টাইগার লেগস্পিনার রিশাদ হোসাইন এদিন পুরোদস্তুর ব্যাটার বনে গেলেন। খুনে ব্যাটিংয়ে চার-ছক্কা হাঁকিয়ে একে একে বাউন্ডারি ছাড়া করতে লাগলেন শ্রীলঙ্কার বোলারদের বল। বিশেষ করে লঙ্কান স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। তিনি খুব সহজে ভুলতে পারবেন না রিশাদ হোসাইনের নাম। কারণ রিশাদের ঝড়টা যে গেছে তার ওপর দিয়েই। হাসারাঙ্গার এক ওবার থেকেই নিয়েছে ২৪ রান। হাঁকিয়েছে ২টি ছক্কা আর ৩টি চার।
তার আগের ওভারেই মেরেছিল ১টি ছক্কা আর চার। শেষ পর্যন্ত ১৮ বল থেকে ৪৮ রান করে অপরাজিত ছিলেন। রিশাদের এমন ঝোড়ো ব্যাটিং বাংলাদেশের পুরনো এক আক্ষেপ পূরণেরই জানান দিল। লেজের দিকে বাংলাদেশে এমন পাওয়ার হাউস যে খুঁজে পাওয়া দায়। তিনি অন্তত সেটাই পূরণের আশ্বাস দিলেন।
সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচটাতে যে দুই দলই সমান সুবিধা পাবে সেটা বোঝা গিয়েছিল ম্যাচের সূচি দেখেই। কারণ সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ দিবা-রাত্রি হওয়ায় মাঠে প্রচুর শিশির দেখা গেছে। যেটা প্রভাব রেখেছিল ম্যাচ জয়ে। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করেছে যারা, তারাই সুবিধা পেয়েছে। গতকাল আর সেটা হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না।
এই ম্যাচ খেলতে নামার আগে বাংলাদেশ একটি পরিসংখ্যানে এগিয়ে থেকেই মাঠে নেমেছিল। গত এক দশকে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে প্রথম ম্যাচ জিতলে, সিরিজ হারের রেকর্ড নেই টাইগারদের। লঙ্কানদের হারিয়ে সেটার আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি করল নাজমুল শান্তর দল।
বাংলাদেশের ব্যাটিং ইনিংসের সময় ব্যাট হাতে ওপেন করতে দেখা গেল তানজিদ হাসান তামিমকে। অথচ একাদশে তার নাম নেই। তখনই বোঝা গেল সৌম্য সরকারের কনকাশন সাব হিসেবেই ওপেন করতে নেমেছেন তামিম। হতাশ করেননি তিনি; খেললেন বুক চিতিয়ে, করলেন দলের জন্য প্রয়োজনীয় ইনিংস। বাকিদের যাওয়া-আসার ভিড়ে তিনিই ছিলেন টাইগারদের নৌকার মাঝি। ফিরেছেন ৮১ বল থেকে ৮৪ রান করে। এই রান করে অবশ্য তিনি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাখলেন, দীর্ঘ অফফর্মের কারণে তৃতীয় ম্যাচের স্কোয়াড থেকে বাদ পড়া লিটন দাসকে। নির্বাচকদের জানান দিয়ে রাখলেন ভরসা রাখার।
প্রতিদিনের মতো এদিনও ব্যর্থতার বৃত্ত দিয়েই হেঁটেছেন বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপ। বিশেষ করে টপ অর্ডার। লিটন দাসের পরিবর্তে একাদশে সুযোগ পাওয়া বিজয় ইনিংস বড় করতে পারেনি; ফিরেছেন মাত্র ১২ রান করেই। ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেননি অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তও। খোঁচা মেরে উইকেট বিলিয়ে এসেছেন মাত্র ১ রান করেই। ধারাবাহিক হতে পারেননি তৌহিদ হৃদয়ও। করেছেন মোটে ২২ রান। উইকেটে বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। ফিরেছেন মাত্র ১ রানে। ব্যাটিং লাইনআপের এমন দশা জানান দেয় এখনো উন্নতির বাকি আছে অনেক কিছু।
এই ম্যাচে সবচেয়ে দৃষ্টিকটু বিষয় ছিল বোধহয় বাংলাদেশের বোলিং ইনিংসে খেলোয়াড়দের ফিটনেস। এক ম্যাচেই ইনজুরিতে পড়েছেন ৩ জন। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছিল যেন শ্রীলঙ্কা বাংলোদেশের কন্ডিশনে নয়, বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার কন্ডিশনে খেলছে।
টাইগারদের পেস ইউনিটের শক্ত অবস্থান নতুন কিছু নয়, এটি বেশ পুরনো। পেসার বদল হলেও পরিবর্তন আসে না শক্তির, দুর্বলতা দেখায় না প্রতিপক্ষকে। সেটা আরও একবার প্রমাণ করে দেখালেন। শ্রীলঙ্কার ৬ উইকেটই গেছে পেসারদের ঝুলিতে। তাসকিনের শিকার ৩, মুস্তাফিজের শিকার ২ আর সৌম্য সরকারের শিকার ১ উইকেট। ওয়ানডে সিরিজ জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়েই টেস্ট জয়ে মাঠে নামবেন টাইগাররা।