১ নভেম্বর প্রয়াত হলেন কবি, সম্পাদক, প্রাবন্ধিক আবুল হাসনাত (১৯৪৫-২০২০)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে স্নাতকোত্তর অধ্যয়নের সময় দৈনিক পত্রিকায় প্রবন্ধ লেখার সূত্রে তার সঙ্গে আমার পরিচয়। সেটা হবে ১৯৯৫ সালের ঘটনা। পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
তখন আমাদের বিচরণের প্রধান একটি জায়গার মধ্যে বাংলা একাডেমি ছিল অন্যতম। সেখানে পরিচালক ছিলেন সেলিনা হোসেন। তার রেফারেন্সে আমি দৈনিক সংবাদ অফিসে আবুল হাসনাতের সঙ্গে দেখা করে নিজের লেখা প্রবন্ধ দিয়ে আসি। প্রবন্ধটি অসম্ভব বড় হওয়ায় তিনি তা ছাপতে পারেননি। সংবাদপত্রে ছাপানোর জন্য বেশি বড় লেখা যে নবীন লেখকের জন্য ক্ষতিকর তা তখনই বুঝতে পেরেছিলাম।
এরপর সাহিত্য সম্পাদক আবুল হাসনাতের সঙ্গে অনেক জায়গায় সাক্ষাৎ হয়েছে। বিশেষত বাংলা একাডেমির বার্ষিক সাধারণ সভায় তার উপস্থিতি সবসময়ই চোখে পড়েছে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরেও তার সঙ্গে একাডেমি চত্বরে সাক্ষাৎ হয়েছে। আনিসুজ্জামান স্যার তখন বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছেন। সবার সঙ্গে দাঁড়িয়ে কুশল বিনিময় করা স্যারের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। তখন কিন্তু আবুল হাসনাত তার সমকালের ঘনিষ্ঠজন দ্বারা পরিবেষ্টিত দেখেছি।
স্মরণীয় ২০০৩ সালে কালি ও কলম পত্রিকার সূচনা হয়েছিল সম্পাদক আবুল হাসনাত এবং সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি ড. আনিসুজ্জামানের মাধ্যমে। আবুল হাসনাত মিতবাক ছিলেন। বেশি কথা বলা, বেশি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা কিংবা দুঃখের দিনে মুষড়ে পড়ে হা-হুতাশ করা কোনোটাই তার বৈশিষ্ট্য ছিল না। তাকে দূর এবং কাছ থেকে দেখেছি। তার বক্তৃতা শুনেছি। বেঙ্গল প্রকাশনা থেকে কোনো গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তার উপস্থিতি আমাদের আনন্দিত করেছে। এককথায় আবুল হাসনাত ছিলেন সজীব কিন্তু সাধারণ মধ্যবিত্তের একশভাগ বাঙালিয়ানা চরিত্রের মানুষ। তার হাত ধরে যারা লেখক হিসেবে এদেশে খ্যাতি অর্জন করেছেন তারা সবাই আজ শোকগ্রস্ত। তিনি ঢাকা শহরের বাসিন্দা ছিলেন, কিন্তু সারা দেশের কবি-সাহিত্যিকদের চোখের মণিতে পরিণত হয়েছিলেন।
আবুল হাসনাত ১৯৪৫ সালের ১৭ জুলাই পুরান ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। সাহিত্যে তার ছদ্মনাম ছিল মাহমুদ আল জামান। জ্যোৎস্না ও দুর্বিপাক, কোনো একদিন ভুবনডাঙায়, ভুবনডাঙার মেঘ ও নধর কালো বেড়াল তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। প্রবন্ধগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে সতীনাথ, মানিক, রবিশঙ্কর ও অন্যান্য ও জয়নুল, কামরুল, সফিউদ্দীন ও অন্যান্য। শিশু ও কিশোরদের জন্য তিনি লিখেছেন ইস্টিমার সিটি দিয়ে যায়, টুকু ও সমুদ্রের গল্প, যুদ্ধদিনের ধূসর দুপুরে, রানুর দুঃখ-ভালোবাসা প্রভৃতি গ্রন্থ।
দীর্ঘ ২৪ বছর দৈনিক সংবাদের সাহিত্য সাময়িকী সম্পাদনা করা আবুল হাসনাত আমৃত্যু কালি ও কলমের সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। পাশাপাশি চিত্রকলা বিষয়ক ত্রৈমাসিক শিল্প ও শিল্পীরও তিনি সম্পাদক ছিলেন। ১৯৮২ সালে টুকু ও সমুদ্রের গল্পর জন্য তিনি অগ্রণী ব্যাংক শিশু সাহিত্য পুরস্কার পান। ২০১৪ সালে তিনি বাংলা একাডেমির সম্মানসূচক ফেলো মনোনীত হন। ছায়ানটের কার্যকরী সংসদের সদস্য আবুল হাসনাত একসময় সহ-সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন। তার স্ত্রী নাসিমুন আরা হক সাংবাদিক। তিনি বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি। তাদের একমাত্র মেয়ের নাম দিঠি হাসনাত। তিনি যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী।
মুর্তজা বশীরের চিত্রভুবনে ও স্মৃতিকথায়, স্বরূপসন্ধানী আনিসুজ্জামান, বিদ্যাবতী ও ভ্রামণিক নবনীতা দেবসেন, শামসুর রাহমানের কবিতায় সময়-চেতনা, কাজী হাসান হাবিব, সাহিত্যপ্রেমিক ও মার্কসবাদী অশোক মিত্র, তার কথা, সংগীত-বিশেষজ্ঞ করুণাময় গোস্বামী প্রভৃতি প্রবন্ধ কালি ও কলমে প্রকাশিত হয়। এসব প্রবন্ধে আবুল হাসনাত সাহিত্য ও শিল্প-সমালোচক হিসেবে নিজস্ব মূল্যায়ন উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু কবিতা, উপন্যাস, চিত্র-সমালোচনাসহ সাহিত্যের নানা বিভাগে পদচ্ছাপ থাকলেও তিনি পরিচিতি লাভ করেছিলেন একজন বিচক্ষণ ও সংবেদনশীল সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে। মনে রাখতে হবে তার হাত দিয়ে কালি ও কলম-এর কলকাতা-সংস্করণও বের হয়েছে।
আশির দশকে আবুল হাসনাত সম্পাদিত গণসাহিত্য পত্রিকাটি ছিল বিষয়বস্তুতে সমৃদ্ধ এবং মুদ্রণে অনন্য একটি পত্রিকা। অন্যদিকে কেবল সাহিত্য সম্পাদক নন তিনি গ্রন্থ সম্পাদনায় ছিলেন অগ্রগণ্য। সন্ধানী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের গল্প এবং কবিতা সংকলনের ভূমিকাংশ তার অনবদ্য গদ্যশৈলির আলোতে উদ্ভাসিত। মুক্তিযুদ্ধের সাহিত্যের সংকলন বের করার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন পথপ্রদর্শক।
মাহমুদ আল জামান নামে তার যখন ফিরছি মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক কবিতার একটি অংশ এরকম- যখন ফিরছি/ সরে যায় সমস্ত ঘরবাড়ি, আনন্দের/ পূর্ণতার ছবি/ যখন ফিরছি/ যখন ফিরছি।
কালি ও কলম প্রথম সংখ্যা থেকেই বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। মুদ্রণে পরিপাটি এবং এপার বাংলা-ওপার বাংলার লেখকদের একজায়গায় করে বিচিত্র লেখা প্রকাশ করায় এদেশের সাহিত্য জগতে পত্রিকাটি মননশীলতায় দীপ্ত হয়ে ওঠে। অন্যদিকে বাৎসরিক গ্রাহক তৈরি করে পত্রিকাটির নির্দিষ্ট সংখ্যক বোদ্ধা পাঠক গোষ্ঠীও তৈরি হয়। আবার বেঙ্গল প্রকাশনীর মধ্য দিয়ে নান্দনিক মুদ্রণ ব্যবস্থাপনা এটিকে সুন্দর করে তোলে। ফলে দেশের প্রকাশনা জগতে অল্পদিনের মধ্যেই বেঙ্গল নাম করে।
গ্রন্থ প্রকাশনায় আবুল হাসনাত ছিলেন সামগ্রিক দায়িত্বের শীর্ষে। পাণ্ডুলিপি নির্বাচন করা থেকে শুরু করে যত্ন সহকারে লেখকের হাতে গ্রন্থ পৌঁছে দিয়ে তিনি নিজে তৃপ্তি পেতেন। এজন্য লেখকরা তার আন্তরিকতায় ছিলেন মুগ্ধ। আবুল হাসনাতের কালি ও কলমের আনিসুজ্জামান এবং বিদ্যাসাগর সংখ্যা সত্যিই সংরক্ষণে রাখার মতো প্রকাশনা।
আবুল হাসনাত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শাণিত গভীর অনুধ্যানী এক ঋষি। তিনি প্রাণিত করে গেছেন প্রগতিশীল সাহিত্যের আঙিনা। তিনি এদেশের সাহিত্য জগতের নোংরা দলাদলি পরিহার করে পরিচ্ছন্ন আস্তিনে রেখেছিলেন তারুণ্যের জয়কেতন। তার প্রয়াণ আমাদের বেদনাবিদ্ধ করবে আজীবন।
লেখক: লেখক, কবি, কলামিস্ট; সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ এবং অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
জুলাই-আগস্ট আন্দোলন ঘিরে হত্যা-গণহত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক সাত মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করে আগামী বছরের ৮ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) বেলা সোয়া ১১টার পর এ আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১। এদিন সকালে কেরাণীগঞ্জ, কাশিমপুর ও নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে কড়া নিরাপত্তায় পৃথক মামলায় সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ মোট ১৬ জনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে পুলিশ। এরপর পর্যায়ক্রমে তাদের এজলাসে তোলা হয়।
অন্য আসামিরা হলেন– সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, গোলাম দস্তগীর গাজী, আমির হোসেন আমু, কামরুল ইসলাম, আব্দুর রাজ্জাক, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক এমপি সোলাইমান সেলিম, সাবেক এমপি শাজাহান খান, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী, সালমান এফ রহমান ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার।
এর আগে গত ২০ জুলাই এ মামলায় তদন্তের জন্য আরও তিন মাস সময় আবেদন করেন তিনি। পরে আবেদন মঞ্জুর করে আজকের দিন নির্ধারণ করেন ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে এ সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে প্রতিবেদন জমা না দেওয়ায় সময় চাইলে আগামী বছরের ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত তদন্ত শেষ করতে নির্দেশ দেন চেম্বার আদালত।
এদিকে, আজ সকাল থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। সতর্ক অবস্থায় ছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। প্রায় সবাইকে তল্লাশি চালিয়ে ট্রাইব্যুনালে ঢুকতে দেওয়া হয়।
এর আগে গত ২০ এপ্রিল ১৯ সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীকে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। ওইদিন এ ঘটনা তদন্তে আরও তিন মাস সময় চান প্রসিকিউশন। পরে ২০ জুলাই দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল। গত ১৮ ফেব্রুয়ারিও ১২ সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টাসহ ১৯ আসামিকে হাজির করা হয়েছিল। শুনানি শেষে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু), হল ও হোস্টেল সংসদ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের হাতে দেওয়া কালি মুছে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকাল সোয়া ১০টার দিকে এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি ঢাকা পোস্টকে এ মন্তব্য করেন। এ ইস্যুতে তারা নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, কথা ছিল শিক্ষার্থীদের হাতে দেওয়া কালি মুছবে না। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে কালি মুছে যাচ্ছে। এই ইস্যুতে আমরা একটু পর অভিযোগ দিচ্ছি।
ইমরান রায়হান নামে এক শিক্ষার্থী জানান, কেউ ঘুণাক্ষরেও বলতে পারবেন আমি ভোট দিয়েছি? অথচ আমি মাত্রই ভোট দিয়ে এলাম। একটু ঘষা দিয়েই কালি তুলে ফেলা যাচ্ছে।
দীর্ঘ ৩৫ বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু), হল ও হোস্টেল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এদিন সকাল থেকে শুরু হয় ভোটগ্রহণ এবং চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে ওএমআর ব্যালট পদ্ধতিতে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি অনুষদ ভবনে স্থাপন করা হয়েছে ১৫টি ভোটকেন্দ্র ও ৬১টি ভোটকক্ষ। চাকসুর ২৬টি পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪১৫ জন প্রার্থী, আর হল ও হোস্টেল সংসদের ২৪টি পদের জন্য লড়বেন ৪৯৩ জন। মোট ভোটার সংখ্যা ২৭ হাজার ৫১৬ জন।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ ২০২৫ এর সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) বিকেলে উপজেলা প্রশাসন ও কুলাউড়া শিশু একাডেমির আয়োজনে পরিষদ হল রুমে সমাপনী দিবসে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়।
উপজেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আবুল বাসার এর সভাপতিত্বে এবং ইসরাত জাহান নওরিনের উপস্থাপনায় দিবসের সমাপনীতে পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধান অতিথি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মহিউদ্দিন। তিনি বলেন আজকের শিশুরাই আগামী দিনে দেশ গঠনের নেতৃত্ব দেবে। তাই তাদেরকে সু- শিক্ষা ও সু-নাগরিক হিসাবে গড়ে তোলা আমাদের দায়িত্ব।
বিশেষ অতিথি ছিলেন রুদ্রবীণা সংগীত বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ডঃ রজত কান্তি ভট্টাচার্য , প্রভাষক সুরজিৎ কুমার । আরও বক্তব্য রাখেন প্রধান শিক্ষক ননী গোপাল দেবনাথ, সংগীত প্রশিক্ষক সুমিত্রা ভট্টাচার্য, নৃত্য প্রশিক্ষক দেলোয়ার হোসেন দুর্জয়, প্রাক প্রাথমিক প্রশিক্ষক সেবিন আক্তার, সংগীত শিল্পী নান্টু দাস ও হোসনে আরা বেগম। পরে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ২৬ জনকে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রায় ৩৫০ জন শিশু ও অভিভাবক অংশগ্রহণ করেন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই ভারতে অবস্থান করছেন তিনি। তবে অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে দেশ ও বিদেশে নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিভিন্ন মিটিং এ যুক্ত হয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে উসকানি দিতে দেখা গেছে হাসিনাকে।
এদিকে ২০২৪ সালের শেষভাগে ‘জয় বাংলা ব্রিগেড’ নামের একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত একটি জুম বৈঠককে কেন্দ্র করে এই রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা গড়ে ওঠে। ২০২৪ সালে ১৯ ডিসেম্বর ওই ভার্চুয়াল সভায় দেশ ও বিদেশ থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়।
সিআইডির ফরেনসিক ও গোয়েন্দা বিশ্লেষণে দেখা যায়, ওই সভায় অংশগ্রহণকারীরা অন্তর্বর্তীকালীন বৈধ সরকার উৎখাতের আহ্বান, গৃহযুদ্ধ উসকে দেয়ার পরিকল্পনা এবং পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আবার ক্ষমতায় আনার ঘোষণা দেন।
এই তথ্য পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হলে, ২০২৫ সালের ৪ মার্চ মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে সিআইডিকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার তদন্ত ও অভিযোগ দায়েরের অনুমতি প্রদান করে। পরবর্তীতে ২৭ মার্চ রমনা থানায় সিআর মামলা নং-২২২/২০২৫ দাখিল হয়, যার ধারাগুলো- বাংলাদেশ দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ১২১, ১২১(ক), ১২৪(ক)।
পাঁচ মাসেই সিআইডির তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র দাখিল করার পর রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় হাসিনাসহ ২৮৬ জনের বিচার শুরু হচ্ছে। আদালত আসামিদের অনুপস্থিতিতেই বিচারকার্য পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষিত তিনটি প্রধান এজেন্ডা- সংস্কার, নির্বাচন ও বিচার বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার তদন্ত কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গতকাল সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাসহ ২৮৬ জন আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির রাষ্ট্রদ্রোহ সম্পর্কিত ধারায় (১২১/১২১ক/১২৪ক) অভিযোগপত্র দাখিল করেছে সংস্থাটি। এ মামলার বিচারকার্য শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নং-১৮, ঢাকায় মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আসামিদের অধিকাংশ অনুপস্থিত থাকায় আদালত জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশের মাধ্যমে তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ প্রদান করেন।
ফরেনসিক পরীক্ষার প্রতিবেদনে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ড. রাব্বি আলমসহ দলটির কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক পর্যায়ের বেশ কিছু প্রভাবশালী নেতার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এ ছাড়া গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে দেশে থাকা সন্দেহভাজনদের অবস্থান শনাক্ত করে বিভিন্ন জেলা কারাগারে থাকা ৯১ জনকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। বাকি ১৯৫ জন আসামি এখনো পলাতক বলে জানা গেছে।
গতকালকের শুনানিতে প্রধান আসামিসহ অধিকাংশ অভিযুক্ত আদালতে অনুপস্থিত থাকায়, রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে ‘প্রকাশ্য সমন ও গণবিজ্ঞপ্তি’ জারি করার আবেদন করা হয়। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন প্রকাশের মাধ্যমে আসামিদের হাজির হতে আহ্বান জানানোর নির্দেশ দেন।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা অনুপস্থিত থাকলে, ফৌজদারি কার্যবিধির ৫১২ ধারার আওতায় অনুপস্থিতিতেই বিচার পরিচালনা করা হবে বলে আদালত উল্লেখ করেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন—রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় শেখ হাসিনাসহ ২৮৬ জনের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হওয়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও বিচারিক ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এটি যেমন অন্তর্বর্তী সরকারের ‘বিচার ও দায়বদ্ধতা’ এজেন্ডার বাস্তব প্রতিফলন, তেমনি রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িতদের জবাবদিহির আওতায় আনার দৃঢ় সঙ্কেতও।
রাজবাড়ীতে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পদ্মা নদীতে মা ইলিশ ধরার অপরাধে ১১ জেলেকে আটক করেছে দৌলতদিয়া নৌপুলিশ। এ সময় ৪০ লাখ বর্গমিটার কারেন্ট জাল এবং ১৫ কেজি ইলিশ জব্দ করা হয়।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দৌলতদিয়া নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (ওসি) ত্রিনাথ সাহা।
তিনি বলেন মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত পৌনে ১০টা পর্যন্ত রাজবাড়ী জেলার দৌলতদিয়া নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড, মৎস্য কর্মকর্তা এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের উপস্থিতিতে গোয়ালন্দঘাট থানার পদ্মা নদীতে যৌথ অভিযান পরিচালনা করে ১১ জন জেলেকে মা ইলিশ ধরার সময় হাতেনাতে আটক করা হয়। একই সময়ে প্রায় ৪০ লাখ বর্গমিটার কারেন্ট জাল ও ১৫ কেজি ইলিশ মাছ জব্দ করা হয়।
তিনি আরও বলেন, আটককৃত ১১ জন জেলের প্রত্যেককে ১৪ দিন করে ভ্রাম্যমাণ আদালতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাজা প্রদান করেন। জব্দকৃত কারেন্ট জাল আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়। মাছ এতিমখানায় বিতরণ করা হয়।
ঢাকার বাতাস আজ ‘অস্বাস্থ্যকর’। ১৬৭ স্কোর নিয়ে দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে রাজধানী ঢাকা। তালিকায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে থাকা শহর দুটি ভারতের।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকাল ১০টায় সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান নির্ধারণ সংস্থা আইকিউএয়ার থেকে এ তথ্য নেওয়া হয়েছে।
আইকিউএয়ারের দেওয়া তথ্যে দেখা গেছে, দূষিত শহরের তালিকায় প্রথম অস্থানে রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর, স্কোর ২৬০, দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারতের দিল্লি, বায়ুর মানের স্কোর ২২৪, তৃতীয় স্থানে রয়েছে কলকাতা, স্কোর ১৬৮। ১৬৩ স্কোর নিয়ে পঞ্চম স্থানে রয়েছে কাতারের রাজধানী দোহা। দূষিত বাতাসে শীর্ষ দশে থাকা অপর শহরগুলোর বাতাসের মানের স্কোর ১৫৭ থেকে ১৩৯ এর মধ্যে।
আইকিউএয়ারের মানদণ্ড অনুযায়ী, স্কোর শূন্য থেকে ৫০ এর মধ্যে থাকলে বায়ুর মান ‘ভালো’ বলে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ হলে মাঝারি বা ‘সহনীয়’ ধরা হয় বায়ুর মান। ১০১ থেকে ১৫০ স্কোরকে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠী’র (অসুস্থ বা শিশু-বৃদ্ধ) জন্য অস্বাস্থ্যকর ধরা হয়। আর স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত থাকলে সে বাতাস ‘অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচিত হয়।
স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ বলে বিবেচনা করা হয় এবং ৩০১ এর বেশি হলে তা ‘দুর্যোগপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হয়।
রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় আগুনে পুড়ে যাওয়া কেমিক্যাল গোডাউন থেকে এখনো ধোঁয়া বের হচ্ছে। এ অবস্থায় গোডাউনের পাশের রাইজিং ফ্যাশন নামের একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির শ্রমিকদের অনেকে এই কেমিক্যালের প্রভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকালে শিয়ালবাড়ী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পুড়ে যাওয়া ওই কেমিক্যাল গোডাউন থেকে এখনো ধোঁয়া বের হচ্ছে। তবে ফায়ার সার্ভিস বলছে, আগুন নিভে গেছে।
এদিকে, কেমিক্যাল গোডাউনের পাশে অবস্থিত রাইজিং ফ্যাশন নামের একটি গার্মেন্টসের কর্মীরা সকালে কর্মক্ষেত্রে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কথা বলে জানা যায়, দুর্ঘটনার সময় কেমিক্যাল গ্যাসে পুরো গার্মেন্টস ভরে যায়। সকালে গার্মেন্টসে প্রবেশের পর একে একে কর্মীরা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের অনেককে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।
রাইজিং ফ্যাশনের কর্মী মো. আল আমিন বলেন, কেমিক্যাল গোডাউনের বিষাক্ত গ্যাসে গার্মেন্টস ভরে ছিল। আমরা সকালে যখন কাজ করতে আসলাম, তখন কেমিক্যাল রিয়েকশনে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
এসময় রাইজিং ফ্যাশন নামের ওই গার্মেন্টসের সামনে কর্মীদের অবস্থান করতে দেখা যায়। তাদের কাউকে কাউকে বাড়ি ফিরে যেতে দেখা যায়।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তথ্য অনুযায়ী, আগুন লাগার ঘটনায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, মৃত ব্যক্তিরা বিষাক্ত ধোঁয়া ও গ্যাসে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন আহত ও দগ্ধ হয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজনকে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটগুলো দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে ১২টির বেশি ইউনিট। ভবনটিতে রাসায়নিক থাকায় এবং প্রচণ্ড ধোঁয়ার কারণে ভেতরে প্রবেশ করে উদ্ধার কাজ চালাতে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের বেশ বেগ পেতে হয়।
মন্তব্য