চীনা ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ টিকটক-এর ফাঁদে ফেলে নারী পাচারের ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর অ্যাপটি বন্ধে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
বুধবার দুপুরে কারা অধিদপ্তরে কারাবন্দি পোষ্যদের বঙ্গবন্ধু বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে এই আয়োজন করা হয়।
মন্ত্রী বলেন, ‘তরুণ প্রজন্মকে বিপথগামী না করতে ভিডিও অ্যাপ টিকটক বন্ধে আলোচনা চলছে।’
উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীসহ সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সম্প্রতি ভারতে বাংলাদেশি তরুণীকে যৌন নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর টিকটক-এর ফাঁদের মাধ্যমে নারী পাচারের একটি সংঘবদ্ধ চক্রের খোঁজ পাওয়া যায়। বাংলাদেশ ও ভারতে এই চক্রের বহুজন গ্রেপ্তার হয়েছে, যার মধ্যে নারীও আছেন।
কেবল ভারত নয়, মালয়েশিয়া ও দুবাইয়েও নারী পাচারের তথ্য মিলেছে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে মানবাধিকার সংগঠন ‘ল অ্যান্ড লাইফ’ ফাউন্ডেশন গত ১৯ জুন টিকটক ছাড়াও বিগো লাইভ, পাবজি, ফ্রি ফায়ার গেম, লাইকি এবং এ ধরনের অ্যাপগুলো বন্ধে সরকারকে আইনি নোটিশ পাঠায়।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব, বিটিআরসির চেয়ারম্যান, শিক্ষা সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, স্বাস্থ্য সচিব এবং পুলিশ প্রধানকে ই-মেইলযোগে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়, পাবজি এবং ফ্রি ফায়ারের মতো গেমে বাংলাদেশের যুবসমাজ এবং শিশু-কিশোররা ব্যাপকভাবে আসক্ত হয়ে পড়েছে। এর ফলে সামাজিক মূল্যবোধ, শিক্ষা, সংস্কৃতি বিনষ্ট হচ্ছে। এসব গেমস যুবসমাজকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
ভারতে বাংলাদেশি তরুণীকে নির্যাতনের ভিডিও ফাঁসের পর টিকটক ব্যবহার করে নারীদের ফাঁদে ফেলে পাচারের বিষয়টি সামনে আসে
অন্যদিকে টিকটক, লাইকি অ্যাপস ব্যবহার করে দেশের শিশু-কিশোর এবং যুবসমাজ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে। অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে এবং সারা দেশে কিশোর গ্যাং কালচার তৈরি হচ্ছে। টিকটক অনুসারীরা বিভিন্ন গোপনীয় জায়গায় ‘পুল পার্টির’ নামে অনৈতিক বিনোদন যৌন কার্যক্রমে লিপ্ত হচ্ছে।
এ ছাড়া সম্প্রতি নারী পাচারের ঘটনা এবং বাংলাদেশ থেকে দেশের বাইরে অর্থ পাচারের ঘটনায়ও টিকটক, লাইকি এবং বিগো লাইভের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক এবং দেশের ও জনস্বার্থের পরিপন্থি। এটি শৃঙ্খলা ও মূল্যবোধ পরিপন্থি।
এনআইডির দায়িত্ব স্বরাষ্ট্রে নেয়া যথার্থ
এ সময় এক প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের দায়িত্ব নিয়ে নেয়ার বিষয়েও কথা বলেন।
২০০৭ সালে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারে আমলে দুই বছরে ছবিসহ ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্র করা হয়। তখন থেকে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ই এই তথ্যভাণ্ডার এর দায়িত্বে ছিল।
তবে সম্প্রতি এনআইডির নিয়ন্ত্রণ স্বরাষ্ট্রে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা এখনও এতে সম্মতি দেননি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দেয়া যথার্থ হয়েছে। এ বিষয়ে যেসব কথা হচ্ছে তা একেবারেই অবান্তর।’
তিনি বলেন, ‘আমরা জেনে-বুঝেই সবার মতামত নিয়ে এনআইডি সেবাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে দিয়েছি। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শও নেয়া হয়েছে এ বিষয়ে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে এলে জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে জটিলতা হবে না।’
অনুষ্ঠানে সারা দেশের ৫৯টি কারাগারে সর্বমোট ১০০০ জন কারাবন্দির সন্তানদের বঙ্গবন্ধু বৃত্তি দেয়া হয়।
দেশের সব কারাগারের কর্মীরা ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে সংযুক্ত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান মামুন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজি মো. সেলিম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের সচিব মোকাব্বির হোসেন।