সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে যে দুই দলের জন্যই সমান সুযোগ থাকবে- এটা বোঝা গিয়েছিল ম্যাচের সূচি দেখেই। কিন্তু ম্যাচের আগে ঘটল অন্যকিছু। পিচ রিপোর্টে দেখা গেল দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে বেশ বেগ পোহাতে হবে। যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই যেন রাত হয়।
বাংলাদেশেরও হলো তাই, রান তাড়া করতে হবে বাংলাদেশকেই। সেটা করতে নেমে শুরুর দিকে একটু কঠিন হলেও শেষদিকে গিয়ে রিশাদ হোসাইনের তাণ্ডবে সেটা সহজেই করেছে বাংলাদেশ। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে ৫৮ বল আর ৪ উইকেট হাতে রেখেই লঙ্কানদের কাঁদিয়ে সিরিজ বাগিয়ে নিল টাইগাররা।
মিরাজ আউট হওয়ার পর হারের শঙ্কা কিছুটা হলেও চোখ রাঙানি দিচ্ছিল বাংলাদেশকে। কারণ এরপর আর কোনো স্বীকৃত ব্যাটার নেই মুশফিকুর রহিম বাদে। এরপর উইকেটে আসেন রিশাদ। নিজের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের জানান দিলেন হাসারাঙ্গাকে প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকিয়ে। সেই ওভারেই মারলেন আরেকটি চার। হাসারাঙ্গাকে তুলাধোনা করলেন তার পরের ওভারে। টানা ২ ছক্কা ও ৩ চারে ওই ওভার থেকে নিলেন ২৪ রান। রিশাদ অপরাজিত ছিলেন ১৮ বল থেকে ৪৮ রানে। এই জয়ে বাংলাদেশ গড়ল এক নতুন উপাখ্যান। ধরে রাখল এক দশকের একটি রেকর্ড। যেখানে ওয়ানডেতে প্রথম ম্যাচ জিতলে রেকর্ড নেই সিরিজ হারের।
প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ব্যাটিং ব্যর্থতায় পড়ে লঙ্কানরা। বাংলাদেশকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন পেসার তাসকিন আহমেদ। মাত্র ১৫ তুলতেই ফেরান দুই ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা (১) ও আভিস্কা ফার্নান্দোকে (৪)। প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেও ইনিংস বড় করতে পারেননি কুশল মেন্ডিস (২৯) আর সাদিরা সামিরা বিক্রমা (১৪)। তাড়াতাড়িই ফিরে যান আশালঙ্কাও (৩৭)। ১৫৪ রানেই ৭ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকে শ্রীলঙ্কা।
একটা সময় শঙ্কা জেগেছিল ২০০ রান করার। কিন্তু লিনাংগের দৃঢ়চেতা ব্যাটিংয়ে সেটা উতরে যায় লঙ্কানরা। বাকি ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার ভিড়ে তিনি ছিলেন উইকেট কামড়ে। শেষ পর্যন্ত সেঞ্চুরি করে দলের স্কোর ২০০ পার করে অপরাজিত থেকেই মাঠ ছেড়েছেন তিনি। ১০২ বল থেকে খেলেন ১০১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। লঙ্কানরা দাঁড় করায় ২৩৫ রানের পুঁজি।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশেরও। লিটন দাসের পরিবর্তে সুযোগ পাওয়া এনামুল হক বিজয় করেছেন মোটে ১২ রান। ব্যর্থ ছিলেন অধিনায়ক নাজমুল শান্ত (১), তৌহিদ হৃদয় (২২), মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও (১)। তবে ব্যতিক্রম ছিলেন সৌম্য সরকারের কনকাশন সাব খেলতে নামা তানজিদ তামিম। ওপেনিংয়ে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাখলেন লিটন দাসকে। পুরো ইনিংসেই তিনি পরিচয় দিয়েছেন দায়িত্বশীলতার। ৮১ বল থেকে ৮৪ রান করে দলকে ভালো অবস্থানে রেখেই বিদায় নেন তিনি।
এরপর মুশফিকুর রহিম আর মেহেদী মিরাজ দলের হাল ধরেন। কিন্তু ১৭৮ রানের সময় হাসারাঙ্গার বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান মিরাজ। এতে কিছুটা হারের শঙ্কা জেগেছিল বাংলাদেশের। কিন্তু সেসব আর হতে দেননি রিশাদ হোসাইন। শুরুর বল থেকেই চড়াও হন লঙ্কান বোলারদের ওপর। তাদের তুলাধোনা করে হেসেখেলেই ৪ উইকেটের জয় তুলে নেয় টাইগাররা।
এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-০ ব্যবধানে নিজেদের করে নিল নাজমুল শান্ত বাহিনী। ১৮ বল থেকে ৪৮ রান আর ৯ ওভার বল করে ১ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন রিশাদ হোসাইন। আর ৩ ইনিংসে একটি সেঞ্চুরি ও ফিফটিসহ ১৬৩ রান করে সিরিজসেরা হয়েছেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।