একটা সময় ছিল যখন বছর শেষ হতে না হতেই আমরা খোঁজ করতাম নতুন বছরের ক্যালেন্ডার। সে ক্যালেন্ডারে আঁকা থাকত নানা ধরনের দৃশ্যপট। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নানা রঙে সে ক্যালেন্ডার বাজারে ছাড়ত। শুধু ক্যালেন্ডার নয়, বই, খাতা থেকে শুরু করে নানান ধরনের কাজের একমাত্র ভরসা ছিল অ্যানালগ প্রিন্টিং।
সময়ের পরিক্রমায় প্রিন্টিংয়ের ধারণা পাল্টেছে। আগে একটা প্রিন্ট করাতে যেখানে ছুটতে হতো কমপক্ষে জেলা শহরে, সেখানে এখন চাইলে ঘরে বসেই যেকোনো কিছু প্রিন্ট করা যাচ্ছে। এমন সব সুবিধা নিয়ে প্রিন্টিং ডিজিটালাইজড করার উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছেন এসএম আল মাহমুদ অনিক।
দেশে কয়েক দশকের প্রিন্টিংয়ের ইতিহাস হলেও তার ধারণা কিছুটা ব্যতিক্রম। দেশের প্রেক্ষপটে প্রিন্টিংয়ের ডিজিটালাইজেশন খুব একটা চোখে পড়ে না। কিন্তু বাধা থাকলেও তরুণ উদ্যোক্তা অনিক সেটা করছেন।
পড়ালেখা শেষ করে চাকরির খোঁজ না করে তিনি গড়ে তুলেছেন অনলাইন প্রিন্টিং প্রতিষ্ঠান ‘প্রিন্টএগ্রাফি’।
নিজেদের অফিসে প্রিন্টএগ্রাফির কর্মীরা। ছবি: সংগৃহীত
শুধু প্রিন্টিং নয়, পাশাপাশি প্যাকেজিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, ভিডিওগ্রাফি ও ওয়েব ডিজাইনসহ অনলাইনভিত্তিক বেশ কিছু সেবা দিচ্ছে তার প্রতিষ্ঠান।
অনিক জানান, ২০১৮ সালে তিনিসহ কয়েকজন তরুণ শুরু করেন প্রিন্টিং নিয়ে কাজ। সেটা পুরোটাই অনলাইনভিত্তিক। ধীরে ধীরে পরিসর বেড়েছে।
তিনি বলেন, ‘শুরুতে আমাদের নানা বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। আমাদের দেশে এখনও প্রিন্টিংয়ের বিষয়টি কম্পিউটারাইজড বা ডিজিটাল হয়ে ওঠেনি। ফলে প্রথম দিকে গ্রাহকের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়েছে।’
সেসব সমস্যা নিজেদের মতো করে কাটিয়ে উঠছেন তারা। এখন প্রিন্টএগ্রাফিতে ২৩ তরুণ কাজ করছেন বলে জানান অনিক।
পথচলার তিন বছরের মধ্যেই অনিকের প্রিন্টএগ্রাফি দেশের টপ ব্র্যান্ডসহ সরকারি বেশ কিছু কাজ করে সফলতা পেয়েছে বলে জানান তিনি।
অনিক বলেন, ‘খুব ছোট পরিসরে কাজ শুরু করেছিলাম। এত অল্প সময়ে এত বেশি সাড়া পাব ভাবিনি। এখন আমরা শুধু দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই কাজ করছি না, আমাদের কাজ এখন যাচ্ছে বিদেশেও।’
এরই মধ্যে লন্ডনে বেশকিছু প্রিন্টিং পণ্য রপ্তানি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
অনিক জানান, তারা ক্যালেন্ডার, নোট-প্যাড, খাম, প্যাকেজিং, ভিজিটিং কার্ডসহ প্রিন্টিয়ের যেকোনো পণ্য খুচরা ও পাইকারিভাবে ছাপানোর কাজ করেন। সেটা অর্ডার থেকে শুরু করে কাজ, সবই হয় অনলাইনে।
‘চাইলে ক্রেতারা নিজেরা ডিজাইন দিতে পারেন। যদি চান, আমরাও তাদের মতো করে ডিজাইন করে দিই। এ জন্য আমাদের রয়েছে গ্রাফিক্স ডিজাইনার।’
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সঙ্গে অনিক ও অন্যরা। ছবি: সংগৃহীত
প্রিন্টএগ্রাফির কাজ লন্ডনেও যাচ্ছে বলে জানান অনিক। বলেন, ‘প্রিন্টিং কোনো কিছু যে রপ্তানি করা যায় সেটা আমরা জানতাম না। কিন্তু যখন প্রথম আমরা একটি অর্ডার পাই লন্ডন থেকে, সেই কাজটা করে তাদের পাঠাই। বিমানে করে দেশটিতে আমাদের প্রিন্টিংয়ের কাজ গেছে। তারপরও তাদের অনেক অর্থ সাশ্রয় হয়েছে।’
ভবিষ্যতে বিদেশ থেকে যেন আরও কাজের অর্ডার আসে সে জন্য লন্ডনে একটি অফিস খুলেছে প্রিন্টএগ্রাফি।
উদ্যোক্তা হলেও সমাজসেবামূলক কাজও করেন অনিক। ‘চিলড্রেন'স হ্যাভেন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন তিনি। যেখানে সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের শিক্ষা ও পুনর্বাসনে সহযোগিতা করা হয়।