‘সাবলীল কথা বলো, সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটাও’ স্লোগানকে সামনে রেখে শুরু হওয়া ‘এলটিডিইজেড (এলটিডেজ) প্রথম জাতীয় ফ্লুয়েন্সি অলিম্পিয়াড-২০২৩’-এর চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ঢাকার মৌচাকে শনিবার আয়োজক প্রতিষ্ঠান এলটিডিইজেডের প্রধান কার্যালয়ে প্রতিযোগিতার সমাপনী হয়।
বিজয়ীদের বাছাই যেভাবে
ইংরেজিতে ফ্লুয়েন্ট স্পিকিং শেখার প্রতিষ্ঠান এলটিডিইজেড আয়োজিত এ প্রতিযোগিতায় অনলাইনে জাতীয় পর্যায়ে অংশ নেয় দেশের বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী। সেখান থেকে সিলেকশনের পর প্রথম ১০০ জনকে চূড়ান্ত পর্ব তথা সেমিফাইনাল রাউন্ডে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হয়।
চারটি ভিন্ন ক্যাটাগরিতে (বাংলা উপস্থিত বক্তৃতা, ইংরেজিতে উপস্থিত বক্তৃতা, টার্ন দ্য কোট এবং স্পেলিং বি) প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। চারটি গ্রুপে ভাগ করা হয় অংশগ্রহণকারীদের।
শিশু শ্রেণি থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত গ্রুপ (এ), চতুর্থ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত গ্রুপ (বি), নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত গ্রুপ (সি) এবং বিশেষায়িত ক্যাটাগরিতে (গ্রুপ ডি) শিক্ষার্থীদের মা ও প্রাপ্তবয়স্করা অংশ নেন।
বাংলা ভাষায় দক্ষতা উন্নয়নের জন্য বাংলা উপস্থিত বক্তৃতাকে আবশ্যক করা হয়েছিল।
যারা চ্যাম্পিয়ন
ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসেডর বা তরুণ নেতৃত্ব ক্যাটাগরিতে স্বর্ণপদক অর্জন করে ঢাকার আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সামিয়া ইসলাম পূর্ণতা। দ্বিতীয় স্থান তথা রৌপ্য পদক অর্জন করে সেনাপল্লি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র নাফিস আহমেদ। তৃতীয় স্থান অর্জন করে ব্রোঞ্জ পদক পায় কিশলয় বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাজিয়া সুলতানা হানাদি।
বাংলা উপস্থিত বক্তৃতায় ক-গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন হয় আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামলিনা ইসলাম জিয়ান ঝারতাজ। প্রথম ও দ্বিতীয় রানারআপ হয় আহরাজ আকবর চৌধুরী ও ইমতাজ হোসেন সাফির।
খ-গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন হয় ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আফিফা আদিবা আফরা। প্রথম ও দ্বিতীয় রানারআপ হয় ইরিনা শেখ রাফা ও মাহমুদ বিন-নূর।
গ-গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন হয় ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী সুহিতা নাথ। প্রথম ও দ্বিতীয় রানার আপ হয় সংস্থীতা কর্মকার ভূমি ও মুন্তাসির তাসিন।
ঘ-গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন হন হুসনা জাকিয়া নিপা। প্রথম ও দ্বিতীয় রানারআপ হন সাবিকুন্নাহার ও মিতু আক্তার।
ইংরেজিতে উপস্থিত বক্তৃতায় ক-গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন হয় আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী আবরার সাইফুল্লাহ। প্রথম ও দ্বিতীয় রানারআপ হয় সামলিনা ইসলাম জিয়ান ঝারতাজ ও আহরাজ আকবর চৌধুরী।
খ-গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন হয় সাভার ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড গার্লস হাই স্কুলের নাজরাতুল মাইশা মিরা। প্রথম ও দ্বিতীয় রানারআপ হয় সামিয়া ইসলাম পূর্ণতা ও ইরিনা শেখ রাফা।
গ-গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন হয় ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী সংস্থীতা কর্মকার ভূমি। প্রথম ও দ্বিতীয় রানারআপ হয় রুফাইদা তাসনিম ফারহা ও মুন্তাসির তাসিন।
ঘ-গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. সাইফুদ্দিন শেখ। প্রথম ও দ্বিতীয় রানারআপ হন খালেদা পারভিন সুপ্তি ও রাসেল ইসলাম।
টার্ন দ্য কোট প্রতিযোগিতায় ক-গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন হয় জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের দিশান রায় দুর্জয়। প্রথম ও দ্বিতীয় রানারআপ হয় সামলিনা ইসলাম জিয়ান ঝারতাজ ও মিসকাত ইসলাম নাহিয়ান।
খ-গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন হয় আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী আহনাফ ইন্তিসার শান ও শ্রীপর্ণা পাল। প্রথম রানারআপ হয় নাচিয়াত ইসলাম নাবা। দ্বিতীয় রানারআপ হয় সাফওয়ান কবির ও ইয়াশফা বিভা।
গ-গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন হয় ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী সুহিতা নাথ। রানারআপ হন মুন্তাসির তাসিন।
ঘ-গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন হন সাবিকুন্নাহার। প্রথম ও দ্বিতীয় রানারআপ হয় যথাক্রমে সাইফুদ্দিন শেখ ও খালেদা পারভিন সুপ্তি।
স্পেলিং বি প্রতিযোগিতায় ক-গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন হয় নেভী অ্যাঙ্করেজ স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী রিয়ান গুপ্তা। প্রথম ও দ্বিতীয় রানারআপ হয় সাউদা সালসাবিল জান্নাহ ও জুন্নুরাইন আলিফা।
খ-গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন হয় আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী শ্রীপর্ণা পাল। প্রথম ও দ্বিতীয় রানারআপ হয় সামিয়া ইসলাম পূর্ণতা ও সাফওয়ান কবির।
গ-গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী সাংস্থীতা কর্মকার ভূমি। প্রথম ও দ্বিতীয় রানারআপ হয় আহনাফ আবিদ রুহি ও সিলভিয়া আনোয়ার।
ঘ-গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন সাবিকুন্নাহার। প্রথম রানারআপ হয়েছেন মিতু আক্তার। দ্বিতীয় রানারআপ হয়েছেন মোহাম্মাদ সাইফুদ্দিন শেখ ও রাসেল ইসলাম।
এলটিডিইজেডের ভাষ্য
ফ্লুয়েন্সি অলিম্পিয়ডের সভাপতি শাহরিয়ার ইমন বলেন, ‘মানুষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগের মাধ্যম হলো কথা বলা। আর এই কথা মানুষের সামনে বলতে গেলেই আমাদের জড়তা, লজ্জা ও ভয় চলে আসে। তাই শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধিতে উৎসাহিত করাই এই প্রতিযোগিতার বড় লক্ষ্য ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘সমাজে বেশি ছোটদেরও অভূতপূর্ব প্রতিভা আছে, কিন্তু তা সুযোগের অভাবে বিনষ্ট হয়। তাই আমরা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি যে, প্রথম-দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরাও এখানে বাংলা ও ইংরেজিতে উপস্থিত বক্তৃতা দিয়েছে, করেছে ডিবেটের মতো প্রতিযোগিতা। এভাবে চললে তারা কয়েক বছরের মধ্যেই বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে পারবে।
‘আমরা চাই, আমাদের স্কুলে ছোট ছোট শিশুদেরও বাংলা ও ইংরেজিতে এ রকম অনর্গল কথা বলা শেখানো হোক। সরকার এই ধরনের উদ্যোগ নিলে আমরা কাজ করতে পারব।’
আয়োজক প্রতিষ্ঠানে এলটিডিইজেডের চেয়ারপারসন আরিফা বারী বলেন, ‘মেধাবৃত্তিক উন্নয়নে আমরা সবসময়ই এগিয়ে আসি। আর তাই মায়েদের জন্যও এই অলিম্পিয়াডে প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা রাখা হয়, যেটা ছিল আসলেই অভূতপূর্ব। ছিল বয়স্কদের জন্যও ভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা।
‘আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল বাংলা বক্তৃতা প্রতিযোগিতা বাধ্যতামূলক করা। আমরা দ্রুত সময়ে ইংরেজিতে কথা বলা শেখানোর প্রতিষ্ঠান হলেও মাতৃভাষা বাংলা যাতে করে আমাদের শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে চর্চা করতে পারে, সে বিষয়টিও ছিল এই প্রতিযোগিতার অন্যতম সার্থকতা।’