× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য শিল্প ইভেন্ট উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য আফগানিস্তান ১৫ আগস্ট কী-কেন স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও যৌনতা-প্রজনন মানসিক স্বাস্থ্য অন্যান্য উদ্ভাবন প্রবাসী আফ্রিকা ক্রিকেট শারীরিক স্বাস্থ্য আমেরিকা দক্ষিণ এশিয়া সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ ইউরোপ ব্লকচেইন ভাষান্তর অন্যান্য ফুটবল অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

google_news print-icon

লুইস গ্লুক এবং ঢাকার অক্টোবর বাস্তবতা

লুইস-গ্লুক-এবং--ঢাকার-অক্টোবর-বাস্তবতা
নতুন যেকোনো আর্ট ফর্মকে খুব সন্দেহের চোখে দেখা হয়। গ্লুককে বোঝার জন্য আত্মদৃষ্টি পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে আমাদের নতুন সাহিত্যকে বোঝার একটা প্রণোদনা এখানে তৈরি হতে পারে।

দেশে লেখক, বোদ্ধা, চিন্তাশীল মানুষ ও পাঠকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। পুস্তক প্রকাশ ও লেখালেখির মাধ্যম বিকশিত হয়েছে প্রত্যাশার অধিক। মানুষের ভেতর আগের থেকে অনেক বেশি টেক্সট পড়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। মানুষ এখন অনেক বেশি অক্ষর ও শব্দের সাথে সম্পৃক্ত। ফলে আমরা ধরে নিতে পারি ঢাকার সাহিত্য ইন্ডাস্ট্রির কলেবর অনেক বড়। এত বড় একটা সমাজে প্রতিবছর নিশ্চয় কোনো না কোনো বড় ঘটনা ঘটবে। অথচ গত বিশ বছরের এই সুবিশাল সাহিত্যপল্লিতে আমরা কোনো বই, লেখক বা সাহিত্য সংশ্লিষ্ট ঘটনা নিয়ে উদ্বেলিত হয়েছি বলে মনে পড়ে না।

ঢাকায় শিল্প-সাহিত্য সমাজকে নিস্তরঙ্গই বলা যায়। বেশ একটা নিরীহ চেহারায় সারা বছর চুপচাপ, ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণচালে লেখক-চিন্তকরা বই-পুস্তক লেখেন। যার অধিকাংশ প্রকাশিত হয় ফেব্রুয়ারির বইমেলায়। নিস্তরঙ্গ বছরের এই একটা মাসে কিছুটা চাঞ্চল্য দেখা দেয় বিদ্বৎ সমাজে।

সোজা কথা হলো, ঢাকার সাহিত্য নিয়ে সমাজে আদতে কোনো হৈচৈ, কথাবার্তা এবং উচ্চাশাও নেই বললে চলে। হৈচৈকে সাহিত্য না বলুন, কিন্তু একটা দেশের সাহিত্য টিকে থাকার জন্য তা লাগে। সেলিব্রেশন, উৎসব এগুলো খুব প্রয়োজনীয় ঘটনা। যা নিয়ে উৎসাহ উদ্দীপনা নেই, তার প্রয়োজনীয়তাও সমাজে নাই।

তবে আমাদের এই নির্লিপ্ত সাহিত্য সমাজে বছরে একটা সরবতা আসে, অক্টোবর মাসে। নোবেল পুরস্কার ঘোষণার সাথে সাথে। মরা নদীতে বান আসার মতো। এই সরবতা প্রধানত তিনভাবে দেখা যায়।

এক. কে, কাকে, কবে পড়েছে, কতটা পড়েছে এগুলো নিয়ে একটা প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়। কেউ হয়তো বলবেন, তিনি ওই লেখকের লেখা সাত-আট বছর আগে থেকেই পড়ছেন। পড়ে থাকলে ভালো। তবে তিনি সাত-আট বছর আগে সেই লেখককে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার আত্মবিশ্বাস পান নাই। আমরা কী বুঝব! সাহিত্য সমাজে নিজেকে নানাভাবে ঝুলিয়ে রাখতে হয়। হয়তো আপনি গুন্টারগ্রাসের লেখা পড়েছেন। পড়তেই পারেন। তবে তা আপনার বাংলা সাহিত্যের জন্য তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো ঘটনা না। আপনি ফোর্ট উইলিয়াম পূর্ববর্তী বাংলা সাহিত্যের খোঁজ রাখেন কিনা তা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

দুই. একটা লেখক-শ্রেণি আছে যারা গুগল মেশিনের চেয়েও ফাস্ট বঙ্গানুবাদ করে ফেলে। কবিতা হলে তো কথাই নেই। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা খুব গুরুত্বসহকারে তা ছেপেও দেয়। তাদের অনুবাদের সুবাদে আপনি যা পড়বেন, তা পড়ে মনে হবে, ‘এর চেয়ে আমি ভালো লিখি বা বাংলা সাহিত্যে এরচেয়ে ভালো লেখক আছে। এমন বাজে লেখক নোবেল পেল? হায়!’ একটা ভাষা থেকে অন্য ভাষায় অনুবাদের আগে সেই ভাষা, দেশ ও কালের দার্শনিকতা জানা লাগে। ধরেন আপনি জার্মানি ভাষা শিখলেন। কিন্তু ওই ভাষার দর্শনটা, দেশ-কাল না জানলে আপনার কাছে ‘ফাউস্ট’ একটা মামুলি লেখা লাগবে। অনেক কিছু ধরাই যাবে না। উপমহাদেশ ও তার বাস্তবতা না জানলে মনে হবে ‘রক্তকরবী’ এমন আর কী! এই জাতীয় অনুবাদে আসলে ‘আই’-এর পরিবর্তে ‘আমি’ বসানো হয়। ফলে সত্তা ও ভাষার ব্যাপক অর্থটা অধরাই থেকে যায়। ভাষা শুধু চিহ্ন ব্যবস্থা না, ভাষার মিনিং আবহমানতার সাথে সংশ্লিষ্ট। এই রকম অনুবাদ করা মূলত একটা ইভেন্টের দর্শক হিসাবে নিজেকে রেজিস্টার করে মাত্র। একজন বড় লেখক অনুবাদক মানে তিনি তার সারা জীবনটা উৎসর্গ করে দিলেন। তার নিজের সাহিত্য হয় না। বিরাট বড় বলিদান এটা। সারা জীবন আর কিছু না করে ওই লেখকের লেখাই অনুবাদ করে থাকেন। মুরাকামির অনুবাদক মনে হয় তিনজন। তারাই তার লেখা অনুবাদ করেন সাধারণত। মূলত লেখক ও ভাষা বুঝতেই তাদের এই সাধনা। জি এইচ হাবীবের উমবর্তো একোর দ্য নেম অব রোজেজ অনুবাদ করতে প্রায় পনেরো বছরের বেশি সময় লেগেছে বলে শুনেছি।

তিন. সাহিত্য সমাজের একটা ব্রাহ্মণ সম্প্রদায় আছে যারা, নামের উচ্চারণ, শুদ্ধতা ইত্যাদির ভেতর দিয়ে নিজেদের জানা-বোঝাটা জানান দেবে সমাজে। তো একজন বিদেশি লেখকের নামের শুদ্ধ উচ্চারণ দিয়ে কী হবে! ঠাকুরকে টেগর বলার পরও পশ্চিমের কেউ নিশ্চয়ই পুরো ইউরোপকে মূর্খ বলে গালি দিয়ে বলে নাই, ‘ডেয়ার ব্রো, তোমরা সকলে মূর্খের মতো ঠাকুরকে টেগর বলছ কেন? আমাদের মান থাকবে না ভারতের কাছে।’ ঠাকুরকে টেগর বললেও তাদের তা বুঝতে সমস্যা হয় নাই নিশ্চয়ই। নামের বিশুদ্ধতা শুদ্ধতার কঠোরতম সাধনার পথের পথিকরা বিদেশি সাহিত্যের অন্তরটা এখানে না নিয়ে এসে, এর খোলসটা নিয়ে নাড়াচাড়া করেন। ফেক রোলেক্স হাতে দিয়ে তারা রোলেক্স ক্লাবের সফল সদস্য হয়ে সমাজে সমীহ আদায় করে।

এই হলো ঢাকা সাহিত্যে অক্টোবর বাস্তবতা। প্রতি বছরই একই ঘটনা ঘটে। বিপুল এক নোবেল মুগ্ধতা নিয়ে আমরা আমাদের সাহিত্য জীবন পার করি।

২.

মার্কিন কবি ও প্রাবন্ধিক লুইস গ্লুক এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। এর বাইরে আর বাকি পরিচয় পাঠক হিসাবে নানা মাধ্যমে জেনে গিয়েছেন। ফলে, পরিচয় পর্বে আমি আর গেলাম না। ২০১২ সালে দেওয়া একটা ইন্টারভিউতে গ্লুক বলছিলেন তার লেখক হয়ে ওঠার গল্প। তার বাবার লেখক হওয়ার বাসনা ছিল। আগ্রহ ছিল ইতিহাস ও রাষ্ট্র শাসননীতি নিয়ে। পরবর্তী সময়ে ব্যবসায় সাফল্য আসার সাথে সাথে তার সেই লেখক হয়ে ওঠার বাসনা শেষ হয়ে যায়। তার মায়ের সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা ছিল। লেখালেখির একটা আবহ থাকার কারণে মাত্র পাঁচ-ছয় বছর বয়স থেকেই সে ও তার বোন বই লেখার সুযোগ পেয়েছে। কাগজে গল্প লিখে নিজের মতো ইলাস্ট্রেশন করত তারা। ছোটবেলায় পরিবার থেকে দারুণ সহযোগিতা পেয়েছেন তিনি। টিনএজের প্রথম দিকেই সে নিজের প্রথম বইয়ের ড্রাফট তৈরি করে ফেলেছিলেন। তা অবশ্য প্রকাশিত হয়নি।

গ্লুক থিয়েটারে নাম লিখিয়েছিলেন। তার মার ঘোর আপত্তি ছিল তাতে। মা তাকে বারবার বলত তুমি একজন অসম্ভব ভালো লেখক ও শিল্পী। থিয়েটারের মতো হালকা বিষয় তোমার জন্য না। এ নিয়ে মা মেয়ের দারুণ দ্বন্দ্ব ছিল। থিয়েটার সে ছেড়ে দেয়। তার বয়ঃসন্ধিকালটা যে খুব ভালো কেটেছে তা নয়। ষোল বছর বয়সে তিনি অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসা বা ক্ষুধাহীনতা রোগে আক্রান্ত হন। এটা একটা মানসিক রোগ। এই রোগে আক্রান্তরা নিজের ওজন কমাতে, খাওয়া বিষয়ে এতটাই সংবেদনশীল হয়ে ওঠে যে কিছুই খেতে চায় না তারা। এক সময় খাওয়া বন্ধ করে দেয়। ফলে, মৃত্যুর আশঙ্কা বাড়ে ওই রোগীর। তারা নিজেদেরকে সকল থেকে খুবই আলাদা করে দেখে। এই রোগের কারণে গ্লুকের স্কুলিং বন্ধ হয়ে যায়। সাত বছর তিনি নিয়মিত মনোবিদের সাহায্য নিয়েছেন। সাক্ষাৎকারে গ্লুক বলেছিলেন, তার মায়ের সাথে তার সম্পর্কের টানাপোড়ন এই রোগের একটা কারণ হতে পারে। তার মার তাকে নিয়ন্ত্রণ করার একটা প্রবণতা ছিল। তিনি সর্বদা এই নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকতে চেয়েছেন। তিনি তার দেহকে অপর আট-দশটা মানুষের দেহ থেকে আলাদা হিসাবে ভাবতেন। সে ভাবত তাকে পরিশুদ্ধ আত্মার মানুষ হতে হবে। তার আত্মাকে দেহ থেকে আলাদা করে দেখতে চাইতেন তিনি। সেই সময় তিনি কয়েকটি কবিতার ওয়াকশপে অংশ গ্রহণ করেছিলেন মাত্র। সাথে সাথে নিয়মিত সাইকো অ্যানালিসিস চলত। এই সাইকো অ্যানালিসিসের ভেতর দিয়ে তিনি আসলে নিজের চিন্তার পদ্ধতিটা আবিষ্কার করতে থাকেন। তীব্রভাবে কবিতা আঁকড়ে ধরেন। একটু একটু করে সুস্থ হওয়ার সাথে সাথে কবিতায় মিশে যান তিনি। কবিতাই হয় তার শেষ গন্তব্য।

লুইস গ্লুকের বয়স সাতাত্তর। দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরের কবি জীবনে বারোটা কবিতা আর দুটো কবিতা-বিষয়ক গদ্যের বই লিখেছেন। তিনি হলেন আমেরিকার জীবিত মুভিং পোয়েট। তিনি কখনো নিজের তৈরিকৃত লেখার কৌশল নিয়ে আঁকড়ে বসে থাকেননি। প্রতিটা বইয়েই নতুন নতুন কবি হয়ে হাজির হয়েছেন। তিনি তার পাঠককে যে কোনো বই দিয়ে তাকে পড়া শুরু করতে বলেছেন। তিনি কবি জীবন হিসাবে খুবই সাধারণ একটা জীবন কাটিয়েছেন। বাসা, বাগান আর কয়েকটা পড়ার বই নিয়ে তার জীবন। নোবেল পাওয়ার আগেই গুরুত্বপূর্ণ সব পুরস্কার তিনি পেয়েছিলেন। আমেরিকান কবিতায় যে ইউরোপ আছর, তার বাইরে তার কবিতা। এজরা পাউন্ড, উইলিয়াম কারলোস উইলিয়াম বা জর্জ ওপেন এদের কবিতা যারা পড়েছেন, তারা জানেন লুইস গ্লুক হলো আমেরিকান লিটারেচারের নতুন কণ্ঠস্বর। তিনি কবিতায় বিকল্পের সন্ধান দিয়েছেন পাঠককে। কবিতার চলমান প্রবণতাকে ভেঙে দিয়ে যারা নিজের ভূখণ্ডের ভাষা, চিন্তা, দর্শন তৈরি করতে পারেন তাদের সংখ্যা খুব বেশি থাকে না দুনিয়ায়। অতি গম্ভীর কবিতার বিপরীতে উইট ও হিউমার দিয়ে তার কবিতা সাজানো। সম্ভবত গ্লুক হলো সেই কবি, যিনি নিজের অনুভূতিকে যথার্থভাবে উপস্থাপন করতে পেরেছেন নিজের সমাজের কাছে। তিনি অসামাজিক কোনো লেখক নন। তিনি তার লেখা দিয়ে পাঠকের সাথে সর্বদা যুক্ত থাকতে চেয়েছেন—প্রবলভাবে উপস্থিতির মাধ্যমে। নিজের জনপদের মানুষের যে মানসিক যাতনা তার পয়েটিক ফর্ম হলো তার লেখা। ভাষা প্রধান, ব্যক্তিহীন যে নৈর্ব্যক্তিক কবিতা চর্চা ছিল আমেরিকান কবিতায়, তার বিপরীতে গ্লুকের কবিতায় একজন ব্যক্তির উপস্থিতি দেখা যায়।

আমাদের এই বাস্তবতা থেকে গ্লুকের কবি সত্তাকে ধরতে পারা সহজ না। আমরা আসলে আমেরিকান পোয়েট্রি বলতে যা বুঝে থাকি তা মূলত খুবই সেকেলে একটা ব্যাপার। আমাদের আন্তর্জাতিক কবিতা মাপার ফিতের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ খুব বড় না। ফলে, এর বাইরের কিছু দেখলেই আমরা বলে ফেলি, বিলো স্ট্যান্ডার্ড। কিন্তু সময় ও বাস্তবতা যে বদলে গিয়েছে তা ধরতেই পারি না। আমাদের সেকলে কবিতা বোঝার বোধ দিয়ে লুইস গ্লুকের কবিতা ধরা যাবে না। বুঝতে চাওয়া ঠিক হবে না। সাহিত্যকে ভালো বা মন্দের এই লিনিয়ার হিসাব দিয়ে বোঝার সুযোগ নাই।

এই কথাগুলো আমাদের সাহিত্য বাস্তবতার জন্যও প্রযোজ্য। নতুন যেকোনো আর্ট ফর্মকে খুব সন্দেহের চোখে দেখা হয়। গ্লুককে বোঝার জন্য আত্মদৃষ্টি পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে আমাদের নতুন সাহিত্যকে বোঝার একটা প্রণোদনা এখানে তৈরি হতে পারে।

লুইস গ্লকের একটা কথা দিয়ে তার আলোচনা শেষ করি। তিনি মনে করেন, কবি হয়ে ওঠার জন্য প্রতিভা থাকাটা জরুরি কিছু না। ভেতরে তীব্র ক্ষুধার সাথে সাথে প্যাশন থাকা চাই যা লেখককে ৫০ বা ৬০ বছর লিখে সচল থাকার প্রণোদনা দেবে। যে তরুণ কবির ভেতর এই ক্ষুধা নেই সে লিখতে পারবে না কোনোভাবেই। সব সময় যেন বিকল্প পথটা খোলা রাখে লেখকরা।

৩.

প্রায়শ শোনা যায় এই দেশে এত প্রতিভাবান লেখক থাকার পরও নোবেল কেন দেওয়া হয় না। এই কথা খুবই আপত্তিজনক আমার কাছে। আমাদের আধুনিক সাহিত্যের যে উৎসমূল তা উইরোপীয় নিম্নমানের সাহিত্য-ঘরানার বাইরের কিছু না। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে এগুলোর মূল্য আমাদের কাছে আছে। প্রয়োজনও আছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে যার মূল্য শূন্য প্রায়। ফলে, নিজেদের কালচারাল টেরিটরির ভেতর এগুলোর আরো বেশি মূল্য আমরা তৈরি করতে পারলাম কিনা সেটাই প্রশ্ন।

দীনেশ চন্দ্র সেনের যে বৃহৎ বঙ্গের সংস্কৃতি হিন্দুকুশ পর্বত থেকে শ্রীলংকা পর্যন্ত বিস্তৃত। বুদ্ধও এই বৃহৎ বাংলারই লোক। তো এই বৃহৎ বাংলায় যে লোক আছে তা ইউরোপ আমেরিকার লোক সংখ্যা থেকে বেশি। এত বড় সংস্কৃতির বাজারে আমরা নিজেদের পণ্য বিক্রি করতে পারলাম না। বাংলা, হিন্দি ও উর্দু একই মাটির পেটের ভাই। সাংস্কৃতির সাদৃশ্য থাকার পরও একটা ভাষাকে আরেকটা ভাষার শত্রু করে তুলেছি আমরা। কিন্তু উচিত ছিল যার যার পৃথকত্ব নিয়ে বিরাট এক যৌথ সম্মেলন। এটা আমরা তৈরি করতে পারতাম রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সদিচ্ছা দিয়ে।

মিলান কুন্ডেরা চেক লেখক। তিনি চেক ভাষাতেই তার লেখালেখি শুরু করেছিলেন। তাকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল তার সাহিত্যের ভূমিটা কোথায়। তিনি বলেছিলেন তিনি বৃহৎ ইউরোপীয় সাহিত্যেরই অংশ। এই যে নিজেকে বড় একটা কালচারের অংশ হিসাবে দেখতে পারার সক্ষমতা তা আমাদের লেখকদের ভেতর নেই। আমারা লেখক মানেই কুয়ার ব্যাঙ। নিজেদের চিন্তাকে প্রমিত, অপ্রমিত, ঢাকা, আসামি, কলকাতা, সনাতন, আধুনিক ইত্যাদি ছোট ছোট রেজিস্টারে আবদ্ধ করে রেখেছি।

বৃহৎ বঙ্গের সম্মিলিতের বোধ জাগ্রত না হলে আমাদের পশ্চিম পানে তাকিয়ে থাকতে হবে শতকের পর শতক। প্রতি বছর অক্টোবরে সাহিত্যে নোবেল ঘোষণা এই বার্তাই দেয় আমাদের।

মৃদুল মাহবুব: কবি ও প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ
The Holy Ashura will give mankind the power and courage to establish truth and justice against oppression and injustice Chief Advisor

পবিত্র আশুরা জুলুম ও অবিচারের বিরুদ্ধে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় মানবজাতিকে শক্তি ও সাহস যোগাবে : প্রধান উপদেষ্টা

পবিত্র আশুরা জুলুম ও অবিচারের বিরুদ্ধে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় মানবজাতিকে শক্তি ও সাহস যোগাবে : প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, পবিত্র আশুরা জুলুম ও অবিচারের বিপরীতে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় মানবজাতিকে শক্তি ও সাহস যোগাবে।

তিনি পবিত্র আশুরা উপলক্ষ্যে দেওয়া এক বাণীতে আজ এ কথা বলেন।

প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘পবিত্র আশুরা’র শোকাবহ এই দিনে আমি সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেন (রা.) এবং কারবালার প্রান্তরে মর্মান্তিকভাবে শাহাদতবরণকারী সকলের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।’

তিনি বলেন, ইসলাম সত্য, ন্যায় এবং শান্তির ধর্ম। ইসলামের এই সুমহান আদর্শকে সমুন্নত রাখতে গিয়ে হিজরি ৬১ সনের ১০ মহররম হজরত ইমাম হোসেন (রা.), তাঁর পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠ সহচরবৃন্দ বিশ্বাসঘাতক ইয়াজিদের সৈন্যদের হাতে কারবালার প্রান্তরে শহীদ হন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অত্যাচারীর অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে ইসলামের বীর সৈনিকদের এই আত্মত্যাগ পৃথিবীর ইতিহাসে চিরভাস্বর হয়ে থাকবে।

কারবালার বিয়োগাত্মক ঘটনা ছাড়াও পবিত্র আশুরা ইসলামের ইতিহাসে অন্যতম ফজিলতপূর্ণ একটি দিন বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সমগ্র পৃথিবী সৃষ্টিসহ নানা তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা এদিনে সংঘটিত হয়েছে। হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) পবিত্র আশুরা উপলক্ষ্যে দুটি রোজা রাখার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।

এই মহিমান্বিত দিনটির তাৎপর্য ধারণ করে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভে সকলের প্রতি বেশি বেশি নেক আমল করার আহবান জানান। তিনি সমাজে সাম্য, ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি পবিত্র আশুরার এই দিনে তিনি মুসলিম উম্মার ঐক্য, সংহতি ও অব্যাহত অগ্রগতি কামনা করেন।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Dhaka will assist Kuala Lumpur in investigating against terrorists Foreign Ministry

সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে তদন্তে কুয়ালালামপুরকে সহযোগিতা করবে ঢাকা: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে তদন্তে কুয়ালালামপুরকে সহযোগিতা করবে ঢাকা: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

সাম্প্রতিক নিরাপত্তা অভিযানে ‘চরমপন্থি উগ্রবাদী’ আন্দোলনে জড়িত থাকার অভিযোগে মালয়েশিয়ায় ৩৬ জন বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তারের পর শনিবার (৫ জুলাই) বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (এমওএফএ) বলেছে, ‘সন্ত্রাস-সংক্রান্ত তদন্তে মালয়েশিয়াকে সহযোগিতা করবে বাংলাদেশ।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ‘বাংলাদেশ হাইকমিশন কুয়ালালামপুরে তাৎক্ষণিকভাবে মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের পরিচয় এবং তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে তথ্য চেয়েছে।’

বাংলাদেশ সব ধরনের সন্ত্রাসবাদ, সহিংস উগ্রবাদ এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তার কঠোর অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং এ বিষয়ে মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষকে পূর্ণ সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, গ্রেপ্তার বা আটককৃতদের মধ্যে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ার আদালতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

সাম্প্রতিক ঘটনার হালনাগাদ তথ্যে বাংলাদেশ জানিয়েছে, বাকি ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রয়েছে বা তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর (ডিপোর্টেশন) প্রক্রিয়া চলছে। বাংলাদেশ সরকার ঘটনাপ্রবাহ ‘ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ’ করছে এবং কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশন মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রাখছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও জানায়, প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন কাজ করে যাবে।

মালয়েশিয়ার সরকার শুক্রবার জানায়, মালয়েশিয়ার পুলিশ সম্প্রতি যে বাংলাদেশি চরমপন্থি গোষ্ঠী (জিএমআরবি) ভেঙে দিয়েছে, তা সিরিয়া ও বাংলাদেশে ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর জন্য তহবিল সংগ্রহ ও সদস্য নিয়োগে লিপ্ত ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গ্রেপ্তার হওয়া ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ৩৬ জন সন্দেহভাজনের মধ্যে পাঁচজনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ধারা ৬এ অনুযায়ী অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। ১৬ জনকে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০১২ (এসওএসএমএ)-এর আওতায় তদন্ত ও বিচারের জন্য আটক রাখা হয়েছে।

মালয়েশিয়ায় গ্রেপ্তার হওয়া ৩৬ বাংলাদেশির বিষয়ে দেশটি ইতোমধ্যে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে বলে জানিয়ে বাংলাদেশ বলেছে, তারা এখন মালয়েশিয়ার উত্তরের অপেক্ষায় রয়েছে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা মালয়েশিয়ায় গ্রেপ্তার ৩৬ জন বাংলাদেশির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছি এবং এখন তাদের জবাবের অপেক্ষায় আছি।’

তিনি বলেন, বাংলাদেশ আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ যাচাই করবে, তারা জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।

‘যদি তারা জড়িত থাকে, তাহলে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে,’ বলেন উপদেষ্টা হোসেন। তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি এখনো কিছুটা ‘ফ্লুইড’ বা অস্থির।

এই ঘটনা ভবিষ্যতে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য মালয়েশিয়ান ভিসা ইস্যুতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে কিনা, প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, যেকোনো নেতিবাচক ঘটনা ভিসা ইস্যুতে প্রভাব ফেলতে পারে, এবং তারা একথা বলতে পারেন না যে এর কোনো প্রভাবই পড়বে না।

তবে তিনি বলেন, যদি যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তাহলে প্রভাব কমানো সম্ভব।

মালয়েশিয়ার পুলিশ মহাপরিদর্শক তান শ্রী মোহাম্মদ খালিদ ইসমাইল বলেন, এই গোষ্ঠীর সদস্যদের কাছ থেকে বার্ষিক সদস্যপদ ফি হিসেবে জনপ্রতি ৫০০ রিংগিত এবং আর্থিক সামর্থ অনুযায়ী অন্যান্য স্বেচ্ছা অনুদান গ্রহণ করে তহবিল সংগ্রহ করত।

প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, এই গোষ্ঠীর সদস্য সংখ্যা ছিল ১০০ থেকে ১৫০ জন, যারা সবাই মালয়েশিয়ায় কারখানা, নির্মাণকাজ ও পেট্রোল পাম্পে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত বাংলাদেশি নাগরিক।

তিনি বলেন, সংগৃহীত অর্থ ই-ওয়ালেট অ্যাপ এবং আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার সেবার মাধ্যমে বিদেশে পাঠানো হতো। গোষ্ঠীটি নতুন সদস্য নিয়োগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রামের মতো মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করত।

মোহাম্মদ খালিদ বলেন, পুলিশ এখনো তদন্ত করছে ঠিক কত টাকা আইএস নেটওয়ার্কে পাঠানো হয়েছে।

তিনি জানান, গোষ্ঠীটি সোশ্যাল মিডিয়া ও মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করে আইএস-এর প্রচারণা ছড়াত, ‘বাইআহ’ (আনুগত্যের শপথ) সম্পন্ন করত এবং গোপন ধর্মীয় ক্লাস ও সদস্য সভার মতো কার্যক্রম আয়োজন করত।

তিনি বলেন, ‘যারা অনলাইনে আনুগত্যের শপথ করত, তাদেরকে সেল নেতা বানানো হতো, যাতে তারা গোষ্ঠীর প্রভাব আরও বাড়াতে পারে। নতুন সদস্যদের নিয়োগ প্রক্রিয়া ছিল ধাপে ধাপে—স্ক্রিনিং থেকে শুরু করে অভিজাত দলের গঠন পর্যন্ত।’

তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই গোষ্ঠীতে কোনো মালয়েশিয়ান নাগরিকের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। তবে এই গোষ্ঠী মালয়েশিয়ায় প্রায় এক বছর ধরে সক্রিয় ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যদিও গোষ্ঠীটি মালয়েশিয়ায় কোনো হামলার পরিকল্পনা করছিল না, তবে তারা দেশটিকে তহবিল সংগ্রহ ও সদস্য নিয়োগের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছিল। তদন্তে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ ও ইন্টারপোল সহায়তা করছে।

মোহাম্মদ খালিদ বলেন, মালয়েশিয়ান আইপি ঠিকানা ব্যবহার করে আইএস মতাদর্শ ছড়াতে থাকা বাংলাদেশিদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে প্রথমে গোষ্ঠীটির কার্যক্রম শনাক্ত করা হয়।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Korona and dengue identification of two more in Sylhet 

সিলেটে আরো দুইজনের করোনা ও ডেঙ্গু শনাক্ত 

সিলেটে আরো দুইজনের করোনা ও ডেঙ্গু শনাক্ত 

সিলেটে নতুন করে একজনের করোনা ও একজনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। এই নিয়ে চলতি বছর ২৭ জনের করোনা ও ৩৮ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হলো।

আজ শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় থেকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে একজনের রিপোর্টে করোনা পজিটিভ আসে। এই বছর ৪৮৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২৭ জনের করোনা ধরা পড়েছে এবং দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে দুইজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

সিলেট স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় থেকে প্রেরিত ডেঙ্গু সংক্রান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় একজনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। এই নিয়ে জুলাই মাসে পাঁচজনের ডেঙ্গু শনাক্ত হলো। বর্তমানে ২৫০ শয্যার মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে তিনজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চলতি বছর ৩৮ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ১০ জন, সুনামগঞ্জ জেলায় তিনজন, মৌলভীবাজার জেলায় ১১ জন এবং হবিগঞ্জ জেলায় ১৪ জন। তবে, ডেঙ্গুতে সিলেট অঞ্চলে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Prosecuson hopes to begin the testimony of Sheikh Hasinas case in July August

জুলাই-আগস্টে শেখ হাসিনার মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরুর আশা প্রসিকিউসনের

জুলাই-আগস্টে শেখ হাসিনার মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরুর আশা প্রসিকিউসনের

চব্বিশের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ জুলাই মাসের শেষে কিংবা আগস্টের প্রথম সপ্তাহে শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রসিকিউসন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘জুলাই মাসের শেষের দিকে কিংবা আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে শেখ হাসিনার মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হবে বলে আমরা প্রসিকিউসনের পক্ষ থেকে আশা প্রকাশ করছি।’

এদিকে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার পলাতক আসামি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচারের মুখোমুখী করতে ট্রাইব্যুনালে এরইমধ্যে আর্জি জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর।

গত ১ জুলাই বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ অভিযোগ গঠন বিষয়ক শুনানিতে বিচারের এই আর্জি জানিয়ে চিফ প্রসিকিউটর আসামিদের বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগ তুলে ধরেন। এসময় তিনি ট্র্যাইব্যুনালকে বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সারা বাংলাদেশের ৫৬ হাজার বর্গমাইল জুড়ে সর্বত্র অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। পরিমাণে, সংখ্যায় এবং স্থানের ব্যপকতায় এই অপরাধ ছিল বিস্তৃত-ব্যাপক। আর এই অপরাধ ছিল সিস্টেমেটিক (পদ্ধতিগত)। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে নির্দেশ এসেছে এবং নির্দেশের চেইন অব কমান্ড অনুসারে বাস্তবায়নের মাধ্যমে পুলিশ এবং অন্যান্য সহযোগী বাহিনী সব জায়গায় একই পদ্ধতিতে অপরাধ সংঘটন করেছে। এছাড়া সারা বাংলাদেশের সর্বত্র একই পদ্ধতিতে প্রাণঘাতি অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। সুতরাং যে অপরাধ বাংলাদেশে সংঘটিত হয়েছে এবং যে অভিযোগগুলো আমরা দিয়েছি পুরোটাই ছিল বিস্তৃত এবং পদ্ধতিগত, যা মানবতাবিরোধী অপরাধ বলে প্রমাণ করে। ফলে আমাদের সবিনয় প্রার্থনা হচ্ছে, এই মামলায় যে তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো এনেছি, তার ভিত্তিতে অভিযোগ গঠন করে তাদের বিচারের মুখোমুখী করা হোক।’

চিফ প্রসিকিউটরের এই শুনানির পর শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন দুই সপ্তাহ সময় চাইলে বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ অভিযোগ গঠন বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী সোমবার দিন ধার্য রয়েছে।

এসময় ট্র্যাইব্যুনালে হাজির ছিলেন এই মামলায় গ্রেফতারকৃত পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল- মামুন। তার পক্ষে ট্র্যাইব্যুনালে ছিলেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ। অভিযোগ গঠন বিষয়ক সেদিনের শুনানি ট্র্যাইব্যুনালের অনুমতি নিয়ে সরাসরি সম্প্রচার করে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)।

গত ১৬ জুন ট্র্যাইব্যুনাল-১ পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে আগামী সাতদিনের মধ্যে হাজির হতে একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন এবং পরদিন দু’টি পত্রিকায় শেখ হাসিনা ও কামালকে সাতদিনের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। তবে বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পরেও পলাতক দুই আসামি ট্রাইব্যুনালে হাজির না হওয়ায় ট্র্যাইব্যুনাল ১ জুলাই অভিযোগ গঠন বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করেন। সে ধারাবাহিকতা ১ জুলাই শুনানি শেষে পরবর্তী শুনানির জন্য আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গত ১ জুন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফর্মাল চার্জ) আমলে নেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। শেখ হাসিনার পাশাপাশি এই মামলায় অভিযুক্ত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউসন। এদিন প্রথম ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রম বিটিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে প্রথম মামলাটি (মিস কেস বা বিবিধ মামলা) হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে।

এই মামলাটি ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দু’টি মামলা রয়েছে। যার মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগ শাসনামলের সাড়ে ১৫ বছরে গুম-খুনের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হয়েছে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে আওয়ামী লীগ সরকার, তার দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। জাজ্বল্যমান এসব অপরাধের বিচার অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
In Bhola Coward van the Coast Guard searched illegal goods worth Tk 1 crore

ভোলায় কাভার্ড ভ্যানে কোস্টগার্ডের তল্লাশি ৭ কোটি টাকার অবৈধ পন্য জব্দ

ভোলায় কাভার্ড ভ্যানে কোস্টগার্ডের তল্লাশি ৭ কোটি টাকার অবৈধ পন্য জব্দ

ভোলা জেলা শহরের কালিনাথ বাজারে ঢাকা থেকে আসা ভোলাগামী এস এ পরিবহনের পন্য বহনকারী একটি কাভার্ড ভ্যানে তল্লাশি চালিয়ে অবৈধভাবে আনা প্রায় সাত কোটি টাকা মূল্যের ২০ লাখ মিটার কারেন্ট জাল, ৮০ কেজি পলিথিন, ৫ হাজার ৮৮৯ পিস আতশবাজি ও ১৯ হাজার ৬০০ শলাকা বিদেশি সিগারেট জব্দ করেছে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ভোলা বেইস।

শনিবার (৫ জুলাই) দুপুরে কোস্টগার্ড ভোলা বেইসের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হারুন-অর রশিদ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল শুক্রবার বিকেল ৫টায় কোস্টগার্ডের ভোলা বেইসের সদস্যরা শহরের কালিনাথ রায়ের বাজারে একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে।

অভিযান চলাকালে ওই এলাকায় ঢাকা থেকে ভোলাগামী এস এ পরিবহন কুরিয়ার সার্ভিসের একটি কাভার্ডভ্যান তল্লাশি করে ৭ কোটি ৮ লাখ ২ হাজার ৩৬০ টাকা মূল্যের নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, পলিথিন, আতশবাজি ও শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা বিদেশি সিগারেট জব্দ করা হয়।

পরবর্তীতে জব্দকৃত কারেন্ট জাল সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার উপস্থিতিতে বিনষ্ট করা হয়। এ ছাড়া নিষিদ্ধ পলিথিন ভোলা পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করা হয়। শুল্ক ফাকি দিয়ে আনা সিগারেট বরিশাল কাস্টমস ও আতশবাজি ভোলা সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ২৪ ঘণ্টা টহল জারি রেখেছে। যার মাধ্যমে কোস্টগার্ডের আওতাধীন উপকূলীয় এবং নদী-তীরবর্তী অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকাংশে উন্নত হয়েছে।

বাংলাদেশ কোস্টগার্ড কতৃক শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আসা চোরাচালানবিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকবে।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Another wild elephant died in Sherpur

শেরপুরে বিদ্যুতায়িত হয়ে প্রাণ গেল আরও একটি বন্যহাতির

শেরপুরে বিদ্যুতায়িত হয়ে প্রাণ গেল আরও একটি বন্যহাতির

শেরপুরে নালিতাবাড়ী উপজেলার কাটাবাড়ী সীমান্তের বিদ্যুতায়িত হয়ে আরও একটি একটি বন্যহাতি নিহত হয়েছে। বনবিভাগের মধুটিলা রেঞ্জের আওতাধীন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে শনিবার (৫ জুলাই) সকালে বনবিভাগের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে হাতিটির মরদেহ উদ্ধার করে।

খাদ্যের সন্ধানে পাহাড় থেকে নেমে আসা হাতিটি বৈদ্যুতিক ফাঁদে পড়ে নিহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে বনবিভাগ।

মধুটিলা রেঞ্জের রেঞ্জার দেওয়ান আলী ঘটনাটি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, হাতিটির শুড়ে পোড়া ক্ষতের দাগ রয়েছে। এটির বয়স ১৫ থেকে ২০ বছর হবে। এটি একটি মাদি হাতি। এ ব্যাপারে পরবর্তী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, সাম্প্রতিককালে মধুটিলা রেঞ্জের আওতাধীন এলাকায় খাদ্যের সন্ধানে বন্যহাতি লোকালয়ে নেমে আসার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। খেতে ফসল না থাকায় হাতির দল বাড়িঘরেও হানা দিচ্ছে। এতে স্থানীয়ভাবে অনেক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। যেখানে বন্যহাতির দেহটি পড়ে ছিল, সেখানে কোনো ধরনের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম না থাকলেও হাতিপাগাড় ক্যাম্পের আশপাশে অনেক বসতি ও বাড়িঘর রয়েছে।

এ নিয়ে চার মাসের কম সময়ের ব্যবধানে মধুটিলা রেঞ্জ এলাকায় তিনটি বন্যহাতির মরদেহ উদ্ধার করল বনবিভাগ।

এর আগে গত ২০ মার্চ পূর্ব সমশ্চুড়া গ্রামের লালনেংগড় এলাকায় বিদ্যুতায়িত হয়ে নিহত একটি বন্যহাতির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তারপর গত ২৯ মে দাওধারা পাহাড় থেকে সদ্যোজাত একটি হাতিশাবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

ঘন ঘন হাতির মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন পরিবেশ ও প্রকৃতিপ্রেমীরা।

নিধারঞ্জন কোচ নামে এক অধিকারকর্মী নিজের ফেসবুক ওয়ালে শনিবার নিহত হাতির মরদেহের ছবি পোস্ট করে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে লিখেছেন, ‘আবারো বন্যহাতির মৃত্যু। এর শেষ কোথায়? হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব নিসনে সরকারি উদ্যোগ কী? ক্ষতিপূরণ প্রদানই কি যথেষ্ট? হাতি-মানুষের সহাবস্থানের পথ খুঁজতে খুঁজতে এশিয়ান হাতি নাই হয়ে যাবে!’

মন্তব্য

বাংলাদেশ
July 5 The Bangla blockade program announced the protests in the protest

৬ জুলাই : বিক্ষোভে উত্তাল দেশ, বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা

৬ জুলাই : বিক্ষোভে উত্তাল দেশ, বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা

২০২৪ সালের জুলাইয়ের শুরুতে কয়েকদিন ধরেই কোটা বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়।

৬ জুলাই রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে ওই দিন অবরোধ তুলে নেওয়ার আগে কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীরা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সারা বাংলাদেশ অবরোধ করার পরিকল্পনা থেকেই সেদিন এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। একই দাবিতে এইদিন সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধিকাংশ বিভাগে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা।

২০২৪ সালের ৬ জুলাই আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মোড় এক ঘণ্টার মতো অবরোধ করে রাখেন। পরে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে সেখান থেকে সরে যান তারা। এরপর শাহবাগ মোড় দিয়ে যান চলাচল শুরু হয়।

৬ জুলাই পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের কর্মসূচি ছিল শুধুমাত্র বিক্ষোভ মিছিল। ৪ জুলাই কোটা সংক্রান্ত হাইকোর্টের শুনানি পিছিয়ে দেওয়া হয়। এ রায়ের ক্ষেত্রে আদালতের দীর্ঘসূত্রতা পরিলক্ষিত হচ্ছিল। আন্দোলন ও শিক্ষার্থীদের মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে তা অবজ্ঞার চোখে দেখা হচ্ছিল। এছাড়াও শাহবাগে অবরোধ চলাকালে গাড়িগুলো পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিল। তাতে আন্দোলনের প্রভাব প্রত্যাশা অনুযায়ী পূরণ হচ্ছিল না। তখন আন্দোলনকারীরা চিন্তা করেন আরেকটু বড় পরিসরে কিছু করতে হবে। এমন চিন্তা থেকে ‘বাংলা ব¬কেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনকারীরা। ইতোমধ্যে রাজধানী ঢাকার অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে যুক্ত হয়ে যান।

অবরোধ তুলে নিয়ে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আগামীকাল বিকাল তিনটা থেকে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হলো। শুধু শাহবাগ মোড় নয়, শাহবাগ ও ঢাকা শহরের সায়েন্সল্যাব, চানখাঁরপুল, নীলক্ষেত, মতিঝিলসহ প্রতিটি পয়েন্টে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা নেমে এসে কর্মসূচি সফল করবেন। ঢাকার বাইরের জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করবেন।’

তিনি বলেন, ‘সরকার মনে করছে আমরা দুই-তিনদিন রাস্তা অবরোধ করে ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরে যাব। সরকারের এই ধারণা যে ভুল সেটি আমাদের প্রমাণ করে দিতে হবে।

আমরা এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি প্রয়োজনে আমরা হরতাল দিতে বাধ্য হব। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী যেখানে আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, কোটা থাকবে না, সেই কোটা এখন কেন ফিরে আসল এর জবাব আমরা চাই। শুধু প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতেই নয় তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতেও কোটার বৈষম্য দূর করতে হবে।’

ছাত্র ধর্মঘট ও ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচিতে ইতোমধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরে গেলেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাসে ফিরে যাব না।’

‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণার আগের রাতে কার্জন হলের হোয়াইট হাউসের সিঁড়িতে বসে আন্দোলনের সংগঠকরা বৈঠক করে ‘বাংলা ব্লকেড’ নাম চূড়ান্ত করেন। এই কর্মসূচি কীভাবে সফল করা যায়, কোন কোন পয়েন্টে কোন কোন প্রতিষ্ঠান থাকবে, কোন পয়েন্টে কোন হল থাকবে, তা নিয়েও সেখানে আলোচনা হয়। বৈঠক থেকে প্রতিটি হলের প্রতিনিধিদের দায়িত্বও ভাগ করা হয়।

ঢাকা ও ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত-সায়েন্সল্যাবে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জিরো পয়েন্টে এবং বোরহানুদ্দীন কলেজের শিক্ষর্থীরা চানখাঁরপুলে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করবে। এদিকে আন্দোলনকারীরা চিন্তা করেন যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে তাদের সবাইকে শাহবাগে নিয়ে আসার প্রয়োজন নেই।

ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমাগমও যথেষ্ট বড় হচ্ছিল।

ওইদিন বিকাল সোয়া তিনটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাসের শ্যাডো ও মল চত্বর প্রদক্ষিণ করে মাস্টারদা সূর্যসেন হল ও হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের সামনে দিয়ে স্মৃতি চিরন্তন চত্বর, টিএসসি ও বকশী বাজার হয়ে বুয়েট ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে পলাশী ও আজিমপুর এলাকা ঘুরে ফের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে শাহবাগ মোড়ে এসে বিক্ষোভ করেন।

এর আগেই আন্দোলনকারীদের একটি অংশ শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনের সড়কে মূল মিছিল আসার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। মূল মিছিলটি চারুকলা অনুষদের সামনে আসতেই জাদুঘরের সামনে অপেক্ষমান শিক্ষার্থীরা ৪টা ৩৭ মিনিটে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। এরপর তারা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে ৫০ মিনিট এ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন।

একই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সবগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটাবিরোধী শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। এর পাশাপাশি বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ঢাকা, টাঙ্গাইল, রাজশাহী, রংপুর, কুষ্টিয়া ও চট্টগ্রামে সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করেন।

২০২৪ সালের ৬ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত থাকা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কোটা আন্দোলন নিয়ে পোস্ট দেওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাজবিজ্ঞান ডিবেটিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। মোশাররফ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী।

ওইদিন রাজধানীর তাঁতিবাজার মোড় অবরোধ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দুই ঘণ্টা পর বিকেল পাঁচটায় শিক্ষার্থীরা তাঁতিবাজার মোড় ত্যাগ করে মিছিল নিয়ে জবি ক্যাম্পাসে ফিরে যান।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’—এর ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে আন্দোলনের বার্তা পৌঁছে দেন বিক্ষোভকারীরা। এ সময় তারা বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধের ঘোষণা দেন।

এইদিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন উপেক্ষা করে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোড থেকে মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। বিক্ষোভ চলে দুপুর ১২টা পর্যন্ত।

এদিকে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা কোটা ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।

দুপুর ১২টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টাব্যাপী তারা এ বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।

৬ জুলাই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকসংলগ্ন কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেন। অবরোধ চলাকালে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলেও শিক্ষার্থীরা বৃষ্টি উপেক্ষা করে অবরোধ চালিয়ে যান। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ভবনসংলগ্ন বটতলা থেকে পদযাত্রা শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।

চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় দিনের মতো নগরীর সড়ক অবরোধ করেন। এইদিন বিকাল ৫টার দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শাটল ট্রেনে এসে নগরীর ষোলশহর স্টেশনে অবস্থান নেন। এর সাথে যুক্ত হন চট্টগ্রামের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দুপুর ১২টায় রংপুরের মডার্ন মোড়ে রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন। দেড় ঘণ্টা অবরোধ শেষে দুপুর পৌনে ২টার দিকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়ে অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা।

মন্তব্য

p
উপরে