পুঁজিবাজারে সূচক বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কম হারে মার্জিন ঋণ দেয়ার বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, সেটি থেকে পিছিয়ে এসেছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মূল্য সূচক ৭ হাজারের দিকে ধাবিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন জানিয়েছে, সূচক ৮ হাজার হওয়া পর্যন্ত ১০০ টাকার বিপরীতে ৮০ টাকা অর্থাৎ ১০০:৮০ অনুপাতে মার্জিন ঋণ নেয়া যাবে।
বিএসইসির এর আগের সিদ্ধান্ত ছিল সূচক ৭ হাজার হলে মার্জিন ঋণ নেয়া যাবে ১০০ টাকায় ৫০ টাকা।
শুক্রবার রাতে বিএসইসি পক্ষ থেকে জানানো এক বার্তায় বলা হয়, ‘কোভিড-১৯ মহামারির বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করে, কমিশন মার্জিন ঋণের পূর্বের নির্দেশনার বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে সংশোধন করা হয়েছে। যেখানে সূচক ৮ হাজার পর্যন্ত ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো ১ অনুপাত শূন্য দশমিক ৮ হারে ঋণ দিতে পারবে। অর্থাৎ কোনো গ্রাহকের এক লাখ টাকা বিনিয়োগ থাকলে তিনি ৮০ হাজার টাকা ঋণ পাওয়ার যোগ্য হবেন।’
যা গত ৪ এপ্রিল এ সংক্রান্ত এক নির্দেশনায় ডিএসইএক্স ৭ হাজার সূচক পর্যন্ত বিদ্যমান থাকবে বলে জানানো হয়।
নতুন নির্দেশনায় বলা হয়, সূচক ৮ হাজারের বেশি হলে এই ঋণ সুবিধা কমে ১ অনুপাত শূন্য দশমিক ৫ হারে হবে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্সের বর্তমান অবস্থান ৬ হাজার ৬৯৯ পয়েন্ট। এই সূচক ২০১১ সালের ২৪ জুলাইয়ের পর সর্বোচ্চ।
মার্জিন ঋণের সুদ হার নিয়ে বিএসইসি গত বছরে ২১ সেপ্টেম্বর একটি নির্দেশনা দিয়েছিল, যা চলতি বছরের জানুয়াতি থেকে কার্যকর হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, স্টক এক্সচেঞ্জে মূল্যসূচক ৪ হাজার ১ থেকে ৭ হাজার পয়েন্টের মধ্যে থাকলে বিনিয়োগের ৫০ শতাংশ ঋণ দেয়া যাবে। আর সূচক এর উপরে উঠলে মার্জিন ঋণ দেয়া যাবে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত।
এ সময়ে মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট লেনদেনে মার্জিন সুবিধা নিয়ে একটি স্পষ্টিকরণ ব্যাখ্যা দেয়। এতে বলা হয়, আগে তালিকাভুক্ত সব মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট লেনদেনে মার্জিন ঋণ দেয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু ২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর সেই সুবিধা বন্ধ করে দেয়া হয়। ২০১০ সালের ৩০ ডিসেম্বর আবার তা চালু হয়, যা এখনও চালু রয়েছে।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের হিসাবে যত টাকা থাকে, তার বিপরীতে ঋণ নেয়া যায়, যাকে মার্জিন ঋণ বলে। শেয়ারের দাম বাড়তে থাকলে এই মার্জিন ঋণ বিনিয়োগকারীদের জন্য তেমন কোনো চাপ হয় না। কিন্তু যদি শেয়ারের দাম কমে যায়, তাহলে মার্জিন ঋণ বিরাট চাপ হয়ে দেখা দেয়।
যদি কোনো শেয়ার কেনার পর দাম ৩০ শতাংশ কমে যায়, তাহলে মার্জিন ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগকারীদেরকে নতুন টাকা কমা দিতে বলে। দাম ৫০ শতাংশ কমে গেছে ব্রোকারেজ হাউজগুলো শেয়ার বিক্রি করতে বাধ্য করে যা ফোর্ডস সেল নামে পরিচিতি।
২০১০ সালের মহাধসে মার্জিন ঋণ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বহু বিনিয়োগকারীর টাকা শূন্য হয়ে যায় মার্জিন ঋণের কারণে। তবে রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠান আইসিবি ও সরকারি ব্যাংক সোনালীর ব্রোকারেজ হাউজ সোনালী ইনভেস্টমেন্ট ফোর্সড সেল দেয়নি। তারা ২০১৮ সালে শতভাগ সুদ মওকুফও করেছে। এবারও সুদ মওকুফের জন্য আবেদন জমা নিচ্ছে।
তবে ২০১৮ সালে যারা সুদ মওকুফের জন্য আবেদন করেনি, তাদের সুদ মওকুফ হয়নি। আর বহু হিসাব আছে, যার শেয়ার মূল্য বেড়ে এখন এমনিতে মুনাফায় আছে। কিন্তু ১১ বছরের পুঞ্জিভূত সুদের কারণে সব শেয়ার বিক্রি করলেও টাকা পরিশোধ হবে না। এ কারণে শেয়ারগুলোও এক অর্থে আটকে গেছে। বিনিয়োগকারীরা কেনাবেচা করে লাভবান হতে পারছে না।
এ কারণে পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা মার্জিন ঋণ না নিতে উৎসাহ দিয়ে থাকেন। যারা খুবই দক্ষ বিনিয়োগকারী, তারাই যেন কেবল এই ঋণ নেন, সে পরামর্শও এসেছে নানা সময়।