ইউভাল নোয়া হারারি সম্পর্কে প্রথম শুনি তার বই স্যাপিয়েন্স প্রকাশের পর। পরিচিত মহলের অনেকেই বইটির প্রশংসা করেছেন। আমার স্যাপিয়েন্স পড়া হতে হতে হারারির পরের দুই বই হোমো ডিউস ও টুয়েন্টি ওয়ান লেসনস ফর টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি-ও প্রকাশিত হয়ে গিয়েছিল। অর্থাৎ স্যাপিয়েন্স পড়ার ক্ষেত্রে আমি সম্ভবত পিছিয়ে পড়াদের অন্তর্ভুক্ত। তবে স্যাপিয়েন্স বইটি আমাকে দারুণভাবে নাড়া দিয়েছিল। ৭০ হাজার বছর আগে কীভাবে নানা প্রজাতির মানুষের ভেতর থেকে হোমো স্যাপিয়েন্স তথা আমরাই টিকে গেলাম কিংবা কীভাবেই বা এই পৃথিবী আসলে মানুষের পৃথিবীতে পরিণত হলো, তার এক দারুণ ও ভিন্নরূপী ধারাবর্ণনা করেছেন হারারি তার এই বইতে।
পৃথিবী কিংবা মানুষের ইতিহাস বর্ণনার প্রচলিত পদ্ধতিগুলোর বাইরে গিয়ে ৭০ হাজার বছর আগের বুদ্ধিবৃত্তিক বিপ্লব, ১২ হাজার বছর আগের কৃষি বিপ্লব ও ৫০০ বছর আগের বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের মাধ্যমে মানুষের ইতিহাস সাজিয়ে হারারি স্যাপিয়েন্সের অগ্রযাত্রার মূল বাঁকগুলো অনেকটাই নিখুঁতভাবে তুলে ধরতে পেরেছেন বলে মনে হয়। ফলে হারারির একটা প্রভাব নিশ্চিতভাবেই তার পাঠকদের ওপর পড়ার কথা ও তা দীর্ঘদিন বিদ্যমানও থাকার কথা। হাজার হাজার বছরের মানুষের ইতিহাস বা মানুষকে বোঝার জন্যে এই বইটি পড়া বেশ জরুরি। যদিও হারারির লেখনীর কিছু অংশ থেকে তার পশ্চিমমুখীনতা খুব সহজেই ধরা পড়ে।
তবে হারারির এই পশ্চিমমুখীনতা কি আসলে খুব বড় কোনো সমস্যা? হারারি যদি ইসরায়েল তথা মধ্যপ্রাচ্যের মানুষ না হতেন তাহলে হয়তো বিষয়টা নিয়ে আলোচনারও কিছু থাকতো না। কারণ পশ্চিমের কয়জন তাত্ত্বিক পশ্চিম তথা ইউরোপের বাইরের বিশ্ব নিয়ে ভেবেছেন বা ভাবলেও প্রচলিত ধারণার বাইরে এসে ভাবার চেষ্টা করেছেন? সেই সংখ্যা খুব বেশি হওয়ার কথা না। আবার এ কথাও সত্য যে যদি ৫০০ বছর আগের যে বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের ফলে স্যাপিয়েন্সের মূল অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে বলে হারারি বলতে চান, সেই বৈজ্ঞানিক অগ্রযাত্রা তো আসলে ইউরোপেরই অগ্রযাত্রা।
চার্চের কর্তৃত্ব থেকে বের হয়ে কিংবা উপনিবেশের গোড়াপত্তন কিংবা পুঁজিবাদের উত্থান, সবকিছুর পেছনে হারারির ভাষায় ছিল মানুষের ‘অজ্ঞতা আবিষ্কার’, প্রাচ্যের মানুষেরা একে বলতে পারেন ইউরোপের মানুষের ‘অজ্ঞতা আবিষ্কার’। তাই সেই সময়ের বৈজ্ঞানিক অগ্রযাত্রাকে ধরে মানুষের ইতিহাস বর্ণনা করতে হলে সম্ভবত হারারির ইউরোপকেন্দ্রিক হওয়া ছাড়া উপায়ও খুব বেশি ছিল না।
কিন্তু আপাত দৃষ্টিতে যা যতটা সরল, তা সম্ভবত ততটা সরল আদৌ নয়। তাই স্যাপিয়েন্স পড়ে হারারির ভূয়সী প্রশংসা করলেও হারারিকে ক্রিটিক্যালি পড়ার একটা প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় দৃঢ়ভাবে। হারারির দ্বিতীয় বই হোমো ডিউস পড়ার পর তাকে ক্রিটিক্যালি ভাবা ছাড়া রেহাই দিলে আদতে কিছু বিপদের শঙ্কা হয়তো থেকে যায়। স্যাপিয়েন্স-এর উপশিরোনাম ছিল ‘আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব হিউম্যানকাইন্ড’, আর হোমো ডিউস-এর উপশিরোনাম হলো ‘আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টুমরো’। হোমো ডিউস-এর এই উপশিরোনাম থেকেই বুঝতে পারা যায় যে এই বইতে হারারি আসলে আলোচনা করতে চাচ্ছেন আগামী দিনগুলোতে আমাদের সাথে কী হতে যাচ্ছে তা নিয়ে।
যেহেতু হারারি হোমো ডিউস-এ ভবিষ্যত সময়ের চিত্র আঁকতে চেয়েছেন, তাই বলতেই হয়, এই বইয়ের অনেক কিছুই হারারির এক ধরনের অনুমান, যা তিনি বর্তমান বাস্তবতা থেকে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন। বইটির কোনো কোনো অংশে হারারি তা স্বীকার করেও নিয়েছেন, যা করাই স্বাভাবিক।
কিন্তু বিপদ হলো, অতীত ও বর্তমানের আলোকে যে ভবিষ্যতের সম্ভাবনা বা শঙ্কা হারারি করছেন, তাকে একেবারে নিষ্পাপ চিন্তা বা কল্পনা বলে ছেড়ে দিলে বিপদের সম্ভাবনা আছে।
তো হারারি আসলে কী বলেছেন? মোটাদাগে যদি হোমো ডিউস-এ হারারির উপসংহার বলতে হয়, তাহলে বলতে হবে যে প্রাযুক্তিক উন্নয়নের একটি পর্যায়ে রক্তমাংসের মানুষের অনেক কাজই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে সম্পাদিত হবে এবং ডেটা বা তথ্য হয়ে উঠবে আগামী দিনের ধর্মের মতো একটি বিষয়, কিংবা বলা যেতে পারে ডেটা বা তথ্যই হয়ে উঠবে সবচেয়ে বড় সম্পদ।
এই উপসংহারে পৌঁছানোর আগে হারারি বলেছেন যে গত ৫০০ বছরে, অর্থাৎ বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের ফলে মানুষ দুর্ভিক্ষ, মহামারী ও যুদ্ধের মতো বিপর্যয়গুলোতে এখন আর আগের মতো ভুক্তভোগী নয়। স্যাপিয়েন্স-এও তিনি যুদ্ধের ক্ষেত্রে একই আলোচনা করেছিলেন। কিন্তু হারারি যে হিসাবে যুদ্ধ কমে যাওয়ার কথা বলেন, সেই হিসাব কিংবা তথ্য ত্রুটিপূর্ণ মনে হয় এই কারণে যে, আগে কতজন মানুষ যুদ্ধবিগ্রহে মারা গিয়েছে আর এখন কতজন মারা যাচ্ছে কিংবা যুদ্ধের পরিমাণ কমে যাওয়ার হিসাব দিয়ে যুদ্ধের বিচার করা যায় কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থেকে যাওয়া স্বাভাবিক।
যাই হোক, এই দাবির পর হোমো ডিউস-এ হারারি বলছেন, আগামী দিনগুলোতে মানুষ তিনটি বিষয় বা ক্ষমতা অর্জনের জন্যে কাজ করবে। এগুলো হলো সুখ, অমরত্ব ও ঈশ্বরত্ব বা ঈশ্বরে পরিণত হওয়া। আর্থ-রাজনীতিক ও স্বাস্থ্যগত উন্নয়নের মাধ্যমে প্রথম দুইটি ক্ষমতা অর্জন করা সম্ভব হলেও মানুষ কীভাবে নিজেদের ঈশ্বরে পরিণত করবে?
হারারি বলতে চান, প্রাযুক্তিক উন্নয়নের কারণে মানুষের কাছে আগামী দিনগুলোতে এমন সব ক্ষমতা থাকবে যার কারণে প্রতিটি মানুষ আসলে ঈশ্বরের মতোই ক্ষমতাবান হয়ে উঠবে। আর সামষ্টিক পর্যাতে ডেটা বা তথ্য এই কাজটি করে দেবে। তিনি বলতে চান, মানুষের সম্পর্কে যত বেশি তথ্য কেন্দ্রীয়ভাবে এক জায়গায় জমা করে রাখা যাবে, তত সহজ হবে মানুষের দৈনন্দিন জীবন, নিরাপত্তাপ্রদান ও স্বাস্থ্যগত সুরক্ষা। এক্ষেত্রে তিনি কেন্দ্রীয় কোনো প্রশাসনের কাছে আপনার-আমার সব তথ্য দিয়ে নিশ্চিন্তে জীবন পার করার পক্ষপাতী ও আমাদেরকে তাই হতে বলেন।
হারারি যেসব সুবিধা বা ক্ষমতার কথা বলেছেন, তার সবই হয়তো আমরা অনেকেই চাই, কিন্তু নিজের একান্ত গোপনীয়তা আরেকজনের হাতে তুলে দিয়ে এটা চাই কিনা তা নিয়ে আসলে ভাবার আছে। যদিও আমাদের হাতে হাতে থাকা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে গুগল ও অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমগুলো ইতোমধ্যেই আমাদেরকে আমাদের চেয়েও বেশি জেনে ফেলেছে ও প্রতিনিয়ত আরো বেশি করে জেনে নিয়ে তার মুনাফা বৃদ্ধি করছে। অর্থাৎ পুঁজিবাদের মুনাফা গোটাকয়েক কোম্পানি আর করপোরেশনের হাতে জমা হচ্ছে। তবে হারারি যেভাবে তথ্য দিতে বলছেন, তার ভেতর স্বপ্রণোদিত হওয়ার একটা ব্যাপার আছে, যা সম্ভবত এই গুগলগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে আমরা হচ্ছি না। কিন্তু হারারি তার হোমো ডিউস-এ পাঠকদের যে পথে যেতে বলেন, সেখানে একচেটিয়া পুঁজিবাদের জয়জয়কার ছাড়া খুব বেশি কিছু আদৌ দেখা যায় না। তার ওপর হারারি বলতে চান যে পশ্চিমা মানবতাবাদ যেখানে প্রায় ৫০০ বছর ধরে মানুষের বিভিন্ন কার্যক্রমের কেন্দ্রীয় চিন্তার বিষয় হিসেবে আবর্তিত হয়ে এসেছে, সেগুলো আসলে মানুষের মস্তিষ্কের কিছু ইলেক্ট্রনের কম্পন ছাড়া তেমন কিছু নয়। তিনি জোর দিয়ে বলতে চান, মানুষ সামনের দিনগুলোতে বুঝে যাবে আত্মা, সততা, নৈতিকতা আসলে তেমন কোনো অস্তিত্বশীল বিষয় নয়।
সমস্যাটা হচ্ছে, হারারিকে পুরোপুরি বাতিল করা সম্ভব নয়। হারারি দারুণ দারুণ সত্য তথ্যের ভেতর সূক্ষ্মভাবে এমন সব বিষয়ের পক্ষে কথা বলেন, যার ফলাফল হিসেবে মানুষের নিজেদের ভেতরের সম্পর্কের স্পর্শকাতরতা, গোপনীয়তা, আবেগ কমে যাবে কিন্তু বৃদ্ধি পাবে নিরাপত্তা, কেটে যাবে রোগ-শোকে মৃত্যুর ভয় কিংবা পাওয়া যাবে অমরত্ব। কিন্তু এই অমরত্বের জন্যে জীবনের যে দর্শন ত্যাগ করার দিকে হারারি আমাদের সূক্ষ্মভাবে ইঙ্গিত দিয়ে যান, সেদিকে যদি আমরা এগিয়ে যাই, তাহলে যে জীবন মানুষের জন্যে অপেক্ষা করে আছে, তা কি আদৌ মানুষের জীবন হতে যাচ্ছে? নাকি এতক্ষণ যা বলা হলো সেগুলোই আসলে সেকেলে কথা?
শিবলী নোমান: শিক্ষক, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি), অতিরিক্ত আইজিপি এ কে এম শহিদুর রহমান বলেছেন, মব ভায়োলেন্স বা মব সন্ত্রাস করে এ দেশের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করা যাবে না। অপরাধী যেই হোক বা যে দলেরই হোক, আমরা তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করব।
শনিবার (১২ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সামনে ঘটে যাওয়া ব্যবসায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবস্থা গ্রহণের অগ্রগতিসহ আরও কয়েকটি ঘটনায় অপরাধীদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে প্রেস ব্রিফিং করেন র্যাবের ডিজি। ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন।
এ কে এম শহিদুর রহমান বলেন, ‘র্যাব এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেকোনো ধরনের অপরাধ সংঘটনের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের বিষয়ে তৎপর রয়েছে। দেশে বিগত কয়েক মাসে ঘটে যাওয়া অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের র্যাব গ্রেপ্তার করেছে। তাদের যেন শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়, সে ব্যাপারে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছি। মব ভায়োলেন্স সৃষ্টির অপরাধে এ পর্যন্ত প্রায় ২০ জন অপরাধীকে র্যাব আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে।’
‘গত ২ জুলাই লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম থানায় সন্ত্রাসী কর্তৃক মব সৃষ্টির মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের আহত করে আসামিদের ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমরা ৩ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। এ ছাড়াও গত ৩ জুলাই কুমিল্লার মুরাদনগরে ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় একই পরিবারের মা ও দুই সন্তানের ওপর মব ভায়োলেন্সের অযাচিত ঘটনায় ৬ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
সলিমুল্লাহ মেডিকেলের সামনে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র্যাব কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত এজাহারনামীয় ৪ নম্বর আসামি আলমগীর (২৮) এবং ৫ নম্বর আসামি মনির ওরফে লম্বা মনিরকে (৩২) আমরা গতকাল (শুক্রবার) রাজধানীর কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি।’
‘এ ঘটনায় আমরা ছায়া তদন্ত করছি, আর পুরো বিষয়টি দেখছে ডিএমপির তদন্ত বিভাগ।’
র্যাবের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।
রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ সোহাগকে (৩৯) নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনাকে খুবই দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
শনিবার (১২ জুলাই) রাজধানীর পুরান ঢাকার মিল ব্যারাকে পুলিশের বিশেষ কল্যাণ সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ব্যবসায়ী হত্যা ও মব সহিংসতা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র বলেন, ‘ঢাকায় যে হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে, সেটা খুবই দুঃখজনক। এ ঘটনায় এরই মধ্যে পাঁচজনকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। গতকালও র্যাব দুজন ও ডিএমপি দুজনকে ধরেছে। পরে আরও একজনকে ধরা হয়েছে।’
বাকিদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সতর্ক অবস্থায় আছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা মোটামুটি অসহিষ্ণু হয়ে পড়েছি। ছোটখাট ঘটনায়ও সংঘাতে জড়িয়ে পড়ি। এই জিনিসটা বন্ধ করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এর আগে চাঁদপুরে, খুলনা ও চট্টগ্রামের ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। যেগুলো হচ্ছে, আমরা সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
পুলিশের মিল ব্যারাক এলাকা পরিদর্শন নিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে পরিদর্শনের উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদের সঙ্গে একটু কথা বলা। তাদের থাকা ও খাবারের মান দেখা। আগামী নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজনে তাদের একটি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব এখানে।’
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে চাই বলেও এ সময় মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কবে হবে, সেটা আমরা জানি না। সেটা জানাবে নির্বাচন কমিশন।’
অভিযানে গৌরবময় অবদান রাখায় প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের টাগবোট ‘বিসিজিটি প্রমত্ত’ এবং এর ক্রুদের ‘প্রশংসাপত্র’ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও)।
শনিবার সকালে কোস্টগার্ড সদর দপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হারুন-অর-রশীদ বাসস’কে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থানকালে গত বছর ৫ অক্টোবর রাতে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) মালিকানাধীন তেলবাহী জাহাজ ‘এমটি বাংলার সৌরভ’-এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। দ্রুত ও কার্যকর অগ্নিনির্বাপণ এবং সামুদ্রিক পরিবেশগত বিপর্যয় রোধে ‘বিসিজিটি প্রমত্ত’ অসাধারণ ভূমিকা রাখে।
ঘটনার সময় ট্যাংকারটিতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে এবং আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, যা সামুদ্রিক জীববৈচিত্র ও পরিবেশের জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। তৎক্ষণাৎ জরুরি উদ্ধার অভিযান শুরু করে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড।
‘বিসিজিটি প্রমত্ত’ এবং এর সাহসী নাবিকরা ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সফল অভিযান পরিচালনা করেন। সেই অভিযানে ৪৮ জন নাবিককে উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি তেল ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে কার্যকর ব্যারিয়ার স্থাপন ও বর্জ্য সংগ্রহের মাধ্যমে গভীর সমুদ্রে দূষণরোধ করা হয়।
এই দৃষ্টান্তমূলক ও সাহসিকতাপূর্ণ অভিযানের জন্য আন্তর্জাতিক মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও) ‘বিসিজিটি প্রমত্ত’ এবং এর ক্রুদের ‘লেটার অব কমান্ডেশন' দিয়েছে।
আইএমও এই অভিযানে প্রদর্শিত পেশাদারিত্ব, দক্ষতা, পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা এবং আন্তর্জাতিক নৌ নিরাপত্তা নীতিমালা অনুসরণের বিষয়গুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে মূল্যায়ন করেছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আইএমও’র এই স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও দেশের জন্য বড় অর্জন। এটি শুধু কোস্টগার্ড নয়, পুরো দেশের জন্যই গর্বের। এই স্বীকৃতি প্রমাণ করে, কোস্টগার্ড একটি আধুনিক ও দক্ষ বাহিনী হিসেবে যেকোন দুর্যোগে সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম।
লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হারুন-অর-রশীদ আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ কোস্টগার্ড সর্বদা সমুদ্রসীমায় নিরাপত্তা বিধান, বিপদগ্রস্তদের উদ্ধার, সমুদ্র দূষণ প্রতিরোধ ও পরিবেশ সুরক্ষার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ভবিষ্যতেও বাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী দায়িত্ব পালনে বদ্ধপরিকর থাকবে।
টানা চার দিনের মুষলধারে বৃষ্টিপাতের পর টানা দুদিন নোয়াখালীতে রোদ্রৌউজ্জ্বল আবহাওয়া বিরাজ করছে। এতে অধিকাংশ উপজেলায় জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর, দুর্গাপুর ও লক্ষীনারায়ণপুর গ্রামসহ কয়েকটি গ্রামে পানি বেড়েছে। স্থানীয়দের ধারণা ফেনীর পানি ঢুকে বৃষ্টি না থাকলে এ অঞ্চলে পানি বেড়েছে।
শনিবার (১১ জুলাই) সকালে জেলার সদর, সুবর্ণচর, কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলার বাসিন্দারা জানায় তাদের এলাকায় পানি নামছে ধীর গতিতে। এজন্য বেশিরভাগ এলাকায় এখনো বন্যার পানি জমে থাকায় জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জেলার ছয়টি উপজেলার ৫৭টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়েছে। এতে ৪৬ হাজার ৭০টি পরিবারের প্রায় ১ লাখ ৯২ হাজার ৫০৩ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। কবিরহাট ও সুবর্ণচর উপজেলায় আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪৫টি বসতঘর। সুবর্ণচরে একটি বসতঘর সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ,পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাব এবং পানি নিষ্কাশনের নালা ও জলাশয় গুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় শহরবাসীর এ দুর্ভোগ। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকে দায়ী করছেন অনেকে। হালকা বৃষ্টিতেই নোয়াখালী পৌরসভা এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এদিকে মাইজদীর লক্ষ্মীনারায়ণপুর, সেন্ট্রাল রোড, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা শিল্পকলা একাডেমিসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় এখনো রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে রয়েছে। আশপাশের অনেক বাসাবাড়িতেও পানি জমে রয়েছে। টানা বৃষ্টির বিরতিতে মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেলেও জলাবদ্ধতা ও বন্যা পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হয়নি।
জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় নোয়াখালীতে তেমন কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি। আপাতত ভারী বৃষ্টিরও সম্ভাবনা নেই। তবে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে।
জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান বলেন, পাঁচটি উপজেলায় ৪৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ১ হাজার ৮৫০ জন মানুষ এবং ১৭১টি গবাদি পশু। দুর্গতদের চিকিৎসায় ৫১টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে, যার মধ্যে ২৯টি কাজ শুরু করেছে। বন্যার ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, পানি নিষ্কাশনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। বৃষ্টি না হলে জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, মিটফোর্ডের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচারে সরকার বদ্ধপরিকর। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইনের অধীনে দ্রুততম সময়ে বিচার শেষ করা হবে।
উপদেষ্টা শনিবার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, মিটফোর্ডের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচারে সরকার বদ্ধপরিকর। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৫ জনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।
তিনি আরো বলেন, এই পাশবিক হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। দায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হবে এবং ধারা ১০-এর অধীনে দ্রুততম সময়ে বিচার নিশ্চিত করা হবে।
গত বুধবার রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯)। হত্যার আগে তাকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে ও ইট-পাথরের আঘাতে মাথা ও শরীর থেঁতলে দেওয়া হয়।
এই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ, মামলার এজাহার, নিহতের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা এবং তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে হত্যাকাণ্ডের এমন বর্ণনা উঠে এসেছে।
মিটফোর্ড (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) হাসপাতালের সামনের ব্যস্ত সড়কে প্রকাশ্যে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। তদন্তকারী কর্মকর্তারা ও স্থানীয় সূত্র জানায়, হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ চাঁদাবাজি। নিহত লাল চাঁদ একসময় যুবদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
এদিকে, অভিযুক্ত নেতা-কর্মীদের দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে বিএনপি। পাশাপাশি ঘটনার নিন্দা জানিয়ে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। বিএনপি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা পুনর্ব্যক্ত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে আসকর আলী (২৪) নামে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন।
শনিবার (১২ জুলাই) ভোরে উপজেলার মিনাপুর সীমান্তের ৩৫৩ নম্বর প্রধান পিলারের কাছে ভারতের অভ্যন্তরে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত আসকর আলী হরিপুর উপজেলার জীবনপুর গ্রামের কানুরার ছেলে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
স্থানীয় সূত্র ও বিজিবি জানায়, শনিবার ভোর আনুমানিক চারটার দিকে আসকর আলীসহ কয়েকজন মিনাপুর সীমান্তের ৩৫৩ নম্বর প্রধান পিলার সংলগ্ন এলাকা দিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে যান। এ সময় ভারতের কিষাণগঞ্জ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে আসকর আলী ঘটনাস্থলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তার মরদেহ ভারতের প্রায় ২০০ গজ অভ্যন্তরে পড়ে আছে বলে জানা গেছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সীমান্তে অতিরিক্ত বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। অপরদিকে, ভারতের সীমান্তেও অতিরিক্ত বিএসএফ সদস্য মোতায়েন রয়েছে বলে জানা গেছে।
দিনাজপুর ৪২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা ঘটনাটি সম্পর্কে অবগত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা শুরু করেছে। নিহত যুবকের লাশ ফেরত আনার জন্য বিএসএফকে পতাকা বৈঠকে বসার আহ্বান জানানো হয়েছে।
৪২ বিজিবি জানিয়েছে, "আমরা বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগ করে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে লাশটি ফেরত আনার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-এর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক কার্যালয়ের আঞ্চলিক পরিচালক সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে অনির্দিষ্টকালের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে পুতুলের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের গুরুতর অভিযোগের তদন্ত চলাকালীন শুক্রবার এ সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি।
ডব্লিউএইচও’র এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ সরকার বলেছে, আমরা এটিকে জবাবদিহিতার পথে গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে দেখি।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম শনিবার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে সরকারের এই বক্তব্য তুলে ধরেন।
সায়মা ওয়াজেদকে পদ থেকে অপসারণ প্রসঙ্গে তিনি লেখেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এর একটি স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন, যেখানে সায়মা ওয়াজেদকে তার পদ থেকে অপসারণ করা হবে, তার সকল সুযোগ-সুবিধা বাতিল করা হবে এবং এই মর্যাদাপূর্ণ দায়িত্বের সততা ও জাতিসংঘ ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরুদ্ধার করা হবে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ও বিশ্ববাসী স্বচ্ছতা, সততা ও ন্যায়বিচারের আবির্ভাবে আনন্দিত।
মন্তব্য