বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিষাদের আখ্যান দীর্ঘায়িত করে বিদায় দক্ষিণ আফ্রিকার

  •    
  • ১৬ নভেম্বর, ২০২৩ ২২:৪০

লক্ষ্য মাত্র ২১৩ হলেও অস্ট্রেলিয়াকে ছেড়ে কথা বলেনি প্রোটিয়ারা। তাদের অদম্য মনোবলের কারণে দ্বিতীয় ইনিংস হয়ে উঠেছে উপভোগ্য। ম্যাচের দৃশ্যপট পাল্টেছে বারবার।

ইডেন গার্ডেনসের ব্যাটিংবান্ধব পিচে আজ দেখা গেল উল্টোচিত্র। দুই ইনিংসেই বোলারদের দাপট। স্বল্প রানের লক্ষ্য দিয়েও শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা। দ্বিতীয় ইনিংসে রোমাঞ্চের পর রোমাঞ্চ ছড়িয়েও সেমিফাইনাল থেকে এবারও বিদায় নিতে হলো তাদের। এর ফলে স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার ফাইনাল চূড়ান্ত হলো।

বারবার সেমিফাইনালে এসে খেই হারানোর কারণে প্রোটিয়াদের ‘চোকার্স’ তকমা রয়েছে অনেক আগে থেকেই। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ২১২ রানে অলআউট হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। জবাবে খেলতে নেমে ১৬ বল বাকি থাকতে ৭ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছায় পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।

অধিনায়কের মতোই দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন প্যাট কামিন্স। ছবি: ক্রিকইনফো

লক্ষ্য মাত্র ২১৩ হলেও অস্ট্রেলিয়াকে ছেড়ে কথা বলেনি প্রোটিয়ারা। তাদের অদম্য মনোবলের কারণে দ্বিতীয় ইনিংস হয়ে উঠেছে উপভোগ্য। ম্যাচের দৃশ্যপট পাল্টেছে বারবার।

লক্ষ্য তাড়ায় নেমে দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও ট্র্যাভিস হেড। তবে সপ্তম ওভারে বল হাতে এসে প্রথম বলেই উইকেটের দেখা পান আউডেন মার্করাম। ১৮ বলে ২৯ রান করা ডেভিড ওয়ার্নারকে মার্করাম বোল্ড করে ফেরালে দলীয় ৬০ রানের মাথায় প্রথম উইকেটের দেখা পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে এক রানের ব্যবধানে তৃতীয় ব্যাটার মিচেল মার্শকে ফেরান কাগিসো রাবাদা। ফলে জমে ওঠে ম্যাচ।

এ সময় পুরোপুরি রক্ষণাত্মক ক্রিকেটে চলে যায় অস্ট্রেলিয়া। আর মাঠ ছোট করে ফিল্ডার সাজিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটারদের আরও চেপে ধরেন টেম্বা বাভুমা। এ সময় ক্রিজে এসে উইকেটের সামনে দেয়াল তুলে দেন স্টিভেন স্মিথ। হেড তাকে যোগ্য সঙ্গ দিলে ধীরে ধীরে চাপ থেকে বের হয়ে আসে অস্ট্রেলিয়া। এর মাঝে নিজের হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন হেড।

চাপের মুহূর্তে উইকেটের সামনে দেয়াল তুলে দেন স্টিভেন স্মিথ। ছবি: ক্রিকইনফো

কিন্তু এর কিছু পরই দৃশ্যপটে আবার পবির্তন। ট্র্যাভিস হেডকে বোল্ড করে দেন কেশব মহারাজ। ফলে নতুন ব্যটার মারনাস লেবুশেনকে আবার স্থির মস্তিষ্কে ব্যাট করতে পরামর্শ দেন স্মিথ। ফলে ফের বোলিং-ফিল্ডিং দিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে চেপে ধরে দক্ষিণ আফ্রিকা।

এরপর আম্পায়ার সিদ্ধান্তে বেঁচে যান লেবুশেন। আর ক্যাচ দিয়েও জীবন পান স্মিথ।

তাবরাইজ শামসির অফ স্ট্যাম্পের বাইরে পিচ করা ডেলিভারি ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে ব্যর্থ হন লাবুশেন। বল তার পেছনের প্যাডে আঘাত করলে প্রোটিয়াদের জোরালো আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। অথচ রিভিউয়ের সময় রিপ্লেতে দেখা যায় বলের ‘পিচিং’ ও ‘উইকেটস’ ঠিক, কিন্তু ইমপ্যাক্টের ক্ষেত্রে আম্পায়ার্স কলের সম্মান জানানো হয় বলে বেঁচে যান লাবুশেন। এক্ষেত্রে আম্পায়ার আউট দিয়ে দিলে রিভিউ নিয়েও কাজ হতো না তার।

১৮তম ওভারের চতুর্থ বলে এজ হয়ে যান স্মিথ, কিন্তু ডি কক ক্যাচটি লুফে নিতে না পারায় সে যাত্রায় বেঁচে যান তিনি।

পরিষ্কার আউট থাকলেও আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের কারণে হতাশ শামসি। ছবি: ক্রিকইনফো

এর কিছু পর আবার আসে নাটকীয় মোড়। দলীয় ১৩৩ রানের মাথায় সেই শামসির বলেই লেপ বিফোর হয়ে ফিরতে হয় লেবুশেনকে। নিজের পরের ওভারে নতুন ব্যাটার গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে বোল্ড করে সাজঘরে ফেরান শামসি। ফলে ১৩৭ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে খানিকটা বিপদেই পড়ে যায় অস্ট্রেলিয়া।

জস ইংলিসকে নিয়ে আবার ক্রিজে শেকড় নামাতে থাকেন স্মিথ। এতে কিছুটা স্বস্তিও আসে অজি শিবিরে। প্রোটিয়া স্পিনারদের পরের দশ ওভার সামাল দেন এ দুজন, তোলেন ৩৭ রান। কিন্তু এরপর পেসার গেরাল্ড কোয়েটজি এসেই তাদের প্রতিরোধ ভেঙে দলকে ব্রেকথ্রু এনে দেন।

স্টিভেন স্মিথ যখন কোয়েটজির বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরছেন, তখন তার সংগ্রহ ৬২ বলে ৩০; মেরেছেন মাত্র দুটি চারের মার।

স্মিথের ফেরার পর আবার কোমর বেঁধে নামের প্রোটিয়ারা। অন্যদিকে মিচেল স্টার্ককে সঙ্গে নিয়ে ‘টেস্ট ম্যাচের পঞ্চম দিনের শেষ বিকেলের ইনিংস’ খেলতে থাকেন ইংলিস। দলকে জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়ে তিনি যখন বিদায় নিচ্ছেন, তখন তার ব্যক্তিগত স্কোর ৪৯ বলে ২৮। দলের দরকার ৬১ বলে ২০ রান।

দলকে জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে বিদায় নেন জশ ইংলিস। ছবি: ক্রিকইনফো

তবে এ অবস্থায়ও হাল ছাড়েনি দক্ষিণ আফ্রিকা। ২০ রানের আগেই অস্ট্রেলিয়াকে অলআউট করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন বাভুমা, ডি কক। একের পর এক ভিন্ন ভিন্ন অস্ত্র প্রয়োগ করতে থাকেন তারা। আর ব্যাট দিয়ে ইস্পাত কঠিন বর্ম বানিয়ে একের পর এক গোলার মতো বল প্রতিহত করতে থাকেন মিচেল স্টার্ক ও প্যাট কামিন্স। এর মধ্যে শেষ মুহূর্তে আরও এক নাটকীয়তার দেখা হয়তো পাওয়া যেত। হয়তো ম্যাচটি জিতেও নিতে পারত দক্ষিণ আফ্রিকা, কিন্তু কামিন্সের ক্যাচ গ্লাভসে রাখতে না পারায় সে সম্ভাবনা আর আলোর মুখ দেখেনি।

শেষ পর্যন্ত এ দুই পেসারের ব্যাটেই ৪৭.২তম ওভারে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে টিম ক্যাঙ্গারু। আর আরও একটি বিষাদের গল্পে নিয়ে ঘরে ফিরতে হয় ‘চোকার্স’ প্রোটিয়াদের।

দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে দুটি করে উইকেট নেন তাবরাইজ শামসি ও গেরাল্ড কোয়েটজি। একটি করে উইকেটের দেখা পেয়েছেন কাগিসো রাবাদা, আইডেন মার্করাম ও কেশব মহারাজ।

মানসিক চাপ উতরে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়েন লোয়ার অর্ডারের পুরনো দুই বন্ধু মিচেল স্টার্ক ও প্যাট কামিন্স। ছবি: ক্রিকইনফো

এর আগে শুরুতে ব্যাট করে সবক’টি উইকেট হারিয়ে ২১২ রান তুলতে সমর্থ হন দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটাররা। ডেভিড মিলার ১০১ এবং হাইনরিখ ক্লাসেন ৪৭ রান করেন। বাকি ব্যাটারদের মোট সংগ্রহ ছিল ৫৩।

সেমিফাইনালের ম্যাচে এসেই প্রোটিয়া ব্যাটারদের সবার যেন মাথা গুলিয়ে যায়। ইডেনের ব্যাটিংবান্ধব উইকেটেও দলকে একের পর এক ব্যর্থতা উপহার দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ব্যাটাররা।

অস্ট্রেলিয়ার হয়ে তিনটি করে উইকেট নেন মিচেল স্টার্ক ও প্যাট কামিন্স। এ ছাড়া জশ হেজলউড ও ট্র্যাভিস হেড পেয়েছেন দুটি করে উইকেটের দেখা।

ব্যাট হাতে ৬২ রান ও বল হাতে দুই উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় সেমিফাইনালের নায়ক ট্র্যাভিস হেড।

এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো সেমিতেই থামল দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্বকাপ যাত্রা। অন্যদিকে অষ্টমবারের মতো গেল ফাইনালে উঠল পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।

আগামী সোমবার তৃতীয় ট্রফির খোঁজে ভারত ও নিজেদের ষষ্ঠ বিশ্বকাপ শিরোপার মিশনে মাঠে নামবে অস্ট্রেলিয়া। এতে করে ২০০৩ সালের ঠিক বিশ বছর পর আবারও ভারত-অস্ট্রেলিয়া ফাইনাল দেখবে ক্রিকেট বিশ্ব।

এ বিভাগের আরো খবর