বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম ২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। আজ ১২ সেপ্টেম্বর বাউল শাহ আব্দুল করিমের মৃত্যুবার্ষিকী। সাধারণত উল্লেখযোগ্য কোনো গায়ক-কবি-সাহিত্যিকের মৃত্যুবার্ষিকী কিংবা জন্মবার্ষিকীতে আমরা তার কবিতা পাঠ করি, গল্প পড়ি কিংবা গান শুনে তার সৃষ্টির তাৎপর্য বুঝতে চেষ্টা করি, তাকে স্মরণ করি ও তাকে অনুভব করার মাধ্যমে দিনাতিপাত করি। তাছাড়া সারা বছরই হয়তো তার কবিতা আবৃত্তি বা গান শোনা হয়ে উঠে না, যদিও ব্যক্তিবিশেষে এর ব্যতিক্রম ঘটতে পারে। তবে আমার ধারণা, বাংলাদেশে শাহ আব্দুল করিমের ক্ষেত্রে এই চর্চার ব্যত্যয় ঘটে যায়। তার কারণ আমি নিশ্চিত করে বলে দিতে পারি যে প্রতিটি মুহূর্তে বাংলাদেশের কোথাও না কোথাও শাহ আব্দুল করিমের গান বাজতে শোনা যায় কিংবা হয়তো মনের অজান্তেই কেউ গেয়ে ওঠে। এত অল্প সময়ে এতটা জনপ্রিয় হয়ে ওঠা শিল্পী সারা বিশ্বে হয়তো খুব কমই আছেন বলে আমার বিশ্বাস। উপরন্তু, শাহ আব্দুল করিমের গান গেয়ে অনেকেই বিখ্যাত হয়ে গেছেন এরকম নজির আছে। আমি দেখেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা যেকোনো একটি বাদ্যযন্ত্র বাজানো শিখতে গিয়ে যে পরিমাণ পরিশ্রম ও মেধা খরচ করেন এতে মাঝে মাঝে অবাক লাগে যে পড়লেখা না জানা, গানের ব্যাকরণ পড়তে না পারা এমন অনেকেই খুব সহজেই বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র অনায়াসে বাজাতে পারছেন। আমি নিজেও ছাত্রজীবন থেকেই দেশীয় বাদ্যযন্ত্রগুলো শেখার জন্য উৎসাহী ছিলাম, সময়ের অভাবেই হোক কিংবা যথেষ্ট চেষ্টার অভাবেই হোক সামান্য টুংটাং ছাড়া কিছুই শিখতে পারিনি, গান রচনা করা তো দূরের ব্যাপার।
প্রাথমিক ধারণা থেকে কোনো চিন্তা না করেই বলে দেয়া যায় যে শাহ আব্দুল করিমের রচিত গানগুলো গণমানুষের গান। এছাড়াও, এই ভূখণ্ডে অধ্যাত্মচেতনা, দেহতত্ত্ব, নিগূঢ়তত্ত্ব, দেশপ্রেম, প্রকৃতিপ্রেম, মানবপ্রেম ইত্যাদি বিষয়নির্ভর গান সমাদৃত হয়েছে কালে কালে। বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম এই সকল বিষয়েই গান রচনা করেছেন আঞ্চলিক ভাষায়। পাশাপাশি একজন কীর্তিমান চিত্রশিল্পী যেভাবে চিত্রকর্মের মাধ্যমে বিষয়বস্তু ফুটিয়ে তোলেন তেমনি তার গানের মাধ্যমে তিনি তুলে ধরেছেন হাওর অঞ্চলের মানুষের জীবন চক্র, ভাটি বাংলার গ্রামীণ সংস্কৃতি ও শ্বাশ্বত বাংলার মানুষের যাপিত জীবনের চিত্র। আবহমান কাল থেকে ঘটে যাওয়া ঘটনা ও চিরায়ত বাংলার ঐতিহ্য, জীবন-দর্শন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে তিনি ভেবেছেন, গানের কথার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন সাবলীলভাবে। তার যে কয়েকটি গানে ভাটি বাংলার সাধারণ মানুষের জীবন ধারা ও হাওরের মানুষের জীবনের চিত্র উঠে এসেছে তার কিছু দিক নিয়ে আলোচনা করা হলো এখানে।
বাউল শাহ আব্দুল করিমের হাওর পাড়ের মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপন সম্পর্কে যে কয়টি গান আছে তার মধ্যে প্রথমেই সর্বাধিক জনপ্রিয় একটি গানের কথা উঠে আসে, আর সেটি হল ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’। এই গানে ফুটে উঠেছে হাওর অঞ্চলের মানুষের বর্ষাকালের চিত্র। হাওরে পানি যখন চারিদিকে থৈ থৈ করে, পানিবন্দী কৃষকের কৃষিকাজ বন্ধ থাকে, তখন বিনোদন হিসেবে বর্ষাকালে গ্রামের পাড়ায় পাড়ায় যাত্রা, পালাগান, কীর্তন, গাজির গান, ঘাটু গান ইত্যাদি লেগেই থাকে। কোনো না কোনো উপলক্ষ্য পেলেই খাওয়াদাওয়া, আনন্দ করা ইত্যাদি নিমিষেই শুরু হয়ে যায়। এর মধ্যে তখনকার দিনে নৌকাবাইচ হত খুব ঘটা করে যা আব্দুল করিম তার জীবদ্দশায়ই এই চর্চার অবশিষ্ট নেই বলে উল্লেখ করে গেছেন।
বর্ষাকালে ধুমধাম আনন্দের একটা কারণ হলো পানিবন্দী জীবনে বিনোদন নিয়ে আসা আবার অর্থনৈতিক একটা দিক আছে আর সেটা হলো, চৈত্র-বৈশাখ মাসে কৃষকের ঘরে ধান ওঠে, তারপর অবস্থা অনুযায়ী কয়েক মাস সাধারণ মানুষ আর্থিকভাবে সচ্ছল থাকে। এর কয়েক মাস পরেই শুরু হয় টানাপোড়েন, ধার-কর্জ-ঋণ নেয়া। সুদে ধার-কর্জ নিয়ে একটা দুষ্টুচক্রে পড়ে যায় কৃষক যা ভয়ংকর হয়ে দাঁড়ায় এক সময়। যারা দিনমজুরে যেতে পারেন তাদের আয় কিছুটা হলেও অন্যদিকে যারা লোক-লজ্জার ভয়ে দিনমজুরি করতে পারেন না না তাদের কষ্ট হয় সব থেকে বেশি। এই বিষয়টিও শাহ আব্দুল করিম তার গানে উল্লেখ করেছেন বিনীতভাবে। যেমন- ‘আল্লায় যেন কর্জের লাগি কেউর বাড়িত নেয় না, মজুরি করিয়া খাইমু ভাত যদি খাইতে পাই না।’ সাথে এটাও বলেছেন, গোঁড়াকাল থেকেই হাওরের কৃষকের এই ধার-কর্জ করার প্রক্রিয়া বিদ্যমান কিন্তু পূর্বে ধার-কর্জ হত বিনা সুদে, অন্তত মানবিকতার একটা সুতা ছিল তখন কিন্তু এখন ধার-কর্জ নিতে হয় চড়া সুদে বলে গানে উল্লেখ আছে, এমনকি আপন চাচাত ভাইয়েরাও চশমখোর হয়ে পড়ে। অবশ্য, সকল সমাজেই চাচাত ভাইদের চশমখোর হওয়ার গল্প আছে যা বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন রচনায় উল্লেখ আছে। যেমন- মহাভারতে কৌরবরা যারা পাণ্ডবদের নিঃশেষ করে দিতে চেয়েছিল এবং যার প্রকৃত কারণে পরবর্তীতে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ সংগঠিত হয়। আবার গৌতম বুদ্ধের চাচাত ভাইয়ের সম্পর্কেও চশমখোর হওয়ার গল্প প্রচলিত আছে। তেমনি, বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের গানেও এই যুগে ‘সাক্ষাত চাচাত ঘরের ভাই চশম-ভরম করে না’ বলে উল্লেখ আছে যা এই ভূখণ্ডের মানুষের চিরায়ত স্বভাব হিসেবে বিভিন্ন রচনায় উল্লেখ আছে।
শাহ আব্দুল করিমের আরেকটি গানে উল্লেখ আছে সংসার বড় হওয়ার দরুণ জমিজামা বিক্রি করে খাওয়া-পড়া চালানোর মতো অর্থও নেই। এমন অবস্থা হাওর অঞ্চলের বেশির ভাগ কৃষকের হয়ে থাকে।
একজন শাহ আব্দুল করিমকে পাঠ করার মাধ্যমে সমাজকে পাঠ করা সম্ভব, যেহেতু তিনি তার গানের মাধ্যমে গ্রামীণ চাল-চলনের সমগ্র চিত্র উপস্থাপন করে গেছেন। শাহ আব্দুল করিমের ‘কষ্ট করে আছি এখন বাইচ্চা’ গানের কয়েক কলি পরে উল্লেখ আছে ‘সংসার বড় হইল, খোরাকির টান পড়ে গেল, জমিজামা যাহা ছিল, সব ফালাইছি বেইচ্চা’– এই অবস্থা শুধু যে বাউল শাহ আব্দুল করিমের বাউল হয়ে ওঠার জন্যই হয়েছে তা নয়, এই অঞ্চলের মানুষের সন্তান জন্মদান ও লালন-পালনের ক্ষেত্রে সংসার বড় হওয়ার পর কী অবস্থা দাঁড়ায় তার চিত্র আমাদের সকলের জানা আছে, তারই উল্লেখ আব্দুল করিমের গানে উঠে এসেছে। তবে ব্যতিক্রম তো অবশ্যই আছে। সম্পদশালী গৃহস্থদের অবস্থা সব সময়ই ভালো ছিল এ অঞ্চলের। এক সময় জীবিকা বলতে দুটিই ছিল, একটি হলো কার্তিক-অগ্রাহায়ণ থেকে চৈত্র-বৈশাখ মাস নাগাদ কৃষিকাজ করা; দুই- বাকি সময়টা মাছ ধরা। তাছাড়া যাদের জমিজামা প্রচুর তাদের এসবের কিছুই ছোঁয় না। আব্দুল করিমের তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ ক্ষমতার জন্য এসবকিছুই তার গানের কলিতে উঠে এসেছে। হয়তো শতবছর পর গ্রাম শহর হয়ে যাবে, মানুষের জীবিকা পরিবর্তিত হয়ে যাবে, ধানক্ষেত খুজে পাওয়া যাবে না, কিন্তু তখন শাহ আব্দুল করিমের গানে ভাটি বাংলার এই চিত্রগুলো ভাসতেই থাকবে। ভবিষ্যতের কথা কে জানে! শাহ আব্দুল করিম গান রচনা করেছেন সৃষ্টির আনন্দে, বিখ্যাত হওয়ার মানসিকতা নিয়ে নয়। অথচ তিনিই বনে গেলেন সমগ্র বাংলাদেশে একজন প্রখ্যাত শিল্পী, দার্শনিক ও চিন্তাবিদ।
শাহ আব্দুল করিমের বিভিন্ন গানে ‘ময়ূরপঙ্খী নাও’ এর উল্লেখ আছে বহুবার। তিনি অনেকটা শাব্দিক অর্থের সাথে সাথে রূপক অর্থেও শব্দটি ব্যবহার করেছেন। এরকম শত শত শব্দ তিনি ব্যবহার করেছেন যার অর্থ দুই রকম দাঁড়ায়। চারিদিকে পানি যখন টইটুম্বুর, হাওর অঞ্চলের মানুষের প্রধান যানবাহন হয়ে উঠে নৌকা। নৌকা ছাড়া কোথাও যাওয়ার কোনো উপায় নাই। অতএব, গানে আছে তারা সন্ধ্যার পর নৌকা নিয়ে হাওরে থাকা পছন্দ করে না এবং সূর্য ডুবে যাওয়া তাদের কাছে একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়। তবে বাস্তবিক অর্থে যেদিন থেকে বৈদ্যুতিক তার ঢুকেছে হাওরে সেদিন থেকে হাওরের সৌন্দর্য ম্লান হওয়া শুরু হয়েছে বলে আমার ধারণা। কিন্তু সভ্যতা বিকাশের ক্ষেত্রে বিদ্যুতের প্রয়োজনীয়তাও অনেক। যাহোক, শাহ আব্দুল করিমের গানের বেশির ভাগ শব্দই ভাটি বাংলার সাংস্কৃতিক উপাদানগুলো মনে করিয়ে দেয় বারবার। যেমন- ‘ময়ূরপঙ্খি নাও’, ‘বইঠা বাওয়া’, ‘পঞ্চায়েত’, ‘জারিগান’, ‘সারিগান’, ‘বাউলাগান’ ইত্যাদি ।
নির্ভেজাল মানুষ শাহ আব্দুল করিম ঝগড়া পছন্দ করতেন না বলে গানে উল্লেখ করেছেন। পাড়া-প্রতিবেশী আত্মীয় স্বজনের সাথে সদ্ভাব বজায় রাখার কথা উল্লেখ করেছেন। একটি গানে উঠে এসেছে ‘গোসসা করার’ কথা, ‘মুরুগ জবো’ করে খাওানোকে ঘিরে কী কী ঘটে যায় তার কথা। হাওর অঞ্চলের মানুষেরা আত্মীয়-স্বজনকে আপ্যায়ন করতে যেসব খাবার আয়োজন করে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ঘরের মুরুগ জবাই দিয়ে খাওয়ানো এবং মুরুগ জবাই দেয়ার পর আশেপাশে প্রতিবেশীদের দাওয়াত না দিলে কিংবা অন্তত তরকারি না পাঠালে শুরু হয়ে যায় ‘গোসসার পর্ব’। তখন এক পর্যায়ে ঝগড়াও হয়ে যায়। এই বিষয়টিও শাহ আব্দুল করিম তার গানে ফুটিয়ে তুলেছেন যা গ্রামের মানুষের অতিথি আপ্যায়নের বেলায় বারংবার সম্মুখীন হতে হয়। এরকম অনেক বিষয়েই বিদ্যমান চর্চা ও অভ্যাসগুলো খুব সাবলীলভাবে সাহসিকতার সাথে নিঃসঙ্কোচে প্রকাশ করেছেন শাহ আব্দুল করিম।
শাহ আব্দুল করিম গ্রামীণ ঐতিহ্যের যেসব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বারবার গানের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য আরেকটি হলো গ্রাম্য মেলা। মেলার বর্ণনা বিশদভাবেই গানের কথার মাধ্যমে এমনভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যেন মনে হচ্ছে এটি সত্যিকারভাবেই একটি উপভোগ্য বিষয়। এই ক্ষেত্রেও মেলা উপলক্ষ্যে মানুষ মানুষকে সুদমুক্ত ঋণ দেয়ার প্রচলন ছিল বলে উল্লেখ করেছেন। পাশাপাশি, ধলমেলার পরিপ্রেক্ষিতে যা লেখা আছে তাতে আবহমান কাল থেকে হাওরের মানুষের জীবনে ঘটে আসা ঐতিহ্য ও কৃষ্টির কথা উল্লেখ করেছেন। এ ধরনের গানের ক্ষেত্রে একটি ঐতিহ্য বিলোপের আবহ ফুটিয়ে তুলেছেন এবং সত্যিকার অর্থেই কালের বিবর্তনে হয়তো কবিতা-গান-গল্প ইত্যাদি সাহিত্যের বিভিন্ন শাখা ছাড়া বাস্তবে একসময় আর খুঁজে পাওয়া যাবে না বাউলেপনা, হাওর পাড়ের সংস্কৃতিসহ আরও বিভিন্ন বিষয়।
কৃষিকাজ ও কৃষিপণ্যের উল্লেখ পাওয়া যায় আব্দুল করিমের গানে যার বেশির ভাগই এখন প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বিপন্ন হওয়ার পথে। যেমন- লাঙল, জাল ইত্যাদি। এছাড়া, খাদ্যে ভেজাল ও গ্রামীণ মেলার পণ্যের বিবরণও পাওয়া যায় তার গানের কথায়। ফসল রোপন থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলার কথা বলা আছে। সঠিক সময়ে বৃষ্টিপাত হলে ফলন ভালো হয়, আবার খরা-অতিবৃষ্টির কারণে ফলন নষ্ট হয় এসবের বর্ণনা আছে তার একটি গানে-
‘এবার ফসল ভালো দেখা যায় বা-চাচাজী
এবার ফসল ভালো দেখা যায়
ফাল্গুনে বর্ষিল মেঘ
জমি যাহা চায়-বা চাচাজী।’
একই গানে বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাতের বিষয়ে উল্লেখ আছে যা সত্যিকারভাবেই হাওর অঞ্চলের মানুষের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়ায়। খরা, অকাল বন্যা, অতিবৃষ্টি ,শিলাবৃষ্টি ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ কৃষকের স্বপ্নকে কেড়ে নেয়। শাহ আব্দুল করিমের গানে এই বিষয়ের উল্লেখ আছে এভাবে-
‘শিলাবৃষ্টি অকাল বন্যায়
বারেবারে ছাতায়
রাইত হলে ঘুম ধরে না নানান চিন্তা বা-চাচাজি।।
ইরি বোরো ফসল করি আমাদের এলাকায়
এক ফসল বিনে আমাদের
নাই অন্য উপায়-বা চাচাজী।’
সুনামগঞ্জের হাওরের ফসল প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিভিন্ন সময়েই আঘাত হেনেছে যা মানুষের কাছে প্রতিবারই ফসল তোলার সময়টায় একটা ভয়ের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নদী ও নদীপাড়ের জীবনের কথা তার বিভিন্ন গানে পাওয়া যায়। বর্ষাকালে নদী হাওরের পানিতে প্লাবিত হয় তখন নদীকে চেনা দুষ্কর হয়ে পড়ে যেখানে চৈত্রমাসে মেলার সময় মানুষ নদীরপাড়ে বসে থাকত সেখানে বর্ষাকালে নদী চিহ্নিত করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। তবে স্থানীয় মাঝি ও জেলেরা এমনকি ছোট ছোট বাচ্চারাও বলে দিতে পারে নদীর গতিপথ। এ সংক্রান্ত বিষয়গুলো তার কয়েকটি গানে উল্লেখ আছে যা বাস্তবিক অর্থেই নদী আছে এমন হাওরের জনপদের জন্য জানা পানির মত সহজ ।
বাউল সাধক শাহ আব্দুল করিমের বাল্যকালের বিভিন্ন বিষয় ফুটে উঠেছে তার গানে। এরই মাধ্যমে ভাটি এলাকার শিশুদের বিনোদন, খেলাধুলার উপকরণ, বেড়ে ওঠার চিত্র খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। এরমধ্যে – বিয়ের গান গাওয়া, ধুলাবালি নিয়ে খেলা, মার্বেল খেলা, পুতুল খেলা, লুকালুকি খেলা ইত্যাদির বর্ণনার সাথে সাথে ছোট ছোট বাচ্চাদের মুখে মুখে প্রচলিত কিছু ভীতিকর বিষয়ের বর্ণনা আছে যেমন- দাঁত পরে গেলে যদি কাকে দেখে ফেলে তো দাঁত আর উঠবে না, কিংবা পোকা ধরা আম খেলে সাঁতার শেখা যায় ইত্যাদি বিষয় এই অঞ্চলের গ্রামের শিশুদের মনের মধ্যে গেঁথে থাকে।
বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের গানের কথায় গ্রামীণ সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, কৃষ্টিসহ আবহমান কাল থেকে ঘটে আসা বিষয়গুলোও তার আধ্যাত্মিক চর্চার পাশাপাশি গানের কলিতে উঠে এসেছে। এসব বিষয়াদি কবিতা-গল্প-গানে না থাকলে সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে সাথে হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও আছে। ইতোমধ্যেই অনেক বিষয়, ঐতিহ্য হারিয়ে গেছে যা শাহ আব্দুল করিম জীবদ্দশাতেই বিদ্যমান ছিল অথচ এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে, আশ্চর্যের বিষয় হলো স্বশিক্ষিত শাহ আব্দুল করিম এই বিলুপ্ত হওয়ার প্রক্রিয়া আঁচ করতে পেরেছিলেন এবং তার গানের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় বর্ণনার পাশাপাশি আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন একজন চিত্রশিল্পী যেভাবে নিখুঁতভাবে ছবি আঁকেন ঠিক সেভাবেই। তার প্রয়াণ দিবসে আমরা তার আত্মার শান্তি কামনা করি।
লেখক: শিক্ষক, ইংরেজি বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।
(লেখাটি ইউএনবি থেকে নেয়া)
আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে আজ দুপুরে বাসস’কে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রেস উইং জানিয়েছে, পবিত্র ঈদ উল আযহা উপলক্ষ্যে আজ শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে এই ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।
চট্টগ্রামের কালুরঘাট রেলসেতুতে ট্রেনের ধাক্কায় সংঘটিত দুর্ঘটনায় শিশুসহ ৩ জন নিহতের ঘটনায় তদন্তে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। এ ছাড়া, এ ঘটনায় ৪ জন রেল কর্মীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
শুক্রবার (৬ জুন) এ তথ্য নিশ্চিত করেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা রেজাউল করিম সিদ্দিকী।
বরখাস্ত হওয়া চার রেলকর্মী হলেন— পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনের দায়িত্ব পালনকারী গার্ড সোহেল রানা (হেড কোয়ার্টার, চট্টগ্রাম), লোকো মাস্টার গোলাম রসুল, সহকারী লোকো মাস্টার আমিন উল্লাহ, এবং অস্থায়ী গেট কিপার (টিএলআর) মাহবুব।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৫ জুন) রাতে ওই দুর্ঘটনার তদন্তে চার সদস্যের তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রদান করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগের পরিবহন কর্মকর্তার নেতৃত্বে গঠিত এই তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন—চট্টগ্রাম বিভাগের ডিভিশনাল মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার (লোকো), ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার-১ ও পাহাড়তলী, চট্টগ্রামের ডিভিশনাল মেডিকেল অফিসার।
এর আগে, বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুতে ঢাকা অভিমুখী একটি ট্রেন সিএনজি চালিত অটোরিকশাকে ধাক্কা দিলে একটি শিশুসহ তিনজন নিহত ও পাঁচজন আহত হন। আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনটি সেতুতে প্রবেশ করামাত্র অটোরিকশাটিকে ধাক্কা দেয়। এ ছাড়াও মোটরসাইকেলস আরও কয়েকটি ছিল যানবাহনে ধাক্কা দেয় ট্রেনটি।
আসন্ন ঈদুল আজহায় ঢাকায় নেওয়া নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে শতভাগ নিশ্চিত বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম। তিনি জানান, নিরাপত্তা নিশ্চিতে রাজধানীজুড়ে ৫০০টি টহল দল মোতায়েন করা হয়েছে।
আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে নিরাপত্তাব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ঈদের নামাজ স্বাভাবিক নিয়মে অনুষ্ঠিত হবে এবং সারাদেশে নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।
তিনি জানান, জাতীয় ঈদগাহে যারা নামাজ আদায় করবেন, তাদের নিজস্ব জায়নামাজ আনতে হবে না, কারণ সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
প্রস্তুতির কোনো ঘাটতি নেই উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছুটির মধ্যেও সারাদেশে দায়িত্বে রয়েছে।’
ঈদের ছুটিতে প্রায় ফাঁকা রাজধানীর নিরাপত্তা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘ঢাকা শহরের অলিগলিতে ৫০০টি টহল দল মোতায়েন করা হয়েছে। মাঝেমধ্যে ছোটখাটো ঘটনা ঘটে—আমরা এমন ঘটনাও রোধে কাজ করছি।’
থানায় মামলা করতে না পারার অভিযোগ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন,‘যদি কোনো কর্মকর্তা মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানান, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মহাখালী বাস টার্মিনালে যাত্রী হয়রানির সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে এক সাংবাদিকের উপর হামলার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমার নজরে এসেছে, আমরা এটির তদন্ত করছি।’
অপরাধী গ্রেপ্তার করার কয়েকদিন পরে বের হয়ে আরও বেশি অপরাধে জড়িয়ে যায়- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেনন, ‘এটা তো আর পুলিশের হাতে না। এটা আদালতের বিষয়। কিছুদিন আগে আপনারা দেখেছেন, দুজন শীর্ষ সন্ত্রাসী ছাড়া পাওয়ার পর আবারও অপরাধে জড়িয়ে যাওয়ায় তাদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এমন যদি কেউ অবৈধকাজে জড়িয়ে যায় তাহলে তাকেও ছাড়া হবে না, পুঁটিমাছ কিংবা রুই কাতলা হোক কাউকে ছাড় নেই। আইন সবার জন্য সমান।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এবার নিরাপত্তা নিয়ে আমি ১০০ ভাগ কনফিডেন্ট আছি।
পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার উত্তর ঝাটিবুনিয়া গ্রামের কৃষক সোহাগ মৃধার উপহারের কোরবানির গরু ‘কালো মানিক’ গ্রহণ করেননি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তবে তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সোহাগকে এলাকায় ফিরে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোরবানি ঈদ উদযাপনের অনুরোধ জানিয়েছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ রাতে বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন।
এর আগে, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে ‘কালো মানিক’ নামের আদরের ষাঁড়টি নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন সোহাগ মৃধা। রাজধানীতে পৌঁছানোর পর বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে গরুটি উপহার দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও বেগম খালেদা জিয়া তা গ্রহণ না করে সোহাগের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। পরে তার পরিবারের জন্য ঈদের বিশেষ উপহারও পাঠান।
ডা. জাহিদ বলেন, বেগম খালেদা জিয়া এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কোরবানির পশু উপহার দেওয়ার জন্য সোহাগ মৃধা ও তাঁর পরিবারের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। দলীয় চেয়ারপারসনের পক্ষ থেকে তাকে ঈদের উপহারও পাঠানো হয়েছে।
সোহাগ মৃধার পরিবারের সদস্যরা জানান, কালো মানিক নামের ষাঁড়টির ওজন প্রায় ৩৫ মণ, দৈর্ঘ্য ১০ ফুট এবং উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি। কুচকুচে কালো রঙের হওয়ায় স্থানীয়রা আদর করে নাম রেখেছেন ‘কালো মানিক’। ষাঁড়টির জন্য ১০ লাখ টাকা দাম উঠলেও সোহাগ তা বিক্রি করেননি।
সোহাগ মৃধা জানান, তিনি গণতন্ত্রের মাকে (বেগম খালেদা জিয়া) এই গরুটি উপহার দিতে চেয়েছিলেন। ২০২৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শেখ হাসিনাকে এক কৃষকের গরু উপহার দেন। ওই ঘটনা দেখে তিনি অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। তখনই তাঁর মনে ইচ্ছা জাগে, সুযোগ পেলে প্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তিনিও একটি গরু উপহার দেবেন।
২০১৮ সালের শেষ দিকে স্থানীয় চৈতা বাজার থেকে মাত্র ১ লাখ ৩৭ হাজার টাকায় একটি ফ্রিজিয়ান গাভি কেনেন সোহাগ। সপ্তাহ না যেতেই গাভিটি একটি বাছুর প্রসব করে। পরে গাভিটি বিক্রি করে দেওয়া হয়। কিন্তু বাছুরটি পরিবারের সবাই মিলে ছয় বছর ধরে দেশীয় খাবার আর যত্ন দিয়ে লালন-পালন করেন। এই বাছুরই আজকের বিশালদেহী ‘কালো মানিক’।
বিএনপির আমড়াগাছিয়া ইউনিয়ন শাখার সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, সোহাগ মৃধা একজন নিবেদিতপ্রাণ বিএনপি কর্মী। পরিবারের সহায়তায় ফ্রিজিয়ান জাতের গরুটি তিনি দীর্ঘদিন ধরে লালন-পালন করেছেন।
সোহাগের মা হাজেরা বেগম বলেন, ‘ওর মন চাইছে, তাই ও উপহার দিতে চায়। আমরা খুশি। ওর বাবা নেই। সামান্য জমি চাষ করেই সংসার চালায়। ছোটবেলা থেকেই ও বিএনপিকে ভালোবাসে।’
সোহাগের স্ত্রী সুলতানা আক্তার পলি বলেন, ‘কালো মানিক আমার ছোট ছেলের বয়সী। দুজনকেই সমানভাবে স্নেহ-ভালোবাসায় লালন-পালন করেছি। ছেলের বাবার ইচ্ছা ছিল প্রিয় নেত্রীকে এটি উপহার দেবে, তাতে আমরাও খুশি।’
পদ্মা সেতু দিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫২ হাজার ৪৮৭টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ৫ কোটি ৪৩ লাখ ২৮ হাজার টাকা। এটিই এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ পরিমাণ টোল আদায়ের রেকর্ড।
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) গত বছরের একদিনে সর্বোচ্চ প্রায় পৌনে পাঁচ লাখ টাকার টোল আদায়ের রেকর্ড ভেঙে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকা টোল আদায় করা হয়।
ঈদুল আজহার ১০ দিনের লম্বা ছুটির প্রথম দিনেই এই রেকর্ড হয়েছে। তবে ছুটি ছাড়াই আগের দিন বুধবার (৪ জুন) পদ্মা সেতুতে একদিনে ৪ কোটি ৯ লাখ টাকারও বেশি টোল আদায় করা হয়েছে। এদিন ৩৭ হাজার ৪৬৫ গাড়ি পারাপার হয়েছে সেতুটি দিয়ে।
বৃহস্পতিবার মাওয়া প্রান্ত দিয়ে প্রবেশ করেছে ৩৫ হাজার ৯৮৫টি যান। এতে মাওয়ায় টোল প্লাজায় টোল আদায় হয় ৩ কোটি ১৬ লাখ ৪৩ হাজার ৮০০ টাকা।
আর জাজিরা প্রান্ত দিয়ে প্রবেশ করে ১৬ হাজার ৫০২টি যান। এসব যানবাহন থেকে ২ কোটি ২৬ লাখ ৮৪ হাজার ২০০ টাকা টোল আদায় হয়েছে বলে জানান আলতাফ।
এর আগে, ২০২২ সালের ২৬ জুন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী দিনে সর্বোচ্চ ৫১ হাজার ৩১৬টি যানবাহন পারাপারের রেকর্ড ছিল। আর ২০২৪ সালের ৯ এপ্রিল সর্বোচ্চ টোল আদায়ের রেকর্ড ছিল ৪ কোটি ৮৯ লাখ ৯৪ হাজার ৭০০ টাকা।
পদ্মা সেতুর দায়িত্বে থাকা যুগ্ম সচিব ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) আলতাফ হোসেন সেখ বলেন, ‘ঈদে ঘরমুখো মানুষ নির্বিঘ্নে বাড়ি ফেরার ক্ষেত্রে পদ্মা সেতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।’
আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু তিন বছর পূর্তি। এ পর্যন্ত টোল আদায় হয়েছে ২ হাজার ৪৫২ কোটি ৮২ লাখ টাকার বেশি । এই সময়ে ১ কোটি ৮৯ লাখ ৬৪ হাজার ২১৮ যান পারাপার হয়েছে।
কুষ্টিয়া দৌলতপুর সীমান্তে ঈদ-উল আযহাকে কেন্দ্র করে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিজিবি। সীমান্তের সার্বিক নিরাপত্তায় পুশ-ইন, গবাদি পশু চোরাচালান ও পশুর চামড়া পাচার রোধে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সর্বোচ্চ সতর্ক ও কঠোর অবস্থানে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টায় উপজেলার প্রাগপুর বিজিবি ক্যাম্পে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন, ৪৭ বিজিবি ব্যাটায়িলনের অধিনায়ক লে. কর্ণেল মাহবুব মুর্শেদ রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি উল্লেখ করেন, দেশীয় খামারিদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও বাজার স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে বিজিবি ইতোমধ্যে সীমান্ত এলাকায় গরু চোরাচালান রোধে অতিরিক্ত টহল, অস্থায়ী চেকপোস্ট, গোয়েন্দা নজরদারি ও বিশেষ অপারেশন ব্যবস্থা চালু করেছে।
একইভাবে, ঈদের পর কোরবানির চামড়া পাচার রোধে সীমান্তে বিশেষ নজরদারি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। প্রয়োজনীয় স্থানে ভ্রাম্যমাণ চেকপোস্ট ও মোবাইল টিম মোতায়েন করে চামড়ার পাচার রোধে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সমন্বয় করে যৌথ অভিযান পরিচালনার প্রস্তুতি নিয়েছে।
এছাড়াও সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশ বা পুশ-ইন প্রতিরোধেও বিজিবি কঠোর অবস্থানে রয়েছে। অনুপ্রবেশ বা পুশ-ইন প্রতিরোধের বিষয়ে প্রতিপক্ষ বিএসএফ’র সাথে পতাকা বৈঠক, লিখিত ও মৌখিক প্রতিবাদ এবং পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে ।
কুষ্টিয়া ব্যাটালিয়ন (৪৭ বিজিবি) দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ দেশের জনগণকে একটি নিরাপদ ও স্বস্থিদায়ক ঈদ উদযাপনের পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং মাদক পাচারসহ সব ধরনের অবৈধ কার্যক্রম প্রতিরোধে কঠোর অবস্থানে থাকার বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেছেন, গত বছরের তুলনায় বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ১০ শতাংশেরও বেশি।
উপদেষ্টা তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুকে এক পোস্টে জানান, ‘মে মাসে বাংলাদেশ থেকে ৪৭৩ কোটি ৭৮ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই মাসের চেয়ে ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি।’
আসিফ মাহমুদ আরো বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে রপ্তানি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন বা সাড়ে চার হাজার কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে ছিলো চার হাজার ৮৫ কোটি ডলার। সে হিসাবে পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ১০ শতাংশের বেশি।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি বাড়ার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনও তুলে ধরেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।
মন্তব্য