প্রায় দেড় মাসের ক্রিকেট মহাযজ্ঞ। গ্রুপ পর্বের কঠিন সমীকরণ, এলিমিনেটর এরপর কোয়ালিফায়ার; ফাইনালটা তাই সহজ ছিল না বরিশালের জন্য। তবে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ দুইয়ে থেকেই পঞ্চমবারের মতো ফাইনালে এসেছিল কুমিল্লা। আর কুমিল্লার পরিসংখ্যান ছিল আরও ভয়ঙ্কর। চারবারের ফাইনাল খেলায়, প্রতিবারই তারা ঘরে তুলেছে ট্রফি। তবে সেসব পরিসংখ্যানকে পাত্তাই দেয়নি তামিমরা। প্রথমবারের মতো ট্রফি জয়ের আশা পূরণ করল বরিশালবাসীর। প্রথমবারের মতো ট্রফি ছুঁয়ে দেখল মুশফিকুর রহিম আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
উত্তাপ ছড়ানো ফাইনালে ব্যাটিং ব্যর্থতায় পুড়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে কুমিল্লার লম্বা ব্যাটিং লাইনআপ। ভালো শুরুর পরও ইনিংস লম্বা করতে পারেনি কোনো ব্যাটার। অনেকটা উইকেট বিলিয়ে এসেছেন অধিনায়ক লিটন দাস। শেষদিকে এসে মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনও।
নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়েছে চার বারের চ্যাম্পিয়নরা। পাওয়ার-প্লের মধ্যেই ৩ উইকেট হারায় তারা। জেমস ফুলার আর কেইল মায়ার্সের স্লোয়ারে বোকা বনে গেছেন কুমিল্লার টপঅর্ডার। শুরুর ৩ উইকেটই এ দুইজনের। কৃতিত্ব আছে বরিশালের ফিল্ডারদেরও। তারাও সুযোগ দেননি কুমিল্লার ব্যাটারদের। জনসন চার্লসকে ফিরিয়ে ম্যাচের আধিপত্য নেয় বরিশালের ম্যাককয়। ম্যাচে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল মেহেদী মিরাজের রান আউট। দুর্দান্ত সরাসরি থ্রো থেকে শুরুতেই ফিরিয়ে দেন মঈন আলিকে।
কুমিল্লার জন্য কিছুটা ভরসার প্রতীক হয়েছিলেন মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। কিন্তু সাইফুদ্দিনকে উইকেট বিলিয়ে আসেন তিনি। শেষদিকে আশা দেখাচ্ছিলেন আন্দ্রে রাসেল। উইকেটে নেমে ঝড় তোলেন তিনি। ১৯তম ওভারে ফুলারকে ৩ ছক্কা হাঁকিয়ে ২১ রান নেন তিনি। শেষ বলে ১ রান নিয়ে প্রান্ত পরিবর্তন করে স্ট্রাইকে থাকেন তিনি। কিন্তু শেষ ওভারে সাইফুদ্দিনের দুর্দান্ত বলে কোনো বাউন্ডারিই হাঁকাতে পারেননি তিনি। এই ওভারে কিপ্টে বোলিংয়ে বরিশালের লক্ষ্যকে বড় হতে দেননি সাইফুদ্দিন।
অধিনায়ক তামিম ইকবালও বেশ অভিজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছেন। নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলির পুরোটাই ঢেলে দিয়েছেন এই ম্যাচে। ম্যাচের অবস্থা দেখে পরিবর্তন এনেছেন বোলিং এবং ফিল্ডিংয়ে। যেটা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে কুমিল্লাকে অল্প রানে বেঁধে রাখতে।
জবাবটা বেশ ভালোভাবেই দিয়েছে বরিশালের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল আর মেহেদী হাসান মিরাজ। বরিশালকে উড়ন্ত সূচনা এনে দিয়েছেন তারা। দুজনে মিলে ৭৬ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের পথ দেখিয়েছেন। রান সংগ্রাহকের তালিকার শীর্ষস্থান ধরে রেখেছেন তামিম। ২৬ বল থেকে খেলেছেন ৩৯ রানের গুরুত্বপূর্ণ এবং দুর্দান্ত ইনিংস। সমান ৩ চার আর ৩ ছক্কায় সাজিয়েছেন নিজের ইনিংস। মেহেদী হাসান মিরাজও ছিলেন সাবলীল ২৬ বল থেকে করেছেন ২৯ রান। এক ওভারের ব্যবধানে এ দুই ব্যাটার ফিরে গেলে সুযোগ তৈরি করতে পারত কুমিল্লাও। কিন্তু হাফ চান্সকে পূর্ণতা দিতে না পারায় সেটা আর সম্ভব হয়নি।
৩০ বল থেকে ৪৬ রান করে দলকে জয়ের বন্দরে রেখে যান কেইল মায়ার্স। আর বন্দরে নোঙর ফেলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর ডেভিড মিলার। মাঝখানে ১৩ রানের ইনিংস খেলে ফিরে যান মুশফিকুর রহিম। মিলারের চারে ৬ উইকেটের জয়ে প্রথম শিরোপা ছুঁয়ে দেখল বরিশাল।বরিশালের এই জয়ে বড় অবদান ছিল ট্রাম্প কার্ড কেইল মায়ার্সের। ৩০ বল থেকে খেলেছেন ৪৬ রানের এক দুর্দান্ত ইনিংস। যেটি শেষ পর্যন্ত জয়ের বন্দরে নিয়ে গেছে বরিশালকে। বল হাতেও তিনি ছিলেন বরিশালের ভরসার প্রতীক। ৪ ওভারে ২৬ রান খরচে শিকার করেছিলেন ১ উইকেট। মায়ার্সের ওই উইকেটই মোমেন্টাম এনে দিয়েছিল বরিশালের। যে কারণে ফাইনাল ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ও হয়েছেন তিনিই।
দুর্দান্ত একটা আসর পার করলেন তামিম ইকবাল। সামনে থেকে পথ দেখিয়েছে বরিশালকে। বিশেষ করে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ, এলিমিনেটর ম্যাচ আর ফাইনালে তার ব্যাট হেসেছে, সুখের হাসি। আসের সর্বোচ্চ ৪৯২ রান সংগ্রহ করেছেন তিনি। তাই নিজের ব্যক্তিগত ঝুলিতে ভরেছেন দুটি পুরস্কার। সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের পাশাপাশি হয়েছেন আসরের সেরা খেলোয়াড়ও।
নিষ্প্রভ ঢাকার দুর্দান্ত শরিফুল ইসলাম। গ্রুপ পর্বে ঢাকা বাদ পড়লেও ২২ উইকেট নিয়ে তিনি হয়েছেন আসরের সেরা উইকেট শিকারি। সেরা ফিল্ডারের পুরস্কার গেছে ঢাকার ওপেনার নাঈম শেখের ঝুলিতে।