ব্যবসায় একচেটিয়া আচরণের অভিযোগে অনলাইন শপিং জায়ান্ট আলিবাবাকে রেকর্ড ২.৮ বিলিয়ন ডলার জরিমানা করেছে চীন। ধনকুবের ব্যবসায়ী এই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে উন্মুক্ত চিঠিও প্রকাশ করেছে।
দেশটির বাজার নিয়ন্ত্রকদের তদন্তের ভিত্তিতে অনলাইনে পণ্য কেনাবেচার জনপ্রিয় প্লাটফর্মটিকে এ জরিমানা করা হয়।
জ্যাক মা কে যে পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হবে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা হিসাবে)।
চীনে এর আগে কখনও কাউকে এত বেশি অর্থ জরিমানা করা হয়নি।
শনিবার চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সিনহুয়ার বরাত দিয়ে সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বিশেষ চুক্তি’র (দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে যে কোনো একটিকে বেছে নেয়া) আওতায় ব্যবসায়ীদের প্রতিদ্বন্দ্বী ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে পণ্য বিক্রি করা থেকে বিরত রাখত আলিবাবা। তদন্তে বাজার নিয়ন্ত্রকরা অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় এ জরিমানা করা হয়।
এ জরিমানা মেনেও নিয়েছেন আলিবাবা। শনিবার একটি উন্মুক্ত চিঠিতে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, তারা তদন্তে সহযোগিতা করেছে এবং এই দণ্ডকে ‘আন্তরিকতা’র সঙ্গে গ্রহণ করেছে।
ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘সুষ্ঠু সরকারি ব্যবস্থাপনা ও সহযোগিতা ছাড়া আলিবাবা আজকের অবস্থান অর্জন করতে পারত না। সমালোচনামূলক তদারকি, সহনশীলতা এবং সমর্থন আমাদের উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এ জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।’
দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের অংশ হিসাবে আলিবাবা আরও বেশি দায়িত্ববান হবে বলেও চিঠিতে বলা হয়।
রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, জরিমানাটি ২০১৯ সালে চীনে আলিবাবার মোট পণ্য বিক্রির অর্থের চার শতাংশের সমান। এর আগে সর্বোচ্চ জরিমানার রেকর্ড ছিল ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের চিপমেকার কোয়ালকমকে করা ৯৭৫ মিলিয়ন ডলার।
বিশেষ নিয়ন্ত্রণ অভিযানের অংশ হিসেবে বেইজিং সাম্প্রতিক মাসগুলোতে প্রযুক্তিখাতের জায়ান্টদের ওপর চাপ বাড়িয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এ অভিযানকে ২০২১ সালে দেশটির অন্যতম অগ্রাধিকার হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে অনলাইন কোম্পানিগুলোকে নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা ত্বরান্বিত করতে গত মাসে কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বানও জানান শি।
চীনের শীর্ষস্থানীয় এবং অন্যতম সফল বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আলিবাবার সহপ্রতিষ্ঠাতা কিংবদন্তি উদ্যোক্তা জ্যাক মা। এমন একটি প্রতিষ্ঠানকে রেকর্ড জরিমানার মাধ্যমে চীনা নিয়ন্ত্রকরা দেশের বৃহত্তম কোম্পানিগুলোকে তাদের রাশ টানার স্পষ্ট বার্তা পাঠাল।
বেইজিং দীর্ঘদিন ধরেই টেক প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক খাতে একচেটিয়া প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। শিল্পকে দুর্বল করে দেয়া প্রভাব থেকে মুক্তির জন্য অনেকদিন ধরেই চেষ্টা করছেন দেশটির কর্মকর্তারা।
আলিবাবার পর এখন অন্য টেক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়েও পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে।
এরইমধ্যে দেশটির টেনসেন্ট হোল্ডিংস লিমিটেড এবং কৃষিভিত্তিক প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্ম পিন্ডুডুর কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এ ছাড়া টিকিটকের মালিক এবং সার্চ ইঞ্জিন বাইডুকে একচেটিয়া আচরণের জন্য জরিমানা করা হয়েছে।