‘লিওনেল মেসি হ্যাজ শেকেন হ্যান্ডস উইথ প্যারাডাইস’ যদি আপনি আর্জেন্টিনার ফুটবলের ভক্ত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই এই বাক্যটি একবার দেখেই আপনার মনে ধরা দিয়েছে এক রঙিন স্মৃতি, যা আপনাকে আরও একবার স্বপ্ন পূরণের সেই রোমাঞ্চকর অনুভূতিতে সিক্ত করেছে। হ্যাঁ, ২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনাল জয়ের রাতে যখন ফুটবল রাজপুত্র লিওনেল মেসি স্বপ্নিল বিশ্বকাপ ট্রফি স্পর্শ করছিলেন, তখন এই কথাই বলছিলেন ‘ধারাভাষ্যের কবি’ খ্যাত পিটার ড্রুরি। আপনি ইংরেজি বোঝেন আর না বোঝেন, এই বাক্যের অর্থ আপনি ঠিকই বুঝেছেন। কারণ এই কথাগুলো এদিন সব আর্জেন্টাইন সমর্থকই অনুভব করেন হৃদয় দিয়ে।
একজন আর্জেন্টাইন ভক্ত যদি পারতেন, তাহলে ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর রাতটা হয়ত সোনালী আস্তরণ দিয়ে মুড়িয়ে রাখতেন। যেন বারবার সেই সময়ে আবারও ফিরে যাওয়া যায়। ২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনাল, কিংবা ২০১৫ এবং ২০১৬ এর কোপা আমেরিকা ফাইনাল- এই ম্যাচগুলোতে না পাওয়ার হতাশা, আক্ষেপ শুধু লিওনেল মেসিসহ পুরো আর্জেন্টিনা দলকেই কাঁদায়নি, সেইসঙ্গে কাঁদিয়েছে বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি আর্জেন্টাইন ভক্তদেরও।
নিজের ফুটবল ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই লিওনেল মেসি ফুটবল বিশ্বে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন এক মুকুটহীন রাজার মতোই, যার সব ছিল, ছিল না শুধু নিজ দেশের জার্সি গায়ে একটি বিশ্বকাপ শিরোপা জয়। মেসির সেই আক্ষেপ অল্প হলেও তিনি ঘুচিয়েছিলেন ২০২১ সালের কোপা আমেরিকার শিরোপা জয়ের মাধ্যমে। তবে ক্লাব ফুটবল কিংবা লাতিন আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্ব দিয়ে কি আর সর্বকালের সেরার তকমাটা নিজের গায়ে লাগানো যায়। যদিও আর্জেন্টিনার হয়ে কোনো ট্রফি জেতার আগেও লিওনেল মেসিকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসিয়ে রেখেছিলেন বেশিরভাগ ফুটবলবোদ্ধাই।
তবুও মেসি খুব করেই চাইতেন, প্রিয় জন্মভূমি আর্জেন্টিনাকে একবারের জন্য হলেও বিশ্ব ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে। সে আশায় শুরু করেছিলেন ২০২২ বিশ্বকাপটাও। কিন্তু শুরুতেই হোঁচট খায় মেসির আর্জেন্টিনা। সৌদি আরবের মতো দুর্বল প্রতিপক্ষের কাছেই হেরে বসতে হয় দলটিকে। তবুও আলবিসিলেস্তে শিবিরে আত্মবিশ্বাসের চিড় ধরতে দেননি এলএম টেন। ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে হারের পর কান্নায় যেভাবে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মেসি, ঠিক সেভাবেই দলের কঠিন সময়ে ড্রেসিংরুমেও দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি; সতীর্থদের বারবার বুঝিয়েছেন এখনো বিশ্বকাপ জেতা সম্ভব। প্রথম ম্যাচের পর গত টুর্নামেন্টে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয় কিছুটা অসম্ভব মনে হলেও ম্যাচের পর ম্যাচ লিওনেল মেসি এবং তার দল যা করে দেখিয়েছে, তা কোনো মহাকবির কল্পনাখচিত মহাকাব্যকেও হার মানাবে। আর এ গাঁথার শুরুটা হয়েছিল লিওনেল মেসির হাত ধরেই।
বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে যখন মেক্সিকোর বিপক্ষে প্রথমার্ধসহ ম্যাচের বেশ কিছুক্ষণ কোনো গোলই করতে পারেনি আর্জেন্টিনা, তখন ম্যাচের ৬৪ মিনিটে লিওনেল মেসির সেই অবিশ্বাস্য লং রেঞ্জ শটই খুলে দিয়েছিল আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের দুয়ার। এরপর প্রত্যেক ম্যাচেই তিনি দলের জয়ে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। সে বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ও হয়েছিলেন মেসি, যা আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের মিষ্টতা বাড়িয়ে দিয়েছিল বহুগুণে।
ভাগ্য বরাবরই সহায় থাকে পরিশ্রমী এবং অধ্যবসায়ীর পক্ষে। হ্যাঁ, যে বারবার চেষ্টা করে, সৃষ্টিকর্তা তাকে কখনও ফিরিয়ে দেন না। ঠিক তেমনি ফুটবল বিধাতা লিওনেল মেসির শেষ ইচ্ছাটুকু অপূর্ণ থাকতে দেননি। যা বুঝিয়ে দিল- কখনো কখনো কল্পনা বাস্তবতা থেকেও সুন্দর।