পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক বছরের প্রথম প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি লোকসান করলেও দ্বিতীয় প্রান্তিকে এসে চকম দেখিয়েছে। এপ্রিল থেকে জুন সময়ে ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি আয় বেড়েছে ১৬৪ শতাংশ। এতে অর্ধবার্ষিকে ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ পয়সা বা ৩৮ শতাংশ।
আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক নিয়ে সোমবার ডিএসই ওয়েব সাইটে এ তথ্য দেয়া হয়েছে।
ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় অনুমোদন হওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক জানুয়ারি থেকে জুন সময়ে শেয়ার প্রতি আয় করেছে ১ টাকা ১৬ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৮৪ পয়সা।
ফলে এই সময়ে ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি আয় বেড়েছে ৩২ পয়সা বা ৩৮.০৯ শতাংশ।
অর্ধবার্ষিকীর এই আয়ের সিংহভাগ এসেছে ব্যাংকের দ্বিতীয় প্রান্তিক বা এপ্রিল থেকে জুন সময়ের মধ্যে।
এপ্রিল থেকে জুন সময়ে ব্যাংকটি শেয়ার প্রতি আয় করেছে ৯০ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৩৪ পয়সা। এই সময়ে ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি আয় বেড়েছে ৫৬ পয়সা বা ১৬৪ শতাংশ।
ব্যাংকটির গত পাঁচ বছরের পরিসংখ্যানে কখনও ২ টাকার নিচে নামেনি শেয়ার প্রতি আয়। বরং সর্বোচ্চ আয় করেছে ২০১৭ সালে, ৩ টাকা ১৭ পয়সা।
এ ছাড়া, ২০১৫ সালে শেয়ার প্রতি আয় করেছে ২ টাকা ৩৬ পয়সা। ২০১৬ সালে ৩ টাকা ০৭ পয়সা। ২০১৮ সালে ২ টাকা ৩৫ পয়সা। ২০১৯ সালে আয় করেছে ২ টাকা ২৮ পয়সা।
২০২০ সালেও ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ২ টাকা ৪১ পয়সা। ব্যাংকটির ডিভিডেন্ড ইল্ড ও যেকোনো ব্যাংকের স্থায়ী সঞ্চয় পত্রের সুদের হারের চেয়ে বেশি।
২০১৯ সালে ব্যাংকটির ডিভিডেন্ড ইল্ড ছিল ৭.৫৬ শতাংশ। সর্বোচ্চ ইল্ড ছিল ২০১৬ সালে, ১২.৫৮ শতাংশ।
ব্যাংকটির প্রথম প্রান্তিকে জানুয়ারি থেকে মার্চ সময়ে শেয়ার প্রতি আয় ছিল ২৬ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ৫১ পয়সা।
শেয়ার প্রতি কোন ব্যাংকের কত আয়
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক চলতি বছরের অর্ধবার্ষিকে গত বছরের প্রায় চারগুণ আয় করেছে। গত বছরের প্রথম ৬ মাসে শেয়ারপ্রতি ৬ পয়সা আয় করলেও এবার তারা আয় করেছে ২৩ পয়সা।
প্রাইম ব্যাংক এবার অর্ধবার্ষিকে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় তিনগুণের বেশি আয় করেছে।
ব্যাংকটি জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত শেয়ারপ্রতি আয় করেছে ১ টাকা ৮১ পয়সা। আগের বছর আয় ছিল ৫৫ পয়সা ছিল।
এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ১১ পয়সা আয় করেছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার আগে ২০২০ সালে একই সময়ে এই আয় ছিল ৪৯ পয়সা। শতকরা হিসাবে আয় বেড়েছে ১২৬ শতাংশ।
ব্র্যাক ব্যাংকের ছয় মাসে শেয়ার প্রতি ১ টাকা ৮৫ পয়সা আয় করতে পেরেছে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৮৪ পয়সা। অর্থাৎ আয় বেড়েছে ১ টাকা ১ পয়সা, শতকরা হিসেবে ১২০ দশমিক ২৩ বেশি।
মার্কেন্টাইল ব্যাংকের মুনাফায় প্রবৃদ্ধি ১০৮ শতাংশ। অর্ধবার্ষিকীতে এই ব্যাংকে শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ২ টাকা ২ পয়সা, যা গত বছর একই সময় ছিল ৯৯ পয়সা।
সিটি ব্যাংকে আয় বেড়েছে ১০৬ শতাংশ। অর্ধবার্ষিকীতে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ২ টাকা ৬ পয়সা। গত বছর এই আয় ছিল ১ টাকা।
এবি ব্যাংকের জানুয়ারি থেকে জুন ছয় মাসে শেয়ার প্রতি আয় করেছে ৩১ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮২.৩৫ শতাংশ বেশি।
শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক এই ছয় মাসে শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ৭২ পয়সা আয় করেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭০ শতাংশ বেশি।
সাউথ ইস্ট ব্যাংক গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত শেয়ার প্রতি আয় করেছে ২ টাকা ৫৬ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ১ টাকা ৫৯ পয়সা। এই হিসেবে চলতি বছর গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আয় বেড়েছে ৯৭ পয়সা বা ৬১ শতাংশ।
ওয়ান ব্যাংক এই সময়ে শেয়ার প্রতি ১ টাকা ৪৬ পয়সা আয় করেছে। গত বছর এই সময়ে আয় ছিল ৯৩ পয়সা। আয় বেড়েছে ৫৩ পয়সা বা ৫৭ শতাংশ।
ইস্টার্ন ব্যাংক এবার ৬ মাসে গত বছরের তুলনায় ৫৫ শতাংশ বেশি আয় করেছে। অর্ধবার্ষিকে তাদের শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ২ টাকা ৫৬ পয়সা, যা আগের বছর একই সময় ছিল ১ টাকা ৬৫ পয়সা।
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল বা ইউসিবি ব্যাংক বছরের প্রথম ছয় মাসে শেয়ারপ্রতি আয় করেছে ১ টাকা ২ পয়সা। গত বছর একই সময়ে এই আয় ছিল ৭২ পয়সা। অর্থাৎ ব্যাংকটির আয় বেড়েছে ৪১ শতাংশ।
আইএফআইসি ব্যাংক চলতি বছরের অর্ধবার্ষিকে গত বছরের প্রায় দেড়গুণ আয় করেছে। গত বছরের প্রথম ৬ মাসে শেয়ারপ্রতি ৭১ পয়সা আয় করলেও এবার তারা আয় করেছে ৯১ পয়সা। আয় বেড়েছে ২৮.১২ শতাংশ।
যমুনা ব্যাংকের গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে শেয়ার প্রতি ২ টাকা ৬৪ পয়সা আয় করেছে ব্যাংকটি। আগের বছর একই সময়ে এই আয় ছিল ২ টাকা ৭ পয়সা। এই হিসাবে আয় বেড়েছে ৫৭ পয়সা বা ২৭.৫৩ শতাংশ।
চলতি বছর অর্ধবার্ষিকে পরিচালন মুনাফার দিক দিয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকা পূবালী ব্যাংক শেয়ারপ্রতি আয় করেছে ১ টাকা ৮০ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে এই আয় ছিল ১ টাকা ৪৪ পয়সা। আয় বেড়েছে ২৫ শতাংশ।
উত্তরা ব্যাংক বছরের প্রথম ছয় মাসে শেয়ারপ্রতি আয় করেছে ১ টাকা ৭৯ পয়সা। গত বছর একই সময়ে এই আয় ছিল ১ টাকা ৪৪ পয়সা। শতকরা হিসেবে আয় বেড়েছে ২৪ শতাংশের কিছু বেশি।
এনসিসি ব্যাংক এই ছয় মাসে শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ৪৩ পয়সা আয় করেছে, যা আগের বছরের একই সময় ছিল ১ টাকা ১৭ পয়সা। শতকরা হিসেবে বেড়েছে ২২ শতাংশের কিছু বেশি।
ট্রাস্ট ব্যাংক এবার শেয়ার প্রতি আয় করেছে ২ টাকা ৪২ পয়সা। গত বছর একই সময়ে আয় ছিল ২ টাকা। এই হিসেবে আয় বেড়েছে ৪২ পয়সা বা ২১ শতাংশ।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক চলতি বছর অর্ধবার্ষিকে শেয়ারপ্রতি ৫৫ পয়সা আয় করেছে। গত বছর এই সময়ে আয় ছিল ৪৮ পয়সা। আয় বেড়েছে ০৭ পয়সা বা ১৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ।
ইসলামী ব্যাংকের অর্ধবার্ষিকীতে শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ২ টাকা ৮ পসায়। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ১ টাকা ৯৪ পয়সা। এই সময়ে ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি আয় বেড়েছে ১৭ পয়সা বা ৭ শতাংশ।
ডাচবাংলা ব্যাংক গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসে শেয়ার প্রতি ৩ টাকা ৫৭ পয়সা আয় করেছে। গত বছর এই সময়ে আয় ছিল ৩ টাকা ৪২ পয়সা। আয় বেড়েছে ১৫ পয়সা বা ৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
যেসব ব্যাংকের আয় কমেছে
ব্যাংক খাতে সুবাতাসের মধ্যে ভালো করতে পারেনি ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৫৪ পয়সা। আগের বছর এই আয় ছিল ৮২ পয়সা ছিল। অর্থাৎ এই ব্যাংকটির আয় কমেছে ৩৪ শতাংশ।
মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকেরও আয় কমে গেছে। মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক অর্ধবার্ষিকে শেয়ার প্রতি ১ টাকা ৮ পয়সা আয় করেছে। গত বছরের একই সময়ে এই আয় ছিল ১ টাকা ৩৪ পয়সা।
আগের বছর অর্ধবার্ষিকে ১ টাকা আয় করা এক্সিম ব্যাংকেরও আয় এবার কমেছে। এবার তাদের আয় হয়েছে ৮৯ পয়সা।
হতাশার বৃত্তেই আইসিবি ইসলামী ব্যাংকও। লোকসানি ব্যাংকটি এবারও তার বৃত্ত ভাঙতে পারেনি। গত বছরের মতোই চলতি বছরও অর্ধবার্ষিকীতে শেয়ারপ্রতি ৩২ পয়সা লোকসান দিয়েছে ব্যাংকটি।