বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রোবটেরা যখন বিচারকের আসনে

  •    
  • ২৫ অক্টোবর, ২০২০ ০৮:০৯

মাউরি দুই বছর ধরে এ নিয়ে গবেষণা করে শেষে এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে, আগামী ৫০ বছরের মধ্যে ইংল্যান্ড আর ওয়েলসের বেশিরভাগ দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিচারকদের দেখা মিলবে।

২০৭০ সাল অর্থাৎ আগামী ৫০ বছরের মধ্যে মানব-বিচারকদের সরিয়ে রোবটেরা বসবে আদালতে বিচারকদের আসনে। মানুষের অভিব্যক্তি এবং দেহভাষা বিশ্লেষণ করে রোবটেরা বুঝে নিতে পারবে, কাঠগড়ায় দাঁড়ানো আসামি সত্যি সত্যি অপরাধী কি না বা সাক্ষীরাও সত্য সাক্ষ্য দিচ্ছেন কি না। শতকরা ৯৯ দশমিক ৯ ভাগ ক্ষেত্রে তারা হবে নির্ভুল।

এ ঘটনাটা যে ঘটবে, সেটা বলেছেন ব্রিটিশ লেখক ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাবিষয়ক বক্তা টেরেন্স মাউরি। তিনি বলেছেন, রোবট বিচারকেরা মানুষের শারীরিক ও মানসিক সূক্ষ্ম চিহ্নগুলো শনাক্ত করে সততা বা অসততা নির্ণয় করতে পারবে। মানুষ বিচারকদের পক্ষে তা সম্ভব হয় না।

বাড়তি যে সুবিধা পাওয়া যাবে, তা হলো এই বিচারকেরা যেকোনো ভাষায় কথা বলতে পারবে। অর্থাৎ যেকোনো দেশের বিচারকের আসনেই বসিয়ে দেওয়া যাবে একই ধরনের রোবট। তা ছাড়া এই বিচারকেরা হুটহাট রেগে যাবে না। সবসময় অমায়িক হাসি ঝুলিয়ে রাখতে পারবে মুখে।

মাউরি দুই বছর ধরে এ নিয়ে গবেষণা করে শেষে এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে, আগামী ৫০ বছরের মধ্যে ইংল্যান্ড আর ওয়েলসের বেশিরভাগ দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিচারকদের দেখা মিলবে।

মাউরির এ গবেষণা আগামী বছর প্রকাশিত হবে। তবে ওই গবেষণার একটি সারসংক্ষেপ নিয়ে ব্রিটেনের দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকায় সম্প্রতি একটি খবর ছাপা হয়েছে।

মাউরি ‘হ্যাক ফিউচার ল্যাব’ নামে একটি লন্ডনভিত্তিক ইনস্টিটিউট চালান। টেলিগ্রাফকে তিনি বলেছেন, আইন-আদালতের ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একটা নতুন দিগন্ত খুলে দিতে যাচ্ছে। তাদের বিচার হবে অনেক বেশি অভ্রান্ত। মানুষ বিচারেকদের নানান সীমাবদ্ধতা। তাদের ভাবাবেগ থাকে, পক্ষপাত থাকে। অনেক ক্ষেত্রে বিচার-বিবেচনায় ভুলচুক হয়ে যায়। রোবট বিচারকেরা এইসব থেকে মুক্ত থাকবেন।

তাতে শুধু যে খুন না করেও খুনের দায়ে কারো ফেঁসে যাওয়ার আশঙ্কা দূর হবে, তাই নয়, বিচারকাজও হবে অত্যন্ত দ্রুত।

তবে রোবটেরা বিচারকের আসনে বসলে মানুষ-বিচারকেরা যে একেবারে বেকার হয়ে যাবেন, তা নয়। তাদের প্রয়োজন পড়বে পুরনো নজির তুলে ধরা আর আপিল নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে। তবে দিন ফুরাবে নিম্ন আদালতের বিচারকদের।

এ রকম একটা আদালতের এজলাসে উকিল-মোক্তারদের কাজ কী হবে? মাউরি বলছেন, যুক্তিতর্কের মারপ্যাচ কষার কাজটা সহসাই রোবটদের দিয়ে হবে না। ফলে ওই চাকরিটা অক্ষত থেকে যাচ্ছে। চাকরি যদি হারাতে হয়, সেটা হারাবেন মুহুরিরা। দলিল-দস্তাবেজ সংরক্ষণের করণিক কাজটা রোবটদের চেয়ে ভালো আর কে পারবে?

ব্রিটেনের সরকার আদালত ব্যবস্থার আধুনিকায়নে এবং আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণ করতে ২০ লাখ ডলার বরাদ্দ করেছে ২০১৯ সালে। তবে কোন ধরনের প্রযুক্তির পেছনে এই অর্থ ব্যয় হবে, সেটা গোপন রাখা হয়েছে। মাউরির বক্তব্যের পর এখন অনেকে অনুমান করতেই পারেন, ওই অর্থের একটা বড় অংশ যাবে রোবট বিচারকদের পেছনে।

তবে রোবট বিচারকেরা কিন্তু শুধুই ভবিষ্যতের ব্যাপার না। কিছু দেশে ইতিমধ্যে তারা আদালতে বসতে শুরু করেছেন।

ইউরোপে বাল্টিক সাগর তীরবর্তী দেশ এস্তোনিয়ায় ছোটখাট দেওয়ানি মামলা, যেগুলোর সঙ্গে ৬ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত অর্থ বা সম্পত্তির দাবির নিষ্পত্তি জড়িত, সেগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-চালিত বিচারকেরাই নিষ্পত্তি করছেন। ফলে মানুষ বিচারকেরা মনোযোগ দিতে পারছেন আরো বড় বড় মামলায়। সেখানে রোবট বিচারকদের ‘মগজে’ ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে আইনি দলিল-দস্তাবেজ, মামলার নথি। উপাত্ত বিশ্লেষণ করে পূর্বনির্ধারিত কিছু প্রোগ্রাম করা অ্যালগোরিদম বাতলে দিচ্ছে রায়।

চীনও ২০১৭ সাল থেকে সীমিত আকারে রোবট বিচারকেরা এজলাসে পা রেখেছেন। সেখানে চালু হয়েছে সাইবার কোর্টরুম।

এ বিভাগের আরো খবর