প্রথম ম্যাচটা বাংলাদেশ জিততে জিততেই হেরে গেছে। তবে এ দিন আর কোনো ভুল নয়, কোনো পরাজয় নয়। জয়ই একমাত্র লক্ষ্য টাইগারদের। শুরুতেই সেটার রসদ এনে দিয়েছেন বোলাররা আর শেষটা করলেন ব্যাটাররা। ফলাফল ৮ উইকেটের বড় জয়, সিরিজে এসেছে সমতা।
সিলেটের ৫ নম্বর উইকেটে খেলা হয়েছে দ্বিতীয় ম্যাচ। অতীত ইতিহাস বলে গতকালও রান হওয়ার কথা ছিল ১৮০-২০০। তবে সেটা হতে দেননি শরিফুলরা। বল নয়, যেন আগুনের গোলা ছুড়েছেন টাইগাররা। আঁটসাঁট বোলিংয়ে বেঁধে রেখেছেন ১৬৫ রানেই, যেটা সহজ করে দিয়েছে ব্যাটারদের।
পাওয়ার-প্লেতেই ৬৩ রান তুলে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন ওপেনার লিটন দাস আর সৌম্য সরকার। পরে সে ধারাটাই অব্যাহত রেখে গেছেন অধিনায়ক নাজমুল শান্ত আর তৌহিদ হৃদয়। অফফর্ম কাটিয়ে হেসেছে শান্তর ব্যাট। দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকে। তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের চতুর্থ অর্ধশতক। সেনাপতিকে যোগ্য সহযোগিতা করেছেন হৃদয়ও। দুজন মিলে জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছেন। শুরুতে কিছুটা স্ট্রাগল করলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিচয় দিয়েছেন পরিপক্বতার।
ম্যাচ শুরুর দুই ঘণ্টা আগে নতুন ব্যাটিং কোচ ডেভিড হ্যাম্পকে নিয়ে সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের দুই নম্বর গ্রাউন্ডে ব্যাটিং অনুশীলন করেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও তৌহিদ হৃদয়। এই অনুশীলনের টোটকাই ঠিকঠাক কাজে লাগিয়েছেন তারা।
টসে জিতে আজও শ্রীলঙ্কাকে ব্যাটিংয়ে পাঠান অধিনায়ক শান্ত। এ দিনও ব্যাট হাতে ব্যর্থ ছিলেন লঙ্কান ওপেনার আভিষ্কা ফার্নান্দো (০)। ফিরতি ক্যাচে তাকে ফেরান তাসকিন আহমেদ। শুরুর ধাক্কা সামলে নেন কুশল মেন্ডিস আর কামিন্দু মেন্ডিস। দুজনে মিলে গড়েন ৬৬ রানের জুটি। তাদের জুটিতে ভর করে বড় রানের আশাই দেখছিল শ্রীলঙ্কা। তবে বল হাতে চেপে ধরে রেখেছিলেন শরিফুলরা। নবম ওভারে গিয়ে শান্ত বল তুলে দেন সৌম্য সরকারকে। হতাশ করেননি তিনি, কুশল মেন্ডিসকে ফিরিয়ে এনে দেন ব্রেক থ্রু। ২ চার আর ৩ ছক্কায় ২২ বলে ৩৬ রান করে সাজঘরে ফেরত যান কুশল মেন্ডিস।
পরের ওভারেই আবারও ধাক্কা খায় লঙ্কানরা। আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে থাকা কামিন্দু মেন্ডিস রানআউট হয়ে ফিরে যান। কাভারে থাকা মাহেদী হাসানের হাতে বল পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গেই নন স্ট্রাইক প্রান্তে থাকা সাদিরা সামারাবিক্রমা ক্রিজ ছেড়ে বের হয়ে আসেন। তাই বাধ্য হয়েই রানের জন্য ছুটতে হয় তাকে। ততক্ষণে মাহেদীর থ্রোতে স্টাম্প ভাঙেন রিশাদ। ৩ চার আর ২ ছক্কায় ২৭ বলে ৩৭ রান করেন কামিন্দু।তবে কামিন্দুকে আউট করার ক্ষত পূরণ করতে পারেননি সাদিরা সামারাবিক্রমা। মোস্তাফিজকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে ফিরে গেছেন মাত্র ৭ রান করেই। ১৪তম ওভারে মাহেদী হাসানের ওপর চড়াও হন অধিনায়ক চারিথ আশালাঙ্কা। প্রতিশোধটাও নিয়েছেন মাহেদী। সেই ওভারেই বোল্ড আউট করে ফেরান আশালাঙ্কাকে (২৮)।
এরপর দলের হাল ধরেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ও দাসুন শানাকা। দুজন মিলে গড়েন ৩৭ বলে ৫৩ রানের জুটি। যেটাতে ভর করে ১৬৫ রানের পুঁজি পায় লঙ্কানরা।
মাঝারি রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে দারুণ শুরু পায় বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লের ছয় ওভারে ৬৩ রান তুলে ম্যাচ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন দুই ওপেনার সৌম্য সরকার ও লিটন দাস। অবশ্য এর মাঝে তৈরি হয় একটি বিতর্কও। চতুর্থ ওভারে পুল খেলতে গিয়ে উইকেট কিপারের হাতে ক্যাচ দেন সৌম্য সরকার। রিভিউতে স্পাইক দেখা গেলেও টিভি আম্পায়ার নট আউট ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘যখন স্পাইক দেখা গেছে তখন বল ব্যাট পেরিয়ে গেছে।’
পরের ওভারেই অবশ্য মাথিশা পাথিরানার বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেছেন সৌম্য সরকার (২৬)। নবম ওভারে পাথিরানাকেই উইকেট দিয়ে ফেরেন লিটন দাসও (৩৬)। তবুও ম্যাচ জিততে বাংলাদেশের কোনো অসুবিধা হয়নি। দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন অধিনায়ক নাজমুল শান্ত আর তৌহিদ হৃদয়। ৫৫ বল থেকে ৮৭ রানের জুটি গড়েন তারা। শুরুর দিকে রানিং বিটুইন উইকেটে কিছুটা স্ট্রাগল করলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছেন। করেছেন ক্ষুরধার ব্যাটিং। বল বুঝে খেলে গেছেন ঠাণ্ডা মাথায়। ফলাফল হিসেবে ৮ উইকেটের জয় নিয়ে ফিরেছেন।