২০১৯ সালের মে মাসে অন্যতম বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রে কালো তালিকাভুক্ত হয় চীনা জায়ান্ট হুয়াওয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের পর এক এক করে পশ্চিমা অন্য দেশেও চাপে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি।
কিন্তু করোনার মধ্যে সেই চাপ সামলিয়ে বরং প্রবৃদ্ধিতে চমক দেখিয়েছে হুয়াওয়ে।
বিজনেস পারফরমেন্স, ভবিষ্যতের পরিকল্পনা ও আর্থিক পূর্বাভাস নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে ২০২০ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে হুয়াওয়ে।
প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠানটি আয় করেছে প্রায় ১১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা, যা বছরপ্রতি প্রবৃদ্ধি হিসাবে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। নিট মুনাফা ছিল প্রায় ৮৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যা ২০১৯ সালের তুলনায় ৩ দশমিক ২ শতাংশ বেশি।
হুয়াওয়ের ডেপুটি চেয়ারম্যান কেন হু প্রতিবেদন প্রকাশ করার সময় বলেন, ‘নানা প্রতিকূলতা থাকলেও গত বছর আমরা শক্ত অবস্থানে ছিলাম।
‘আমাদের ক্রেতাদের জন্য ভ্যালু তৈরি, মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও বিশ্বজুড়ে সামাজিক প্রবৃদ্ধিতে ধারাবাহিকভাবে উদ্ভাবন করে গেছি।’
হুয়াওয়ে বৈশ্বিক চাপে পড়ে কয়েকটি দেশে তাদের ব্যবসায়িক পরিসর ছোট করে আনে। বাংলাদেশেও প্রতিষ্ঠানটি তাদের মোবাইল বিভাগের কার্যক্রম গুটিয়ে নেয় ২০২০ সালেই।
তবে করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে চীনা প্রতিষ্ঠানটি নেটওয়ার্কিং খাতে বেশি বিনিয়োগ করেছে। বিশ্বব্যাপী ফাইভজি প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে হুয়াওয়ে এখনো প্রথম সারির প্রতিষ্ঠান হিসেবেই পরিচিত। আর সে খাতেই বেশি প্রবৃদ্ধি এসেছে প্রতিষ্ঠানটির।
প্রতিবেদন বলছে, গত বছর লকডাউনের মধ্যে হুয়াওয়ে ক্যারিয়ার বিজনেস ১৭০টির বেশি দেশে দেড় শতাধিক নেটওয়ার্কে স্থিতিশীল কার্যক্রম নিশ্চিত করেছে।
এই নেটওয়ার্ক বিশ্বজুড়ে মানুষদের টেলিওয়ার্ক, অনলাইন লার্নিং ও অনলাইন শপিং সহজ করতে ভূমিকার রেখেছে বলে জানানো হয়েছে।
আর্থিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্যারিয়ার সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে হুয়াওয়ে শক্তিশালী কানেক্টিভিটি অভিজ্ঞতা নিশ্চিতে সহায়তা করেছে। বিশ্বের বড় শহরগুলোতে থার্ড পার্টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালিত ফাইভজি অভিজ্ঞতা সমীক্ষা অনুযায়ী, হুয়াওয়ে নির্মিত ক্যারিয়ারগুলোর ফাইভজি নেটওয়ার্ক গ্রাহক অভিজ্ঞতা নিশ্চিতে শীর্ষ অবস্থানে ছিল।
এ ছাড়া কয়লা খনি, ইস্পাত উৎপাদন, বন্দর এবং উৎপাদনসহ ২০টির বেশি খাতে তিন হাজারের বেশি ফাইভজি উদ্ভাবন প্রকল্প বাস্তবায়নে হুয়াওয়ে বিশ্বব্যাপী ক্যারিয়ারগুলোর সঙ্গে কাজ করেছে।
বিভিন্ন ক্ষেত্রের সমস্যার উদ্ভাবনী সমাধান দিতে গত বছর হুয়াওয়ে এন্টারপ্রাইজ বিজনেস ‘অফ অল, বাই অল, অ্যান্ড ফর অল’ ডিজিটাল ইকোসিস্টেম তৈরিতে আরও বিনিয়োগ করেছে।
ফলে হুয়াওয়ে ক্লাউড-ভিত্তিক এইআই-অ্যাসিসটেড ডায়াগনোস্টিক সল্যুশন আনতে পেরেছে। সল্যুশনটি হাসপাতালগুলোর অবকাঠামো সংশ্লিষ্ট প্রতিবন্ধকতা কমাতে সহায়তা করেছে।
পাঁচ কোটির বেশি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষার্থীর জন্য ক্লাউড-ভিত্তিক অনলাইন লার্নিং প্ল্যাটফর্ম উন্মোচনে হুয়াওয়ে বিভিন্ন অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করেছে। বাংলাদেশেও ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সঙ্গে কাজটি শুরু করেছে হুয়াওয়ে।
নতুন উদ্ভাবন ও ব্যবসায়িক প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে নির্দিষ্ট অঞ্চলভিত্তিক না হয়ে সারা বিশ্বকেই প্রতিষ্ঠানটি গুরুত্ব দিয়েছে বলে আর্থিক প্রতিবেদনে জানায় হুয়াওয়ে।