বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম ২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। আজ ১২ সেপ্টেম্বর বাউল শাহ আব্দুল করিমের মৃত্যুবার্ষিকী। সাধারণত উল্লেখযোগ্য কোনো গায়ক-কবি-সাহিত্যিকের মৃত্যুবার্ষিকী কিংবা জন্মবার্ষিকীতে আমরা তার কবিতা পাঠ করি, গল্প পড়ি কিংবা গান শুনে তার সৃষ্টির তাৎপর্য বুঝতে চেষ্টা করি, তাকে স্মরণ করি ও তাকে অনুভব করার মাধ্যমে দিনাতিপাত করি। তাছাড়া সারা বছরই হয়তো তার কবিতা আবৃত্তি বা গান শোনা হয়ে উঠে না, যদিও ব্যক্তিবিশেষে এর ব্যতিক্রম ঘটতে পারে। তবে আমার ধারণা, বাংলাদেশে শাহ আব্দুল করিমের ক্ষেত্রে এই চর্চার ব্যত্যয় ঘটে যায়। তার কারণ আমি নিশ্চিত করে বলে দিতে পারি যে প্রতিটি মুহূর্তে বাংলাদেশের কোথাও না কোথাও শাহ আব্দুল করিমের গান বাজতে শোনা যায় কিংবা হয়তো মনের অজান্তেই কেউ গেয়ে ওঠে। এত অল্প সময়ে এতটা জনপ্রিয় হয়ে ওঠা শিল্পী সারা বিশ্বে হয়তো খুব কমই আছেন বলে আমার বিশ্বাস। উপরন্তু, শাহ আব্দুল করিমের গান গেয়ে অনেকেই বিখ্যাত হয়ে গেছেন এরকম নজির আছে। আমি দেখেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা যেকোনো একটি বাদ্যযন্ত্র বাজানো শিখতে গিয়ে যে পরিমাণ পরিশ্রম ও মেধা খরচ করেন এতে মাঝে মাঝে অবাক লাগে যে পড়লেখা না জানা, গানের ব্যাকরণ পড়তে না পারা এমন অনেকেই খুব সহজেই বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র অনায়াসে বাজাতে পারছেন। আমি নিজেও ছাত্রজীবন থেকেই দেশীয় বাদ্যযন্ত্রগুলো শেখার জন্য উৎসাহী ছিলাম, সময়ের অভাবেই হোক কিংবা যথেষ্ট চেষ্টার অভাবেই হোক সামান্য টুংটাং ছাড়া কিছুই শিখতে পারিনি, গান রচনা করা তো দূরের ব্যাপার।
প্রাথমিক ধারণা থেকে কোনো চিন্তা না করেই বলে দেয়া যায় যে শাহ আব্দুল করিমের রচিত গানগুলো গণমানুষের গান। এছাড়াও, এই ভূখণ্ডে অধ্যাত্মচেতনা, দেহতত্ত্ব, নিগূঢ়তত্ত্ব, দেশপ্রেম, প্রকৃতিপ্রেম, মানবপ্রেম ইত্যাদি বিষয়নির্ভর গান সমাদৃত হয়েছে কালে কালে। বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম এই সকল বিষয়েই গান রচনা করেছেন আঞ্চলিক ভাষায়। পাশাপাশি একজন কীর্তিমান চিত্রশিল্পী যেভাবে চিত্রকর্মের মাধ্যমে বিষয়বস্তু ফুটিয়ে তোলেন তেমনি তার গানের মাধ্যমে তিনি তুলে ধরেছেন হাওর অঞ্চলের মানুষের জীবন চক্র, ভাটি বাংলার গ্রামীণ সংস্কৃতি ও শ্বাশ্বত বাংলার মানুষের যাপিত জীবনের চিত্র। আবহমান কাল থেকে ঘটে যাওয়া ঘটনা ও চিরায়ত বাংলার ঐতিহ্য, জীবন-দর্শন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে তিনি ভেবেছেন, গানের কথার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন সাবলীলভাবে। তার যে কয়েকটি গানে ভাটি বাংলার সাধারণ মানুষের জীবন ধারা ও হাওরের মানুষের জীবনের চিত্র উঠে এসেছে তার কিছু দিক নিয়ে আলোচনা করা হলো এখানে।
বাউল শাহ আব্দুল করিমের হাওর পাড়ের মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপন সম্পর্কে যে কয়টি গান আছে তার মধ্যে প্রথমেই সর্বাধিক জনপ্রিয় একটি গানের কথা উঠে আসে, আর সেটি হল ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’। এই গানে ফুটে উঠেছে হাওর অঞ্চলের মানুষের বর্ষাকালের চিত্র। হাওরে পানি যখন চারিদিকে থৈ থৈ করে, পানিবন্দী কৃষকের কৃষিকাজ বন্ধ থাকে, তখন বিনোদন হিসেবে বর্ষাকালে গ্রামের পাড়ায় পাড়ায় যাত্রা, পালাগান, কীর্তন, গাজির গান, ঘাটু গান ইত্যাদি লেগেই থাকে। কোনো না কোনো উপলক্ষ্য পেলেই খাওয়াদাওয়া, আনন্দ করা ইত্যাদি নিমিষেই শুরু হয়ে যায়। এর মধ্যে তখনকার দিনে নৌকাবাইচ হত খুব ঘটা করে যা আব্দুল করিম তার জীবদ্দশায়ই এই চর্চার অবশিষ্ট নেই বলে উল্লেখ করে গেছেন।
বর্ষাকালে ধুমধাম আনন্দের একটা কারণ হলো পানিবন্দী জীবনে বিনোদন নিয়ে আসা আবার অর্থনৈতিক একটা দিক আছে আর সেটা হলো, চৈত্র-বৈশাখ মাসে কৃষকের ঘরে ধান ওঠে, তারপর অবস্থা অনুযায়ী কয়েক মাস সাধারণ মানুষ আর্থিকভাবে সচ্ছল থাকে। এর কয়েক মাস পরেই শুরু হয় টানাপোড়েন, ধার-কর্জ-ঋণ নেয়া। সুদে ধার-কর্জ নিয়ে একটা দুষ্টুচক্রে পড়ে যায় কৃষক যা ভয়ংকর হয়ে দাঁড়ায় এক সময়। যারা দিনমজুরে যেতে পারেন তাদের আয় কিছুটা হলেও অন্যদিকে যারা লোক-লজ্জার ভয়ে দিনমজুরি করতে পারেন না না তাদের কষ্ট হয় সব থেকে বেশি। এই বিষয়টিও শাহ আব্দুল করিম তার গানে উল্লেখ করেছেন বিনীতভাবে। যেমন- ‘আল্লায় যেন কর্জের লাগি কেউর বাড়িত নেয় না, মজুরি করিয়া খাইমু ভাত যদি খাইতে পাই না।’ সাথে এটাও বলেছেন, গোঁড়াকাল থেকেই হাওরের কৃষকের এই ধার-কর্জ করার প্রক্রিয়া বিদ্যমান কিন্তু পূর্বে ধার-কর্জ হত বিনা সুদে, অন্তত মানবিকতার একটা সুতা ছিল তখন কিন্তু এখন ধার-কর্জ নিতে হয় চড়া সুদে বলে গানে উল্লেখ আছে, এমনকি আপন চাচাত ভাইয়েরাও চশমখোর হয়ে পড়ে। অবশ্য, সকল সমাজেই চাচাত ভাইদের চশমখোর হওয়ার গল্প আছে যা বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন রচনায় উল্লেখ আছে। যেমন- মহাভারতে কৌরবরা যারা পাণ্ডবদের নিঃশেষ করে দিতে চেয়েছিল এবং যার প্রকৃত কারণে পরবর্তীতে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ সংগঠিত হয়। আবার গৌতম বুদ্ধের চাচাত ভাইয়ের সম্পর্কেও চশমখোর হওয়ার গল্প প্রচলিত আছে। তেমনি, বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের গানেও এই যুগে ‘সাক্ষাত চাচাত ঘরের ভাই চশম-ভরম করে না’ বলে উল্লেখ আছে যা এই ভূখণ্ডের মানুষের চিরায়ত স্বভাব হিসেবে বিভিন্ন রচনায় উল্লেখ আছে।
শাহ আব্দুল করিমের আরেকটি গানে উল্লেখ আছে সংসার বড় হওয়ার দরুণ জমিজামা বিক্রি করে খাওয়া-পড়া চালানোর মতো অর্থও নেই। এমন অবস্থা হাওর অঞ্চলের বেশির ভাগ কৃষকের হয়ে থাকে।
একজন শাহ আব্দুল করিমকে পাঠ করার মাধ্যমে সমাজকে পাঠ করা সম্ভব, যেহেতু তিনি তার গানের মাধ্যমে গ্রামীণ চাল-চলনের সমগ্র চিত্র উপস্থাপন করে গেছেন। শাহ আব্দুল করিমের ‘কষ্ট করে আছি এখন বাইচ্চা’ গানের কয়েক কলি পরে উল্লেখ আছে ‘সংসার বড় হইল, খোরাকির টান পড়ে গেল, জমিজামা যাহা ছিল, সব ফালাইছি বেইচ্চা’– এই অবস্থা শুধু যে বাউল শাহ আব্দুল করিমের বাউল হয়ে ওঠার জন্যই হয়েছে তা নয়, এই অঞ্চলের মানুষের সন্তান জন্মদান ও লালন-পালনের ক্ষেত্রে সংসার বড় হওয়ার পর কী অবস্থা দাঁড়ায় তার চিত্র আমাদের সকলের জানা আছে, তারই উল্লেখ আব্দুল করিমের গানে উঠে এসেছে। তবে ব্যতিক্রম তো অবশ্যই আছে। সম্পদশালী গৃহস্থদের অবস্থা সব সময়ই ভালো ছিল এ অঞ্চলের। এক সময় জীবিকা বলতে দুটিই ছিল, একটি হলো কার্তিক-অগ্রাহায়ণ থেকে চৈত্র-বৈশাখ মাস নাগাদ কৃষিকাজ করা; দুই- বাকি সময়টা মাছ ধরা। তাছাড়া যাদের জমিজামা প্রচুর তাদের এসবের কিছুই ছোঁয় না। আব্দুল করিমের তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ ক্ষমতার জন্য এসবকিছুই তার গানের কলিতে উঠে এসেছে। হয়তো শতবছর পর গ্রাম শহর হয়ে যাবে, মানুষের জীবিকা পরিবর্তিত হয়ে যাবে, ধানক্ষেত খুজে পাওয়া যাবে না, কিন্তু তখন শাহ আব্দুল করিমের গানে ভাটি বাংলার এই চিত্রগুলো ভাসতেই থাকবে। ভবিষ্যতের কথা কে জানে! শাহ আব্দুল করিম গান রচনা করেছেন সৃষ্টির আনন্দে, বিখ্যাত হওয়ার মানসিকতা নিয়ে নয়। অথচ তিনিই বনে গেলেন সমগ্র বাংলাদেশে একজন প্রখ্যাত শিল্পী, দার্শনিক ও চিন্তাবিদ।
শাহ আব্দুল করিমের বিভিন্ন গানে ‘ময়ূরপঙ্খী নাও’ এর উল্লেখ আছে বহুবার। তিনি অনেকটা শাব্দিক অর্থের সাথে সাথে রূপক অর্থেও শব্দটি ব্যবহার করেছেন। এরকম শত শত শব্দ তিনি ব্যবহার করেছেন যার অর্থ দুই রকম দাঁড়ায়। চারিদিকে পানি যখন টইটুম্বুর, হাওর অঞ্চলের মানুষের প্রধান যানবাহন হয়ে উঠে নৌকা। নৌকা ছাড়া কোথাও যাওয়ার কোনো উপায় নাই। অতএব, গানে আছে তারা সন্ধ্যার পর নৌকা নিয়ে হাওরে থাকা পছন্দ করে না এবং সূর্য ডুবে যাওয়া তাদের কাছে একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়। তবে বাস্তবিক অর্থে যেদিন থেকে বৈদ্যুতিক তার ঢুকেছে হাওরে সেদিন থেকে হাওরের সৌন্দর্য ম্লান হওয়া শুরু হয়েছে বলে আমার ধারণা। কিন্তু সভ্যতা বিকাশের ক্ষেত্রে বিদ্যুতের প্রয়োজনীয়তাও অনেক। যাহোক, শাহ আব্দুল করিমের গানের বেশির ভাগ শব্দই ভাটি বাংলার সাংস্কৃতিক উপাদানগুলো মনে করিয়ে দেয় বারবার। যেমন- ‘ময়ূরপঙ্খি নাও’, ‘বইঠা বাওয়া’, ‘পঞ্চায়েত’, ‘জারিগান’, ‘সারিগান’, ‘বাউলাগান’ ইত্যাদি ।
নির্ভেজাল মানুষ শাহ আব্দুল করিম ঝগড়া পছন্দ করতেন না বলে গানে উল্লেখ করেছেন। পাড়া-প্রতিবেশী আত্মীয় স্বজনের সাথে সদ্ভাব বজায় রাখার কথা উল্লেখ করেছেন। একটি গানে উঠে এসেছে ‘গোসসা করার’ কথা, ‘মুরুগ জবো’ করে খাওানোকে ঘিরে কী কী ঘটে যায় তার কথা। হাওর অঞ্চলের মানুষেরা আত্মীয়-স্বজনকে আপ্যায়ন করতে যেসব খাবার আয়োজন করে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ঘরের মুরুগ জবাই দিয়ে খাওয়ানো এবং মুরুগ জবাই দেয়ার পর আশেপাশে প্রতিবেশীদের দাওয়াত না দিলে কিংবা অন্তত তরকারি না পাঠালে শুরু হয়ে যায় ‘গোসসার পর্ব’। তখন এক পর্যায়ে ঝগড়াও হয়ে যায়। এই বিষয়টিও শাহ আব্দুল করিম তার গানে ফুটিয়ে তুলেছেন যা গ্রামের মানুষের অতিথি আপ্যায়নের বেলায় বারংবার সম্মুখীন হতে হয়। এরকম অনেক বিষয়েই বিদ্যমান চর্চা ও অভ্যাসগুলো খুব সাবলীলভাবে সাহসিকতার সাথে নিঃসঙ্কোচে প্রকাশ করেছেন শাহ আব্দুল করিম।
শাহ আব্দুল করিম গ্রামীণ ঐতিহ্যের যেসব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বারবার গানের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য আরেকটি হলো গ্রাম্য মেলা। মেলার বর্ণনা বিশদভাবেই গানের কথার মাধ্যমে এমনভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যেন মনে হচ্ছে এটি সত্যিকারভাবেই একটি উপভোগ্য বিষয়। এই ক্ষেত্রেও মেলা উপলক্ষ্যে মানুষ মানুষকে সুদমুক্ত ঋণ দেয়ার প্রচলন ছিল বলে উল্লেখ করেছেন। পাশাপাশি, ধলমেলার পরিপ্রেক্ষিতে যা লেখা আছে তাতে আবহমান কাল থেকে হাওরের মানুষের জীবনে ঘটে আসা ঐতিহ্য ও কৃষ্টির কথা উল্লেখ করেছেন। এ ধরনের গানের ক্ষেত্রে একটি ঐতিহ্য বিলোপের আবহ ফুটিয়ে তুলেছেন এবং সত্যিকার অর্থেই কালের বিবর্তনে হয়তো কবিতা-গান-গল্প ইত্যাদি সাহিত্যের বিভিন্ন শাখা ছাড়া বাস্তবে একসময় আর খুঁজে পাওয়া যাবে না বাউলেপনা, হাওর পাড়ের সংস্কৃতিসহ আরও বিভিন্ন বিষয়।
কৃষিকাজ ও কৃষিপণ্যের উল্লেখ পাওয়া যায় আব্দুল করিমের গানে যার বেশির ভাগই এখন প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বিপন্ন হওয়ার পথে। যেমন- লাঙল, জাল ইত্যাদি। এছাড়া, খাদ্যে ভেজাল ও গ্রামীণ মেলার পণ্যের বিবরণও পাওয়া যায় তার গানের কথায়। ফসল রোপন থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলার কথা বলা আছে। সঠিক সময়ে বৃষ্টিপাত হলে ফলন ভালো হয়, আবার খরা-অতিবৃষ্টির কারণে ফলন নষ্ট হয় এসবের বর্ণনা আছে তার একটি গানে-
‘এবার ফসল ভালো দেখা যায় বা-চাচাজী
এবার ফসল ভালো দেখা যায়
ফাল্গুনে বর্ষিল মেঘ
জমি যাহা চায়-বা চাচাজী।’
একই গানে বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাতের বিষয়ে উল্লেখ আছে যা সত্যিকারভাবেই হাওর অঞ্চলের মানুষের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়ায়। খরা, অকাল বন্যা, অতিবৃষ্টি ,শিলাবৃষ্টি ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ কৃষকের স্বপ্নকে কেড়ে নেয়। শাহ আব্দুল করিমের গানে এই বিষয়ের উল্লেখ আছে এভাবে-
‘শিলাবৃষ্টি অকাল বন্যায়
বারেবারে ছাতায়
রাইত হলে ঘুম ধরে না নানান চিন্তা বা-চাচাজি।।
ইরি বোরো ফসল করি আমাদের এলাকায়
এক ফসল বিনে আমাদের
নাই অন্য উপায়-বা চাচাজী।’
সুনামগঞ্জের হাওরের ফসল প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিভিন্ন সময়েই আঘাত হেনেছে যা মানুষের কাছে প্রতিবারই ফসল তোলার সময়টায় একটা ভয়ের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নদী ও নদীপাড়ের জীবনের কথা তার বিভিন্ন গানে পাওয়া যায়। বর্ষাকালে নদী হাওরের পানিতে প্লাবিত হয় তখন নদীকে চেনা দুষ্কর হয়ে পড়ে যেখানে চৈত্রমাসে মেলার সময় মানুষ নদীরপাড়ে বসে থাকত সেখানে বর্ষাকালে নদী চিহ্নিত করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। তবে স্থানীয় মাঝি ও জেলেরা এমনকি ছোট ছোট বাচ্চারাও বলে দিতে পারে নদীর গতিপথ। এ সংক্রান্ত বিষয়গুলো তার কয়েকটি গানে উল্লেখ আছে যা বাস্তবিক অর্থেই নদী আছে এমন হাওরের জনপদের জন্য জানা পানির মত সহজ ।
বাউল সাধক শাহ আব্দুল করিমের বাল্যকালের বিভিন্ন বিষয় ফুটে উঠেছে তার গানে। এরই মাধ্যমে ভাটি এলাকার শিশুদের বিনোদন, খেলাধুলার উপকরণ, বেড়ে ওঠার চিত্র খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। এরমধ্যে – বিয়ের গান গাওয়া, ধুলাবালি নিয়ে খেলা, মার্বেল খেলা, পুতুল খেলা, লুকালুকি খেলা ইত্যাদির বর্ণনার সাথে সাথে ছোট ছোট বাচ্চাদের মুখে মুখে প্রচলিত কিছু ভীতিকর বিষয়ের বর্ণনা আছে যেমন- দাঁত পরে গেলে যদি কাকে দেখে ফেলে তো দাঁত আর উঠবে না, কিংবা পোকা ধরা আম খেলে সাঁতার শেখা যায় ইত্যাদি বিষয় এই অঞ্চলের গ্রামের শিশুদের মনের মধ্যে গেঁথে থাকে।
বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের গানের কথায় গ্রামীণ সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, কৃষ্টিসহ আবহমান কাল থেকে ঘটে আসা বিষয়গুলোও তার আধ্যাত্মিক চর্চার পাশাপাশি গানের কলিতে উঠে এসেছে। এসব বিষয়াদি কবিতা-গল্প-গানে না থাকলে সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে সাথে হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও আছে। ইতোমধ্যেই অনেক বিষয়, ঐতিহ্য হারিয়ে গেছে যা শাহ আব্দুল করিম জীবদ্দশাতেই বিদ্যমান ছিল অথচ এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে, আশ্চর্যের বিষয় হলো স্বশিক্ষিত শাহ আব্দুল করিম এই বিলুপ্ত হওয়ার প্রক্রিয়া আঁচ করতে পেরেছিলেন এবং তার গানের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় বর্ণনার পাশাপাশি আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন একজন চিত্রশিল্পী যেভাবে নিখুঁতভাবে ছবি আঁকেন ঠিক সেভাবেই। তার প্রয়াণ দিবসে আমরা তার আত্মার শান্তি কামনা করি।
লেখক: শিক্ষক, ইংরেজি বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।
(লেখাটি ইউএনবি থেকে নেয়া)
মোটা অংকের বেতনের প্রলোভনে লিবিয়ায় নিয়ে চট্টগ্রামের চার তরুণকে জিম্মি করেছে একটি চক্র। সেখানে তাদের ওপর চালানো হচ্ছে নির্যাতন। আর সেই নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে পরিবারের কাছে চাওয়া হয়েছে মুক্তিপণ। এ নিয়ে দেশে স্বজনরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
জিম্মিদের অভিভাবকরা এ ঘটনা বুধবার (২৭ মার্চ) বিকেলে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং থানার ওসিকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন।
লিবিয়ায় মানব পাচার চক্রের হাতে জিম্মি চার তরুণ হলেন- আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের মধ্যম গহিরা বাচা মিয়া মাঝির ঘাট এলাকার নুরুল আলমের ছেলে ওয়াসিম, একই এলাকার মৃত মোজাহের মিয়ার ছেলে বোরহান উদ্দিন, আবদুর রহিমের ছেলে জাবেদুর রহিম ও জেবল হোসেনের ছেলে নাঈম উদ্দিন। এদের বয়স ১৯ থেকে ২২ বছরের মধ্যে।
অপহৃতদের স্বজনরা জানান, রায়পুর ইউনিয়নের গহিরা এলাকার মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে জহিরুল ইসলাম লিবিয়ায় নিয়ে চাকরি দেয়ার কথা বলে ফেব্রুয়ারিতে জনপ্রতি ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা নেন। ওই তরুণরা ১৬ ফেব্রুয়ারি লিবিয়ায় পৌঁছেন। লিবিয়ায় তাদের সংঘবদ্ধ একটি চক্রের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর জনপ্রতি ১০ লাখ টাকা দাবি করে তাদের নির্যাতন করা শুরু হয়। মানব পাচার চক্র এরপর নির্যাতনের ভিডিও পাঠানো শুরু করে পরিবারের সদস্যদের কাছে।
স্বজনরা জানান, চট্টগ্রামের জহিরুল ভুক্তভোগীদের টুরিস্ট ভিসায় প্রথমে দুবাই নিয়ে যায়। সেখানে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর থানার বাসিন্দা মো. মিজান নামে এক লোকের হাতে ওদেরকে তুলে দেয়া হয়। মিজান তিনদিন পর তাদের সবার পাসপোর্ট নিজের কাছে নিয়ে নেয়। সাতদিন পর দুবাই থেকে মিসর হয়ে লিবিয়ায় নিয়ে মিজান ওই চার তরুণকে অন্য দালালের হাতে তুলে দেয়।
এদিকে মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) স্বজনদের কাছে কয়েকটি নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজ ও অডিও বার্তা পাঠায় দালাল চক্রের সদস্যরা। ভিডিও বার্তায় জনপ্রতি ১০ লাখ টাকা করে মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে। আর ওই টাকা দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংকের চকরিয়া শাখার একটি হিসাব নম্বরও দেয় তারা।
হুমকি দেয়া হয়, মুক্তিপণ দিতে ব্যর্থ হলে জীবন দিতে হবে চার জিম্মিকে। এজন্য বেঁধে দেয়া হয় সময়ও। বুধবার বিকেল ৩টার মধ্যে যতটা পারে তত টাকা দিতেও বলা হয়। টাকা না দিলে এক এক করে লাশ পাঠাবে বলে স্বজনদের জানিয়েছে দালালরা।
অপহৃত ওয়াসিমের মামা নাছির উদ্দিন বলেন, ‘বুধবার বিকেল ৩টার মধ্যে চারজনের জন্য চার লাখ টাকা পাঠাতে বলেছে। বিকেল থেকে মোবাইল ফোনে ইমু ও হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে একাধিকবার ফোন করেছে টাকার জন্য। তাদের নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজও পাঠাচ্ছে। আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।’
জাবেদুর রহিমের বাবা আবদুর রহিম বলেন, ‘টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকার যা ছিল সব বিক্রি করে ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছি। সেখানে ছেলে প্রতারণার শিকার হয়েছে। এখন ১০ লাখ টাকা দিলে ছেলেকে ফেরত দেবে বলে জানিয়েছে অপরণকারীরা। এই মুহূর্তে এত টাকা কই পাব আমি?’
আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইশতিয়াক ইমন জানান, অপহৃতদের স্বজনদের কাছ থেকে তারা লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরও পড়ুন:স্বাধীনতা দিবসের এক অনুষ্ঠানে নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ প্রকাশ্যে দুর্নীতি করার ঘোষণা দিয়েছেন।
মঙ্গলবার সকালে লালপুর উপজেলা পরিষদের অডিটোরিয়ামে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যের এক পর্যায়ে দুর্নীতি করার ঘোষণা দেন এ সংসদ সদস্য।
তার বক্তব্যের অংশবিশেষের একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তেই তা ভাইরাল হয়ে যায়।
প্রকাশিত ওই ভিডিওতে আবুল কালাম আজাদকে বলতে শোনা যায়, ‘পাঁচটা বছর (২০১৪-২০১৮) বেতন ভাতার টাকা ছাড়া আমার কোনো সম্পদ ছিল না; আগামীতেও থাকবে না। এবার (দ্বাদশ জাতীয় সংসদ) নির্বাচনে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। সেই টাকা আমি তুলব। যেভাবেই হোক তুলবই। এতটুক অনিয়ম আমি করবই। এটুকু অন্যায় করব, আর করব না।’
প্রকাশ্যে সংসদ সদস্যের এমন বক্তব্য বুধবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জেলাজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শারমিন আখতার। নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। উনার বক্তব্য উনি বলেছেন, এখানে আমার কোনো কথা নেই।’
বক্তব্যর বিষয়ে সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমার বক্তব্যে এটা বোঝাতে চেয়েছি যে, অনেকেই এরকম করে। আমার বক্তব্য বিকৃত করে প্রচার করা হচ্ছে।’
এ বিষয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি জেলা শাখার সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সরকারি অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে একজন সংসদ সদস্যের এমন বক্তব্য খুব দুর্ভাগ্যজনক। সংসদ সদস্যের এমন বক্তব্যে তার সহকারী এবং দলীয় নেতা-কর্মীরা দুর্নীতিতে উৎসাহিত হবেন। এটা একদিকে যেমন পরিষ্কারভাবে শপথের লংঘন, অন্যদিকে নির্বাচনি বিধিরও লংঘন।
‘নির্বাচনি আচরণবিধি অনুযায়ী, নির্বাচনি প্রচারকাজে একজন সংসদ সদস্য ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারেন না।’
সংসদ সদস্যের কাছে গঠনমূলক বক্তব্যেরও প্রত্যাশার কথা জানান তিনি।
শান্তিতে নোবেলজয়ী হয়েও ড. ইউনূস ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার পক্ষ নিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, হত্যাযজ্ঞে নিশ্চুপ থেকে এবং একজন ইসরায়েলির দেয়া পুরস্কার নিয়ে ড. ইউনূস প্রকারান্তরে গণহত্যায় সমর্থন দিয়েছেন। আর ইউনূস সেন্টার এটিকে ইউনেস্কোর পুরস্কার উল্লেখ করে মিথ্যাচার করছে, যা খুবই দুঃখজনক।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৃহস্পতিবার মতবিনিময়কালে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান মাহমুদ এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘ইউনূস সেন্টারের মিথ্যাচারে আমি বিষ্মিত, হতবাক। সম্প্রতি আজারবাইজানের বাকুতে একটি সম্মেলনে মিজ হেদভা সের নামে একজন ইসরায়েলি ভাস্বর ড. ইউনুসকে একটি পুরস্কার দিয়েছেন। এ সম্মেলনে ইউনেস্কো কোনোভাবে জড়িত ছিল না।
‘এই পুরস্কার ইউনেস্কোর পক্ষ থেকে তো নয়ই, একজন ব্যক্তির পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে। আর ইউনূস সেন্টার সেটিকে ইউনেস্কোর পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে বলে মিথ্যাচার ও অপপ্রচার করেছে। তবে এটিই প্রথম নয়, এর আগেও এ ধরনের মিথ্যাচার ইউনূস সেন্টারের পক্ষ থেকে করা হয়েছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ড. ইউনূস শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। ওদিকে গাজায় আজ নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চলছে, নারী ও শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে। এ নিয়ে তিনি একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি, প্রতিবাদ করেননি।
‘বরং এই সময়ে তিনি একজন ইসরায়েলির কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেছেন। এর অর্থ কি এটাই নয় যে ড. ইউনূস প্রকারান্তরে গণহত্যায় সমর্থন দিয়েছেন? এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।’
সীমান্ত হত্যায় বিজিবি’র মাধ্যমে প্রতিবাদ
মতবিনিময় অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘২৫ মার্চ মধ্যরাতে লালমনিরহাট ও ২৬ মার্চ ভোরে নওগাঁ সীমান্তে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত হওয়ার ঘটনায় বিজিবি’র মাধ্যমে প্রতিবাদ জানানো এবং সীমান্তে পতাকা বৈঠকও হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা অনেকদিন ধরেই ভারতের সঙ্গে আলোচনা করে আসছি। সম্প্রতি ভারত সফরেও এ নিয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকগুলোতে গুরুত্বসহ আলোচনা করেছি। সেই প্রেক্ষিতে সীমান্তে এখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নন-লেথাল বা প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। রাবার বুলেটে অনেকে আহত হন; কিন্তু প্রাণহানি কমে এসেছে। তবে আমাদের লক্ষ্য প্রাণহানিকে শূন্যের কোটায় নিয়ে আসা।’
নাবিক ও জাহাজ উদ্ধারে নানামুখী তৎপরতা চলছে
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সোমালি জলদস্যুদের কবল থেকে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর নাবিকদের নিরাপদে উদ্ধার ও জাহাজটিকে মুক্ত করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।’
তিনি বলেন, ‘জাহাজ সম্পর্কে শুধু এটুকু বলতে চাই, নাবিকদের মুক্ত করার জন্য আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগে আছি। আমরা নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছি। আমরা অনেকদূর এগিয়েছি।’
জাহাজে খাদ্য সংকট নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, জাহাজটিতে খাদ্য সংকট নেই। এর আগে তিন মাস ধরে জলদস্যুদের কবলে থাকা অন্য জাহাজেও খাদ্য সংকট ছিল না।
আরও পড়ুন:রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন থেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আঞ্চলিক কার্যালয় স্থানান্তরের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অফিসটি সরিয়ে মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ সংলগ্ন মোহাম্মদপুর কমিউনিটি সেন্টারে নেয়া হচ্ছে। এই কমিউনিটি সেন্টারে হবে ডিএনসিসি’র অঞ্চল-০৫ এর অস্থায়ী আঞ্চলিক কার্যালয়।
বৃহস্পতিবার সকালে আঞ্চলিক কার্যালয়ের মালামাল স্থানান্তরের কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হয়।
কারওয়ান বাজারে ডিএনসিসির আঞ্চল-৫ এর কার্যালয়ের সামনে সকালে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বীর আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘ডিএনসিসির কার্যালয় স্থানান্তরের মাধ্যমে কারওয়ান বাজারের স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। ঈদের আগে অফিসের সবকিছু সরিয়ে নেয়া হবে এবং ঈদের পর ভবনটি ভাঙা হবে। ঈদের পর ঝুঁকিপূর্ণ এই ভবনে থাকা ১৭৬টি দোকান গাবতলীতে সরিয়ে নেয়া হবে। একইসঙ্গে অস্থায়ী আরও ১৮০টি দোকান গাবতলীতে স্থানান্তর করা হবে।’
প্রসঙ্গত, কারওয়ান বাজার থেকে ডিএনসিসির পরিত্যক্ত ঝুঁকিপূর্ণ ভবন থেকে সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়সহ দোকানপাট স্থানান্তরের বিষয়ে ১৮ মার্চ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে ডিএনসিসি। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
সভায় ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদের পর কারওয়ান বাজারে ডিএনসিসির পরিত্যক্ত ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙে ফেলা হবে। কারণ যেকোনো সময় এটি ধসে পড়তে পারে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের কারণে বহু মানুষের জীবন হুমকিতে রয়েছে। কারওয়ান বাজারের পাইকারি কাঁচাবাজারের এই ব্যবসায়ীদের গাবতলিতে ডিএনসিসির পাইকারি কাঁচাবাজারে স্থানান্তর করা হবে।’
আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মালিকানাধীন কোনো স্থানে ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ না করতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
বৃহস্পতিবার সংস্থাটির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান এ সংক্রান্ত নির্দেশনা মাঠ পর্যায়ে পাঠিয়েছেন বলে জানা গেছে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে-
(ক) কমিশন ভোট গ্রহণের তারিখের অন্যূন ১৫ দিন আগে চূড়ান্ত তালিকা সরকারি গেজেটে প্রকাশ করবে এবং প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে যেসব এলাকার ভোটারগণ ভোটদান করবেন সেসব এলাকার নামও চূড়ান্ত তালিকায় উল্লেখ করতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে, ওই চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পরও বিশেষ পরিস্থিতিতে কমিশন যেকোনো ভোটকেন্দ্র পরিবর্তন করতে পারবে।
(খ) রিটার্নিং অফিসার প্রকাশিত চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের তালিকা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট উপজেলার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোটকেন্দ্রের ব্যবস্থা করবেন।
(গ) সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত নয় এরূপ স্থানকে ভোটকেন্দ্র হিসেবে নির্ধারণ করা যাবে না।
(ঘ) পুরুষ ও মহিলা ভোটারগণ যাতে পৃথকভাবে ভোট প্রদান করতে পারেন সে উদ্দেশ্যে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে প্রয়োজনীয়সংখ্যক ভোট কক্ষের ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং প্রতিটি ভোট কক্ষে ভোট চিহ্ন প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক স্থান রাখতে হবে।
(ঙ) কোনো প্রার্থীর মালিকানাধীন বা নিয়ন্ত্রণাধীন কোনো স্থানে কোনো ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা যাবে না।
(চ) প্রার্থিতা চূড়ান্তকরণের পর কোনো প্রার্থীর মালিকানাধীন বা নিয়ন্ত্রণাধীন কোনো ভোটকেন্দ্র স্থাপিত হয়ে থাকলে কমিশন তা পরিবর্তন করতে পারবে।
(ছ) প্রত্যেক ভোটকেন্দ্রের প্রতিটি ভোট কক্ষে ভোট চিহ্ন প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক গোপন কক্ষ থাকবে।
উপজেলা নির্বাচনে ছুটির দিনেও অফিস খোলা রাখার নির্দেশ
উপজেলা পরিষদে প্রথম ধাপের নির্বাচন উপলক্ষে সরকারি ও সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও অফিস খোলা রেখে কাজ করার জন্য মাঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
বৃহস্পতিবার ইসি থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা মাঠ পর্যায়ের জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাদের পাঠানো হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিনে অফিস খোলা রেখে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনার ব্যবস্থা করতে হবে।
আগামী ৮ মে প্রথম ধাপে ১৫২ উপজেলা পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ধাপের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ১৫ এপ্রিল। মনোনয়নপত্র বাছাই ১৭ এপ্রিল। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল। আপিল নিষ্পত্তি ২১ এপ্রিল, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল, আর ভোট গ্রহণ হবে ৮ মে।
নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিয়োগ করা হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দায়ের করা আপিল আবেদন নিষ্পত্তি করবেন আপিল কর্তৃপক্ষ হিসেবে জেলা প্রশাসক।
মোট চার ধাপে অনুষ্ঠেয় ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পরবর্তীতে তিন ধাপের ভোটগ্রহণ ২৩ ও ২৯ মে এবং ৫ জুন অনুষ্ঠিত হবে। দেশে মোট উপজেলার সংখ্যা ৪৯৫টি।
আরও পড়ুন:ঈদের পর সমাধান করা হবে- স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এমন আশ্বাসে এক মাসের জন্য আন্দোলন থামালেন বেতন-ভাতা বাড়ানো ও বকেয়া ভাতা পরিশোধসহ চার দফা দাবিতে কর্মবিরতি কর্মসূচি পালনকারী পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চিকিৎসকরা যে দাবিগুলো করেছেন সেগুলো যৌক্তিক। চিকিৎসকরা হাসপাতালকে বাঁচিয়ে রাখে। তাদের বেতন বাড়ানোর বিষয়ে আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, চিকিৎসকদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন হবে। তারা কাজে যোগদান করুক।’
বিষয়টি কতদিনে বাস্তবায়িত হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কিছুদিন তো লাগবেই। তবে ঈদের পর হয়তো বলতে পারব, কতদিনের মধ্যে বেতন বাড়বে।’
এর আগে গত শনিবার (২৩ মার্চ) চার দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানববন্ধন করেন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না বলেই স্বাধীনতার মর্মার্থকে অকার্যকর করতে চায়।
বৃহষ্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি একথা বলেন। বিএনপি নেতাদের মিথ্যা, বানোয়াট ও দুরভিসন্ধিমূলক বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাতে এই বিবৃতি দেয়া হয়। খবর বাসসের
ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের প্রত্যেক মানুষ এখন স্বাধীনতার সুফল পাচ্ছে। অগণতান্ত্রিক ও উগ্র-সাম্প্রদায়িক অপশক্তির প্রতিভূ বিএনপির ফ্যাসিবাদী দর্শনে জনগণ কখনো সাড়া দেয়নি, দেবেও না। তাই বিএনপি সর্বদা জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
তিনি বলেন, পাকিস্তানি ভাবাদর্শকে পুঁজি করে রাজনীতি করা বিএনপির একান্ত কাম্যই হলো যে কোনো উপায়ে ক্ষমতা দখল, জনকল্যাণ নয়। তারা ক্ষমতায় গিয়ে নিজেদের আখের গুছিয়ে নিয়েছিল। বাংলার জনগণ তাদের দ্বারা প্রতারণার শিকার হয়েছিল। সুতরাং বাংলার জনগণ এই প্রতারক গোষ্ঠীকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
‘বিএনপি নেতাকর্মীদের ঘর-বাড়ি, ব্যবসা-বাণিজ্য দখল করে নেয়া হচ্ছে’- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘তিনি (মির্জা ফখরুল) সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য-প্রমাণ না দিয়ে ঢালাওভাবে বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বক্তব্য দিয়েছেন। বরং আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, বিএনপির নেতাকর্মীরা বহাল তবিয়তে ব্যবসা-বাণিজ্য করছে। কোথাও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে লাখ লাখ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে ঘর-বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল, নৌকায় ভোট দেওয়ার অপরাধে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নির্মম অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল। বিএনপি-জামাতের ক্যাডারবাহিনী দ্বারা হাজার হাজার নারী ধর্ষিত হয়েছিল। সারা দেশে আওয়ামী লীগের ২১ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল।
ওবায়দুল কাদের বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নেতৃত্বে দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের পথ-পরিক্রমায় বাঙালি জাতি ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে সশস্ত্র লড়াইয়ের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করে। স্বাধীনতা অর্জনের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় পরিচালিত হতে থাকে।
তিনি আরও বলেন, জাতির পিতা মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের ভিত্তিতে জাতিকে সংবিধান উপহার দেন। ধর্মের ভিত্তিতে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর খুনি জিয়া-মোশতাক চক্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধূলিসাৎ করে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান নিজের অবৈধ ও অসাংবিধানিক ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে ধর্মের কার্ড ব্যবহার করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি প্রচলন করে। স্বৈরাচার জিয়া রাষ্ট্র ও সমাজের সকল স্তরে সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষের বীজ বপন ও উগ্র-সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করে। তখন থেকে বিভেদের রাজনীতির গোড়াপত্তন হয়। বিরোধী দল বিশেষ করে আওয়ামী লীগকে নির্মূল করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় অত্যাচার-নির্যাতনের স্টিম রোলার চালানো হয়।
মন্তব্য