প্রবাস বলতে বোঝায় নিজ দেশের বাইরে অন্য কোথাও বসবাস। দূর এবং অপরের দেশে বসবাস বলেই এর আরেক অর্থ ‘নির্বাসন’। পাণ্ডব জ্যেষ্ঠ যুধিষ্ঠির সুখের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন, অপ্রবাসী ও অঋণী হয়ে দিনশেষে যে শাকান্ন ভক্ষণ করতে পারে সেই সুখী। যুধিষ্ঠিরের সংজ্ঞায় পৃথিবীতে আর যেখানেই হোক প্রবাসে সুখ নেই, আছে কেবল দুঃখ, বেদনা, হাহাকার।
প্রবাসে সুখ নেই, তবু লক্ষ লক্ষ মানুষ পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে যায়। চাঁদপুরের আবু সুফিয়ান (কল্পনাম) হাড়কাঁপানো ঠান্ডা উপেক্ষা করে পার হয় ইউরোপের গহিন অরণ্য, জীবনের মায়া তুচ্ছ করে পাড়ি দেয় দুস্তর পারাবার কিংবা কিশোরগঞ্জের সুফিয়া (কল্পনাম) ঘরবাড়ি সহায়সম্বল বেচে উড়াল দেয় মধ্যপ্রাচ্যে।
অর্থনীতিবিদেরা হয়তো যুধিষ্ঠিরের উল্টোটাই বলবেন। বলবেন, জীবন মানের উন্নয়ন, বেশি আয়, সুখ-স্বাছন্দ্যপূর্ণ ভবিষ্যতের স্বপ্ন তাদের টেনে নিয়ে যায় দূর কোনো পরবাসে। তবে সুখের লাগিই হোক আর নাই হোক, সীমানা পাড়ি দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দেশি হয়ে যায় বিদেশি, গায়ে লেগে যায় ‘প্রবাসী’ তকমা। স্বদেশি-প্রবাসী ইত্যাদি ভাগাভাগিতে সামনে দাঁড়িয়ে যায় বিভাজনের দেয়াল।
তুলনামূলক আলোচনায় দেশি বাংলাদেশি অনেকটাই ‘খাঁটি’ বাংলাদেশি, প্রবাসীরা যেন একটু ‘কম দেশি’, তাদের দেশপ্রেমও একটু ‘কম কম’; তাই তারা দেশ ছেড়ে ভিনদেশে বসবাস করতে যায়।
দেশপ্রেম প্রমাণের জোরাল একটি শর্ত হলো, দেশের ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে অবস্থান করা। এই সরলরৈখিক ভাবনায় দেশকে ভালোবাসা এবং দেশে থাকা মোটামুটিভাবে সমার্থক। ফলে বিদেশি বিদ্যা ও কর্ম সম্পাদনের পর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে মহিমান্বিত করতে দেখা যায় অহরহ। এবং যারা প্রবাসে বসবাসের সুযোগ ও কাজের মোহ ছেড়ে দেশে ফিরে যেতে পারে তারা নির্লোভ দেশপ্রেমিক, এই ভাবনাটিও সর্বজনসিদ্ধ।
প্রবাসী এক অর্থে তাই লোভী, উচ্চাকাঙ্ক্ষী। ফলে প্রবাসে থেকে দেশের ইস্যু নিয়ে ভালো-মন্দ যাই বলুন হা রে রে করে তেড়ে আসবেন আপনার চেনাপরিচিতরা। যেমন: আপনি বললেন ঢাকার বাতাস বিষাক্ত হয়ে গেছে, মানুষ কীভাবে যে বাঁচে! অমনি আপনার ঠোঁটকাটা বন্ধু বলে উঠবে, ‘নিরাপদ দূরত্বে থেকে এসব বলাই যায়।’
আপনি বললেন, আহা একদিনে সড়কে এত মৃত্যু! কেউ তো একটু নিয়মকানুন মেনে চলে না। আর রাস্তাঘাটও যে বেহাল। তখনই আপনাকে হকচকিত করে দিয়ে আপনারই বন্ধু বলে উঠবে, ‘অন্যের দেশে থেকে সুন্দর সুন্দর রাস্তায় গাড়ি চালাও, ঘুরে বেড়াও তাই দেশকে নিয়ে এভাবে বলতে পার। কাঁচা হোক তবু ভাই নিজের রাস্তা।’
আপনি প্রবাসে থাকেন তাই আপনার দেশপ্রেম মুহুর্মুহু সন্দেহ বাতিকতার শিকার হবে। ফলে প্রবাসীর ‘কমদেশি’ দোষমুক্ত থাকার জন্য শব্দচয়নেও অনেক সাবধানি হতে হয়, কেননা পান থেকে চুন খসলেই কবি আব্দুল হাকিমের পরবর্তী প্রজন্ম এসে শোনাতে থাকে:
যে জন বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী।
সেসব কাহারো জন্ম নির্ণয় ন জানি ।।
দেশি ভাষা বিদ্যা যার মনে ন জুয়ায়।
নিজ দেশ ত্যাগী কেন বিদেশ ন যায়।।
কবি যেন রীতিমতো হুমকি দিলেন, ‘থাক তোমরা বিদেশেই, তোমাদের জন্য বিদেশই ভালো।’ অথচ একই মন্তব্য আপনি বাংলাদেশে বসে করবেন তাতে আপনার দেশপ্রেম প্রশ্নবিদ্ধ হবে না।
প্রবাসীর জন্য চারদিকে আছে ‘সার্ভিল্যান্স ক্যামেরা।’ বাচ্চা ভিন্ন ভাষায় কথা বলছে কেন? বাচ্চা ভাত না খেয়ে বার্গার পছন্দ করে কেন? তুমি সালোয়ার-কামিজ পর না কেন? পরলে কেউ কি মানা করবে? সাদাদের সঙ্গে মিশতে যেও না যেন! সাদাদের সঙ্গে বাচ্চাকে মিশতে দিও না। বড়জোর অন্য এশিয়ানদের সঙ্গে মিশতে দিও। সাদাদের সঙ্গে মিশতে দিলে সব শেষ। ধর্মকর্ম কিছুই হবে না, আর বাবা-মাকে ফিরেও দেখবে না। এমনভাবে আপনার দিকে এসব মন্তব্য আসতে থাকবে যেন বাংলাদেশের প্রতিটি গৃহ ধার্মিক সন্তান-সন্ততিতে পূর্ণ এবং তারা পিতামাতার একান্ত বাধ্য ও অনুগত।
উপরিউক্ত মন্তব্যের পেছনে যে ধারণা কাজ করে তা হলো, ‘বাংলাদেশি সংস্কৃতি ধরে রাখা।’
প্রশ্ন জাগে, বাংলাদেশি সংস্কৃতি আসলে কী? অখণ্ড কোনো সংস্কৃতি কি বাংলাদেশে আছে? কেউ কি তা দাবি করতে পারে?
অখণ্ড ‘বাংলাদেশিত্ব’ বলে কোনো কিছু না থাকলেও প্রবাসীকে নিতে হয় নানাবিধ চাপ। প্রতিনিয়ত আত্মপরিচয়ের নির্মাণ-বিনির্মাণের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কেননা, আপনার হৃদয়, মগজ, আচরণ, অভ্যাস, জীবণাচরণজুড়ে একদিকে আছে জন্মভূমির প্রভাব, আবার অন্যদিকে আছে আপনার অর্জিত বৈশ্বিক জ্ঞান, সংস্কৃতি ও বোঝাপড়া। প্রবাসী পরিচয়ের সঙ্গে বোঝাপড়া খুব সহজসরল বিষয় নয় বরং জটিল।
আত্মপরিচয়ের সংকট প্রবাসীর বহুবিধ। আপনাকে একনজর দেখেই (গায়ের রং) লোকে বলে দেবে আপনি ভারতীয়। তারা একই সঙ্গে বর্ণ ও জাতীয়তা- এ দুটো বিষয় নির্ধারণ করে। আপনি মাথা নেড়ে জানালেন যে আপনি আসলে বাংলাদেশি, ভারতীয় নন। বাংলাদেশে আগে ভ্রমণ করেছে এমন কারও সঙ্গে যদি কথা হয় তাহলে তাদের কাছে আপনার পরিচিতি হবে আপনি একটি গরিব দেশ থেকে প্রবাসী হয়েছেন।
কেউ কেউ বৈশ্বিক বিভাজনের লেন্স লাগিয়ে আপনাকে দেখবে তৃতীয় বিশ্বের নাগরিক হিসেবে। অন্যদিকে, আপনার বন্ধু মেসেঞ্জারে লিখে বসবে, ‘কী খবর প্রথম বিশ্বে তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক?’ অথচ আপনি তখন বিশ্ব বাজারে আপনার অবস্থান নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। দুই-চারজন এই বাহাসে তাল ঠুকবে, ‘প্রবাসেই শান্তি। রাজনৈতিক হানাহানি নেই। রাস্তায় বের হলে মরে পড়ে থাকার আশঙ্কা নেই। নিজের বাড়ি রাত পোহালে বেহাত হবার ভয় নেই।’
বন্ধুরা এসব বলেই খালাস অথচ আপনি মাঝবয়সে বিদ্যাবুদ্ধি দিয়ে অর্জিত একটা চাকরি ও সামাজিক অবস্থান ফেলে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে প্রবাসে এক একটি দিন পার করছেন আর ভাবছেন ‘কতদূর আর কতদূর…?’
চেনাপরিচিতদের দেশের প্রতি মায়া-মমতা-প্রেম নিয়ে বরং টানাপোড়েন হয় আমার। এই দেশপ্রেমিকেরা ‘প্রথম বিশ্বের তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক’ বলে প্রবাসে বসবাসকারীদের গায়ে রং চাপান ঠিকই, কিন্তু নিজ দেশে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর তৃতীয়, চতুর্থ অথবা শ্রেণিগোত্রহীন নাগরিক হয়ে পড়ার ব্যাপারে কোনো খোঁজখবরই রাখেন না কিংবা খোঁজখবর করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন না।
বাংলাদেশে শ্রেণি ক্রমোচ্চতার যে চিন্তা ও চর্চা পরিবার, সমাজ ও প্রতিষ্ঠানে গভীরভাবে প্রোথিত সেসব নিয়েও তারা কখনও কোথাও প্রশ্ন তোলেন না। সবার সম্মিলিত উন্নাসিকতা ধীরে ধীরে নির্দিষ্ট কিছু শ্রেণি-গোত্র-জাতিকে অদৃশ্য করে দিচ্ছে, ‘উপজাতি’ করে তুলছে এবং বাদপড়াদের কাতারে ফেলে দিচ্ছে, কিন্তু সেসব নিয়েও তাদের ভাববার অবকাশ হয় না।
কিছুদিন আগে এক নারী চিকিৎসক যখন একজন নরসুন্দরকে বিয়ে করলেন তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী এক কর্তা বলে দিলেন, ‘এ হতে পারে না।’
কেন হতে পারে না, কারণ সামাজিক অবস্থানের পাল্লায় এ দুই ব্যক্তি অসম। তবে কী হতে পারে? দিনদুপুরে ধর্ষণ, সেটির ভিডিও ধারণ, সেই ভিডিও অনলাইনে ছেড়ে দেয়া এবং এসবের অভিঘাতে কোনো নারীর আত্মহত্যা?
অল্প কিছুদিন আগে ভাড়া না থাকার কারণে একজন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন নারীকে বাস থেকে ফেলে দেন চালক ও হেলপার। বাসাবাড়িতে, স্কুল-কলেজে, মাদ্রাসায় শিশুদের মারধর-খুন-ধর্ষণ নিয়মিত ঘটনা। আদিবাসী নারী অপহরণ, ধর্ষণ অথবা তাদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ অনাদিকালের চর্চা হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে।
অল্প কিছু চেনাপরিচিত ছাড়া কাউকেই প্রশ্ন রাখতে দেখি না কেন আমার দেশের নারী, শিশু, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষ নিজ রাষ্ট্রে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে না? কেন আমাদের রাষ্ট্র সবার বসবাসের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে পারে না? অথচ রাষ্ট্র নামক প্রতিষ্ঠানেরই একমাত্র সামর্থ্য ও এখতিয়ার আছে সবার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সবাইকে সংঘবদ্ধ রাখার। তা কি হচ্ছে? যে দেশে বিদ্যাধারী বঙ্গ পণ্ডিতেরা দলবাজি ও দুর্নীতির অনন্য নজির রেখে চলেছেন, শিল্পী, সাহিত্যিক মতপ্রকাশের দায়ে রাষ্ট্রীয় রোষানলে পড়ে জীবন হারাচ্ছেন, সেই দেশে প্রতিদিন কত মানুষ নিজভূমে পরবাসী হয় তা দৃষ্টিগোচর না হলেও অননুমেয় নয়।
দেশ ও প্রবাস নিয়ে যে ভাগাভাগি তা মূলত ইনসাইডার ও আউটসাইডার- এই দ্বৈত বিভাজনকে ধারণ করে। এটি সাধারণভাবে স্থান ও পরিসরকেন্দ্রিক হলেও এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে সূক্ষ্ম অথচ গভীর কিছু বিষয়। বিভাজন/বিভাজিতের বৈশ্বিক সম্পর্ক। উত্তর-দক্ষিণ, উন্নত-অনুন্নত-উন্নয়নশীল প্রভৃতি বিভাজনের সঙ্গে যুক্ত থাকে সীমানা, ভূমি, নিরাপত্তার ধারণা, প্রবেশের অনুমোদন ইত্যাদি গুঢ় কিছু বিষয়।
আমাদের ইনসাইডার চোখ বিদেশি, প্রবাসীকে মাপতে শুরু করে নানান গজ-ফিতায়, আর নিভৃতে বুনতে থাকে বিভাজনের দেয়াল। এই ভাবনায় এক পাশে থাকে ‘ক্ষমতাধর’ রাষ্ট্র, যারা তাদের নাগরিকদের ‘নিরাপত্তা’ দিতে সচেষ্ট এবং অন্য পাশে থাকে ‘ক্ষমতাহীন’ রাষ্ট্র, যাদের নাগরিকের নিরাপত্তা অনেকটাই নাজুক।
তবে এসব অদৃশ্য ভাগাভাগি একই সঙ্গে বহুবিধ, অন্তঃপ্রবিষ্ট ও সংযুক্ত। সীমানা, বৈশ্বিক রাজনীতি, (ভাষা, জাতীয়তা, গায়ের রং এর ভিত্তিতে), জ্ঞান, ক্ষমতা প্রভৃতি প্রবাস ধারণার সঙ্গে যুক্ত হয়ে একে ‘দুষ্প্রাপ্য’ ও ‘অমূল্য’ করে তোলে। যেখানে প্রবাস একইসঙ্গে অথরিটেটিভ ও পরাক্রমশালী। এখানে প্রবেশ, বসবাস, ও অনুপ্রবেশ সবই কঠোর ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে নিয়ন্ত্রিত।
দেশ বনাম প্রবাস এ রকম বিভাজন করতে চাওয়া বৈশ্বিক সংযুক্ততার এই সময়ে খানিকটা বরং বিড়ম্বনারও। কেননা, আবু সুফিয়ান যখন পশ্চিমে বসে কোনো এক বরফঢাকা সকালে চা খেতে খেতে চাঁদপুরে পদ্মার ভাঙন দেখেন, আপনি হয়তো তখন বন্ধুদের নিয়ে ঘুরছেন সাজেকের পাহাড়ে। যখনকার ঘটনা তখনই জানুন সংবাদ ও মিডিয়া সেকেন্ডে সেকেন্ডে উপস্থাপন করছে খবরের নানা দিক। ধুন্ধুমার ফলো ও সাবক্রিপশনের এই সময়ে আপনার আগেই প্রবাসী সুফিয়ান জেনে যেতে পারেন তার জন্মভূমিতে কী ঘটে চলেছে। সুফিয়ান হয়তো বন্ধুবান্ধবের কাছে থেকে কিছু অর্থকড়ি জোগাড় করে দেশে পাঠিয়েও দিলেন, কিন্তু আপনি দেশের আরও দশটি নদীভাঙনের মতো একে নিয়মিত ঘটনা হিসাবে দেখে একে পাশ কাটিয়ে সাজেক থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা হলেন।
এ-বিশ্বের যে প্রান্তেই থাকুন দেশ-বিদেশ সবই অন্তঃপ্রবিষ্ট নয় কি? বিভাজনের দেয়াল ঠেলে যত দূরে ঠেলতে চান, দেয়াল আরও শক্তিধর হয়ে উঠবে শুধু। কেননা, কেবল পরিসরের বিভাজন হিসেবে দেশ ও প্রবাসকে দেখলে আর চলে না। অন্যতার বোধ, রাজনীতি ও মতাদর্শ প্রভৃতি বিষয়-আশয় এর সঙ্গে ভীষণভাবে যুক্ত হয়ে পড়ে এবং দেশ, বিদেশ, প্রবাস ধারণাকে সম্পর্কিত ও আকৃতি দান করে।
এ-বিশ্ব সব মানবের। এর যে কোনো স্থানেই তো আমার-আপনার বসবাসের অধিকার থাকার কথা। আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা, জাতীয়তাবোধ আমাদের সেই অধিকারকে বরং হরণ করেছে। ভারতীয় উপমহাদেশের হাজার বছরের ইতিহাস বদলে গেছে দ্বিজাতি-তত্ত্বের ভিত্তিতে। সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক চেতনাকে পুঁজি করে তৈরি হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন দেশ, সীমানা, পরিচিতি। ঔপনিবেশিক হস্তক্ষেপে অখণ্ড ভূমি, আকাশ, জল হয়েছে বিভাজিত। ‘আমার সোনার বাংলা’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কোন বাংলার রূপ বুকে ধারণ করে লিখলেন? অখণ্ড উপমহাদেশের, নাকি জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে বিভাজিত বাংলার? অথচ পৃথিবীর যেকোনো কোণে বসে সবাই গেয়ে উঠি ‘মা, তোর বদনখানি মলিন হলে আমি নয়ন জলে ভাসি।’
এ বিশ্বের সব সত্তা একে অপরের পরিপূরক। দেশের গুরুত্ব বিদেশের চেয়ে কম নয়, নারীর গুরুত্ব পুরুষের চেয়ে কম নয়। আদিবাসীর গুরুত্ব সমতলের বাসিন্দার চেয়ে কম নয়। কি দেশি, কি প্রবাসী সবাই যার যার মতো করে জীবন পরিচালনায় নিয়োজিত।
বিভাজনের দৃষ্টি সরিয়ে আসুন বরং জীবন দেখি। সাদা-কালো, নীল-বেগুনি, সস্তা-দামি, আসল-নকল, অমূল্য সব জীবন। দেশ কিংবা প্রবাস সেই নানান রঙের জীবনের এক একটি রংমাত্র। যে রং আপনার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার ভান্ডারকে একটু একটু করে আরও সমৃদ্ধ করবে। সন্দেহ নেই।
নৃবিজ্ঞানী ও গবেষক
আরও পড়ুন:সিঙ্গাপুরে কাজ করার সময় রড চাপায় রাকিব হোসেন নামে এক বাংলাদেশি শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
২২ বছর বয়সী রাকিব বেনাপোল পোর্ট থানার ২ নম্বর ঘিবা গ্রামের মমিনুর রহমানের ছেলে।
রাকিবের চাচা মিলন হোসেন জানান, চলতি মাসের ৩ এপ্রিল বুধবার নির্মাণকাজ করার সময় রডের বান্ডিলে চাপা পড়ে মারাত্মক আহত হয় রাকিব। দুর্ঘটনার পরপরই তাকে রডের নিচ থেকে উদ্ধার করে সিঙ্গাপুর সিভিল ডিফেন্স ফোর্সের উদ্ধারকারীরা হাসপাতালে ভর্তি করে। ১৬ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গত শনিবার (২০ এপ্রিল) রাতে তিনি মারা যান।
রাকিবের বাবা মমিনুর রহমান বলেন, ‘এক বছর হলো রাকিব সিঙ্গাপুর গিয়েছে। সে সিঙ্গাপুরে কনস্ট্রাকশনের কাজ করত। গত ৩ এপ্রিল প্রতিদিনের মতো সে কাজে যায়। এক পর্যায়ে ওইদিন বিকাল ৫টার দিকে উপরে তোলার সময় টোশন ছিঁড়ে (দড়ি) রডের নিচে পড়ে চ্যাপ্টা হয়ে যায় সে।’
বেনাপোল পোর্ট বাহাদুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান (মফিজ) বলেন, ‘সিঙ্গাপুরে নিহত রাকিব আমার ইউনিয়নের ঘিবা গ্রামের বাসিন্দা। তার পরিবারের মাধ্যমে জেনেছি সে সিঙ্গাপুরে কাজ করার সময় রড চাপায় মারা গেছে। এখন তার মরদেহ কীভাবে দেশে আনা যায়, তার সার্বিক সহযোগিতা আমার পক্ষ থেকে করে যাচ্ছি।’
সরকারি শ্রম অভিবাসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কর্মসংস্থানের আশায় মালয়েশিয়ায় যাওয়া বাংলাদেশি প্রবাসীদের পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা।
শুক্রবার জেনেভা থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কয়েক মাস বা তার বেশি সময় ধরে মালয়েশিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশি অভিবাসীদের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল ও অসম্মানজনক।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করা বিশেষজ্ঞরা হলেন- দাসত্বের সমসাময়িক রূপ, কারণ ও পরিণতি বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি টোমোয়া ওবোকাতা, মানবপাচার বিশেষ করে নারী ও শিশুপাচার সম্পর্কিত বিশেষ প্রতিনিধি সিওভান মুল্লালি, প্রবাসীদের মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ দূত গেহাদ মাদি ও রবার্ট ম্যাককরকোডেল (চেয়ার-র্যাপোর্টিয়ার), ফার্নান্দা হপেনহাইম (ভাইস-চেয়ার), পিচামন ইয়োফানটং, দামিলোলা ওলাউই, এলজবিয়েতা কারস্কা এবং ব্যবসা ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা দল।
জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘প্রবাসীদের ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং তাদের শোষণ, অপরাধীকরণ ও অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘন থেকে রক্ষা করার জন্য মালয়েশিয়ার জরুরি পদক্ষেপ নেয়া দরকার।’
তারা উল্লেখ করেন, অনেক প্রবাসী মালয়েশিয়ায় এসে দেখেন প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চাকরি নেই এবং অনেক সময় তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও থাকতে বাধ্য করা হয়।
এর ফলে এসব প্রবাসী গ্রেপ্তার, আটক, দুর্ব্যবহার ও বহিষ্কারের ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে প্রবাসী কর্মী নিয়োগের মাধ্যমে বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে সক্রিয় অপরাধী চক্র। এতে প্রবাসীরা প্রতারিত হচ্ছেন, ঘন ঘন ভুয়া কোম্পানিতে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে এবং অতিরিক্ত নিয়োগ ফি দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। যে কারণে তাদের ঋণের বোঝা বেড়ে যাচ্ছে।’
তারা বলেন, ‘আমরা রিপোর্ট পেয়েছি যে উভয় সরকারের কিছু উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বা এটি প্রশ্রয় দিচ্ছেন। এটা অগ্রহণযোগ্য এবং এর অবসান হওয়া দরকার।’
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘এই শোষণমূলক নিয়োগের অপরাধীদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। এখন পর্যন্ত এই বেসরকারি ব্যবসা এবং প্রতারণামূলক নিয়োগ সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া উভয় দেশের ভূমিকাই অপর্যাপ্ত।’
তারা আরও বলেন, ‘এরই মধ্যে অনেক অসহায় প্রবাসীদের অপরাধীতে পরিণত করা হয়েছে এবং শোষণের শিকার হওয়ার কথা জানাতে গিয়ে কেউ কেউ তীব্র প্রতিহিংসার মুখোমুখি হয়েছেন।’
বিবৃতিতে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশকে এসব ঘটনার তদন্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার আহ্বান জানান বিশেষজ্ঞরা।
ব্যবসা ও মানবাধিকার সম্পর্কিত জাতিসংঘের নীতিমালা মেনে চলতে মালয়েশিয়াকে আহ্বান জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘মালয়েশিয়াকে অবশ্যই পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে শ্রম অভিবাসনকে আরও কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে হবে।’
মালয়েশিয়ার ব্যবসাক্ষেত্রগুলোতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের হাত থেকে প্রবাসী শ্রমিকদের রক্ষা করতে এবং এই ব্যবসাগুলোতে মানবাধিকারের প্রতি সম্মান নিশ্চিত করতে পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে তাদের পরামর্শ হচ্ছে, নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ, সুরক্ষা ও সহায়তা, মানবপাচারের বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইনি সুরক্ষা প্রয়োগ এবং দেশের আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের বাধ্যবাধকতা সমুন্নত রাখতে মালয়েশিয়াকে অবশ্যই প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা এর আগে এসব বিষয় নিয়ে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।
আরও পড়ুন:পর্তুগালের প্রবাসীরা বেশির ভাগই দেশটির প্রথম রেসিডেন্ট কার্ড পাওয়ার ৫ বছর পূর্ণ হওয়ার পরই পাসপোর্ট আবেদন করতেন, এরপর নিজের পাসপোর্ট পাওয়ার পর স্ত্রী বা স্বামী ও ছেলে-মেয়েদের জন্য আবেদন করতেন।
তবে গত সপ্তাহে জাতীয়তা আইনের দশম সংশোধনী গেজেট আকারে প্রকাশিত হওয়ায়তে প্রবাসীদের জন্য সুখবর এলো। এখন সেফ বা এআইএমএ এন্ট্রি বা পর্তুগালের বসবাসের আবেদন থেকেই শুরু হবে নাগরিকত্ব (পাসপোর্ট) আবেদনের ৫ বছর।
সেফ বা এআইএমএ এন্ট্রি আবেদন অ্যাপ্রুভ হয়েছে এবং রেসিডেন্ট পেয়েছেন এরকম হতে হবে। এই সংশোধিত আইনের মাধ্যমে প্রবাসীদের পাসপোর্ট পাওয়ার অনেক বড় একটা সময় হিসাবের মধ্যে চলে এলো। প্রবাসীদের জন্য এটা বড় সংবাদ। আসন্ন এপ্রিল থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বলে জানিযেছেন আইনজীবীরা।
এই আবেদন অ্যাপ্রুভ হওয়ার পরই নাগরিক কার্ড/ সিটিজেন কার্ড ও পাসপোর্ট নেয়া যায়। জাতীয়তা বা ন্যাশনালিটি আবেদনে যেসব ডকুমেন্ট লাগবে।
দেশের ডকুমেন্টস
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট, তিন মাস মেয়াদের প্রাপ্ত বয়স্কদের। জন্ম সনদ, ইংলিশ। দেশে নোটারি, ফরেন মিনিস্ট্রি, ল অ্যান্ড জাস্টিস মিনিস্ট্রি সত্যায়ন। এরপর এই দুটি ডকুমেন্ট নিকটস্থ পর্তুগাল কনসুলার ইন্ডিয়াতে পাঠাতে হয় এটাস্টেশনের জন্য। কারণ বাংলাদেশে পর্তুগালের কোনো অ্যাম্বাসি নেই।
ভারতে প্রথমে বাংলাদেশ অ্যাম্বাসির সত্যায়ন এরপর পর্তুগাল অ্যাম্বাসির সত্যায়ন করে পর্তুগালে আনতে হয়। পর্তুগাল শুধু নোটারীরি ও ট্রান্সলেশন করার পর এই দুটি ডকুমেন্ট আবেদনের জন্য রেডি হয়।
পর্তুগালের ডকুমেন্ট
সরাসরি নিজে অফিসে গিয়ে আবেদনের জন্য পাসপোর্ট, রেসিডেন্ট কার্ড, প্রথম রেসিডেন্ট কার্ড, বেসিক পর্তুগিজ সার্টিফিকেট (A1ও A2), পূরণ করা ন্যাশনালিটি আবেদন ফরম ও ২৫০ ইউরো।
ঠিকানা: দেশের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত Conservatorio do Registo Civil - Almada/Amadora/Aveiro/Barreiro/Braga/Combra/Evora/Faro/Guimares/Lisboa/Mangualde/Ovar /Pombal /Portalegre/Porto/Santarem/Silves/Tondela/Torres Vedras/Vila nova de Gaia অফিস গুলোতে সকালে গিয়ে আবেদন নিজে নিজে করে নিতে পারেন। প্রয়োজনে অ্যাড্রেস ইন্টারনেট থেকে দেখে সাহায্য নিতে পারবেন।
লিসবনের মধ্যে একটি অফিসের ঠিকানা- Conservatorio do Registo Civil, RUA RODRIGO DA FONSECA ,198 1099-003 , LISBOA
পোস্ট অফিসের মাধ্যমে আবেদন করলে- পাসপোর্ট কপি নোটারি, রেসিডেন্ট কার্ড কপি নোটারি, প্রথম রেসিডেন্ট কার্ড নোটারি, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট তিন মাস মেয়াদের প্রাপ্ত বয়স্কদের, জন্ম সনদ, বেসিক পর্তুগিজ সার্টিফিকেট (A1ও A2), পূরণ করা ন্যাশনালিটি আবেদন ফরম, ২৫০ ইউরোর VALE DE POSTAL ।
নিচের অফিসগুলোর মধ্যে যেখানে আবেদন করবেন ইন্টারনেট থেকে ঠিকানা সংগ্রহ করে সেটি বরাবর Conservatorio do Registo Civil - Almada/Amadora/Aveiro/Barreiro/Braga/Combra/Evora/Faro/Guimares/Lisboa/Mangualde/Ovar /Pombal /Portalegre/Porto/Santarem/Silves/Tondela/Torres Vedras/Vila nova de Gaia
CTT EXPRESSO সার্ভিস।
আইনজীবীর মাধ্যমে অনলাইন আবেদন করলে ওপরের সব ডকুমেন্ট লাগবে। কনফিডেন্স কম থাকলে কোনো উকিলের মাধ্যমেই ন্যাশনালিটির আবেদনটি সাবমিট করাই ভালো। আবেদন সাবমিট করার সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে একটি লেটার আসবে।
এখন https://nacionalidade.justica.gov.pt/ গিয়ে, লেটারে A senha para consulta do processo e xxxx-xxxx-xxxx ১২ ডিজিটের সংখ্যাটি দিয়ে টিক চিহ্ন দিয়ে pesquisar দিলেই দেখা যায় ৭টি ধাপের অগ্রগতি। সবগুলো ধাপ সবুজ হলেই এই আবেদন এর কার্যক্রম সমাপ্ত হবে।
এই ধাপ গুলোতেই থাকা অবস্থায় বিভিন্ন অপরিপূর্ণ ডকুমেন্ট আবার চাইতে পারে। এরপরই সিটিজেন কার্ড ও পর্তুগালের পাসপোর্ট জন্য আবেদন করা যাবে।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামের অভিজাত হোটেল পেনিনসুলা থেকে পোল্যান্ডের এক নাগরিকের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তার নাম জজলো মাইকেল সিজারবেয়া। তিনি হত্যাকাণ্ডে শিকার হয়েছেন বলে ধারণা করছে পুলিশ।
সোমবার সকালে নগরীর জিইসি মোড়ের পেনিনসুলা হোটেলের ৯১৫ নম্বর কক্ষের বিছানা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ বিষয়ে সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি-দক্ষিণ) নোবেল চাকমা বলেন, ‘বেলা সাড়ে ১২টার দিকে হোটেল থেকে থানায় খবর দেয়া হয় যে, ৯০৫ নম্বর কক্ষে একজন ব্যক্তির সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
‘খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে গিয়ে দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করা হয়। ঘরের ভেতরে তাকে বিছানার একপাশে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।’
পুলিশ জানায়, মৃত জজলো মাইকেল সিজারবেয়া ঢাকার বিগেস্টার বায়িং হাউজের কোয়ালিটি কন্ট্রোলারের দায়িত্ব পালন করতেন। তবে তিনি চট্টগ্রামের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (সিইপিজেড) ক্যানপার্কের কোয়ালিটি চেক করতে এসেছিলেন।
কীভাবে তার মৃত্যু হলো, তা তদন্ত করছে পুলিশ।
সিএমপি উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান (পিপিএম) জানান, নিহত ব্যক্তির মাথার পেছনে ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। খাটে ও ফ্লোরে রক্তের দাগও পাওয়া গেছে। এ ছাড়া তার রুমটি ছিল এলোমেলো।
তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি হত্যাকাণ্ড। আমরা তদন্ত করছি।’
বিউটি পার্লারে বিয়ের কনের সাজ সাজতে গিয়ে আইফোন খুইয়েছেন প্রেমের টানে বাংলাদেশে আসা ইন্দোনেশীয় তরুণী। মাদারীপুরের শিবচরের যুবক শামীম মাদবরকে বিয়ে করতে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে আসেন ভিনদেশী তরুণী ইফহা।
শুক্রবার সকালে বিয়ের জন্য সাজতে শিবচর পৌর এলাকার ‘পাকিস্তানি বিউটি পার্লার’ নামের একটি বিউটি পার্লারে গিয়ে সাজগোজের সময় তার আইফোনটি চুরি হয়ে যায়।
জানা গেছে, শুক্রবার সকালে ওই পার্লারে থাকা অবস্থাতেই নিজের আইফোন ১৫+ মডেলের ফোনটি একটি টেবিলের উপর রাখেন। পরে ফোনটি আর খুঁজে পাননি তিনি।
এ ঘটনায় শিবচর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগীরা।
তরুণীর স্বামী শামীম মাদবর বলেন, ‘সকালে শিবচরের স্বর্ণকার পট্টির পাকিস্তানি বিউটি পার্লারে সাজার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় ইফহাকে। পার্লারের ভেতরে সাজের সময় ফোনটি চুরি হয়। পরে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, বোরকা পরিহিত এক নারী পার্লারের দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে ফোনটি নিয়ে দ্রুত বের হয়ে যান।’
তিনি বলেন, ‘এটি খুবই দুঃখজনক। পার্লারে কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। পরে আমরা শিবচর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছি।’
পাকিস্তানি বিউটি পার্লারের স্বত্তাধিকারী রেশমা আক্তার বলেন, ‘আমার পার্লারে সারাক্ষণই কাস্টমার থাকে। ওই বিদেশী মেয়ে আর তার সঙ্গে আরও একজনসহ দুইজন সাজের জন্য আসেন। ফোনটি সারাক্ষণই তার হাতে ছিল। সাজ শেষে তিনি ফোনটি নিয়ে দরজার কাছের টেবিলের ওপর রেখে নাকফুল পরতে গেলে ওই সময়ই বোরকা পরা এক মহিলা এসে ফোনটি নিয়ে বেরিয়ে যান। তখন আমি আরেকটি কাজ করছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময় কাস্টমারের মালামাল নিজেদের সঙ্গে রাখতে বলি। নিজ দায়িত্বে রাখার জন্য বলা হয়।’
শিবচর থানার ওসি সুব্রত গোলদার বলেন, ‘ভুক্তভোগী এ বিষয়ে অভিযোগ দিয়েছেন। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। আমরা তদন্ত করছি।’
আরও পড়ুন:‘আমি এখন বাংলাদেশে। আমার বন্ধুর মেয়ের বিয়েতে এসেছি। এখানকার কৃষিজমিতে ফসল সুন্দর। মানুষজন আমাকে আপন করে নিয়েছে।
‘আমি খুব আনন্দে আছি। বিয়েতে দারুণ সব খাবারের আয়োজন করেছে। আমি মুগ্ধ। বন্ধুরা, ভিডিওতে তোমরা দেখো।’
আরবি ভাষায় এভাবে নিজের সুখানুভূতি প্রকাশ করছিলেন কুয়েতি নাগরিক আবদুল্লাহ মোহাম্মদ আল বন্দর।
কয়েক দিন আগে বন্ধুর মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের শ্রীপুর ইউনিয়নের ছেঁউড়িয়া গ্রামে আসেন এ কুয়েতি। বন্ধুর মেয়ের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে সবকিছুতেই মুগ্ধ হয়েছেন তিনি। গ্রামের প্রাণ-প্রকৃতিও তাকে বেশ টেনেছে।
নিজের গ্রামে কুয়েতি বন্ধুকে পেয়ে আনন্দিত তার বন্ধু ইকবাল হোসেনসহ স্থানীয়রা। শনিবার সকালে দেখা যায়, স্থানীয়দের নিয়ে আবদুল্লাহ মোহাম্মদ আল বন্দর ঘুরে ঘুরে ছবি তুলছেন। মোবাইল ফোনে লাইভে যাচ্ছেন। শিশুদের মতো উল্লাস প্রকাশ করছেন।
বন্ধুত্ব যেভাবে
কুয়েতির সঙ্গে কীভাবে বন্ধুত্ব হলো সে বিষয়ে ইকবাল বলেন, ‘২০১৫ সালে আমি কুয়েতে যাই। সেখানে কাজের সুবাদে তার সঙ্গে পরিচয় হয়। তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। এখন অবসরে আছেন।
‘কাজের সুবাদে আমাদের সম্পর্ক গাঢ় হয়। আমরা একে অপরের বন্ধু হই। বয়সের একটু ব্যবধান থাকলেও মনের কোনো ব্যবধান নেই আমাদের।’
তিনি বলেন, “গত বছরের শেষের দিকে আমি আমার বন্ধু আবদুল্লাকে বলি আমার মেয়ের বিয়ের বিষয়ে। সে আমাকে বলে, ‘তোমার মেয়ের বিয়ে দেখতে তোমার দেশে যাব।’ যেই কথা সেই কাজ।
“গত ১৪ ফেব্রুয়ারিতে সে কুয়েত থেকে আমার বাড়িতে আসে। আমি খুব অবাক হয়েছি। সে এখানে খুব আনন্দ করছে। আমার মেয়ের বিয়েতে এসে ছবি ভিডিও তুলে রাখছে। কুয়েতে গিয়ে সবাইকে দেখাবে।”
ইকবালের ভাই এসএন ইউসুফ বলেন, ‘আমার ভাতিজির বিয়েতে একজন কুয়েতি নাগরিক এসেছেন। তিনি আমার ভাইয়ের বন্ধু। অন্য একটি দেশ থেকে এসে তিনি যে আনন্দ পাচ্ছেন, আমার কাছে খুবই ভালো লাগছে।
‘কুয়েতি নাগরিক আবদুল্লাহ মোহাম্মদ আল বন্দর আমাদের গ্রামে এ বিয়েতে অংশগ্রহণ করাতে বিয়ের উৎসব আরও দ্বিগুণ হয়েছে।’
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, ‘শুনেছি একজন কুয়েতি নাগরিক চৌদ্দগ্রামের শ্রীপুর ইউনিয়নে তার বন্ধুর মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে এসেছেন। তিনি বেশ কিছুদিন বাংলাদেশে অবস্থান করবেন।
‘কুয়েতি নাগরিকের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি। তার আগমনকে আমরা স্বাগত জানাই।’
আরও পড়ুন:বাংলাদেশকে যাতে রাজাকারদের দেশে পরিণত করা না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
স্থানীয় সময় শুক্রবার রাতে জার্মানির মিউনিখের হোটেল বার্গারহাউস গার্চিংয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজিত সংবর্ধনায় তিনি এ আহ্বান জানান বলে বার্তা সংস্থা বাসসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। অবশ্যই এই অগ্রগতি অব্যাহত থাকবে। দেশকে কেউ যেন পেছনের দিকে ঠেলে দিতে ও রাজাকারের দেশে পরিণত করতে না পারে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকুন।’
বক্তব্যে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, দেশের প্রতিটি ধর্মের মানুষ সমান অধিকার ভোগ করবে।
তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় আমরা জাতির পিতার বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট সোনার বাংলাদেশে রূপান্তরিত করব।’
সরকারপ্রধান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ফল সবার দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিজয় বৃথা যেতে দেবেন না।
তিনি বলেন, ‘আমি কখনই ভাবি না আমার কী দরকার, বরং আমি ভাবি যে আমি দেশ এবং এর জনগণের উন্নতির জন্য কী করতে পারি।’
ওই সময় শেখ হাসিনা বলেন, তার সন্তানরাও জনগণের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করেছেন।
আওয়ামী লীগকে গণমুখী দল হিসেবে আখ্যায়িত করে দলটির সভাপতি বলেন, জাতির পিতার নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশের মানুষ মাতৃভাষা বাংলা ও দেশের স্বাধীনতা সহ সব কিছু পেয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আমার সবচেয়ে বড় শক্তি। আমাদের দল ক্ষমতায় থাকায় আমরা কোভিড-১৯ মহামারির মতো বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবিলা করতে পেরেছি।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য