বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কেপিসিএল: ফাইল যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে

  •    
  • ১২ আগস্ট, ২০২১ ০৮:১৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, সব সংস্থার আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ফাইলটি এখন একজন যুগ্ম সচিবের কাছে আছে। শাটডাউনের সময় জরুরি ও নিয়মিত ফাইল ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে অন্য কোনো ফাইল পাঠানো হয়নি। তবে এটি যেকোনো দিন পাঠানোর মতো অবস্থা আছে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত খুলনা পাওয়ার কোম্পানি বা কেপিসিএলসহ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে ফাইল অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বিষয়টিতে সায় দিয়ে সম্প্রতি তা পাঠায় এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি)। সেখান থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার পর তা পাঠানো হয় মন্ত্রণালয়ে। আর মন্ত্রণালয় সেটি চূড়ান্ত করে সরকারপ্রধানের দপ্তরে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করেছে।

প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের অনুমোদন পেলে সেটি তোলা হবে মন্ত্রিসভায়। আর নীতিগত অনুমোদন হয়ে যাওয়ায় এই দুটি শুধু আনুষ্ঠানিকতা বলে জানিয়েছেন একাধিক কর্মকর্তা।

কেপিসিএলের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানান, তারাও জানতে পেরেছেন ফাইল চালাচালি হচ্ছে এবং কেন্দ্র দুটির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। তবে তাদের কাছে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য আসেনি।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, সব সংস্থার আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ফাইলটি এখন একজন যুগ্ম সচিবের কাছে আছে। শাটডাউনের সময় জরুরি ও নিয়মিত ফাইল ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে অন্য কোনো ফাইল পাঠানো হয়নি। তবে এটি যেকোনো দিন পাঠানোর মতো অবস্থা আছে।

কেপিসিএলের দুই বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন অনুমোদনের বিষয়ে কোনো ইঙ্গিত আছে কি না, এমন প্রশ্নে সেই কর্মকর্তা বলেন, ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পে ভিত্তিতে এটি অনুমোদনের বিষয়ে আগেই কথা হয়েছিল। এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনও এতে আপত্তি জানায়নি। তা ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এই পর্যায়ে ফাইল পাঠালে তা অনুমোদন না হওয়ার কারণ নেই।’

কেন্দ্র দুটি নো ইলিকট্রিসিটি-নো পে ভিত্তিতে অনুমোদন দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অর্থাৎ সরকার বিদ্যুৎ না কিনলে আগের মতো বসিয়ে ভাড়া দেবে না।

এই কেন্দ্র দুটির একটি অবস্থানগত সুবিধা আছে। এগুলো অবস্থিত খুলনায়, যেখানে এখনও বিদ্যুতের কিছুটা সংকট আছে। রামপাল ও খানজাহান আলী নামের দুটি বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র সেখানে নির্মাণ হচ্ছে। তবে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় এখনও কেপিসিএলের উপযোগিতা রয়ে গেছে।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুৎ সংকট সমাধানে ভাড়াভিত্তিক অসংখ্য কুইকরেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করে। এসব কেন্দ্র থেকে সরকার প্রয়োজন হলে বিদ্যুৎ নিত, আর প্রয়োজন না থাকলেও কেন্দ্র বসিয়ে একটি বিল দিন, যা পরিচিতি পায় ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে।

তবে বড় বড় বেশ কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে চলে আসায় এসব কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র আর অনুমোদন না দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর এই অবস্থায় গত মে মাসের শেষের দিকে কেপিসিএলের দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। আরও তিন বছর আগে শেষ হয় আরও একটি কেন্দ্রের। এই অবস্থায় ২০১০ সালে সরাসরি তালিকাভুক্তির পর উচ্চমূল্যে শেয়ার কিনে বিপাকে পড়া বিনিয়োগকারীদের কী হবে, তা নিয়ে তৈরি হয় উৎকণ্ঠা।

কেপিসিএল সরকারের কাছে ধর্ণা দিয়ে যখন কোনো আশ্বাস পায়নি, তখন তারা যায় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কাছে। আর সংস্থাটির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম বিষয়টি নিয়ে দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। বলেন, কোম্পানির শেয়ার কিনে আটকে আছেন বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগকারী। তাদের স্বার্থে হলেও যেন কোনো শর্তে অনুমোদন দেয়া হয়।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান এই কর্তাব্যক্তি নিউজবাংলাকে গত জুনে বলেন, ‘আমরা সরকারের সঙ্গে একটু নেগোসিয়েশন পর্যায়ে আছি। নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট-এ রকম একটা ব্যবস্থাপনায়। এটা হলে লিস্টেড কোম্পানিগুলো কিছুটা বেনিফিট পাবে। তাদের যতটুকু বিদ্যুৎ সরকার কিনবে ততটুকুর জন্য পেমেন্ট পাবে।’

জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সচিব সাইফুল ইসলাম আজাদ সোমবার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শেয়ার বাজারের তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য তা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।’

তবে এর প্রায় দুই মাসেও মন্ত্রণালয় থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় পুঁজিবাজারে বিশেষ করে কেপিসিএলের বিনিয়োগকারীরা উৎকণ্ঠিত সময় পার করছেন।

একজন বিনিয়োগকারী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনায় আমি চাকরি হারিয়েছি। আমার সব বিনিয়োগ এই একটি কোম্পানিতে। ৫০ টাকার ওপরে কিনেছি একেকটি শেয়ার। সেটি এখন ৪০ টাকার নিচে। খুব উৎকণ্ঠায় আছি।’

কেপিসিএলের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা সোহরাব আলী খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্লান্ট দুটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এ বিষয়ে এখনও কোনো সরকারি নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানতে পেরেছি প্লান্ট দুটির মেয়াদ বাড়ছে।’

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে চিঠি চালাচালি হচ্ছে জেনেছি। তবে আমাদের কাছে এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আসেনি।’

বিএসইসি চেষ্টা

গত ২৩ মার্চ বিএসইসি কার্যালয়ে ডাকা হয় কেপিসিএলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের। তারা বিএসইসি কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

এরপর গত ১৫ এপ্রিল বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমানকে চিঠি দেয় বিএসইসি। এতে দুটি কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়াতে কেপিসিএল যে আবেদন করেছে, সেদিক বিবেচনার জন্য অনুরোধ করে সংস্থাটি।

চিঠিতে বলা হয়, বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিভিন্ন ধরনের পাওয়ার কোম্পানিসমূহ পুঁজিবাজার থেকে বিভিন্ন সময় মূলধন সংগ্রহের মাধ্যমে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে।

এ পরিস্থিতিতে খুলনা পাওয়ার কোম্পানিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের অর্থ লভ্যাংশ থেকে এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণ ফেরত আসেনি। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় এ কোম্পানির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কমিশন উদ্বিগ্ন। তাই কেপিসিএলসহ অন্যান্য তালিকাভুক্ত কোম্পানির পিপিএ চুক্তি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে নবায়নের সুযোগ রয়েছে কি না, তা জানানোর জন্য অনুরোধ করে কমিশন।

বিএসইসি চেয়ারম্যান বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও। তার বক্তব্য শুনে তিনি মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউসের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন। আর তিনিই বিএসইসি চেয়ারম্যানকে ‘নো পে নো ইলেকট্রিসিটির’ ভিত্তিতে অনুমোদন দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করার কথা জানান।

কেপিসিএল আদ্যোপান্ত

২০১০ সালে পুঁজিবাজারে সরাসরি তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রি হয় গড়ে ২১১ টাকায়। এটি যে মেয়াদী বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর তা বন্ধ হয়ে যাবে, সে বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের কোনো ধারণা ছিল না।

কোম্পানিটির বিদ্যুৎকেন্দ্র ছিল মোট তিনটি। এর মধ্যে ২০১৮ সালে একটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ বিষয়টি নিয়ে জানতে পারে।

এরপর থেকে দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের আয়ে লভ্যাংশ পেয়ে আসছে বিনিয়োগকারীরা। এই দুটির মধ্যে ১১৫ মেগাওয়াটের কেপিসিএল-১-এর মেয়াদ শেষ হয় গত ৩১ মে। আর ৪০ মেগাওয়াটের নওয়াপাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ শেষ হয় ২৮ মে।

গত ২০ মে কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়াতে আমাদের চেষ্টা-তদবির অব্যাহত রয়েছে।’

মেয়াদ শেষে কেন্দ্র দুটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এই চেষ্টা তদবিরের কতটা আগাল, সে বিষয়ে কোম্পানির পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি।

কেপিসিএলের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র

তিনটি কেন্দ্রই বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর কোম্পানির মালিকানায় এখন আছে কেবল সহযোগী কোম্পানি ইউনাইটেড পায়রার ৩৫ শতাংশের মালিকানা।

পটুয়াখালী জেলার খলিসাখালী এলাকায় ১৫০ মেগাওয়াটের এই কেন্দ্র থেকে সরকার বিদ্যুৎ কিনবে আগামী ১৫ বছর। এটি উৎপাদন শুরু করেছে গত ১৮ জানুয়ারি।

গত ৩১ এপ্রিলের তথ্য অনুযায়ী কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ৯.২ শতাংশ শেয়ার ছিল প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে। আর ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের কাছে ছিল ২০.৫১ শতাংশ শেয়ার। আর দশমিক ৩০ শতাংশ আছে বিদেশিদের হাতে।

কেপিসিএল ছাড়াও অনুমোদন পাচ্ছে আরও কয়েকটি

এই সুবিধা কেপিসিএল ছাড়াও সামিট পাওয়ার, ওরিয়ন ফার্মার সাবসিডিয়ারি ওরিয়ন পাওয়ার মেঘনাঘাট ও ডাচ বাংলা পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসও পাচ্ছে।

সামিট পাওয়ারের ১০২ মেগাওয়াটের একটি কেন্দ্র বন্ধ হয়েছে গত ৩১ মার্চ। আরও দুটি কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বছরের শেষে। তবে এই দুটি একেবারেই ছোট কেন্দ্র। একটি সাড়ে ১৩ মেগাওয়াটের, অন্যটি ২৪.৩০ মেগাওয়াটের।

এ ছাড়াও ওরিয়ন ইনফিউশনের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ১০০ মেগাওয়াটের কেন্দ্র বন্ধ হচ্ছে আগামী ২০ জুলাই। মধ্যে ডাচ বাংলা পাওয়ারের মেয়াদ শেষ হবে জুলাই মাসে।

এ বিভাগের আরো খবর