২০২০ সালের জুলাই থেকে পুঁজিবাজারে যে উত্থান, তার তেমন কোনো এভাব দেখা গেল না রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অফ বাংলাদেশের সহযোগী প্রতিষ্ঠান আইসিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি পরিচালিত আটটি মিউচ্যুয়াল ফান্ডে।
একটি ফান্ড সর্বনিম্ন ইউনিটপ্রতি ৩১ পয়সা আয় করেছে। আর একটি ফান্ড সর্বোচ্চ ৬৮ পয়সা আয় করেছে ইউনিটপ্রতি।
আর খুব একটা আয় করতে না পারায় লভ্যাংশও ভালো আসেনি। এর মধ্যে একটি ফান্ড ইউনিটপ্রতি সর্বনিম্ন ৪০ পয়সা এবং একটি ফান্ড ইউনিটপ্রতি সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ মুনাফা দিয়েছে।
এ নিয়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ফান্ডগুলোর মধ্যে যেগুলোর অর্থবছর গত ৩০ জুন শেষ হয়েছে, তাদের মধ্যে ১৪টি লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। আরও দুটি ফান্ডের লভ্যাংশ ঘোষণা হবে বৃহস্পতিবার।
এখন পর্যন্ত যেসব ফান্ড লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে কম লভ্যাংশ দিতে যাচ্ছে গত বছর মন্দা পুঁজিবাজারেও মুনাফা করে লভ্যাংশ দেয়া আইসিবির ফান্ডগুলো।
এর আগে যে ৬টি ফান্ড লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে কম আয় করেছে যে ফান্ডটি, সেটিও ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ৮৭ পয়সা আয় করেছে। ইউনিটপ্রতি ৩ টাকা ১৪ পয়সাও আয় করেছে একটি ফান্ড।
২০২০ সালের জুলাই থেকে চলতি বছর জুন পর্যন্ত পুঁজিবাজারে সূচক বেড়েছে দুই হাজার ১০০ পয়েন্টেরও বেশি। আর এ কারণে চলতি বছর বিভিন্ন অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি পরিচালিত মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো ব্যাপক আয় করে রেকর্ড সংখ্যক লভ্যাংশ দিচ্ছে। ৯ টাকার ঘরে দুটি ফান্ড ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ১২ পয়সা আর ১২ টাকার ঘরে দুটি ফান্ড ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ৫০ পয়সা লভ্যাংশ দিচ্ছে। একটি ফান্ড ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ৭৫ পয়সা লভ্যাংশও দিয়েছে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয়, এমন ফান্ডগুলোও এবার আকর্ষণীয় লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। একটি ফান্ড ইউনিটপ্রতি ২ টাকা ৫ পয়সা পর্যন্ত লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
২০১০ সালে মহাধসের কারণে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আইসিবির মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোও ব্যাপক লোকসানে পড়ে আর সেটি তারা কাটিয়ে উঠতে পারেনি এখনও। তবে গত বছর মন্দা বাজারেও এই ফান্ডগুলো কোনো লোকসান দেয়নি, যেটি তাদের শক্তিমত্তার পরিচয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তবে গত বছর লোকসান না দেয়াটাই এবার লভ্যাংশ বিতরণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। এর আগে যে ছয়টি ফান্ড লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিল, তার মধ্যে একটি কেবল গত বছর লোকসান দেয়নি। আর এ কারণে এবার ইউনিটপ্রতি আয় তুলনামূলক কম থাকলেও তারা লভ্যাংশ সেই হিসেবে বেশি দিয়েছে। অন্য ফান্ডগুলো তাদের আয় থেকে গত বছরের লোকসান সমন্বয় করেছে। আর বাকি অর্থের ওপর লভ্যাংশ দিয়েছে।
মিউচ্যুয়াল ফান্ড বিধিমালা অনুযায়ী গ্রোফ ফান্ড তাদের আয়ের কমপক্ষে ৫০ শতাংশ এবং অন্যান্য ফান্ড অন্তত ৭০ শতাংশ লভ্যাংশে বিতরণ করবে।
চলতি বছরের চাঙা বাজারেও বছরের তিন প্রান্তিকে আইসিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির আটটি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের আয় আহামরি কিছু হয়নি। তাই লভ্যাংশের জন্য নির্ভর করতে হয়েছে মূলত চতুর্থ প্রান্তিকে আয়ের ওপর। কিন্তু তিন প্রান্তিকের মতো চতুর্থ প্রান্তিকেও হতাশ করল রাষ্ট্রায়ত্ত করপোরেশনটি।
কোন ফান্ডের আয়, লভ্যাংশ কত
আইসিবি এএমসিএল অগ্রণী ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড ইউনিটপ্রতি ৬৮ পয়সা আয় করে ৭০ পয়সা লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটিরই আয় ও লভ্যাংশ এসেছে সর্বোচ্চ।
ফান্ডটির তৃতীয় প্রান্তিকে শেষে আয় ছিল ৩০ পয়সা। চতুর্থ প্রান্তিকে তারা ইউনিটপ্রতি আয় করেছে ৩৮ পয়সা।
লভ্যাংশ ঘোষণার দিন ফান্ডটির ইউনিটপ্রতি মূল্য ছিল ৯ টাকা ৩০ পয়সা।
গত বছর ফান্ডটি ইউনিটপ্রতি ৩৪ পয়সা আয় করে ৫০ পয়সা লভ্যাংশ দিয়েছিল।
আইসিবি এএমসিএল সেকেন্ড মিউচ্যুয়াল ফান্ড ইউনিট প্রতি ৩৭ পয়সা আয় করে ৮০ পয়সা লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
তৃতীয় প্রান্তিক শেষে ফান্ডটির ইউনিটপ্রতি আয় ছিল ৩১ পয়সা। অর্থাৎ চতুর্থ প্রান্তিকে তারা ইউনিটপ্রতি আয় করেছে ৬ পয়সা।
লভ্যাংশ ঘোষণার দিন ফান্ডটির ইউনিটপ্রতি মূল্য ছিল ১১ টাকা ১০ পয়সা।
গত বছর ফান্ডটি ইউনিটপ্রতি ৩০ পয়সা আয় করে ৫০ পয়সা লভ্যাংশ দিয়েছিল।
আইসিবি এএমসিএল থার্ড এনআরবি মিউচ্যুয়াল ফান্ড ইউনিটপ্রতি ৫২ পয়সা আয় করে ৭০ পয়সা লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তৃতীয় প্রান্তিক শেষে ফান্ডটির ইউনিটপ্রতি আয় ছিল ২৫ পয়সা। অর্থাৎ চতুর্থ প্রান্তিকে তারা ইউনিটপ্রতি আয় করেছে ২৭ পয়সা।
লভ্যাংশ ঘোষণার দিন ফান্ডটির ইউনিটপ্রতি মূল্য ছিল ৭ টাকা ৪০ পয়সা।
গত বছর ফান্ডটি ইউনিটপ্রতি ২৪ পয়সা আয় করে ৫০ পয়সা লভ্যাংশ দিয়েছিল।
আইসিবি এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ড মিউচ্যুয়াল ফান্ড ওয়ান ইউনিটপ্রতি ৪১ পয়সা আয় করে ৬০ পয়সা লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তৃতীয় প্রান্তিক শেষে ফান্ডটিরে ইউনিটপ্রতি আয় ছিল ৩০ পয়সা। অর্থাৎ চতুর্থ প্রান্তিকে তারা ইউনিটপ্রতি আয় করেছে ১১ পয়সা।
লভ্যাংশ ঘোষণার দিন ফান্ডটির ইউনিটপ্রতি মূল্য ছিল ৮ টাকা।
গত বছর ফান্ডটি ইউনিটপ্রতি ২০ পয়সা আয় করে ৫০ পয়সা লভ্যাংশ দিয়েছিল।
আইসিবি এএমসিএল সোনালী ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড ওয়ান ইউনিট প্রতি ৫৩ পয়সা আয় করে ৭০ পয়সা লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তৃতীয় প্রান্তিক শেষে ফান্ডটির ইউনিটপ্রতি আয় হয়েছে ৪১ পয়সা।
অর্থাৎ চতুর্থ প্রান্তিকে তারা ইউনিটপ্রতি আয় করেছে ১২ পয়সা।
লভ্যাংশ ঘোষণার দিন ফান্ডটির ইউনিটপ্রতি মূল্য ছিল ৯ টাকা ১০ পয়সা।
গত বছর ফান্ডটি ইউনিটপ্রতি ২৪ পয়সা আয় করে ৫০ পয়সা লভ্যাংশ দিয়েছিল।
আইএফআইএল ইসলামী মিউচ্যুয়াল ফান্ড ওয়ান ইউনিটপ্রতি ৩১ পয়সা আয় করে ৪০ পয়সা লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তৃতীয় প্রান্তিক শেষে এই ফান্ডের ইউনিটপ্রতি আয় ছিল ১১ পয়সা। অর্থাৎ চতুর্থ প্রান্তিকে তারা ইউনিটপ্রতি আয় করেছে ২০ পয়সা।
লভ্যাংশ ঘোষণার দিন ফান্ডটির ইউনিটপ্রতি মূল্য ছিল ৭ টাকা ৪০ পয়সা।
গত বছর ফান্ডটি ইউনিটপ্রতি ২২ পয়সা আয় করে ৪০ পয়সা লভ্যাংশ দিয়েছিল।
ফিনিক্স ফিনান্স ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড ইউনিট প্রতি ৩২ পয়সা আয় করে ৬০ পয়সা লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গত মার্চে তৃতীয় প্রান্তিক শেষে ফান্ডটির ইউনিটপ্রতি ২৮ পয়সা আয় ছিল। অর্থাৎ চতুর্থ প্রান্তিকে তারা ইউনিটপ্রতি আয় করেছে ৪ পয়সা।
লভ্যাংশ ঘোষণার দিন ফান্ডটির ইউনিটপ্রতি মূল্য ছিল ১০ টাকা ৪০ পয়সা।
গত বছর ফান্ডটি ইউনিটপ্রতি ২৬ পয়সা আয় করে ৫০ পয়সা লভ্যাংশ দিয়েছিল।
প্রাইম ব্যাংক ফার্স্ট এএমসিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড ইউনিটপ্রতি ৪৭ পয়সা আয় করে ৭৫ পয়সা লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মার্চে তৃতীয় প্রান্তিক শেষে ফান্ডটি ইউনিটপ্রতি ৪১ পয়সা আয় করেছিল। অর্থাৎ চতুর্থ প্রান্তিকে তারা ইউনিটপ্রতি আয় করেছে ৬ পয়সা।
লভ্যাংশ ঘোষণার দিন ফান্ডটির ইউনিটপ্রতি মূল্য ছিল ৭ টাকা ৮০ পয়সা।
গত বছর ফান্ডটি ইউনিটপ্রতি ৩১ পয়সা আয় করে ৫০ পয়সা লভ্যাংশ দিয়েছিল।
সব ফান্ডের রেকর্ড আয়-রেকর্ড লভ্যাংশ
জুনে অর্থবছর শেষ হয়েছে এমন ছয়টি ফান্ড এরই মধ্যে লভ্যাংশ ঘোষণা করছে যেগুলো রেকর্ড আয় করে লভ্যাংশও দিয়েছে রেকর্ড পরিমাণ।
স্ট্র্যটেজিক ইক্যুইটি পরিচালিত তিনটি ফান্ড লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
এর মধ্যে এসইএমএল লেকচার ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট ফান্ড ও এসইএমএল এফবিএলএসএল গ্রোথ ফান্ড ইউনিটধারীদেরকে দেড় টাকা করে লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
দুটির মধ্যে বেশি আয় করেছে লেকচার ফান্ড। তবে গত বছরের লোকসানের বিপরীতে সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে গিয়ে তারা লভ্যাংশ কমিয়েছে।
ফান্ডটি এবার ইউনিটপ্রতি আয় করেছে ২ টাকা ৮৪ পয়সা। আগের বছর লোকসান ছিল ১ টাকা ৭ পয়সা।
অন্যদিকে গ্রোথ ফান্ড এবার ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ৮৭ পয়সা আয় করলেও এর লভ্যাংশ দেয়ার সক্ষমতা বেশি ছিল। কারণ, তাদের গত বছর লোকসান ছিল না। সে বছর ইউনিটপ্রতি আয় ছিল ২৭ পয়সা।
এই কোম্পানি অপর ফান্ড এসইএমএল আইবিবিএল শরিয়াহ তার ইউনিটধারীদেরকে ১ টাকা করে লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।
এই ফান্ডটি এবার ইউনিটপ্রতি ২ টাকা ৩৫ আয় করেছে। গত বছর ১ টাকা ১৩ পয়সা লোকসান ছিল তাদের। সেটি সমন্বয়ের পর কমেছে লভ্যাংশ।
আরেক সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি এলআর গ্লোবাল পরিচালিত ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও গ্রিন ডেল্টা মিউচ্যুয়াল ফান্ড ইউনিট প্রতি ১ টাকা ২০ পয়সা অর্থাৎ ১২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেবে এবার।
২০১০ সালে তালিকাভুক্ত দুটি ফান্ড এর আগে কখনও এত বেশি লভ্যাংশ দিতে পারেনি।
গ্রিনডেল্টা মিউচ্যুয়াল ফান্ড এর আগে সর্বোচ্চ লভ্যাংশ দিয়েছে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে, ৯ শতাংশ করে। অন্যদিকে ডিবিএইচ মিউচ্যুয়াল ফান্ড সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে ২০১৮ সালে।
ফান্ড দুটিই এবার ইউনিটপ্রতি ২ টাকা ১৩ পয়সা করে আয় করেছে। ২০২০ সালে ডিবিএইচ মিউচ্যুয়াল ফান্ড ইউনিট প্রতি ১ টাকা ৮ পয়সা লোকসান দিয়েছিল। আর গ্রিনডেল্টা মিউচ্যুয়াল ফান্ড লোকসান দিয়েছিল ৯৯ পয়সা। আর সেটি সমন্বয় করতে কমাতে হয়েছে লোকসান।
জুন ক্লোজিং মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো মধ্যে সবার প্রথম লভ্যাংশ ঘোষণা করে এনএলআই ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড, যেটি ইউনিট প্রতি ১ টাকা ৭৫ পয়সা লভ্যাংশ দিয়েছে।
চলতি বছর আয় হয়েছে ৩ টাকা ১৪ পয়সা। আর আগের বছর ৭৬ পয়সা লোকসানের বিপরীতে সঞ্চিতি সংরক্ষণ করে চূড়ান্ত আয় হয়েছে ১ টাকা ৮৬ পয়সা।