বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ফেসবুকের দেশি বিকল্প দিয়ে কী হবে

  •    
  • ১৩ আগস্ট, ২০২১ ০৮:৩৭

ফেসবুকের বিকল্প প্ল্যাটফর্ম তৈরির উদ্যোগের পেছনে দুটি প্রধান যুক্তি তুলে ধরেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এর একটি হলো তথ্যের নিরাপত্তা, অপরটি এ মাধ্যমে বিজ্ঞাপনের অর্থ দেশে রাখা।

ফেসবুকের বিকল্প দেশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের উদ্যোগে নির্মাণাধীন প্ল্যাটফর্মটির নাম দেয়া হচ্ছে ‘যোগাযোগ’। এ ছাড়া ভিডিও জুম ও হোয়াটসঅ্যাপের বিকল্পও আসছে।

তবে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্ম থাকতে একটি দেশি প্ল্যাটফর্ম কী কাজে লাগবে? তা ছাড়া ফেসবুক-টুইটারের মতো বিশাল টেক জায়ান্টের সামনে দেশি উদ্যোগ কতটুকু টিকবে?

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশেরই নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আছে। নিজেদের স্বকীয়তা অর্জন ও তথ্যের নিরাপত্তার জন্য এটা প্রয়োজন।

আইসিটি বিভাগ বলছে, এর মাধ্যমে দেশীয় উদ্যোক্তারা তথ্য-উপাত্ত ও যোগাযোগের জন্য নিজস্ব অনলাইন মার্কেটপ্লেস ও গ্রুপ তৈরি করতে পারবে। উদ্যোক্তাদের বিদেশনির্ভর হতে হবে না। নতুন প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করে নারীসহ নতুন উদ্যোক্তারা উপকৃত হবেন।

‘যোগাযোগ’ ছাড়াও একই বিভাগ ভিডিও কনফারেন্স প্ল্যাটফর্ম ‘জুম’-এর বিকল্প ‘বৈঠক’ তৈরি করেছে। একই সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপের বিকল্প হিসেবে ‘আলাপন’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হচ্ছে।

প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, এ রকম উদ্যোগের আগের অভিজ্ঞতা সুখকর না হলেও দেশে এমন উদ্যোগ নিতে হবে। অন্য কোনো অ্যাপের সমকক্ষ হতে না পারলেও এর মাধ্যমে দেশের আইটি খাত শক্তিশালী হবে। এ খাতে বিশেষজ্ঞ তৈরি হবে। একসময় ফেসবুক বা এ ধরনের মাধ্যমগুলো যদি এ দেশে সেবা দেয়া বন্ধ করে দেয়, তখন দেশি অ্যাপ দিয়ে সাময়িকভাবে তা সামাল দেয়া যাবে। সব দেশেরই এ সক্ষমতাগুলো তৈরি হওয়া উচিত।

তবে অনেকেই বলছেন, দেশে প্রচুর আইটি উদ্যোগ শুরু হয়ে পরে হারিয়ে যায়। এর আগে দেশে কয়েক শ অ্যাপ তৈরি হলেও তার থেকে হাতে গোনা কয়েকটি মাত্র টিকে আছে। এতে একদিকে অর্থের অপচয় হচ্ছে, অপর দিকে আস্থার জায়গাও নষ্ট হচ্ছে। তাই সরকারের নতুন এসব উদ্যোগও শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

এ ব্যাপারে নিউজবাংলা যোগাযোগ করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সঙ্গে। তিনি ফেসবুকের বিকল্প প্ল্যাটফর্ম তৈরির উদ্যোগের পেছনে দুটি প্রধান যুক্তি তুলে ধরেন। এর একটি হলো তথ্যের নিরাপত্তা, অপরটি এ মাধ্যমে বিজ্ঞাপনের অর্থ দেশে রাখা।

প্রতিমন্ত্রী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ফেসবুক আমাদের ৭২ হাজার ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করছে এবং তাদের ডেটাবেজে সংরক্ষণ করছে। ফলে আমাদের ব্যক্তি, রাষ্ট্র, জাতীয় নিরাপত্তাব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়ছে। সে জন্য আমরা বলছি, আমাদের নিজস্ব সোশ্যাল ফ্লাটফর্ম থাকলে, আমাদের তথ্যগুলো নিজেদের দেশে নিরাপদ থাকবে।’

পলক বলেন, ‘বাণিজ্যিক কারণ হচ্ছে, হাজার হাজার কোটি টাকার বিজ্ঞাপন। আমাদের দেশের মধ্যেই ইউজারের কাছে পণ্য পৌঁছানোর জন্য ফেসবুকে আমরা বিজ্ঞাপন দিচ্ছি। এতে বিদেশে চলে যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। আমাদের নিজস্ব প্লাটফর্ম থাকলে সেখানে বিজ্ঞাপন দিলে অর্থ সাশ্রয় করা সম্ভব হবে, বিজ্ঞাপনের টাকা দেশের ভেতরেই রাখতে পারব। বিদেশে অর্থটা চলে যাবে না।’

নতুন উদ্যোগ টেকে না কেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তির দুনিয়ায় অসংখ্য ইনোভেটিভ প্রোডাক্ট আসবে, হারিযে যাবে, নতুন করে আরও আসবে। সিলিকন ভ্যালির ৬০-৭০ বছরে ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ৯০ শতাংশ প্রযুক্তি প্রোডাক্ট ফেল করে, ১০ শতাংশ সাকসেস হয়। কিন্তু ১০ শতাংশের যে সাফল্য তা ব্যর্থ ৯০ শতাংশের ক্ষতির পরিমাণকে ছাড়িয়ে যায়।

‘আমাদের ইনোভেশন কালচার বা স্টার্টআপ কালচার মাত্র ৫-৬ বছরের। আগামী ১৫ থেকে ২০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে একটা ইনোভেশন ইকোসিস্টেম গড়ে উঠবে, কালচার গড়ে উঠবে। হাজারো উদ্যোগ আসবে, তার মধ্যে ১০টা বা ২০টা টিকবে, যা বাকিগুলোর ক্ষতি অনেক গুণে পুষিয়ে দেবে।’

ফেসবুকের হাজার কোটি টাকার বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ২০১৯ সালের এক প্রতিবেদন মতে, আগের ৫ বছরে অনলাইন বিজ্ঞাপন বাবদ দেশের তিন মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন, বাংলালিংক ও রবি সর্বমোট ১০৪ কোটি ৯ লাখ ডলারের সমপরিমাণ ৮ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা খরচ করেছে। বিজ্ঞাপন প্রচার বাবদ ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ এই অর্থ আদায় করেছে। ওই সময় অনলাইনে বিজ্ঞাপন বাবদ বাংলাদেশ সরকার রাজস্ব হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পেয়েছে ১৩৩ কোটি টাকা।

এ তিন মোবাইল অপারেটরের বাইরেও কয়েক হাজার প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্যের প্রসারের জন্য অনলাইনে বিজ্ঞাপন প্রচার করে থাকে, যার আয় সরকারের নাগালের বাইরে থেকে যায়। ধারণা করা হয়, বছরে এর পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি।

ফেসবুক ইনভেস্টর রিলেশনস ওয়েবসাইটের এক তথ্য মতে ২০১৯ সালের এক প্রান্তিকে (তিন মাসে) বাংলাদেশ থেকে ফেসবুকের আয় ৩ হাজার কোটি টাকা। যার পুরোটাই বিজ্ঞাপনের আয়।

পণ্যের প্রচারে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ফেসবুকে বিজ্ঞাপন প্রচার করে। বাংলাদেশ থেকেও বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকার বিজ্ঞাপন যায় ফেসবুকে। বিজ্ঞাপনসহ বিভিন্ন খাতের আয় থেকে বাংলাদেশ সরকারকে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট পরিশোধের জন্য ফেসবুক গত ১৩ জুন নিবন্ধন নেয়। ১৪ জুন থেকে ৩০ জুন, এ ১৭ দিনের আয় থেকে ভ্যাট হিসাবে ২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে ফেসবুক।

ফেসবুক ছাড়াও গুগল, অ্যামাজন ও মাইক্রোসফট ভ্যাট নিবন্ধন নিয়েছে। তবে তা থেকে ভ্যাট বাবদ কিছু রাজস্ব আয় হলেও বাংলাদেশ এ অর্থ দেশেই রাখতে চায়।

তথ্যের নিরাপত্তারও আভাব

২০২০ সালেই বিশ্বের ৫৩ কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারীর পরিচয়, ব্যক্তিগত তথ্য এবং ফোন নম্বর ফাঁস হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের ৩৮ লাখেরও বেশি ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্য রয়েছে।

ব্লিপিংকম্পিউটারডটকম নামের একটি সাইটে সাইবার নিরাপত্তাসংক্রান্ত এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের জুন মাস থেকে হ্যাকারদের একটি ফোরামে এসব তথ্য প্রকাশিত হতে শুরু করে। ফোরাম সদস্যদের মধ্যে এই ডেটাবেজ বেচাকেনা শুরু হয়। ফাঁস হওয়া ডেটাবেজে রয়েছে ব্যবহারকারীর ফেসবুক আইডি, মোবাইল ফোন নম্বর, ই-মেইল ঠিকানা, জন্মতারিখ, লিঙ্গ, বৈবাহিক অবস্থা, অবস্থানের ঠিকানা, পেশা ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার মনে হয়, ফেসবুকের বিকল্প কিছু করা মানে ফেসবুক প্রয়োজন নেই, এমন নয়। ফেসবুকও থাকবে, আমাদের নিজস্ব একটা সোশ্যাল মিডিয়াও থাকবে।’

ফেসবুকের বিকল্প ‘যোগাযোগ’ নিয়ে তিনি বলেন, ‘ফেসবুকের বিকল্প “যোগাযোগ” বা হোয়াটসঅ্যাপের বিকল্প বা ম্যাসেঞ্জারের বিকল্পও হতে পারে। এ ক্ষেত্রে এ ভ্যালুটা দিতে হবে, সিসিউরিটি দিতে হবে যে, আমার ডেটা দেশের বাইরে যাবে না। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, আমাদের ডেটা তো আরও আগে লিক হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে যদি প্রাইভেসি এনশিউর করা না হয়, কোয়ালিটি অব সার্ভিস যদি এনশিউর করা না হয়, তাহলে এসব উদ্যোগের কোনো মানে হয় না, বৃথা যাবে।

‘এসব অ্যাপের আসল কাজ ব্যাকগ্রাউন্ডে। কোয়ালিটি যদি প্রতিনিয়ত ইমপ্রুভ না করে, কেউ সেটা ইউজ করবে না। গুগলেরও একটা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম “গুগল প্লাস” আছে। এত বড় এটা জায়ান্ট, তারটাই কেউ ইউজ করে না। আমাদেরটা কেন ইউজ করবে? এ জন্যই কাস্টমাইজড বা বিশেষ কিছু দিতে হবে।’

অন্য দেশের কিছু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রচলিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পাশাপাশি স্থানীয় নিজস্ব অ্যাপও রয়েছে। সম্প্রতি ফেসবুকের বিকল্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তৈরি করেছে ভারত, নাম ‘এলিমেন্টস’। রাশিয়ায় গুগলের বিকল্প রয়েছে ‘ইয়ানডেস্ক’। ফেসবুকের বিকল্প রয়েছে ভিকনটাকটে (ভিকে)। চীনে ফেসবুক নিষিদ্ধ। দেশটির তিনটি জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্ম ‘ওয়েবো’, ‘উইচ্যাট’ ও ‘বাইদু’। ব্রাজিলে রয়েছে ‘ওরকাট’। আর্জেন্টিনায় রয়েছে ‘তারিঙ্গা’, জাপানে ‘মিক্সি’, দক্ষিণ কোরিয়ায় ‘সাইওয়ালর্ড’।

এ বিভাগের আরো খবর