বুধবার বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলার রায় বেরোনোর পরেই আমার এক সাংবাদিক বন্ধু ফোন করে বললেন 'নো ওয়ান কিল্ড জেসিকা'।
২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে মুক্তি পাওয়া হিন্দি ছবির নাম 'নো ওয়ান কিল্ড জেসিকা'। দিল্লির একটি চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনা নিয়ে তৈরি ছবিটি। ওই ছবির চিত্রনাট্যের মূল বক্তব্য ছিল, খুনের কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী কীভাবে সহজেই সব ভুলে যান বা সর্বোচ্চ দরদাতাদের কাছে তাদের সাক্ষ্য বিক্রি করতে চান। অর্থাৎ, লোভ ও রাজনৈতিক প্রভাবের কাছে বন্ধক রাখা হয় একটি খুনের সহজ সরল মামলা। যার ফলে বহু মানুষের সামনে ঘটে যাওয়া খুনের অপরাধী শাস্তি পায় না।
ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলার রায় নিয়ে লেখার শুরুতে একটি হিন্দি ছবির উল্লেখ অনেকের কাছেই অপ্রাসঙ্গিক মনে হতে পারে। কিন্তু বৃহস্পতিবার ভারত বা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বাবরি মসজিদ মামলার রায় সম্পর্কিত শিরোনামগুলি যদি আমরা দেখি, তবে সহজেই বোঝা যাবে হিন্দি ছবিটির নামের সঙ্গে বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলায় সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের ২৬শ পৃষ্ঠার রায়ের যোগসূত্রতা। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের মামলায় ৩২ জন অভিযুক্তই নির্দোষ। লখনউয়ের বিশেষ সিবিআই আদালতের এই রায় ঘোষিত হওয়ার পর কেউ শিরোনাম দিয়েছে 'নো ওয়ান ডেমোলিশড বাবরি', কেউ বা লিখেছে 'নো ওয়ান ফেলড বাবরি'। ২৮ বছর ধরে চলতে থাকা বিতর্কিত মামলার রায়ে জানা গেল, 'কেউ দোষী নয়'।
সিবিআই বিশেষ আদালতের বিচারপতি এস কে যাদবের পাঁচ মিনিটের রায়ে মূল পাঁচটি বিষয়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথমত, পরিকল্পিতভাবে বাবরি মসজিদ ভাঙা হয়নি। দ্বিতীয়ত, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণ নেই। তৃতীয়ত, সিবিআই যে ভিডিও এবং অডিও রেকর্ড পেশ করেছে, তা প্রামাণ্য কিনা জানা যাচ্ছে না। চতুর্থত, সমাজবিরোধীরা মসজিদ ভাঙার চেষ্টা করেছিল। অভিযুক্তরা তাদের থামাতে চেষ্টা করেছিলেন। পঞ্চমত, অডিও ক্যাসেটে কয়েকজনের ভাষণ শোনা যাচ্ছে বটে, কিন্তু কী বলা হয়েছে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে না।
১৯৯২-এর ডিসেম্বরে গঠিত লিবেরহান কমিশন ২০০৯ সালে তাদের রিপোর্ট পেশ করে বলেছিল, দীর্ঘ এবং বিশদ পরিকল্পনার ফল এই ধ্বংসকাণ্ড। আরএসএস, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের অর্থ জোগাড় করা হয়েছিল, করসেবকদের নামে স্বয়ংসেবকদের হাজির করা হয়েছিল এবং কে কোন কাজ করবে তার বিশদ পূর্বপ্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। যে হাতিয়ার নিয়ে উপস্থিত হয়েছিল মসজিদ ভাঙার বাহিনি, তা পরিকল্পনা ছাড়া অসম্ভব। যেভাবে অতি দ্রুত মসজিদ ভেঙে সেখানে রামলালার মূর্তি স্থাপন করা হয়, তা পরিকল্পনা ছাড়া অসম্ভব। ১৯৯০-এ একবার মসজিদ ভাঙার চেষ্টা হয়েছে। সারা দেশে পরিকল্পিতভাবে 'মন্দির ওহি বানায়েঙ্গে' শ্লোগান দিয়ে ধর্মীয় উন্মাদনা তৈরী করা হয়েছে। এসব কোনো কিছুই তথ্যপ্রমাণ হিসাবে বিচারপতির নজরে আসেনি। আর সে কারণেই সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের রায়কে 'সম্পূর্ণ প্রহসন' বলে চিহ্নিত করেছেন অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি এম এস লিবারহান। তিনি বলেছেন, ‘বাবরি মসজিদ ধ্বংস পূর্বপরিকল্পিত নয় বলে যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, তা কমিশনের রিপোর্টের সম্পূর্ণ বিরোধী। পুরো পরিকল্পনামাফিক (মসজিদ) ধ্বংস করা হয়েছিল।’ বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনার তদন্তের জন্য ভি পি নরসিংহ রাও সরকারের গঠন করা কমিশনের প্রধান ছিলেন এম এস লিবারহান।
সিপিআই (এম) পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম আদালতের রায় শোনার পরেই মন্তব্য করেছিলেন, ‘আমরা অবাক হইনি। কারণ দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কুক্ষিগত করে সংকীর্ণ রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে এগুলোর দৃষ্টি ঘোলাটে করে দেওয়া হচ্ছে। ক্ষমতাশালীদের তুষ্ট করে যেভাবে অপরাধীদের রেহাই দেওয়া হলো, তাতে আদালত ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর থেকে দেশবাসীর ভরসা নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে, আইনের শাসন ধ্বংস করা হচ্ছে।’
আদালতের এ রায়কে ‘সংবিধানের ভাবধারার’ বিরোধী বলে মন্তব্য করেছে কংগ্রেস। ২০১৯ সালে বাবরি জমি বিতর্ক মামলায় সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বরের ঘটনাকে ‘আইন লংঘন’ বলে অভিহিত করেছিল। এ দিনের রায় সুপ্রিম কোর্টের সেদিনের মতামতের বিরোধী বলে দাবি কংগ্রেসের। কংগ্রেসের দাবি, সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের রায়ের বিপক্ষে আবার উচ্চ আদালতে আবেদন করুক কেন্দ্র ও উত্তরপ্রদেশ সরকার। দলের মুখপাত্র রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা বলেছেন, ‘সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের রায় বাবরি মসজিদ ধ্বংস প্রসঙ্গে গত বছর ডিসেম্বরে সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য ও সংবিধানের মূল ভাবধারার বিরোধী।
সেদিন সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর যা হয়েছে তা গুরুতরভাবে আইন-শৃঙ্খলা লঙ্ঘন। কিন্তু তারপরও বিশেষ আদালত সব অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস বলে জানিয়েছে। স্পষ্ট যে, এই রায় সর্বোচ্চ আদালতের ব্যাখ্যাকেই চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে।’ তিনি বলেছেন, ‘যে কোনো উপায় ক্ষমতা দখলের জন্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, ভাতৃত্ববোধ নষ্ট করে বাবরি মসজিদ ভেঙেছিল আরএসএস-বিজেপি। গোটা দেশবাসীর কাছে স্পষ্ট যে সেটা ষড়যন্ত্র ছিল। এই ষড়যন্ত্রের সহযোগিতা করেছিল তৎকালীন উত্তরপ্রদেশ সরকার। এটা সংবিধানের মূল ধারার ওপর আঘাত। সুপ্রিম কোর্টকে ভুল পথে চালনার চেষ্টা করা হলেও তা হয়নি। সুপ্রিম কোর্ট ওই ঘটনাকে গুরুতর আইন লঙ্ঘন বলে জানিয়েছে।’
আশিস গুপ্ত: সাংবাদিক, নয়াদিল্লি
সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনসহ যা কিছু হচ্ছে তা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং এ নিয়ে ভারতের মন্তব্য করা ঠিক হবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রতিবেশী দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির তৃতীয় মেয়াদের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এস জয়শঙ্কর এসব কথা বলেন বলে মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।
নরেন্দ্র মোদির ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতি এবং বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে জয়শঙ্কর বলেন, ‘সবসময় সবকিছু নিজের অনুকূলে থাকে না। কোথাও না কোথাও থেকে কিছু কথা আসতে থাকে। কেউ না কেউ কিছু একটা বলে ফেলে বা করে ফেলে। এটা হয়, স্বাভাবিক।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যা হয়েছে সেটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তাদের নিজস্ব রাজনীতি রয়েছে। আমরা বর্তমান সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাব। তারা তাদের অবস্থান বুঝে নিক, সম্পর্কের মহত্ব বুঝুক। তাহলে প্রতিবেশীদের মধ্যকার সম্পর্কের মান ও মাত্রা অন্যরকম হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবেশী উভয়েই উভয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়। আমাদের অন্য প্রতিবেশী দেশগুলোতেও আগে যেসব রাজনৈতিক ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়ে গেছে। বাংলাদেশেও অভ্যন্তরীণভাবে যা হওয়ার হবে। সেটা নিয়ে আমাদের মন্তব্য করা ঠিক হবে না।
‘তবে দুই দেশের সম্পর্ক আমাদের দিক থেকে স্থিতিশীল রাখতে চাই, সামনে এগিয়ে নিতে চাই। আমাদের পারস্পরিক ভালো সহযোগিতা রয়েছে, আমাদের ভালো বাণিজ্য রয়েছে। জনগণের সঙ্গে জনগণের ভালো সহযোগিতা রয়েছে। আমরা সেই পথ ধরেই এগিয়ে যেতে চাই।’
ভারতের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে জয়শঙ্কর বলেন, 'ভারতের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পররাষ্ট্রনীতির মাধ্যমে কীভাবে এগিয়ে নেয়া যায়, আমাদের কূটনীতি ও অন্যান্য আলোচনা সেটাকে কেন্দ্র করেই হয়। সেসঙ্গে এটা আমাদেরও দায়িত্ব যে পৃথিবীতে শান্তি বজায় থাকুক। এটা আমাদের জন্যও প্রয়োজন।'
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রে আসন্ন নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প রোববার ফ্লোরিডায় তার গল্ফ মাঠে গল্ফ খেলার সময় অজ্ঞাত বন্দুধারীর হত্যা প্রচেষ্টা থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে যে তিনি নিরাপদ ও অক্ষত আছেন।
গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্টরা জানিয়েছেন, ট্রাম্পের গল্ফ কোর্স থেকে কয়েক শ’ গজ দূরে ঝোপের মধ্যে থেকে এক বন্দুকধারী ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এ সময় গোয়েন্দা সংস্থার এক বা একাধিক সদস্য বন্দুকধারীর ওপর গুলিবর্ষণ করে।
আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা জানান, সন্দেহভাজন ব্যক্তি ঘটনাস্থলে একটি একে-৪৭ স্টাইলের অ্যাসল্ট রাইফেল এবং অন্যান্য জিনিসপত্র রেখে কালো রংয়ের একটি গাড়িতে করে পালিয়ে যায়। অবশ্য পরে তাকে আটক করা হয়েছে।
পেনসিলভেনিয়ায় একটি নির্বাচনি সমাবেশে ট্রাম্পকে গুলি করার দুই মাস পরই আবারও তার ওপর হামলার ঘটনা ঘটলো। পেনসিলভেনিয়ার ওই হামলায় ট্রাম্পের ডান কানে সামান্য আঘাত লেগেছিল।
আগামী ৫ নভেম্বরের নির্বাচনের আগে মাত্র সাত সপ্তাহের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ প্রচারণা চালানোর ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
এদিকে পাম বীচ কাউন্টির শেরিফ রিক ব্রাডশ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আমরা সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে আটক করেছি।’
ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারণার মুখপাত্র স্টিভেন চিয়াং এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘বন্দুকধারীর হামলার পর ট্রাম্প নিরাপদে আছেন।’
এদিকে ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী শঙ্কামুক্ত থাকায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
ট্রাম্প নিজেই তার ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ভয় নেই! আমি নিরাপদে এবং ভালো আছি, কেউ আহত হয়নি। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ!’
আরও পড়ুন:টাইফুন ইয়াগির প্রভাবে মিয়ানমারে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যায় ৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এ দুর্যোগে দেশটিতে ৮৯ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম দৈনিক গ্লোবাল নিউ লাইট অফ মিয়ানমার রোববার এক প্রতিবেদনে জানায়, বন্যায় নাইপিদো, বাগো, মান্দালয় ও আইয়াওয়াদির ৬৪টি শহরতলীর ৪৬২টি গ্রাম ও ওয়ার্ড এবং মন, কায়িন ও শান প্রদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এতে বলা হয়, বন্যা কবলিত এলাকায় ২৪টি সেতু, ৩৭৫টি স্কুল, একটি মঠ, পাঁচটি বাঁধ, চারটি প্যাগোডা, ১৪টি ট্রান্সফরমার, ৪৫৬টি ল্যাম্পপোস্ট ও ৬৫ হাজার ৭৫৯টি ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দুর্যোগ মোকাবিলায় নাইপিদোসহ বিভিন্ন প্রদেশ ও অঞ্চলগুলোতে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা, খাবার ও পানীয় জল সরবরাহের জন্য অস্থায়ী ত্রাণ শিবির স্থাপন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও উদ্ধারকর্মীরা তল্লাশি ও উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন:ভিয়েতনামে সুপার টাইফুন ইয়াগি ও এর ফলে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৩৩ জনে দাঁড়িয়েছে।
এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ৮০০ জনেরও বেশি। নিখোঁজ রয়েছেন ১০৩ জন।
দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম শুক্রবার এসব তথ্য জানায়।
রাজধানী অঞ্চল হ্যানয়ের রেড নদীতে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে, তবে এখনও অনেক এলাকা তলিয়ে আছে।
গত শনিবার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির স্থলভাগে আঘাত হানে টাইফুন ইয়াগি। এক সপ্তাহের ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে বিশেষ করে ভিয়েতনামের পার্বত্য উত্তরাঞ্চলে আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধস হয়।
বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা।
দেশটির লাও কাই প্রদেশে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়। গত মঙ্গলবার আকস্মিক বন্যায় প্রদেশটির লাং নু গ্রাম পুরো তলিয়ে যায়।
রাষ্ট্রীয় সংবাদপত্র ভিএনএক্সপ্রেস শুক্রবার জানায়, লাং নু থেকে ৪৮ জনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। সেখানে নিখোঁজ আছেন ৩৯ জন।
সংবাদমাধ্যমটি আরও জানায়, গ্রামটিতে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উদ্ধারকাজ চালাতে ভারী সরঞ্জাম আনা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। প্রায় ৫০০ উদ্ধারকর্মী গ্রামটিতে উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী ফাম মিন চিন বলেন, ‘আমরা নিখোঁজদের সন্ধানে পিছপা হব না।’
চীনের সীমান্তবর্তী আরেক উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ কাও বাংয়ে ভূমিধসের চার দিন পর শুক্রবার পর্যন্ত ২১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন আরও ১০ জন।
সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ জানায়, টাইফুন ও এর ফলে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশগুলোতে বৈদ্যুতিক গাড়ি কোম্পানি ভিনফাস্ট, অ্যাপলের যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
টাইফুন ইয়াগিতে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য অস্ট্রেলিয়া এরই মধ্যে ২০ লাখ ডলার সহায়তার অংশ হিসেবে ত্রাণসামগ্রী সরবরাহ শুরু করেছে। অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়াও ২ মিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস শুক্রবার জানায়, ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট বা ইউএসএআইডির মাধ্যমে ১০ লাখ ডলার সহায়তা দেয়া হবে।
কয়েক দশকের মধ্যে ভিয়েতনামে আঘাত হানা টাইফুনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ইয়াগি।
বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের পানির উষ্ণতা বাড়তে থাকায় টাইফুন ইয়াগির মতো ঝড় আরও শক্তিশালী হচ্ছে, যার প্রভাবে তীব্র বাতাস এবং ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
আরও পড়ুন:আফগানিস্তানের মধ্যাঞ্চলীয় দাইকুন্দি প্রদেশে বন্দুকধারীদের গুলিতে ১৪ জন নিহত ও চারজন আহত হয়েছেন।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম টোলো নিউজ বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানায়।
হামলায় হতাহত লোকজন দাইকুন্দি প্রদেশের বাসিন্দা ছিলেন। হজযাত্রীদের স্বাগত জানাতে গিয়েছিলেন তারা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মুফতি আবদুল মতিন কানি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি।
এদিকে বিদ্রোহী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) এ হামলার দায় স্বীকার করে।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের চলতি বছরের ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের আগে বিতর্কে রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্পকে আত্মপক্ষ সমর্থনে ব্যস্ত রাখতে বাধ্য করেছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস।
রয়টার্স জানায়, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত এ বিতর্কে প্রেসিডেন্ট পদে যোগ্যতা, গর্ভপাতে বিধিনিষেধের বিষয়ে সমর্থন এবং অসংখ্য আইনি ঝামেলা নিয়ে ট্রাম্পকে একের পর এক আক্রমণ করেন কমলা।
বার্তা সংস্থাটির খবরে বলা হয়, সাবেক প্রসিকিউটর ৫৯ বছর বয়সী কমলা হ্যারিস শুরু থেকেই বিতর্কের নিয়ন্ত্রণ নেন। এর ফলে দৃশ্যত রাগান্বিত ৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্পকে মিথ্যামিশ্রিত প্রত্যুত্তর দিতে দেখা যায়।
বিতর্কের একপর্যায়ে ট্রাম্পকে খোঁচা দিয়ে কমলা বলেন, ট্রাম্পের নির্বাচনি সমাবেশে আসা লোকজন প্রায়ই ক্লান্ত ও বিরক্ত হয়ে আগেই চলে যান।
এর জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘…আমাদের সমাবেশগুলো সবচেয়ে বড়, রাজনীতির ইতিহাসে সবচেয়ে অবিশ্বাস্য সমাবেশ।’
এরপর ট্রাম্প অভিবাসীদের নিয়ে একটি মিথ্যা দেন। তার ভাষ্য, ওহাইও অঙ্গরাজ্যের স্প্রিংফিল্ড এলাকায় অভিবাসীরা পোষা প্রাণী খাচ্ছেন।
ট্রাম্প বলেন, ‘তারা কুকুর খাচ্ছে।’ এ কথা শুনে হাসেন বিশ্বাস না করা কমলা।
আরও পড়ুন:শিশুদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে একটি পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ। এ বিষয়ে যে আইন হতে যাচ্ছে তাতে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারে ন্যূনতম বয়স হতে হবে ১৬ বছর।
অ্যালবানিজ মঙ্গলবার এই পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বলেছেন, এ বছরই তার সরকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের ন্যূনতম বয়স প্রয়োগের উদ্দেশ্যে আইন প্রবর্তন করবে।
তিনি বলেন, ‘সামাজিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং এটি শিশুদের প্রকৃত বন্ধু ও বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।’
গত আগস্টে অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশন পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, ৬১ শতাংশ অস্ট্রেলিয়ান ১৭ বছরের কম বয়সীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রবেশাধিকার সীমিত করার পক্ষে মত দিয়েছেন।
একই সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের নিষিদ্ধ করতে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার প্রিমিয়ার পিটার ম্যালিনাউসকাসের সাবেক ফেডারেল বিচারক রবার্ট ফ্রেঞ্চকে আইনি পথগুলো অনুসন্ধানের নির্দেশ দেয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী অ্যালবানিজ বলেন, আইনটির খসড়া তৈরির সময় ফেডারেল সরকার রবার্ট ফ্রেঞ্চের পর্যালোচনা বিবেচনা করবে।
মন্তব্য