বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম ২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। আজ ১২ সেপ্টেম্বর বাউল শাহ আব্দুল করিমের মৃত্যুবার্ষিকী। সাধারণত উল্লেখযোগ্য কোনো গায়ক-কবি-সাহিত্যিকের মৃত্যুবার্ষিকী কিংবা জন্মবার্ষিকীতে আমরা তার কবিতা পাঠ করি, গল্প পড়ি কিংবা গান শুনে তার সৃষ্টির তাৎপর্য বুঝতে চেষ্টা করি, তাকে স্মরণ করি ও তাকে অনুভব করার মাধ্যমে দিনাতিপাত করি। তাছাড়া সারা বছরই হয়তো তার কবিতা আবৃত্তি বা গান শোনা হয়ে উঠে না, যদিও ব্যক্তিবিশেষে এর ব্যতিক্রম ঘটতে পারে। তবে আমার ধারণা, বাংলাদেশে শাহ আব্দুল করিমের ক্ষেত্রে এই চর্চার ব্যত্যয় ঘটে যায়। তার কারণ আমি নিশ্চিত করে বলে দিতে পারি যে প্রতিটি মুহূর্তে বাংলাদেশের কোথাও না কোথাও শাহ আব্দুল করিমের গান বাজতে শোনা যায় কিংবা হয়তো মনের অজান্তেই কেউ গেয়ে ওঠে। এত অল্প সময়ে এতটা জনপ্রিয় হয়ে ওঠা শিল্পী সারা বিশ্বে হয়তো খুব কমই আছেন বলে আমার বিশ্বাস। উপরন্তু, শাহ আব্দুল করিমের গান গেয়ে অনেকেই বিখ্যাত হয়ে গেছেন এরকম নজির আছে। আমি দেখেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা যেকোনো একটি বাদ্যযন্ত্র বাজানো শিখতে গিয়ে যে পরিমাণ পরিশ্রম ও মেধা খরচ করেন এতে মাঝে মাঝে অবাক লাগে যে পড়লেখা না জানা, গানের ব্যাকরণ পড়তে না পারা এমন অনেকেই খুব সহজেই বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র অনায়াসে বাজাতে পারছেন। আমি নিজেও ছাত্রজীবন থেকেই দেশীয় বাদ্যযন্ত্রগুলো শেখার জন্য উৎসাহী ছিলাম, সময়ের অভাবেই হোক কিংবা যথেষ্ট চেষ্টার অভাবেই হোক সামান্য টুংটাং ছাড়া কিছুই শিখতে পারিনি, গান রচনা করা তো দূরের ব্যাপার।
প্রাথমিক ধারণা থেকে কোনো চিন্তা না করেই বলে দেয়া যায় যে শাহ আব্দুল করিমের রচিত গানগুলো গণমানুষের গান। এছাড়াও, এই ভূখণ্ডে অধ্যাত্মচেতনা, দেহতত্ত্ব, নিগূঢ়তত্ত্ব, দেশপ্রেম, প্রকৃতিপ্রেম, মানবপ্রেম ইত্যাদি বিষয়নির্ভর গান সমাদৃত হয়েছে কালে কালে। বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম এই সকল বিষয়েই গান রচনা করেছেন আঞ্চলিক ভাষায়। পাশাপাশি একজন কীর্তিমান চিত্রশিল্পী যেভাবে চিত্রকর্মের মাধ্যমে বিষয়বস্তু ফুটিয়ে তোলেন তেমনি তার গানের মাধ্যমে তিনি তুলে ধরেছেন হাওর অঞ্চলের মানুষের জীবন চক্র, ভাটি বাংলার গ্রামীণ সংস্কৃতি ও শ্বাশ্বত বাংলার মানুষের যাপিত জীবনের চিত্র। আবহমান কাল থেকে ঘটে যাওয়া ঘটনা ও চিরায়ত বাংলার ঐতিহ্য, জীবন-দর্শন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে তিনি ভেবেছেন, গানের কথার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন সাবলীলভাবে। তার যে কয়েকটি গানে ভাটি বাংলার সাধারণ মানুষের জীবন ধারা ও হাওরের মানুষের জীবনের চিত্র উঠে এসেছে তার কিছু দিক নিয়ে আলোচনা করা হলো এখানে।
বাউল শাহ আব্দুল করিমের হাওর পাড়ের মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপন সম্পর্কে যে কয়টি গান আছে তার মধ্যে প্রথমেই সর্বাধিক জনপ্রিয় একটি গানের কথা উঠে আসে, আর সেটি হল ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’। এই গানে ফুটে উঠেছে হাওর অঞ্চলের মানুষের বর্ষাকালের চিত্র। হাওরে পানি যখন চারিদিকে থৈ থৈ করে, পানিবন্দী কৃষকের কৃষিকাজ বন্ধ থাকে, তখন বিনোদন হিসেবে বর্ষাকালে গ্রামের পাড়ায় পাড়ায় যাত্রা, পালাগান, কীর্তন, গাজির গান, ঘাটু গান ইত্যাদি লেগেই থাকে। কোনো না কোনো উপলক্ষ্য পেলেই খাওয়াদাওয়া, আনন্দ করা ইত্যাদি নিমিষেই শুরু হয়ে যায়। এর মধ্যে তখনকার দিনে নৌকাবাইচ হত খুব ঘটা করে যা আব্দুল করিম তার জীবদ্দশায়ই এই চর্চার অবশিষ্ট নেই বলে উল্লেখ করে গেছেন।
বর্ষাকালে ধুমধাম আনন্দের একটা কারণ হলো পানিবন্দী জীবনে বিনোদন নিয়ে আসা আবার অর্থনৈতিক একটা দিক আছে আর সেটা হলো, চৈত্র-বৈশাখ মাসে কৃষকের ঘরে ধান ওঠে, তারপর অবস্থা অনুযায়ী কয়েক মাস সাধারণ মানুষ আর্থিকভাবে সচ্ছল থাকে। এর কয়েক মাস পরেই শুরু হয় টানাপোড়েন, ধার-কর্জ-ঋণ নেয়া। সুদে ধার-কর্জ নিয়ে একটা দুষ্টুচক্রে পড়ে যায় কৃষক যা ভয়ংকর হয়ে দাঁড়ায় এক সময়। যারা দিনমজুরে যেতে পারেন তাদের আয় কিছুটা হলেও অন্যদিকে যারা লোক-লজ্জার ভয়ে দিনমজুরি করতে পারেন না না তাদের কষ্ট হয় সব থেকে বেশি। এই বিষয়টিও শাহ আব্দুল করিম তার গানে উল্লেখ করেছেন বিনীতভাবে। যেমন- ‘আল্লায় যেন কর্জের লাগি কেউর বাড়িত নেয় না, মজুরি করিয়া খাইমু ভাত যদি খাইতে পাই না।’ সাথে এটাও বলেছেন, গোঁড়াকাল থেকেই হাওরের কৃষকের এই ধার-কর্জ করার প্রক্রিয়া বিদ্যমান কিন্তু পূর্বে ধার-কর্জ হত বিনা সুদে, অন্তত মানবিকতার একটা সুতা ছিল তখন কিন্তু এখন ধার-কর্জ নিতে হয় চড়া সুদে বলে গানে উল্লেখ আছে, এমনকি আপন চাচাত ভাইয়েরাও চশমখোর হয়ে পড়ে। অবশ্য, সকল সমাজেই চাচাত ভাইদের চশমখোর হওয়ার গল্প আছে যা বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন রচনায় উল্লেখ আছে। যেমন- মহাভারতে কৌরবরা যারা পাণ্ডবদের নিঃশেষ করে দিতে চেয়েছিল এবং যার প্রকৃত কারণে পরবর্তীতে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ সংগঠিত হয়। আবার গৌতম বুদ্ধের চাচাত ভাইয়ের সম্পর্কেও চশমখোর হওয়ার গল্প প্রচলিত আছে। তেমনি, বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের গানেও এই যুগে ‘সাক্ষাত চাচাত ঘরের ভাই চশম-ভরম করে না’ বলে উল্লেখ আছে যা এই ভূখণ্ডের মানুষের চিরায়ত স্বভাব হিসেবে বিভিন্ন রচনায় উল্লেখ আছে।
শাহ আব্দুল করিমের আরেকটি গানে উল্লেখ আছে সংসার বড় হওয়ার দরুণ জমিজামা বিক্রি করে খাওয়া-পড়া চালানোর মতো অর্থও নেই। এমন অবস্থা হাওর অঞ্চলের বেশির ভাগ কৃষকের হয়ে থাকে।
একজন শাহ আব্দুল করিমকে পাঠ করার মাধ্যমে সমাজকে পাঠ করা সম্ভব, যেহেতু তিনি তার গানের মাধ্যমে গ্রামীণ চাল-চলনের সমগ্র চিত্র উপস্থাপন করে গেছেন। শাহ আব্দুল করিমের ‘কষ্ট করে আছি এখন বাইচ্চা’ গানের কয়েক কলি পরে উল্লেখ আছে ‘সংসার বড় হইল, খোরাকির টান পড়ে গেল, জমিজামা যাহা ছিল, সব ফালাইছি বেইচ্চা’– এই অবস্থা শুধু যে বাউল শাহ আব্দুল করিমের বাউল হয়ে ওঠার জন্যই হয়েছে তা নয়, এই অঞ্চলের মানুষের সন্তান জন্মদান ও লালন-পালনের ক্ষেত্রে সংসার বড় হওয়ার পর কী অবস্থা দাঁড়ায় তার চিত্র আমাদের সকলের জানা আছে, তারই উল্লেখ আব্দুল করিমের গানে উঠে এসেছে। তবে ব্যতিক্রম তো অবশ্যই আছে। সম্পদশালী গৃহস্থদের অবস্থা সব সময়ই ভালো ছিল এ অঞ্চলের। এক সময় জীবিকা বলতে দুটিই ছিল, একটি হলো কার্তিক-অগ্রাহায়ণ থেকে চৈত্র-বৈশাখ মাস নাগাদ কৃষিকাজ করা; দুই- বাকি সময়টা মাছ ধরা। তাছাড়া যাদের জমিজামা প্রচুর তাদের এসবের কিছুই ছোঁয় না। আব্দুল করিমের তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ ক্ষমতার জন্য এসবকিছুই তার গানের কলিতে উঠে এসেছে। হয়তো শতবছর পর গ্রাম শহর হয়ে যাবে, মানুষের জীবিকা পরিবর্তিত হয়ে যাবে, ধানক্ষেত খুজে পাওয়া যাবে না, কিন্তু তখন শাহ আব্দুল করিমের গানে ভাটি বাংলার এই চিত্রগুলো ভাসতেই থাকবে। ভবিষ্যতের কথা কে জানে! শাহ আব্দুল করিম গান রচনা করেছেন সৃষ্টির আনন্দে, বিখ্যাত হওয়ার মানসিকতা নিয়ে নয়। অথচ তিনিই বনে গেলেন সমগ্র বাংলাদেশে একজন প্রখ্যাত শিল্পী, দার্শনিক ও চিন্তাবিদ।
শাহ আব্দুল করিমের বিভিন্ন গানে ‘ময়ূরপঙ্খী নাও’ এর উল্লেখ আছে বহুবার। তিনি অনেকটা শাব্দিক অর্থের সাথে সাথে রূপক অর্থেও শব্দটি ব্যবহার করেছেন। এরকম শত শত শব্দ তিনি ব্যবহার করেছেন যার অর্থ দুই রকম দাঁড়ায়। চারিদিকে পানি যখন টইটুম্বুর, হাওর অঞ্চলের মানুষের প্রধান যানবাহন হয়ে উঠে নৌকা। নৌকা ছাড়া কোথাও যাওয়ার কোনো উপায় নাই। অতএব, গানে আছে তারা সন্ধ্যার পর নৌকা নিয়ে হাওরে থাকা পছন্দ করে না এবং সূর্য ডুবে যাওয়া তাদের কাছে একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়। তবে বাস্তবিক অর্থে যেদিন থেকে বৈদ্যুতিক তার ঢুকেছে হাওরে সেদিন থেকে হাওরের সৌন্দর্য ম্লান হওয়া শুরু হয়েছে বলে আমার ধারণা। কিন্তু সভ্যতা বিকাশের ক্ষেত্রে বিদ্যুতের প্রয়োজনীয়তাও অনেক। যাহোক, শাহ আব্দুল করিমের গানের বেশির ভাগ শব্দই ভাটি বাংলার সাংস্কৃতিক উপাদানগুলো মনে করিয়ে দেয় বারবার। যেমন- ‘ময়ূরপঙ্খি নাও’, ‘বইঠা বাওয়া’, ‘পঞ্চায়েত’, ‘জারিগান’, ‘সারিগান’, ‘বাউলাগান’ ইত্যাদি ।
নির্ভেজাল মানুষ শাহ আব্দুল করিম ঝগড়া পছন্দ করতেন না বলে গানে উল্লেখ করেছেন। পাড়া-প্রতিবেশী আত্মীয় স্বজনের সাথে সদ্ভাব বজায় রাখার কথা উল্লেখ করেছেন। একটি গানে উঠে এসেছে ‘গোসসা করার’ কথা, ‘মুরুগ জবো’ করে খাওানোকে ঘিরে কী কী ঘটে যায় তার কথা। হাওর অঞ্চলের মানুষেরা আত্মীয়-স্বজনকে আপ্যায়ন করতে যেসব খাবার আয়োজন করে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ঘরের মুরুগ জবাই দিয়ে খাওয়ানো এবং মুরুগ জবাই দেয়ার পর আশেপাশে প্রতিবেশীদের দাওয়াত না দিলে কিংবা অন্তত তরকারি না পাঠালে শুরু হয়ে যায় ‘গোসসার পর্ব’। তখন এক পর্যায়ে ঝগড়াও হয়ে যায়। এই বিষয়টিও শাহ আব্দুল করিম তার গানে ফুটিয়ে তুলেছেন যা গ্রামের মানুষের অতিথি আপ্যায়নের বেলায় বারংবার সম্মুখীন হতে হয়। এরকম অনেক বিষয়েই বিদ্যমান চর্চা ও অভ্যাসগুলো খুব সাবলীলভাবে সাহসিকতার সাথে নিঃসঙ্কোচে প্রকাশ করেছেন শাহ আব্দুল করিম।
শাহ আব্দুল করিম গ্রামীণ ঐতিহ্যের যেসব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বারবার গানের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য আরেকটি হলো গ্রাম্য মেলা। মেলার বর্ণনা বিশদভাবেই গানের কথার মাধ্যমে এমনভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যেন মনে হচ্ছে এটি সত্যিকারভাবেই একটি উপভোগ্য বিষয়। এই ক্ষেত্রেও মেলা উপলক্ষ্যে মানুষ মানুষকে সুদমুক্ত ঋণ দেয়ার প্রচলন ছিল বলে উল্লেখ করেছেন। পাশাপাশি, ধলমেলার পরিপ্রেক্ষিতে যা লেখা আছে তাতে আবহমান কাল থেকে হাওরের মানুষের জীবনে ঘটে আসা ঐতিহ্য ও কৃষ্টির কথা উল্লেখ করেছেন। এ ধরনের গানের ক্ষেত্রে একটি ঐতিহ্য বিলোপের আবহ ফুটিয়ে তুলেছেন এবং সত্যিকার অর্থেই কালের বিবর্তনে হয়তো কবিতা-গান-গল্প ইত্যাদি সাহিত্যের বিভিন্ন শাখা ছাড়া বাস্তবে একসময় আর খুঁজে পাওয়া যাবে না বাউলেপনা, হাওর পাড়ের সংস্কৃতিসহ আরও বিভিন্ন বিষয়।
কৃষিকাজ ও কৃষিপণ্যের উল্লেখ পাওয়া যায় আব্দুল করিমের গানে যার বেশির ভাগই এখন প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বিপন্ন হওয়ার পথে। যেমন- লাঙল, জাল ইত্যাদি। এছাড়া, খাদ্যে ভেজাল ও গ্রামীণ মেলার পণ্যের বিবরণও পাওয়া যায় তার গানের কথায়। ফসল রোপন থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলার কথা বলা আছে। সঠিক সময়ে বৃষ্টিপাত হলে ফলন ভালো হয়, আবার খরা-অতিবৃষ্টির কারণে ফলন নষ্ট হয় এসবের বর্ণনা আছে তার একটি গানে-
‘এবার ফসল ভালো দেখা যায় বা-চাচাজী
এবার ফসল ভালো দেখা যায়
ফাল্গুনে বর্ষিল মেঘ
জমি যাহা চায়-বা চাচাজী।’
একই গানে বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাতের বিষয়ে উল্লেখ আছে যা সত্যিকারভাবেই হাওর অঞ্চলের মানুষের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়ায়। খরা, অকাল বন্যা, অতিবৃষ্টি ,শিলাবৃষ্টি ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ কৃষকের স্বপ্নকে কেড়ে নেয়। শাহ আব্দুল করিমের গানে এই বিষয়ের উল্লেখ আছে এভাবে-
‘শিলাবৃষ্টি অকাল বন্যায়
বারেবারে ছাতায়
রাইত হলে ঘুম ধরে না নানান চিন্তা বা-চাচাজি।।
ইরি বোরো ফসল করি আমাদের এলাকায়
এক ফসল বিনে আমাদের
নাই অন্য উপায়-বা চাচাজী।’
সুনামগঞ্জের হাওরের ফসল প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিভিন্ন সময়েই আঘাত হেনেছে যা মানুষের কাছে প্রতিবারই ফসল তোলার সময়টায় একটা ভয়ের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নদী ও নদীপাড়ের জীবনের কথা তার বিভিন্ন গানে পাওয়া যায়। বর্ষাকালে নদী হাওরের পানিতে প্লাবিত হয় তখন নদীকে চেনা দুষ্কর হয়ে পড়ে যেখানে চৈত্রমাসে মেলার সময় মানুষ নদীরপাড়ে বসে থাকত সেখানে বর্ষাকালে নদী চিহ্নিত করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। তবে স্থানীয় মাঝি ও জেলেরা এমনকি ছোট ছোট বাচ্চারাও বলে দিতে পারে নদীর গতিপথ। এ সংক্রান্ত বিষয়গুলো তার কয়েকটি গানে উল্লেখ আছে যা বাস্তবিক অর্থেই নদী আছে এমন হাওরের জনপদের জন্য জানা পানির মত সহজ ।
বাউল সাধক শাহ আব্দুল করিমের বাল্যকালের বিভিন্ন বিষয় ফুটে উঠেছে তার গানে। এরই মাধ্যমে ভাটি এলাকার শিশুদের বিনোদন, খেলাধুলার উপকরণ, বেড়ে ওঠার চিত্র খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। এরমধ্যে – বিয়ের গান গাওয়া, ধুলাবালি নিয়ে খেলা, মার্বেল খেলা, পুতুল খেলা, লুকালুকি খেলা ইত্যাদির বর্ণনার সাথে সাথে ছোট ছোট বাচ্চাদের মুখে মুখে প্রচলিত কিছু ভীতিকর বিষয়ের বর্ণনা আছে যেমন- দাঁত পরে গেলে যদি কাকে দেখে ফেলে তো দাঁত আর উঠবে না, কিংবা পোকা ধরা আম খেলে সাঁতার শেখা যায় ইত্যাদি বিষয় এই অঞ্চলের গ্রামের শিশুদের মনের মধ্যে গেঁথে থাকে।
বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের গানের কথায় গ্রামীণ সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, কৃষ্টিসহ আবহমান কাল থেকে ঘটে আসা বিষয়গুলোও তার আধ্যাত্মিক চর্চার পাশাপাশি গানের কলিতে উঠে এসেছে। এসব বিষয়াদি কবিতা-গল্প-গানে না থাকলে সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে সাথে হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও আছে। ইতোমধ্যেই অনেক বিষয়, ঐতিহ্য হারিয়ে গেছে যা শাহ আব্দুল করিম জীবদ্দশাতেই বিদ্যমান ছিল অথচ এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে, আশ্চর্যের বিষয় হলো স্বশিক্ষিত শাহ আব্দুল করিম এই বিলুপ্ত হওয়ার প্রক্রিয়া আঁচ করতে পেরেছিলেন এবং তার গানের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় বর্ণনার পাশাপাশি আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন একজন চিত্রশিল্পী যেভাবে নিখুঁতভাবে ছবি আঁকেন ঠিক সেভাবেই। তার প্রয়াণ দিবসে আমরা তার আত্মার শান্তি কামনা করি।
লেখক: শিক্ষক, ইংরেজি বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।
(লেখাটি ইউএনবি থেকে নেয়া)
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) জুলাই ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে শহীদের স্মরণে পদ্মা সেতুর মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে অঙ্কিত বিশেষ গ্রাফিতি “জুলাই বীরত্ব” ও “জুলাই আত্মত্যাগ” এর শুভ উদ্বোধন করেন। এ সময় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব মোঃ ফাহিমুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সেতু বিভাগের সচিব (রুটিন দায়িত্ব), মুন্সিগঞ্জ ও শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক, মুন্সিগঞ্জ ও শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার, সেতু বিভাগ, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ, পদ্মা সেতু সাইট অফিসের কর্মকর্তাগণ এবং ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার গণমাধ্যমকর্মীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতেই মাননীয় উপদেষ্টা মহোদয় গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারের শৃঙ্খল থেকে জাতিকে মুক্ত করার আন্দোলনে আত্মোৎসর্গকারী সকল শহীদকে। তাঁদের রুহের মাগফিরাত কামনা এবং তাঁদের পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। তিনি গণঅভ্যুত্থানে আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।
জুলাই পুনর্জাগরণ ও তারুণ্যের উৎসব ২০২৫ উদ্যাপন উপলক্ষ্যে পদ্মা সেতুর উভয় প্রান্তের ম্যুরাল চত্বরে জুলাই বিপ্লবের বীরত্ব ও আত্মত্যাগকে মূল উপজীব্য করে ঐতিহাসিক ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখার উদ্দেশ্যে মাননীয় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা জনাব মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান-এর নির্দেশনা এবং মাননীয় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী-এর পরামর্শ অনুযায়ী গ্রাফিতি অঙ্কন করা হয়েছে। এজন্য তিনি মাননীয় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এবং মাননীয় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মহোদয়কে বিশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং সেতু বিভাগ, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এবং গ্রাফিতি অঙ্কন শিল্পিদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান।
তিনি বলেন, এই প্রজন্ম ও আগামীর প্রজন্মকে জানতে হবে-জুলাইয়ের সেই গণঅভ্যুত্থান কেবল একটি আন্দোলন নয়, বরং ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। ছাত্রজনতার নেতৃত্বে সেই আন্দোলন গণমানুষের প্রত্যাশাকে একত্রিত করে জাতিকে নতুন দিশা দিয়েছিল। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এ ধরণের উদ্যোগ তরুণ সমাজকে অনুপ্রাণিত করবে সত্য, ন্যায়, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের চেতনায় উজ্জীবিত হতে।
তিনি আরও বলেন যে আমাদের দায়িত্ব হবে তাঁদের এ ত্যাগকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা এবং একইসাথে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য তাঁদের আদর্শকে ধারণ করা। শহীদদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে তিনি সকলকে আহবান জানান, যেই বাংলাদেশে থাকবে ন্যায়, সমতা ও মানবিকতার অবিচল প্রতিশ্রুতি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অনেক ষড়যন্ত্র চলছে, মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বিএনপির বিরুদ্ধে। আমরা সেই দল, যারা উড়ে এসে জুড়ে বসেনি। লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা গড়ে উঠেছি।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে এ কথা বলেন ফখরুল।
তিনি বলেন, নির্বাচনের মধ্যদিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার যে সুযোগ তৈরি হয়েছে তা কাজে লাগানোর জন্য বিএনপি প্রস্তুত।
মির্জা ফখরুল বলেন, একাত্তরে ভিন্ন অবস্থানে থাকা দল, এমনকি যাদের কালকে জন্ম হয়েছে তারাও বিএনপিকে নিয়ে কথা বলে, কিন্তু এই দল (বিএনপি) হলো ফিনিক্স পাখির মতো, এ দলকে ভেঙে ফেলার ষড়যন্ত্র হয়েছে, কিন্তু সফল হয়নি। বরং ষড়যন্ত্রকারীরাই পালিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, যেকোনো নেতার নামে স্লোগান নয়, স্লোগান হবে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নামে।
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়নের জ্যৈষ্ঠপুরা বিনোদ চৌধুরীর বাড়ির পাশে শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে একটি ১০ ফুট লম্বা বার্মিজ প্রজাতির অজগর সাপ উদ্ধার করা হয়েছে।
ওয়াইল্ড লাইফ অ্যান্ড স্নেক রেসকিউ টিমের সদস্য আমির হোসাইন শাওন জানান, সাপটি বসতবাড়ির পাশে ঘেরা দেওয়া জালে আটকা পড়েছিল। খবর পেয়ে তিনি দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে জাল কেটে সাপটিকে উদ্ধার করেন।
সাপটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১০ ফুট এবং ওজন আনুমানিক ৮-৯ কেজি। জালে আটকা পড়ার কারণে সাপটি কিছুটা আহত হয়েছে। উদ্ধারের পর সাপটিকে সুস্থ করে পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে অবমুক্ত করা হবে।
আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে কুমিল্লা মহানগরীর ১৩১টি পূজামণ্ডপে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে নগদ বিতরণ করা হয়েছে।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নগরীর ধর্মসাগর পাড়স্থ কুমিল্লা মহানগর বিএনপির কার্যালয়ে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই উপহার প্রদান করা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে উপহার বিতরণ করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াসিন।
অনুষ্ঠানে মহানগরীর বিভিন্ন পূজামণ্ডপের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে উপহার গ্রহণ করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সভাপতি উদবাতুল বারি আবু, সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপু, সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিউর রাজিব, যুগ্ম সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফিকসহ মহানগর ও ওয়ার্ড বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সবসময় দেশের মানুষের পাশে থেকেছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার—এই মন্ত্রে বিশ্বাস করে বিএনপি। শারদীয় দুর্গাপূজা হচ্ছে বাঙালি সংস্কৃতির একটি বড় অংশ। এখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে দলের পক্ষ থেকে প্রতিবারই বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করা হয়ে থাকে।
হাজী আমিনুর রশিদ ইয়াসিন বলেন, “তারেক রহমান সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের প্রতি সমান সহানুভূতি ও শ্রদ্ধা পোষণ করেন। কুমিল্লার ১৩১টি পূজামণ্ডপে আজকের এই উপহার প্রদান তারেক রহমানের আন্তরিক ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ। বিএনপি বিশ্বাস করে—একটি সুস্থ ও সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে হলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করতেই হবে।”
অনুষ্ঠান শেষে পূজামণ্ডপ প্রতিনিধিরা বিএনপি ও তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ উৎসবকে আরও আনন্দঘন করে তোলে।
বন্যা ও স্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসনে চলতি মাসেই ৩টি নদী ও ১০টি সংযোগ খালের - পুনঃখনন কাজ শুরু হচ্ছে। এ কাজের জন্য ১৩৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
সেনাবাহিনী ৩টি নদীর ৮২ কিলোমিটার এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে ১০টি সংযোগ খালের ৩১ কিলোমিটার পুনঃখনন করা হবে।
কেশবপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসে হরি নদীর ভবদহের ২১ ভেন্ট সুইস গেট থেকে উজানে ৭ কিলোমিটার ও ভাটিতে হরি নদীর খর্ণিয়া ব্রিজ পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার, খর্নিয়া ব্রিজ থেকে তেলিগাতি ঘ্যাংরাইল পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার, হরি নদীর শাখা আপার ভদ্রার কাশিমপুর থেকে মঙ্গলকোট ব্রিজ পর্যন্ত ১৮ দশমিক ৫০ কিলোমিটার, বড়েঙ্গার তিন নদীর মোহনায় জিরো পয়েন্ট থেকে কেশবপুর মনিরামপুর হয়ে রাজগঞ্জ রোড পর্যন্ত হরিহর নদীর ৩৫ কিলোমিটার পুনঃখনন করা হবে। এছাড়া নদীর ১০টি সংযোগ খালের মধ্যে নুরানিয়া ৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার, বাদুড়িয়া ৩ কিলোমিটার, বুড়ি ভদ্রার শাখা খালের ৫ কিলোমিটার, গরালিয়া ১ দশমিক ৩৫০ কিলোমিটার, কন্দর্পপুর ১ কিলোমিটার, কাশিমপুর ১ কিলোমিটার, ভায়না ১ দশমিক ৫০ কিলোমিটার, বিল খুকশিয়া ৭ দশমিক ৫০ কিলোমিটার, বুড়ুলি ৩ কিলোমিটার ও পাথরা খাল ১ দশমিক ৫০ কিলোমিটার পুনঃখনন করা হবে। ইতিমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে নদীর সিমানা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং সেনাবাহিনীও নদীগুলি পরিদর্শন করেছেন। পাউবো আরও জানায়, কেশবপুর ও মনিরামপুর উপজেলার বর্ষার অতিরিক্ত পানি হরি নদীর শাখা দেলুটি দিয়ে শিবশা নদী হয়ে সাগরে পতিত হয়। এসব নদীর সংযোগ খালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অসংখ্য পোল্ডার ও ৯১টি লুইস গেট রয়েছে। বিল খুকশিয়া ৮ ভেন্ট সুইস গেটের সাথে ছোট বড় ২৭ টি বিল, নূরনিয়া ৪ ভেন্ট সুইস গেটের সাথে ১২টি বিল, ভবদহের ২১ ও ৯ ভেন্ট লুইস গেটের সাথে ছোট বড় ৫২টি বিল ও কোনো কোনো রেগুলেটরের সাথে একাধিক বিল যুক্ত আছে। যা পোল্ডারে আবদ্ধ থাকায় দু'পাশ পলিতে ভরাট হয়ে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। পোল্ডারের কারণে প্লাবনভূমির সঙ্গে নদীর সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় বর্তমানে হরিনদীসহ অন্যান্য নদীতে জোয়ার উঠে না। ফলে নদীগুলো বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়ে স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নিয়ে থাকে।
এছাড়া শুধুমাত্র কেশবপুরের বিভিন্ন বিলের মধ্যে ৫৯টি সরকারি খাল রয়েছে যা মৎস্য ঘের ব্যবসায়ীরা দখল করে তাদের ঘেরের সাথে যুক্ত করে মাছ চাষ করে আসছে। এসব খাল দখলমুক্ত করতে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন কার্যকর ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কেশবপুরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সুমন সিকদার বলেন, বন্যা ও জলাবদ্ধতা নিরসনে ৩টি নদী ও ১০টি খাল পুনঃখননে সরকার ১৩৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এর মধ্যে ৩টি নদীর পুনঃখনন সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে করা হবে। ইতোমধ্যে সেনাবাহিনী নদী এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এসব নদী-খাল খনন সম্পন্ন হলে এলাকা বন্যা ও জলাবদ্ধতা মুক্ত হবে।
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে ধর্ষণের শিকার এক শিশুর অভিভাবকের সঙ্গে অত্যন্ত অশালীন ভাষা ব্যবহার ও দুর্ব্যবহারের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) হাসপাতালের মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডে ঘটা এই ঘটনার একটি বিতর্কিত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় ব্যাপক ক্ষোভ ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, চিকিৎসক আবুল কাশেম চিকিৎসাধীন ধর্ষণের শিকার শিশুটির বাবা ও স্বজনদের উদ্দেশ্য করে কুরুচিপূর্ণ, অপমানজনক ও হুমকিমূলক ভঙ্গিতে কথা বলছেন।
স্থানীয় ভাষায় তাকে বলতে শোনা যায়— ‘ ‘হাসপাতালডাক তোমরা চিড়িয়াখানা পাইছ, চিড়িয়াখানার মতো ভর্তি হবার আইসো, কোনঠে সাংবাদিক আইসো, দেউনিয়া-মদ্দিনা আইসো, এলাকাবাসী আইসো, পুরুষ-মহিলা আইসো, ছোট-বড় আইসো, এইটা হরিবোল, হরিবোল দেওয়ার জায়গা নাকি? এই ছুটি বাড়ি যাও, আইজকে বিস্তিবার (বৃহস্পতিবার) আর কোথায় রাখব? তোমরা মামলা করলে করো, না করলে…(অশ্লীল ভাষায় কিছু বলেন)।’
এদিকে, বিতর্কিত ভিডিওটি সিভিল সার্জনের নজরে আসার পর রাতেই অভিযুক্ত চিকিৎসক আবুল কাশেমকে শনিবারের (২০ সেপ্টেম্বর) মধ্যে ঘটনার কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে পঞ্চগড় সার্জন ডা. মো. মিজানুর রহমান জানান, কী ঘটেছিল এবং কেন রোগীর পরিবারের সঙ্গে এমন আচরণ করা হয়েছে, তার সঠিক জবাব চেয়ে নোটিশ করা হয়েছে। গত শুক্রবার ১৯ সেপ্টেম্বর সরকারি ছুটি থাকায় শনিবারের মধ্যে জবাব চাওয়া হয়েছে। বিষয়টি যেহেতু আলোচিত, তাই জবাব পাওয়ার পর তা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে রোগীবাহী একটি অ্যাম্বুলেন্সে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার গভীর রাতে, উপজেলার খলিশাকুণ্ডি ইউনিয়নের পিপুলবাড়িয়া মাঠ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ডাকাতেরা রাস্তার ওপর গাছ ফেলে অ্যাম্বুলেন্সটি থামিয়ে, অস্ত্রের মুখে রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে প্রায় ৩০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে স্ট্রোকের রোগী লিটনকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছিল। পথিমধ্যে পিপুলবাড়িয়া মাঠের কাছে যাত্রীছাউনির সামনে গাছ ফেলে রাস্তা অবরোধ করে পাঁচ-ছয়জনের এক ডাকাত দল। দেশীয় অস্ত্র হাতে তারা অ্যাম্বুলেন্সের চালক ও ভেতরে থাকা চারজনকে জিম্মি করে অর্থ ছিনিয়ে নেয়।
অ্যাম্বুলেন্স চালক রতন আহমেদ জানান, রাত ১টার দিকে রোগীকে কুষ্টিয়ায় নিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ ডাকাতেরা গাড়ি আটকে আমার গলায় ছুরি ঠেকিয়ে টাকার ব্যাগ নিয়ে যায়। তারা কাউকে কিছু না বলতে কড়া হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
রোগীর এক স্বজন জালাল বলেন, আমরা চালককে কাতলামারী হয়ে না যেতে অনুরোধ করেছিলাম, কিন্তু তিনি ওই পথেই যান। পথে এই ঘটনা ঘটে এবং আমাদের কাছ থেকে নগদ ৩০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় ডাকাতরা।
দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌহিদুল হাসান তুহিন জানান, রাত সাড়ে ১২টার দিকে লিটন নামে একজন রোগী হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসজনিত সমস্যা নিয়ে ভর্তি হন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। পথে অ্যাম্বুলেন্সে ডাকাতির ঘটনাটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
এ বিষয়ে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোলাইমান শেখ বলেন, এখনো পর্যন্ত আমাদের কাছে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য