রাজশাহীর তানোরের গ্রামে গ্রামে মাদকের বিস্তার যেমন ঘটেছে, তেমনি যুব সমাজকে মাদক থেকে দূরে রাখতে উদ্যোগী তরুণদের চেষ্টাও আছে।
উপজেলার বাকুশপুর গ্রামের কিছু যুবক-তরুণ চেষ্টা করছেন তাদের এলাকাকে মাদকমুক্ত রাখতে। এর পাশাপাশি গ্রামের উন্নয়নে যা যা করা যায়, সবকিছুই করতে চান এই যুবকরা।
গ্রামের রাস্তায় আলোর ব্যবস্থা করেছেন তারা নিজ উদ্যোগে। অনেক পৌর এলাকার রাস্তাঘাটও যখন অন্ধকারে নিমজ্জিত, তখন অজপাড়া গ্রাম হিসেবে পরিচিত বাকুশপুরের রাস্তা থাকে আলোকিত।
উদ্যোক্তাদের মধ্যে কয়েকজন রয়েছেন দেশের বাইরে, আবার বেশ কয়েকজন রয়েছেন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মরত। নিজেদের টাকা আর উদ্যোগে তারা এগিয়ে নিতে চান নিজেদের গ্রামটিকে।
রাজশাহী শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার আর তানোর সদর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরের গ্রাম বাকুশপুর। এই গ্রামের দুই ভাই মামুনুর রশিদ ও পলাশ আহমেদ থাকেন কাতারে। কর্মসূত্রে ঢাকায় থাকেন ফয়সাল আহমেদ ও তার ভাই মবিয়া হোসেন স্বপন। মূলত এই চার যুবকের উদ্যোগেই স্থানীয় তরুণদের একত্রিত করা হয়।
তাদের উদ্যোগে হাত বাড়ান খুলনায় একটি ওষুধ কোম্পানিতে কর্মরত মাহাজুর রহমান। তিন বছর আগে তারা ‘তরুণ শক্তি তরুণ বল’ বা টিএসটিবি নামে একটি সামাজিক সংগঠন গড়ে তোলেন।
অলাভজনক ও অরাজনৈতিক এ সংগঠনটি এরই মধ্যে এলাকার উন্নয়নে কাজ শুরু করেছে। গত মার্চে তারা এলাকার রাস্তার ধারে নিজেরা খুঁটি পুঁতে লাইট ঝুলিয়ে আলোকায়নের কাজ করে এলাকায় বিশেষভাবে আলোচিত হন।
এ সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কারী মাহাজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এলাকার যুব সমাজের উন্নয়নসহ সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যেই আমাদের সংগঠনের যাত্রা শুরু। এখন এর সদস্যসংখ্যা প্রায় অর্ধশত। সবাই এই গ্রামের বাসিন্দা। আমাদের কোনো কমিটি নেই। এখানকার ৮-১০ জন যুবকই মূলত এটি দেখাশোনা করেন।
‘আমাদের উদ্যোগের সুফল পাচ্ছি। এখানকার যুবকরা মাদকে জড়াচ্ছে না। আমরা এলাকার রাস্তা আলোকায়নের কাজ করেছি। পুরো রাস্তায় বাঁশের খুঁটি দিয়ে এলইডি লাইট ঝুলিয়েছি।
‘আমরা পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ দিয়ে আলোকিত করার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু দেখলাম এটি সময়সাপেক্ষ। এ জন্য আমরা যারা সদস্য আছি, নিজেদের বাড়ি থেকেই বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে আমরা রাস্তার পাশে লাইট জ্বালিয়েছি।’
তিনি জানান, এখানকার রাস্তায় ১৭টি বাতি ঝোলানো হয়েছে। এর পেছনে প্রায় ১৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
বৃক্ষরোপণেও জোর দেয়ার কথা জানান মাহাজুর। জানান, এখন থেকে এলাকায় কোনো শিশু জন্ম নিলে ওই পরিবারকে তিনটি গাছের চারা উপহার দেব; একটি বনজ, একটি ফলদ এবং একটি ঔষধি গাছের চারা।
তিনি বলেন, ‘আমাদের মূল উদ্দেশ্য গ্রামের উন্নয়ন। আমাদের উদ্যোগে এলাকার মানুষ খুশি। এই উদ্যোগকে সবাই স্বাগত জানাচ্ছেন। এতে আমাদের উৎসাহও বাড়ছে।’
তরুণদের এই উদ্যোগের প্রশংসাও ঝরছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ইসমাইল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এলাকার এসব ছেলে খুব ভালো কাজ করছে। আমি তাদের কাজকে সমর্থন করি। তারা এলাকার যুবক-তরুণদের সুস্থ চিন্তাধারায় রাখার চেষ্টা করছে। এ ছাড়া আলোকায়নের কাজটিও তাদের প্রসংশিত হচ্ছে।’
চান্দুড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মজিবর রহমান জানান, এই তরুণরা বছরখানেক আগে তার সঙ্গে দেখা করে এলাকার উন্নয়নে কাজ করার কথা জানিয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘এসব যুবক-তরুণ এলাকার উন্নয়নে এগিয়ে আসছে, এটি অবশ্যই আমাদের সবার জন্যই ভালো খবর।’