১-এস এর কাছ দিয়ে তাদের পুশইন করে। পরে বিজিবির টহল দল ঘুরকী গ্রামের পাকা রাস্তা সংলগ্ন চা দোকানের পাশে ঘোরাফেরা করতে দেখে তাদের আটক করে। আটকদের মধ্যে সাতজন পুরুষ, পাঁচ শিশু ও চারজন নারী।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়- আটককৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় তারা বেশ কয়েক বছর পূর্বে রাজশাহী সীমান্ত দিয়ে ভারতে গিয়েছিল। আটকের পর তাদেরকে পত্নীতলা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম নয়ন বলেছেন, ‘বিএনপি যদি মানুষের ভালোবাসার ম্যান্ডেট নিয়ে জনগনের সরকার গঠন করতে পারে, তাহলে এ দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ শিক্ষা অর্জনে সহায়তা করবে। বিশেষ করে দেশ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তার শাসনামলে নারী শিক্ষায় অগ্রাধিকার দিয়েছেন। শুক্রবার ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের উদ্যোগে ব্রজগোপাল টাউনহলে এসএসসি/ দাখিল পরীক্ষায় ১১০ জন কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
যুবদল নেতা নুরুল ইসলাম নয়ন বলেন, ‘শহীদ রাষ্ট্রপ্রতি জিয়াউর রহমান এ দেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষায় আলোয় আলোকিত ও নিরক্ষরতা দূরীকরণের জন্য তার জীবদ্দশায় নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় দেশ নায়ক তারেক রহমান রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য যে ৩১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন, তার মধ্যে শিক্ষার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।’
এ সময় চরফ্যাশন উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি কয়ছর আহমেদ কমল, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোফরান মহাজন, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী মঞ্জুর হোসেন, পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক খায়রুল ইসলাম সোহেল, ভোলা জেলা বিএনপির সদস্য মমিনুল ইসলাম ভুট্টু, চরফ্যাশন উপজেলা বিএনপির সাবেক যুব বিষয়ক সম্পাদক আহসান উল্যাহ বাহার, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক হুমায়ুন কবির সিকদার, চরফ্যাশন প্রেসক্লাব সভাপতি জুলফিকার মাহমুদ নিয়াজ, উপজেলা বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক কামাল গোলদার, উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব জাহিদুল ইসলাম রাসেল, পৌর যুবদলের আহ্বায়ক আবু বকর সিদ্দিক মিলটন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও শিক্ষক প্রতিনিধি ও অবিভিাবকরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন, চরফ্যাশন উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের সদস্য আরিফুর রহমান জুয়েল। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে কেন্দ্রীয় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়নের হাত থেকে এসএসসি/ দাখিল ২০২৫ জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতি শিক্ষার্থীরা সম্মননা স্মারক গ্রহণ করেন।
ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে টানা ১২ দিন সংঘাতের পর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। এই সংঘাতে ইরান ও ইসরায়েল উভয় পক্ষই ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে আদতে ইসরায়েলের পরাজয়ের সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন সামরিক পরাজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, দেশটি সহায়তা দিতে গিয়ে উন্নত মানের প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র (থাড) হারিয়েছে।
বৃহস্পতিবার মেহের নিউজ এজেন্সির প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের প্রকাশিত নথি থেকে জানা যায়, ইরানের বিরুদ্ধে ১২ দিনের ইসরায়েলি আগ্রাসনের সময় ওয়াশিংটন তেল আবিবকে সহায়তা দিতে গিয়ে প্রায় ৫০ কোটি ডলারের উন্নত মানের প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র হারিয়েছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের বলছে, এ নিয়ে সম্প্রতি পেন্টাগনের বাজেট নথি প্রকাশিত হয়েছে, যা বেশ কয়েকটি মার্কিন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে।
ইসরায়েলের একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সদ্য প্রকাশিত পেন্টাগনের বাজেট নথিতে দেখা গেছে, গত জুনে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধের ১২ দিনে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পক্ষে মোট প্রায় ৫০ কোটি ডলার মূল্যের ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।
সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ওয়ার জোন’ এবং ‘বিজনেস ইনসাইডার’এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, নথিগুলোর একটিতে ৪৯৮ দশমিক ২৬৫ মিলিয়ন ডলার জরুরি তহবিল চাওয়া হয়েছে, যা দিয়ে থাড ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা প্রতিস্থাপন করা হবে।
নথিতে আরও বলা হয়েছে, এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরাইলকে সমর্থন দিতে ব্যবহার করা হয়েছিল। ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের ওই ১২ দিনের আক্রমণে যুক্তরাষ্ট্র ‘১০০ থেকে ১৫০টি থাড ক্ষেপণাস্ত্র’ নিক্ষেপ করেছে।
এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো প্রতিস্থাপনের জন্য আরও বাজেট বরাদ্দ করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে।
শারদীয় দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা। মাটির কলস, থালা, বাটি, প্রদীপ, গ্লাস কিংবা নানা ধরনের পুতুল—সবই তৈরি হচ্ছে দিন-রাতের শ্রমে। পূজার সময় ঘনিয়ে আসতেই বেড়েছে অর্ডার, বেড়েছে কর্মব্যস্ততাও।
উপজেলার সন্ধ্যানী এলাকার কুমারপাড়ায় এখনো নয়টি পরিবার জীবিকার তাগিদে টিকে আছে এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পের সঙ্গে। একসময় সারাবছর মৃৎশিল্পের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও বর্তমানে প্লাস্টিক সামগ্রীর দাপটে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে মাটির তৈরি জিনিসপত্র।মাটি-জ্বালানির দাম বাড়ায় কষ্টে মৃৎ শিল্পীরা।
সরেজমিনে সদর ইউনিয়নের কুমারপাড়া ঘুরে দেখা যায়, রোদ না থাকায় ঘরের ভেতরে ফ্যান চালিয়ে শুকানো হচ্ছে সদ্য তৈরি মাটির কলস, থালা আর প্রদীপ। পুরুষ ও নারী মৃৎশিল্পীরা কেউ মাটির কাজ করছেন, কেউ পূজাকে কেন্দ্র করে রং তুলির আঁচড়ে সাজাচ্ছেন নানান ধরনের পণ্য।
মৃৎশিল্পী জ্যোতির্ময় পাল বলেন, ‘দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে আমরা দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছি। কলস আর থালার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। তবে মাটি ও জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় খরচ সামলে লাভ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তবুও এই শিল্পকে ধরে রাখতে আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।’
নারী মৃৎশিল্পী বীনা রানী পাল বলেন, ‘আমরা শুধু মাটির জিনিসপত্র বানাচ্ছি না, দেশের ঐতিহ্যকেও বাঁচিয়ে রাখছি। অনেক নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে এই কাজে যুক্ত করেছি। তারা সংসারে আর্থিকভাবে সহায়তা করতে পারছে। কিন্তু মূলধন ও সরকারি সহযোগিতা ছাড়া এই শিল্প টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।’
তিনি আরও জানান, প্লাস্টিকের দাপটে মাটির পণ্যের বাজার অনেকটাই কমে গেছে। তাই টিকে থাকতে তারা এখন দইয়ের বাটি, কাপ, চামচের মতো নতুন নতুন পণ্য বানাচ্ছেন। কিন্তু মূলধনের অভাবে উৎপাদন সীমিত হয়ে পড়ছে। ঐতিহ্য রক্ষায় সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।
নাগরদোলা থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক শিমুল তরফদার বলেন, ‘গ্রামীণ ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো মৃৎশিল্প। কিন্তু মূলধন ও সহযোগিতার অভাবে একে একে অনেক শিল্পী এই পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন। এখনই সরকারি সহায়তা, প্রশিক্ষণ ও সহজ ঋণের ব্যবস্থা না করলে এই শিল্প বিলীন হয়ে যাবে।’
একসময় গ্রামবাংলার প্রতিটি ঘরে অপরিহার্য ছিল মাটির থালা-বাটি। বিশেষ করে দুর্গাপূজা বা অন্যান্য ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে মাটির কলস, প্রদীপ কিংবা পাত্রের বিকল্প ছিল না। এখনো সেই চাহিদা পুরোপুরি হারিয়ে যায়নি। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে গেছে প্লাস্টিকের ভিড়ে কবে পর্যন্ত টিকে থাকবে এই ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প?
ফলক উন্মোচনের মধ্য দিয়ে ৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের নতুন ভবনে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার ফলক উন্মোচন করে মেহেরপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের নতুন ভবনে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
ফলক উন্মোচন শেষে নতুন ভবনে আয়োজিত উদ্বোধন উপলক্ষে আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টার একান্ত সচিব মনির হায়দার।
এ সময় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য বিভাগের সচিব সাইদুর রহমান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমান, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব আইএমইডি কামাল উদ্দিন, স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর, খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক মুজিবুর রহমান, মেহেরপুর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মুনজুর আহমেদ সিদ্দীক, মেহেরপুর সিভিল সার্জন ডা.একেএম আবু সাঈদ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আইএমইডি সচিব মো. কামাল উদ্দিন, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মো. ফিরোজ সরকার, ঢাকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর, খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি মো. রেজাউল হক, খুলনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত (স্বাস্থ্য) পরিচালক ডা. মো. মুজিবুর রহমান। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, মেহেরপুর জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা তাজ উদ্দিন খান, মেহেরপুর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি মাসুদ অরুন, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি আমজাদ হোসেন, মেহেরপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল হাসান, মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ আবদুল ছালাম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনজুর আহমেদ সিদ্দিকী, সিভিল সার্জন ডা. এ. কে. এম. আবু সাঈদ এবং হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শাহরিয়া শায়লা জাহান।
আলোচনা সভায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
দেশের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত মাদারীপুর জেলা ও এর পৌর শহর। ১৫০ বছর আগে ব্রিটিশ সরকারের আমলে ১৮৭৫ খৃষ্টাব্দে মাদারীপুর পৌরসভাটি গঠিত হয়- যা প্রায় ১১৬ বছর পরে এসে ১৯৯১ সালে প্রথম শ্রেণির পৌরসভার মর্যাদা পায়। সে সময় চেয়ারম্যান ছিলেন বীরমুক্তিযোদ্ধা খলিলুর রহমান খান। ১ম শ্রেণিতে উন্নীত হবার পরে এখানে পরবর্তীতে চেয়ারম্যান পদ বিলুপ্ত করে মেয়র পদ পুনর্বিন্যাস করা হয়। এরপর জেলা আ. লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খালিদ হোসেন ইয়াদ পরপর ৩ বার মেয়র পদে নির্বাচিত হয়ে টানা ১৫ বছর অপ্রতিরোধ্য মেয়র হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তার আমলেই সবচেয়ে বেশি পৌরসভার সরকারি খাল-দখল ও নাজুক অবস্থায় চলে যায়। ফলে শহরের ড্রেনেজ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা সংকোচিত হয়ে জলাবদ্ধতায় ভোগান্তিতে পড়েন এ শহরের নাগরিকরা। আর ভোগান্তি থেকে উত্তরণের জন্য যুগের পর যুগ অপেক্ষা করেও অবসান ঘটেনি। আজো উদ্ধার হয়নি দখল হওয়া খালগুলো। জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তির একমাত্র পথ সরকারি খাল উদ্ধার করা।
এলাকাবাসী বলেন, সাবেক পৌর মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদের কাছে পৌর নাগরিকদের সেবার চাইতে তার কাছে মূখ্য হয়ে উঠেছিল আওয়ামী দলীয় ও রাজনীতিকীকরণ। আর এজন্য প্রভাবশালীদের দখলে চলে যেতে থাকে শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট-বড় খালগুলো।
দখলদার প্রভাবশালীদের মধ্যে সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান (বর্তমানে কারা অন্তরীণ) ও তার পরিবারবর্গ প্রথমে তাদের বাসার সম্মুখ দিয়ে বয়ে চলা শকুনী-ইটেরপোল-গোপালপুর খালের অংশ দখল করে পাকা স্থাপনা তৈরি করেন এবং এরপর থেকেই শুরু হয় খাল দখলের মহা-উৎসব। এরমধ্যে আড়িয়ালখাঁ নদী থেকে শুরু করে শহরের মধ্য দিয়ে তৈরী হওয়া ষ্টেডিয়ামের পূর্বপাশ ঘেষে হরিকুমারিয়া-হাজিরহাওলা-রানাদিয়া খাল, শকুনী খাল, ইটেরপোল-ছয়না-গোপালপুর খাল, গৈদী খাল, কলেজ রোড হয়ে আমিরাবাদ খাল, কুলপদ্দি খাল, মহিষেরচর খাল কৌশলে দখল করে।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সারাবছরই এসব খালে জোয়ার-ভাটার পানি থাকতো। এসব খালের পানি কৃষকের সেচকার্যে ব্যবহৃত হতো। এসব কারণে কখনোই জলাবদ্ধতা তৈরি হতো না মাদারীপুর শহরে। ওইসব খালে সারাবছরই দেশী মাছ শিকার করত মানুষ। প্রভাবশালীদের দখলের কারণে অস্তিত্ব হারানো এসব খালের মধ্যে দুয়েকটির উপর দিয়ে পানি নিষ্কাশনের ড্রেন তৈরি হলেও এসব ড্রেনের বেশিরভাগই অকেজো হয়ে পড়েছে। এলাকাবাসী বলছেন, বেশীরভাগ সরকারি খাল আজো উদ্ধার করতে পারেনি পৌরসভা। সামান্য বৃষ্টি হলেই এসব ড্রেনে পানি ও ময়লা-আবর্জনা আটকে যায় এবং জলাবদ্ধতায় সীমাহীন দূর্ভোগে পড়েন পৌরবাসি।
এদিকে, ৫ আগষ্ট পরবর্তী সময়ে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে হত্যা-দুর্নীতির মামলার আসামিসহ অন্যান্য মামলার আসামী হয়ে বাহাউদ্দীন নাসিম দেশের বাইরে পালিয়ে যান ও তার সহোদর সাবেক মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদ অজ্ঞাত স্থানে গা-ঢাকা দিয়েছেন। এরপর এখানে মেয়র পদ ও পৌর নাগরিক সেবার শূন্যতা ও বিড়ম্বনার তৈরি হলে পৌর নাগরিকেরা পড়েন বিপাকে। দৈনন্দিন নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হতে থাকে মানুষ। পৌর এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা, পয়ঃনিষ্কাশন, ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার, মশক নিধন, পানি সঞ্চালন, জলাবদ্ধতা ইত্যাদিতে নাজুক অবস্থার তৈরি হয়। এরই প্রেক্ষিতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে এখানে পৌর প্রশাসক হিসাবে উক্ত মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হাবিবুল আলমকে পদায়ন করেন। //
পৌর প্রশাসকের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে তার আন্তরিক প্রচেষ্টা, দিনরাত পরিশ্রমের ফলে নাগরিক সেবা বৃদ্ধি পেতে থাকে। সরকারী খাল উদ্ধার, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, মশক নিধন, পয়ঃনিষ্কাশন ইত্যাদি প্রসঙ্গে সরাসরি তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন যে, আমরা সরকার সব খালের পাশ থেকে অনেক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছি, অনেকে তা সরিয়েও নিয়েছেন, ইটেরপোল-ছয়না-গোপালপুর খালের কিছু অংশে আমরা খনন কাজও চালিয়েছি, ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদের মশক নিধন টিম প্রতিদিন কোনো না কোনো এলাকায় ঔষধ ছিটাচ্ছে, যে কারণে মাদারীপুর পৌর এলাকায় এবার ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব কম। জলাবদ্ধতা ও ময়লা-আবর্জনা থেকে পৌরবাসিকে রক্ষার জন্য আমাদের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা প্রতিদিনই কোনো না কোনো ড্রেণ পরিস্কার করছে, ময়লা-আবর্জনা সরিয়ে নিচ্ছে। আমরা নিজেরাও রাতদিন তা তদারকি করছি। অপ্রতুল জনবল ও সরকারী অর্থ বরাদ্ধের সীমবদ্ধতা সত্বেও আমরা দিনরাত কাজ করছি। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান আমাদের চলমান রয়েছে এবং এটা আরো গতিশীল করা হবে, যতই প্রভাবশালী হোক না কেনো- দখল হওয়া সরকারী খালগুলো উদ্ধারেও আমাদের বিভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে।
আমার ছেলের লাশ ফেরত চাই। আমার বুকের ধনকে আইনা দেন। ওরে ছাড়া আমি কি করে বাঁচব? বুক চাপরে কাঁদতে কাঁদতে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ইরাক প্রবাসী নিহত আজাদ খান (৪৭) এর অসহায় মা।
নিহত আজাদ খান রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের হোসেন মন্ডল পাড়া গ্রামের ইয়াজ উদ্দিনের ছেলে। মাত্র তিন মাস আগে দালালের মাধ্যমে ইরাক গিয়ে তিনি মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের শিকার হন।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত তিন মাস আগে আজাদ ধারদেনা করে ইরাক যান। এক সপ্তাহ আগে ইরাকের বাগদাদ শহর থেকে সে নিখোঁজ হয়। এর মধ্যে তার কোন সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। গত ১৮ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে লিটন নামে অপর এক ইরাক প্রবাসী ফোন করে আজাদের পরিবারকে জানান, আজাদকে হত্যা করে ৩ টুকরো করে লাশ বস্তায় ভরে ময়লার ভাগারে ফেলে রাখা হয়। শহরের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা ময়লা পরিস্কার করতে এসে লাশের দুর্গন্ধ পায়। এ সময় তারা বস্তার মুখ খুলে দেখে মানুষের লাশ। তখন তারা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে লাশ তাদের হেফাজতে নেয়।
আজাদের স্ত্রী ময়না বেগম জানান, স্বামীকে বিদেশ পাঠিয়ে আমাদের পরিবার একদম নিঃস্ব হয়ে গেছে। অনেক ধারদেনা করে আমার স্বামীকে বাবুলের মাধ্যমে ৩ মাস আগে ইরাকে পাঠাই। তার যে কাজ দেয়ার কথা ছিলো বাবুল তাকে সেই কাজ না দিয়ে অন্য একটি কাজে দেয়। আমার স্বামী বাবুলের সাথে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করে। কিন্তু বাবুল তার কোনো ফোন ধরেনি। বাবুল তার ফোন ধরলে হয়তো আজ আমার স্বামীর এই করুন পরিনতি হতো না। আমি আমার স্বামীর হত্যার বিচার চাই।
এ বিষয়ে ইরাক থেকে মুঠোফোনে বাবু্ল জানান, আমি ওর যেখানে গিয়ে ছিলাম সেখান থেকে কুমিল্লার সোহাগ নামে একটি ছেলে তাকে নিয়ে অন্য জায়গায় একটি দোকানে কাজে দেয়। সেই দোকানের মালিক (কফিল) আজাদকে তার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে কয়েকদিন ধরে বাড়িঘরের ময়লা ও আশপাশ পরিস্কার করায়। এর মধ্যে আমি সোহাগকে ফোন করে আজাদের খবর জানতে চাই। সোহাগ আমাকে জানায়, আজাদ কফিলের বাসায় আছে। আজ শুনতে পাচ্ছি আজাদকে হত্যা করে লাশ তিন টুকরো করে ফেলা হয়েছে। আমরা ইরাকের বাংলাদেশ এম্বাসিতে বিচার দিয়েছি। অ্যাম্বাসির লোকজন সহ আমরা সেখানে যাচ্ছি। আজাদের লাশ বাগদাদের একটি মর্গে রাখা হয়েছে।
নিহত আজাদের শ্যালক জহরুল হক বাপ্পি মুঠোফোনে জানান, আজাদ আমার দুলাভাই (চাচাতো বোন জামাই)। আমি বাংলাদেশ দূতাবাস, ইরাক সচিবের সাথে কথা বলেছি, আজাদ ভাইকে মেরে ফেলে কয়েক টুকরো করা হয়েছে শতভাগ সত্য। মরদেহ ইরাকে মর্গে আছে। আগামী রবিবার আজাদের হত্যাকারী আসামী কফিলকে কাজুমিয়া আদালতে তোলা হবে। তিনি আরও জানান, আজাদ ভাইয়ের লাশ দেশে আনার চেষ্টা চলছে।
মন্তব্য