মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরাকে দিয়ে শুরু করছি। আইইডিসিআরের এ পরিচালক করোনা পরিস্থিতি নিয়ে জনসমক্ষে এসে অনলাইনে হেনস্তার শিকার হয়েছেন। ফেসবুকে তাকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য ও ট্রল করা হয়েছে অগুণতি। তার যোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য শাড়ির সংখ্যা গোনা থেকে শুরু করে ফেসবুকে ভুয়া আইডি খুলে নানারকম গুজব ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে।
আরেকজন চিকিৎসক সাবরিনা চৌধুরী করোনা নিয়ে বাণিজ্য ও দুর্নীতির দায়ে ধরা পড়েন। সাবরিনার অপরাধের চেয়ে প্রাধান্য পেয়েছিল তার সাজপোশাক, ব্যক্তিগত জীবন, বিয়ে, মডেলিংয়ে আগ্রহ ইত্যাদি।
ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের শিশুকন্যাও এই সাইবার হেনস্তার হাত থেকে রেহাই পায়নি। সূর্যমুখী ফুলের বাগানে ফুলের মতো ফুটফুটে একটি মেয়েকে নিয়ে নানা ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য ছুঁড়তে দ্বিধা করেনি সাইবার অপরাধীরা। রেহাই পায়নি তার স্ত্রীও, যখন তিনি জানিয়েছিলেন যে কন্যার ছবিতে এসব নোংরা মন্তব্যে ভাবিত নন তারা।
কক্সবাজারে দুর্ভাগ্যজনক হত্যার শিকার হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। কিন্তু ঘটনা মোড় নিল অন্যখাতে। শুরু হলো তার সহকর্মী শিপ্রার জীবনযাপন নিয়ে সামাজিক পোস্টমর্টেম। হত্যার চেয়ে বেশি গুরুত্ব পেল তার ব্যক্তিগত অভ্যাস। ফেসবুক ঘেঁটে বের করা হলো কবেকার সিগারেট বা এলকোহল পানের ছবি ইত্যাদি।
হালের মিডিয়া ক্রেজ মিথিলা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন কলকাতার চলচ্চিত্রকার সৃজিত মুখার্জীর সঙ্গে। আর যায় কোথা! তাদের পিছু লাগলেন অসংখ্য অনলাইন ব্যবহারকারী। মিথিলা যাই করেন তাতেই তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠেন তারা।
দেখা যাচ্ছে, ঘটনা যাই হোক না কেন তাতে কোনো নারী জড়িত থাকা মানেই তা রগরগে হতে বাধ্য। নারীর সামাজিক অবস্থান যাই হোক না কেন, এসব ঘটনা প্রমাণ করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিবেচিত হয়েছেন তাদের লৈঙ্গিক পরিচয় দিয়ে।
সাইবার অপরাধ সচেতনতায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সাইবার ক্রাইম এওয়ারনেস ফাউন্ডেশনে’র জরিপে দেখা গেছে, দেশে ৬৮ শতাংশ সাইবার অপরাধের শিকার হয় নারী। বিশেষ করে কিশোরীরা এই নির্যাতনের সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় রয়েছে।
অনলাইনে নারীর বিরুদ্ধে বিষোদ্গার কারা করেন? কেন করেন?
পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, মন্তব্যের বেশিরভাগই এক ধরনের আধিপত্যবাদী ধারণাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। এই আধিপত্য লৈঙ্গিক, যেখানে ধরে নেয়া হয় নারী মাত্রেই পুরুষের তুলনায় নিন্মবর্গের। ফলে অধিপতি পুরুষের অধিকার বা হক হলো নারীকে হেয় করা।
এক্ষেত্রে নারীর জন্য ‘মানানসই’ একটি জীবনধারণকে ‘মান’ হিসাবে মাথায় রেখে সেই মানের আলোকে ‘সঠিক’ পথ বাতলে দেয়াকে নিজেদের দায়িত্ব মনে করে অধিপতি পুরুষ। ফলে নির্দেশনা দেয়া হয়ে দাঁড়ায় অধিপতি পুরুষের অভীষ্ট লক্ষ্য।
কেবল পুরুষই নয় পুরুষতান্ত্রিক আধিপত্য প্রশ্নহীনভাবে মেনে নেয়া যে কোনো ব্যক্তিই এমন কাজ করেন। এটা এক ধরনের অনলাইন সামাজিক পুলিশি কর্মকাণ্ড যা লৈঙ্গিক শ্রেণিবাদকে বাস্তব জীবন থেকে অনলাইনে প্রতিস্থাপন করেছে।
এই আধিপত্যবাদী চিন্তায় মানুষের লৈঙ্গিক পরিচয়ই মুখ্য, এমনকি একজন শিশুরও। অনলাইনে কোনো ব্যক্তিকে জানার সুযোগ বাস্তবের চেয়ে কম, সেহেতু নারীর লৈঙ্গিক পরিচয়ই মুখ্য হয়ে দাঁড়ায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। এই সামান্য তথ্যের ওপর ভিত্তি করে একজন অচেনা-অজানা নারীকে তার ব্যক্তি জীবন পরিচালনা করার ব্যাবস্থাপত্র (কী করতে পারবে বা পারবে না) দিতে থাকেন আধিপত্যবাদীরা।
যারা এই ব্যবস্থাপত্রের বাইরে নিজেদের পরিচিতি তুলে ধরতে চান, তাদের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে অনলাইনের পরিবেশ সাফসুতরো রাখাই থাকে অধিকাংশ অনলাইন পুলিশি তৎপরতার মূল উদ্দেশ্য। যার ফলে ছড়িয়ে পড়ে নারীর প্রতি ঘৃণা।
নারীর বিরুদ্ধে সাইবার বুলিং শুধু যে আধিপত্যের ধারণা থেকেই আসে এমন নয়। যেহেতু অনলাইন এক ধরনের সামাজিক সমাগমস্থলে পরিণত হয়েছে সেহেতু আমরা আমাদের স্বর ছড়িয়ে দিতে চাই। এই স্বর তৈরি করতে চাওয়া এক ধরনের অস্তিত্ববাদী আকাঙ্ক্ষা।
ফেসবুক, টুইটার বা ইনস্টাগ্রাম – মাধ্যম যাই হোক না কেন, এগুলো একজন ব্যক্তির জন্য ভার্চুয়াল স্পেস তৈরি করে। এই স্পেসের মাধ্যমে ব্যক্তি তার চিন্তাভাবনা, বিশ্বাস, অনুভূতি, ব্যক্তিত্ব, প্রতিভা প্রভৃতি প্রকাশ করতে সক্ষম হয়। ফলে আশেপাশের সবাই যখন ভার্চুয়ালি নিজেকে তুলে ধরতে থাকে, তখন স্বভাবতই ব্যক্তি এতে এক ধরনের চাপ বোধ করেন। অংশগ্রহণ করতে না পারলে বিচ্ছিন্নতাবোধ করেন এবং এ থেকে নিজের স্বতন্ত্র সত্তা তৈরি করতে উদ্বুদ্ধ হন।
এই অংশগ্রহণের মাধ্যমে ব্যক্তি এক ধরনের সামজিক স্তরায়নে যুক্ত হয়। ব্যক্তি মনে করতে থাকে আমিও তো কিছু না কিছু করছি, আমি কেন এই সামজিকতায় অংশগ্রহণ করব না? আমারও তো প্রতিভা আছে। এই স্তরায়নের ক্ষেত্রে ব্যক্তি আকর্ষণীয় অথবা আক্রমণাত্মক এই দুই ধরণের কৌশল অবলম্বন করে।
ব্যক্তি ক্রমাগত এটা করতে থাকে ‘নিজ’কে নির্মাণের তাগিদ থেকে। অনেক সময় অনলাইনে ব্যক্তি এমন এক ধরনের ‘নিজ’ তৈরি করে, যে ‘নিজ’ অফলাইন ব্যক্তির সাথে সাংঘর্ষিকও হয়ে দাঁড়ায়। ব্যাপারটি অনেকটা ডক্টর জেকিল ও মিস্টার হাইডের কাহিনির বাস্তবতার মতো। অর্থাৎ ব্যক্তিচরিত্র প্রেক্ষিতভেদে একেবারে বিপরীতমুখী বৈশিষ্ট্যকেও ধারণ করতে সক্ষম। যা মোটাদাগে ভালো-মন্দ বনাম অনলাইন-অফলাইন এ রকম বৈপরীত্যকে হাজির করে।
বেশিরভাগ সময় অনলাইন বাস্তবতা আমাদের মধ্যে এক ধরনের মুহূর্তের অনুভূতি প্রকাশের চাপ তৈরি করে। সমাজ ও রাষ্ট্রে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যক্তি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানাতে চায়। অনলাইনে যোগাযোগ স্থাপন সহজ হওয়ায় ব্যক্তি নিজের ভিতরের অস্থিরতা কমাতেও সেখানে প্রশান্তি খোঁজে।
অনলাইন কর্মকাণ্ডের জন্য ব্যক্তির কারও কাছে জবাবদিহির বাধ্যবাধকতা নেই। ফলে অনলাইন আচরণের ক্ষেত্রে ব্যক্তির দায়দায়িত্ব নেই বললেই চলে। মানুষ এমন কিছু হয়তো করে বা বলে যা অফলাইনে চট করে করতে বা বলতে চাইবে না। কারণ ব্যক্তির মাথায় থাকে যে একটি পোস্ট দিয়ে বা কমেন্ট করে সেটি মুছে ফেলা যায়। এভাবে ব্যক্তিগত অস্থিরতা কমাতে গিয়ে মানুষ এমন অনলাইন ব্যবহারকারীকেও আঘাত করে, যার সঙ্গে তার পরিচয় নেই।
অনলাইনে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি একটি জনপ্রিয় প্রবণতা হলো নারীর বিরুদ্ধে ঘৃণা উগড়ে দেয়া। এটি করা হয় দীর্ঘদিনের লৈঙ্গিক ভিন্নতা ও সামাজিক নির্মিতি এবং পুরুষতান্ত্রিক ভাবাদর্শকে পুঁজি করে। সচেতনভাবে অথবা অসচেতনভাবে হোক আমরা অনেকেই এটা করে থাকি।
ফলে একজন নারীও যখন অন্য নারীকে সাইবার হেনস্তা করে, তখন তার মাথায় দীর্ঘদিনের জেঁকে বসা সামাজিক উচ্চক্রমের পুনরুৎপাদন ঘটে। যেমন, সাকিব আল হাসানের শিশুকন্যাকে নিয়ে যারা আপত্তিকর মন্তব্য করলেন, তাদের ব্যাপারে সাকিবের স্ত্রী শিশির যখন জানালেন যে তারা বিষয়টি নিয়ে মোটেই মাথা ঘামাচ্ছেন না। অনেকেই ক্ষেপে গিয়ে মন্তব্য করলেন, শিশির স্বার্থপর, অকর্মণ্য গৃহিণী, ঘিলুহীন নারী বা স্বামীর আলোয় আলোকিত ইত্যাদি।
অথচ এসব মন্তব্যের মাধ্যমে তারাও তাদেরই মতো আচরণ করলেন যারা সাকিবকন্যার প্রতি আজেবাজে মন্তব্য ছুঁড়ে দিয়েছিল। দুই পক্ষের কেউই কোনো অংশে কম নেতিবাচকতা প্রকাশ করলেন না। প্রকৃতপক্ষে ঘৃণা যে রূপেই প্রকাশিত হোক না কেন তা ঘৃণাই।
অনলাইন ব্যবহারকারীরা সাধারণত এক ধররনের ভাবনা বা দৃষ্টিভঙ্গিকে মান ধরে নিয়ে এই ঘৃণা প্রকাশ করে। কোনো দৃষ্টিভঙ্গি পছন্দ না হলে সাথে সাথে আঘাত করে, ঘৃণাযুক্ত মেসেজ, হুমকিযুক্ত ইমেল, মিথ্যা তথ্য সাজিয়ে গুজব ছড়িয়ে দিয়ে, আপত্তিকর ছবি, ভিডিও তৈরি ও প্রচার করে সাইবার হেনস্তা ঘটায়। এটি মূলত আন্তঃব্যক্তিক হেনস্তার এক সাম্প্রতিক ধরন।
নারীর প্রতি অনলাইন হেনস্তার চিত্র তুলে ধরতে কিছু শব্দমালা ব্যবহার করা হয়, যেমন, ‘কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য,’ ‘বিকৃত রুচির পোস্ট,’ ‘নোংরা মানসিকতার ফেসবুক ব্যবহারকারী,’ ‘যেনতেন লোকজন ব্যবহারের ফলে অনলাইন পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে’ ইত্যাদি।
লক্ষ্যণীয়, এসব শব্দমালা ব্যবহার করা মূলত অনলাইনকে অফলাইন বাস্তবতা থেকে আলাদা করে দেখতে চাওয়ার প্রবণতা। এতে করে আমরা বোঝাতে চাই যে অনলাইন হবে ‘ভালো’, ‘সুন্দর’ ও ‘সুশীল’ মননধারীদের জায়গা। কিন্তু আদতে অনলাইন কুরুচি, বিকৃতি, নোংরামি – এসব বিষয়কে অফলাইন বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখার সুযোগ নেই। প্রতিদিনই এটা ঘটছে।
বিশেষ করে, নারীর প্রতি কুরুচি বা বিকৃতি বা ঘৃণা যেভাবে পরিবার, রাষ্ট্র ও সমাজে নানাভাবে ছড়িয়ে আছে, চর্চিত হচ্ছে, তার অনলাইন সংস্করণ হচ্ছে সাইবার হেনস্তা বা হয়রানি। অফলাইন বাস্তবতার চাইতে অনলাইনে বরং এসব আচরণ অনেক সহজ। কেননা অনলাইনে সহজে নামহীন হওয়া যায়, পরিচয় লুকিয়ে ফেলা যায়, চাইলে আইডিও মুছে ফেলা যায়। এই যে নাম-পরিচয়হীন হয়ে যাওয়ার সুযোগ এটিও ব্যক্তিকে নারীর বিরুদ্ধে সাইবার অপরাধ করতে উদ্বুদ্ধ করে।
ঘটনা অনলাইনে ঘটলেও তার প্রভাব অফলাইন বা বাস্তব জীবনেও পড়ে। বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দেখা গেছে, সাইবার হেনস্তার শিকার নারীর ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনেও ভয়ংকর চাপ তৈরি হয়। বয়ে আনে হতাশা, বিষণ্ণতা, অনিদ্রা ইত্যাদি। একটি মিথ্যা গুজব ডেকে আনে অসহনীয় বিপর্যয়।
বিশেষ করে শিশু-কিশোরীরা, যারা ব্যক্তিত্ব গঠনের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। অনলাইনে পড়াশোনা, গেইমিং, চ্যাট করতে গিয়ে তারা নানা ধরনের অনুপোযুক্ত ভাষা ও বিষয়ের মুখোমুখী হচ্ছে। যেমন, গালাগালি, বর্ণবাদ বা যৌনতা, যা তাদের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সামনে ফেলছে।
এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবিলা করতে হয় তারা তা জানে না। বাবা-মা-অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনা করতে ভয় পায়। কারও কাছে বলতে না পেরে, চাপ সামলাতে না পেরে অনেকে আত্মহত্যা করে বা আত্মহত্যার প্রচেষ্টা চালায়।
এক জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ৪৬ শতাংশ অভিভাবক সন্তানের সঙ্গে অনলাইন ব্যবহার ও আচরণ নিয়ে আলোচনা করেন। তবে অনেক অভিভাবকই জানেন না যে তার সন্তানরা অনলাইনে কী করে।
করোনা পরিস্থিতিতে স্কুলগামী ছেলেমেয়েরা অনলাইন ক্লাসের জন্য দিনের বেশিরভাগ সময়ই কম্পিউটারে কাটাচ্ছে। জেনে, না জেনে অথবা কৌতুহলের বশে তারা অনলাইন প্রতারণা, হেনস্তা, নির্যাতনের শিকার হতে পারে। খুব সচেতনতার সঙ্গে বিষয়টি মোকাবিলা করতে হবে।
পিতামাতা এবং অভিভাবকদের সবসময় নজর রাখতে হবে ছেলেমেয়েরা কম্পিউটারে কী করছে। সন্তানের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। ‘বাবা-মা জানলে বকা দেবে বা কষ্ট পাবে’ এসব ভেবে তারা যেন বিষয়টিকে নিজেদের মধ্যে চেপে না রাখে। এ বিষয়ে বাবা-মাকেই এগিয়ে আসতে হবে।
সাইবার হেনস্তা-অপরাধ কী বা এ থেকে কীভাবে মুক্ত থাকা যায়, এ বিষয়ে সন্তানের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলতে হবে অভিভাবকদের। সন্তানদের আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলতে হবে। তারা যেন একা একা কোনো সাইবার অপরাধ মোকাবিলা করতে না যায়। শিশু-কিশোরী বা নারী প্রত্যেককেই ইন্টারনেট ব্যবহারের আগে অনলাইন আচরণ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
অনলাইন যে একটি আলাদা জগত সেটি বুঝতে হবে। এখানে হেঁয়ালি করার সুযোগ নেই। এখানেও ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব, চিন্তাভাবনা, আচরণ জনসমক্ষে প্রকাশিত হয়। ফলে নিজের আচরণের প্রতি দায়িত্বশীল হতে হবে।
কিছু একটা লিখলে বা করলে একসাথে অনেক ব্যবহারকারী দেখতে পায়, সেটি রেফারেন্স হিসাবে থেকে যায়, কোনো পোস্ট বা কমেন্ট মুছে ফেললেও তা যে চিরতরে মুছে যায় না বরং রেকর্ড থেকে যায় সেটিও বুঝতে হবে।
পরিস্থিতি বিবেচনায় আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আমাদের অনেকেই হয়তো জানে না যে সাইবার হয়রানির ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন ওমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনে রিপোর্ট করা যায়। সাইবার হয়রানির শিকার যে কেউ সরাসরি কথা বলতে পারেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হেডকোয়াটার্সে। এছাড়া কাউন্টার টেরোরিজম ডিভিশনের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের কর্মীদের সঙ্গেও কথা বলতে পারেন অথবা ইমেইলে অভিযোগ করতে পারেন [email protected] এই ঠিকানায়।
এছাড়া মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হটলাইন ১০৯২১ নম্বরে নারীর প্রতি যে কোনো নির্যাতন-সহিংসতার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করা যায়। অথবা সরকারের ৯৯৯ ইমার্জেন্সি হেল্পলাইন নম্বরেও সেবা পাওয়া যাবে।
আশার কথা বাংলাদেশে সাইবার হয়রানি প্রতিরোধে বিভিন্ন আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তবে নারীর প্রতি পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় আচরণের বদল না আসা পর্যন্ত অনলাইন বা অফলাইনে হয়রানি বা নির্যাতন বন্ধ হবে না। এজন্য প্রয়োজন ব্যাপক সামাজিক সচেতনতা ও দৃষ্টিভঙ্গিগত পরিবর্তন।
সাদিয়া আফরিন: নৃবিজ্ঞানী ও গবেষক
আরও পড়ুন:‘কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও নারীর ক্ষমতায়ন বা সামাজিক মর্যাদা বাড়েনি। দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়ন জরুরি।
‘অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতিতে নারীদের কথা বলার জায়গাটা তৈরি করে দিতে হবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গাগুলোতে নারীদের নিয়ে আসতে হবে।’
আন্তর্জাতিক নারী দিবস সামনে রেখে বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম।
তিনি বলেন, ‘নারী পরিচয়ের আগে আমার বড় পরিচয় হলো আমি একজন মানুষ। নারী-পুরুষ ভেদাভেদ তৈরি, নারীকে হেয় করা, শারীরিক ও মানসিকভাবে পুরুষের চেয়ে দুর্বল মনে করা হয় আজও।’
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের মূল্যায়ন সম্পর্কে সাদেকা হালিম বলেন, ‘সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এমন হয়েছে যে সমাজে নারীকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে দেখা হয়; যদিও বাংলাদেশের সংবিধানে নারী ও পুরুষ সমান। কিন্তু বাস্তবে কোনো দেশই খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে নারীকে পুরুষের সমান ভাবা হয়।’
‘সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীত্ব নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে। সেটা পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাঙ্গন, ভাগ-বাটোয়ারার ক্ষেত্র, এমনকি ধর্মীয়ভাবেও। পৃথিবীতে এমন কোনো ধর্ম খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীকে সমান অধিকার দেয়া হয়েছে।’
‘এমনকি নারীর সন্তান জন্ম দেয়ার বিষয় নিয়েও রাজনীতি করা হয়। সন্তান জন্মের পর পরই সন্তানের অধিকার কিভাবে হবে সেটা আমরা ধর্মীয়ভাবে নির্ধারণ করি। বাবা ও মায়ের অধিকার কতটুকু, আমাদের সিভিল ল’তে কতটুকু, শরিয়া ল’তে কতটুকু- এসব বিষয় অনেকটাই পুরুষকেন্দ্রিক। পুরুষকে সব সময় প্রাধান্য দেয়া হয়। পুরুষরাই এ সমাজে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করে।’
এই উপমহাদেশে নারীদের ভূমিকা সম্পর্কে ড. সাদেকা হালিম বলেন, ‘ভারত উপমহাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন যে এখন হয়েছে তা নয়। অবিভক্ত ভারত উপমহাদেশে নারীরা কিন্তু ইউরোপের নারীদের আগেই ভোটাধিকার পেয়েছিল। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় নারীরা যুদ্ধে অংশ নিয়েছে, রানি হয়েছে, ট্যাক্স সংগ্রহ করেছে।
‘আধুনিক রাষ্ট্রে পুঁজিবাদের বিস্তার ঘটার সঙ্গে সঙ্গে নারীদের কাজের পরিধি বেড়েছে, কিন্তু নারীদের পণ্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। তার কাজকে কাজ হিসেবে আমরা দেখিনি। নারীরা স্ত্রী, মা বা মেয়ে হিসেবে যে ভূমিকা পালন করে সেটিকেও অবমূল্যায়ন করা হয়।
‘কোনো নারী চাকরি করলেও তাকে আমরা প্রশ্ন করি তার স্বামী কী করে। সে যদি স্বামীর থেকে বেশি বেতন পায়, তাহলে পুরুষও হীনম্মন্যতায় ভোগে।’
সমাজের সাধারণ নারীদের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে জবি উপাচার্য বলেন, ‘অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন তো নারীদের অনেকেরই হয়েছে। গার্মেন্ট সেক্টর, চিংড়ি মাছের ঘের, কল-কারখানায় নারীরা কাজ করছে। এটি ভারত বা পাকিস্তানের চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু নারীর সামাজিক মর্যাদা কি বেড়েছে? এটা খুবই জটিল একটি বিষয়।
‘চরম দারিদ্র্যের শিকার নারীরা কোনো কিছু ভাবে না, বা ভাবার সুযোগ পায় না। তারা জানে তাদেরই কাজ করতে হবে, ক্ষুধা মেটাতে হবে। তারাই শিশুদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। সাধারণ নারীরা অনেক পরিশ্রমী। সামাজিক সমালোচনা গ্রাহ্য না করে তারা চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করছে। কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় তাদের বাদ দেয়া হচ্ছে।’
নারীর সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়ে সাদেক হালিম বলেন, ‘আমরা নারীর নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করতে পারিনি। বাংলাদেশে বা প্রবাসে যে পরিমাণ নারী কাজ করে সেখানেও আমরা দেখি যে নারীরা নিরাপদ নয়। এমনকি খুব নিকট আত্মীয়ের মাধ্যমে তারা ধর্ষণের শিকার হয়।’
তিনি বলেন, ‘তবে বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় ধরে প্রধানমন্ত্রী নারী, স্পিকার নারী, বিরোধীদলীয় নেত্রী নারী। এবারকার কেবিনেটে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নারী মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী হয়ে আসছেন। এটা ইতিবাচক দিক।
‘সংখ্যার দিক থেকে নারীর অংশগ্রহণ অনেক বেশি, কিন্তু নারীর ক্ষমতায়ন বা সামাজিক মর্যাদার জায়গায় গুণগত মানের দিক থেকে কতটা বদলেছে সেটি বড় বিষয়। যখন নারীরা সিদ্ধান্ত গ্রহণে আসবে, নেতৃত্ব দেবে, তখনই বদলাবে সমাজ।’
আরও পড়ুন:আন্তর্জাতিক নারী দিবস আজ। প্রতি বছর ৮ মার্চ নারীর উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় সারা বিশ্বে দিবসটি পালিত হয়।
এ বছর নারী দিবসে জাতিসংঘের প্রতিপাদ্য হল ‘নারীদের ওপর বিনিয়োগ করুন, দ্রুত উন্নতি আনুন।’ এর মাধ্যমে লিঙ্গ সমতা আনতে যে যথেষ্ট অর্থ বিনিয়োগ করা হচ্ছে না সেই বিষয়টাতে মনোযোগ দেয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের এ বছরের থিম ‘ইনস্পায়ার ইনক্লুশন’, যার লক্ষ্য হচ্ছে নারীদের জন্য এমন পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে তারা সমাজে নিজের জায়গা সম্পর্কে জানতে পারে। এর সঙ্গে এ গল্পগুলো সামঞ্জস্যপূর্ণ।
দিবসটির উৎপত্তি ২০ শতকের গোড়ার দিকে, যা উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপের শ্রমিক আন্দোলন থেকে উদ্ভূত হয়েছিল। ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম জাতীয় নারী দিবস পালন করা হয়।
পরবর্তীতে ১৯১০ সালে মার্কসবাদী তাত্ত্বিক এবং ‘নারী অধিকার’ আন্দোলনের বিশিষ্ট নেত্রী ক্লারা জেটকিন কোপেনহেগেনে আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলনে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রস্তাব করেন। ধারণাটি সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়েছিল ১৯১১ সালে। যেখানে ১০ লাখেরও বেশি অংশগ্রহণকারী নারীর অধিকারের পক্ষে ছিলেন।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস শুধু নারীদের অর্জন উদযাপনের দিন নয়, এটি লিঙ্গ সমতা, এর প্রতিফলন, সমর্থন, এবং বিশ্বজুড়ে নারী এবং মেয়েদের জন্য বাধাগুলো ভেঙে ফেলার পদক্ষেপকে উৎসাহিত করে।
আরও পড়ুন:মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় অনাগত শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না মর্মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গঠিত কমিটির প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে।
বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চে সোমবার এই নীতিমালা দাখিল করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আদালত এই নীতিমালার ওপর শুনানির জন্য মঙ্গলবার দিন ঠিক করেছে।
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত।
দাখিল করা নীতিমালায় বলা হয়েছে- কোনো ব্যক্তি, হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ল্যাবরেটরি কোনো লেখা বা চিহ্ন বা অন্য কোনো উপায়ে শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ করতে পারবে না। এ বিষয়ে কোনোরকম বিজ্ঞাপন দিতে পারবে না। সরকারের মন্ত্রণালয়গুলো ডাক্তার, নার্স, পরিবার পরিকল্পনা কর্মী, টেকনিশিয়ান কর্মীদের নেতিবাচক ফলাফল সম্পর্কে ট্রেনিং দেবে এবং নৈতিকতা ও পেশাগত আচরণ বিষয়ে ট্রেনিং দেবে।
নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে- হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ মেডিক্যাল সেন্টারগুলো এ সংক্রান্ত সব ধরনের টেস্টের ডাটা সংরক্ষণে রাখবে। হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ মেডিক্যাল সেন্টারগুলো ডিজিটাল ও প্রিন্ট মাধ্যমে লিঙ্গ সমতা এবং কন্যাশিশুর গুরুত্ব তুলে ধরে বিভিন্ন মেসেজ প্রচার করবে।
এর আগে ২০২০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় অনাগত শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ রোধে নীতিমালা তৈরি করতে রুল জারি করে হাইকোর্ট।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রুল জারি করেছিলেন।
রুলে অনাগত শিশুর লিঙ্গ পরিচয় রোধে নীতিমালা বা নির্দেশনা তৈরি করতে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না এবং অনাগত শিশুর লিঙ্গ পরিচয় নির্ধারণে নীতিমালা তৈরি করতে বিবাদীদের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়।
হাইকোর্টের ওই রুলের পর নীতিমালা তৈরির জন্য কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এর আগে ২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারি গর্ভের শিশুর লিঙ্গ পরিচয় জানার উদ্দেশ্যে পরীক্ষা ও লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ বন্ধে নির্দেশনা চেয়ে জনস্বার্থে রিট করেন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান।
প্রথমবারের মতো কৃষ্ণাঙ্গ কোনো ব্যক্তিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি।
স্থানীয় সময় শুক্রবার ক্লদিন গেকে নিয়োগ দেয় প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্ববিদ্যালয়টিকে নেতৃত্ব দেয়া দ্বিতীয় নারী ক্লদিন।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ম্যাসাচুসেটসের গভর্নর ও হার্ভার্ড গ্র্যাজুয়েট মাউরা হ্যালি শুক্রবার বিকেলে দেয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্লদিনের নিয়োগের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট গে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে আপনার দায়িত্বপ্রাপ্তি সত্যিই ঐতিহাসিক। আপনার প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও সমর্থন।’
প্রেসিডেন্ট পদে ব্যাপক অনুসন্ধানের পর হার্ভার্ডের প্রধান নিয়ন্ত্রক বোর্ড হার্ভার্ড করপোরেশন ক্লদিন গেকে নিয়োগ দেয়।
১৬৪০ সালে প্রতিষ্ঠিত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় ক্লদিনকে। তিনি ১৯৯৮ সালে সরকার বিষয়ে হার্ভার্ড থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নেন। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষকতা শুরু করেন তিনি।
এর আগে কলা ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ক্লদিন। তিনি রাজনৈতিক আচরণের ওপর শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞ।
২০১৭ সালে ‘ইনইকোয়ালিটি ইন আমেরিকা ইনিশিয়েটিভ’ নামের উদ্যোগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন ছিলেন তিনি। এ উদ্যোগের উদ্দেশ্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য নিয়ে গবেষণা।
আরও পড়ুন:লন্ডনে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্যানেল আলোচনার বক্তারা মেরিন একাডেমিতে নারীদের অন্তর্ভুক্ত করাসহ মেরিটাইম শিল্পে নারীদের উৎসাহিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন।
লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশনের উদ্যোগে সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনে (আইএমও) ‘এমপাওয়ারিং উইমেন ইন মেরিটাইম অ্যান্ড ওশান ডিপ্লোম্যাসি’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সূত্র: ইউএনবি
যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন। তিনি আইএমও-তে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এবং উইমেন ইন ডিপ্লোম্যাসি নেটওয়ার্ক (ডব্লিউডিএন), লন্ডনের সভাপতির দায়িত্বে নিয়োজিত।
বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার, আইএমও-তে নিয়োজিত স্থায়ী প্রতিনিধি, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞসহ ১০০ জনেরও বেশি প্রতিনিধি এতে অংশ নেন।
বৈশ্বিক সামুদ্রিক শিল্পে নারীদের কম উপস্থিতির কথা তুলে ধরে হাইকমিশনার তাসনিম বলেন, বিশ্বব্যাপী ১ দশমিক ২ মিলিয়ন সনদপ্রাপ্ত নাবিকের মধ্যে নারী মাত্র ১ দশমিক ২৮ শতাংশ। অন্যদিকে ক্রুজ শিল্পে শ্রমশক্তির মাত্র ২ শতাংশ নারী।
হাইকমিশনার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেরিন ইন্ডাস্ট্রিতে নারী ক্যাডেট নিয়োগের দূরদর্শী সিদ্ধান্তের জন্য গর্ব বোধ করি। প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে নেভিগেশন অফিসার, মেরিন ইঞ্জিনিয়ার এমনকি ক্যাপ্টেনের মতো সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট পদসহ বিভিন্ন ভূমিকার জন্য বার্ষিক ১০০ জনেরও বেশি মহিলা নাবিক নিয়োগ করা হয়।
‘এই রূপান্তরমূলক প্রচেষ্টাগুলো ঐতিহ্যগতভাবে পুরুষ-প্রধান সামুদ্রিক শিল্পে লিঙ্গ বৈচিত্র্যের প্রচারে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে।’
দূত নারী-পুরুষ সমতা বাড়াতে ও সামুদ্রিক খাতে নারীদের কণ্ঠ জোরদার করতে বিআইএমসিওসহ আইএমও সচিবালয়, আইএমও-এর সহযোগী সদস্য, উইমেনস ইন্টারন্যাশনাল শিপিং অ্যান্ড ট্রেডিং অ্যাসোসিয়েশন (ডব্লিউআইএসটিএ) ইন্টারন্যাশনাল, উইমেন ইন মেরিটাইম অ্যাসোসিয়েশন (ডব্লিউআইএমএএস) এবং নেতৃস্থানীয় শিপিং শিল্প সমিতিগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতায় কাজ করার জন্য ডাব্লিউডিএন-এর দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী নারী নাবিকসহ নাবিকদের অবদানের ওপর বাংলাদেশ হাইকমিশনের তৈরি একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়, যা অংশগ্রহণকারীদের বিশেষ মনোযোগ আকর্ষণ করে ও প্রশংসিত হয়।
উচ্চ পর্যায়ের এই আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন- লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড এক্সটারনাল রিলেশনস ডিভিশনের ডিরেক্টর ডোরোটা লস্ট সিমিনস্কা, যুক্তরাজ্যে মালদ্বীপের হাইকমিশনার ড. ফারাহ ফয়জল, জর্জিয়ার আইএমও-এর রাষ্ট্রদূত ও জনসংযোগ সোফি কাস্ত্রাভা, অ্যান্টিগুয়া ও বারমুডার হাইকমিশন কারেন-মাই হিল ওবিই, স্টেট ডিপার্টমেন্ট ফর শিপিং অ্যান্ড মেরিটাইম কেনিয়ার প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি ডব্লিউ কারিগিথু, আইএমওর মার্শাল আইল্যান্ডের টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার ও কার্গোস অ্যান্ড কন্টেইনার ক্যারেজ অন আইএমও সাব-কমিটির চেয়ার মেরিয়ান অ্যাডামস, আইএমওতে আর্জেন্টিনার জনসংযোগ এবং ইউএস জারেড ব্যাংকসের জনসংযোগ ফার্নান্দা মিলিশে, সৌদি আরবের এপিআর হায়াত আল ইয়াবিস এবং এডিটর অব ম্যাগাজিন লন্ডনের সম্পাদক এলিজাবেথ স্টুয়ার্ট।
এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটলিয়নে (এপিবিএন) দেশে প্রথমবারের মতো নারী পুলিশ সদস্যদের ডগ হ্যান্ডলার হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে।
সাতজন নারী পুলিশ সদস্য বেসিক কেনাইন হ্যান্ডলার ট্রেনিং কোর্সে অংশ নিয়ে নতুন এ যুগের সূচনা করেছেন।
নারীদের প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন যুক্তরাজ্য ও নিউজিল্যান্ডের পেশাদার ডগ স্কোয়াড প্রশিক্ষক টনি ব্রাইসন ও মেলিন ব্রডউইক।
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস ও এয়ারপোর্ট এপিবিএনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ প্রশিক্ষণ কর্মসূচিটি নারী পুলিশ সদস্যরা সফলতার সঙ্গে শেষ করেছেন।
প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের হাতে বৃহস্পতিবার সকালে সমাপনী সনদ তুলে দেন এয়ারপোর্ট এপিবিএন অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি তোফায়েল আহম্মদ, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম ও ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।
এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মোহাম্মদ জিয়াউল বলেন, ‘২০১৭ সালে দুইটি ল্যাবরেডর, দুইটি জার্মান শেফার্ড ও চারটি বেলজিয়ান ম্যালিনয়েস জাতের কুকুর এবং ১৬ জন হ্যান্ডলার নিয়ে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের কেনাইন ইউনিট যাত্রা শুরু করে। শুধু বিমানবন্দরের নিরাপত্তা রক্ষায় ডেডিকেটেড এই ডগ স্কোয়াড বিমানবন্দরে আসা যাত্রী, সহযাত্রী এবং তাদের ব্যাগেজ স্ক্রিনিংয়ে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ছাড়াও ক্যানোপি নিরাপত্তা, পার্কিং এরিয়া এবং যানবাহনে বিস্ফোরক পদার্থের উপস্থিতি সার্চ, ব্যাগেজ বেল্ট এলাকার নিরাপত্তা রক্ষা এবং ভিভিআইপি নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে।’
এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের ডগ স্কোয়াডে ২০২৫ সালের মধ্যে কুকুরের সংখ্যা ৬৬টি করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানান জিয়াউল হক।
তিনি বলেন, ‘তৃতীয় টার্মিনালের সম্ভাব্য বিশাল অপারেশনের কথা মাথায় রেখে এই পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ২০২৩ সালের মধ্যে ব্রিটেন এবং নেদারল্যান্ডস থেকে আরও অন্তত ১৫টি ডগ এই স্কোয়াডে যুক্ত হবে। বর্তমানে ভগগুলো এক্সপ্লোসিভ সার্চের জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হলেও অচিরেই নারকোটিকস ডগ, ট্রাকিং ডগ, কারেন্সি শিফিং ডগও এই বহরে যুক্ত হবে। এ সকল ট্রেনিংয়ে কারিগরি ও লজিস্টিক সাপোর্ট দিয়ে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নকে সহায়তা করবে ঢাকার ইউএস অ্যাম্বাসি।’
পরিপূর্ণ ডগ স্কোয়াড বিমানবন্দরে নাশকতা, মাদক চোরাচালান, স্বর্ণ চোরাচালন, মুদ্রা পাচার রোধে অসামান্য ভূমিকা রাখতে পারে বলে জানান অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকরা।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসে যশোরে ব্যতিক্রমী গরুর গাড়ির শোভাযাত্রা বের হয়েছে। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা সদরের কালেক্টরেট চত্বরে শোভাযাত্রা উদ্বোধন করেন যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান।
জেলা প্রশাসন ও জেলা মহিলা অধিদপ্তর আয়োজিত শোভাযাত্রায় অংশ নেন বিভিন্ন নারী সংগঠনের সদস্যরা। শোভাযাত্রাটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পুনরায় কালেক্টরেট চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
গরুর গাড়ির পেছনে পেছনে নারীরা নিজ নিজ সংগঠনের ব্যানারসহ অধিকার সংবলিত বিভিন্ন প্যানা নিয়ে অংশ নেন। পরে কালেক্টরেট সম্মেলনের অমিত্রাক্ষর সভাকক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মন্তব্য