বেকার যুবকদের যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উন্নয়নের মূল ধারা যুক্ত করতে কাজ করছে বাগেরহাট যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর।
তবে দক্ষ প্রশিক্ষক ও জনবল সংকটে ভুগতে থাকা এ প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
প্রশিক্ষণ নেয়া অনেকেরই অভিযোগ, চাহিদা অনুযায়ী তারা ভালো প্রশিক্ষণ পাননি। গড়ে ওঠেনি প্রয়োজনীয় দক্ষতা। তারা আউটসোর্সিং ও ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে উন্নত প্রশিক্ষণের দাবি জানিয়েছেন।
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর বলছে, জনবল সংকট থাকলেও সাধ্য অনুযায়ী কাজ করছে সংস্থাটি।
শিক্ষার্থীদের দাবি ও অভিযোগ
বাগেরহাট যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে গত ২০২০-২১ অর্থবছর ও ২০২১-২২ অর্থবছরে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নেয়া শিক্ষার্থীরা জানান, প্রশিক্ষণ কর্মক্ষেত্রে তাদের কোনো কাজে আসছে না। তাদের মতে, প্রশিক্ষক দক্ষ ছিলেন না, যে কারণে যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ তারা পাননি।
বাগেরহাট সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের মোহাম্মদ আলিমুজ্জামান বলেন, 'গত বছর আমি বাগেরহাট যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে কম্পিউটারের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। শুধু কম্পিউটার সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পেয়েছি। প্রতিযোগিতার এ যুগে এসে প্রাথমিক ধারণা নিয়ে কর্মক্ষেত্রে কাজ করার সুযোগ কম। 'যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের দক্ষ প্রশিক্ষকের অভাব রয়েছে। শুধু একজন দক্ষ প্রশিক্ষকের অভাবে যুব উন্নয়ন থেকে কাঙ্ক্ষিত প্রশিক্ষণ পাচ্ছি না আমরা।'
বাগেরহাট সদর উপজেলার ষাটগম্বুজ ইউনিয়নের স্নিগ্ধা ফাতেমা বলেন, 'আমি এ বছরের জানুয়ারিতে যুব উন্নয়ন থেকে মাছ চাষের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছি, যা আমার কোনো কাজেই আসেনি। তাদের যিনি প্রশিক্ষক ছিলেন তিনি যথেষ্ট দক্ষ ছিলেন না। তিনি মুখে বলেই নাম মাত্র প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। প্রাকটিক্যালভাবে শেখার কোনো সুযোগ ছিল না সেখানে।
'এ ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মক্ষেত্রে দক্ষতার প্রমাণ দেয়া সম্ভব নয়। এ ছাড়া অনেক শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ নিয়েছে শুধু সার্টিফিকেট ও আর্থিক সুবিধার জন্য।'
একই ইউনিয়নের ইমরান শেখ বলেন, 'আমি যুব উন্নয়ন থেকে কম্পিউটারের প্রশিক্ষণ নিয়েছি। আমার কাছে এ প্রশিক্ষণ কম্পিউটার সম্পর্কে বেসিক ধারণা ছাড়া কিছুই মনে হয় না। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমি যা পেয়েছি সেটা শুধু একটি সার্টিফিকেট। এর বাইরে যা শিখেছি, সেটা ইউটিউব দেখে শেখা যায়।'
করোনাকালে অনলাইনভিত্তিক কাজের সুযোগ বেড়েছে জানিয়ে সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়নের তানজিম আহমেদ বলেন, 'আমাদের মতো যুবকদের কাছে পছন্দের পেশা হয়ে উঠছে আউটসোর্সিং ও ফ্রিল্যান্সিং। ভালো প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ সুযোগটি কাজে লাগাতে হবে আমাদের। এসব করতে হলে যুব উন্নয়নে দক্ষ প্রশিক্ষক দিয়ে আউটসোর্সিং, ফ্রিল্যান্সিং ও মোবাইল সার্ভিসিংয়ের মতো বিষয়গুলোর ওপর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলেই প্রতিটি পরিবারে একজন করে উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে। '
যা বলছে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর
চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ প্রশিক্ষক ও জনবল সংকটের কথা স্বীকার করে বাগেরহাট যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মাসুদুল হাসান মালিক জানান, সাধ্যানুযায়ী আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন তারা।
তিনি বলেন, 'আমাদের অফিসসহ উপজেলা অফিসগুলোতেও জনবল সংকট রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংকটে রয়েছে রামপাল উপজেলায়। সেখানে ক্রেডিট সুপারভাইজার, অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক ক্যাশিয়ার, অফিস সহায়ক ও উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তাসহ কর্মরত পদের ৭ জনের বিপরীতে ৫টি পদই শূন্য।
'এ ছাড়া শরণখোলা উপজেলায় কর্মরত পদের ৭ জনের বিপরীতে ৩টি, মোড়েলগঞ্জে ৪টি, মোল্লাহাটে ২টি, মোংলায় ২টি, সদরে ২টি ও ফকিরহাট, চিতলমারী ও কচুয়া উপজেলায় ১টি করে পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে জেলা কার্যালয়েও একজন সহকারী পরিচালক ও একজন উচ্চমান সহকারীর পদ শূন্য রয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'যে অভিযোগ করা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সেগুলো অযৌক্তিক বা ভুল বলা যাবে না। এগুলো এখন সময়ের দাবি। তবে আমাদের যারা প্রশিক্ষক রয়েছেন তারা যে দক্ষ নয়, সেটাও বলা যায় না। কারণ দীর্ঘদিন ধরে তারা যুব উন্নয়নে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
'এখানে সমস্যা হচ্ছে বর্তমান যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। এখানে যুব উন্নয়নের প্রশিক্ষকদের দক্ষতার অভাব থাকলে তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে। এ ছাড়া আউটসোর্সিং ও ফ্রিল্যান্সিংয়ের ওপর যে প্রশিক্ষণের দাবি করছে তরুণরা, আমি নিজেও তাদের সঙ্গে সহমত। এটি এখন সময়ের দাবি।'
উপপরিচালক জানান, আগামী অর্থবছরে তিনি আউটসোর্সিং ও ফ্রিল্যান্সিংয়ের ওপর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবেন। বিষয়ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।