এক দিন আগে বিমা খাতের কোম্পানির শেয়ারের যে পতন হয়েছিল তাতে আতঙ্ক ছড়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। এক দিনের ব্যবধানে আবারও নতুন আশা জাগিয়ে সূচক উত্থানে ভূমিকা রাখল পুঁজিবাজারের এই খাতটি।
ধারণা করা হয়েছিল, বিমা খাতের শেয়ারের মূল্য সংশোধন হয়েছে। তারপরও থেমে থেমে এ খাতের শেয়ারের দরপতন নতুন বিনিয়োগের সিদ্ধান্তে সময় নিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।
এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিমা খাতের শেয়ারের এমন উত্থান-পতন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, একদিন দর বাড়ার পর দুদিন দর পতন, এ খাত থেকে নতুন করে মুনাফা উত্তোলন অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
বিমা খাতের পাশাপাশি মঙ্গলবার ব্যাংক খাতের শেয়ারের উত্থান দেখা গেছে। বেড়েছে বেশিরভাগ ব্যাংকের শেয়ার দর। তবে এ দিন সর্বোচ্চ দর বৃদ্ধিতে এখনও দাপটে আছে তালিকাভুক্ত দুর্বল কোম্পানিগুলো।
ফলে পুঁজিবাজারে যে উত্থান, তাতে মৌল ভিত্তিক কোম্পানিতে বিনিয়োগ করার তুলনায় দুর্বল কোম্পানিতে মুনাফা দৃশ্যমান হচ্ছে বেশি।
এতে বিনিয়োগ ঝুঁকি আছে বলা হলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির দুর্বল কোম্পানির পুনরুজীবিত করার যে উদ্যোগ, তাতে এ ধরনের সব কোম্পানির পালে ধাক্কা লাগছে। বাড়ছে চালু হওয়ার সম্ভাবনা থাকা কোম্পানির পাশাপাশি অস্তিত্বহীন কোম্পানিগুলোরর শেয়ারদর।
করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধের দ্বিতীয় ধাপে দ্বিতীয় দিনের লেনদেন চলছে পুঁবিাজারে। এ সময়ে ব্যাংকের কার্যক্রম রোববার বন্ধ রাখায় সপ্তাহের পাঁচ দিনের বদলে চার দিন লেনদেন হচ্ছে গত এক সপ্তাহ ধরে।
একই সঙ্গে লেনদেনে সময়সীমাতেও আনা হয়েছে পরিবর্তন। ১ জুলাই থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত দেয়া শাটডাউনে পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়েছে সকাল ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত। পরে দ্বিতীয় মেয়াদে শাটডাউন বাড়ানোর ফলে ব্যাংকের সঙ্গে সমন্বয় রেখে লেনদেন সময়সীমা এক ঘণ্টা বাড়িয়ে ২টা পর্যন্ত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার লেনদেন শুরুর ১৫ মিনিটে সূচক কমে আসার প্রবণতা দেখা গেলেও পরে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। ৬ হাজার ২৩১ পয়েন্ট থেকে কমে ৬ হাজার ২২২ পয়েন্টে নেমে আসে। এরপর টানা সূচকের উত্থানে শেষ হয় লেনদেন।
এ দিন ব্যাংক খাতের ৩১টি ব্যাংকের মধ্যে মাত্র তিনটির শেয়ার দর কমেছে। দর পাল্টায়নি চারটি কোম্পানির। বাকি ২৪টি ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে। দর বৃদ্ধিতে এগিয়ে আছে এনআরবিসি ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক।
বিমা খাতের তালিকাভুক্ত ৫১টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৩০টির। দর কমেছে ১৯টির। দর পাল্টায়নি দুটির। দর বৃদ্ধিতে এগিয়ে ছিল এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স, তাকাফুল ইন্স্যুরেন্স, পিপলস ইন্স্যুরেন্স।
অপরদিকে জেড ক্যাটাগরিতে তালিকাভুক্ত ৩৭টি কোম্পানির মধ্যে মাত্র নয়টি কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে। আর বেড়েছে ২২টির।
ব্যাংকের শেয়ারে উত্থান
মঙ্গলবার লেনদেনে সবচেয়ে বেশি শেয়ারদর বেড়েছে সাউথইস্ট ব্যাংকের। ব্যাংকটির শেয়ারের দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
এ ছাড়া এ তালিকায় আছে এনআরবিসি ব্যাংক। এ দিন ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ। শেয়ার দর ২৬ টাকা ৯০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ২৯ টাকা ৫০ পয়সা।
এরপরেই আছে রূপালী ব্যাংক, যার শতকরা হিসেবে শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৫ দশমিক ১৫ শতাংশ। শেয়ার দর ৩৪ টাকা ৯০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৬ টাকা ৭০ পয়সা।
এবি ব্যাংকের শেয়ার ১৩ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ৫ দশমিক ১০ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১৪ টাকা ৪০ পয়সা।
ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে ৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ। শেয়ার দর ৮২ টাকা ২০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা।
ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে ৪ শতাংশ। শেয়ার দর ১২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে হয়েছে ১৩ টাকা।
এ ছাড়া এনসিসি ব্যাংকের ৩ দশমিক ৫২ শতাংশ, ঢাকা ব্যাংকের ২ দশমিক ৯২ শতাংশ, প্রাইম ব্যাংকের ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ, যমুনা ব্যাংকের ২ দশমিক ৩৮ শতাংশ শেয়ার দর বেড়েছে।
ব্যাংক খাতের মোট লেনদেন হয়েছে ১২৩ কোটি টাকা। লেনদেনে দর বেড়েছে ২৪টি ব্যাংকের।
পতন থেকে উত্থানে বিমা
সোমবার বিমা খাতের ঢালাও দরপতন হয়েছিল। সেদিন ৫১টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছিল মাত্র তিনটির। আর পাল্টায়নি একটির। বাকি ৪৭টি কোম্পানির দর হারিয়েছিল।
মঙ্গলবার বিমা খাতের মোট লেনদেন হয়েছে ১৪২ কোটি টাকা। এ দিন লেনদেনে ৩২টি কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। দর কমেছে ১৬টির। দর পাল্টায়নি তিনটির।
লেনদেনে সবচেয়ে বেশি শেয়ার দর বেড়েছে এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের, যার শতকরা হিসেবে শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৭ দমমিক ৮৮ শতাংশ। শেয়ার প্রতি দর ৯৬ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১০৪ টাকায়।
এরপর ছিল স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ। তাকাফুল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ। পিপলস ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৩ দমমিক ৭৪ শতাংশ। ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ। প্রাইম লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৩ দশমিক ৪২ শতাংশ।
এ ছাড়া বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর ৪৪ টাকা ২০ পয়সা থেকে ৩ দশমিক ১৬ শতাংশ দর বেড়ে হয়েছে ৪৫ টাকা ৬০ পয়সা।
অন্যান্য খাতের লেনদেন
মঙ্গলবার বস্ত্র খাতের মোট লেনদেন হয়েছে ২৩০ কোটি টাকা। লেনদেনে এ খাতের মোট ৫৮টি কোম্পানির মধ্যে ২৪টির দর বেড়েছে। এ খাতের সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে ফ্যামিলিটেক্স, সিএনএ টেক্সটাইল ও এইচআর টেক্সাইলের।
নন ব্যাংক আথিক প্রতিষ্ঠান খাতের মোট লেনদেন হয়েছে ১১৩ কোটি টাকা। এ দিন লেনদেনে ২৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দর বেড়েছে। কমেছে ৪টির। আর দর পাল্টায়নি একটির।
লেনদেনে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে ফারইস্ট ফিন্যান্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স কোম্পানির।
প্রকৌশল খাতের ৪২টি কোম্পানি মোট লেনদেন হয়েছে ১৪৪ কোটি টাকা। এরমধ্যে দর বেড়েছে ২৫টির। মঙ্গলবার এ খাতের সবচেয়ে বেশি শেয়ার দর বেড়েছে আনোয়ার গ্যালভানাইজিং।
সূচক ও লেনদেন
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৫৭ দশমিক ৬২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৬৬ পয়েন্টে।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ৭ দশমিক ২৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৫৪ পয়েন্টে।
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ১৪ দশমিক ৭০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৭৩ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ২১২টির, দর কমেছে ১২৯টির। দর পাল্টায়নি ৩২টির। লেনদেন হয়েছে মোট ১ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই আগের দিনের তুলনায় ১৭৯ দশমিক ৬২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ২২০ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে মোট ৫৭ কোটি টাকা।
লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৬৫টির। দর কমেছে ১১৮টির। দর পাল্টায়নি ২৭টির।