বাংলাদেশের সাম্প্রতিককালের রাজনৈতিক ইতিহাসে ৭ মে তারিখটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে আছে। অনেকেই হয়ত ভাবতে পারেন ৭ মে এমন কী ঘটেছিল, যার জন্য তারিখটি লাল অক্ষরে লেখার মতো? ২০০৭ সালের ৭ মে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা চিকিৎসা শেষে লন্ডন থেকে দেশে ফিরে এসেছিলেন। তিনি উন্নত চিকিৎসা নিতে লন্ডন গিয়েছিলেন, চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে আসবেন– এটাই তো স্বাভাবিক। এতে বিশেষ তাৎপর্য কী আছে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমাদের ২০০৬-০৭ সালের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট একটু বিবেচনায় নিতে হবে।
২০০৬ সালে দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা ছিল। কিন্তু তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামায়াত জোটের নানা অপতৎপরতায় সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে সংশয় দেখা দেয়। যেকোনো উপায়ে ক্ষমতায় থাকার ইচ্ছা থেকে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার নানা অপকৌশলের দিকে হাঁটতে থাকে বিএনপি এবং তার মিত্র জামায়াতসহ অন্যরা। তবে সবকিছুর স্টিয়ারিং ছিল বিএনপির হাতে। অনুগত নির্বাচন কমিশন গঠন, ভুয়া ভোটার তালিকা তৈরি এবং পছন্দের ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করার জন্য বিচারপতিদের চাকরির বয়সসীমা বাড়িয়ে আওয়ামী লীগসহ বিরোধী গণতান্ত্রিক মহলে সন্দেহ তৈরি করে প্রকৃতপক্ষে পরিস্থিতি ঘোলাটে করে তোলা হয়। বিএনপি-জামায়াতের অভিসন্ধির বিরুদ্ধে শুরু হয় প্রতিবাদ-আন্দোলন। ক্ষমতার মোহে আচ্ছন্ন বিএনপি কোনো কিছু তোয়াক্কা না করে তাদের বদমতলব বাস্তবায়নে এগিয়ে যেতে থাকে।
তারা এক সময়ের বিএনপি নেতা এবং তখন প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করতে চাইলে আওয়ামী লীগসহ অন্য দলগুলো আপত্তি জানায়।
কে এম হাসান তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান হলে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়ে আন্দোলন শুরু করে। দেশে একটি অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতার পরিবেশ তৈরি হয়। জনমত উপেক্ষা করে বিএনপি তাদের লক্ষ্য পূরণে অগ্রসর হতে থাকে।
তাদের দুষ্টবুদ্ধির পৃষ্ঠপোষক হন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহমেদ। প্রবল আন্দোলনের মুখে মাহমুদ হাসান তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের দায়িত্ব নিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করলে সবাইকে অবাক করে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন বিএনপির মদদে নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে ঘোষণা দেন। বিএনপির এসব একতরফা কর্মকাণ্ড দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তোলে।
২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয়া হয়। আওয়ামী লীগ ওই নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে মাঠের আন্দোলনের ওপর জোর দেয়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার শক্তি প্রয়োগের নীতি নিয়ে দেশকে এক চরম সংকটের মুখে ঠেলে দেয়। রাজপথে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ঘ শুরু হয়।
এই অবস্থায় ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি তৎকালীন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মঈন ইউ আহমেদের নেতৃত্বে কজন সেনাকর্মকর্তা বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনকে চাপ দিয়ে দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে বাধ্য করেন। নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে ড. ফখরুদ্দিন আহমেদকে প্রধান করে নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। দেশে এক নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা তৈরি হয়।
ক্ষমতার মঞ্চ থেকে খালেদা জিয়ার বিএনপি অপসারিত হওয়ায় সাধারণভাবে মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি তৈরি হয়। সেনাবাহিনী সমর্থিত ফখরুদ্দীনের সরকার দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করবে ধরে নিয়ে শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ এই প্রক্রিয়ার পক্ষেই অবস্থান নেয়।
এরমধ্যেই কানসহ অন্য স্বাস্থ্য সমস্যার চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান শেখ হাসিনা। কিন্তু ধীরে ধীরে জরুরি সরকার এমন সব পদক্ষেপ নিতে শুরু করে, যা দেশে নতুন সন্দেহ ও বিতর্ক সৃষ্টি করে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করলে প্রাথমিকভাবে অনেকে সমর্থন করলেও কিছুদিনের মধ্যে এটা মনে হতে থাকে যে, ওই সরকারও বাড়াবাড়ি করতে শুরু করেছে।
রাজনীতিকদের ‘শিক্ষা’ দেয়ার একটি মনোভাব ফখরুদ্দিন-মঈনউদ্দিন গংয়ের মধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠতে দেখা যায়। তারা শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার লক্ষ্য নিয়ে এগোতে থাকে। সুশীল সমাজের একাংশ এবং দুএকজন সম্পাদক এ কাজে তাদের উৎসাহ জুগিয়ে সরাসরি অবস্থান নেন। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির ভেতর থেকেও দুই নেত্রীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার মতো কিছু নেতা পেতে জরুরি সরকারের অসুবিধা হয়নি।
নিজেদের নিয়ন্ত্রণ শক্ত করার নানামুখী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে শেখ হাসিনার দেশে ফেরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। ষড়যন্ত্রের বিষয়টি আঁচ করতে শেখ হাসিনার অসুবিধা হয়নি। দেশের মানুষকে সংগঠিত করে দ্রুত একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আদায়ের গুরুত্ব বুঝেই শেখ হাসিনা সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ২০০৭ সালের ৭ মে দেশে ফিরে আসেন। বিমানবন্দরে উপস্থিত হয়ে বিপুলসংখ্যক জনতা শেখ হাসিনার প্রতি তাদের সমর্থনের কথা জানান দেন।
শেখ হাসিনা যদি সাহস এবং দৃঢ় মনোভাবের পরিচয় দিয়ে দেশে না ফিরতেন তাহলে একদিকে মানুষ তার নেতৃত্বগুণের সমালোচনা করত, অপরদিকে জরুরি সরকারও তাদের অন্যায্য কাজ চালিয়ে যাওয়ার উৎসাহ পেত। শেখ হাসিনাকে ভয় দেখানোর ক্ষমতা তাদের আছে– এটা বুঝলে তাদের আস্থা বাড়ত। ভয় দেখিয়ে শেখ হাসিনাকে যে কাবু করা যাবে না– এই বুঝ ৭ মে হয়েছিল জরুরি সরকারের নীতিনির্ধারকদের।
শেখ হাসিনা দেশে ফিরে দলের নেতাকর্মীদের সংগঠিত করে দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে জনমত গঠনে আত্মনিয়োগ করেন। কিন্তু ফখরুদ্দিন-মঈনউদ্দিনের মাথায় হয়ত অন্য মতলব ছিল। তারা আওয়ামী লীগ-বিএনপির বাইরে তাদের অনুকূলে একটি রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তুলতে চেষ্টা করছিল।
ড. ইউনূস, ফেরদৌস আহমেদ কোরেশীর মতো কিছু মানুষকে তারা পেয়েওছিল। কিন্তু শেখ হাসিনাকে মুক্ত রেখে, আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ বা অটুট রেখে তাদের পরিকল্পনা সফল করা যে সম্ভব নয়, সেটা বুঝেই ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আওয়ামী লীগ ভাঙার অপচেষ্টাও চলে ভেতরে ভেতরে। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্যের সততা নিয়ে মানুষের মনে ততদিনে সন্দেহ তৈরি হয়ে গেছে। তুচ্ছ কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গোলযোগ পাকাতে গিয়ে সেনাসদস্যদের বাড়াবাড়ির প্রতিবাদে আন্দোলন গড়ে ওঠার ঘটনাটিও উল্লেখযোগ্য।
শেখ হাসিনাকে ১১ মাস আটক রেখে ২০০৮ সালের ১১ জুন মুক্তি দিতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। চিকিৎসার জন্য তিনি আবার বাইরে যান এবং ৮ নভেম্বর দেশে ফিরে নির্বাচনি প্রচারে নেমে পড়েন।
২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বিপুল বিজয় অর্জন করে। আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি ২০০৬ সালে ক্ষমতায় থাকার জেদে যেসব অপকৌশল অবলম্বন করেছিল তা দলটির জন্য বুমেরাং হয়েছে। ভুল থেকে শিক্ষা না নিয়ে পরবর্তী সময়েও ভুল রাজনৈতিক কর্মসূচি, কৌশল এবং সহিংসতার পথ ধরে বিএনপি যে বড় খাদে পড়েছে তা থেকে আর উঠতে পারছে না।
আপসহীন, দৃঢ় মনোভাব এবং নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে মানুষের সঙ্গে থাকলে তার ফল খারাপ হয় না। কঠোরতা এবং নমনীয়তা– দুটোই রাজনীতির কৌশল। কখন কোনটা ব্যবহার করা হবে, সেটা নির্ভর করে ব্যক্তির বিচক্ষণতার ওপর। শেখ হাসিনা রাজনীতিতে কোন ধারার অনুসারী তা এতদিনে সবার কাছে স্পষ্ট হওয়ারই কথা। তার সাহস আছে, দৃঢ়তা আছে আর আছে মানুষের প্রতি গভীর দরদ।
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ রাজনীতির সাধারণ নিয়মনীতি অনুসরণ না করে বার বার জটিলতা ও সংকট তৈরি করে কিন্তু শেখ হাসিনা ধৈর্যের সঙ্গে ঠাণ্ডা মাথায় তা মোকাবিলা করেন। তাই তিনি সবচেয়ে বেশি সময় ধরে সরকারপ্রধান হিসেবে নেতৃত্ব দিয়ে রেকর্ড তৈরি করেছেন। কেউ ইতিহাস দখল করতে চায়, কেউ চায় সৃষ্টি করতে। শেখ হাসিনার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেমন ইতিহাসের স্রষ্টা, তেমনি শেখ হাসিনাও জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইতিহাস তৈরি করেছেন, করছেন।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
আরও পড়ুন:জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৮০তম অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের অংশগ্রহণ বাংলাদেশের দায়িত্বশীল বৈশ্বিক ভূমিকাকে আরও সুদৃঢ় করেছে। এতে গণতান্ত্রিক শাসন, মানবিক সংহতি ও গঠনমূলক আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রতি বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি নতুনভাবে প্রতিফলিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
আজ নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা এক বার্তায় তিনি প্রধান উপদেষ্টার ইউএনজিএ সফরের সাফল্যগুলো তুলে ধরেন।
শফিকুল আলম জানান, অধ্যাপক ইউনূস গত সপ্তাহে নিউইয়র্কে ইউএনজিএ-র উচ্চপর্যায়ের অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলকে নেতৃত্ব দেন। সেখানে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে উদ্দেশ করে বক্তব্য রাখেন, বিশ্বনেতাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন এবং গণতন্ত্র, মানবিক নেতৃত্ব ও ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেন।
প্রেস সচিব বলেন, ইউএনজিএ-র ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশে গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনব্যবস্থার প্রতি অটল অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি স্বাধীন, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করে বৈশ্বিক মহলকে আশ্বস্ত করেন যে বাংলাদেশ জনগণ ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের লালিত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষায় প্রস্তুত।
শফিকুল আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সফরে তিন রাজনৈতিক দলের ৬ প্রতিনিধি ছিলেন। তিনি উল্লেখ করেন, ‘এটাই প্রথমবার এমন একটি মর্যাদাপূর্ণ প্রতিনিধিদল একসঙ্গে সফরে যোগ দিল। তারা কূটনীতিক, প্রবাসী নেতৃবৃন্দ ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এসব যোগাযোগ বিশ্বের কাছে শক্তিশালী বার্তা পৌঁছে দিয়েছে যে গোটা বাংলাদেশই গণতান্ত্রিক, স্বাধীন ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে একসঙ্গে এগোচ্ছে।’
বিশ্বনেতাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার কৌশলগত বৈঠক প্রসঙ্গে আলম বলেন, অধ্যাপক ইউনূস উচ্চপর্যায়ের একাধিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন, যা বাংলাদেশের বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব জোরদার ও যৌথ অগ্রাধিকারের প্রসারে ভূমিকা রাখে।
তিনি জানান, ইতালি, ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, আলবেনিয়া, কসোভো ও ভুটানের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে গণতান্ত্রিক শাসন, বাণিজ্য, জলবায়ু সহনশীলতা ও মানব উন্নয়নের বিষয় গুরুত্ব পায়।
আলম আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, ইউএনএইচসিআর প্রধান ফিলিপো গ্রান্ডি, ইউনিসেফ নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল, জাতিসংঘের আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল রাবাব ফাতিমা, বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা, নেদারল্যান্ডসের রানি ম্যাক্সিমা এবং আইএমএফ ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার সঙ্গে বৈঠক করেন।
এছাড়া অধ্যাপক ইউনূস মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আয়োজিত নৈশভোজে অংশ নিয়ে শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূতের সঙ্গেও তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা হয়, যেখানে আঞ্চলিক সহযোগিতা ও বহুপাক্ষিক কূটনীতিতে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ভূমিকা উঠে আসে।
রোহিঙ্গা সংকটে মানবিক নেতৃত্ব প্রসঙ্গে আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সফরের মূল বিষয় ছিল রোহিঙ্গা ইস্যু। সেখানে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া এক মিলিয়নের বেশি বাস্তুচ্যুত মানুষের প্রতি অব্যাহত মানবিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়। জাতিসংঘ সংস্থা ও দাতা দেশগুলোর সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা নিরাপদ, স্বেচ্ছায় ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং সংকট যেন বৈশ্বিক মনোযোগ থেকে হারিয়ে না যায় সে আহ্বান জানান। প্রেস সচিব জানান, এ সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের সহায়তায় ৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রতিশ্রুতি আনতে সক্ষম হন।
শফিকুল আলম বলেন, জবাবদিহি ও উন্নয়নে সরকারের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরতে অধ্যাপক ইউনূস জাতিসংঘকে অনুরোধ জানান বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের অগ্রগতির একটি স্বাধীন মূল্যায়ন পরিচালনা করতে। এ অনুরোধ ঢাকার অর্থনৈতিক যাত্রাপথে আস্থা ও গঠনমূলক আন্তর্জাতিক মূল্যায়নের প্রতি উন্মুক্ততা প্রকাশ করে।
প্রেস সচিব জানান, ইউএনজিএ সফরে বিদেশে কর্মসংস্থান ও শ্রমশক্তি রপ্তানির নতুন সুযোগও উন্মোচিত হয়। কসোভো, আলবেনিয়া ও ইউরোপের আরও কয়েকটি দেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনায় বাংলাদেশের শ্রমিকদের জন্য শ্রমবাজার সম্প্রসারণের বিষয়ে সম্ভাবনা খোঁজা হয়েছে। তিনি বলেন, এসব সুযোগ প্রবাসী আয় বাড়াতে ও নতুন অংশীদার দেশের সঙ্গে জনগণের পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদার করতে সহায়ক হবে।সূত্র : বাসস
টানা বৃষ্টি আর বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পূজা ঘিরে চড়েছে সবজি বাজার। এক মাসের ব্যবধানে বেশির ভাগ সবজির দর কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি উত্তাপ কাঁচামরিচে। মাস খানেকের ব্যবধানে মরিচের দর বেড়েছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। গোল বেগুনেও যেন লেগেছে আগুন! কেজিতে সবজিটির দাম বেড়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। তবে এক মাসের ব্যবধানে অন্য নিত্যপণ্যের দামে তেমন হেরফের দেখা যায়নি।
সবজির খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, এমনিতেই বর্ষার সময় সবজির উৎপাদন ও জোগান কম থাকে। এর মধ্যে দুই-তিন দিন ভারি বৃষ্টি হয়েছে। ফলে ক্ষেতে পানি জমে আছে। এ কারণে উৎপাদন এলাকা থেকে বাজারে সবজি কম আসছে।
আড়তদাররা জানান, তারা কমিশনে সবজির ব্যবসা করেন। ফলে দাম কম-বেশির পেছনে তাদের ভূমিকা নেই। দাম নির্ভর করে সরবরাহের ওপর। তবে বিভিন্ন উৎসব কিংবা বৃষ্টির অজুহাতে বাজারে যেভাবে দর বাড়ে, তা অযৌক্তিক। দাম স্বাভাবিক রাখতে পাহাড়ি অঞ্চলে সবজি চাষ করে সরবরাহ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন আড়তদাররা।
ভোক্তাদের অভিযোগ, ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে দাম বাড়ান। সরকারের নজরদারি না থাকলে তারা সুযোগ পেয়ে যান। ব্যবসায়ীরা একবার জিনিসপত্রের দাম বাড়ালে আর কমাতে চান না। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ।
রাজধানীর তেজকুনিপাড়া থেকে ৮০ টাকায় ২৫০ গ্রাম কাঁচা মরিচ কেনার পর এক ক্রেতা বলেন, বাজারে সবজি বলেন আর মরিচ– কোনো কিছুরই তো অভাব দেখলাম না। কিন্তু বৃষ্টির দোহাই দিয়ে ব্যবসায়ীরা যেভাবে ডাকাতি করছে, তাতে আমার মতো নিম্ন শ্রেণির লোকের বিপদ বাড়ছে। তাঁর অভিযোগ, বাজারে সরকারের দুর্বল নজরদারির কারণে জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে।
ব্যবসায়ীরা সত্যি ভোক্তার পকেট কাটছেন, নাকি আসলেই বাজারে সবজির সরবরাহ কম– এর প্রমাণ পাওয়া যাবে এক মাস আগের সবজির দরে চোখ রাখলে। গত ৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি লম্বা বেগুন ৬০ থেকে ১০০ টাকা, গোল বেগুন ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ১২০, বরবটি ৮০ থেকে ১০০, করলা ৮০ থেকে ১০০, পটোল ৬০ থেকে ৭০, ধুন্দল ও ঝিঙা ৬০ থেকে ৮০, ঢ্যাঁড়শ ৬০ থেকে ৮০, কাঁকরোল ৭০ থেকে ১০০ টাকা এবং চিচিঙ্গা ৫০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। এ ছাড়া কাঁচামরিচ মানভেদে ১৬০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি প্রতি পিস লাউ ৫০ থেকে ৭০ টাকা, টমেটো ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, শসা ৬০ থেকে ৮০ টাকা ও চায়না গাজর ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর হাতিরপুল, মোহাম্মদপুর টাউন হল ও তেজকুনিপাড়ার খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সব ধরনের সবজির দর এক মাসের তুলনায় ১০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ৭০ থেকে ৮০ টাকার নিচে তেমন কোনো সবজি নেই।
এসব বাজারে গতকাল কাঁচামরিচের কেজি বিক্রি হয়েছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা দরে। একইভাবে চড়া দেখা গেছে গোলবেগুনের দামে, প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়। এই দর ব্রয়লার মুরগির চেয়ে অন্তত ৪০ টাকা বেশি। খুচরা পর্যায়ে ব্রয়লারের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা দরে। বাজারে এখন লম্বা বেগুন ৮০ থেকে ১২০, করলা ১০০ থেকে ১২০, পটোল ৭০ থেকে ৮০, ঢ্যাঁড়শ ৭০ থেকে ৯০, টমেটো ১৪০ থেকে ১৫০, চায়না গাজর ১২০ থেকে ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি চিচিঙ্গা, ঝিঙে ও ধুন্দলের কেজি কিনতে ক্রেতার খরচ হবে কেজিতে ৭০ থেকে ৮০ টাকা।
খুচরা বাজারে সবজির দাম চড়লেও ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে পাইকারি বাজারে। রাজধানীর অন্যতম বড় আড়ত কারওয়ান বাজার। এই বাজার থেকে কিনলে সব ধরনের সবজির কেজিতে ক্রেতার ২০ থেকে ৩০ টাকা সাশ্রয় হয়।
পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচরা বাজারে এত ব্যবধান কেন– জানতে চাইলে হাতিরপুল কাঁচাবাজারের সবজি ব্যবসায়ী মো. অপু বলেন, ‘পূজা ও বৃষ্টির কারণে সবজির দাম কিছুটা বেশি। আমরা কারওয়ান বাজার থেকে পাইকারি সবজি কিনে আনি। সেখানে সকালে এক দাম, বিকেলে আরেক দাম। আমরা সাধারণত সকালেই সবজি কিনে আনি।’ এই ব্যবসায়ীর ভাষ্য, বৃষ্টি হলে সব সময় কাঁচামরিচের দাম বাড়ে। এখন দেশে কাঁচামরিচের উৎপাদন খুব কম। বলতে গেলে ভারতের মরিচের ওপর পুরো বাজার নির্ভর করে। পূজার কারণে ভারত থেকে মরিচ কম আসায় বাজারে এর প্রভাব পড়ছে।
সরবরাহ বাড়াতে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি ইমরান মাস্টার। তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুমে সবজির ফলন খুব কম হয়। বৃষ্টি হলে জমিতে পানি জমে। এতে গাছ মরে যায়। গ্রামে মানুষ ঘরবাড়ির আঙিনায় ধুন্দল, ঝিঙেসহ কিছু সবজি গাছ লাগিয়ে নিজেদের চাহিদা মেটায়। শহরেও এখন ছাদ বা বারান্দায় অনেকে সবজি গাছ লাগিয়ে কিছুটা হলেও চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করেন।
তিনি বলেন, নিচু জমির কারণে বৃষ্টি হলে পানি জমে উৎপাদন ব্যাহত হয়। তবে বর্ষা মৌসুমে দেশের উঁচু জমি তথা পাহাড়ি এলাকায় পতিত জমিতে শাকসবজি লাগানোর ব্যবস্থা করলে সবজির সরবরাহ বাড়বে।
এ ব্যাপারে কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ও সাবেক সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, নানা অজুহাতে প্রতি বছরই এ সময় জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। একটা চক্র সব সময় বাজার অস্থিতিশীল করে রাখে। তাদের রুখতে সরকারের নজরদারি বাড়ানো উচিত।
তিনি বলেন, সবজি যেন তিন-চার হাতবদল না হতে পারে, সে জন্য সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে সবজি এনে শহরে বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য ঢাকার ৩০০ ফিটে ‘কৃষকের বাজার’ হতে যাচ্ছে। সেখানে ন্যায্য দামে সবজি কেনা যাবে।
রাজধানীর মিরপুরের সেনপাড়া এলাকায় আলিফ পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
শুক্রবার (৩ অক্টোবর) সকাল ৭টা ২৩ মিনিটে আগুন লাগার খবর পেয়ে ৭টা ৩৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস। বিষয়টি নিশ্চিত করে ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার রাশেদ বিন খালিদ বলেন, খবর পেয়ে মিরপুর ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার সকালে আলিফের বাসটি সেনপাড়া এলাকায় পৌঁছালে কয়েকজন হাতের ইশারা দিয়ে থামাতে বলেন। থামানোর পর চালক ও তার সহকারীকে পিটিয়ে বাস থেকে নামিয়ে দেয় তারা। সেসময় যাত্রীদেরও নামিয়ে দেওয়া হয়। পরে সেই বাস ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়।
আলিফ পরিবহন থেকে কিছু কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়। যে কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে ছাটাই হওয়া কর্মীদের একটি অংশ এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ।
কাফরুল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এই ঘটনায় একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে দেখছি। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে— পরিবহনের স্টাফদের মধ্যে একটা অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব রয়েছে, এর কারণে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। এছাড়া আরও দ্বন্দ্ব রয়েছে। সব বিষয়কে সামনে রেখে আমরা তদন্ত করে যাচ্ছি।
বাসটিতে যখন দুর্বৃত্তরা আগুন দেয়, তখন কি কোনো গুলি করা হয়েছিল কিনা— জানতে চাইলে ওসি বলেন, প্রাথমিকভাবে এমন অভিযোগ করা হয়েছিল। পরে আমরা তদন্ত করে দেখেছি গুলির অভিযোগটি সত্য নয়। এ সময় কোনো ধরনের গুলি করা হয়নি।
গাজার উদ্দেশ্যে যাওয়া মানবিক সহায়তাকারী নৌবহর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা আটকের ঘটনায় ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক জলসীমায় জাহাজ আটকের ঘটনা আইনের মারাত্মক লঙ্ঘন বলে আখ্যা দিয়েছে ঢাকা।
শুক্রবার (৩ অক্টোবর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ নিন্দা জানানো হয়।
অবিলম্বে ইসরায়েলকে নিঃশর্তভাবে আটক সব মানবিক সহায়তা কর্মী ও অ্যাক্টিভিস্টদের মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথাও বলা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও বলছে, অবৈধ দখলদারিত্বের অবসান, আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া এবং গাজা উপত্যকায় অবিলম্বে গণহত্যা বন্ধ ও মানবিক অবরোধ তুলে নিতে ইসরায়েলকে আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, মানবিক সহায়তা বহনকারী নৌবহরটি ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি বৈশ্বিক সংহতির প্রতিনিধিত্ব করে। ইসরায়েলি বাহিনীর উচিত গাজায় বেসামরিক জনগণের জন্য বাধাহীন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা।
বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ এই চরম দুর্দশা ও ভোগান্তির সময়ে ফিলিস্তিনের জনগণের সঙ্গে অবিচল সংহতি বজায় রাখার কথা পুনরায় ব্যক্ত করেছে বলেও উল্লেখ করা হয়।
প্রায় ৪৫টি জাহাজ নিয়ে গঠিত ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ নৌবহর গত মাসে স্পেন থেকে গাজার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। এতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ফিলিস্তিনপন্থী রাজনীতিবিদ ও মানবাধিকারকর্মীরা রয়েছেন। তাদের মধ্যে সুইডিশ জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গও আছেন। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের ওপর ইসরায়েলের আরোপিত অবরোধ ভাঙাই ছিল এই নৌবহরের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি যুদ্ধে ইতোমধ্যে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। গত বুধবার থেকেই ইসরায়েলি নৌবাহিনী ফ্লোটিলার বহরে থাকা নৌযান আটক করতে শুরু করে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শত মত মানবাধিকারকর্মী, রাজনীতিক ও সাংবাদিকদের বহনকারী গাজা অভিমুখী ফ্লোটিলার ৪৫টি জাহাজের প্রায় সবগুলোই আটক করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এই মানবাধিকার কর্মীরা ইসরায়েলের আরোপিত গাজার সামুদ্রিক অবরোধ ভাঙার চেষ্টা করছিলেন।
ভাষাসৈনিক, কবি, প্রাবন্ধিক ও রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ আহমদ রফিকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
শোকবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আহমদ রফিক ছিলেন ভাষা আন্দোলনের এক অগ্রগণ্য সাক্ষী ও সংগ্রামী কণ্ঠস্বর। একই সঙ্গে তিনি ছিলেন একজন অনন্য কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও রবীন্দ্রতত্ত্বচর্চার দিশারি। শতাধিক গ্রন্থ রচনা ও সম্পাদনার মাধ্যমে তিনি বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছেন।
রবীন্দ্রচর্চার ক্ষেত্রে তার অবদান দুই বাংলায় সমানভাবে শ্রদ্ধার আসন পেয়েছে। কলকাতার টেগর রিসার্চ ইনস্টিটিউট তাঁকে ‘রবীন্দ্রতত্ত্বাচার্য’ উপাধি দিয়ে সম্মানিত করেছে, যা তাঁর বিদগ্ধতার স্বীকৃতি।’
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘দেশের সংস্কৃতি ও মুক্তচিন্তার জগতে আহমদ রফিকের প্রয়াণ এক অপূরণীয় ক্ষতি। দৃষ্টিশক্তি ও শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও তিনি শেষ দিন পর্যন্ত জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে গেছেন।’
মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে তিনি বলেন, ‘আহমদ রফিকের জীবন ও কর্ম ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে। জাতি কৃতজ্ঞচিত্তে তাকে স্মরণ করবে।’
প্রধান উপদেষ্টা শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজন, শুভানুধ্যায়ী ও সাহিত্য-সংস্কৃতিমনা জনগণের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল রয়েছে। গত বুধবার সকাল থেকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ও উপকূলে ঝোড়ো হাওয়া বইছে। কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি আবার কখনো চেপে বৃষ্টি। গতকাল বৃহস্পতিবার সারা দিন একই অবস্থা ছিল। ফলে সাগরে জোয়ার ও ঢেউয়ের উচ্চতা বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে বাতাসের গতিবেগ।
এই বৈরী পরিবেশ কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের দমাতে পারেনি। শারদীয় দুর্গোৎসব ও টানা চারদিনের ছুটিকে ঘিরে পর্যটকদের ঢল নেমেছে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে। ছুটির এ সময়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত ভ্রমণপিপাসুদের আগমনে জমজমাট হয়ে উঠেছে সৈকত শহরের হোটেল-মোটেল, রেস্টুরেন্ট, পরিবহন, হস্তশিল্প ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যবসা।
সমুদ্রস্নান, পাহাড় ও প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন পর্যটকরা। যদিও নিম্নচাপের কারণে দুপুরের পর থেকে বৃষ্টি কিছুটা ভ্রমণে বিঘ্ন ঘটিয়েছে, তবে অনেকেই বৃষ্টিতে ভিজে উপভোগ করছেন ভিন্নধর্মী আনন্দ।
শহরের কলাতলী, লাবণী, সুগন্ধা, দরিয়ানগর ছাড়াও হিমছড়ি, ইনানী ও টেকনাফ এলাকায় পর্যটকদের চোখে পড়ার মতো ভিড় দেখা যাচ্ছে। হোটেল-মোটেলের বেশিরভাগ রুম ইতোমধ্যে বুকড হয়ে গেছে। অনেক পর্যটক অগ্রিম বুকিং না করায় বিপাকে পড়েছেন।
পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এ সময়ে পর্যটকদের আগমন অর্থনৈতিকভাবে স্বস্তি দিলেও অব্যবস্থাপনা, যানজট এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ায় অনেক পর্যটক ভোগান্তির মুখে পড়ছেন।
পর্যটকদের নিরাপত্তায় জেলা প্রশাসন, পুলিশ, র্যাব, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও লাইফগার্ড সদস্যরা সমন্বিত টহল দিচ্ছেন। শিশু হারানো রোধে চালু হয়েছে বিশেষ হেল্পডেস্ক। যানজট নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ, তবে শহরের কিছু অংশে যানবাহন চলাচলে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
ঢাকা-কক্সবাজার রুটে বিমান সংস্থা বাড়তি ফ্লাইট চালু করেছে। পাশাপাশি রেলও চালু করেছে বিশেষ ট্রেন, এবং বাস সংস্থাগুলোরও অতিরিক্ত ট্রিপ রয়েছে। তবে মহাসড়কে যানজট ভ্রমণকে কিছুটা ক্লান্তিকর করে তুলেছে। ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ পর্যটকদের জন্য বাড়তি আনন্দের উৎস।
সমুদ্রস্নানে নামা পর্যটকদের নিরাপত্তায় সতর্ক রয়েছে লাইফগার্ড দল। পর্যটন ব্যবসায়ীদের মতে, এই ছুটিতে কক্সবাজারে কয়েক শত কোটি টাকার ব্যবসা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, শহর ও আশপাশের এলাকায় ১ লাখ ৭০ হাজার পর্যটকের রাত যাপনের সুযোগ রয়েছে। মৌসুমের শুরুতেই পর্যটকদের ব্যাপক সাড়া পর্যটন খাতের জন্য ইতিবাচক বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের হিসাব অনুযায়ী, বছরে কক্সবাজারে প্রায় ৩০-৪০ লাখ পর্যটক ভ্রমণ করেন, যা দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে।
এদিকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বড় উৎসব দুর্গাপূজার প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে গতকাল সৈকতের লাবণী পয়েন্টে লাখো পর্যটক ও পুণ্যার্থী ভিড় করেন। এই অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে কক্সবাজার ও বান্দরবানের বিভিন্ন পূজামণ্ডপ থেকে প্রতিমা নিয়ে সৈকতে জড়ো করা হয়। বিকেল ৫টার দিকে পুরোহিতের মন্ত্র পাঠের শেষে একে একে প্রতিমাগুলো উত্তাল সাগরে ভাসানো হয়।
মন্তব্য