দেশে লেখক, বোদ্ধা, চিন্তাশীল মানুষ ও পাঠকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। পুস্তক প্রকাশ ও লেখালেখির মাধ্যম বিকশিত হয়েছে প্রত্যাশার অধিক। মানুষের ভেতর আগের থেকে অনেক বেশি টেক্সট পড়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। মানুষ এখন অনেক বেশি অক্ষর ও শব্দের সাথে সম্পৃক্ত। ফলে আমরা ধরে নিতে পারি ঢাকার সাহিত্য ইন্ডাস্ট্রির কলেবর অনেক বড়। এত বড় একটা সমাজে প্রতিবছর নিশ্চয় কোনো না কোনো বড় ঘটনা ঘটবে। অথচ গত বিশ বছরের এই সুবিশাল সাহিত্যপল্লিতে আমরা কোনো বই, লেখক বা সাহিত্য সংশ্লিষ্ট ঘটনা নিয়ে উদ্বেলিত হয়েছি বলে মনে পড়ে না।
ঢাকায় শিল্প-সাহিত্য সমাজকে নিস্তরঙ্গই বলা যায়। বেশ একটা নিরীহ চেহারায় সারা বছর চুপচাপ, ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণচালে লেখক-চিন্তকরা বই-পুস্তক লেখেন। যার অধিকাংশ প্রকাশিত হয় ফেব্রুয়ারির বইমেলায়। নিস্তরঙ্গ বছরের এই একটা মাসে কিছুটা চাঞ্চল্য দেখা দেয় বিদ্বৎ সমাজে।
সোজা কথা হলো, ঢাকার সাহিত্য নিয়ে সমাজে আদতে কোনো হৈচৈ, কথাবার্তা এবং উচ্চাশাও নেই বললে চলে। হৈচৈকে সাহিত্য না বলুন, কিন্তু একটা দেশের সাহিত্য টিকে থাকার জন্য তা লাগে। সেলিব্রেশন, উৎসব এগুলো খুব প্রয়োজনীয় ঘটনা। যা নিয়ে উৎসাহ উদ্দীপনা নেই, তার প্রয়োজনীয়তাও সমাজে নাই।
তবে আমাদের এই নির্লিপ্ত সাহিত্য সমাজে বছরে একটা সরবতা আসে, অক্টোবর মাসে। নোবেল পুরস্কার ঘোষণার সাথে সাথে। মরা নদীতে বান আসার মতো। এই সরবতা প্রধানত তিনভাবে দেখা যায়।
এক. কে, কাকে, কবে পড়েছে, কতটা পড়েছে এগুলো নিয়ে একটা প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়। কেউ হয়তো বলবেন, তিনি ওই লেখকের লেখা সাত-আট বছর আগে থেকেই পড়ছেন। পড়ে থাকলে ভালো। তবে তিনি সাত-আট বছর আগে সেই লেখককে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার আত্মবিশ্বাস পান নাই। আমরা কী বুঝব! সাহিত্য সমাজে নিজেকে নানাভাবে ঝুলিয়ে রাখতে হয়। হয়তো আপনি গুন্টারগ্রাসের লেখা পড়েছেন। পড়তেই পারেন। তবে তা আপনার বাংলা সাহিত্যের জন্য তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো ঘটনা না। আপনি ফোর্ট উইলিয়াম পূর্ববর্তী বাংলা সাহিত্যের খোঁজ রাখেন কিনা তা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
দুই. একটা লেখক-শ্রেণি আছে যারা গুগল মেশিনের চেয়েও ফাস্ট বঙ্গানুবাদ করে ফেলে। কবিতা হলে তো কথাই নেই। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা খুব গুরুত্বসহকারে তা ছেপেও দেয়। তাদের অনুবাদের সুবাদে আপনি যা পড়বেন, তা পড়ে মনে হবে, ‘এর চেয়ে আমি ভালো লিখি বা বাংলা সাহিত্যে এরচেয়ে ভালো লেখক আছে। এমন বাজে লেখক নোবেল পেল? হায়!’ একটা ভাষা থেকে অন্য ভাষায় অনুবাদের আগে সেই ভাষা, দেশ ও কালের দার্শনিকতা জানা লাগে। ধরেন আপনি জার্মানি ভাষা শিখলেন। কিন্তু ওই ভাষার দর্শনটা, দেশ-কাল না জানলে আপনার কাছে ‘ফাউস্ট’ একটা মামুলি লেখা লাগবে। অনেক কিছু ধরাই যাবে না। উপমহাদেশ ও তার বাস্তবতা না জানলে মনে হবে ‘রক্তকরবী’ এমন আর কী! এই জাতীয় অনুবাদে আসলে ‘আই’-এর পরিবর্তে ‘আমি’ বসানো হয়। ফলে সত্তা ও ভাষার ব্যাপক অর্থটা অধরাই থেকে যায়। ভাষা শুধু চিহ্ন ব্যবস্থা না, ভাষার মিনিং আবহমানতার সাথে সংশ্লিষ্ট। এই রকম অনুবাদ করা মূলত একটা ইভেন্টের দর্শক হিসাবে নিজেকে রেজিস্টার করে মাত্র। একজন বড় লেখক অনুবাদক মানে তিনি তার সারা জীবনটা উৎসর্গ করে দিলেন। তার নিজের সাহিত্য হয় না। বিরাট বড় বলিদান এটা। সারা জীবন আর কিছু না করে ওই লেখকের লেখাই অনুবাদ করে থাকেন। মুরাকামির অনুবাদক মনে হয় তিনজন। তারাই তার লেখা অনুবাদ করেন সাধারণত। মূলত লেখক ও ভাষা বুঝতেই তাদের এই সাধনা। জি এইচ হাবীবের উমবর্তো একোর দ্য নেম অব রোজেজ অনুবাদ করতে প্রায় পনেরো বছরের বেশি সময় লেগেছে বলে শুনেছি।
তিন. সাহিত্য সমাজের একটা ব্রাহ্মণ সম্প্রদায় আছে যারা, নামের উচ্চারণ, শুদ্ধতা ইত্যাদির ভেতর দিয়ে নিজেদের জানা-বোঝাটা জানান দেবে সমাজে। তো একজন বিদেশি লেখকের নামের শুদ্ধ উচ্চারণ দিয়ে কী হবে! ঠাকুরকে টেগর বলার পরও পশ্চিমের কেউ নিশ্চয়ই পুরো ইউরোপকে মূর্খ বলে গালি দিয়ে বলে নাই, ‘ডেয়ার ব্রো, তোমরা সকলে মূর্খের মতো ঠাকুরকে টেগর বলছ কেন? আমাদের মান থাকবে না ভারতের কাছে।’ ঠাকুরকে টেগর বললেও তাদের তা বুঝতে সমস্যা হয় নাই নিশ্চয়ই। নামের বিশুদ্ধতা শুদ্ধতার কঠোরতম সাধনার পথের পথিকরা বিদেশি সাহিত্যের অন্তরটা এখানে না নিয়ে এসে, এর খোলসটা নিয়ে নাড়াচাড়া করেন। ফেক রোলেক্স হাতে দিয়ে তারা রোলেক্স ক্লাবের সফল সদস্য হয়ে সমাজে সমীহ আদায় করে।
এই হলো ঢাকা সাহিত্যে অক্টোবর বাস্তবতা। প্রতি বছরই একই ঘটনা ঘটে। বিপুল এক নোবেল মুগ্ধতা নিয়ে আমরা আমাদের সাহিত্য জীবন পার করি।
২.
মার্কিন কবি ও প্রাবন্ধিক লুইস গ্লুক এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। এর বাইরে আর বাকি পরিচয় পাঠক হিসাবে নানা মাধ্যমে জেনে গিয়েছেন। ফলে, পরিচয় পর্বে আমি আর গেলাম না। ২০১২ সালে দেওয়া একটা ইন্টারভিউতে গ্লুক বলছিলেন তার লেখক হয়ে ওঠার গল্প। তার বাবার লেখক হওয়ার বাসনা ছিল। আগ্রহ ছিল ইতিহাস ও রাষ্ট্র শাসননীতি নিয়ে। পরবর্তী সময়ে ব্যবসায় সাফল্য আসার সাথে সাথে তার সেই লেখক হয়ে ওঠার বাসনা শেষ হয়ে যায়। তার মায়ের সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা ছিল। লেখালেখির একটা আবহ থাকার কারণে মাত্র পাঁচ-ছয় বছর বয়স থেকেই সে ও তার বোন বই লেখার সুযোগ পেয়েছে। কাগজে গল্প লিখে নিজের মতো ইলাস্ট্রেশন করত তারা। ছোটবেলায় পরিবার থেকে দারুণ সহযোগিতা পেয়েছেন তিনি। টিনএজের প্রথম দিকেই সে নিজের প্রথম বইয়ের ড্রাফট তৈরি করে ফেলেছিলেন। তা অবশ্য প্রকাশিত হয়নি।
গ্লুক থিয়েটারে নাম লিখিয়েছিলেন। তার মার ঘোর আপত্তি ছিল তাতে। মা তাকে বারবার বলত তুমি একজন অসম্ভব ভালো লেখক ও শিল্পী। থিয়েটারের মতো হালকা বিষয় তোমার জন্য না। এ নিয়ে মা মেয়ের দারুণ দ্বন্দ্ব ছিল। থিয়েটার সে ছেড়ে দেয়। তার বয়ঃসন্ধিকালটা যে খুব ভালো কেটেছে তা নয়। ষোল বছর বয়সে তিনি অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসা বা ক্ষুধাহীনতা রোগে আক্রান্ত হন। এটা একটা মানসিক রোগ। এই রোগে আক্রান্তরা নিজের ওজন কমাতে, খাওয়া বিষয়ে এতটাই সংবেদনশীল হয়ে ওঠে যে কিছুই খেতে চায় না তারা। এক সময় খাওয়া বন্ধ করে দেয়। ফলে, মৃত্যুর আশঙ্কা বাড়ে ওই রোগীর। তারা নিজেদেরকে সকল থেকে খুবই আলাদা করে দেখে। এই রোগের কারণে গ্লুকের স্কুলিং বন্ধ হয়ে যায়। সাত বছর তিনি নিয়মিত মনোবিদের সাহায্য নিয়েছেন। সাক্ষাৎকারে গ্লুক বলেছিলেন, তার মায়ের সাথে তার সম্পর্কের টানাপোড়ন এই রোগের একটা কারণ হতে পারে। তার মার তাকে নিয়ন্ত্রণ করার একটা প্রবণতা ছিল। তিনি সর্বদা এই নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকতে চেয়েছেন। তিনি তার দেহকে অপর আট-দশটা মানুষের দেহ থেকে আলাদা হিসাবে ভাবতেন। সে ভাবত তাকে পরিশুদ্ধ আত্মার মানুষ হতে হবে। তার আত্মাকে দেহ থেকে আলাদা করে দেখতে চাইতেন তিনি। সেই সময় তিনি কয়েকটি কবিতার ওয়াকশপে অংশ গ্রহণ করেছিলেন মাত্র। সাথে সাথে নিয়মিত সাইকো অ্যানালিসিস চলত। এই সাইকো অ্যানালিসিসের ভেতর দিয়ে তিনি আসলে নিজের চিন্তার পদ্ধতিটা আবিষ্কার করতে থাকেন। তীব্রভাবে কবিতা আঁকড়ে ধরেন। একটু একটু করে সুস্থ হওয়ার সাথে সাথে কবিতায় মিশে যান তিনি। কবিতাই হয় তার শেষ গন্তব্য।
লুইস গ্লুকের বয়স সাতাত্তর। দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরের কবি জীবনে বারোটা কবিতা আর দুটো কবিতা-বিষয়ক গদ্যের বই লিখেছেন। তিনি হলেন আমেরিকার জীবিত মুভিং পোয়েট। তিনি কখনো নিজের তৈরিকৃত লেখার কৌশল নিয়ে আঁকড়ে বসে থাকেননি। প্রতিটা বইয়েই নতুন নতুন কবি হয়ে হাজির হয়েছেন। তিনি তার পাঠককে যে কোনো বই দিয়ে তাকে পড়া শুরু করতে বলেছেন। তিনি কবি জীবন হিসাবে খুবই সাধারণ একটা জীবন কাটিয়েছেন। বাসা, বাগান আর কয়েকটা পড়ার বই নিয়ে তার জীবন। নোবেল পাওয়ার আগেই গুরুত্বপূর্ণ সব পুরস্কার তিনি পেয়েছিলেন। আমেরিকান কবিতায় যে ইউরোপ আছর, তার বাইরে তার কবিতা। এজরা পাউন্ড, উইলিয়াম কারলোস উইলিয়াম বা জর্জ ওপেন এদের কবিতা যারা পড়েছেন, তারা জানেন লুইস গ্লুক হলো আমেরিকান লিটারেচারের নতুন কণ্ঠস্বর। তিনি কবিতায় বিকল্পের সন্ধান দিয়েছেন পাঠককে। কবিতার চলমান প্রবণতাকে ভেঙে দিয়ে যারা নিজের ভূখণ্ডের ভাষা, চিন্তা, দর্শন তৈরি করতে পারেন তাদের সংখ্যা খুব বেশি থাকে না দুনিয়ায়। অতি গম্ভীর কবিতার বিপরীতে উইট ও হিউমার দিয়ে তার কবিতা সাজানো। সম্ভবত গ্লুক হলো সেই কবি, যিনি নিজের অনুভূতিকে যথার্থভাবে উপস্থাপন করতে পেরেছেন নিজের সমাজের কাছে। তিনি অসামাজিক কোনো লেখক নন। তিনি তার লেখা দিয়ে পাঠকের সাথে সর্বদা যুক্ত থাকতে চেয়েছেন—প্রবলভাবে উপস্থিতির মাধ্যমে। নিজের জনপদের মানুষের যে মানসিক যাতনা তার পয়েটিক ফর্ম হলো তার লেখা। ভাষা প্রধান, ব্যক্তিহীন যে নৈর্ব্যক্তিক কবিতা চর্চা ছিল আমেরিকান কবিতায়, তার বিপরীতে গ্লুকের কবিতায় একজন ব্যক্তির উপস্থিতি দেখা যায়।
আমাদের এই বাস্তবতা থেকে গ্লুকের কবি সত্তাকে ধরতে পারা সহজ না। আমরা আসলে আমেরিকান পোয়েট্রি বলতে যা বুঝে থাকি তা মূলত খুবই সেকেলে একটা ব্যাপার। আমাদের আন্তর্জাতিক কবিতা মাপার ফিতের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ খুব বড় না। ফলে, এর বাইরের কিছু দেখলেই আমরা বলে ফেলি, বিলো স্ট্যান্ডার্ড। কিন্তু সময় ও বাস্তবতা যে বদলে গিয়েছে তা ধরতেই পারি না। আমাদের সেকলে কবিতা বোঝার বোধ দিয়ে লুইস গ্লুকের কবিতা ধরা যাবে না। বুঝতে চাওয়া ঠিক হবে না। সাহিত্যকে ভালো বা মন্দের এই লিনিয়ার হিসাব দিয়ে বোঝার সুযোগ নাই।
এই কথাগুলো আমাদের সাহিত্য বাস্তবতার জন্যও প্রযোজ্য। নতুন যেকোনো আর্ট ফর্মকে খুব সন্দেহের চোখে দেখা হয়। গ্লুককে বোঝার জন্য আত্মদৃষ্টি পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে আমাদের নতুন সাহিত্যকে বোঝার একটা প্রণোদনা এখানে তৈরি হতে পারে।
লুইস গ্লকের একটা কথা দিয়ে তার আলোচনা শেষ করি। তিনি মনে করেন, কবি হয়ে ওঠার জন্য প্রতিভা থাকাটা জরুরি কিছু না। ভেতরে তীব্র ক্ষুধার সাথে সাথে প্যাশন থাকা চাই যা লেখককে ৫০ বা ৬০ বছর লিখে সচল থাকার প্রণোদনা দেবে। যে তরুণ কবির ভেতর এই ক্ষুধা নেই সে লিখতে পারবে না কোনোভাবেই। সব সময় যেন বিকল্প পথটা খোলা রাখে লেখকরা।
৩.
প্রায়শ শোনা যায় এই দেশে এত প্রতিভাবান লেখক থাকার পরও নোবেল কেন দেওয়া হয় না। এই কথা খুবই আপত্তিজনক আমার কাছে। আমাদের আধুনিক সাহিত্যের যে উৎসমূল তা উইরোপীয় নিম্নমানের সাহিত্য-ঘরানার বাইরের কিছু না। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে এগুলোর মূল্য আমাদের কাছে আছে। প্রয়োজনও আছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে যার মূল্য শূন্য প্রায়। ফলে, নিজেদের কালচারাল টেরিটরির ভেতর এগুলোর আরো বেশি মূল্য আমরা তৈরি করতে পারলাম কিনা সেটাই প্রশ্ন।
দীনেশ চন্দ্র সেনের যে বৃহৎ বঙ্গের সংস্কৃতি হিন্দুকুশ পর্বত থেকে শ্রীলংকা পর্যন্ত বিস্তৃত। বুদ্ধও এই বৃহৎ বাংলারই লোক। তো এই বৃহৎ বাংলায় যে লোক আছে তা ইউরোপ আমেরিকার লোক সংখ্যা থেকে বেশি। এত বড় সংস্কৃতির বাজারে আমরা নিজেদের পণ্য বিক্রি করতে পারলাম না। বাংলা, হিন্দি ও উর্দু একই মাটির পেটের ভাই। সাংস্কৃতির সাদৃশ্য থাকার পরও একটা ভাষাকে আরেকটা ভাষার শত্রু করে তুলেছি আমরা। কিন্তু উচিত ছিল যার যার পৃথকত্ব নিয়ে বিরাট এক যৌথ সম্মেলন। এটা আমরা তৈরি করতে পারতাম রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সদিচ্ছা দিয়ে।
মিলান কুন্ডেরা চেক লেখক। তিনি চেক ভাষাতেই তার লেখালেখি শুরু করেছিলেন। তাকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল তার সাহিত্যের ভূমিটা কোথায়। তিনি বলেছিলেন তিনি বৃহৎ ইউরোপীয় সাহিত্যেরই অংশ। এই যে নিজেকে বড় একটা কালচারের অংশ হিসাবে দেখতে পারার সক্ষমতা তা আমাদের লেখকদের ভেতর নেই। আমারা লেখক মানেই কুয়ার ব্যাঙ। নিজেদের চিন্তাকে প্রমিত, অপ্রমিত, ঢাকা, আসামি, কলকাতা, সনাতন, আধুনিক ইত্যাদি ছোট ছোট রেজিস্টারে আবদ্ধ করে রেখেছি।
বৃহৎ বঙ্গের সম্মিলিতের বোধ জাগ্রত না হলে আমাদের পশ্চিম পানে তাকিয়ে থাকতে হবে শতকের পর শতক। প্রতি বছর অক্টোবরে সাহিত্যে নোবেল ঘোষণা এই বার্তাই দেয় আমাদের।
মৃদুল মাহবুব: কবি ও প্রাবন্ধিক
র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি), অতিরিক্ত আইজিপি এ কে এম শহিদুর রহমান বলেছেন, মব ভায়োলেন্স বা মব সন্ত্রাস করে এ দেশের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করা যাবে না। অপরাধী যেই হোক বা যে দলেরই হোক, আমরা তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করব।
শনিবার (১২ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সামনে ঘটে যাওয়া ব্যবসায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবস্থা গ্রহণের অগ্রগতিসহ আরও কয়েকটি ঘটনায় অপরাধীদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে প্রেস ব্রিফিং করেন র্যাবের ডিজি। ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন।
এ কে এম শহিদুর রহমান বলেন, ‘র্যাব এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেকোনো ধরনের অপরাধ সংঘটনের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের বিষয়ে তৎপর রয়েছে। দেশে বিগত কয়েক মাসে ঘটে যাওয়া অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের র্যাব গ্রেপ্তার করেছে। তাদের যেন শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়, সে ব্যাপারে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছি। মব ভায়োলেন্স সৃষ্টির অপরাধে এ পর্যন্ত প্রায় ২০ জন অপরাধীকে র্যাব আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে।’
‘গত ২ জুলাই লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম থানায় সন্ত্রাসী কর্তৃক মব সৃষ্টির মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের আহত করে আসামিদের ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমরা ৩ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। এ ছাড়াও গত ৩ জুলাই কুমিল্লার মুরাদনগরে ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় একই পরিবারের মা ও দুই সন্তানের ওপর মব ভায়োলেন্সের অযাচিত ঘটনায় ৬ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
সলিমুল্লাহ মেডিকেলের সামনে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র্যাব কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত এজাহারনামীয় ৪ নম্বর আসামি আলমগীর (২৮) এবং ৫ নম্বর আসামি মনির ওরফে লম্বা মনিরকে (৩২) আমরা গতকাল (শুক্রবার) রাজধানীর কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি।’
‘এ ঘটনায় আমরা ছায়া তদন্ত করছি, আর পুরো বিষয়টি দেখছে ডিএমপির তদন্ত বিভাগ।’
র্যাবের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।
রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ সোহাগকে (৩৯) নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনাকে খুবই দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
শনিবার (১২ জুলাই) রাজধানীর পুরান ঢাকার মিল ব্যারাকে পুলিশের বিশেষ কল্যাণ সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ব্যবসায়ী হত্যা ও মব সহিংসতা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র বলেন, ‘ঢাকায় যে হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে, সেটা খুবই দুঃখজনক। এ ঘটনায় এরই মধ্যে পাঁচজনকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। গতকালও র্যাব দুজন ও ডিএমপি দুজনকে ধরেছে। পরে আরও একজনকে ধরা হয়েছে।’
বাকিদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সতর্ক অবস্থায় আছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা মোটামুটি অসহিষ্ণু হয়ে পড়েছি। ছোটখাট ঘটনায়ও সংঘাতে জড়িয়ে পড়ি। এই জিনিসটা বন্ধ করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এর আগে চাঁদপুরে, খুলনা ও চট্টগ্রামের ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। যেগুলো হচ্ছে, আমরা সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
পুলিশের মিল ব্যারাক এলাকা পরিদর্শন নিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে পরিদর্শনের উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদের সঙ্গে একটু কথা বলা। তাদের থাকা ও খাবারের মান দেখা। আগামী নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজনে তাদের একটি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব এখানে।’
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে চাই বলেও এ সময় মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কবে হবে, সেটা আমরা জানি না। সেটা জানাবে নির্বাচন কমিশন।’
অভিযানে গৌরবময় অবদান রাখায় প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের টাগবোট ‘বিসিজিটি প্রমত্ত’ এবং এর ক্রুদের ‘প্রশংসাপত্র’ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও)।
শনিবার সকালে কোস্টগার্ড সদর দপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হারুন-অর-রশীদ বাসস’কে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থানকালে গত বছর ৫ অক্টোবর রাতে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) মালিকানাধীন তেলবাহী জাহাজ ‘এমটি বাংলার সৌরভ’-এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। দ্রুত ও কার্যকর অগ্নিনির্বাপণ এবং সামুদ্রিক পরিবেশগত বিপর্যয় রোধে ‘বিসিজিটি প্রমত্ত’ অসাধারণ ভূমিকা রাখে।
ঘটনার সময় ট্যাংকারটিতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে এবং আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, যা সামুদ্রিক জীববৈচিত্র ও পরিবেশের জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। তৎক্ষণাৎ জরুরি উদ্ধার অভিযান শুরু করে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড।
‘বিসিজিটি প্রমত্ত’ এবং এর সাহসী নাবিকরা ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সফল অভিযান পরিচালনা করেন। সেই অভিযানে ৪৮ জন নাবিককে উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি তেল ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে কার্যকর ব্যারিয়ার স্থাপন ও বর্জ্য সংগ্রহের মাধ্যমে গভীর সমুদ্রে দূষণরোধ করা হয়।
এই দৃষ্টান্তমূলক ও সাহসিকতাপূর্ণ অভিযানের জন্য আন্তর্জাতিক মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও) ‘বিসিজিটি প্রমত্ত’ এবং এর ক্রুদের ‘লেটার অব কমান্ডেশন' দিয়েছে।
আইএমও এই অভিযানে প্রদর্শিত পেশাদারিত্ব, দক্ষতা, পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা এবং আন্তর্জাতিক নৌ নিরাপত্তা নীতিমালা অনুসরণের বিষয়গুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে মূল্যায়ন করেছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আইএমও’র এই স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও দেশের জন্য বড় অর্জন। এটি শুধু কোস্টগার্ড নয়, পুরো দেশের জন্যই গর্বের। এই স্বীকৃতি প্রমাণ করে, কোস্টগার্ড একটি আধুনিক ও দক্ষ বাহিনী হিসেবে যেকোন দুর্যোগে সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম।
লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হারুন-অর-রশীদ আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ কোস্টগার্ড সর্বদা সমুদ্রসীমায় নিরাপত্তা বিধান, বিপদগ্রস্তদের উদ্ধার, সমুদ্র দূষণ প্রতিরোধ ও পরিবেশ সুরক্ষার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ভবিষ্যতেও বাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী দায়িত্ব পালনে বদ্ধপরিকর থাকবে।
টানা চার দিনের মুষলধারে বৃষ্টিপাতের পর টানা দুদিন নোয়াখালীতে রোদ্রৌউজ্জ্বল আবহাওয়া বিরাজ করছে। এতে অধিকাংশ উপজেলায় জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর, দুর্গাপুর ও লক্ষীনারায়ণপুর গ্রামসহ কয়েকটি গ্রামে পানি বেড়েছে। স্থানীয়দের ধারণা ফেনীর পানি ঢুকে বৃষ্টি না থাকলে এ অঞ্চলে পানি বেড়েছে।
শনিবার (১১ জুলাই) সকালে জেলার সদর, সুবর্ণচর, কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলার বাসিন্দারা জানায় তাদের এলাকায় পানি নামছে ধীর গতিতে। এজন্য বেশিরভাগ এলাকায় এখনো বন্যার পানি জমে থাকায় জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জেলার ছয়টি উপজেলার ৫৭টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়েছে। এতে ৪৬ হাজার ৭০টি পরিবারের প্রায় ১ লাখ ৯২ হাজার ৫০৩ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। কবিরহাট ও সুবর্ণচর উপজেলায় আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪৫টি বসতঘর। সুবর্ণচরে একটি বসতঘর সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ,পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাব এবং পানি নিষ্কাশনের নালা ও জলাশয় গুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় শহরবাসীর এ দুর্ভোগ। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকে দায়ী করছেন অনেকে। হালকা বৃষ্টিতেই নোয়াখালী পৌরসভা এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এদিকে মাইজদীর লক্ষ্মীনারায়ণপুর, সেন্ট্রাল রোড, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা শিল্পকলা একাডেমিসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় এখনো রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে রয়েছে। আশপাশের অনেক বাসাবাড়িতেও পানি জমে রয়েছে। টানা বৃষ্টির বিরতিতে মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেলেও জলাবদ্ধতা ও বন্যা পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হয়নি।
জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় নোয়াখালীতে তেমন কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি। আপাতত ভারী বৃষ্টিরও সম্ভাবনা নেই। তবে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে।
জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান বলেন, পাঁচটি উপজেলায় ৪৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ১ হাজার ৮৫০ জন মানুষ এবং ১৭১টি গবাদি পশু। দুর্গতদের চিকিৎসায় ৫১টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে, যার মধ্যে ২৯টি কাজ শুরু করেছে। বন্যার ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, পানি নিষ্কাশনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। বৃষ্টি না হলে জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, মিটফোর্ডের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচারে সরকার বদ্ধপরিকর। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইনের অধীনে দ্রুততম সময়ে বিচার শেষ করা হবে।
উপদেষ্টা শনিবার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, মিটফোর্ডের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচারে সরকার বদ্ধপরিকর। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৫ জনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।
তিনি আরো বলেন, এই পাশবিক হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। দায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হবে এবং ধারা ১০-এর অধীনে দ্রুততম সময়ে বিচার নিশ্চিত করা হবে।
গত বুধবার রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯)। হত্যার আগে তাকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে ও ইট-পাথরের আঘাতে মাথা ও শরীর থেঁতলে দেওয়া হয়।
এই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ, মামলার এজাহার, নিহতের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা এবং তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে হত্যাকাণ্ডের এমন বর্ণনা উঠে এসেছে।
মিটফোর্ড (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) হাসপাতালের সামনের ব্যস্ত সড়কে প্রকাশ্যে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। তদন্তকারী কর্মকর্তারা ও স্থানীয় সূত্র জানায়, হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ চাঁদাবাজি। নিহত লাল চাঁদ একসময় যুবদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
এদিকে, অভিযুক্ত নেতা-কর্মীদের দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে বিএনপি। পাশাপাশি ঘটনার নিন্দা জানিয়ে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। বিএনপি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা পুনর্ব্যক্ত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে আসকর আলী (২৪) নামে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন।
শনিবার (১২ জুলাই) ভোরে উপজেলার মিনাপুর সীমান্তের ৩৫৩ নম্বর প্রধান পিলারের কাছে ভারতের অভ্যন্তরে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত আসকর আলী হরিপুর উপজেলার জীবনপুর গ্রামের কানুরার ছেলে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
স্থানীয় সূত্র ও বিজিবি জানায়, শনিবার ভোর আনুমানিক চারটার দিকে আসকর আলীসহ কয়েকজন মিনাপুর সীমান্তের ৩৫৩ নম্বর প্রধান পিলার সংলগ্ন এলাকা দিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে যান। এ সময় ভারতের কিষাণগঞ্জ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে আসকর আলী ঘটনাস্থলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তার মরদেহ ভারতের প্রায় ২০০ গজ অভ্যন্তরে পড়ে আছে বলে জানা গেছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সীমান্তে অতিরিক্ত বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। অপরদিকে, ভারতের সীমান্তেও অতিরিক্ত বিএসএফ সদস্য মোতায়েন রয়েছে বলে জানা গেছে।
দিনাজপুর ৪২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা ঘটনাটি সম্পর্কে অবগত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা শুরু করেছে। নিহত যুবকের লাশ ফেরত আনার জন্য বিএসএফকে পতাকা বৈঠকে বসার আহ্বান জানানো হয়েছে।
৪২ বিজিবি জানিয়েছে, "আমরা বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগ করে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে লাশটি ফেরত আনার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-এর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক কার্যালয়ের আঞ্চলিক পরিচালক সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে অনির্দিষ্টকালের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে পুতুলের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের গুরুতর অভিযোগের তদন্ত চলাকালীন শুক্রবার এ সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি।
ডব্লিউএইচও’র এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ সরকার বলেছে, আমরা এটিকে জবাবদিহিতার পথে গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে দেখি।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম শনিবার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে সরকারের এই বক্তব্য তুলে ধরেন।
সায়মা ওয়াজেদকে পদ থেকে অপসারণ প্রসঙ্গে তিনি লেখেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এর একটি স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন, যেখানে সায়মা ওয়াজেদকে তার পদ থেকে অপসারণ করা হবে, তার সকল সুযোগ-সুবিধা বাতিল করা হবে এবং এই মর্যাদাপূর্ণ দায়িত্বের সততা ও জাতিসংঘ ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরুদ্ধার করা হবে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ও বিশ্ববাসী স্বচ্ছতা, সততা ও ন্যায়বিচারের আবির্ভাবে আনন্দিত।
মন্তব্য