বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) জন্য শুক্রবার দিনটা ছিল অন্যরকম। চরম উত্তেজনার সমীকরণ মেলানোর ম্যাচ। সেটাও আবার চারবারের চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে ফরচুন বরিশালের। যেই ম্যাচে বরিশালে খেলছেন জাতীয় দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড়। অন্যদিকে কুমিল্লায় খেলছেন টি-টোয়েন্টির ফেরিওয়ালা সব ক্রিকেটার। এই ম্যাচকে ঘিরে দর্শকদের মধ্যেও ছিল অন্যরকম কৌতূহল। ছুটির দিনে তিল ধারণের জায়গা ছিল না মিরপুরের শেরে-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।
এই ম্যাচে হারলে জটিল অঙ্কের মারপ্যাঁচে পড়তে হতো বরিশালকে। তাই প্লে-অফ নিশ্চিতে অনেকটা বাঁচা-মরার ম্যাচ ছিল তামিম-মুশফিকদের। তবে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের জন্য এটা ছিল কেবলই নিয়ম রক্ষার ম্যাচ। জয় পেলে বড়জোর দুই নম্বর থেকে টেবিলের এক নম্বরে যেতে পারত। আর খেলোয়াড়দের মধ্যে জয়ের উচ্ছ্বাস থাকত। এ ছাড়া এই ম্যাচ থেকে কুমিল্লার পাওয়ার তেমন কিছুই ছিল না।
তবে কোনো হিসাব-নিকাশ মেলাতে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না অধিনায়ক তামিম ইকবালের। তাই দলকে জিতিয়ে পয়েন্ট টেবিলে শক্ত অবস্থান তৈরি করেই নিশ্চিত করেছেন প্লে-অফ। সব মিলিয়ে ১২ ম্যাচে ৭ জয়ে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তৃতীয় স্থানে থেকেই গ্রুপ পর্ব শেষ করল বরিশাল। এই জয়ে খুলনা টাইগার্সের ক্ষীণ আশার নৌকাকে সাগরে ডুবিয়ে শেষ চারে চলে গেল ফরচুন বরিশাল।
২০১৯ বিপিএলের ফাইনাল। শুরুতে ব্যাট করতে নামে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। সেই ম্যাচে কুমিল্লার হয়ে ওপেনিং করতে নামেন তামিম ইকবাল। খেলেন বিপিএলের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪১ রানের অপরাজিত ইনিংস। তামিম ইকবাল যে বড় ম্যাচের পারফর্মার সেটা প্রমাণ করলেন আবারও। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে ৪৮ বলে খেলেছেন ৬৬ রানের ম্যাচজয়ী ইনিংস। যেই ইনিংস বরিশালকে দেখিয়েছে জয়ের বন্দর। শুরুতে উইকেট হারানোর পর তামিম পরিচয় দিয়েছেন দায়িত্বশীলতার। কেইল মায়ার্স আর মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে গড়েছেন গুরুত্বপূর্ণ দুটি জুটি।
তামিম ইকবাল যে শুধু এই ম্যাচেই পারফর্ম করেছেন বিষয়টি এমন নয়। বিপিএলজুড়েই তিনি পারফর্ম করেছেন। কিন্তু সেগুলো খুব বেশি আলোর মুখ দেখেনি। মানে ম্যাচ শেষ করে কিংবা এক ইনিংসে সেঞ্চুরি করেই লাইম লাইটে আসেননি তামিম। তবে নিয়মিত অবদান রেখেছেন দলের জন্য। যার কারণেই কুমিল্লার বিপক্ষে ম্যাচ শেষে রান সংগ্রাহকের তালিকার সবার উপরে উঠে গেছেন তিনি। ১২ ম্যাচ থেকে তামিম ইকবালের রান ২৯১। বাকি ম্যাচগুলোতেও যদি তামিম ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেন তাহলে সেটা বরিশালকে বেশ স্বস্তি দেবে।
বরিশালকে পথ দেখাচ্ছেন আরও একজন খেলোয়াড়। তিনি ক্যারিবিয়ান হার্ডহিটার কেইল মায়ার্স। ব্যাট এবং বল দুই বিভাগেই অবদান রাখছেন বরিশালের জয়ে। কুমিল্লার বিপক্ষেও বল হাতে ৩ ওভারে দিয়েছেন মোটে ১৭ রান। ব্যাটে করেছেন ২৫ রান।
দিনের প্রথম ম্যাচে বরিশাল জয় পাওয়ায় দ্বিতীয় ম্যাচটি ছিল শুধুই নিয়ম রক্ষার। এ ম্যাচে জয়-পরাজয়ে কোনো লাভ-ক্ষতিই নেই খুলনা টাইগার্স কিংবা সিলেট স্ট্রাইকার্সের। কারণ সিলেটের বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেছে আগেই। বরিশালের জয়ে খুলনার তরিও ভিড়েছে একই বন্দরে।
চাপহীন এমন ম্যাচেও ব্যর্থ ছিল খুলনা টাইগার্সের ব্যাটিং লাইন-আপ। আগে ব্যাট করে ২০ ওভার শেষে ৮ উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করতে পেরেছিল মোটে ১২৮ রান। তার মধ্যে দুজন মিলেই করেছেন ৭৩ রান।
খুলনার হয়ে সর্বোচ্চ ৫২ রান করেছেন আফিফ হোসেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১ রান করেছেন ওয়েন পার্নেল। ১৫ রানের ঘরও ছুঁতে পারেননি আর কেউ। বিপিএলের শেষ দিকে এসে খুলনার এমন ব্যর্থতাই ভালো শুরুর পরও টুর্নামেন্ট থেকে বিদায়ের কারণ। কিপ্টে বোলিংয়ে খুলনার কোমর ভেঙে দেন বেনি হাওয়েল আর সামিত প্যাটেল। হাওয়েল একাই শিকার করেন ৩ উইকেট।
১২৮ রানের মামুলি লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় সিলেট স্ট্রাইকার্স। ৬ রান তুলতেই ফেরত যান দুই ওপেনার। এরপর দলের হাল ধরেন নাজমুল হোসেন শান্ত আর ইয়াসির আলী। দুজনে মিলে গড়েন ৭০ রানের জুটি। ১৭তম ওভারে নাহিদুলের ক্যাচ বানিয়ে ইয়াসিরকে ফেরান হোল্ডার। এর আগেই অবশ্য ৪৩ বল থেকে ৪৬ রান করে সিলেটকে বন্দরের পথ দেখান তিনি। ২ ছক্কা আর ৪ চারে সাজানো ছিল তার ইনিংস। বাকি কাজটা শেষ করেন অধিনায়ক মিঠুন (১৯) আর বেনি হাওয়েল (১২)। সিলেট জয় পায় ৬ উইকেটে।
শেষ ম্যাচে জয়ের সুখস্মৃতি নিয়েই আসর শেষ করল সিলেট স্ট্রাইকার্স। অন্যদিকে হারের বৃত্তে থেকে তেতো স্বাদ নিয়ে বাড়ি ফিরল খুলনা টাইগার্স।