বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল রংপুর রাইডার্স আর ফরচুন বরিশাল। এমন মহারণের ম্যাচ নিয়ে আগ্রহের কমতি ছিল না খেলোয়াড় থেকে শুরু করে দর্শক মনে। এই ম্যাচটি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছিল দুই দলের দুই তারকার জন্য। বরিশালের তামিম ইকবাল আর রংপুরের সাকিব আল হাসান।
এই ম্যাচে টসে জিতে রংপুরকে ব্যাটিংয়ে পাঠান বরিশালের অধিনায়ক তামিম ইকবাল। কিন্তু রংপুরকে নিয়ে যে ভয়টা ছিল, ব্যাটিংয়ে নামার পর সেটারই যেন বাস্তব প্রতিচ্ছবি আঁকলেন। পাওয়ার প্লেতে মাত্র ১৮ রান তুলতেই রংপুর হারিয়েছে ৩ উইকেট। যে তালিকায় নাম ছিল ইনফর্ম সাকিব আল হাসানেরও। ব্যর্থদের তালিকায় নাম ছিল নিকোলাস পোরানেরও।
রংপুরের ব্যাটিং লাইনে বুধবারও আশা দেখিয়েছিলেন জিমি নিশাম। কিন্তু সেটাকে খুব বেশি বড় করতে পারেননি তিনি। ২২ বল থেকে ২৮ রান করেই ফিরে গেছেন সাজঘরে। এরপর আর কেউই ইনিংস বড় করতে পারেননি। সবাই ছিলেন আসা-যাওয়ার মধ্যে। যেমনটা দেখা গিয়েছিল রংপুরের শেষ দুই ম্যাচে।
তবে এ দিন বিশ্বস্ত সৈনিকের মতো রংপুরকে রক্ষা করেন শামীম পাটোয়ারী। তাণ্ডব চালাতে থাকেন বরিশালের বোলারদের ওপর। মাত্র ২০ বল থেকে তুলে নেন অর্ধশতক। যেটি এবারের আসরের যৌথভাবে দ্রুততম অর্ধশতক। ১৯তম ওভারে ২ চার আর ৩ ছক্কায় শামীম সংগ্রহ করেন ২৬ রান। অন্তত লড়াই করতে হলে যে ইনিংস খেলা প্রয়োজন ছিল কোনো একজনের, সেটি খেলেন শামীম।
দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে বরিশালের যে দুজন বোলারের ওপর আশা ছিল, তারা উভয়েই সেটা পূরণ করেছেন। শুরুতেই কিপটে বোলিংয়ে চেপে ধরেন কেইল মায়ার্স। পরের ওভারে এসে জোড়া আঘাত হানেন মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। সাকিব আর মাহেদীকে ফিরিয়ে শুরু করেন ধ্বংসলীলা। এরপর রনি তালুকদারকে ফিরিয়ে সেই ধ্বংসলীলায় যোগ দেন মায়ার্সও। এই দুইজন মিলেই ভেঙে দেন রংপুরের কোমর।
এরপর রংপুরের ঢেউয়ের সাগরে তুফান তোলেন জেমস ফুলার। শুরুটা করেন জিমি নিশামকে দিয়ে আর শেষ করেন রংপুরের অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহানকে দিয়ে। ৪ ওভারে ২৫ রান দিয়ে তার শিকার ৩ উইকেট। তবে বরিশালের সেই ডেথ ওভারের সমস্যা এদিনও ভুগিয়েছে তাদের। শেষ ৪ ওভারেই তারা খরচ করেছে ৬০ রান। বেশি খরুচে ছিলেন ওবেদ ম্যাককয়।
গত ২ ম্যাচে রান পাওয়া তামিমের ব্যাট ছিল এদিন নিশ্চুপ। ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পাওয়া মিরাজও কিছুই করতে পারেননি। ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ হয়েছেন সৌম্য সরকারও। ছোট একটি ঝড় তুলে ফারুকীর বলে মাহেদী হাসান আর রনি তালুকদারের দুর্দান্ত ক্যাচে ফিরে গেছেন কেইল মায়ার্স। তবে ব্যতিক্রম ছিলেন মুশফিকুর রহিম। উইকেট কামড়ে পড়ে ছিলেন তিনি। দলকে জয়ের বন্দরে ভিড়িয়েই মাঠ ছেড়েছেন তিনি। তার ৪৭ রানের দায়িত্বশীল ইনিংসে ভর করেই রংপুরকে ৬ উইকেটে হারিয়ে বরিশাল দ্বিতীয় দল হিসেবে চলে গেল ফাইনালে।
মুশফিকুর রহিম ‘মি. ডিপেন্ডেবল’! কেন মুশফিককে এ নামে ডাকা হয়, সেটা তিনি প্রমাণ করলেন রংপুরের বিপক্ষে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে। মাঝারি রানের লক্ষ্য তাড়ায়ও খুব একটা ভালো শুরু করতে পারেনি বরিশাল। যখন দায়িত্ব নিতে পারেনি বাকিরা, তখন সিনিয়র ক্রিকেটার হিসেবে সে দায়িত্বটা নেয়ার প্রয়োজন ছিল মুশফিকুর রহিম অথবা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। ৪ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে সেটিই করেছেন মুশফিক। গুরুত্ব বুঝিয়েছেন অভিজ্ঞতার।
এই ম্যাচের মাধ্যমেই শেষ হলো সাকিব-তামিম লড়াই। তবে শেষ দিনে সফল ছিলেন না সাকিব আল হাসান কিংবা তামিম ইকবালের কেউই। ব্যাট হাতে সাকিব করেছেন ১ রান। আর তামিম করেছেন ১০ রান। বল হাতেও উইকেটশূন্য ছিলেন সাকিব। ছিলেন খরুচেও। ১ ওভার ৩ বলে দিয়েছেন ১৭ রান।