বিদ্যুৎচালিত বিলাসবহুল গাড়ি বাজারে আনতে যাচ্ছে চীনের সর্ববৃহৎ গাড়িনির্মাতা প্রতিষ্ঠান গিলি। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পরিবেশবান্ধব গাড়িনির্মাতা প্রতিষ্ঠান অপ্রতিদ্বন্দ্বী টেসলাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা প্রতিষ্ঠানটির।
এ লক্ষ্যে বিলাসবহুল ভলভো আর লোটাসের পর গাড়ির বাজারে জিক্র নামে নতুন একটি ব্র্যান্ডকে তুলে ধরবে গিলি। মঙ্গলবার এ ঘোষণা দেয় চীনা প্রতিষ্ঠানটি। জানায়, চীনের বাজারে বিদ্যুৎচালিত যানবাহনের চাহিদা মেটাতে সক্ষম জিক্র।
গিলি জানিয়েছে, নতুন ব্র্যান্ডটির আওতায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন বিদ্যুৎচালিত গাড়ি উৎপাদন করা হবে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরেই বিক্রির জন্য বাজারে আসতে পারে এসব গাড়ি।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে এক প্রদর্শনীতে ‘জিরো কনসেপ্ট’ভিত্তিক একটি গাড়ি আনে গিলি মালিকানাধীন লিংক অ্যান্ড কোম্পানি। জিক্র ব্র্যান্ডের প্রথম মডেলের গাড়ি ওই ‘জিরো কনসেপ্ট'ভিত্তিকই হবে, জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অর্থাৎ এসব গাড়ি থেকে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা হবে শূন্য।
গিলির মালিকানাধীন বিভিন্ন ব্র্যান্ড অবশ্য আগেই বিলাসবহুল বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদন করেছে।
ভলভো কারসের পোলেস্টার এ ধরনের গাড়ি তৈরি করছে। সুইডেনে প্রধান কার্যালয় হলেও ভলভোর গাড়ি উৎপাদিত হয় চীনে। লোটাসের বড় অংশের মালিকানা কিনে নিয়েছে গিলি। বিদ্যুৎচালিত সুপারকার এভিজা নিয়ে কাজ করছে লোটাস।
এ ছাড়া লন্ডনের কালো ক্যাব নির্মাতা প্রতিষ্ঠান লন্ডন ইভি কোম্পানি পরিচালনা করছে গিলি। মার্সিডিজ-বেঞ্জের মালিক ডেইমলাতেও অংশীদারিত্ব রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।
সম্প্রতি পেট্রোল ও বৈদ্যুতিক ব্যাটারি- দুটির মাধ্যমেই শক্তি সংগ্রহ করে চলতে সক্ষম প্লাগ-ইন হাইব্রিড ট্যাক্সি তৈরির কাজ হাতে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
তবে নিজ দেশে গিলির বিদ্যুৎচালিত গাড়ির প্রথম ব্র্যান্ড হবে জিক্র।
চীনা প্রতিষ্ঠান নিও, এক্সপেং, লি অটোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে হবে জিক্রকে। ধারণা করা হচ্ছে, আসল লড়াই হবে টেসলার সঙ্গে। গত বছর চীনে বিদ্যুৎচালিত গাড়ির মধ্যে সর্বাধিক বিক্রিত ছিল টেসলার মডেল থ্রি।
গত সপ্তাহে জাপানের নিসানের চীনা অংশীদার দংফেং মোটর আর ফরাসি প্রতিষ্ঠান পিএসএ প্যুজো সিট্রোয়েন যৌথ ঘোষণায় জানায়, জুলাইয়ে চীনা গ্রাহকদের বিদ্যুৎচালিত ভোয়া গাড়ি সরবরাহ শুরু করবে তারা।
২০২৫ সালের মধ্যে চীনের সড়কে পাঁচ ভাগের কমপক্ষে এক ভাগ গাড়ি যেন বিদ্যুৎচালিত হয়, সে লক্ষ্যে কাজ করছে বেইজিং।
প্রাথমিকভাবে জিক্র নিয়ে চীনের বাজারে আধিপত্য তৈরি লক্ষ্য হলেও ধীরে ধীরে সারা বিশ্বের চাহিদা মেটাতে কাজ করতে চায় গিলি। এ জন্য লিংলিং টেকনোলজি নামে নতুন একটি প্রিমিয়াম ব্র্যান্ড তৈরির কাজে হাতও দিয়ে ফেলেছে প্রতিষ্ঠানটি। লিংলিংয়ের কার্যালয় হবে চীনের পূর্বাঞ্চলীয় হেফেই শহরে।
২০১৯ সালে ১৬ লাখ ৬০ হাজার গাড়ি বিক্রি করে গিলি। ২০২০ সালে মহামারি পরিস্থিতির মধ্যে আয় কিছুটা কমলেও বিক্রি হয় ১৩ লাখ ২০ হাজার গাড়ি।
কী বলছে টেসলা
প্রতিদ্বন্দী হলেও গিলির এ উদ্যোগকে অবশ্য স্বাগতই জানিয়েছেন টেসলার প্রধান এলন মাস্ক।
গিলির ঘোষণার পরপরই চীনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তি বলেন, কার্বন নিঃসরণ কমাতে চীনা সরকারের পাঁচ বছর মেয়াদী অর্থনৈতিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এ ধরনের উদ্যোগ প্রশংসনীয়।
চীনে সেনা ও গুরুত্বপূর্ণ পদধারী শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য টেসলার গাড়ি ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে বেইজিং। টেসলার কারণে তথ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে বলে শঙ্কা চীনের।
এ ব্যাপারে আশ্বস্ত করতে গত এক সপ্তাহে চীনের বেশ কয়েকজন রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে দফায় দফায় কথা বলেছেন মাস্ক। জানিয়েছেন, চীন বা অন্য কোনো দেশে নিজেদের বিক্রিত গাড়ির মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য কখনোই যুক্তরাষ্ট্রের সরকারকে পাচার করবেন না তিনি।
গাড়িতে সংযুক্ত ক্যামেরার মাধ্যমে তথ্য চুরির শঙ্কা কতটা, সে প্রশ্নেই উদ্বিগ্ন সেনাবাহিনী।
২০২০ সালে টেসলার মোট বৈশ্বিক আয় ছিল ৩ হাজার ১৫০ কোটি ডলার, যার পাঁচ ভাগের এক ভাগই এসেছে চীন থেকে।