কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নৈতিকতা নিয়ে কাজ করা গবেষকের বরখাস্তের প্রতিবাদে এক চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন গুগলের শত শত কর্মী।
কৃষ্ণাঙ্গ ওই নারী গবেষকের নাম টিমনিত গেব্রু। তার ভাষ্য, গুগল ‘প্রান্তিক মানুষের কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করে দিচ্ছে’ অভিযোগ করে ইন্টারনাল একটি গ্রুপে ইমেইল পাঠিয়েছিলেন তিনি। এর জেরে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বরখাস্তের ঘটনায় গেব্রুর শত শত সহকর্মী স্বাক্ষরিত চিঠিতে গুগলের বিরুদ্ধে বর্ণবাদ ও সেন্সরশিপের অভিযোগ করা হয়েছে। #বিলিভব্ল্যাকউইমেন হ্যাশট্যাগ দিয়ে টুইটের ঢল নেমেছে গেব্রুরু পক্ষে।
তবে গেব্রুর বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে গুগল।
ড. গেব্রু কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার নৈতিকতা ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে একজন স্বনামধন্য গবেষক।
ফেশিয়াল রিকগনিশনের মতো প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বর্ণবাদী পক্ষপাত নিয়ে কাজ করায় তিনি খ্যাতি অর্জন করেন। পাশাপাশি তিনি কৃষ্ণাঙ্গদের মুখ চিহ্নিত করতে না পারার ব্যবস্থাগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।
বর্ণবাদ ইস্যুতে বিভিন্ন নিবন্ধে গেব্রুর সহ-লেখক জয় বালামউইনি বলেন, ‘গেব্রু গুগলের কাছ থেকে আরও অনেক বেশি পাওয়ার দাবি রাখেন।’
তিনি বলেন, ‘গবেষণার সাধুতা জানতে চাওয়ার দুঃসাহস দেখানোয় টিমনিতকে বরখাস্তের ঘটনায় কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার নৈতিকতা ও অ্যালগরিদম অডিটিং নিয়ে যথাযথ গবেষণা সমর্থনের ক্ষেত্রে গুগলের বিশ্বাসযোগ্যতা মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে।’
জয় আরও বলেন, ‘আমরা শুধু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জন্যই না, বরং নম্রতা ও অনুগ্রহের সঙ্গে সমতাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার প্রতি ঋণী।’
কী ঘটেছিল
ড. গ্রেব্রুর অভিযোগ, তিনি ছুটিতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। সে সময়েই যৌথভাবে লেখা একটি গবেষণাপত্র নিয়ে তাকে একটি বৈঠকে ডাকা হয়।
তিনি বলেন, তাকে গবেষণাপত্রটি প্রত্যাহার করতে বলা হয় এবং জানানো হয় যে, এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় সম্পৃক্ত হতে চায় না গুগল।
গেব্রুর দাবি, ওই বৈঠকের পর ‘ব্রেইন উইমেন অ্যান্ড অ্যালাইজ’ নামের ইন্টারনাল গ্রুপে একটি ইমেইল পাঠিয়েছিলেন তিনি। এতে তিনি গুগলের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছিলেন।
তার পাঠানো সে ইমেইলের একটি কপি আছে ‘প্ল্যাটফরমার’ নামের ওয়েবসাইটের কাছে।
ইমেইলে গেব্রু লেখেন, ‘আপনি এই বিষয়ে (প্রযুক্তির নৈতিকতা) কথা বলার যোগ্য নন। কেননা আপনি এমন কেউ নন যার মানবতার মূল্য এই সংস্থায় রয়েছে।’
গুগলের ভাষ্য উদ্ধৃত করে ইমেইলে গেব্রু বলেন, ‘আপনি বরং আপনার লেখা বন্ধ করুন, কেননা এতে কোনো পার্থক্য তৈরি হবে না।’
এদিকে গবেষণা থেকে কেন তার নাম সরিয়ে নেয়া হবে, সে সংক্রান্ত কারণ জানাতে ড. গেব্রু গুগল কর্তৃপক্ষকে মেইল পাঠান। এতে তিনি বলেন, যদি তারা কারণ জানাতে না পারে, তবে তিনি চাকরি থেকে ইস্তফার তারিখ খুঁজবেন।
গেব্রুর ভাষ্য অনুযায়ী গুগল উত্তরে বলেছে, ‘আপনার গুগল ছাড়ার সিদ্ধান্তের প্রতি আমরা সম্মান জানাই…এবং আমরা আপনার পদত্যাগ গ্রহণ করছি।’
গেব্রুর দাবি, তিনি পদত্যাগ করেননি। তাকে বরখাস্ত করেছেন গুগলের এআই গবেষণা সংক্রান্ত জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক জেফ ডিন।
একটি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক শ্রম সংস্থা গুগলকে ইউনিয়ন কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার জন্য কর্মীদের অবৈধভাবে বরখাস্ত করার অভিযোগ করার দিনই গেব্রুকে বরখাস্ত করার খবর পাওয়া যায়।
কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা গবেষক ডেবরাহ রাজি বলেন, ‘টিমনিত অসংখ্যবার আমাদের উৎসাহিত করেছেন, আমাদের পক্ষে কথা বলেছেন। এখন সময় তার পক্ষে কথা বলার।’
গুগল কী বলেছে
জেফ ডিন একটি ইমেইলে জানিয়েছেন, গেব্রুর বহিষ্কার নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনা ও ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।
তিনি দাবি করেন, ড. গ্রেব্রুর গবেষণা শেষ সময়ের আগের দিন জমা দেয়ায় সেটি পর্যবেক্ষণ করার সময় পায়নি গুগল কর্তৃপক্ষ।
ডিন জানান, গবেষণায় বিষয় সম্পর্কিত অনেক বিষয়ই অনুপস্থিত ছিল।
তিনি আরও জানান, গুগলের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য গেব্রু অনেকগুলো শর্ত উল্লেখ করে ফিরতি ইমেইল পাঠিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি তার গবেষণা কারা পর্যবেক্ষণ করেছেন তাদের পরিচয়ও জানতে চেয়েছেন।
‘তার শর্তগুলো পূরণ না হলে তিনি গুগলে আর কাজ করবেন না বলে জানিয়েছেন। আমরা তার পদত্যাগের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়েছি।’