আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) অক্টোবরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাথাপিছু জিডিপির দিক থেকে ভারতকে টপকে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক আউটুলক: আ লং অ্যান্ড ডিফিকাল্ট অ্যাসেন্ট’ শিরোনামের এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি এক হাজার ৮৮৮ ডলার। অথচ মাত্র পাঁচ বছর আগেও ভারতের মাথাপিছু জিডিপি ছিল বাংলাদেশের চেয়ে ৪০ শতাংশ বেশি। বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু বলেছেন, যে কোনো উদীয়মান অর্থনীতি ভালো করছে, এমন সংবাদ সুখকর।
শেখ হাসিনা সরকার ও দেশের জনগণের দূরদর্শী পরিকল্পনা, তা বাস্তয়নে পদক্ষেপ ও কঠোর পরিশ্রম বাংলাদেশের জন্য এ ধরনের সাফল্য এনে দিয়েছে, অসম্ভবকে করেছে সম্ভব।
যদিও এ লেখার শুরু হয়েছে ভারত-বাংলাদেশের তুলনা দিয়ে, তবে বাংলাদেশ ভারতকে প্রতিদ্বন্দ্বী নয় বরং বন্ধুপ্রতিম দেশ বলেই গণ্য করে। প্রতিবেশী এই দেশসহ অন্যান্য ক্ষমতাধর দেশগুলোর সঙ্গে গঠনমূলক সুসম্পর্ক বজায় রাখার ব্যাপারে বাংলাদেশ আস্থাশীল। দেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এই দেশগুলোকে অংশীদার হিসেবে মনে করে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির এই চিত্তাকর্ষক সাফল্য ভারত ও এর বাইরের সংবাদ মাধ্যমে আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারী শিল্পোন্নতসহ অনেক দেশের অর্থনীতিতে যেখানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, সেখানে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ঘটনা বাংলাদেশের জন্য সত্যি একটি উদ্যাপনের ব্যাপার। এমন প্রেক্ষাপটে অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে বাংলাদেশের এই উত্থানের কারণ বিশ্লেষণ করে দেখা জরুরি হয়ে পড়েছে। সাধারণত, বাংলাদেশের ইতিবাচক উন্নয়নের অনেক খবর উপেক্ষা করে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম কেবল নেতিবাচক সংবাদেই জোর দিয়ে থাকে।
অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে বাংলাদেশের এই উত্থানকে বুঝতে হলে পেছন ফিরে তাকাতে হবে। দশকের পর দশক পশ্চিম পাকিস্তানের নিপীড়ন, নির্যাতন, বৈষম্যমূলক আচরণ ও অন্যায় অবিচারের শিকার হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তান, যার ফল ছিল পূর্ব পাকিস্তানে তীব্র দারিদ্র্য ও নিরক্ষরতা । ১৯৬০ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানে মাথাপিছু বার্ষিক গড় আয় ছিল মাত্র ৪৫০ টাকা (বর্তমানের হিসাবে ৫.৩০ ডলার)। জনগোষ্ঠী একটা বিশাল অংশ অপুষ্টিতে ভুগছিল। শিক্ষিতের হার ছিল মাত্র ১৭। ১৯৪৯-৫০ এবং ১৯৬৯-৭০ অর্থবছর পর্যন্ত মাথাপিছু গড় আয় ০.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারত। কিন্তু, পঞ্চাশের দশকে বাংলাদেশের মাথাপিছু বার্ষিক গড় আয় কমে ০.৩ শতাংশ নেমে যায়।
বাংলাদেশে মাথাপিছু দুধ, স্নেহ, তেল, মাছ ও অন্যান্য প্রোটিন গ্রহণের হার ছিল অনেক কম। ১৯৭২ সালের মার্চে, পিসি ভেরমা ইকোনমিক অ্যান্ড পলিটিকাল উইকলি জার্নালে লিখেছিলেন, ‘গত ২৪ বছরে, বাংলাদেশ যখন পাকিস্তানের অংশ ছিল, তখন এর অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছিল। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সররকারের নীতির কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি ছিল পশ্চাদমুখী (পৃষ্ঠা ৫৮০)।’ তখন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সূচক ছিল ভয়ানক কম। তা ছাড়া পাকিস্তানের কেন্দ্রীর সরকারের বৈশ্বিক বাণিজ্য, সহায়তা এবং আঞ্চলিক বাণিজ্যনীতির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর।
পশ্চিম পাকিস্তানিদের এই নিপীড়ন, নির্যাতন, অর্থনৈতিক শোষণ ও বৈষম্যের শিকার পূর্ব পাকিস্তানিদের স্বাধীনতা যুদ্ধের মুখে ঠেলে দেয়, যার নেতৃত্বে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। নয় মাস মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। একাত্তরের যুদ্ধ সংকটকে আরো ঘণীভূত করে। জাতিসংঘের হিসাবে, ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো সংস্কারে দরকার ছিল অন্তত ৯৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার।
এই পরিস্থিতিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ পুনর্গঠনে হাত দেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিকে সোনার বাংলায় পরিণত করার কাজ শুরু করেন।
বাস্তবে কাজটি ছিল সত্যিই দুঃসাধ্য। এমনকি তখন অনেকেই বাংলাদেশকে স্থিতিশীল দেশ হিসেবে গড়ে তোলার সম্ভাব্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার ১৯৭৪ সালে ঢাকা সফরে আসেন। তখন তিনি বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। আর রাষ্ট্রদূত ইউ অ্যালিক্স জনসন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে বলেছিলন ‘আন্তর্জাতিক ঝুলি’। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর দূরদৃষ্টি ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের মাধ্যমে এ ধরনের পূর্বাভাসকে ছাপিয়ে যেতে সক্ষম হন।
বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ৪ অক্টোবর দ্য প্রিন্ট-এ এক নিবন্ধে বলেছিলেন, ‘স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া ছাড়াও, সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ধান উৎপাদনে আমরা এখন চতুর্থ স্থানে, পাট উৎপাদনে দ্বিতীয়, আমে চতুর্থ, শাকসবজি উৎপাদনে পঞ্চম ও অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে মৎস্য উৎপাদনে চতুর্থ স্থানে রয়েছি।’
বাংলাদেশ ২০০৯ সাল থেকে ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন অব্যাহত আছে। বাংলাদেশ ২০১৫ সালে নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশের স্বীকৃতি পায়। এছাড়া ২০২৪ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেতে জাতিসংঘের বেঁধে দেয়া শর্ত ২০১৮ সালে পূরণ করেছে দেশটি। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রফতানিতে শীর্ষ দেশগুলোর একটি।
এগুলো সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশের বিস্ময়কর অর্জন। এই অগ্রগতির পেছনে চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি পরিকল্পনা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব। একইসঙ্গে লাখো কৃষক, কারখানা শ্রমিক, পোশাক শ্রমিক ও দেশের নানা শ্রেণিপেশার মানুষ কঠোর পরিশ্রম করে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রেখেছে।
দারিদ্র্য দূর করায় তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতির স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ ২০১৩ সালে ‘সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্’ পেয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান পিডব্লিউসির পূর্বাভাস অনুযায়ী, বাংলাদেশ ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের ২৩তম বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হবে। এছাড়া, দ্য গোল্ডম্যান স্যাচ পূর্বাভাস দিয়েছে, ব্রিকসের পর যে ১১টি দেশ (এন ১১) আগামীর পৃথিবীর অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করবে বাংলাদেশ তার একটি।
দক্ষিণ এশিয়ায় অর্থনৈতিক হাব হয়ে ওঠার সম্ভাবনা বাংলাদেশের রয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বড় বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রস্তুত করা হচ্ছে। এর ফলে লাখো মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অর্থনীতির উন্নতি হবে। এতে বদলে যাবে দেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক অবস্থা। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে ২০১৮ সালে ওয়ান-স্টপ সার্ভিস আইন প্রণীত হয়েছে, যার ফলে বিনিয়োগকারীরা একই পয়েন্ট থেকে সব ধরনের সেবা পাবে।
তা ছাড়া বিনিয়োগের জন্য দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি উদার ও অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে। বাংলাদেশের জিডিপি ২০০৯ সালে ছিল ১০২ বিলিয়ন ডলার। তা ২০১৯ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৩০২ বিলিয়ন ডলার। সরাসরি বিদেশি নিয়োগও বেড়েছে। ২০০৯ সালে তা ছিল ৭০০ মিলিয়ন ডলার; ২০১৮ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৩৬১৩ মিলিয়ন ডলার।
শেখ হাসিনার সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর দেশের উন্নয়নের জন্য নানান লক্ষ্য ঠিক করেছে। এর মধ্যে আছে ২০২১ সালে মধ্য-আয়ের দেশের স্বীকৃতি লাভ, ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হওয়া, ২০৭১ সালের মধ্যে যাদুকরী দেশে রূপান্তর এবং ২১০০ সালের মধ্যে বদ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, এটি সম্ভব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ধারণ করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।
অনেকেই মনে করেন, শেখ হাসিনার শাসনামলের বর্তমান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং প্রধান উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হবে। বাংলাদেশের জন্য একটি বড় শক্তি হল, ১৭ কোটি জনগণ যাদের ৬০ ভাগের বেশি তরুণ। কর্মশক্তিতে পরিপূর্ণ এই তরুণেরা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে বিপুল ভূমিকা রাখতে সক্ষম।
বিশ্বের জানা দরকার বাংলাদেশ আর ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বা ‘আন্তর্জাতিক ঝুলি’ নয়। এবং বাংলাদেশ ও এর জনগণ দেশের এই উন্নতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতার বিষয়টিকে আন্তরিকভাবে প্রশংসা করে।
মো. শরীফুল ইসলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। বর্তমানে ভারতের নয়াদিল্লির সাউথ এশিয়া ইউনিভার্সিটিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপর পিএইচডি করছেন। মডার্নডিপ্লমেসি-তে তার লেখা নিবন্ধটির ভাষান্তর করেছেন মিজান মল্লিক।
মহাত্মা গান্ধীর ১৫৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার সকাল থেকে বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে দুই দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে। বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক আছে।
আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ থাকায় দুই দেশের বন্দর এলাকায় আটকা পড়েছে শতশত পণ্যবোঝাই ট্রাক। যার অধিকাংশই বাংলাদেশের শতভাগ রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস শিল্পের কাঁচামাল।
ভারতের পেট্রাপোল কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট (সি অ্যান্ড এফ) স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্ত্তিক চক্রবর্তী জানান, মহাত্মা গান্ধীর ১৫৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সরকারি ছুটি থাকায় বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে পুনরায় স্বাভাবিক গতিতে চলবে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য।
বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন পুলিশের ওসি কামরুজ্জামান বিশ্বাস জানান, বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ থাকলেও পাসপোর্টধারী যাত্রীরা স্বাভাবিক নিয়মে যাতায়াত করছেন।
বেনাপোল স্থলবন্দরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আব্দুল জলিল জানান, মহাত্মা গান্ধীর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ভারতে সরকারি ছুটি থাকায় বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সোমবার সকাল থেকে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে আবার স্বাভাবিকভাবেই আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য শুরু হবে।
দেশে সেপ্টেম্বর মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ দশমিক ৭ শতাংশ (১৯৬ মিলিয়ন ডলার) কমে ১ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। যা প্রায় গত সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের (বিবি) হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী, সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স প্রবাহ আগের মাস আগস্টের তুলনায় ২২৫ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার কমেছে। খবর ইউএনবির
প্রবাসীরা আগস্ট মাসে প্রায় ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে, যা ছয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। ফেব্রুয়ারি মাসে এর পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার।
সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও একধাপ কমে ১ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে, যা গত ৪০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
সর্বশেষ ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ ১ দশমিক ০৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছিল। এরপরে, কোভিড-১৯ মহামারির সময়েও অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্সের প্রবাহ বৃদ্ধি পায়।
বাংলাদেশি প্রবাসীরা চলতি বছরের জুন মাসে ২ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে এবং জুলাই মাসে তা ছিল ১ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার।
এই খাতের সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, যখন খোলা বাজারে বিনিময় হার ব্যাংকিং চ্যানেলের চেয়ে বেশি হয়ে যায়, তখন হুন্ডিতে লেনদেন বেড়ে যায়। আর হুন্ডির চাহিদা বাড়লে রেমিট্যান্স কমে যায়।
গত মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলের তুলনায় খোলা বাজারে ডলারের বিনিময় হার ছিল ৬ থেকে ৭ টাকা বেশি। তাই বেশি লাভের আশায় প্রবাসীরা বৈধ মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন বলে জানান তারা।
গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) বাংলাদেশ মোট ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে। এর আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসীরা ২১ দশমিক ০৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন।
২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স পেয়েছে। যার পরিমাণ ছিল ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্যাংকার্স বাংলাদেশ ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে তিনটি ভিন্ন শিরোনামে যুক্তরাষ্ট্রের ডলারের মূল্য নির্ধারণ করছে।
বর্তমানে ব্যাংকগুলো প্রবাসী আয়ের প্রতি ডলারের দাম দিচ্ছে ১১০ টাকা ৫ পয়সা। রপ্তানি বিল ক্যাশিং প্রতি ডলারে ১০৯ টাকা ৫পয়সা দেয়া হয় এবং আমদানি ও আন্তঃব্যাংক লেনদেনের জন্য ১১০ টাকা ৫ পয়সা দেয়া হয়।
অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, এটি অর্থনীতির অব্যবস্থাপনার একটি রেসিপি।
তিনি বলেন, ডলারের দাম তুলনামূলক বেশি হওয়ায় প্রবাসীরা অবৈধ চ্যানেলের (হুন্ডি) মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন। খোলা বাজার এবং ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের দর একই রকম না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি শিগগিরই উন্নতি নাও হতে পারে।
মনসুর বলেন, ‘রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতি আস্থার অভাবে বাংলাদেশি প্রবাসীরা দেশে কম রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে, কারণ দেশ থেকে নির্বিচারে অর্থ পাচার হচ্ছে।’
তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশে রেকর্ডসংখ্যক শ্রমিক রপ্তানি করলেও, রেমিট্যান্সের পরিমাণ ক্রমাগত কমছে; যা পরিসংখ্যানের সঙ্গে মেলে না।
আরও পড়ুন:৪০ কেজিতে মণ হলেও মাছ চাষীদের কাছ থেকে ৪২ কেজিতে মণ হিসাবে মাছ কিনে থাকেন পাইকাররা। তারপরও তাদের পোষাচ্ছে না। প্রশাসনের নির্দেশে ডিজিটাল মিটারে মাছ বিক্রি শুরু করার পরপরই বেঁকে বসেছেন পাইকররা। আড়ত থেকে তারা মাছ কিনবে না, আর কিনতে হলে প্রতি মণে আরও এক কেজি বেশি দাবি তাদের।
বাইরে থেকে আসা পাইকারদেরও মাছ কিনতে নিষেধ করছেন তারা। এমনকি হুমকিও দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। মাছ বিক্রি বন্ধ থাকায় স্থবির হয়ে পড়েছে নওগাঁর পৌর মাছ বাজার।
প্রায় ৫০ বছর ধরে এ মাছ বাজারে প্রতিদিন মাছ বিক্রি হয়ে আসছে। সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ২২টি আড়তে বেচাকেনা হয় মাছ। ফলে নওগাঁসহ আশপাশের জেলার মাছ চাষীদেরও গন্তব্য এ বাজারটি। সাধারণত ৪২ কেজিতে মণ ধরে আড়তে মাছ দিয়ে থাকে মাছ চাষীরা। পরে খুচরা বিক্রেতারা অল্প পরিমাণে মাছ কিনে নিজেদের সুবিধামতো সন্ধ্যা পর্যন্ত তা বিক্রি করে থাকে।
সাধারণত মাছ চাষী ও পুকুর চাষীদের কাছ থেকে প্রচলিত কাঁটার দাঁড়িপাল্লায় ওজন করে মাছ কিনে পরে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে তা ডিজিটাল মিটারে বিক্রি করতেন পাইকাররা। তবে সম্প্রতি আড়তেও ডিজিটাল মিটারে মাছ কেনাবেচার জন্য প্রশাসন থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়।
সরকারি নির্দেশনা পেয়ে রোববার থেকে নওগাঁ পৌর মাছ বাজারে চালু হয়েছে ডিজিটাল মিটারে পরিমাপ করে মাছ কেনাবেচা। এ নিয়ে পাইকার-আড়তদারদের মধ্যে শুরু হয়েছে দ্বন্দ্ব।
ডিজিটাল মিটারে পাইকাররা মাছ কিনতে নারাজ। ফলে একে অপরকে দোষারোপ করা শুরু করে দুপক্ষ। একপর্যায় পাইকাররা সংঘবদ্ধ হয়ে আড়ত থেকে মাছ কেনা বন্ধ করে দেন। ফলে আজ দীর্ঘক্ষণ ধরে বন্ধ রয়েছে পৌর বাজারের মাছ কেনাবেচা। এতে ভুগতে হচ্ছে মাছচাষী ও খুচরা ব্যবসায়ীদের। এদিকে আড়তে মাছের কেনাবেচা বন্ধ থাকায় আড়তদারদেরও উপার্জন বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে সবকিছু মিলিয়ে এক ধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে মাছ বাজারটিতে।
সংশ্লিষ্টরা কী বলছেন
এর আগে ওই বাজারটিতে ডিজিটাল মিটার চালু করতে একাধিকবার স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে বলে জানান পৌর মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গৌতম হাওলাদার ভুট্টু। তখন থেকে একেক করে সবাই ডিজিটাল মিটারের ব্যবহার শুরু করলেও আড়তে প্রচলিত কাঁটার দাঁড়িপাল্লাই ধরে রাখেন পাইকাররা।
এ বিষয়ে গৌতম হাওলাদার বলেন, ‘ডিজিটাল মিটারে মাছ বিক্রি করা নিয়ে কয়েকদিন আগেও পাইকারদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়। অক্টোবরের ১ তারিখের মধ্যে ডিজিটাল মিটারে মাছ বিক্রির জন্য প্রশাসন থেকে কড়া নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। ওই নির্দেশ বাস্তবায়নে আজ থেকে আমরা কাজ শুরু করেছি। কিন্ত পাইকাররা এ প্রক্রিয়া মানতে নারাজ।
‘এখানে ২২টি আড়তে প্রতিদিন প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টাকার মাছ বেচাকেনা হয়। নিজেদের সুবিধার্থে পাইকাররা এখন সিন্ডিকেট তৈরি করছে। বাইরে থেকে যেসব পাইকার মাছ কিনতে আসছেন, তাদেরও মাছ না কিনতে হুমকি-ধামকি দেয়া হচ্ছে বলে জেনেছি। এভাবে চলতে থাকলে মাছ চাষীরা এখানে মাছ বিক্রি করতে আসবেন না। ফলে সবার জন্যই সমস্যা তৈরি হবে।’
নওগাঁ সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এস এম রবিন শীষ বলেন, ‘আড়তদাররা ডিজিটাল মিটার চালু করার জন্য কয়েকদিন আগেই আমাকে অবগত করেছিলেন। সেসময় তাদের বলা হয়েছিল, জনগণ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়- সেদিকে নজর রেখে তাদের কাজ করতে হবে। ডিজিটাল মিটার ব্যবহার করা হলে পরিমাপে স্বচ্ছতা থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তবে শুনছি, ডিজিটাল মিটার ব্যবহার নিয়ে বিভিন্ন পক্ষ নিরুৎসাহিত হচ্ছে। এ নিয়ে নানা বিড়ম্বনা শুরু করেছেন তারা। তাই দুই পক্ষকে (আড়তদার ও পাইকার) নিয়ে বসে বিষয়টি দ্রুত সমাধান করে সবার জন্য মিটার চালুর উদ্যোগ নেয়া হবে।’
আড়তদারদের বক্তব্য
মামুন মৎস্য আড়তের স্বত্ত্বাধিকারী মোস্তফা ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুজ্জামান মামুন জানান, দিনে গড়ে প্রায় এক লাখ টাকার মাছ বেচাকেনা করা হয় একেকটি আড়তে। সে হিসাবে একেকটি আড়তে মাসে প্রায় ৩০ লাখ টাকা মতো মাছ বিক্রি হয়। আশপাশের প্রায় ৫০টি বাজারের ব্যবসায়ীরা এই বাজারে মাছ কিনতে আসেন।
তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে ডিজিটাল মিটারে মাছ বিক্রির জন্য পাইকারদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করি। আলোচনার পর পাইকরারা সিদ্ধান্ত নেয়, আমাদের কাছ থেকে তারা মাছ কিনবেন না। এমনকি বাইরে থেকে যেসব ব্যবসায়ীরা আসেন, পাইকাররা তাদেরও মাছ না কিনতে উল্টো হুমকি দেন।’
নওগাঁ পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার ও আড়তদার সমিতির উপদেষ্টা শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমরা ডিজিটাল মিটারে মাছ বিক্রি শুরু করেছি। কিন্তু গুটিকয়েক পাইকারের কাছে আমরা জিম্মি হয়ে পড়েছি। চাষীরা মাছ বিক্রি করতে আসলে তাদের কাছে চাঁদা দাবি করা হচ্ছে বলে শুনতে পারছি।
‘তারা একটা সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। পাইকাররা যদি ডিজিটাল মিটারে মাছ বিক্রি করতে পারে তাহলে আমরা কেন পারবো না? এসব সমস্যা সমাধান না হলে ব্যবসা বন্ধ রাখতে হবে।’
যা বলছেন পাইকাররা
পাইকারদের দাবি, ডিজিটাল মিটারে মাছ পরিমাপ করা হলে ওজনে ঠিকঠাক পাওয়া যাবে না। তারা বলছেন, ডিজিটাল মিটারে পরিমাপের কিছুক্ষণ পর ওই মাছ আবার পরিমাপ করলে ওজন কমে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে পৌর মাছ বাজারের পাইকার ফেরদৌস প্রামানিক বলেন, ‘আগে কাঁটাতে ৪২ কেজিতে মণ হিসাবে মাছ কেনা হতো। হঠাৎ করে আজ আড়তে ডিজিটালে মিটারে মাছ বিক্রি করা হচ্ছে।
‘আগে কাঁটাতে মাছ পরিমাপের সময় ঝুড়িতে পরিমাপ করা হতো। এতে ঝুড়িতে ওঠানোর পর থেকেই মাছের সঙ্গে থাকা অতিরিক্ত পানি ঝরে যেত, তাই ওজন ঠিক থাকত। এখন ক্যারেটে পানিসহ ওজন করা হলে আমাদের জন্য লোকসান হবে। এতে ওজনে ঠিক পাব নাকি, সেটিও জানি না।’
এই সমস্যা দূর করতে ৪২-এর জায়গায় ৪৩ কেজিতে মাছের মণ পরিমাপের কথা জানালেন আরেক পাইকার আফাজ উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘আমরা আগে কাঁটার ওজনে মাছ কিনে ডিজিটাল মিটারে বিক্রি করতাম। কোনো সমস্যা হতো না। এখন যেহেতু ডিজিটাল মিটারে মাছ কেনা শুরু হয়েছে, ৪২ কেজিতে মণের বদলে আরেক কেজি বাড়িয়ে দিলে আমাদের জন্য মাপ ঠিক রাখতে সুবিধা হবে।’
পৌর মাছ বাজারের পাইকার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম তোতা বলেন, ‘নিয়ম সবার জন্যই সমান, কোনো সমস্য নাই। আমরা ডিজিটাল মিটারে মাছ কিনছি। আর এখানে কোনো ধরনের সিন্ডিকেট নেই। বরং আড়ৎদাররা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন।’
নওগাঁ শহরের পলিটেকনিক কলেজপাড়া এলাকার মাছ চাষী সাগর হোসেন বলেন, ‘ডিজিটাল মিটার চালু হওয়াতে আমাদের জন্য সুবিধা হয়েছে। পরিমাপ ডিজিটাল হলে দামে ঘাটতি যাবে না। মিটারে ওজন দেখা যায়, কিন্তু কাঁটার পল্লা হলে আমরা বুঝতে পারি না অনেক সময়। সামনের দিকে একটু হেলে যাওয়া মানে কয়েক কেজি বেশি চলে যাওয়া। হিসাব ডিজিটাল মিটারে হলে এ সমস্যা আর থাকবে না। আগে কাঁটার ওজনে যেহেতু ৪২ কেজিতে মণ ছিল। ডিজিটাল মিটারে ৪৩ কেজিতে মণ হলেও আমাদের সমস্যা নাই।’
তিনি জানান, আড়তদাররা মাছ বিক্রি করতে আসা চাষীদের কাছ থেকে দামের চার শতাংশ ও মাছবাহী গাড়ির জন্য ৫০ টাকা খাজনা নিয়ে থাকেন।
আরও পড়ুন:সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংক লিমিটেডের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কমিটির সভা গত ২৫ সেপ্টেম্বর ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এসবিএসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এজেডএম শফিউদ্দিন শামীমের উপস্থিতিতে সভায় সভাপতিত্বে করেন শরিয়াহ সুপারভাইজরি কমিটির চেয়ারম্যান মাওলানা মো. আব্দুর রাজ্জাক।
ওই সময় সুপারভাইজরি কমিটির সদস্য মো. ফরীদ উদ্দীন আহমাদ, অধ্যাপক ড. মো. আবদুল কাদির, ড. যুবাইর মুহাম্মদ এহসানুল হক, ড. মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম, ড. মো. মহব্বত হোসেন, ড. মুহাম্মদ রুহুল আমিন রব্বানীসহ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী হাবিবুর রহমান এবং কোম্পানি সেক্রেটারি ও কমিটির সদস্য সচিব মো. মোকাদ্দেস আলী উপস্থিত ছিলেন।
তৃতীয়বারের মতো ওয়ালটনের ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর’ হয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ।
দুই বছরের জন্য তরুণ এ ক্রিকেটারের সঙ্গে চুক্তি করেছে দেশের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকস খাতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন।
এর আগে ২০১৫ সালে মিরাজ বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক থাকার সময় দুই বছরের জন্য ওয়ালটনের ‘ইয়ুথ অ্যাম্বাসেডর’ হয়েছিলেন।
রাজধানীর বসুন্ধরায় ওয়ালটনের করপোরেট অফিসে সম্প্রতি মিরাজ ও ওয়ালটনের মধ্যকার এ সংক্রান্ত চুক্তি সই হয়। চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) নজরুল ইসলাম সরকার।
ওই সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এস এম জাহিদ হাসান, মো. শাহজালাল হোসেন লিমন, মো. মাহমুদুল ইসলাম ও দিদারুল আলম খান (চিফ মার্কেটিং অফিসার), সিনিয়র ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর রবিউল ইসলাম মিলটন এবং পাওয়ার প্লে কমিউনিকেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়ামুর রহমান পলাশ।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ওয়ালটনের ডিএমডি নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘ক্রিকেট ও দেশের অন্যান্য খেলাধুলায় সর্বদা পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছে ওয়ালটন। জাতীয় ক্রিকেট দল যেমন বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং করছে, তেমনি ওয়ালটনও বিশ্ব প্রযুক্তি পণ্য খাতে বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করছে। মিরাজ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অত্যন্ত প্রতিভাবান ও অন্যতম অলরাউন্ডার। তার মতো মেধাবী অলরাউন্ডার ক্রিকেটারকে তৃতীয়বারের মতো ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর করতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত।’
অনুষ্ঠানে মেহেদী হাসান মিরাজ বলেন, ‘ক্রিকেটের পৃষ্ঠপোষকতায় ওয়ালটন বরাবরই এগিয়ে। দেশের সর্বস্তরের খেলাধুলা ও খেলোয়াড়দেরও পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে ওয়ালটন। অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলার সময় যখন আমার তেমন পরিচিতি ছিল না, ওই সময় ওয়ালটন আমাকে ইয়ুথ অ্যাম্বাসেডর করেছে। এরপর টানা তিনবার আমাকে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডরের মর্যাদা দিল ওয়ালটন। এটা আমার জন্য অনেক বড় সম্মানের।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের শীর্ষ গ্লোবাল ইলেকট্রনিকস প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন পরিবারের একজন সদস্য হতে পেরে আমি গর্বিত। দেশ-বিদেশে ওয়ালটনকে প্রতিনিধিত্ব করার পাশাপাশি ওয়ালটনের ব্র্র্যান্ড ইমেজকে আরও বৃদ্ধি করতে আমি সর্বদা সচেষ্ট থাকব।’
আরও পড়ুন:গত সপ্তাহে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে ব্যাপক পতন ঘটেছে। বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কমায় দেশের বাজারেও পড়েছে এর প্রভাব। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে যে হারে স্বর্ণের দরপতন হচ্ছে, দেশের বাজারে তার অর্ধেক মূল্য কমছে না।
আন্তর্জাতিক বাজারে এক সপ্তাহেই প্রতি আউন্স স্বর্ণের মূল্য ৭৬ দশমিক ৮০ ডলার কমে গেছে। প্রতি ডলার ১১০ টাকা ধরলে বিশ্ববাজারে এক ভরি স্বর্ণের দাম কমেছে ৩ হাজার ৪৭৬ টাকা। এর বিপরীতে দেশের বাজারে সবচেয়ে ভালো মানের এক ভরি স্বর্ণের দাম কমেছে ১ হাজার ২৮৪ টাকা।
মূল্যহ্রাসের এমন বৈষম্যের কারণে স্বর্ণের দামে দেশ ও বিশ্ববাজারে বড় ধরনের পার্থক্যের সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ববাজারের চেয়ে দেশের বাজার থেকে এক ভরি স্বর্ণ কিনতে ১৬ হাজার ডলারেরও বেশি গুনতে হচ্ছে।
সর্বশেষ গত ২৭ সেপ্টেম্বর বৈঠকের পর ২৮ সেপ্টেম্বর দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম পুনর্নির্ধারণ করে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সে সময় সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম ১ লাখ ২৮৪ টাকা থেকে কমিয়ে ৯৯ হাজার ৯৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর ২১ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ২২৪ টাকা থেকে কমিয়ে ৯৫ হাজার ৪১২ টাকা নির্ধারণ করে বাজুস।
এ ছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৪৯ টাকা থেকে কমিয়ে ৮১ হাজার ৭৬৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৯৩৩ টাকা থেকে কমিয়ে ৬৮ হাজার ১১৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়। তখন থেকে এ দামেই দেশের বাজারে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে।
তবে স্বর্ণের গহনা কিনতে এর চেয়েও বেশি অর্থ গুনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। কারণ বাজুস নির্ধরিত দামের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট যুক্ত করে দেশের বাজারে স্বর্ণের গহনা বিক্রি হয়। সেই সঙ্গে ভরি প্রতি মজুরি ধরা হয় ন্যূনতম ৩ হাজার ৪৯৯ টাকা। ফলে সবকিছু মিলিয়ে ভালো মানের এক ভরি স্বর্ণের গহনা কিনতে ক্রেতার পকেট থেকে ১ লাখ ৮ হাজার ৪৫৭ টাকা বেরিয়ে যায়।
দেশের বাজারে স্বর্ণের বর্তমান মূল্য নির্ধারণের সময় বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল ১ হাজার ৯০৩ ডলার। বর্তমানে তা কমে ১ হাজার ৮৪৮ ডলারে নেমে গেছে। অর্থাৎ দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমানোর পর বিশ্ববাজারে দাম কমেছে ৫৫ ডলার।
স্বর্ণের আন্তর্জাতিক বাজারের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসেই স্বর্ণের দাম কমেছে। সপ্তাহের শুরুতে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল ১ হাজার ৯২৪ দশমিক ৯৯ ডলার। সপ্তাহের ব্যবধানে ৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ বা ৭৬ দশমিক ৮০ ডলার কমে প্রতি আউন্সের দাম ১ হাজার ৮৪৮ দশমিক ১৯ ডলারে নামে।
আরও পড়ুন:দৃষ্টিসীমাজুড়ে নৈসর্গিক দৃশ্য। নদ-নদী, পাহাড়, বন-জঙ্গলের মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের কারণে সারা বিশ্বের পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে চীন।
বলা হয়ে থাকে চীনের বিভিন্ন প্রদেশে এক পাহাড়েই একসময়ে চার ঋতুর সমাহার ঘটে ও প্রতি পাঁচ কিলোমিটার পরপর আবহাওয়ার পরিবর্তন দেখা যায়। দেশটির অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এ পর্যটন শিল্প।
পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের একটি চীনের গ্রেট ওয়াল বা মহাপ্রাচীর। চীনের সবচেয়ে উঁচু টাওয়ার ও বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ টাওয়ার হলো সাংহাই টাওয়ার। এর বাইরে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি, খাবার পর্যটকদের সহজেই আকৃষ্ট করে।
পর্যটকদের আকৃষ্ট করার সব উপাদানই রয়েছে চীনে। এ কারণে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও বড় ভূমিকা রাখছে পর্যটন শিল্প।
চায়না ট্যুরিজম অ্যাকাডেমির তথ্য অনুযায়ী, কোভিড-১৯-এর আগে ২০১৯ সালে পর্যটন খাত থেকে চীনের অভ্যন্তরীণ আয় ছিল ৬ দশমিক ৬৩ ট্রিলিয়ন ইউয়ান। এর মধ্যে বিদেশিদের চীনে ভ্রমণ থেকে আয় ৫ দশমিক ৭৩ ট্রিলিয়ন ইউয়ান, যা ১৩১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের সমান।
২০২২ সালে চীনের পর্যটন থেকে আয় ছিল প্রায় দুই ট্রিলিয়ন ইউয়ান। ২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালে চীনের রাজস্ব প্রায় সম্পূর্ণরূপে অভ্যন্তরীণ পর্যটন থেকেই হবে বলে অনুমান করা হয়েছিল, কিন্তু ২০২০ সালে কোভিড এর কারণে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেয় তারা।
গত ১০ বছরের ডেটা বিশ্লেষেণে জানা যায়, ২০১২ সালে পর্যটন খাত থেকে চীনের রাজস্ব আয় হয়েছিল ২ হাজার ৫৯০ বিলিয়ন ইউয়ান। ২০১৪ সালে সেটা ৩ হাজারের ঘর অতিক্রম করে আয় হয় ৩ হাজার ৭৩০ বিলিয়ন ইউয়ান। এরপর প্রতি বছরে এ আয় বেড়েছে, তবে ২০১৯ সালে সেটা ৬ হাজার বিলিয়ন ছাড়িযে যায়। এরপর ২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালে কোভিডের কারণে বিদেশি পর্যটকে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তারা। ওই সময় অভ্যন্তরীণ আয় হয় যথাক্রমে ২ হাজার ২৩০ বিলিয়ন ইউয়ান, ২ হাজার ৯১৯ বিলিয়ন ও ২ হাজার ৪৪ বিলিয়ন ইউয়ান।
বিশ্ব পর্যটন শিল্পে চীন
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন বিশ্বব্যাপী পর্যটন শিল্পের জিডিপিতে বার্ষিক পাঁচ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার যোগ করেছে।
জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান মানসহ চীনের পর্যটন শিল্প গত এক দশকে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। কোভিড-১৯ মহামারির ঠিক আগে চীনা পর্যটন শিল্প ২০১৯ সালে প্রায় ৫ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ইউয়ান আয় করে ১১ দশমিক ৭ শতাংশ রাজস্ব বৃদ্ধি করেছে। চীনের পর্যটন শিল্প দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যটন নিয়ে গঠিত। বেইজিং, সাংহাই ও গুয়াংজু চীনা পর্যটকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় অভ্যন্তরীণ গন্তব্য। ২০১৯ সালে চীনে আসা বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ২০ লাখের কাছাকাছি।
করোনাভাইরাস মহামারি চীনের পর্যটনে বড় প্রভাব ফেলেছে। যদিও মাত্র কয়েকজন বিদেশি যাত্রীকে দেশে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছিল। অভ্যন্তরীণ ভ্রমণকারীর সংখ্যাও ২০২০ সালে অর্ধেকেরও বেশি কমে গেছে। ২০২১ সালে ধীরে ধীরে আবার বাড়তে শুরু করেছে।
আন্তর্জাতিক পর্যটন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর আগে ২০১৯ সালে চীনে ৬ কোটি ৫৭ লাখ বিদেশি দর্শনার্থী প্রবেশ করেন। মহামারি শুরুর পর নিজেদের আন্তর্জাতিক বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে চীন। পরে বিভিন্ন দেশ পর্যায়ক্রমে করোনার বিধিনিষেধ তুলে নিলেও চীন অনেক দিন ধরে তা বহাল রাখে।
এ নিয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিংয়ের নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভও করেছে দেশটির জনগণ। ২০২২ সালের শেষ থেকে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার শুরু করে বেইজিং।
পর্যটন শিল্প: বাংলাদেশের চিত্র
অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর বাংলাদেশে রয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত, ম্যানগ্রোভ বন বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন; আছে পাহাড়, পর্বত ও হাওর। এতকিছুর পরও এ দেশে দিন দিন কমছে বিদেশি পর্যটক। ফলে কমছে এ খাত থেকে আয়ও।
পাশের দেশগুলোতে জিডিপিতে পর্যটন খাতের অবদান ১০ শতাংশের ওপরে থাকলেও দেশে মাত্র ৪ দশমিক ৪ শতাংশ।
পাঁচ দশক পেরিয়ে গেলেও দেশের পর্যটন শিল্প কীভাবে এগিয়ে যাবে, তার কোনো মহাপরিকল্পনা এখনও হয়নি।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ পর্যটন শিল্পকে তাদের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে রূপান্তর করেছে, কিন্তু বাংলাদেশ সেই তুলনায় অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে।
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানান, পর্যটন স্পটগুলোয় প্রতি বছর ভ্রমণ করেন প্রায় দেড় কোটি পর্যটক। এর মধ্যে বিদেশি পর্যটক ৩ থেকে ৫ শতাংশ।
ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি শিবলুল আজম কোরেশী জানান, দেশের পর্যটন সম্ভাবনা কাজে লাগাতে প্রচার দরকার। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও বিজ্ঞাপন দিতে হবে।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে দেশে বিদেশি নাগরিক এসেছেন ৫ লাখ ৬৬৫ জন। এ ছাড়া ২০১৮ সালে ৫ লাখ ৫২ হাজার ৭৩০ জন আসেন। ২০১৯ সালে সর্বোচ্চ বিদেশি নাগরিক দেশে আসেন। এ সংখ্যা ৬ লাখ ২১ হাজার ১৩১।
করোনার সময় ২০২০ সালে বাংলাদেশে এসেছেন ১ লাখ ৮১ হাজার ৫১৮ জন। ২০২১ সালে ১ লাখ ৩৫ হাজার ১৮৬ জন আর ২০২২ সালে দেড় লাখ বিদেশি আসেন। ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত তা হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য