অস্ট্রেলিয়া অনেক বড় প্রতিপক্ষ। তাদের বিপক্ষে খেলা সব সময় চ্যালেঞ্জের। তাদের বিপক্ষে ম্যাচটি যে বাংলাদেশের জন্য অনেক কঠিন হতে যাচ্ছে- তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। বাংলাদেশের সামনে যে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি টুর্নামেন্টে খেলার যোগ্যতা অর্জন করার নতুন লক্ষ্য দাঁড়িয়েছে, সেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য স্বাভাবিকভাবেই দল বেশি চাপে থাকবে। সেই স্নায়ু চাপ কাটিয়ে লড়াইয়ে এগিয়ে যেতে হবে টাইগারদের।
আমি মনে করি, শনিবার অস্ট্রেলিয়ার মতো পরাশক্তি দলের রাশ টানতে হলে দলের সর্বশক্তি বিনিয়োগ করতে হবে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি টুর্নামেন্টে খেলার টিকিট নিশ্চিত করে সম্মানজনকভাবে বিশ্বকাপ সমাপ্ত করার জন্য দলের সবাইকে একযোগে জ্বলে ওঠা ছাড়া বিকল্প দেখছি না।
অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের আগে দলের সবচেয়ে মেধাবী খেলোয়াড় ও অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের চোটে পড়ার ঘটনা দলের জন্য বড় একটি ধাক্কা। কেননা সাকিবকে ছাড়া দলের কম্বিনেশন গঠন করা কঠিন। গত ম্যাচে ব্যাটিং ও বোলিংয়ে সাকিব স্বরূপেই ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু তাকে ছাড়া যেমন বোলিংয়ে নতুন করে চিন্তা করতে হবে দলকে, ঠিক তেমনি ব্যাটিংয়েও তার অভাববোধ করবে দল। যদিও তার জায়গায় দলে নেয়া হয়েছে উইকেটরক্ষক-ব্যাটার এনামুল হক বিজয়কে। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সাকিববিহীন অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে আবারও ব্যাটিং অর্ডারে রদবদল হবে।
যেহেতু বিশ্বকাপে পুরোপুরি অফ ফর্মে রয়েছেন লিটন দাস, তাকে নিচে নামিয়ে খেলানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বুদ্ধিমানের কাজ। নতুন তানজিদ তামিমের সঙ্গে বিজয়কে উদ্বোধনী জুটিতে ভরসা করা যেতে পারে। যে আশায় বিশ্বকাপে নেয়া হয়েছিল তানজিদ তামিমকে, তা কিন্তু পূরণ হয়নি। তার শট সিলেকশনে গলদ আছে। ব্যাটিংয়ের সময় টেম্পারমেন্ট ধরে রাখতে পারছে না। বেশ কিছু জায়গায় এই তামিমকে আরও উন্নতি করতে হবে। অন্যদিকে, বিজয় পরীক্ষিত ওপেনার। তবে টুর্নামেন্টের শেষ দিকে হঠাৎ দলে যোগ দিয়ে কতটা ব্যাটিংয়ে নিজেকে মেলে ধরতে পারেন বিজয়- সেটি দেখার বিষয়। তিন ও চারে লিটন ও শান্তকে ব্যাটিংয়ে দেখা যাওয়াটাই স্বাভাবিক।
বিশ্বকাপে মাহমুদউল্লাহ ও মেহেদী হাসান মিরাজ কিন্তু খুবই আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিং করেছেন। তাদের কাছ থেকে অস্ট্রেলিয়া ম্যাচেও রান চাই। মুশফিক আড়ালে পড়ে গেলেও তার ব্যাটে আলোর দেখা মিলতে পারে। আরেকটি বিষয় হলো- ক্যারিয়ারের যে গোধূলি লগ্নে দাঁড়িয়ে আছেন মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিক, শনিবার বিশ্বকাপে এই দুজনের শেষ ম্যাচ হতে পারে। তাই ব্যাটিং নৈপুণ্য দেখিয়ে এই ম্যাচটি স্মরণীয় করে রাখার দারুণ সুযোগ তাদের সামনে। দলের অন্যরাও সেরাটা নিংড়ে দেয়ার চেষ্টা করবেন। চেষ্টার কোনো ক্রটি থাকবে না।
তবে অস্ট্রেলিয়ার যে বিশ্বমানের বিধ্বংসী বোলিং লাইনআপ, তাদের সামনে বড় পরীক্ষা দিতে হবে বাংলাদেশের ব্যাটারদের। মিচেল স্টার্ক, হ্যাজলউড, প্যাট কামিন্সদের দ্রুতগতির বল সামলানো কঠিন হবে। নতুন বলে খুবই ভয়ংকর তারা। তাদের বিরুদ্ধে ভালো করতে হলে ব্যাটিংয়ে নিপুণ দক্ষতা দেখাতে হবে। রান বের করতে হলে ঝুঁকিমুক্ত শট খেলতে হবে। শট সিলেকশনে গরমিল হলেই বিপদ হবে। বিশেষ করে অজি লেগ স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা টুর্নামেন্টে খুবই ভালো বোলিং করছেন। তার বোলিং যেমন বৈচিত্র্যময়, তেমনি ধারালো ও কার্যকর। তাকে দেখে-শুনে খেলতে হবে। এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টে ব্যাটিংয়ে নিজেদের সামর্থ্যের পুরোটা প্রমাণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। আজ যদি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ব্যাটিং শক্তির সেরা প্রদর্শনীটা দেখানো যায়, তাহলে ভালো কিছুর আশা করছি।
গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ইতিহাসের সেরা ব্যাটিং করে দেখালেন গত ম্যাচে। তার ব্যাটিং-বিস্ফোরণে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছেন আফগান-যোদ্ধারা। শারীরিকভাবে পুরোপুরি ফিট না হয়েও যে ব্যাটিং কীর্তি দেখালেন ম্যাক্সওয়েল, তা অতিমানবীয়, অবিশ্বাস্য এবং এককথায় অসাধারণ। অপরাজিত ডাবল সেঞ্চুরির ইনিংস উপহার দিয়ে দলকে যে জয় উপহার দিলেন- তাতে প্রমাণ করলেন যে, সঠিক সঙ্গ পেলে সব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে গিয়েও একা একা ব্যাটিং করে ম্যাচ জেতানো যায়। আজকের ম্যাচে ম্যাক্সওয়েলের খেলা নিয়ে শঙ্কা আছে। তবে এই বিস্ফোরক অলরাউন্ডারকে আলাদাভাবে না ভেবে সার্বিক অস্ট্রেলিয়া দলকে নিয়ে রণকৌশল সাজাতে হবে। স্পিন দিয়ে অস্ট্রেলিয়ানদের ঘায়েল করা যেতে পারে। তবে তাদের হতাশ করতে হলে বোলিংয়ে নতুনত্ব আনা জরুরি। মাথা খাটিয়ে বোলিং করতে হবে। অবশ্য এ ক্ষেত্রে উইকেটের সহযোগিতাও প্রয়োজন। তবে বাংলাদেশের পেস ইউনিট কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। গত ম্যাচে নবীন পেসার তানজীম হাসান সাকিব অনেক রান খরচ করলেও ভালো বোলিং করেছেন। আজকের ম্যাচে তাকে একাদশে রাখা যেতে পারে। উইকেট বিবেচনায় একাদশে ফেরানো যেতে পারে মোস্তাফিজকেও। তবে তাসকিনের নেতৃত্বাধীন পেস ইউনিট স্বরূপে জ্বলে উঠতে পারলে অস্ট্রেলিয়া বিপাকে পড়তে পারে। তবে তাদের যে ব্যাটিং লাইনআপ, তা খুবই শক্তিশালী। তাদের ব্যর্থ করা কঠিন হবে। তবে আশা ছেড়ে দিলে হবে না। লড়াই জমিয়ে তুলতে হবে।
পুনের যে মাঠে খেলা হবে আজ, সেখানে আগেও ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। বলা হচ্ছে, পুনের উইকেট ব্যাটিং-স্বর্গই হবে। বেশ ভালোভাবেই বল ব্যাটে আসবে। রান হবে প্রচুর। হাই-স্কোরিং ম্যাচ হবে। মাঠের বাউন্ডারি লাইন ছোট হওয়ায় চার-ছক্কার ফুলঝুরি ছুটবে। এ ক্ষেত্রে টস জিতে আগে ব্যাটিং করা দল বেশি সুবিধা আদায় করে নিতে পারবে। টস জিততে পারলে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে ভুল করা যাবে না। মোট কথা, আফগানিস্তানকে হারিয়ে টুর্নামেন্টের শুরুর ম্যাচটি যেভাবে রাঙিয়েছিল বাংলাদেশ, একইভাবে আজ জয় দিয়ে বিশ্বকাপের শেষটা রাঙাতে হলে মাঠে টাইগারদের ভয়ংকর রূপ ধারণ করতে হবে। যদি তা করা যায়, তাহলে ২০০৫ সালে কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর সুখস্মৃতি ফিরিয়ে আনবে বাংলাদেশ। পুনের মাঠে রচিত হবে মহাকাব্যিক একটি জয়। বাংলাদেশ নতুন শক্তিতে জেগে উঠুক, জয়ের সূর্য উদিত হয়ে আলো ছড়িয়ে পড়ুক চারদিকে, আনন্দে-উচ্ছ্বাসে মেতে উঠুক সবাই- এটাই প্রত্যাশা করছি।