মহামারির মধ্যে ব্যাংকের আয় বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় এবার চমক দেখাল সিটি ব্যাংক। জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি আয় করেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি।
সোমবার ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে অনুমোদন হওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী অর্ধবার্ষিকে ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ২ টাকা ৬ পয়সা। গত বছর এই আয় ছিল ১ টাকা ছিল। অর্থাৎ আয় বেড়েছে ১০৬ শতাংশ।
আয়ের সিংহভাগই হয়েছে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত দ্বিতীয় প্রান্তিকে। এই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি মুনাফা হয়েছে ১ টাকা ১৩ পয়সা। গত বছরের এই সময়ে তা ছিল ২৯ পয়সা।
এর আগে মার্কেন্টাইল ব্যাংক তার যে অর্ধবার্ষিক আয়ের হিসাব প্রকাশ করে, তাতেও শতভাগের বেশি প্রবৃদ্ধি দেখা যায়।এই ব্যাংকটি শেয়ার প্রতি ২ টাকা ২ পয়সা আয় করেছে এই সময়ে, যা আগের বছর একই সময় ছিল ৯৭ পয়সা। অর্থাৎ মুনাফা বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। শতকরা হিসেবে আয় বেড়েছে ১০৮ শতাংশ।
কেবল এই দুটি ব্যাংক নয়, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রায় সবগুলোই মহামারির দ্বিতীয় বছরে আগের বছরের তুলনায় অনেক বেশি আয়ের তথ্য মিলেছে তাদের অর্ধবার্ষিকের প্রতিবেদনে।
আয় বৃদ্ধির একটি ব্যাখ্যা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে দিয়েছে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক। তারা জানিয়েছে, মহামারির বছরে খরচ কমানো, বিভিন্ন খাতে ব্যবসা বাড়া আর ঋণের সঞ্চিতি সংরক্ষণে ছাড় দেয়ায় স্ফীত হয়েছে তাদের কোষাগার।
এখন পর্যন্ত যে সাতটি ব্যাংক শেয়ার প্রতি আয়ের যে হিসাব প্রকাশ করেছে, তার মধ্যে ছয়টিই গত বছরের চেয়ে বেশি আয় করেছে। আর একটি কোম্পানি কখনও মুনাফার মুখ দেখেনি।
শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক এই ছয় মাসে শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ৭২ পয়সা আয় করেছে যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭০ শতাংশ বেশি।
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল বা ইউসিবি ব্যাংক বছরের প্রথম ছয় মাসে শেয়ারপ্রতি আয় করেছে ১ টাকা ২ পয়সা। গত বছর একই সময়ে এই আয় ছিল ৭২ পয়সা। অর্থাৎ ব্যাংকটির আয় বেড়েছে ৪১ শতাংশ।
উত্তরা ব্যাংক ব্যাংকটি বছরের প্রথম ছয় মাসে শেয়ারপ্রতি আয় করেছে ১ টাকা ৭৯ পয়সা। গত বছর একই সময়ে এই আয় ছিল ১ টাকা ৪৪ পয়সা। শতকরা হিসেবে আয় বেড়েছে ২৪ শতাংশের কিছু বেশি।
এনসিসি ব্যাংক এই ছয় মাসে শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ৪৩ পয়সা আয় করেছে যা আগের বছরের একই সময় ছিল ১ টাকা ১৭ পয়সা। শতকরা হিসেবে বেড়েছে ২২ শতাংশের কিছু বেশি।
ব্যাংকে আয় বৃদ্ধির এই চমক গত বছর করোনাকালেও দেখা গেছে। ২০২০ সালের মার্চে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার পর সাধারণ ছুটিতে ৬৬ দিন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে যাওয়ার পর আলোচনা শুরু হয়, ব্যাংকগুলোর আয়ে ধস নামে কি না।
তবে শেষ পর্যন্ত মহামারির বছরে আগের বছরের চেয়ে বেশি আয় করে চমক দেখায় ব্যাংকিং খাত। আর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলো এবার বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিয়েছে অনেকটাই আশাতীত।
চলতি বছর পুঁজিবাজারে প্রথম প্রান্তিকের যে ঘোষণা এসেছে, সেখানেও দেখা গেছে, বেশির ভাগ ব্যাংকের আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে অনেক বেশি বেড়েছে।
দ্বিতীয় প্রান্তিক শেষ হয়েছে গত ৩০ জুন। এর হিসাব এখনও প্রকাশ করেনি ব্যাংকগুলো। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তগুলো এই হিসাব প্রকাশ করার জন্য ৩০ দিন সময় নেবে। আর বেশ কয়েকটি ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের তারিখ ঘোষণা করেছে।
ব্যাংক খাতে সুবাতাসের মধ্যে সেই হতাশার বৃত্তেই আইসিবি ইসলামী ব্যাংক। গত বছরের মতোই চলতি বছরও অর্ধবার্ষিকীতে শেয়ারপ্রতি ৩২ পয়সা লোকসান দিয়েছে ব্যাংকটি।