বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দর বাড়ল ব্যাংকের, লোকসানি কোম্পানির ব্যাপক দরপতন

  •    
  • ২৫ জুলাই, ২০২১ ১৩:২৩

দিনের সর্বোচ্চ দর পতন হওয়া ১০টি কোম্পানির মধ্যে প্রথম ৭টিই ছিল বন্ধ ও লোকসানি কোম্পানি। এর মধ্যে তিনটির দর কমেছে একদিনে যত কমা সম্ভব ততই। অন্যদিকে ব্যাংক খাতে ৩১টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ২৬টির।

ঈদের ছুটি শেষে প্রথম কর্মদিবসে পুঁজিবাজারে সূচক বাড়ল আরও। আর এই উত্থানে প্রধান ভূমিকা ব্যাংক খাতের। প্রায় সব খাতেই দরপতনের পরও সূচকে ১৯ পয়েন্ট যোগ হয়েছে এই একটি খাতে প্রায় সব কোম্পানির দর বৃদ্ধির সুবাদে।

অন্য খাতগুলোর বেশিরভাগ শেয়ারের দর পতনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আর যে ঘটনাটি ঘটেছে, তা হলো দুর্বল ও লোকসানি কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর করেছে ব্যাপকভাবে।

কয়েকটি বন্ধ কোম্পানিকে উৎপাদনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি বোর্ড পুনর্গঠনের ভালো একটি উদ্যোগের পর লোকসানি কোম্পানির দর গত এক মাসে বাড়ে লাফিয়ে লাফিয়ে।

ঈদের আগে যারা আরও বাড়বে ভেবে এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছিলেন, তাদেরকে হতাশ করেছে ঈদ পরবর্তী বাজারের চিত্র।

গত মঙ্গলবার থেকে ঈদের তিন দিনের ছুটির পর সাপ্তাহিক দুই দিনের ছুটি শেষে রোববার পুঁজিবাজারের আচরণ কী হয়, তা নিয়ে দৃষ্টি ছিল বিনিয়োগকারীদের মধ্যে।

কারণ, ঈদের আগে পুঁজিবাজারে মূল্য সূচকের এক দশকের রেকর্ড ভঙ্গ হয়। সেই সঙ্গে ব্যাংক খাতের যেসব কোম্পানি অর্ধবার্ষিকী আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল, তাতে প্রায় সবগুলোর আয় বৃদ্ধির তথ্য মেলে। তাই ধারণা করা হচ্ছিল, ব্যাংক খাত ভালো করবে। হয়েছেও তা।

ঈদ উপলক্ষে শাটডাউন ৮ দিনের জন্য শিথিল করার পর শুক্রবার থেকে আবার শুরু হয়েছে চলাচলের নিষেধাজ্ঞা। রোববার থেকে কমানো হয়েছে ব্যাংকে লেনদেনের সময়সীমাও। আর ব্যাংকে লেনদেনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে লেনদেন কমেছে পুঁজিবাজারেও। সকাল ১০টা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত চলেছে লেনদেন।

লেনদেনের সময় দেড় ঘণ্টা কমলেও ঈদের আগের শেষ কর্মদিবসের তুলনায় ঈদের পরে প্রথম কর্মদিবসে লেনদেন বেড়েছে।

আগামী ৫ আগস্ট শাটডাউন বলবৎ থাকা অবস্থায় জনবলের ২৫ শতাংশ উপস্থিতির মাধ্যমে ব্রোকারেজ হাউস, মার্চেন্টব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বলা হয়েছে। বিএসইসির পক্ষ থেকে বিনিয়োগকারীদের প্রয়োজন ছাড়া ব্রোকারেজ হাউসে না গিয়ে মোবাইল বা ডিএসই অ্যাপের মাধ্যমে লেনদেন পরিচালনা করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

লেনদেনের শুরুতে সূচকের ভালো উত্থান দেখা যায়। সকাল ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে শেয়ার বিক্রির চাপে সূচক কিছুটা কমে আসে। তবে উত্থানেই শেষ হয়েছে লেনদেন।

দর পতনে লোকসানি কোম্পানি

দিনের সর্বোচ্চ দর পতন হওয়া ১০টি কোম্পানির মধ্যে প্রথম ৭টিই ছিল বন্ধ ও লোকসানি কোম্পানি। এর মধ্যে তিনটির দর কমেছে একদিনে যত কমা সম্ভব ততই।

মালিকপক্ষ শেয়ার বিক্রি করে উৎপাদন বন্ধ করে দেয়া ফ্যামিটিটেক্সের দর কমেছে ৯.৪৩ শতাংশ। ৫ টাকা ৩০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৪ টাকা ৮০ পয়সা।

উৎপাদনে না থাকারও পরও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকা তুং হাই নিটিং শেয়ার দর কমেছে ৮.৮২ শতাংশ। শেয়ার দর ৬ টাকা ৮০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৬ টাকা ২০ পয়সা।

লোকসানে থাকা আরএস স্পিনিংয়ের শেয়ার দর কমেছে ৮.৬৯ শতাংশ। আরেক বন্ধ কোম্পানি সিএনএ টেক্সটাইলের শেয়ার দর কমেছে ৮.৪৭ শতাংশ।

খেলাপি ঋণে জর্জরিত, মুনাফা দিতে না পারা ফারইস্ট ফিন্যান্সের শেয়ার দর কমেছে ৭.০৪ শতাংশ।

এ ছাড়া জেনারেশন নেক্সটের শেয়ার দর ৬ টাকা ৬০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৬ টাকা ২০ পয়সা।

জেড ক্যাটাগরিতে তালিকাভুক্ত ৩৪টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র চারটির। তিনটি কোম্পানির লেনদেন হয়নি। বাকি ২৭টি কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে।

ওটিসি থেকে ফেরা চার কোম্পানির তিনটিরও দরপতন

গত ১৩ জুলাই ওটিসি মার্কেট থেকে মূল মার্কেটে ফিরে পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটতে থাকা চার কোস্পানির মধ্যে শেষ পর্যন্ত তিনটির কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে। বেড়েছে একটির।

মুন্নু ফেব্রিক্সের শেয়ার দর কমেছে ৪.৪৩ শতাংশ; ২৪ টাকা ৮০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ২৩ টাকা ৭০ পয়সা।

তমিজউদ্দিন টেক্সটাইলের দর কমেছে দশমিক ২৩ শতাংশ; ৮৭ টাকা থেকে কমে হয়েছে ৮৬ টাকা ৮০ পয়সা।

পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের শেয়ার দর কমেছে ১.৬৯ শতাংশ; ১৩০ টাকা ২০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১২৮ টাকা।

তবে মনস্পুল পেপারের শেয়ার দর বেড়েছে; ১৬৯ টাকা ১০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৬৯ টাকা ৩০ পয়সা।

চাঙা ব্যাংক খাত

করোনার মধ্যেও অপ্রত্যাশিত মুনাফা করে যাওয়া ব্যাংক খাত নিয়ে ঈদের ছুটিতে অনেক হিসাবনিকাশ হয়েছে।

ঈদের আগে সাতটি ব্যাংকের মধ্যে ছয়টির অর্ধবার্ষিকীর যে হিসাব পাওয়া গেছে, তাতে দুটি ব্যাংক ১০০ শতাংশের বেশি, একটি ৭০ শতাংশ, একটি ৪১ শতাংশ, একটি ২৪ ও একটি ২২ শতাংশ বেশি মুনাফা করেছে।

আরও অনেকগুলো ব্যাংক তাদের প্রান্তিক প্রকাশ করবে চলতি সপ্তাহে। এরই মধ্যে গণমাধ্যেমে এসেছে যে, ব্যাংকগুলো গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি আয় করেছে এবার। এ কারণে এই খাত নিয়ে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছিল।

হয়েছেও তাই। তিনটি ব্যাংকের দর হারানো আর দুটির অপরিবর্তিত থাকার বিপরীতে বেড়েছে ২৬টির দর। তবে দর বৃদ্ধির হার শতকরা হিসেবে খুব বেশি হয়নি। এ কারণে সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধির তালিকায় এই খাত উঠে আসেনি।

এ খাতের সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের দর। ৪.৭৬ শতাংশ বেড়ে শেয়ার প্রতি দাম হয়েছে ১৫ টাকা ৪০ পয়সা।

ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে ২.৩০ শতাংশ; ১৩ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৩ টাকা ৩০ পয়সা।

উত্তরা ব্যাংকের ২.০৯ শতাংশ, ব্যাংক এশিয়ার ২.০৭ শতাংশ, এনসিসি ব্যাংকের ১.৯৮ শতাংশ, ইউনাইটেড কমার্সিয়াল ব্যাংকের ১.৮৬ শতাংশ, প্রাইম ব্যাংকের ১.৭৫ শতাংশ, এক্সিম ব্যাংকের ১.৬৯ শতাংশ, আইএফআইসির ১.৫০ শতাংশ, প্রিমিয়ারের ১.৪৮ শতাংশ, স্যোসাল ইসলামীর ১.৪৭ শতাংশ, ন্যাশনাল ব্যাংকের ১.২৬ শতাংশ এবং পূবারী ব্যাংকের ১.২১ শতাংশ দর বেড়েছে।

এই খাতে হাতবদল হয়েছে ১১০ কোটি ৭২ লাখ টাকা।

কমল বিমার শেয়ার দর

বিমা খাতের সবচেয়ে বেশি দর পতন হয়েছে প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ৪.৩০ শতাংশ। শেয়ার দর ১১৬ টাকা ২০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১১১ টাকা ২০ পয়সা।

তালিকায় আছে সদ্য জেড ক্যাটাগরি থেকে পরিবর্তন হয়ে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরিত হওয়া পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সও। রোববার কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি দর কমেছে ৩.৪৯ শতাংশ।

পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের কমেছে ৩.০৪ শতাংশ। শেয়ার দর ১১৪ টাকা ৮০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১৪০ টাকা ২০ পয়সা।

রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের ২.৮২ শতাংশ, স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের ২.৭১ শতাংশ, ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্সের ২.৫১ শতাংশ, ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের ২.৫০ শতাংশ, সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ২.১৮ শতাংশ দরপতন হয়েছে।

বেশ কিছু বিমা কোম্পানির দরও বেড়েছে। প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের ৪.৯০ শতাংশ, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সের ৩.৩২ শতাংশ, অগ্রণী ইন্স্যুরেন্সের দর বেড়েছে ৩.২৮ শতাংশ।

সব মিলিয়ে এই খাতে লেনদেন হয়েছে ১৩৫ কোটি টাকা। ১৭টি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ৩৩টির দর।

অন্যান্য খাতের অবস্থা

সবচেয়ে বেশি দর পতন হয়েছে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের। ৫৮টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে পাঁচটির। দর পাল্টায়নি একটির। বাকি ৫২টি কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে।

এই খাতে লেনদেন হয়েছে ১০৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা।

ব্যাংক বহির্ভুত আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের ২৩টি কোম্পানির মধ্যে রোববার দর বেড়েছে তিনটির। দর পাল্টায়নি চারটির। দর কমেছে ১৬টির।

এই খাতে হাতবদল হয়েছে ৭২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।

প্রকৌশল খাতের ৪২টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১১টির। দর পাল্টায়নি একটির। বাকি ৩০টি কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে।

এই খাতে লেনদেন হয়েছে সবচেয়ে বেশি। হাতবদল হয়েছে ১৪০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।

ঈদের আগে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসা মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাত আগ্রহ ধরে রাখতে পারেনি। এই খাতের ৩৭টি তহবিলের মধ্যে দর বেড়েছে সাতটি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের, পাল্টায়নি সাতটির। বাকি ২৩টি ফান্ডের দর কমেছে।

এই খাতে লেনদেনও কমেছে ৬৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা হাতবদল হয়েছে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৬টি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ১৪টির দর। আর দুটির দর পাল্টায়নি।

এই খাতে লেনদেন হয়েছে ৭১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।

খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে দীর্ঘদিন ধরে ঝিমাতে থাকা ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর প্রতি ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেছে। এই কোম্পানির দর ১৯ টাকা ৬০ পয়সা বেড়ে হয়েছে ৫৭৯ টাকা ৯০ পয়সা।

এই খাতে ৯টি করে কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে ও কমেছে। অপরিবর্তিত ছিল দুটির দর।

এই খাতে লেনদেন হয়েছে মোট ৯১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।

সূচক ও লেনদেন

ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৯ দশমিক ১৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৪২৪ পয়েন্টে।

শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ৬ দশমিক ০৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩০৩ পয়েন্টে।

বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ১৪ দশমিক ০৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩৩৬ পয়েন্টে।

এদিন লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে বেড়েছে ১১৬টির, কমেছে ২৩৭টির, পাল্টায়নি ২২টির। লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই আগের দিনের তুলনায় ১০৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৬৭৩ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে মোট ৪০ কোটি টাকা।

এ বিভাগের আরো খবর