ঢাকা টেস্টের প্রথম দিনে উইকেটবৃষ্টির পর দ্বিতীয় দিনের খেলা ভেস্তে গিয়েছিল নিম্নচাপের বৃষ্টিতে। প্রথম দিনেই কিউইদের ৫ রানের খরচায় ৫ উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখাচ্ছিল সফরকারীদের সামনে বড় লক্ষ্য ছুড়ে দেয়ার, কিন্তু তৃতীয় দিনে এসে সে স্বপ্ন ভেঙে চৌচির হয়েছে গ্লেন ফিলিপসের হাতে।
উইকেটের এক প্রান্ত আগলে ধরে সফরকারীদের নিয়ে গেছেন লিডের পথে। ৮ রানের লিড মিললেও কিউইদের জন্য স্বভাবতই এটি বিশাল অর্জন।
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের করা ১৭২ রানের জবাবে ১৮০ রানের পুঁজি নিয়ে থামে কিউইদের ইনিংসের চাকা। আট রানে পিছিয়ে থেকে ব্যাট করতে নেমে তৃতীয় দিন শেষে স্বাগতিকরা পুঁজি পেয়েছে ২ উইকেটের খরচায় ৩৮ রানের। দ্বিতীয় ইনিংসে তাদের লিড ৩০ রানের।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় দিনের খেলা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও টানা বৃষ্টির কারণে আউটফিল্ড শুকাতে দেরি হওয়ায় দুই দলের ক্রিকেটাররা মাঠে নামেন দুপুর ১২টায়।
টানা বৃষ্টির কারণে হোম অফ ক্রিকেটের উইকেট খানিকটা ভেজা থাকায় শুরু থেকেই স্পিন আক্রমণে যায় বাংলাদেশ, কিন্তু টাইগারদের সে পরিকল্পনা খুব বেশি কাজে দেয়নি। ভেজা উইকেটের সুবিধা নিতে পারেননি তাইজুল-মিরাজরা।
টাইগার স্পিনারদের ব্যর্থতার সুযোগটা বেশ ভালোভাবেই কাজে লাগান ড্যারিল মিচেল ও গ্লেন ফিলিপস। দুজনই উইকেটে থিতু হয়ে বসে টেনে নিয়ে যেতে থাকেন দলকে। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে রীতিমতো শঙ্কায় ফেলে দিয়েছিলেন দুজন বাংলাদেশকে, তবে ইনিংসের ২২তম ওভারে মিচেলকে ফিরিয়ে বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ানো ৪৯ রানের ষষ্ঠ উইকেট জুটি ভাঙেন নাঈম হাসান। মাঠ ছাড়ার আগে মিচেলের ব্যাট থেকে আসে ১৮ রান।
খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি মিচেল স্যান্টনারও। মাত্র এক রান করে সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে।
ব্যাক টু ব্যাক দুই উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশ ম্যাচে ফেরার ইঙ্গিত দিলেও আটে নামা কাইল জেমিসনের দুর্দান্ত সঙ্গ কাজে লাগিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন ফিলিপস। ২৮ বলে ২০ রান করে কাইল বিদায় নেয়ার পর সাউদিকে সঙ্গী বানান ফিলিপস।
৭২ বলে ৮৭ করে শরিফুলের শিকার বনে ফিলিপসের মাঠ ছাড়ার পর আর এক রানও যোগ করা সম্ভব হয়নি সাউদি ও অ্যাজাজ প্যাটেলের পক্ষে। ১৮০ রানে থেমে যেতে হয় সফরকারীদের। আর সেই সুবাদে তারা লিড পায় ৮ রানের।
আট রানে পিছিয়ে থেকে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ, কিন্তু শুরুতেই বড় হোঁচট খেতে হয় স্বাগতিকদের। উইকেটে এসেই দলকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেন মাহমুদুল হাসান জয়। ইনিংসের প্রথম ওভারেই সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে। অ্যাজাজ প্যাটেলের বলে স্লিপে ক্যাচ দেয়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ২ রান।
প্রথম ওভারে জয়কে হারানোর পর দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত, কিন্তু তাকে উইকেটে বেশিক্ষণ টিকতে দেননি সাউদি। সাউদির অফ স্টাম্পের বাইরের ফুল লেন্থের বল ইনসাইড আউট করে মিড অফের ওপর দিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন, তবে দূরত্ব কিংবা উচ্চতা কিছুই পাননি। ফলে ১৫ রান করে মিড অফে উইলিয়ামসনের হাতে সহজ ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে।
পরে দুপুর আড়াইটার দিকে আলোক স্বল্পতায় খেলা বন্ধ করতে বাধ্য হন আম্পায়াররা। প্রায় দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করেও খেলা শুরু করার পরিস্থিতি না আসায় বিকেল সোয়া চারটায় সমাপ্তি ঘোষণা করা হয় দিনের খেলার।
প্রথম দিনে চালকের আসনে থাকলেও তৃতীয় দিনে বাংলাদেশ চলে যায় প্যাসেঞ্জারের আসনে। যেখানে বড় লিড ছুড়ে দেয়ার সম্ভাবনা ছিল, সেখানে উল্টো পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে স্বাগতিকরা।
লিড না পেলেও তাতে আক্ষেপ নেই টাইগারদের। অন্তত খালি চোখে দিন শেষে তাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বলছিল এমনটাই, তবে লিড পেলে খারাপ হতো না বলে জানিয়েছেন স্পিনার নাঈম হাসান।
সংবাদ সম্মেলনে নাঈম বলেন, ‘তারাও তো ক্রিকেট খেলতে এসেছে। তাই না? একটা পার্টনারশিপ তো হতেই পারে। যে কেউ একজন ভালো খেলতে পারে। ও ভালো করেছে, তাই লিড নিতে পেরেছে।
‘লিড পেলে ভালো হতো। আল্লাহর রহমতে এখন আমরা ৩০ রান লিডে আছি। ভালো ব্যাটিং করলে ইনশাল্লাহ একটা ভালো স্কোর হবে। টোটাল যাই হোক, আমরা ফাইট করে ইনশাল্লাহ জিতব।’
চতুর্থ দিন ব্যাট হাতে পারফর্ম দেখিয়ে ভালো কিছু করে দেখাবে বাংলাদেশ, এমনই আশাবাদ ব্যক্ত করেন নাঈম।
তিনি বলেন, ‘বোলিং ঝামেলা হচ্ছে না। প্রথম দিনের তুলনায় আজ উইকেট একটু ভালো ছিল ব্যাটিংয়ের জন্য। আমরা যদি একটা ভালো স্কোর দাঁড় করাতে পারি, তাহলে ইনশাল্লাহ জিতব। আমরা এখন ম্যাচে এগিয়ে আছি। এটা ধরে রাখতে হবে। যতক্ষণ ভালো ব্যাট করব, ততক্ষণ ভালো হবে।’