বিশ্বকাপের শেষ দিকের ম্যাচগুলো রোমাঞ্চ ছড়াচ্ছে। মাঠের লড়াই বেশ ভালোভাবেই জমে উঠেছে। এরই মধ্যে আমরা দেখলাম, দাপুটে ক্রিকেট খেলে তিনটি বড় দল সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে। এখন সেমিফাইনালের চতুর্থ দলের জন্য অপেক্ষা।
পয়েন্ট টেবিলে শেষ চারে জায়গা করে নেয়ার জন্য একটা ত্রিমুখী লড়াই দেখছি। এ লড়াইয়ে আছে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও নিউজিল্যান্ড। যদি বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হারিয়ে রূপকথার জন্ম দিতে পারে নেদারল্যান্ডস এবং ওই তিন দল আর জয় না পায় অর্থাৎ হেরে যায় তাহলে ত্রিমুখী লড়াইয়ে যুক্ত হতে পারে ডাচদের নামও। এই দলগুলোর মধ্যে সেমিফাইনালের দৌড়ে অনেক এগিয়ে আছে নিউজিল্যান্ড দলটি।
বৃহস্পতিবার টুর্নামেন্টের প্রাথমিক পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। সেমিফাইনালে ওঠার জন্য এ ম্যাচটি কিউইদের জন্য মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। শুধু জয় পেলেই যে শেষ চারের জায়গা পাকা হয়ে যাবে তাদের, তা কিন্তু নয়। পাশাপাশি অপেক্ষায় থাকতে হবে অন্য দলগুলো কী করে, তাদের ফলের দিকেও। হিসাব-নিকাশ করে মেলাতে হতে পারে সমীকরণ।
আমি মনে করি, এই সমীকরণে এগিয়ে থাকার জন্য যা যা করার দরকার, সম্ভাব্য সব কিছুই করার চেষ্টা করবে কিউইরা। বৃহস্পতিবারের ম্যাচে শক্তি-সামর্থ্য সব কিছু বিবেচনায় আমি নিউজিল্যান্ডকেই এগিয়ে রাখছি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ফেভারিট হিসেবেই মাঠে নামবে কিউইরা।
অপরদিকে, সেমিফাইনালে খেলার যে আশার আলো ছিল শ্রীলঙ্কা দলের, তা নিভে গেছে আগের ম্যাচেই। এখন পয়েন্ট টেবিলে আট নম্বরের মধ্যে থাকার চ্যালেঞ্জ তাদের সামনে। কেননা আটের মধ্যে না থাকতে পারলে ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ হারাবে তারা। এ জন্য ম্যাচটি অনেক গুরুত্ব দিয়ে খেলবে লঙ্কানরাও। ফলে টুর্নামেন্টের শেষ দিকে নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে একটি আকর্ষণীয় ও উপভোগ্য ম্যাচ আমরা আশা করতেই পারি।
টুর্নামেন্টে যেভাবে শুরুটা দুর্দান্ত করেছিল নিউজিল্যান্ড, সেই ধারা অব্যাহত রাখতে পারেনি। প্রথম টানা চার ম্যাচ জয়ের পর ছন্দপতন হয়েছে তাদের। টানা চার হারে মুদ্রার উল্টো পিঠটাও দেখতে হলো কিউইদের। এজন্য দলটি খুবই চাপের মধ্যে আছে।
আশার বিষয় হলো- কিউইদের ব্যাটিং বলেন, বোলিং বলেন আর ফিল্ডিং বলেন- কোনো দিকেই তেমন দুর্বলতা লক্ষ্য করা যায়নি। তিন বিভাগে ভালো পারফরম্যান্স করেও দলটি জয়ের মুখ দেখেনি গত চার ম্যাচে, সেটি খুবই আফসোসের বিষয়।
সবশেষ পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে চারশর বেশি স্কোর গড়েও জয়ের সীমানায় পৌঁছাতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। বৃষ্টি বাধা না দিলে ভাগ্য সুপ্রসন্ন হতে পারত তাদের! খেলায় মাঝে মাঝে ভাগ্যের সহায়তাও লাগে। এর আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচেও চারশর কাছাকাছি রান তাড়া করতে গিয়ে মাত্র ৫ রানে কিউইদের হারটি ছিল খুবই দুর্ভাগ্যের।
ক্লোজ ম্যাচ হারের সঙ্গে নিউজিল্যান্ড দলে যুক্ত হয় ইনজুরির সমস্যা। যে কারণে দলটির ভারসাম্য অনেকটাই নষ্ট হয়েছে। টুর্নামেন্টের শুরুতে পেস বোলিং ইউনিটের নেতৃত্বে ছিলেন ম্যাট হেনরি। হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটের কারণে বিশ্বকাপই শেষ হয়ে গেছে তার। দলের সেরা পেসারকে না পাওয়া কিউই দলের জন্য বড় একটি ধাক্কা। শুধু হেনরি নন, তাদের দলের আরও বেশ কজন খেলোয়াড় ইনজুরিতে পড়েন। এই একটি জায়গায় নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা দলের দারুণ মিল পাওয়া গেছে।
টুর্নামেন্টে শুরু থেকে ইনজুরির মিছিল হয়েছে শ্রীলঙ্কা দলেও। এজন্য তাদের তিন ক্রিকেটার বদলাতে হয়েছে। ফলে লঙ্কান দলটিও ভারসাম্য হারায়, যার প্রভাব তাদের পারফরম্যান্সে ফুটে উঠেছে।
তবে খেলোয়াড়দের ইনজুরি সমস্যা কাটিয়ে মাঠের লড়াইয়ে দুদলের মধ্যে এগিয়ে নিউজিল্যান্ডই। তাদের দলে যারা আছেন, প্রত্যেকেই পারফর্মার। তাদের ব্যাটিং লাইনআপ খুবই শক্তিশালী ও দুর্ধর্ষ। নিউজিল্যান্ড দলের ব্যাটিং-বিস্ফোরণের প্রদর্শনী দেখা যেতে পারে বৃহস্পতিবারের ম্যাচে। তবে আমি মনে করি, তাদের ব্যাটিংয়ের জন্য বড় হুমকি হতে পারেন দিলশান মাদুশঙ্কা। টুর্নামেন্টের সেরা এই বোলার (সর্বোচ্চ ২১ উইকেট শিকার করেছেন) নতুন বলে প্রতিনিয়ত উইকেট পাচ্ছেন। তার বোলিংয়ে নতুনত্ব আছে। বাঁহাতি পেসার মাদুশঙ্কার বৈচিত্র্যময় বোলিং লঙ্কানদের এগিয়ে রাখতে পারে অনেকটাই।
অন্যদিকে, লঙ্কান ব্যাটারদের জন্য কিউই পেসার টিম সাউদি, লকি ফার্গুসনদের বল সামলানো কঠিন হবে। স্পিন শক্তিতেও বলীয়ান তারা। ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারেন স্যান্টনার, রাচিনরা। তাদের বিরুদ্ধে খেলাটাও কঠিন হবে। মোট কথা, কিউইদের সামনে বড় পরীক্ষা দিতে হবে লঙ্কান ব্যাটারদের।
যদি শ্রীলঙ্কার কথা আলাদা করে বলি, এই দলটি গত এশিয়া কাপের ফাইনালে খেলেছে। বিশ্বকাপেও তাদের দিকে তাকিয়ে ছিল লঙ্কানরা। কিন্তু খুবই হতাশ করেছে দলটি। টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই ধুঁকতে থাকে তারা। বেশ কিছু ম্যাচে সম্ভাবনা জাগিয়েও দর্শকদের নিরাশ করেছে শ্রীলঙ্কা। ব্যাটিং ও বোলিংয়ে ধারাবাহিকতা না থাকার কারণে চরম মূল্য দিতে হয়েছে তাদের।
মূলত ভারতের বিপক্ষে লঙ্কানদের মাত্র ৫৫ রানে অলআউট হওয়ার ঘটনাটি সবচেয়ে বড় দুঃস্মৃতির জন্ম দিয়েছে। সর্বশেষ বাংলাদেশের কাছে হেরে আরও ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে দলটি। হতাশাগ্রস্ত ও প্রচণ্ড চাপে থাকা এই দলটি যদি বৃহস্পতিবার নিজেদের শেষ ম্যাচ জয়ে রাঙাতে পারে তাহলে হয়তো কিছুটা স্বস্তির হাওয়া বইতে পারে।
পরিশেষে বলব, দুই দলের পরিস্থিতি ভিন্ন হলেও জয়ের লক্ষ্য কিন্তু অভিন্ন থাকবে। তাই মাঠের লড়াইয়ে কেউ কারও চেয়ে কম যাবে না। আশা করি, এই ম্যাচটি অত্যন্ত জমজমাট হবে এবং ক্রিকেটীয় রোমাঞ্চ ছড়াবে সবার মধ্যে।