একদল তরুণ-তরুণীর নান্দনিক নাচের তালে মুগ্ধ ফেসবুক। শিল্পীদের ঘিরে থাকা হাজারো শিক্ষার্থীর উচ্ছ্বাসও মন ছুঁয়ে গেছে সবার।
ফেসবুকে ভাইরাল ভিডিওটি মাত্র তিন দিনে দেখেছেন ১৭ লাখের বেশি মানুষ। সবার ভালোবাসা পাওয়া এই তরুণ-তরুণীর সবাই নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনএসইউ) শিক্ষার্থী। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবার সচল হওয়ার দিনটি উদযাপনে তাদের আয়োজিত ফ্ল্যাশ মব অনন্য উদাহরণ তৈরি করেছে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সামনে।
করোনার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গত ১৫ মার্চ পুরোদমে খুলে দেয়া হয় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বন্দিদশা থেকে মুক্তি উদযাপনে ওই দিনই মেতে ওঠে এনএসইউর তরুণ প্রাণ। ফ্ল্যাশ মবের মাধ্যমে সামনে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান সবাইকে জানান বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা।
এর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাল হয়েছে। দেশ-বিদেশের অসংখ্য মানুষ ভিডিওটি শেয়ার করে জানিয়েছেন ভালো লাগার কথা।
কীভাবে হলো এ আয়োজন- সে কথাই নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন আয়োজকেরা।
৬ মিনিটের একটু বেশি দৈর্ঘ্যের ফ্ল্যাশ মবটির আয়োজন করে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেমা অ্যান্ড ড্রামা ক্লাব; সংক্ষেপে যাকে বলে এনএসইউসিডিসি। ২৫ বছর ধরে ক্যাম্পাসে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে ক্লাবটি।
ক্লাবের বর্তমান প্রেসিডেন্ট আমির হামযা। তিন মাস ধরে এ দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। আয়োজনটির পেছনের গল্পটি নিউজবাংলাকে বলেন তিনি।
আমির হামযা বলেন, ‘এনএসইউতে ২০টির ওপর ক্লাব আছে। সবাই তাদের ইভেন্ট করে ক্যাম্পাসে। আমাদের একটা আপকামিং ইভেন্টের প্রমোশনের জন্য ফ্ল্যাশ মব করার পরিকল্পনা করেছিলাম। বিষয়টি নিয়ে প্রথমে কথা বলি ক্লাবের ফ্যাকাল্টি অ্যাডভাইজার প্রিয়াঙ্কা নাথ ম্যাডামের সঙ্গে।
‘তিনি আমাদের পরামর্শ দেন, ১৫ মার্চ যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় খুলছে, ওই দিন শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানাতে আমরা যেন একটি আয়োজন করি। তখন ম্যাডামের পরামর্শে ফ্ল্যাশ মবটি আমরা শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানাতেই আয়োজনের পরিকল্পনা করি।’
আমির হামযা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক ড. গৌর গোবিন্দ গোস্বামীর সঙ্গে বিষয়টির ব্যাপারে কথা বলে চূড়ান্ত অনুমতি নিয়ে কাজে লেগে পড়েন ক্লাবের সদস্যরা।
শুরু হয় রিহার্সেল পর্ব। আমির হামযা বলেন, ‘আমরা ৫ মার্চ থেকে রিহার্সেল শুরু করি। করোনার ডাবল ডোজ ভ্যাকসিনেটেড শিক্ষার্থীদের নিয়ে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলত আমাদের রিহার্সেল।’
ক্লাবে সক্রিয় প্রায় ২০০ সদস্যের মধ্যে ফ্ল্যাশ মবটিতে পারফর্ম করেছেন ৫০ থেকে ৫৫ জন। এর পেছনে কাজ করেছেন আরও ২০-২২ জনের মতো।
আয়োজনটি সবার সামনে উপস্থাপন করা হয় ১৫ মার্চ দুপুর ১২টা ৫০ মিনিট থেকে বেলা ১টার মধ্যে। কারণ এই সময়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ক্লাস থাকে না। সব শিক্ষার্থী এ সময় ক্লাসের বাইরে থাকেন।
আয়োজন শুরু হয় দুই বছর পর বিশ্ববিদ্যালয় খোলার একটি সংলাপ দিয়ে। এরপর ‘ইস্কুল খুইলাছেরে মওলা’ গানের মাধ্যমে শুরু হয় ফ্ল্যাশ মব। ‘সুন্দরী কমলা নাচে’, ‘নাসেক নাসেক’ গানের পর ফ্ল্যাশ মব শেষ হয় ‘চলো সবাই’ গানটি দিয়ে।
গান নির্বাচনের ব্যাপারে আমির হামযা বলেন, ‘অনেকেরই ধারণা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাংলা সংস্কৃতি সম্পর্কে কিছু জানে না এবং তারা এর চর্চাও করে না। এ ধারণাটি ভাঙতেই আমরা আমাদের আয়োজনে আধুনিক বাংলা গানের ব্যবহার রেখেছি।’
তিনি বলেন, “আমরা ‘নাসেক নাসেক’ গানটিও রেখেছি। এর কারণ হলো, গানটি তো হাজং ভাষার এবং এটি আমাদের একটি উপভাষা। এ ভাষাটিকে আমাদের আয়োজনের মাধ্যমে সম্মান জানাতেই এ প্রয়াস।”
শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে তেমন বেগ পেতে হয়নি সিডিসিকে। হামযা জানান, চেক করার জন্য একটু সাউন্ড বাজতেই সবাই একত্রিত হয় পরিবেশন স্থলে।
আয়োজনটির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. ইসমাইল হোসেন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক এ বি এম রাশেদুল হাসান প্রশংসা করেছেন বলে জানান সিডিসির প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ‘কয়েকজনের নাম না বললেই না। আয়োজনের কোরিওগ্রাফি করেছেন হৃদি, রিয়াজ, রিফাত। অনুশীলন কক্ষে তদারকি করেছেন ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ধ্রুব মিত্র, সহ-সভাপতি শরিফ আরাফাত ও কোষাধ্যক্ষ উম্মে হাবিবা জেবিন। জনসংযোগের দায়িত্বে ছিলেন যুগ্ম সম্পাদক নাসিফ বিন হাসনাত।’