বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

এবার ১০ বছরের সর্বোচ্চ অবস্থানে পুঁজিবাজার

  •    
  • ১৯ জুলাই, ২০২১ ১৪:৩৬

২০১১ সালের ৩১ জুলাই সূচক ছিল ৬ হাজার ৪৫৯ পয়েন্ট। তখন অবশ্য এখনকার মতো ডিএসইএক্স সূচক ছিল না। ছিল ডিএসই সূচক। ২০১০ সালের মহাধসের পর টানা পড়তে পড়তে বাজার ৬ হাজার ৪০০ পয়েন্টে নেমে আসে সেদিন। এরপর আর কখনও সেখানে যায়নি।

পুঁজিবাজারে উত্থান অব্যাহত আছে। ঈদের আগের শেষ কর্মদিবসের শুরুতে সূচকের পতন হলেও ব্যাংক ও বিমার দর বৃদ্ধিতে ভর করে সূচক এবার ১০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো ৬ হাজার ৪০০ পয়েন্টের ঘর অতিক্রম করল।

২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি নতুন সূচক ডিএসইএক্স চালুর পর সর্বোচ্চ অবস্থানের রেকর্ড আগেই ভেঙেছিল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। সামনে ছিল আগের সূচকের আরেক ধাপ ৬ হাজার ৩৮৯ পয়েন্ট।

ঈদের ছুটিতে ছয় দিনের বিশ্রামে যাওয়া পুঁজিবাজারে এই ডিএসই সূচক অতিক্রম করে কি না, এ নিয়ে অপেক্ষায় লেনদেনের শুরুতে সূচক পড়ে যায় আগের দিনের তুলনায়।

এক পর্যায়ে ১৩ পয়েন্ট পড়ে গেলেও পরে ব্যাংক ও বিমা খাতের কোম্পানিগুলোর দাম বাড়তে থাকায় সূচকে যোগ হতে থাকে পয়েন্ট। বেলা ১টা ৩৩ মিনিটে সূচক ৬ হাজার ৪০২ পয়েন্টে পৌঁছে।

দিন শেষে সূচকের অবস্থান ছিল ৬ হাজার ৪০৫ পয়েন্ট। এর চেয়ে বেশি সূচক ছিল ২০১১ সালের ৩১ জুলাই, ৬ হাজার ৪৫৯ পয়েন্ট। অর্থাৎ এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে এখন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ।

সূচক বাড়লেও ঈদের আগে শেষ কর্মদিবসে বিনিয়োগকারীরা যে শেয়ার কেনাবেচায় অনেকটাই সতর্কতা দেখিয়েছেন, সেটি লেনদেনের চিত্রেই স্পষ্ট। আগের দিনের তুলনায় লেনদেন কমেছে ৬০০ কোটি টাকারও বেশি।

সূচকে বেশ ভালো পরিমাণ পয়েন্ট যোগ হলেও এদিন কমেছে বেশির ভাগ শেয়ারের দাম।

অনেক দিন পর সর্বাধিক দর বৃদ্ধির তালিকায় বিমা খাতের কোম্পানিগুলোর আধিক্য দেখা গেছে। এই খাতের দাম এক বছরে কয়েক গুণ বাড়ার পর সাম্প্রতিক দর সংশোধনে শেয়ারধারীদের মধ্যে যে হতাশা দেখা দিয়েছিল, সেটি কাটবে কি না, এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে মুহূর্তেই।

হতাশা কাটিয়ে ব্যাংক খাতও অন্তত এক দিন কিছুটা স্বস্তি দিল শেয়ারধারীদের। তবে আগের দিন তুমুল আলোচনায় থাকা মিউচ্যুয়াল ফান্ড এদিন হতাশ করেছে। দর হারিয়েছে প্রায় সবগুলো। লেনদেনও হয়েছে কম।

বস্ত্র খাতে সকালে পতন হলেও ঘুরে দাঁড়িয়েছে শেষ বেলায়। আগের দিনের উত্থান ধরে রাখতে পারেনি জ্বালানি খাতও। আবার ব্যাংকের চাঙাভাবের প্রভাব পড়েনি আর্থিক খাতে।

খাদ্য ও আনুষঙ্গিক, ওষুধ ও রসায়ন এবং প্রকৌশলের মতো বড় খাতগুলোতেও দর পতন ঘটেছে।

বিমার ঘুরে দাঁড়ানো

গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি এরপর গত এপ্রিল থেকে জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত অবিশ্বাস্য উত্থান দেখেছে বিমা খাত। তবে এক মাস ধরেই দর সংশোধনের কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা দেখা গিয়েছিল। তারা অপেক্ষায় ছিলেন কবে ঘুরে দাঁড়াবে।

ঈদের ছুটির আগে দ্বিতীয় শেষ কর্মদিবসেও প্রায় সব বিমা কোম্পানির দরপতন এবং ঈদের আগে শেষ কর্মদিবসের শুরুতেও দর হারায় বেশিরভাগ কোম্পানি। তবে সময় গড়াতে থাকলে পাল্টে যায় পরিস্থিতি।

এই খাতের ৫১টি কোম্পানির মধ্যে দুটির লেনদেন স্থগিত ছিল। বাকিগুলোর মধ্যে দর কমেছে দুটির, একটির দর ছিল অপরিবর্তিত। বেড়েছে বাকি ৪৬টির।

পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের দর আপাতদৃষ্টিতে কমতে দেখা গেলেও আসলে কিন্তু বেড়েছে। শেয়ার প্রতি ২ টাকা নগদের পাশাপাশি ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার দিয়েছে কোম্পানিটি। রেকর্ড ডেটের কারণে রোববার ছিল স্থগিত। তার আগের দিন দাম ছিল ১৫৬ টাকা ৭০ পয়সা। ১০ শতাংশ শেয়ার যোগ হওয়ায় সমন্বয়কৃত দাম দাঁড়ায় ১৪১ টাকা ১০ পয়সা। কিন্তু দিন শেষে দাম দাঁড়ায় ১৪৪ টাকা ৬০ পয়সা।

সবচেয়ে বেশি বেড়েছে গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের দর। আগের দিনের সঙ্গে ৯.৯৮ শতাংশ যোগ হয়ে দাম দাঁড়িয়েছে ৬৩ টাকা ৯০ পয়সা।

সেন্টাল ইন্স্যুরেন্সের দরও বেড়েছে ৯.৪৭ শতাংশ। ৫৪ টাকা ৯০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬০ টাকা ১০ পয়সা।

ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের দর ৫৪ টাকা ৯০ পয়সা থেকে ৯.১০ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৬০ টাকা ১০ পয়সা।

পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের ৮.১৩ শতাংশ, রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের দর ৭.৯৬ শতাংশ। নর্দার্ন ইন্স্যুরেন্সের ৬.৬৫ শতাংশ, স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের ৬.১৯ শতাংশ দাম বেড়েছে।

প্রাইম, ফিনিক্স, বিজিআইস, রূপালী লাইফের দর ৬.১৮ থেকে ৫.৪৮ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

সবচেয়ে বেশি ৩.৯২ শতাংশ পড়েছে প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সের। ডেল্টা লাইফ ও ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের দর কমেছে খুবই কম পরিমাণে।

এই খাতের লেনদেন মোট ১৬৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা।

ঝিমুনি ভেঙে ব্যাংকের ঝলক

পুঁজিবাজার নতুন উচ্চতায় উঠার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হতাশা সম্ভবত ব্যাংক খাত নিয়ে। একের পর এক ভালো খবরের প্রভাবও পড়েনি শেয়ারদরে। কোনো একদিন কিছু বাড়লে পরের কয় দিনে এর চেয়ে বেশি পড়ে ধীরে ধীরে। এভাবে একটি বৃত্তেই চলছিল ঘুরপাক।

এই খাতও জাগবে-এমন কথা বলাবলি হচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরেই। তবে আভাস পাওয়া যাচ্ছিল না। দাম কমতে থাকায় নতুন করে শেয়ার কেনায় আগ্রহ মানুষ দেখিয়েছে কম। খাতওয়ারী বাজার মূলধন ও শেয়ার সবচেয়ে বেশি হলেও লেনদেন রোববার কমে একশ কোটি টাকার নিচে নেমে আসে।

তবে ঈদের আগের দিন দুপুরের আগে আগে এই খাতের শেয়ারে নড়চড় শুরু হয়।

তালিকাভুক্ত ৩১টি ব্যাংকের দর বেড়েছে ২৫টির। কমে মাত্র দুটির। আর পাল্টায়নি চারটির।

আগের দিনের ‍তুলনায় লেনদেন ৩৩ শতাংশ কমলেও এই খাতে লেনদেন বেড়ে আবার একশ কোটির ঘর অতিক্রম করে হয় ১১২ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

দর বৃদ্ধির তালিকার শীর্ষে ছিল ব্যাংক খাতের সবচেয়ে দুর্বল লোকসানি আইসিবি ইসলামী ব্যাংক। শতকরা হিসাবে দর বেড়েছে ৩.৯২ শতাংশ।

এছাড়া এনআরবিসির দর ৩.২৭ শতাংশ, ব্যাংক এশিয়ার ৩.১৯ শতাংশ, প্রাইম ব্যাংকের ২.৭০ শতাংশ, ডাচ বাংলা ব্যাংকের ২.৬২ শতাংশ, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের ২.৩২ শতাংশ বেড়েছে।

বাকি ব্যাংকগুলোর দর ১০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। আর কমার তালিকায় থাকা ট্রাস্ট ব্যাংক ২০ পয়সা আর ইসলামী ব্যাংক কমেছে ১০ পয়সা।

ব্র্যাক, এমটিভি, মার্কেন্টাইল ও ওয়ান ব্যাংকের দর পাল্টায়নি।

তুমুল আগ্রহের পর দিন মিউচ্যুয়াল ফান্ডে পতন

গত দুই দিনে এই খাতে লেনদেন ছিল যথাক্রমে ১৪০ কোটি ও ২০৫ কোটি টাকা। তবে তৃতীয় ঈদের ছুটিতে যাওয়ার আগের দিন দর হারিয়েছে প্রায় সব কটি ফান্ড। লেনদেনও কমেছে অনেক।

আটটি ফান্ডের দর পাল্টায়নি, দর হারিয়েছে ২৮টি আর একটির লেনদেন হয়নি।

এই খাতে মোট লেনদেন হয়েছে ৯৪ কোটি টাকা।

সবচেয়ে বেশি দর হারিয়েছে প্রাইম ফিন্যান্স ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ৫.০৫ শতাংশ। ইউনিট প্রতি দর ২১ টাকা ৮০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ২০ টাকা ৭০ পয়সা। এরপরই আছে ইবিএল ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড, যার ইউনিট প্রতি দর কমেছে ৪.০৮ শতাংশ।

সিএপিএম আইবিবিএল ইসলামী মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর কমেছে ৪ শতাংশ। ইউনিট প্রতি দর ২৫ টাকা থেকে কমে হয়েছে ২৪ টাকা।

এসইএমএল এফবিএলএসএল গ্রোথ ফান্ডের ইউনিট প্রতি দর কমেছে ৩.৭৩ শতাংশ। ইউনিট প্রতি দর ১৩ টাকা ৪০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১২ টাকা ৯০ পয়সা।

ফিনিক্স ফিন্যান্স ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট প্রতি দর কমেছে ৩.৪২ শতাংশ। আইসিবি এএমসিএল সেকেন্ড মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর কমেছে ৩.১০ শতাংশ। ভ্যানগান্ড এএমএল বিডি ফিন্যান্স মিউচ্যুয়াল ফান্ড ওয়ান এর ইউনিট প্রতি দর কমেছে ২.৯৭ শতাংশ।

অন্যান্য খাতের চিত্র

টাকার অংকে লেনদেনের শীর্ষে টানা দ্বিতীয় দিন প্রকৌশল খাত, ৪২ টি কোম্পানির হাতবদল হয়েছে ১৩৭ কোটি টাকা।

দর বেড়েছে ১২টি, কমেছে ২৮টির, পাল্টায়নি দুটির।

সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের চিত্র

বস্ত্র খাতের মোট লেনদেন হয়েছে ১১৪ কোটি টাকা। ৫৮টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ২৭টির, কমেছে ২১টির। বাকি ১০টি কোম্পানির শেয়ার দর পাল্টায়নি।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে লেনদেন হয়েছে ৬৯ কোটি টাকা। ২৩ টি কোম্পানির মধ্যে ১৪টির দর কমেছে, দর বেড়েছে সাতটি কোম্পানির। দর পাল্টায়নি দুটির।

ব্যাংক বহির্ভুত আর্থিক খাতের লেনদেন হয়েছে ৫৮ কোটি ৫০ লাখ টাকার। ২৩ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দর বেড়েছে ১০টির। দর কমেছে আটটির। দর পাল্টায়নি পাঁচটির।

সূচক ও লেনদেন

সোমবার ডিএসই প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৩৯ দশমিক ৯২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৪০৫ পয়েন্টে।

শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস সূচক ৮ দশমিক ৩৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৮৭ পয়েন্টে।

বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ১৬ দশমিক ৩৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩২২ পয়েন্টে।

লেনদেন হয়েছে মোট ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ১৯০ দশমিক ২১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৫৬৯ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে মোট ৪৪ কোটি টাকা।

এ বিভাগের আরো খবর