প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর কোটা ৩০ শতাংশ কমিয়ে ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কোটা বাড়িয়ে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জে কমিশন (বিএসইসি)।
এখন থেকে নতুন আইপিওতে আসা কোম্পানির ৭০ শতাংশ শেয়ার থাকবে সাধারণ বিনিয়োগকারী ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের জন্য।
বাকি ৩০ শতাংশের মধ্যে ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে আসা কোম্পানির ২০ শতাংশ থাকবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আর ১০ শতাংশ বরাদ্দ থাকবে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের।
আর বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে চাইলে সেই কোম্পানির ৩০ শতাংশ শেয়ার রাখা হবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য। সাধারণ বিনিয়োগকারীসহ প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা পাবেন ৭০ শতাংশ শেয়ার। অর্থাৎ বুকবিল্ডিংয়ে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের কোটা থাকবে না।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। গত ৯ মার্চ এ-সংক্রান্ত খসড়া নীতিমালা প্রকাশ করে বিএসইসি।
২০১০ সালে পুঁজিবাজারে ধসে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য যে কোটা ছিল, সেটির মেয়াদ না বাড়ানোর পর সেই কোটার সুবিধা এখন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই সঙ্গে কমানো হয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক কোটা।
তবে এই ৭০ শতাংশের মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারী কত আর প্রবাসী বিনিয়োগকারী কত, সেটি এখনও স্পষ্ট করা হয়নি।
এর আগ পর্যন্ত আইপিওতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর কোটা ছিল ৫০ শতাংশ। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পেতেন ৩০ শতাংশ। ক্ষতিগ্রস্তরা পেতেন ১০ শতাংশ আর প্রবাসীদের জন্য ছিল ১০ শতাংশ।
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর কোটা ৫০ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করে তা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বরাদ্দ দেয়ার সিদ্ধান্তকে পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
কারণ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে বেশি শেয়ার থাকলে বাজারে চাহিদা তৈরি হয়। এর ফলে আইপিও শেয়ারের দাম দ্রুত বেড়ে যেত। আর নানা সময় দেখা গেছে, আইপিওতে আসা শেয়ারের দাম বেড়ে পরে ধস নামে এবং এতে বিনিয়োগকারীরা ব্যাপকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েন।
দুই সুবিধা দেখছেন বিশ্লেষক
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাবেক প্রধান গবেষণা কর্মকর্তা দেবব্রত কুমার সরকার এই সিদ্ধান্তে দুটি ইতিবাচক দিক দেখছেন।
তিনি বলেন, ‘প্রথমত, এখন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারের প্রতি বেশি আগ্রহী হবেন। এ সময় আসা বেশির ভাগ আইপিও শেয়ার দর কয়েক গুণ হয়েছে। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা এ সুযোগে মুনাফা তুলে নিয়েছেন। কিন্ত সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শর্ত পরিপালন করে আইপিওতে আবেদন করতে হচ্ছে।
‘দ্বিতীয়ত, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সুবিধা দেয়া হলেও তারা সেকেন্ডারি মাকেটে বিনিয়োগে ততটা আগ্রহী নয়। কিন্তু আইপিও ব্যবসা করেই বছরের আয় তুলে নিতেন। এখন কোটা কম হওয়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বাজারবন্ধব হতে উৎসাহিত করবে।’
কোটা বাতিলের দাবি ছিল সাধারণ বিনিয়োগকারীদের
এপ্রিলের পর পুঁজিবাজারে যেসব কোম্পানি তালিকাভুক্ত হওয়ার অনুমোদন দেয়া হয়েছে, তাদের শেয়ার লটারির বদলে আনুপাতিক হারে বণ্টন করা হচ্ছে।
এরই মধ্যে তিনটি কোম্পানির শেয়ার আনুপাতিক হারে বণ্টন করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার প্লান্ট ও সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার ব্যাংক লিমিটেড। সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স পুঁজিবাজারে লেনদেন হচ্ছে।
বারাকা পতেঙ্গার সব কার্যক্রম শেষে বৈধ আবেদনকারীদের মধ্যে শেয়ার বণ্টন করা হয়েছে এবং সাউথবাংলা অ্যাগ্রিকালচার ব্যাংকের আবেদন গ্রহণ শেষ হয়েছে সোমবার।
বিএসইসি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে আসতে চাওয়া কোম্পানির শেয়ার বণ্টনের খসড়া নীতিমালা প্রকাশ করেছিল, যেখানে তালিকাভুক্তিতে শেয়ার বণ্টনের ক্ষেত্রে কোটা বহাল রাখা হয়েছিল। সেটি এখন চূড়ান্ত হওয়ায় সে অনুযায়ী বণ্টন হবে আইপিও শেয়ার।
যদিও শেয়ার বণ্টনের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কোটা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছিলেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও বিনিয়োগকারীরা।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, ‘যেহেতু আনুপাতিক হারে শেয়ার বণ্টন হচ্ছে, সেখানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগাকরীদের জন্য আলাদা করে কোটা রাখা প্রয়োজন ছিল না। তবে যদি তাদের দিতেই হতো, তাহলে পুঁজিবাজারে তাদের বিনিয়োগের ওপর কোটা দেয়া উচিত ছিল। যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগ বেশি, সেই প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত কোটা সুবিধা পাবে।’
তিনি বলেন, ‘যদি কোটা রাখতেই হয়, তাহলে ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের জন্য রাখা উচিত । যাদের বিনিয়োগ বেশি তাদের জন্য সুবিধা রাখা উচিত ছিল।’