দুই বছরের মধ্যে মহাকাশে উচ্চ প্রযুক্তির ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২’ পাঠানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। এই ‘হাইব্রিড স্যাটেলাইট’ যোগাযোগের পাশাপাশি আবহাওয়া, সামরিক বা নিরাপত্তাসংক্রান্ত কাজে ব্যবহার করা যাবে।
স্যাটেলাইটটির ধরন ঠিক করতে পরামর্শকও নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল)। এটির নির্মাণ ও উৎক্ষেপণের পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘প্রাইস ওয়াটার হাউজ কুপার্স অ্যাডভাইজরি, এসএএস’।
মঙ্গলবার রাজধানীর বাংলামোটরে বিএসসিএলের কার্যালয়ে ভার্চুয়াল মাধ্যমে দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এ বিষয়ক চুক্তি সই হয়। বিএসসিএলের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী।
চুক্তি শেষে বিএসসিএল চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ জানালেন, ২০২৩ সালের মধ্যে মহাকাশে থাকবে দেশের দ্বিতীয় স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু -২’।
‘স্যাটেলাইটটির ধরন নির্ধারণে আমরা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিয়েছি। তাদেরকে তিন মাস সময় দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে তারা আমাদের কে বিস্তারিত জানাবে।’
এর আগে ২০১৮ সালের ১২ মে মহাকাশে পাঠানো হয় দেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু-১’। আর এর মধ্য দিয়ে স্যাটেলাইট প্রেরণকারী ৫৭টি দেশের একটি হওয়ার গৌরব অর্জন করে দেশ। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট খরচ হয় দুই হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা।
‘বঙ্গবন্ধু-১’ মুলত একটি যোগাযোগ স্যাটেলাইট। বর্তমানে এটি দেশের সব টেলিভিশন চ্যানেল তাদের অনুষ্ঠান প্রচার করছে। পাশাপাশি ডিজিটাল নানা সেবা পৌঁছে দিচ্ছে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও।
এটি জিওস্টেশনারি কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট হওয়ায় কেবল যোগাযোগের কাজে লাগছে। আবহাওয়া, সামরিক বা নিরাপত্তাসংক্রান্ত সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। এ ঘাটতি পূরণেই নেয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ পাঠানোর উদ্যোগ। এ বিষয়ে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের ইশতেহারেও উল্লেখ করেছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার।
দ্বিতীয় স্যাটেলাইটটির কার্যপরিধি বিস্তৃত থাকবে বলে জানালেন শাজাহান মাহমুদ। বলেন ‘দ্বিতীয়টি অনেকটা হাইব্রিড স্যাটেলাইট হতে পারে। স্যাটেলাইটটিকে আবহাওয়া, নজরদারি বা নিরাপত্তাসংক্রান্ত কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।’
বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইটটির ধরন ঠিক করতে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড। ছবি: নিউজবাংলা
এই স্যাটেলাইটের জন্য ২০২০ সালের মার্চ, এপ্রিল নাগাদই পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয়ার কথা থাকলেও দেরি হলো প্রায় ১৪ মাস। পিছিয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে করোনা সংকটকে উল্লেখ করলেন বিএসসিএল প্রধান।
‘এটি আরও সাত মাস আগেই নিয়োগ দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে তা পিছিয়ে যায়।’
পরামর্শক নিয়োগে ব্যয় প্রসঙ্গে শাহজাহান মাহমুদ জানান, প্রথমে ২১টি দরখাস্ত জমা পড়েছিল। এর মধ্যে প্রথম শর্ট লিস্টে রাখা হয় সাতটি প্রতিষ্ঠানকে। প্রাইস ঠিক করার কথা বলা হলে বিএসসিএল সঙ্গে যোগাযোগ করে চারটি কোম্পানি।
তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে থেকে প্রাইস ওয়াটার হাউজ কুপার্স অ্যাডভাইজরি এক লাখ ৮৫ হাজার ডলারে আমাদের সঙ্গে চুক্তি করে। এটিই সবচেয়ে কমদামে ভালো পরামর্শক প্রতিষ্ঠান।’
‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ থেকে বছরে এক কোটি ২০ লাখ টাকা আয় আসছে জানিয়ে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান বলেন, ‘এই টাকাগুলো টেলিভিশন থেকে আসছে। আমাদের প্রথম স্যাটেলাইটের ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের ২০টি নিজেদের জন্য রেখে বাকি ২০টি বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করব।’
চুক্তি সই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তফা জব্বার। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব আফজাল হোসেন, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার।