বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দুর্বল কোম্পানির উত্থান, ব্যাংক-বিমার পতন

  •    
  • ৭ জুলাই, ২০২১ ১৪:০৩

চলতি সপ্তাহের শুরু থেকে আবারও মূল্য সংশোধনে যাওয়া বিমা খাতের শেয়ারের পতন অব্যাহত ছিল বুধবার। পাশাপাশি ব্যাংক, নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, প্রকৌশল, বস্ত্র খাতেরও বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দরপতন হয়েছে।

পুঁজিবাজারে কিছুদিন থেকে দুর্বল ক্যাটাগরির কোম্পানির দৌরাত্ম বাড়ছে। দিনের সর্বোচ্চ দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানির তালিকায় এখন হরহামেশাই উঠে আসছে পুঁজিবাজারের এসব দুর্বল বা জেড ক্যাটাগরির শেয়ার।

ওটিসি থেকে ফিরে অনেকটাই লাগামহীন তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল, মনোস্পুল, পেপার প্রসেসিং ও মুন্নু ফেব্রিক্স।

এ ছাড়া চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে পর্যায়ক্রমে বোর্ড পুনর্গঠন করা কোম্পানিগুলোর প্রতিও বিনিয়োগকারীদের বাড়তি আগ্রহ দেখা গেছে। ফলে দুর্বল খাতের কোম্পানিগুলোকে মূলধারায় নিয়ে আসার যে উদ্যোগ নিয়েছে বিএসইসি, তার এখনও শতভাগ সফলতা না পাওয়া গেলেও এরই মধ্যে অনেক কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে কয়েকগুণ।

বুধবার পুঁজিবাজারে মূল্য সংশোধনে কমেছে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স। আগের দিন মঙ্গলবারও কমেছিল ডিএসইর এই সূচক। পুঁজিবাজারে আর্থিক অবস্থা ভালো এমন কোম্পানিগুলো যখন দর বৃদ্ধিতে ধাক্কা খাচ্ছে, তখন জেড ক্যাটাগরির উত্থান অনেকটাই প্রশ্নবিদ্ধ লেনদেন।

চলতি সপ্তাহের শুরু থেকে আবারও মূল্য সংশোধনে যাওয়া বিমা খাতের শেয়ারের পতন অব্যাহত ছিল বুধবার। পাশাপাশি ব্যাংক, নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, প্রকৌশল, বস্ত্র খাতেরও বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দরপতন হয়েছে।

তবে মঙ্গলবার ঢালাওভাবে দর বৃদ্ধি পাওয়া মিউচ্যুয়াল ফান্ডের উত্থান আগের দিনের মতো না বাড়লেও বুধবার অন্য খাতের মতো দরপতন হয়নি।

বুধবার লেনদেন শেষে দিনের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ দর বৃদ্ধি পাওয়া দুটি কোম্পানি ছিল জেড ক্যাটাগরিরর। এগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্স ও পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড।

যার মধ্যে পেপার প্রসেসিং ওটিসি মার্কেট থেকে মূল মার্কেটে লেনদেন হচ্ছে, অপরটি নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের; যার ২০১৯ সালের নয় মাসের হিসাবে শেয়ার প্রতি লোকসান ৪ টাকা ৭৯ পয়সা। আর রিজার্ভে ঘাটতি আছে ৭৬ কোটি টাকা।

এ ছাড়া বোর্ড পুনর্গঠন করা ফ্যামিলি টেক্স কোম্পানিটি আবার চালু করার বিষয়ে নিজেরাই সন্দিহান পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেক্স কমিশন (বিএসইসি)।

সংস্থাটির চেয়ারম্যান বলছেন, ফ্যামিলি টেক্স যারা পুঁজিবাজারে নিয়ে এসেছিল তার লোটপাটের উদ্দেশে এসেছে। এমনকি তাদের পরিচালকদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করারও কথা জানিয়েছেন চেয়ারম্যান।

কিন্তু তারপরও এই কোম্পানির শেয়ার দরে উত্থান অব্যাহত আছে গত সাত কার্যদিবস ধরে। মূলত কোম্পানিটির শেয়ার দরের উত্থান শুরু ‍হয়েছে ৯ জুন থেকে।

সে সময় শেয়ার প্রতি দর ছিল ২ টাকা ৮০ পয়সা। বুধবার লেনদেন শেষে কোম্পানিটির শেয়ার দর ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৪ টাকা ৫০ পয়সা।

বোর্ড পুনর্গঠন করা আরেক কোম্পানি তুং হাই নিটিং। এই কোম্পানির শেয়ার দরও বাড়ছে বেশ কয়েকদিন ধরে। গত ৮ জুন থেকে বাড়তে থাকা কোম্পানিটির শেয়ার দর বুধবার এসে পৌঁছেছে ৬ টাকা ২০ পয়সায়। যেখানে ৮ জুন শেয়ার প্রতি দর ছিল ৩ টাকা ২০ পয়সা।

জেড ক্যাটাগরির আরেক কোম্পানি জুনস্পিনিং। যার শেয়ার দরেও লাগাম দেয়া যাচ্ছে না।

বুধবার এই কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে ৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ। ১৭ জুন ৯৩ টাকা ৯০ পয়সা থেকে শেয়ার দর ক্রমাগত বেড়ে বুধবার এসে দাঁড়িয়েছে ১২১ টাকা ১০ পয়সায়।

কোম্পানিটির সঞ্চিতে ঘাটতি আছে ২ কোটি টাকা, আর সর্বশেষ আর্থিক হিসাব অনুযায়ী শেয়ার প্রতি লোকসান আছে ৩৩ টাকা ৮৩ পয়সা।

ওটিসি মার্কেট থেকে ফেরা তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল মিলের বুধবার শেয়ার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ। জেড ক্যাটাগরির এই কোম্পানির শেয়ার দর এদিন এসে দাঁড়িয়েছে ৫৯ টাকা। যেখানে ওটিসি থেকে ফেরার দিন শেয়ার প্রতি দর ছিল ১২ টাকা।

বুধবার লেনদেনে আগের মতোই দর কমেছে ব্যাংক খাতের। লেনদেন হওয়া ৩১টি ব্যাংকের মধ্যে দর বেড়েছে তিনটির। দর পাল্টায়নি ৫টির। বাকি ২৩টি ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে।

বিমা খাতের শেয়ারের দরও বাড়েনি বুধবার। লেনদেন হওয়া ৫১টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১০টির। দর পাল্টায়নি তিনটির। বাকি ৩৮টি কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে।

বস্ত্র খাতের তালিকাভুক্ত ৫৮টি কোম্পানির মধ্যে ১৪টির দর বেড়েছে। দর পাল্টায়নি ছয়টির। বাকি ২৮টি কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে।

মঙ্গলবার নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের শেয়ারে দরেও উত্থান দেখা গিয়েছিল। কিন্তু বুধবার তা টিকেনি। এদিন লেনদেন হওয়া ২৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫টির দর বেড়েছে। দর পাল্টায়নি একটির। বাকি ১৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দর কমেছে।

মঙ্গলবার ঢালাওভাবে দর বৃদ্ধি পাওয়া মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিটি প্রতি দর বাড়লেও বুধবার তা টিকেনি। তবে অন্য খাতের তুলনায় দর বৃদ্ধির হার ছিল কিছুটা বেশি। এদিন লেনদেন হওয়া ৩৭টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২৪টির। দর কমেছে ১১টির। আর দর পাল্টায়নি ২টির।

আগ্রহ ধরে রাখল মিউচ্যুয়াল ফান্ড

মঙ্গলবার লেনদেন হওয়া ৩৭টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে মাত্র একটি ফান্ডের দর কমেছিল। দর বেড়েছিল বাকি ৩৬টির। বুধবার সে ধারায় ইউনিট প্রতি দর না বাড়লেও অন্য খাতের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর।

বুধবার এ খাতের মোট লেনদেন হয়েছে ১২২ কোটি টাকা। এদিন লেনদেনে সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পেয়েছে এনসিসি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এলআরগ্লোবাল বাংলাদেশ মিউচ্যুয়াল ফান্ড ওয়ান ইউনিট প্রতি দর বেড়েছে ৫ শতাংশ।

এক্সিম ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিটি প্রতি দর বেড়েছে ৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ। ইউনিট প্রতি দর ৮ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৯ দশমিক ১০ পয়সা। ইবিএল ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট প্রতি দর বেড়েছে ৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। আইএফআইএল ইসলামী মিউচ্যুয়াল ফান্ড ওয়ান এর ইউনিটি প্রতি দর বেড়েছে ২ দশমিক ৭৪ শতাংশ।

ট্রাস্ট ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট প্রতি দর বেড়েছে ২ দশমিক ৭৪ শতাংশ।

ব্যাংক-বিমায় মন্দা

বুধবার আবারও ঢালাওভাবে দর কমেছে ব্যাংক ও বিমা খাতের শেয়ারের। এদিন দর পতন হওয়া কোম্পানির তালিকায় বেশিরভাগই ছিল ব্যাংক ও বিমা খাতের।

এ দিন বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে ৫ দশমিক ৭১ শতাংশ, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর কমেছে ৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ, স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর কমেছে ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ। পদ্মা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর কমেছে ৩ দশমিক ২৮ শতাংশ। সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর কমেছে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, প্রভাতি ইন্স্যুরেন্স, প্রগতি ইন্স্যুরেন্স, পিপলস ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর কমেছে ১ দশমিক ৯০ শতাংশ থেকে আড়াই শতাংশ পর্যন্ত।

অপরদিকে ব্যাংক খাতের পূবালী ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ। এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে ৪ শতাংশ। ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে ২ দশমিক ১১ শতাংশ। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে ১ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

এ ছাড়া ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে ১ দশমিক ৫৫ শতাংশ। প্রিমিয়ার ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে ১ দশমিক ৫২ শতাংশ। এবি ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে ১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। মার্কেন্টাইল ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

বিশ্লেষকরা যা বলছেন ৱ

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাবেক গবেষণা কর্মকর্তা দেবব্রত কুমার সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, বেশ কয়েকদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে সূচক। ফলে অনেক কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে কয়েকগুণ। বিশেষ করে বিমা খাতের যে উত্থান দেখা গিয়েছিল সেটির সংশোধন পর্যায়ে সার্বিক পুঁজিবাজারে প্রভাব পড়ছে।

তিনি বলেন, ‘সূচক ৬ হাজারের বেশি আর লেনদেনও ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার ওপরে। ফলে সূচকের এমন পতন পুঁজিবাজারের নিয়মিত বিষয়। এতে আতঙ্কের কিছু দেখছি না।’

সূচক ও লেনদেন

ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৯ দশমিক ৩৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ১৭৭ পয়েন্টে।

শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ২ দশমিক ৭৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩২৭ পয়েন্টে।

বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ২ দশমিক ৪৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৩১ পয়েন্টে।

এদিন মোট লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই আগের দিনের তুলনায় ৭৪ দশমিক ৩২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৮৮১ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে মোট ৭৮ কোটি টাকা।

এ বিভাগের আরো খবর